‘চা-শ্রমিকদের জাতির পিতা দিয়েছেন নাগরিকত্ব, আমি দেব ঘর’

কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৭: ৪৮
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২০: ২৯

মৌলভীবাজারের চা-শ্রমিকদের সঙ্গে এই প্রথম সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী চা-শ্রমিকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নাগরিকত্ব দিয়েছেন, আর আমি আপনাদের ঘর করে দেব। চা-বাগান হলো দেশের সৌন্দর্য, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। চা-শ্রমিকদের সঙ্গে আমাদের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে।’ 

আজ শনিবার বিকেল ৪টায় কমলগঞ্জ উপজেলার পাত্রখোলা চা-বাগানের দলই ভ্যালি মাঠ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জেলার ৯২টি চা-বাগানের শ্রমিকেরা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন। এ সময় জেলার অন্যান্য উপজেলার চা-বাগানে তিনটি করে প্রজেক্টরের মাধ্যমে পুরো ভিডিও কনফারেন্সটি দেখানো হয়। এ ছাড়া হবিগঞ্জের চণ্ডীছড়া চা-বাগান, সিলেটের লাক্কাতুরা চা-বাগান ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী চা-বাগানের শ্রমিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু প্রথম চা শ্রমিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেই সময় তিনি চা-শ্রমিক ও চা-শিল্পকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধু সংবিধানের মাধ্যমে চা-শ্রমিকদের ভোটাধিকার ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পঞ্চগড়ে চা-বাগান তৈরি করা হয়। চা-শ্রমিকেরা মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অনেক ভূমিকা রেখেছেন। চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তাঁদের মজুরি বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ যেন কষ্টে না থাকে সে জন্য আমরা অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

পাত্রখোলা চা বাগানের দলই ভ্যালি মাঠ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জেলার ৯২টি চা বাগানের শ্রমিকেরা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হনএ সময় চা-শ্রমিকেরা তাঁদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে চা-শ্রমিক গীতা পাইনকা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, আপনি আপনার বাবার মতো আমাদের পাশে আছেন। আপনি আমাদের মা জননী, আপনি মজুরি বৃদ্ধির জন্য যে কষ্ট করেছেন এর জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আপনি আমাদের কষ্ট বোঝার জন্য ধন্যবাদ।’ 

চা-শ্রমিকদের সঙ্গে এই প্রথম সরাসরি কথা বলায় মৌলভীবাজারের শ্রমিকেরা আনন্দ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী যদি মজুরি বৃদ্ধির উদ্যোগ না নিতেন তাহলে তাঁদের মজুরি ৫০ টাকা বৃদ্ধি হতো না।

পাত্রখোলা চা-বাগানে প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, মৌলভীবাজার সদর-রাজনগর আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমেদ, মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মিসবাহুর রহমান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রফিকুর রহমান, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন, বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা রামভজন কৈরি, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পালসহ বিভিন্ন ভ্যালির সভাপতি-সম্পাদক, বাগানের পঞ্চায়েত নেতা, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন চা শ্রমিকেরাপ্রসঙ্গত, এর আগে বেতন বাড়ানোর দাবিতে টানা ১৯ দিন আন্দোলন করছিলেন দেশের সব চা-বাগানের শ্রমিকেরা। চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ২৭ আগস্ট মালিকদের সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে বাগানমালিকদের সঙ্গে আলাপ করে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১২০ থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১৯ দিন পর থেকে বাগানে কাজে ফেরেন আন্দোলনরত চা-শ্রমিকেরা। তবে আন্দোলনের শুরু থেকেই তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে আসছিলেন। পরে চা-শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণের পর চা-শ্রমিকদের খোঁজখবর নিতে তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত