তানিম আহমেদ, ঢাকা
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল। এসব সুপারিশ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে বড় ধরনের মতানৈক্য রয়েছে বড় দলগুলোর মধ্যে।
দলগুলোর মতপার্থক্য ভবিষ্যতে বড় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে তাঁরা মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। সংবিধান বিষয়ে এনসিপি যেভাবে দেখে, সেভাবে বিএনপি দেখে না। বিএনপি যেভাবে দেখে, সেভাবে জামায়াত দেখে না। তারা এক থাকবে, নাকি বিচ্ছিন্ন থাকবে—এটা তো তারা আগে থেকে নির্ধারণ করেনি। নির্বাচন পর্যন্ত এভাবে চলবে। তবে জাতীয় ঐকমত্য হওয়ার সুযোগ এখনো আছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে বিএনপি যে মতামত দিয়েছে, তাতে গণপরিষদ নির্বাচনের বিরোধিতা করেছে দলটি। বিএনপি মনে করে, নির্বাচিত জাতীয় সংসদে বৃহত্তর ঐকমত্যের ভিত্তিতে ব্যাপক সংশোধিত সংবিধান পাওয়া যাবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করে বিএনপি। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষমতা, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা ইসির হাতে থাকা উচিত বলে মনে করে দলটি। নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করার জন্য সংসদীয় কমিটির হাতে ক্ষমতা দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, বিএনপি তার সঙ্গেও একমত নয়। তাদের মতে, নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে দায়বদ্ধ হতে পারে।
বিএনপি মনে করে, সাংবিধানিক কাউন্সিলের মাধ্যমে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষমতা বাড়বে। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে একাত্তর ও চব্বিশকে এক কাতারে আনা হয়েছে জানিয়ে, এটি অনুচিত বলে মনে করে বিএনপি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি একাদিক্রমে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হতে পারবেন না। প্রস্তাবটিতে একমত পোষণ না করে বিএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ-সংক্রান্ত বিষয়ে ‘কোনো ব্যক্তি একাদিক্রমে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইবেন না’ এরূপ বিধান করাই যথেষ্ট।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএনপি চিন্তাভাবনা করেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত দিয়েছে। দেশের জন্য যা হওয়া উচিত, সেগুলো আমরা তুলে ধরেছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অনেক প্রস্তাবে অনেকেই একমত আছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিমত আছে। সেগুলো আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক হবে। আমরা আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।’
রাষ্ট্র সংস্কারে সরকার উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী বলে আসছে, নির্বাচন নিয়ে সরকারকে কোনো সময় বেঁধে দিতে চায় না তারা। দলটি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের পক্ষে। এখনো একই অবস্থানে আছে তারা। বিএনপির মতো জামায়াতও মনে করে গণপরিষদ নয়, নির্বাচিত সংসদে সংবিধান সংশোধন সম্ভব। তবে দলটি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে। এ দাবিটি বেশির ভাগ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলেরই রয়েছে বলে জানা গেছে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ঐকমত্যে আসার জন্য সরকার এই কমিশন করেছে, তারা চেষ্টা করবে, আমরা সহযোগিতা করব। মাত্র তো আলোচনা শুরু হয়েছে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা হবে, তখন কথা বলব, পরামর্শ দেব।’
গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করে, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র হলো দেশের প্রথম সংবিধান। কিন্তু ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় মূলনীতি সংবিধানে নিয়ে আসে, যা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের বিরুদ্ধে ছিল। এটিকে সাংবিধানিক ক্যু বলেও দাবি করে এনসিপি। এ জন্য বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দাবি তাদের।
আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সবাই সবার জায়গা থেকে কিছু কিছু ছাড় দেবে বা জাতীয় স্বার্থকে প্রধান করে তুলবে। তুষার বলেন, ‘সব দলই সংস্কারের পক্ষে কথা বলছে, কিন্তু প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিমত আছে। আলোচনার মাধ্যমে সেটা সমাধানে আসা সম্ভব।’
সংবিধান এবং অন্যান্য গুরুতর বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ার আশঙ্কা বেশি, এমনটি মনে করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘কমিশন চায় দেশের নাম পরিবর্তন করতে, সেখানে আমি আগেই বলে দিয়েছি দ্বিমতের কথা। তারা রাষ্ট্রের চার মূলনীতি পরিবর্তন করতে চায়, সে বিষয়েও আমাদের দ্বিমত রয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনা করে তো সমাধান হবে না। আমরা বলেছি, গণপরিষদের প্রয়োজন নেই, এটা নিয়ে আলোচনা করে কী হবে?’ রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘যেগুলোর বিষয়ে সামান্য দ্বিমত আছে, তা নিয়ে আলোচনা করলে ঐকমত্য হবে। বাকিগুলোতে ঐকমত্য হবে না। তা নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্টের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সংস্কারের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচিত সরকারের।’
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলে মতপার্থক্য থাকেই বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, দলগুলোর মধ্যে কিছু মতানৈক্য দেখা দিয়েছে, সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানও সম্ভব। দলগুলো একটি শক্তিকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করেছে, সেটাকে সংহত করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য মতৈক্য প্রয়োজন হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী মতের পরও ঐকমত্যের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রাখেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম। তিনি বলেন, ‘সব বিষয় তো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কমিশন ঠিকমতো সংলাপ করতে পারলে বিরোধিতার পরও অনেক দূর জায়গা থাকবে, যাতে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য তৈরি এবং সেটা বাস্তবায়নের পরিস্থিতি তৈরি সম্ভব হবে।’
সংলাপ ও সংস্কারে সব দলই সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কতগুলো মতপার্থক্য রয়েছে পদ্ধতি নিয়ে। কোনো দল বলছে সংসদের মাধ্যমে সংস্কার, কেউ বলছে গণপরিষদের মাধ্যমে, কেউ বলছে অধ্যাদেশের মাধ্যমে। আবার কিছু কিছু আংশিক মতপার্থক্য রয়েছে। আশা করছি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করা যাবে। আর সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে নমনীয়তা দেখেছি। তাই আমরা আশাবাদী।’
৬ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে সংবিধান, নির্বাচনী ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার-সংক্রান্ত ১৬৬টি সুপারিশ পাঠায়। ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত দেওয়ার অনুরোধ করা হলেও নির্ধারিত সময়ের পর বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, সিপিবিসহ বেশ কয়েকটি দল মতামত দেয়। এখনো ১৪টি দল ও জোট মতামত জমা দেয়নি। কমিশনের আশা, ঈদের পর তারা সব দলের মতামত পাবে।
সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এলডিপি, খেলাফত মজলিস, লেবার পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপ করেছে। ঈদের পর এবি পার্টি এবং নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে সংলাপের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিশন প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবে। ঐকমত্য তৈরিতে দলগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনে একাধিক সংলাপের চিন্তাও রয়েছে কমিশনের।
রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ ২৪টি রাজনৈতিক দল। এসব সুপারিশ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচন-সংক্রান্ত বিষয়ে বড় ধরনের মতানৈক্য রয়েছে বড় দলগুলোর মধ্যে।
দলগুলোর মতপার্থক্য ভবিষ্যতে বড় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে, এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে তাঁরা মনে করেন, আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকবেই। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মতপার্থক্য থাকা স্বাভাবিক। সংবিধান বিষয়ে এনসিপি যেভাবে দেখে, সেভাবে বিএনপি দেখে না। বিএনপি যেভাবে দেখে, সেভাবে জামায়াত দেখে না। তারা এক থাকবে, নাকি বিচ্ছিন্ন থাকবে—এটা তো তারা আগে থেকে নির্ধারণ করেনি। নির্বাচন পর্যন্ত এভাবে চলবে। তবে জাতীয় ঐকমত্য হওয়ার সুযোগ এখনো আছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে বিএনপি যে মতামত দিয়েছে, তাতে গণপরিষদ নির্বাচনের বিরোধিতা করেছে দলটি। বিএনপি মনে করে, নির্বাচিত জাতীয় সংসদে বৃহত্তর ঐকমত্যের ভিত্তিতে ব্যাপক সংশোধিত সংবিধান পাওয়া যাবে।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কিছু সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে বলে মনে করে বিএনপি। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের ক্ষমতা, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা ইসির হাতে থাকা উচিত বলে মনে করে দলটি। নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করার জন্য সংসদীয় কমিটির হাতে ক্ষমতা দেওয়ার যে প্রস্তাব করা হয়েছে, বিএনপি তার সঙ্গেও একমত নয়। তাদের মতে, নির্বাচন কমিশন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে দায়বদ্ধ হতে পারে।
বিএনপি মনে করে, সাংবিধানিক কাউন্সিলের মাধ্যমে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের ক্ষমতা বাড়বে। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে একাত্তর ও চব্বিশকে এক কাতারে আনা হয়েছে জানিয়ে, এটি অনুচিত বলে মনে করে বিএনপি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি একাদিক্রমে অথবা অন্য যেকোনো উপায়ে দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হতে পারবেন না। প্রস্তাবটিতে একমত পোষণ না করে বিএনপি বলেছে, প্রধানমন্ত্রী পদের মেয়াদ-সংক্রান্ত বিষয়ে ‘কোনো ব্যক্তি একাদিক্রমে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য বলিয়া বিবেচিত হইবেন না’ এরূপ বিধান করাই যথেষ্ট।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিএনপি চিন্তাভাবনা করেই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামত দিয়েছে। দেশের জন্য যা হওয়া উচিত, সেগুলো আমরা তুলে ধরেছি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অনেক প্রস্তাবে অনেকেই একমত আছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিমত আছে। সেগুলো আলোচনা সাপেক্ষে ঠিক হবে। আমরা আশা করছি, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।’
রাষ্ট্র সংস্কারে সরকার উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী বলে আসছে, নির্বাচন নিয়ে সরকারকে কোনো সময় বেঁধে দিতে চায় না তারা। দলটি প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনের পক্ষে। এখনো একই অবস্থানে আছে তারা। বিএনপির মতো জামায়াতও মনে করে গণপরিষদ নয়, নির্বাচিত সংসদে সংবিধান সংশোধন সম্ভব। তবে দলটি সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের পক্ষে। এ দাবিটি বেশির ভাগ ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলেরই রয়েছে বলে জানা গেছে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ঐকমত্যে আসার জন্য সরকার এই কমিশন করেছে, তারা চেষ্টা করবে, আমরা সহযোগিতা করব। মাত্র তো আলোচনা শুরু হয়েছে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা হবে, তখন কথা বলব, পরামর্শ দেব।’
গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মনে করে, মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্র হলো দেশের প্রথম সংবিধান। কিন্তু ১৯৭২ সালে আওয়ামী লীগ দলীয় মূলনীতি সংবিধানে নিয়ে আসে, যা মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের বিরুদ্ধে ছিল। এটিকে সাংবিধানিক ক্যু বলেও দাবি করে এনসিপি। এ জন্য বিদ্যমান সংবিধান বাতিল করে গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের দাবি তাদের।
আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব বলে মনে করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার। তিনি আশা প্রকাশ করেন, সবাই সবার জায়গা থেকে কিছু কিছু ছাড় দেবে বা জাতীয় স্বার্থকে প্রধান করে তুলবে। তুষার বলেন, ‘সব দলই সংস্কারের পক্ষে কথা বলছে, কিন্তু প্রক্রিয়া নিয়ে দ্বিমত আছে। আলোচনার মাধ্যমে সেটা সমাধানে আসা সম্ভব।’
সংবিধান এবং অন্যান্য গুরুতর বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ার আশঙ্কা বেশি, এমনটি মনে করেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘কমিশন চায় দেশের নাম পরিবর্তন করতে, সেখানে আমি আগেই বলে দিয়েছি দ্বিমতের কথা। তারা রাষ্ট্রের চার মূলনীতি পরিবর্তন করতে চায়, সে বিষয়েও আমাদের দ্বিমত রয়েছে। এসব নিয়ে আলোচনা করে তো সমাধান হবে না। আমরা বলেছি, গণপরিষদের প্রয়োজন নেই, এটা নিয়ে আলোচনা করে কী হবে?’ রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘যেগুলোর বিষয়ে সামান্য দ্বিমত আছে, তা নিয়ে আলোচনা করলে ঐকমত্য হবে। বাকিগুলোতে ঐকমত্য হবে না। তা নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্টের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। সংস্কারের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচিত সরকারের।’
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলে মতপার্থক্য থাকেই বলে জানান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি বলেন, দলগুলোর মধ্যে কিছু মতানৈক্য দেখা দিয়েছে, সেটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধানও সম্ভব। দলগুলো একটি শক্তিকে সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করেছে, সেটাকে সংহত করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য মতৈক্য প্রয়োজন হবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী মতের পরও ঐকমত্যের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব রাখেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম। তিনি বলেন, ‘সব বিষয় তো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। কমিশন ঠিকমতো সংলাপ করতে পারলে বিরোধিতার পরও অনেক দূর জায়গা থাকবে, যাতে সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্য তৈরি এবং সেটা বাস্তবায়নের পরিস্থিতি তৈরি সম্ভব হবে।’
সংলাপ ও সংস্কারে সব দলই সহযোগিতা করছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কতগুলো মতপার্থক্য রয়েছে পদ্ধতি নিয়ে। কোনো দল বলছে সংসদের মাধ্যমে সংস্কার, কেউ বলছে গণপরিষদের মাধ্যমে, কেউ বলছে অধ্যাদেশের মাধ্যমে। আবার কিছু কিছু আংশিক মতপার্থক্য রয়েছে। আশা করছি, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করা যাবে। আর সংলাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর মধ্যে নমনীয়তা দেখেছি। তাই আমরা আশাবাদী।’
৬ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে সংবিধান, নির্বাচনী ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার-সংক্রান্ত ১৬৬টি সুপারিশ পাঠায়। ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত দেওয়ার অনুরোধ করা হলেও নির্ধারিত সময়ের পর বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, সিপিবিসহ বেশ কয়েকটি দল মতামত দেয়। এখনো ১৪টি দল ও জোট মতামত জমা দেয়নি। কমিশনের আশা, ঈদের পর তারা সব দলের মতামত পাবে।
সংস্কার প্রতিবেদন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এলডিপি, খেলাফত মজলিস, লেবার পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংলাপ করেছে। ঈদের পর এবি পার্টি এবং নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে সংলাপের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিশন প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করবে। ঐকমত্য তৈরিতে দলগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনে একাধিক সংলাপের চিন্তাও রয়েছে কমিশনের।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়েছেন। এতে তিনি বাংলাদেশের জনগণের জন্য শান্তি, সম্প্রীতি, সুস্বাস্থ্য ও সুখ কামনা করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছ
৩ ঘণ্টা আগেএবারের ঈদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে আমরা একে অপরের কাছাকাছি যেতে পারি, আমাদের দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারি, দেশ ও সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারি। কারণ, এবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা অর্জন করতে হবে। এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবাইকে এই বার্তা মনে রাখতে হবে
৩ ঘণ্টা আগেদেশের বিভিন্ন জেলায় গত মার্চ মাসে ১৮টি ঘটনায় ৩৪ জন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)। মার্চ মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাটি।
৪ ঘণ্টা আগেবিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম ওঠানামার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এবার তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রলের দাম অপরিবর্তিত রেখেছে সরকার।
৪ ঘণ্টা আগে