Ajker Patrika

লেভারকুজেনের রূপকথার নায়ক আলোনসো

উপল বড়ুয়া, ঢাকা
আপডেট : ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ১০: ৩৪
লেভারকুজেনের রূপকথার নায়ক আলোনসো

এখন থেকে কেউ আর বেয়ার লেভারকুজেনকে ‘নেভারকুজেন’ ডাকার দুঃসাহস করবে না। লিগ জিততে না পারায় শত বছর ধরে যে অপবাদ সইতে হয়েছে, পরশু রাতে তার ইতি ঘটল। নিজেদের ১২০ বছরের ইতিহাসে প্রথম বুন্দেসলিগা জিতল লেভারকুজেন। এখন থেকে তারা ‘উইনারকুজেন’—জার্মান ফুটবলের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন।

২০১২-১৩ মৌসুমের পর থেকে বায়ার্ন মিউনিখের সিন্দুকে বন্দী শিরোপা কেড়ে নিল লেভারকুজেন। মিউনিখ থেকে ১১ বছর পর বুন্দেসলিগা গেল নতুন এক শহরে। রাইন নদীর পূর্ব দিকের লেভারকুজেনে। শিরোপা জয়ের এই রাত কখনো ভোলার নয় শহরটির অধিবাসীদের। এমন একটি মুহূর্তের জন্যই গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের ‘নিঃসঙ্গতার শত বছর’ উপন্যাসের মাকোন্দো গ্রামের বুয়েন্দিয়া পরিবারের একেকজন সদস্যের মতো দিন কাটছিল তাদের। 

সেই নিঃসঙ্গতার ইতি হলো। ফ্লোরিয়ান উইর্টজের হ্যাটট্রিকে ভেরডার ব্রেমেনকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচে শেষ বাঁশি বাজতেই নিজেদের মাঠ বেঅ্যারেনায় নেমে এল হাজারো মানুষ। সবার গায়ে লেভারকুজেনের লাল-কালো রঙের জার্সি। কারও কারও হাতে বুন্দেসলিগার ডামি ‘শিল্ড’। খেলোয়াড় ও সমর্থকেরা মিশে গেল এক স্রোতে। হাতে প্রিয় ক্লাবের স্কার্ফ উঁচিয়ে গাইল রক ব্যান্ড কুইনের ‘উই আর দ্য চ্যাম্পিয়ন’। 

দাপুটে জয়ে সমর্থকদের সামনে অপরাজিত থেকে শিরোপা নিষ্পত্তি, সেটিও ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোর মধ্যে সবার আগে আর দুইয়ে থাকা বায়ার্নের চেয়ে ১৬ পয়েন্ট এগিয়ে থেকে—এমন এক অবিশ্বাস্য মৌসুম কাটানোকে ‘অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয় ইতিহাস’ না বলে যে উপায় নেই! এ যেন এডগার রাইস বারোজের কোনো অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি অথবা হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান অ্যান্ডারসনের রূপকথার গল্প। যুগের পর যুগ অপেক্ষা শেষের গল্পটাকে যুগের পর যুগ স্মরণ করে যাবে লেভারকুজেনবাসী। 

আলোনসো দায়িত্ব নেওয়ার দুই বছরের মধ্যে লিগ জেতানো—রূপকথার গল্প যে এভাবেই লিখতে হয়, সেটি দেখালেন এই ২০০৫ সালের ইস্তাম্বুল জয়ের নায়ক। এই স্প্যানিশ ‘দ্য রেড বিয়ার্ডের (লাল দাড়ি) ’ অধীনেই ৩১ বছর পর কোনো শিরোপার স্বাদ পেল লেভারকুজেন। খেলোয়াড় হিসেবে বায়ার্নের হয়ে তিনটি লিগ জিতেছিলেন। তবে সাবেক ক্লাবের একচ্ছত্র দাপট ভাঙতে পারাকে জার্মানির ফুটবলের জন্যই ভালো মনে করছেন আলোনসো, ‘অন্য দলের জয় হয়তো বুন্দেসলিগা ও জার্মান ফুটবলের জন্য স্বাস্থ্যকর।’ 

প্রথমবার লিগ জেতার জন্য লেভারকুজেনের চেয়ে বেশি অপেক্ষা আর কোনো ক্লাবকে করতে হয়েছে কি? উত্তরে অবশ্য ‘হ্যাঁ’ বলতেই হবে। নিজেদের ১৪০ বছরের ইতিহাসে লেস্টার সিটি প্রথম প্রিমিয়ার লিগ জিতেছিল ২০১৫-১৬ মৌসুমে। তবে অপরাজিত থেকে নয়। সেই কীর্তি আছে শুধু আর্সেনালের। আর্সেন ওয়েঙ্গারের অধীনে ২০০৩-০৪ মৌসুমে আর্সেনাল লিগ জিতেছিল অপরাজিত থেকে। লিগের বাকি ৫ ম্যাচ জিতে সেই ‘ইনভিনসিবল আর্সেনালের’ কীর্তিতে ভাগ বসাতে পারবে কি লেভারকুজেন? 

সেসব ভবিষ্যতের কথা। তার আগে মাঠে, ড্রেসিংরুমে বুন্দেসলিগা জয়ের রীতি অনুযায়ী বিশাল বিশাল গ্লাসে বিয়ার পান ও নাচে-গানে আরও দুই দিন কাটাবে লেভারকুজেনের খেলোয়াড়েরা। এমন ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন আলোনসো, ‘আজ (গতকাল) ও আগামীকাল (আজ) আমাদের উদ্যাপন প্রয়োজন।’ স্প্যানিশ কোচ পরশুই উদ্যাপন করলেও আনুষ্ঠানিক শিরোপা উৎসব করবে মৌসুমের শেষ রাউন্ডে বেঅ্যারেনায় অগসবুর্গের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে। তখন না আরও সাজসাজ রব পড়বে লেভারকুজেন জুড়ে। 

শুধু আলোনসোকে নয়, এপ্রিলের মধ্যে শিরোপা নিষ্পত্তি করে ফেলা লেভারকুজেনের খেলোয়াড়দেরও দিতে হবে বড় কৃতিত্ব। এ মৌসুমে বুন্দেসলিগায় সর্বোচ্চ ১৩ অ্যাসিস্ট তাদেরই লেফ্ট ব্যাক আলেহান্দ্রো গ্রিমালদোর। এ তালিকার সেরা দশের মধ্যে চারজনই লেভারকুজেনের। তার মধ্যে উইর্টজের কথাটা বলতে হয় আলাদাভাবে। ১১ গোল ও ১০ অ্যাসিস্ট করে দুই তালিকাতেই সাতে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। এ মৌসুমে উত্তর লন্ডন ছেড়ে দুজন জার্মান ফুটবলে এসেছিলেন। একজন হ্যারি কেইন। বায়ার্ন ফরোয়ার্ডের ‘অভিশাপ’ খণ্ডানো হলো না। আর গ্রানিত জাকা জিতলেন লিগ। আর্সেনালে ৭ বছর কাটানোর পরও লিগ জিততে না পারা মিডফিল্ডারই বেঅ্যারেনায় আসাকে বললেন ‘নিজের নেওয়া সেরা সিদ্ধান্ত’। কখনো শীর্ষ লিগ না জেতা একঝাঁক তরুণের স্বপ্নই পূরণ করলেন আলোনসো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত