Ajker Patrika

খেপে গিয়ে প্রভাবশালীদের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে জানতে বললেন আরাভ খান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২৩, ২০: ১৮
খেপে গিয়ে প্রভাবশালীদের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে জানতে বললেন আরাভ খান

দুবাইয়ে আলোচিত ব্যবসায়ী আরাভ খানের জুয়েলারি শো রুম উদ্বোধনে গেছেন সাকিব আল হাসানসহ অনেক তারকা। তিনি পুলিশ হত্যা মামলার আসামি—সেটি গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত করেছে। আরাভ খানও সেটি অস্বীকার করেননি। তবে নাম পরিবর্তন করে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়ানোর কারণ জিজ্ঞেস করলেই খেপে যাচ্ছেন তিনি। দেশের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম বলে তাঁদের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে জেনে নিতে বলেছেন এই কথিত স্বর্ণ ব্যবসায়ী। 

এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি আরাভ খান, আমিই আপন, আমিই হৃদয় এবং আমি রবিউল ইসলাম।’ 

২০১৮ সালের ৮ জুলাই ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) পুলিশ ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার আসামি কি না জানতে চাইলে আরাভ খান বলেন, ‘ঘটনাটি আমার অফিসে ঘটেছে, তবে আমি সেখানে ছিলাম না। আমার অফিসের সহকারীরা আমাকে ফোনে জানিয়েছেন। ওটা একটি দুর্ঘটনা ছিল।’

ছদ্মনাম ধারণ করার বিষয়ে জানত চাইলে আরাভ খান খেপে যান। একটু পরই বলেন, ‘আমি কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি না। কিন্তু হাজার হাজার লোক আমাকে ফোন দিচ্ছে, তাই এভাবে কথা বললাম। আমি আমার ফেসবুক লাইভে সব বলে দিয়েছি।’ এ সময় তিনি দেশের কয়েকজন প্রভাবশালীর নাম বলেন। ওই প্রভাবশালীদের কাছ থেকে তাঁর বিষয়ে জেনে নিতে বলেন। 

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে আজ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংস্থার প্রধান হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা ইন্টারপোলের সহায়তা নিয়ে তাঁকে দেশে ফেরত নিয়ে আসব। তিনি বর্তমানে দুবাই রয়েছেন। তাঁর ভারতের পাসপোর্ট রয়েছে। বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। তাঁর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আদালতের ১২টি পরোয়ানা পেয়েছি আমরা।’ 

ডিবির প্রধান আরও বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে। রবিউল নামে আরেক তরুণকে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন কথিত আরাভ খান। আমরা তা-ও তদন্তে পেয়েছিলাম। এ সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করার আগেই তিনি পালিয়ে ভারতে যান। ভারতে গিয়ে নাম পরিবর্তন করেন।’ 

ডিবি পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরাভ খানের প্রকৃত নাম রবিউল ইসলাম। তিনি পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার পলাতক আসামি। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার আশুনিয়া গ্রামে। 

এদিকে আজ দুপুরে নিজের ফেসবুক আইডি দিয়ে লাইভে আসেন রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। তিনি লাইভে এসে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি খুনের মামলার আসামি। তবে এই হত্যার সঙ্গে আমি জড়িত না। আমার অফিসে খুনটি হয়েছিল। খুন হওয়ার পর আমার অফিস সহকারীরা আমাকে ফোন দিয়েছিল। তখন আমি জেনেছি। তবে হত্যার সঙ্গে আমি জড়িত না।’ 

ব্যবসায়িক প্রতিহিংসার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি আমেরিকার গ্রিন কার্ডধারী, কানাডার পাসপোর্ট আছে। আমার বন্ধুরা আমাকে আমেরিকা চলে যেতে বলল, তবে আমি ভয় পাচ্ছি না। কারণ, আমি অপরাধী না।’ তিনি নিয়মিত বাংলাদেশে আসেন বলেও জানান। এ সময় ৬৪ জেলায় মসজিদ নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। নেতিবাচক প্রতিবেদন করায় গণমাধ্যমেরও সমালোচনা করেন।

 ২০১৮ সালের ৮ জুলাই বনানীতে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন পুলিশ কর্মকর্তা মামুন ইমরান খান। পরদিন তাঁর মরদেহ গাজীপুরের উলুখোলার একটি জঙ্গলে নিয়ে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান সম্প্রতি আলোচনায় আসেন দুবাইয়ে ‘আরাভ জুয়েলার্স’ নামে একটি গয়নার দোকান উদ্বোধনে তারকাদের নিমন্ত্রণ জানিয়ে। গতকাল বুধবার দোকানটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছিলেন সাকিব আল হাসান, ইউটিউবার হিরো আলম, নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস, গায়ক ইসরাত জাহান জুঁই, আরফিন আকাশ, মাইনুল আহসান নোবেল, জাহেদ পারভেজ পাবেল, বেলাল খান ও রুবেল খন্দকার।

 ২০১৯ সালের ৮ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক শেখ মাহবুবুর রহমান সিএমএম আদালতে পুলিশ মামুন ইমরান খান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দেন। 

অভিযোগপত্রে আসামিরা হলেন রবিউল ইসলাম (৩০), রবিউলের স্ত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়া (২১), ইমরানের বন্ধু রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১), সারোয়ার হোসেন (২৩) এবং দুই কিশোরী মেহেরুন নেছা স্বর্ণ ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফী (১৬) ও ফারিয়া বিনতে মীম ওরফে মাইশা (১৬)। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত