১০ মাসের ব্যবধানে আবার ঢাকায় আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। কিন্তু এবার আর তাঁকে নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিএনপি। লুর আসার খবরে বিএনপি চাঙা হয়েছে—ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এমন দাবি তুললেও এ বিষয়টিকে অতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না দলটির নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘আমাদের কাছে এটা (ডোনাল্ড লুর সফর) অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যতটা গুরুত্বপূর্ণ কুকি-চিনের আক্রমণ। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। ডোনাল্ড লু তো অনেক দূরের মানুষ। আমরা শঙ্কিত আমাদের নিজের দেশের অবস্থা নিয়ে।’

রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গতকাল সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এমন কথা বলেন নজরুল ইসলাম। এর আগে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা। বৈঠকে নজরুল ইসলাম খান ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সেলিমা রহমান ও ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান অংশ নেন।

দায়িত্ব পাওয়ার পর চারবার বাংলাদেশ সফর করেছেন লু। সর্বশেষ গত বছরের জুলাইয়ে এসেছিলেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে তাঁর সেই সফর নিয়ে বিএনপিতে এক ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। নির্বাচন নিয়ে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রেক্ষাপটে ধারণা করা হচ্ছিল, বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপে বিএনপি বিশেষ সুবিধা পাবে। বিএনপির নেতা-কর্মীদের কথাতেও এমন মনোভাবের বিষয়টি তখন ফুটে উঠেছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন হয়নি।

দুই দিনের সরকারি সফরে আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন ডোনাল্ড লু। নির্বাচনের পরে লুর এই সফর নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। কয়েক দিন ধরেই এ নিয়ে একেক সময় একেক কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রীরা। লুর সফরে প্রতিপক্ষ বিএনপি চাঙা হয়েছে বলেও দাবি তুলেছেন ক্ষমতাসীনেরা।

তবে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলনে লুর সফর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এসব নিয়ে আমরা আগ্রহী না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনগণের ওপরই আমাদের ভরসা, আমাদের পুরো আস্থা, সেই আস্থার ওপরে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি। রাজনীতিও আমাদের জনগণকে নিয়ে।’

যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচির চিন্তা
যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির জন্য শরিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে বিএনপি। এর অংশ হিসেবে সোমবার গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও লেবার পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন দলটির নেতারা।

এসব বৈঠক প্রসঙ্গে বিএনপির নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জনগণকে সম্পৃক্ত করে কীভাবে আগামী দিনে অগ্রসর হতে পারি, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করার চিন্তা করছি। আমাদের জোটগুলি তারা নিজেরা বসবেন, আলোচনা করবেন। নিজেরা আলোচনা করে আবার আমাদের সঙ্গে বসবেন। আমরা অনেক জোট ও দলের সঙ্গে আলোচনা করছি। সেই আলোচনার প্রেক্ষিতে আগামী দিনের কর্মসূচি ঠিক হবে।’

বৈঠকের আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি। যারা মানুষের ন্যায্য আন্দোলনে সমর্থন করতে চায়, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। আর কেউ বিরোধিতা করলে আমরা তার নিন্দা জানাই।’

আন্দোলনের নামে বিএনপি আবারও সহিংসতার ষড়যন্ত্র শুরু করেছে—ক্ষমতাসীনদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি সহিংসতায় বিশ্বাস করে না, বিএনপির সমমনারাও সহিংসতা করে না। সহিংসতা সরকার করেছে এবং সেটার দায় আমাদের ওপর চাপিয়েছে।’

বৈঠকে সমমনা জোটের নেতাদের মধ্যে এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব শাহ আহমেদ বাদল, গণদলের চেয়ারম্যান এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কারি মো. আবু তাহের, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এম এন শাওন সাদেকী ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল ইসলাম অংশ নেন।