Ajker Patrika

মরুভূমিতে বিশাল হাতটি এল কীভাবে

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০৬ জুন ২০২৩, ১১: ৩৭
মরুভূমিতে বিশাল হাতটি এল কীভাবে

যত দূর চোখ যায় শুকনো, নিষ্ফলা জমি। জায়গাটির ভূপ্রকৃতি এমন, অনেকে একে মঙ্গল গ্রহের সঙ্গে তুলনা করেন। পৃথিবীর সবচেয়ে শুকনো জায়গাগুলোর একটি উত্তর চিলির এই আতাকামা মরুভূমি। প্যান আমেরিকান হাইওয়ে নামের এক রাস্তা চলে গেছে মরু কেটে। বিভিন্ন রাস্তার এক নেটওয়ার্ক বলতে পারেন এই প্যান আমেরিকান হাইওয়েকে, দৈর্ঘ্য ১৯ হাজার মাইল। 

এই মরুভূমির সড়ক দিয়েই গাড়িতে চেপে আসতে আসতে হঠাৎ একটা জায়গায় চোখ আটকে যাবে। অনেকেই প্রথম দেখায় একে মনে করে বসে মরীচিকা। বালু থেকে বেরিয়ে আছে বিশাল এক হাতের ছড়ানো পাঁচ আঙুল। যেন বিশাল কোনো দৈত্যকার মানুষের প্রায় গোটা শরীরটা কোনো বালুঝড়ে নিচে চলে গেছে, কেবল হাতের একটা অংশ বের করে আছে। 

তবে আরেকটু কাছাকাছি যেতেই বুঝবেন এটা মোটেই মরীচিকা নয়। বরং বিশাল একটি ভাস্কর্য। ঠিক, এর নাম ‘মানো দেল দেসিয়ারতো’ বা ‘হ্যান্ড অব দ্য ডেজার্ট’।

রাতের নক্ষত্রখচিত আকাশের পটভূমিতে ভাস্কর্যটিকে অদ্ভুত সুন্দর দেখায়বিশাল এই হাতের উচ্চতা ১১ মিটার বা ৩৬ ফুট। কাছের  শহর আন্তোফাগাস্তার দূরত্ব ৪৬ মাইল। ওই শহরের লোকেরাই চিলিয়ান ভাস্কর মারিও ইরারাজাবালকে বললেন আতাকামা এলাকার জন্য এমন একটি ভাস্কর্য তৈরি করতে, যেটা সবার নজর কাড়বে। কাজেই তিনি তৈরি করলেন, হ্যান্ড অব দ্য ডেজার্ট।  বালুর ওপর ছড়িয়ে পড়া আঙুলগুলো যেন মরুর নীল আকাশ ছোঁয়ার তদবিরে ব্যস্ত।

হাতটি তৈরির অর্থের জোগান দেয় স্থানীয় সংস্থা করপোরাশিয়ন প্রো আন্তোফাগাস্তা। ভাস্কর্যটি তৈরি হয় ১৯৯২ সালে, কংক্রিট আর লোহা দিয়ে।

পর্যটকদের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভাস্কর্যটিতবে এই ভাস্কর্যটি দিয়ে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে তা পরিষ্কার নয়। শিল্পীও পরিষ্কার করেননি। কারও কারও ধারণা, প্রকৃতি ও এর বিভিন্ন নিয়ামকের কাছে মানুষ যে খুব ক্ষুদ্র তার ইংগিত রয়েছে এখানে। অন্যরা আবার বলেন, সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে মানুষের অগ্রযাত্রাকে বোঝানো হয়েছে এখানে।

অনেক ধরনের সাইন দিয়ে ভাস্কর্যে কিছু না লিখতে এবং জায়গাটি পরিষ্কার রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে পর্যটকদের। তবে এটা কানে দেন না ভাস্কর্যটি দেখতে আসা মানুষের বড় একটি অংশ। বিশেষ করে এটি তৈরির পর থেকেই গ্রাফিতি শিল্পীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। নিজেদের নাম থেকে শুরু করে স্লোগান ও নীতিবাক্য স্প্রে পেইন্ট দিয়ে অলংকৃত করেন ভাস্কর্যের নানা অংশে। তাই স্থানীয়রা বছরে দু্‌ই বার মরুভূমিতে একত্র হয়ে এটি পরিষ্কার করেন।

বালুর মাঝখান থেকে বের হয়ে আছে পাঁচটি আঙুলহাতটিকে দেখে নিঃসঙ্গ একটি কাঠামো মনে হলেও এটি আসলে একটি জোড়ার অংশ। অন্যটার দেখা পেতে হলে যেতে হবে উরুগুয়েতে। বেশি নয়, দুই হাতের মাঝখানের দূরত্ব ১ হাজার ২০০ মাইল। বুঝতেই পারছেন, সেটাও মারিও ইরারাজাবালার তৈরি। আটলান্টিক মহাসাগরের কাছে পান্তা দেল এস্তেতে বানানো হয়েছে। সেখানে পাঁচটি আঙুল আকাশমুখী হয়ে আছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য একটি বেঞ্চের ওপর থেকে ছড়িয়েছে আঙুলগুলো। এটির নাম মনুমেন্ট টু দ্য ড্রউনড।

ভাস্কর্যটি তৈরি হয় ১৯৯২ সালেআন্তোফাগাস্তা থেকে ভাস্কর্যটির কাছে যেতে হলে আপনাকে ধরতে হবে রুট ২৬ কিংবা ২৮। একপর্যায়ে এটি যুক্ত হয়েছে রুট ৫-এর সঙ্গে। মাইল ১৩০৯ ও ১৩১০-এর মাঝখানে পাবেন বিশালকায় হাতটিকে। পথে অবশ্য বিভিন্ন রোড সাইন চোখে পড়বে। ‘এসকালতুরা’ লেখা একটি সাইন যখন পাবেন, তখন ডান দিকে একটি পথ পাবেন। এটা ধরে এগোলেই পৌঁছে যাবেন হাতটির সামনে।

এই ভাস্কর্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নতুন নতুন ট্যুর গাইডরা যুক্ত হচ্ছেন পর্যটকদের এখানে নিয়ে আসতে। তাঁরাও মনে করেন চিলিতে বেড়াতে আসা মানুষের জন্য এটি বিশেষ কিছু হয়ে উঠছে।

হ্যান্ড অব দ্য ডেজার্টের উচ্চতা ১১ মিটারকাজেই দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি ভ্রমণে গেলে অবশ্যই এই দ্রষ্টব্য স্থানটি ঘুরে আসা উচিত আপনার। কিন্তু মনে রাখবেন জায়গাটি আতাকামা মরুভূমিতে। কাজেই সঙ্গে সানস্ক্রিন, প্রচুর পানি আর ট্যাংকভর্তি গ্যাস নিতে হবে। আপাত শেষ নেই এমন এক বালুর রাজ্যে গাড়ি চালানোটা কখনো কখনো ক্লান্তিকর হয়ে পড়ে। এ সময় খুব জোরে গাড়ি চালানো হলেই বিপদ। প্রমাণ হিসেবে রাস্তার পাশে দুর্ঘটনাকবলিত বিভিন্ন গাড়ির কঙ্কাল নজর কাড়বে। তবে দূর থেকে যখন ভাস্কর্যটির আভাস পাবেন, তখন মনে হবে এখানে না এলে কী ভুলটাই না করতেন!

সূত্র: সিএনএন, এটলাস অবসকিউরা, হিন্দুস্তান টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত