অবৈধ, ফ্যাসিস্ট সরকারের কারণে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে: বিএনপি নেতা খোকন

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ১২: ০১
আপডেট : ২৫ মে ২০২৩, ১৪: ২৭

একটি ‘অবৈধ, ফ্যাসিস্ট সরকারের’ কারণে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাঁর সমাধিতে দলের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন তিনি। 

খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘১৫ বছর ধরে গণতন্ত্র অবরুদ্ধ, দেশে আইনের শাসন নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নেই। এটা বাংলাদেশ কেন, গোটা বিশ্ব সেটি অনুধাবন করছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম খুন, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং এবং যে অত্যাচার হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাতজনের বিরুদ্ধে স্যাংশন দিয়েছিল। কিছুদিন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার উন্নত হলেও আবার একই ধারা অব্যাহত রেখেছে। কিছুদিন আগে নারায়ণগঞ্জ ও নওগাঁয় যে ঘটনা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এসব ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’ 

বিএনপি নেতা খোকন বলেন, ‘বিরোধী দলের ১ লাখ ২ হাজার মামলা, প্রায় ৪০ লাখ আসামি, ৬০১ জনকে গুম করা হয়েছে, ৭৯৫ জনকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অধীনে হত্যা করা হয়েছে এবং এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এটি আমাদের বক্তব্য নয়, এটি মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বক্তব্য।’

 ‘নির্বাচনে বাধাদানকারীদের ভিসা দেওয়া হবে না’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন ঘোষণার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাংবাদিকদের খোকন বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে, বাংলাদেশে নতুন করে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে, স্যাংশন দেওয়া হবে এবং গণতন্ত্রের জন্য যে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন সেটি যথাযথ মনে করি। একটি অবৈধ সরকারের কারণে, ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের অধিকারকে হরণ করার কারণে, আজকের অবস্থার সৃষ্টি করেছে। গোটা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ করেনি, সেটি স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও আমাদের মানসম্মান বিনষ্ট হচ্ছে।’ 

খোকন আরও বলেন, ‘একটি নির্বাচনকালীন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য, ইনক্লুসিভ এবং অংশগ্রহণমূলক ক্রেডিবল ইলেকশনের জন্য আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ থেকে শুরু করে সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাইছে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হোক। জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ হরণ করা হয়েছে, সেটাকে লেভেল ফিল্ড করার জন্য একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি, সেখানে কারা বাধা দিয়েছে, কারা আগুনসন্ত্রাস করেছে সেটি রাষ্ট্র দেখেছে। যারা করেছে তারা অধিকাংশই সরকারি দলের নেতা-কর্মী। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে।’ 

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘খবর আমাদের নয়, আওয়ামী লীগের আছে, হুঁশিয়ারি আওয়ামী লীগকে দিয়েছে। দিনের ভোট রাতে করতে দেবে না। একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো, নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার প্রয়োজন। সব স্তরের জনগণ, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজের দাবি এটি। দাবিকে উপেক্ষা করে গায়ের জোরে একতরফা নির্বাচন দিলে জনগণ তা প্রতিরোধ করবে এবং রাস্তায় নেমে আসবে। দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে না দিয়ে শুভবুদ্ধির উদয় হওয়া উচিত। বাংলাদেশ কি পুরো বিশ্ব থেকে একঘরে বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে! পুরো পৃথিবী বাংলাদেশকে বয়কট করবে। জনগণের দাবি আদায় করার জন্য আমরা রাজপথে আছি, জনগণের দাবি আদায়ের জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আছি। একতরফা নির্বাচন বাংলাদেশে করতে দেওয়া হবে না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছি, তারা (আওয়ামী লীগ) শান্তির নামে অশান্তি সৃষ্টি করছে।’ 

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রসঙ্গে খোকন বলেন, ‘নজরুল জীবদ্দশায় দেশের জন্য, এই দেশের মানুষের জন্য যেখানে অন্যায়, অত্যাচার হয়েছে সেখানে বিদ্রোহ করেছেন, তার লেখনীতে তা ফুটে উঠেছে। বাংলা সাহিত্যে তিনি যে অবদান রেখেছেন সেটি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ 

শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত