চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল বিদেশিদের দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে: সমাবেশে বক্তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৭: ৫৮
Thumbnail image

চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।

তাঁরা বলছেন, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এখনো ফ্যাসিবাদের দোসরেরা চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নানা কলাকৌশলে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। বন্দরকে রক্ষায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতাও চান নেতারা।

আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে ‘দেশ বাঁচাও, বন্দর বাঁচাও আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, গণফোরামের কো-চেয়ারম্যান সিনিয়র অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্যসচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মো. রফিকুল ইসলাম।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের তৎপরতা চলছে। নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনালে দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার কোটি টাকার লেনদেন করা হচ্ছে। যাঁরা এই কনটেইনার টার্মিনালের দায়িত্বে আছেন, তাঁরা রাষ্ট্রকেও বড়সংখ্যক রাজস্ব দিয়ে আসছেন। কিন্তু এখন বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

ষড়যন্ত্র বন্ধের উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন উপদেষ্টাকে আগামী ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে সাইফুল হক বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল দুবাইভিত্তিক কোম্পানিকে দেওয়ার যে তৎপরতা, তা আপনি স্থগিত করবেন।’

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক অন্তর্বর্তী সরকারের নৌপরিবহন উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর কোনোভাবেই বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে পারি না। লিজ দিতে পারি না। আপনারা এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না, যা সরকারকে বিতর্কিত করবে। যেটা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। বাংলাদেশের জনগণ ও গণ–অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতার কাছে আপনাদের দায়বদ্ধতা আছে। কিন্তু কোনো বিদেশি কোম্পানি, সংস্থা কিংবা স্বার্থের কাছে আপনাদের মাথা নত করার কোনো সুযোগ নাই।’

নুরুল হক নুর বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। সেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের মতো একটা বিষয় নিয়ে রাজপথে নেমে কথা বলতে হবে—এটা আমরা আশা করিনি। এখনো দেশীয় কোম্পানি বন্দর পরিচালনা করছে, সেখানে নতুন করে কেন বিদেশি কোম্পানিকে নিয়ে আসতে হবে। এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয় আছে।’

নৌপরিবহন উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশের ও জাতীয় স্বার্থে বন্দরকে বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্ধক দেওয়ার অপতৎপরতা বন্ধ করুন। দেশীয় কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিন। অনতিবিলম্বে চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে আপনাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। অন্যথায় দেশের জনগণ আবারও রাজপথ নামবে।’

সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ‘যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে গলাবাজি করত, তারা দেশটাকে বিক্রি করে এখন ভারতে পালিয়ে আছে। বাংলাদেশটা এমন একটা জায়গায় চলে গিয়েছিল, যেখানে পুলিশ ও সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা যেত, কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলা যেত না। স্বৈরাচার সরকার ভারতের প্রভুত্ব হিসেবে মেনে নিয়েছে। বাংলাদেশের হৃৎপিণ্ড চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে, ষড়যন্ত্র চলছে।’

সুব্রত চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে অনেক আগে থেকেই ষড়যন্ত্র হচ্ছে। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায় আছে, চট্টগ্রাম বন্দরকে কোনো বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়া যাবে না। মোংলা বন্দর নিয়েও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। বন্দর জাতীয় সম্পদ—এটা নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।

মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের জাতীয় সম্পদ। জাতীয় আয়ের একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। আমাদের যদি দক্ষতা ও যোগ্যতা না থাকে তাহলে ধীরে ধীরে তা বাড়াতে হবে। বন্দর বিদেশিদের হাতে গেলে আমাদের হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট হবে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। গুরুত্বপূর্ণ এই বন্দর নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র চলতে দেওয়া যাবে না। সব ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতে হবে।’

শাহাদাত হোসেন সেলিম নৌপরিবহন উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা: সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত