রেজা কিবরিয়া–নুরের দ্বন্দ্ব তদন্ত করবে গণ অধিকারের কেন্দ্রীয় কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩, ০০: ১৬
আপডেট : ২১ জুন ২০২৩, ০০: ৫৯

আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হক নুরের মধ্যকার দ্বন্দ্ব ও তাঁদের তৎপরতাকে নীতিবহির্ভূত এবং দলের শৃঙ্খলার ও জনমনে দলের ইমেজ ক্ষুন্নকারী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি। তাঁরা পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ জুন) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন—দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান, ব্যারিস্টার জিসান মহসিন, সাদ্দাম হোসেন, জাকারিয়া পলাশ ও সহকারী আহ্বায়ক সাকিব হোসাইন।

গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গত ১৮ জুন আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার বাসার ছাদে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার আলোচিত-সমালোচিত ইনসাফ কমিটির মিটিংয়ে যাওয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হক নুরের ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কথিত সদস্য মেন্দি সাফাদির সঙ্গে দেখা করার কারণ ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। উক্ত ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবের অনুগত সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে সভার সভাপতি ড. রেজা কিবরিয়া সভাস্থল ত্যাগ করেন এবং সঞ্চালক সভা মুলতবি ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা বলেন, ‘এর পরদিন গত ১৯ জুন সদস্যসচিব নুরুল হক নুর একটি সভার আহ্বান করেন, যা গঠনতন্ত্রের ৩৬ (খ), ৩৭ (ক), ৩৮, ৩৯ (খ) ও ৩৯ (ঘ) অনুযায়ী অবৈধ। তবুও আমাদের কয়েকজন দলের স্বার্থে সেখানে উপস্থিত হই এবং কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে আহ্বায়ক দেশে আসার পূর্ব পর্যন্ত প্রটোকল অনুযায়ী ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনকে অন্তর্বর্তীকালীন আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করার পরামর্শ দেই।’ 

তবে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের মতামতকে উপেক্ষা করে বানোয়াট প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় জানিয়ে তাঁরা বলেন, সেখানে মুহাম্মদ রাশেদ খাঁনকে সরাসরি দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ঘোষণা করা হয়। অবৈধ এই সিদ্ধান্তে দলের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। 

তাঁরা আরও বলেন, ‘এদিকে মঙ্গলবার (২০ জুন) আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার দলের ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন ও সদস্যসচিব নুরুল হক নুরকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও গণ অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হাসান আল মামুনকে ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব ঘোষণা করেন। আমরা মনে করি, আহ্বায়কের এই কাজটি সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে।’ এমন পাল্টাপাল্টি কার্যক্রমে দলে বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বলে জানান তাঁরা।

উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সদস্যগণ গঠনতন্ত্রের ১৮-গ-৮ ধারার ক্ষমতাবলে দলের এইরূপ পরিস্থিতিতে আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হক নুরের এই সব তৎপরতাকে ‘নীতিবহির্ভূত’ বলে ঘোষণা করেন। তাঁরা আরও বলেন, ‘এমন তৎপরতা দলের শৃঙ্খলার ও জনমনে দলের ইমেজ ক্ষুন্নকারী বলে মনে করছি।’ 

পরিস্থিতি নিরসনে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে তাঁরা বলেন, ‘সেই সঙ্গে ঘটনার তদন্ত ও পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অনুরোধ করা গেল।’ 

গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্যসচিব নুরুল হক নুরের মধ্যকার দ্বন্দ্বে রেজা কিবরিয়াকে পদে রেখেই গত সোমবার রাশেদ খানকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ঘোষণা করে নুর ও তাঁর অনুসারীরা। এদিকে মঙ্গলবার নুরুল হক নুর ও রাশেদ খানকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে হাসান আল মামুনকে ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব করে বিজ্ঞপ্তি দেন রেজা কিবরিয়া। এতে দলের মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয় এবং ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা উভয় পক্ষের কার্যক্রমকে নীতিবহির্ভূত বলে তদন্ত কমিটি গঠন করল।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত