Ajker Patrika

সতর্ক করে দিচ্ছি, নিজেরা কাদা-ছোড়াছুড়ি করলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে: সেনাপ্রধান

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩: ১৭
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান। ছবি: সংগৃহীত
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার–উজ–জামান। ছবি: সংগৃহীত

নিজেরা হানাহানিতে লিপ্ত থাকলে দেশের স্বাধীনতা বিপন্ন হবে, এমন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন হলে আয়োজিত ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান এ কথা বলেন।

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, পরে বলবেন যে আমি সতর্ক করিনি। আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ না করতে পারেন, নিজেরা যদি কাদা-ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আজকে বলে দিলাম, নইলে আপনারা বলবেন যে আমি আপনাদের সতর্ক করিনি। আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের। আমার অন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা নাই, আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা—দেশ এবং জাতিটাকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে ছুটি করা। আই হ্যাড এনাফ লাস্ট সেভেন—এইট মান্থস, আই হ্যাড এনাফ। আমি চাই, দেশ এবং জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসব।’

তিনি বলেন, ‘আরেকটা জরুরি বিষয়, যেটা আমি ভাবলাম যে আপনাদের সঙ্গে আমি শেয়ার করি, দেশের এই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের পেছনে কিছু কারণ আছে। প্রথম কারণটা হচ্ছে, আমরা নিজেরা হানাহানির মধ্যে ব্যস্ত, একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারে ব্যস্ত। এটা একটা চমৎকার সুযোগ অপরাধীদের জন্য। যেহেতু আমরা একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে বিরাজ করছি, তারা (অপরাধীরা) খুব ভালোভাবেই জানে যে এই সময়ে যদি এই সমস্ত অপরাধ করা যায়, তাহলে এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। সেই কারণে এই অপরাধগুলো হচ্ছে, আমরা যদি সংগঠিত থাকি, একত্রিত থাকি, তাহলে অবশ্যই এটা সম্মিলিতভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।’

পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই—এসব বাহিনী অতীতে দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘(তারা) খারাপ কাজের সাথে অসংখ্য ভালো কাজ করেছে। আজকে যে দেশের স্থিতিশীলতা, দেশটাকে যে এত বছর স্থিতিশীল রাখা হয়েছে, এটার কারণ হচ্ছে, এই সশস্ত্র বাহিনীর বহু সেনাসদস্য, সিভিলিয়ান—সবাই মিলে এই অর্গানাইজেশনগুলোকে অসামরিক-সামরিক সবাই মিলে, এই অর্গানাইজেশনগুলোকে ইফেক্টিভ রেখেছে, সেই জন্য আজকে সুন্দর, এত দিন ধরে আমরা একটা সুন্দর পরিবেশ পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে যারা কাজ করেছে, যদি অপরাধ করে থাকে, সেটার শাস্তি হবে। অবশ্যই শাস্তি হতে হবে। না হলে এই জিনিস আবার ঘটবে। আমরা সেটাকে বন্ধ করতে চাই চিরতরে। কিন্তু তার আগে মনে রাখতে হবে, আমরা এমনভাবে কাজটা করব, এই সমস্ত অর্গানাইজেশন যেন আন্ডারমাইন না হয়।’

পুলিশ বাহিনীকে এত দিনে কার্যকর করতে না পারার পেছনের কারণ উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আজকে পুলিশ সদস্য কাজ করছে না। একটা বিশাল বড় কারণ হচ্ছে, অনেকের বিরুদ্ধে মামলা, অনেকে জেলে। র‍্যাব, বিজিবি, ডিজিএফআই, এনএসআই প্যানিকড। বিভিন্ন দোষারোপ, গুম, খুন ইত্যাদি। তদন্ত চলছে, অবশ্যই তদন্ত হবে, দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, এমনভাবে কাজটা করতে হবে যেন এই অর্গানাইজেশনগুলো আন্ডারমাইন না হয়। এই অর্গানাইজেশনগুলোকে যদি আন্ডারমাইন করে আপনারা মনে করেন যে দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বিরাজ করবে, সবাই শান্তিতে থাকবেন, এটা হবে না। সেটা সম্ভব না। আমি আপনাদের পরিষ্কার করে বলে দিচ্ছি।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব শুধু সেনাবাহিনীর নয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘এই দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব খালি সেনাবাহিনীর না। দুই লক্ষ পুলিশ আছে, বিজিবি আছে, র‍্যাব আছে, আনসার-ভিডিপি আছে। আমার আছে হচ্ছে ৩০ হাজার সৈন্য। এদেরকে আমি এই যে একটা বিরাট ভয়েড, আমি এই ৩০ হাজার সৈন্য দিয়ে, আমি কীভাবে এটা পূরণ করব? ৩০ হাজার থাকে, আবার ৩০ হাজার চলে যায়, ক্যান্টনমেন্টে আরও ৩০ হাজার আসে, এটা দিয়ে আমরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখানে যে সমস্ত উচ্ছৃঙ্খল কাজ হয়েছে, সেটা আমাদের নিজস্ব তৈরি। এটা আমাদের নিজস্ব ম্যানুফ্যাকচারড। আমরা এইগুলো তৈরি করেছি। এই বিপরীতমুখী কাজ করলে দেশে কখনো শান্তিশৃঙ্খলা আসবে না। এই জিনিসটা আপনাদের মনে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিশন হচ্ছে আবার আরেকটা আমাদের সর্বদা আমরা চেষ্টা করব তদন্ত কমিশনকে সহায়তা করতে যে ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন হয় আমরা করব।’

নির্বাচনের বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা দেশে একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশনের জন্য দিকে ধাবিত হচ্ছি এবং তার আগে যে সমস্ত সংস্কার করা প্রয়োজন, অবশ্যই সরকার সেদিকে হেল্প করবেন। আমি যতবারই ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছি, কমপ্লিটলি অ্যাগ্রিড উইদ মি। দেয়ার শুড বি ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশন অ্যান্ড দ্যাট ইলেকশন শুড বি উইদিন ডিসেম্বর, অর ক্লোজ টু দ্যাট। যেটা আমি প্রথমেই বলেছিলাম যে ১৮ মাসের মধ্যে একটা ইলেকশন। আমার মনে হয় যে সরকার সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। ড. ইউনূস যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন, এ দেশটাকে ইউনাইটেড রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন উনি। ওনাকে আমাদের সাহায্য করতে হবে। উনি যেন সফল হতে পারেন, সেদিকে আমরা সবাই চেষ্টা করব। আমরা একসাথে ইনশা আল্লাহ কাজ করে যাব।’

দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আসেন, আমরা নিজের নিজেদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি না করে, আমরা উই ইউনাইট আওয়ার সেলফ, দেশ জাতি যেন একসাথে থাকতে পারি, সেদিকে আমাদের কাজ করতে হবে। আমাদের মধ্যে মতের বিরোধ থাকতে পারে। চিন্তা-চেতনার বিরোধ থাকতে পারে। কিন্তু দিন শেষে যেন আমরা সবাই দেশ এবং জাতির দিকে খেয়াল করে, আমরা যেন এক থাকতে পারি। তাহলে এই দেশটা উন্নত হবে। এই দেশটা সঠিক পথে পরিচালিত হবে। না হলে আমরা আরও সমস্যার মধ্যে পড়তে যাব।’

সতর্ক করে দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘বিশ্বাস করেন, উই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হেড, ওই দিকে আমরা যেতে চাই না। আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। পরে বলবেন যে আমি সতর্ক করিনি। আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ না করতে পারেন। নিজেরা যদি কাদা-ছোড়াছুড়ি করেন। মারামারি-কাটাকাটি করেন, এই দেশ এবং জাতির স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে। আমি আজকে বলে দিলাম, নইলে আপনারা বলবেন যে আমি আপনাদের সতর্ক করিনি। আমি সতর্ক করে দিচ্ছি আপনাদের। এই দেশ সুখে-শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা চাই না হানাহানি কাটাকাটি মারামারি। সেই উদ্দেশ্যে আমি কাজ করে যাচ্ছি। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সেনাবাহিনীর প্রতি আক্রমণ করেন না।’

সামরিক বাহিনীর প্রতি অনেকে অকারণে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে বলে উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘একটা কমন জিনিস আমি দেখতে পাচ্ছি, সেনাবাহিনী এবং সেনাপ্রধানের প্রতি বিদ্বেষ কারও কারও, কী কারণে আজ পর্যন্ত আমি এটা খুঁজে পাইনি। আমরা হচ্ছি একমাত্র ফোর্স, যেটা আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, দাঁড়িয়ে আছি প্ল্যাটফর্মে। অফ কোর্স নেভি অ্যান্ড এয়ারফোর্স, নেভি চিফ আবার মন খারাপ করে, ইয়া করছে! নেভি এয়ারফোর্স অল উই অল আমাদেরকে সাহায্য করেন। আমাদেরকে আক্রমণ করেন না, আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেন, আমাদেরকে উপদেশ দেন। কোনো একটা সমস্যা হয়ে গেলে আমি নুরুদ্দিন স্যারের শরণাপন্ন হই এবং উনি আমাকে উপদেশ দেন, সিনিয়র জেনারেলরা আমাকে উপদেশ দেন। আমি সবার কাছে শরণাপন্ন হই। আমাদের প্রতি আক্রমণ করেন না। উপদেশ দেন, আমরা অবশ্যই ভালো উপদেশ গ্রহণ করব। আমরা একসাথে থাকতে চাই এবং দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দিতে চাই।’

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত