Ajker Patrika

দলে দ্বন্দ্ব নিয়ে চিন্তিত আ.লীগ

তানিম আহমেদ, ঢাকা
আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮: ১৭
দলে দ্বন্দ্ব নিয়ে চিন্তিত আ.লীগ

সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যানার সরানো নিয়ে বরিশালে তুলকালাম ঘটনা ঘটে। প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ মুখোমুখি দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত ওপরের চাপের কারণে উভয় পক্ষই সমঝোতায় আসে। তবে ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের মধ্যে দ্বন্দ্ব। তবে নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় দলের প্রায় সব পর্যায়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ছাড়া একটি জেলাও নাই বলে জানান তাঁরা।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, টানা ক্ষমতায় থাকায় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চাহিদা বেড়ে গেছে। অনেকেই পদ-পদবি ও জনপ্রতিনিধি হয়ে নিজের আখের গুছিয়েছেন। সেখান থেকে ছিটকে যাওয়ায় অনেকে প্রকাশ্য সমালোচনা করছেন। কেউ আবার না পাওয়ার বেদনায় সমালোচনা করছেন। আবার দলের ত্যাগী কর্মীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের এমন কোনো জেলা নেই যেখানে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একসঙ্গে হাত ধরে চলেন। প্রতিটি জেলায় দ্বন্দ্ব আছে। দল ক্ষমতায় আর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে পারলে টাকা কামানোর সুবিধা পাওয়া যায়। এই দ্বন্দ্বের বিষয়টি বেশি ভাবাচ্ছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে।

আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, দলের তৃণমূলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে ছোটখাটো বিরোধ বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যে এসেছে। ছোট সমস্যাও অনেক সময় জাতীয় ইস্যুতে পরিণত হয়েছিল। যাতে দল বিব্রত। বিষয়টি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার গণভবনে অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হবে। প্রায় এক বছর পর অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা নিয়ে দিকনির্দেশনা দেবেন দলীয় সভাপতি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল করিম চৌধুরীর দ্বন্দ্ব চরমে। মির্জা কাদের একরামুল করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁকে পদ থেকে সরানোর দাবি জানিয়ে আসছেন বছরের শুরু থেকেই। এ নিয়ে জেলার রাজনীতি উত্তপ্ত। কোম্পানীগঞ্জে প্রায় ঘটছে সংঘর্ষ। দুই পক্ষের সহিংসতায় প্রাণ গেছে এক সাংবাদিকসহ দুজনের।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে রাজনৈতিক, সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে।’

তৃণমূলের বিভিন্ন জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিংবা স্থানীয় প্রভাবশালী সাংসদদের সঙ্গে সম্পর্ক দা-কুমড়ার। কিছু জায়গায় আবার নেতারা কেন্দ্রীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের চাপে কোণঠাসা। ফরিদপুর, মাদারীপুর, মুন্সিগঞ্জ, চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ, কক্সবাজার, কুমিল্লা উত্তর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, লক্ষ্মীপুর, কুড়িগ্রাম, নাটোর, চাঁদপুর, বগুড়া, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, নরসিংদীসহ প্রায় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় দ্বন্দ্ব রয়েছে। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ভারপ্রাপ্তকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এক নেতা বলেন, প্রভাব বিস্তারশালীরা মনে করেন জেলা যদি তাঁদের হাতে থাকে, তাহলে তাঁরা যেভাবে চাইবেন সেভাবেই চলবে।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে গিয়ে কুমিল্লা-১ আসনের সাংসদ সুবিদ আলী ভূঁইয়া এবং তাঁর ছেলে মোহাম্মদ আলী ও কুমিল্লা-৪ আসনের সাংসদ রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের রোশন আলী মাস্টারের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতারা। তাঁরা এই দুই সাংসদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে বিএনপিকে সহযোগিতার অভিযোগ করেন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের দ্বন্দ্ব অনেকটাই প্রকাশ্য। সেখানে প্রায় বহিষ্কার ও পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটেছে। দ্বন্দ্বের কারণে জেলার চকরিয়া-পেকুয়ার সাংসদ জাফর আলমকে চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছিল।

নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের সঙ্গে কোন্দল প্রকট। শিমুলের বিরুদ্ধে দলীয় কর্মসূচিতে প্রকাশ্য অভিযোগও করেন সভাপতি কুদ্দুস। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানও পৃথকভাবে পালন করেন তাঁরা।

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম দুলাল পাটোয়ারী বলেন, ত্যাগী নেতারা কোন্দল করেন না। তাঁরাই কোন্দল করেন, যাঁরা হঠাৎ করে দলে এসে নেতা হয়ে সুবিধা আদায় করেন।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘এখন নাম আছে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়, কিন্তু আমরা আসলেই ক্ষমতার ধারেকাছেও নাই। একসময় মোশাররফ সাহেবের অত্যাচারে ছিলাম। এখন তিনি যাওয়ার পরে কিসের মধ্যে কীভাবে বাস করছি, তা বলতে পারব না। এখন আমাদের দলের প্রেসিডিয়াম মেম্বার আবদুর রহমান, ফরিদপুর-৪ আসনের সাংসদ নিক্সন চৌধুরী এবং শামীম হকেরা প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন। আমাদের কিছুই করার নেই। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছি।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, গণতান্ত্রিক দলে, মুক্ত সমাজে ভিন্নমত থাকবেই। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা একবারে বন্ধ করার সুযোগ কম। তবে, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন মানুষ খুব উচ্চাভিলাষী হয়ে গেছে। প্রত্যাশা এত বেড়ে গেছে যে যারা থানার কমিটিতে ঢুকতে পারত না, তারা এখন চায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঢুকতে। প্রত্যাশা বেড়ে যাওয়ায় কোন্দল হবে, সেটাই স্বাভাবিক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত