Ajker Patrika

বিপুল আয়েও সাফল্যের পাল্লা হালকা বিসিবির

রানা আব্বাস, ঢাকা
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২১, ১০: ০৪
বিপুল আয়েও সাফল্যের পাল্লা হালকা বিসিবির

‘আফগানিস্তানের টাকা নেই, আছে বুলেট! ওদের কাছেই আমরা হারি। ২০ (২১) বছর হয়ে গেল, এখনো টেস্ট র‍্যাঙ্কিংয়ে আমরা নয়ে-দশে আছি’—বিসিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও এসিসির সাবেক প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশরাফুল হক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অর্থবিত্তে গত এক দশকে বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) অবস্থান যতটা শক্তিশালী হয়েছে, ব্যাটে-বলে সাফল্যের গ্রাফ ততটা ওপরে ওঠেনি। শুধু সৈয়দ আশরাফ কেন, দেশের সব ক্রিকেটপ্রেমীরই এই আফসোস হবে।

টাকা ও মাঠের পারফরম্যান্সে অদ্ভুত বৈপরীত্য
গত ১০ বছরে বিসিবির পুঞ্জিভূত তহবিল বা স্থিতি বেড়েছে ৪০০ কোটি টাকা। ফিক্সড ডিপোজিটে (এফডিআর) বিনিয়োগ করে গত তিন অর্থবছরেই বিসিবি সুদ থেকে আয় করেছে ১৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেই বিসিবির এফডিআর ছিল ৫৪৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশের মতো মধ্যম আয়ের দেশের একটি ক্রীড়া সংস্থার তহবিল বিশাল হলেও ছেলেদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁদের সাফল্য তুলনামূলক কমই। শীর্ষ ধনী ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই (ভারত), ইসিবি (ইংল্যান্ড), সিএ (অস্ট্রেলিয়া)-কে যদি বাদও দেওয়া হয়; বাকিদের চেয়ে সাফল্যের বিবেচনায় পিছিয়েই থাকবে বিসিবি।

২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কা দলের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় প্রায় ১০ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নির্বাসনে থাকার পরও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) ক্যাবিনেটে গত এক দশকে উঠেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো শিরোপা। ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও জিতেছে তারা। পাকিস্তান জিতেছে ২০১২ এশিয়া কাপ।

আর্থিকভাবে ক্রমেই দুর্বল হতে থাকা শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের (এসএলসি) শোকেসে গত এক দশকে উঠেছে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১৪ এশিয়া কাপের ট্রফি। শ্রীলঙ্কা খেলেছে ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনাল। আর্থিকভাবে বিসিবির চেয়ে স্পষ্ট দূরত্বে থাকা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডসি) কদিন আগে ভারতকে হারিয়ে জিতেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ডকে (ডব্লউআইসিবি) সিরিজ আয়োজন করতে হাত পাততে হয় বিসিবির কাছে, তারা টানা দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন (২০১২, ২০১৬)।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে একমাত্র বৈশ্বিক শিরোপা এসেছে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে, সেটিও অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হাত ধরে। তার আগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশ নারী দলের এশিয়া কাপ জয়টাই ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিসিবির সবচেয়ে বড় সাফল্য। কিন্তু যে দলকে কেন্দ্র করে বিসিবির এত আয়, নামডাক, মানুষের বিপুল আগ্রহ—যে দল গত এক দশকে সমৃদ্ধ হয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহ, মোস্তাফিজুর রহমানের মতো বড় বড় তারকার উপস্থিতিতে; সেই দলের সর্বোচ্চ সাফল্য ২০১৯ সালের মে মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জয়। খোদ বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীও স্বীকার করছেন আর্থিক শক্তি বাড়ার সমানতালে বাড়েনি মাঠের সাফল্য, ‘শ্রীলঙ্কা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু আমরা তো চ্যাম্পিয়ন নই...।’ তবে তিনি টাকার সঙ্গে সাফল্য মেলাতে আগ্রহী নন। নিজাম উদ্দিন বলছেন, ‘টাকার সঙ্গে (মাঠের) সাফল্যের তুলনা হয় না। এটা তো এমন নয় ব্যবসায় বিনিয়োগ করলেন আর সঙ্গে সঙ্গে রিটার্ন পেলেন। শেয়ার মার্কেটও এটা না। এখানে একটু সময় দিতে হবে। আমরা হয়তো একটু বেশি সময় নিচ্ছি—এটি বলতে পারেন।’

বড় শিরোপা না জিতলেও বাংলাদেশ দল বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সাফল্য অবশ্য পেয়েছে। ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়, ২০১৭ সালে টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে হারানো। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার মাঠে টেস্ট সিরিজ ড্র; ২০১২, ২০১৬, ২০১৮ এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠা। ২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার এইট, ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা কিংবা ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনাল তো আছেই, ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে ভারত-পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা তিনটি ওয়ানডে সিরিজ জয়—এসব সাফল্য বিসিবিকে সহায়তা করেছে বড় অঙ্কের স্পন্সরশিপ মানি পেতে।

শিরোপা জয়েই নয়, আইসিসির তিন সংস্করণের র‍্যাঙ্কিংয়েও বাংলাদেশ দলের বড় অগ্রগতি নেই। ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ের ছয়ে ওঠাই বাংলাদেশের বড় সাফল্য। টেস্ট, টি-টোয়েন্টিতে এখনো নয়-দশ নম্বরেই আটকে আছে বাংলাদেশ। র‍্যাঙ্কিংয়ে দুরবস্থার কারণে দুই মাস পর হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে বাছাই পর্বের বৈতরণি পেরোতে হবে স্কটল্যান্ড, ওমান আর পাপুয়া নিউগিনির সঙ্গে খেলে। অথচ আর্থিকভাবে যথেষ্ট পিছিয়ে থাকা নবীন আফগানিস্তান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবে সরাসরি।

উন্নয়নে যেভাবে টাকার ব্যবহার
ক্রিকেটের উন্নয়নের চিত্রটা কেমন হওয়া দরকার, আজকের পত্রিকার কাছে সেটি খোলামেলাই ব্যাখ্যা করলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, আমরা একটা দিকে (আর্থিক) উন্নত করেছি, এখন আরেকটি দিকে (মাঠের পারফরম্যান্স) উন্নতি করতে হবে। আমরা কৃচ্ছ্র সাধন করছি, তা নয়। প্রচুর ব্যয় করছি। ফল আসতে সময় লাগবে। পাঁচ-সাত বছর আগে আইসিসিতে বলেছিলাম, আমরা বেশি করে খেলতে চাই। এখন আমরা অনেক ম্যাচ পাচ্ছি। উন্নতি করতে হলে আপনাকে প্রচুর খেলতে হবে। শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলছি। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতলাম, আয়ারল্যান্ডে ট্রফি জিতলাম—এগুলো উন্নয়নে প্রভাব ফেলে না। আমাদের উন্নয়ন তখন বোঝাবে, যখন অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে ম্যাচ জিতব, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে জিতব।

বিপুল টাকা থাকার পরও বিসিবির সাফল্য কেন কম, এ প্রশ্নে যে উত্তরটা মিলছে—মিরপুরের বাইরে খেলোয়াড় তৈরির ‘কারখানা’য় ক্রিকেট বোর্ডের বিনিয়োগ তুলনামূলক কম। বিসিবি খুব একটা ব্যয় করে না জেলা কিংবা বিভাগভিত্তিক ক্রিকেট উন্নয়নে। যদিও গেম ডেভেলপমেন্টে বেশ বড় অঙ্কই বরাদ্দ রাখে বিসিবি। চলতি অর্থবছরেও তাদের বরাদ্দ আছে ১৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ক্রিকেট উন্নয়নে ব্যয় করেছিল ২২ কোটি ২৬ লাখ টাকা। তার আগের অর্থবছরে ২৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গত এক দশকে বিসিবি ক্রিকেট উন্নয়নে গড়ে প্রতি অর্থবছরে ১৬-১৭ কোটি টাকা খরচ করেছে। যদিও লজিস্টিক অ্যান্ড প্রটোকলেই এর দ্বিগুণ খরচ করে বিসিবি। সৈয়দ আশরাফের প্রশ্ন, ‘আমাদের কোচ, আম্পায়ারিং এমনকি মাঠকর্মীদের উন্নয়নে কতটা খরচ করছি? এত টাকা যখন আছে, যদি পরিকল্পিতভাবে খরচ করা হতো, গত ১৫ বছরে আমাদের দেশের ক্রিকেট অনেক উন্নত হয়ে যেত। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্রিকেট উন্নত করা দরকার। প্রান্তিক পর্যায়ে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।’

উন্নয়ন যত ঢাকায়
ভুল বলেননি সৈয়দ আশরাফ। গেম ডেভেলপমেন্টে যে ব্যয় হোক, বেশির ভাগই ঢাকাকেন্দ্রিক। বয়সভিত্তিক দলের পরিচর্যা, হাইপারফরম্যান্স (এইচপি) দল, ক্রিকেট সরঞ্জামাদি কেনা, খেলোয়াড়দের চিকিৎসা, মেয়েদের ক্রিকেট উন্নয়ন, মাঠের উন্নয়ন ইত্যাদি খরচ ঢাকাকেন্দ্রিক হয়ে থাকে। অনেকে তাই রসিকতা করে বিসিবিকে ‘ডিসিবি’ বা ‘ঢাকা ক্রিকেট বোর্ড’ বলেন! অথচ বেশির ভাগ ক্রিকেটার উঠে আসে বিভিন্ন জেলা, প্রান্তিক এলাকা আর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে। গত দুই দশকে বাংলাদেশ দল সবচেয়ে বেশি ক্রিকেটার পেয়েছে খুলনা অঞ্চল থেকে। অথচ এই অঞ্চলে ক্রিকেটীয় কাঠামো কিংবা সুযোগ-সুবিধা কখনোই ঢাকার সঙ্গে তুলনীয় নয়। যে ঢাকায় এত সুযোগ-সুবিধা, বর্তমান জাতীয় দলে এই শহর থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার আছেন মাত্র তিনজন।

আঞ্চলিক ক্রিকেট উন্নয়নে বিসিবি
ঢাকার বাইরের খেলাটার উন্নয়নে বিসিবির ব্যয়ও খুব একটা উল্লেখ করার মতো নয়। গত ১০ বছরে বিসিবি জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ের ক্রিকেট উন্নয়নে অনুদান কিংবা অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে মোট ২ কোটি ২২ লাখ টাকা। সেটিও নিয়মিত নয়। ২০১১ সালে ১৭ লাখ, ২০১২ সালে ১ কোটি ৪২ লাখ, ২০১৬ সালে ১২ লাখ, ২০১৭ সালে ৩২ লাখ আর ২০১৯ সালে দেওয়া হয়েছে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

ঢাকার বাইরের ক্রিকেট উন্নয়নের ব্যয় নিয়ে বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, ‘আমরা দিই না (টাকা), কথাটা ঠিক না। যেসব জেলা আমাদের কাছে প্রতি বছরের ক্রিকেট ক্যালেন্ডার বাস্তবায়নের পরিকল্পনা দেয়, তাদেরকে আমরা একটি অঙ্ক দিই। যারা দেয় না, তাদের হয়তো দিতে পারিনি। আমরা তো সঠিক নিরীক্ষা আর পরিকল্পনা ছাড়া দিতে পারব না। বিভাগীয় বিনিয়োগ তখনই হবে, যখন আঞ্চলিক ক্রিকেটের কাঠামো আরও সুসংগঠিত হবে। যখন প্রত্যেকটা অঞ্চলে একটি ‘‘মিনি বিসিবি’’ থাকবে।’

মিনি বিসিবির ধারণাটা নিজাম উদ্দিন আরও স্পষ্ট করছেন এভাবে, ‘যখন আমরা এটি করতে পারব, তখন হয়তো আমাদের বরাদ্দ আরও বেশি হবে। খরচটা তখন কেন্দ্রীয়ভাবে না হয়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা যাবে। ইয়ুথ ক্রিকেট, স্কুল ক্রিকেট তারা করবে। কাঠামো দাঁড়িয়ে গেলে সেখানে আমার একজন ম্যানেজার দিতে পারব। পেশাদার কাঠামো না দাঁড় করালে আসলে ফলপ্রসূ হবে না।’

গত তিন বছরে বিসিবি অবশ্য ‘আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা’র নামে কিছু অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে। ২০১৯ সালে এই খাতে ১৭ লাখ ৮৯ হাজার, ২০২০ সালে ২৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা দিলেও চলতি অর্থবছরে আকস্মিকভাবে ৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

ক্রিকেট অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিসিবি
অবকাঠামোগত ও মাঠ উন্নয়নে অন্যান্য খাতের তুলনায় বিসিবির ব্যয় কমই বলতে হবে। গত তিন অর্থবছরে বোর্ড স্টেডিয়াম রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় করেছে ৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। বেশির ভাগ স্টেডিয়াম জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) আওতাধীন। তবে বিসিবি নিজ খরচে তৈরি করতে যাচ্ছে ঢাকার পূর্বাচলে শেখ হাসিনা স্টেডিয়াম। স্টেডিয়ামটির মূল নির্মাণকাজ শুরুর আগেই গত চার বছরে বিসিবির খরচ প্রায় দেড় কোটি টাকা। এর আগে বিসিবি সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে তাদের আওতায় থাকা কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। গত ১০ বছরে এই স্টেডিয়ামে খরচ প্রায় ২৫ কোটি টাকা।

‘বিভিন্ন অঞ্চলে আমরা আমাদের সুযোগ-সুবিধাগুলো উন্নত করব, যেন খেলোয়াড়েরা সুফল পায়। কক্সবাজারে যেমন আমরা একটা ইনডোর করার ব্যবস্থা করতে পারি। বরিশালে ভাঙাচোরা ইনডোরকে উন্নত করতে পারি। কার্যক্রমগুলো চলমান আছে। এত দিন জিমের সরঞ্জামাদি দেওয়ার মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে। (গত দেড় বছরে) অবকাঠামো উন্নয়নের দিকে আমরা যেতে পারিনি শুধুমাত্র মহামারির কারণে। আমাদের পরিকল্পনা কিন্তু আছে’—নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলছিলেন আঞ্চলিক ক্রিকেট উন্নয়নে তাঁদের পরিকল্পনার কথা।

খেলোয়াড় তৈরি হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হচ্ছে জেলা কিংবা বিভাগীয় শহরগুলোর টুর্নামেন্ট। প্রতিটি জেলা কিংবা বিভাগে টুর্নামেন্ট আয়োজন বিসিবির পক্ষে সম্ভব নয়, এই যুক্তি সামনে আসতে পারে। কিন্তু বিসিবির অধীনে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেটের মান নিয়ে গত কয়েক বছরে নিয়মিতই উঠেছে প্রশ্ন। সবচেয়ে নিচে থাকা তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট লিগ থেকে ২০১১ ও ২০১২ সালে বিসিবির আয় ছিল ২২ লাখ টাকা। ২০১৯ ও ২০২০ সালে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ টাকায়।

তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেট লিগ থেকে আয়টা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, একটা সময় বাছাইটা ছিল ভীষণ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। ৪০-৫০টা ক্লাব নির্ধারিত এন্ট্রি ফি দিয়ে অংশ নিত তৃতীয় বিভাগে ওঠার লড়াইয়ে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমেই উঠে আসত অনেক তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার। এটিই একজন পেশাদার ক্রিকেটারের প্রথম ধাপ। এখন সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা লিগটার মর্যাদা নেই বলে অনেক পৃষ্ঠপোষক আর দল গড়ার আগ্রহ খুঁজে পান না। নামে মাত্র দুটি দল এন্ট্রি ফি দিয়ে চলে আসে তৃতীয় বিভাগে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অবশ্য মনে করেন, তৃতীয় বিভাগে না পারলেও প্রতিভার প্রমাণ দেওয়ার আরও মঞ্চ আছে দেশের ক্রিকেটে, ‘আগে ক্লাব বেচা-কেনার সুযোগ ছিল। বোর্ড সেই বেচা-কেনার সুযোগ দেবে কেন? এটি হয়তো থামানো গেছে। আবার এটির অন্য প্রভাবও যে নেই, বলব না। হয়তো আমরা ট্যালেন্ট মিস করছি। কিন্তু ট্যালেন্টদের প্রমাণ করার অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে। স্কুল ক্রিকেট আছে। সেখানেও প্রতিভার প্রমাণ হতে পারে।’

এফডিআরের সুদ, আইসিসি থেকে পাওয়া লভ্যাংশ কিংবা স্পনসরশিপ মানি—সব মিলিয়ে বিপুল অর্থে বিসিবির ওপরের দিকটা উজ্জ্বল। কিন্তু মূল খেলা অবহেলিত থাকলে সৈয়দ আশরাফুল হকদের দীর্ঘশ্বাস আরও দীর্ঘায়িত হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

এবার যুক্তরাষ্ট্রের পাশে দাঁড়াল আইসিসি

ক্রীড়া ডেস্ক    
যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটারদের বেতন দেবে আইসিসি। ছবি: ক্রিকইনফো
যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটারদের বেতন দেবে আইসিসি। ছবি: ক্রিকইনফো

গুরুতর অপরাধের কারণে সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা (আইসিসি)। আইসিসির এই সহযোগী সদস্যদেশের সাময়িক কারণে সদস্যপদ স্থগিত হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট বোর্ড। দেউলিয়া হয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের পাশে দাঁড়াচ্ছে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা।

অচলাবস্থার মধ্য দিয়ে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটারদের যেন ক্ষতি না হয়, তাতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে আইসিসি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বেতনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে আইসিসি। ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থার সঙ্গে এ ব্যাপারে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক কমিটি (ইউএসওপিসি)। আইসিসি বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের স্থগিতাদেশ চলা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের হাই পারফরম্যান্স প্রোগ্রামের সবকিছু পরিচালনা করবে আইসিসি। প্রয়োজনে অর্থ বিনিয়োগ করতেও রাজি আইসিসি। যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের বেতন পরিশোধও আইসিসির এই প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত।’

দেউলিয়া ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটকে আইসিসি ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল। তাতে করে খেলোয়াড় ও হাই পারফরম্যান্স স্টাফদের বেতন পরিশোধ করা যেত। তবে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট (ইউএসএ ক্রিকেট)। এক বিবৃতিতে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা বলেছে, ‘দুর্ভাগ্যবশত যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের হয়ে সরাসরি সেই অর্থ প্রদান করা যায় কি না আইসিসি এখন সেটা দেখছে।’

যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটের অচলাবস্থা যেন কোনোভাবেই বৈশ্বিক আসরে দেশটির অংশগ্রহণের ব্যাপারে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সে ব্যাপারে আপ্রাণ চেষ্টা করছে আইসিসি। ২০২৬ সালে দুটি আইসিসি ইভেন্টে অংশ নেবে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর ২০২৮ সালে হবে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিক। এই অলিম্পিক দিয়ে ১০০ বছর পর অলিম্পিকে ফিরছে ক্রিকেট। আইসিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।

এ বছরের জুলাইয়ে বার্ষিক সাধারণ সভায় আইসিসি যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটকে তিন মাস সময় দিয়েছিল সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন এবং প্রশাসনিক সংস্কার করার জন্য। সেই সময় ইউএসএ ক্রিকেট বোর্ডকে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, সংস্কারের অগ্রগতির ওপর ভিত্তি করে আইসিসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে নির্ধারিত সময় পেরোলেও প্রত্যাশিত পরিবর্তন না আসায় সদস্যপদ স্থগিতের শাস্তি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেটকে।

জানুয়ারিতে নামিবিয়া, জিম্বাবুয়ের যৌথ আয়োজনে শুরু হচ্ছে ওয়ানডে সংস্করণে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। বুলাওয়েতে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামছে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র। বয়সভিত্তিক এই টুর্নামেন্টে ‘বি’ গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র। পরের মাসে আইসিসির আরেক ইভেন্টে মাঠে নামবে যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দল। ভারত-শ্রীলঙ্কায় হতে যাওয়া দশম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ হচ্ছে ২০ দলের। পাঁচটি করে দল করে চার গ্রুপ করা হয়েছে। ‘এ’ গ্রুপে পড়েছে ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, নামিবিয়া ও নেদারল্যান্ডস। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কেন ব্যর্থ বাজবল

অলিভার হল্ট
অ্যাশেজ হারে হতাশাচ্ছন্ন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। পরশু অ্যাডিলেডে। ছবি: এএফপি
অ্যাশেজ হারে হতাশাচ্ছন্ন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। পরশু অ্যাডিলেডে। ছবি: এএফপি

অ্যাডিলেডের রোববারটা নানা প্রতীকে ভরা। ক্রিসমাসের ঠিক আগের এই রোববারে সেন্ট পিটার্স ক্যাথেড্রালে কোরাস দলের ঢিলেঢালা লাল পোশাকের সদস্যরা জড়ো হয়ে চ্যান্সেলে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ করছিলেন, খ্রিষ্টধর্মীয় ভোজনোৎসবের মহড়ার শুরুর অপেক্ষায়। ২০০১ সালে এখানেই হয়েছিল স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের স্মরণসভা। অতীতে অ্যাডিলেড ওভালের এক প্রান্তের নাম যে উপাসনালয়ের নামে—কিং উইলিয়াম রোড ধরে কয়েক শ গজ দূরের সেই গির্জায় টেস্ট ক্রিকেটাররা কখনো কখনো খানিকটা মানসিক শান্তি খুঁজতে আশ্রয় নিতেন।

কিন্তু ক্রিসমাসের আগের শেষ সে রোববারে ইংল্যান্ড ক্রিকেটারদের কেউ ক্ষমা প্রার্থনা করতে আসেননি, কেউ প্রার্থনায় মুক্তি খোঁজেননি। টানা তৃতীয় টেস্টে বিধ্বস্ত হয়ে হারার আশঙ্কা আর মাত্র ১১ দিনের মধ্যেই ‘টাইটানিক লড়াই’ হিসেবে প্রচারিত সিরিজে অ্যাশেজ হারানোর ভয় থেকে বাঁচার আকুতি জানাতেও দেখা যায়নি দলের কাউকে।

তার বদলে তাঁরা আশ্রয় খুঁজেছেন ড্রেসিংরুমে; যেখানে কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক বেন স্টোকস গড়ে তুলেছেন ‘ভাইয়ের দল’সুলভ এক বন্ধন, যার উদ্দেশ্য বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে হেসে ওঠা।

অ্যাডিলেড টেস্টের শেষ দিনটি ছিল কার্যত ‘বাজবল’-এর শেষকৃত্যের। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া রেকর্ড ৪৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডের শুধু লোয়ার অর্ডার ব্যাটাররাই প্রশংসনীয় লড়াই করলেন। কিন্তু স্কট বোল্যান্ডের বল জশ টাংয়ের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে স্লিপে যখন তালুবন্দী হলেন মার্নাস লাবুশেনের, তখনই অ্যাশেজ রোমাঞ্চের সমাপ্তি।

৮২ রানে হার ইংল্যান্ডের। পার্থ ও ব্রিসবেনের পর টানা তৃতীয় হার। সিরিজে ৩-০। মাত্র ১১ দিনের মধ্যেই অ্যাশেজ হাতছাড়া। অস্ট্রেলিয়া প্রতিটি বিভাগে শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে বুঝিয়ে দিল, টেস্ট ক্রিকেট মানে শৃঙ্খলা, নিরবচ্ছিন্ন চাপ আর নিষ্ঠুর বাস্তবতা। সেখানে ইংল্যান্ডের ‘বাজবল’ দর্শন নগ্ন হয়ে পড়ল—দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার এক আরামদায়ক অজুহাত হিসেবে।

এটা বুঝতে শুরু করেছিলেন খোদ বেন স্টোকস নিজেও। তিনি চেয়েছিলেন বাজবল বদলে যাক, বিকশিত হোক। খেলোয়াড়দের মধ্যে আরও ‘লড়াকু মানসিকতা দেখতে চেয়েছিলেন। অ্যাডিলেডে আসার আগেই বাজবল তার বিশুদ্ধ রূপ হারাতে বসেছিল। ম্যাচ শেষে স্টোকস বললেন, বাইরের চাপ কমানোই ছিল এই দর্শনের মূল লক্ষ্য। ভুল হলে তা থেকে শেখার কথাও বললেন তিনি। জ্যাক ক্রলির দ্বিতীয় ইনিংসের উদাহরণ টেনে জানালেন, পরিস্থিতি বুঝে খেলাটাই আসল।

তবু বাস্তবতা কঠিন। ইংল্যান্ড এখন মেলবোর্নে যাচ্ছে সিরিজ হারের যন্ত্রণা উপশমের প্রলেপের খোঁজে, নতুন করে ভাবতে—এরপর কী? নিছক আগ্রাসন নয়, চাই বাস্তববাদী ও দীপ্ত পথচলা; যেখানে শৈল্পিকতা থাকবে, কিন্তু সে শৈল্পিকতায় থাকবে দায়িত্ববোধও। আর যদি এর একটা নাম দিতেই হয়, তবে তার স্রষ্টার নামেই ডাকা যায়—‘বেনবল’।

অনেকে বাজবলের পতনে আনন্দ পাবে। তাদের চোখে এটি ছিল দায়িত্বজ্ঞানহীন সাহসিকতা, ক্রিকেটের মতো গম্ভীর খেলাকে হালকা করে দেখার এক দর্শন। আর বাজবল খেলাটাকে বদলাতে চেয়েছিল বলেও অনেকেই একে ঘৃণা করেছে। তবে অ্যাডিলেডে ‘পুরোনো ধাঁচে’ হেরে যাওয়াতেও বিশেষ সান্ত্বনা নেই।

আমিও বাজবলের ভক্ত। টেস্ট ক্রিকেটে যে দুঃসাহস, রোমাঞ্চ আর অনিশ্চয়তা নিয়ে এসেছে এই বাজবল, তা উপভোগ করেছি। কিন্তু এই সফরে ম্যাককালাম নিজের দর্শনের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। প্রস্তুতি ও বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ‘ফ্রিস্টাইল’ নীতি নিয়েছিলেন। এই অ্যাশেজ বিপর্যয়ের দায় যদি কারও কাঁধে পড়তেই হয়, তবে সেটি তাঁরই।

হ্যাঁ, এই নির্মম সিরিজে বাজবলকে সিংহাসনচ্যুত করা হয়েছে। হয়তো তাঁর সময় শেষ। কিন্তু তাঁর আগের যুগের নিরানন্দ, পরাজয় মানা ক্রিকেটে ফেরার আকাঙ্ক্ষা—সেটা যেন আর কখনো না ফিরে আসে।

লেখক: ডেইলি মেইলের প্রধান ক্রীড়া লেখক (ডেইলি মেইল থেকে সংক্ষেপিত)।

থাকতে চান ম্যাককালাম

অ্যাশেজে হতাশাজনক পরাজয়ের পরও নিজের দায়িত্বে অটল থাকতে চান ইংল্যান্ড কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, তাঁর ভবিষ্যৎ এখন নিজের হাতে নেই। পাঁচ ম্যাচের সিরিজে মাত্র ১১ দিনের মধ্যে ৩-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়েছে ইংল্যান্ড। পদত্যাগের প্রশ্নে ব্রিটিশ গণমাধ্যমকে ম্যাককালাম বলেন, ‘আমি শুধু আমার কাজটা করে যাওয়ার চেষ্টা করব। যেসব জায়গায় আমরা ঠিকভাবে কাজ করতে পারিনি, সেগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করব এবং কিছু সমন্বয় আনার চেষ্টা করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রুদ্ধশ্বাস জয়ের পরও তলানিতে তাসকিনরা

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ২৭
তাসকিন আহমেদের শারজা ওয়ারিয়র্সের হারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁর সতীর্থ জেমস রিউর ব্যাটে উদ্ধার হয়েছে শারজা। ছবি: ক্রিকইনফো
তাসকিন আহমেদের শারজা ওয়ারিয়র্সের হারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তাঁর সতীর্থ জেমস রিউর ব্যাটে উদ্ধার হয়েছে শারজা। ছবি: ক্রিকইনফো

১৩৫ রানের লক্ষ্য বর্তমানে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এমন কী! যেখানে আগে ব্যাটিং করে ২০০, ২৫০ রান করেও জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত থাকার কোনো উপায় নেই। তবে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটে কখন যে কী হয়, সেটা অনুমান করা মুশকিল। গত রাতে তাসকিন আহমেদের শারজা ওয়ারিয়র্সের এমন মামুলি লক্ষ্য তাড়া করে জিততে শেষ বল পর্যন্ত খেলতে হয়েছে।

আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে গত রাতে আবুধাবি নাইট রাইডার্সের মুখোমুখি হয়েছে তাসকিনের শারজা ওয়ারিয়র্স। ৪ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয়ে এখন শারজা ওয়ারিয়র্সের পয়েন্ট ৬। ৮ ম্যাচ খেলে তাসকিনের দল ৩ ম্যাচ জিতেছে ও হেরেছে ৫ ম্যাচ। শারজা ওয়ারিয়র্সের মতো আবুধাবি নাইট রাইডার্স, গালফ জায়ান্টসেরও পয়েন্ট ৬। তবে নেট রানরেটের মারপ্যাচে পয়েন্ট টেবিলে তাসকিনের দল অবস্থান করছে ৬ নম্বরে। শারজার নেট রানরেট -০.৯১০। চার ও পাঁচ নম্বরে থাকা গালফ জায়ান্টস ও আবুধাবি নাইট রাইডার্সের নেট রানরেট ‍+০.০১৮ ও -০.৮০৫। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে ছয় দলের মধ্যে সবার ওপরে ডেজার্ট ভাইপার্স। দুই ও তিনে থাকা এমআই এমিরেটস ও দুবাই ক্যাপিটালসের পয়েন্ট ১০ ও ৮।

আবুধাবির দেওয়া ১৩৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গতকাল ১২.১ ওভারে ৪ উইকেটে ৬৫ রানে পরিণত হয় শারজা। এমন অবস্থায় শারজার ওপর রানরেটের চাপ বাড়তে থাকে। ৪৭ বলে ৭০ রানের সমীকরণের সামনে যখন শারজা, তখন ঢাল হয়ে দাঁড়ান অধিনায়ক সিকান্দার রাজা ও জেমস রিউ। পঞ্চম উইকেটে ৩৫ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন রাজা-রিউ। ১৮তম ওভারের শেষ বলে রাজাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন অজয় কুমার। ২৫ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২৮ রান করেন রাজা। পরের ওভারের (১৯তম ওভার) শেষ বলে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে (০) যখন জেসন হোল্ডার ফিরিয়েছেন, তখন জয়ের সুযোগ তৈরি হয় আবুধাবি নাইট রাইডার্সের।

হাতে ৪ উইকেট নিয়ে শেষ ওভারে ১২ রানের সমীকরণের সামনে এসে পড়ে শারজা ওয়ারিয়র্স। ইনিংসের শেষ বলে আন্দ্রে রাসেলকে শর্ট কাভারে ঠেলে সিঙ্গেল নিয়ে শারজাকে রুদ্ধশ্বাস জয় এনে দেন আদিল রশিদ। শারজা ওয়ারিয়র্সের ইনিংস সর্বোচ্চ ৪২ রান করে অপরাজিত থাকেন রিউ। ২৯ বলের ইনিংসে ৪ চার ও ১ ছক্কা মারেন তিনি। আবুধাবির অজয় ও হোল্ডার নিয়েছেন একটি করে উইকেট। শারজার ৪ উইকেটের জয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন রশিদ। ৪ ওভারে ১৮ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।

টস জিতে আগে ব্যাটিং নেওয়া আবুধাবি নাইট রাইডার্স ৩.৫ ওভারে ৪ উইকেটে ১০ রানে পরিণত হয়। ১০০-এর আগে অলআউট হওয়ার তুমুল শঙ্কা থাকলেও শেষের ঝড়ে সেটা এড়িয়েছে আবুধাবি। বিশেষ করে ১৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসা তাসকিনের ওভারে তাণ্ডব চালিয়ে ২৫ রান নেয় আবুধাবি। সেই ওভারে দুটি করে ছক্কা মারেন হোল্ডার ও রাসেল। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৩৪ রান করে আবুধাবি। তাসকিন ৪ ওভারে ৪১ রানে নিয়েছেন ২ উইকেট। শারজা অধিনায়ক রাজা ৪ ওভারে ১৭ রানে নিয়েছেন এক উইকেট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সালাহর শেষ মুহূর্তের গোলে জিম্বাবুয়েকে হারাল মিসর

ক্রীড়া ডেস্ক    
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জেতালেন মিসরের ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ। ছবি: এএফপি
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তে গোল করে দলকে জেতালেন মিসরের ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ সালাহ। ছবি: এএফপি

জিম্বাবুয়ে-মিসর ফুটবল ম্যাচ ১-১ গোলে ড্র ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু শেষ মুহূর্তের ‘ম্যাজিক’ বলেও তো একটা ব্যাপার আছে। মোহাম্মদ সালাহ ঠিক তা-ই করলেন। তাঁর শেষ মুহূর্তের গোলে মিসর জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।

মরক্কোর আগাদির শহরের আদরার স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে জিম্বাবুয়ে-মিসর। আফ্রিকা কাপ অব নেশনসে (আফকন) রেকর্ড সাতবারের চ্যাম্পিয়ন মিসর প্রথমেই গোল হজম করে বসে। পিছিয়ে পড়া মিসর উদ্ধার হয়েছে সালাহর শেষ মুহূর্তের গোলে। ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে ২-১ গোলে হারিয়েছে মিসর।

মিসরের বিপক্ষে ২০ মিনিটে গোল করে জিম্বাবুয়েকে এগিয়ে দেন প্রিন্স দুবে। সাতবারের চ্যাম্পিয়নরা প্রথমার্ধ শেষ করে ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকে। বিরতির পর সমতায় ফিরতে মিসরের লেগেছে ১৯ মিনিট। ৬৪ মিনিটে সমতাসূচক গোল করেন দলটির সিটি ফরোয়ার্ড ওমর মারমুশ। ম্যাচে অনেকবার গোলের সুযোগ মিস করে মিসর। গোলের সুযোগ নষ্ট করেন সালাহও। তবে সবকিছু যেন জমিয়ে রেখেছিলেন শেষ মুহূর্তের জন্য। ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ১ মিনিটে মিসরীয় এই ফরোয়ার্ড করেন জয়সূচক গোল। বাঁ পায়ের দারুণ এক শটে জিম্বাবুয়ের গোলরক্ষক ওয়াশিংটন আরুবিকে বোকা বানিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন সালাহ।

মারাক্কেশে ‘বি’ গ্রুপের অপর ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে অ্যাঙ্গোলা-দক্ষিণ আফ্রিকা। ২১ মিনিটে স্ট্রাইকার অসউইন অ্যাপোলিসের গোলে এগিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমার্ধেই সমতায় ফিরেছে অ্যাঙ্গোলা। ৩৫ মিনিটে সমতাসূচক গোল করেন দলটির মিডফিল্ডার শো। ১-১ সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধ। ৭৯ মিনিটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে এগিয়ে দেন দলটির স্ট্রাইকার লিল ফস্টার। শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা।

লিভারপুলের হয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে একাদশে জায়গা পাননি সালাহ। অলরেড কোচ আর্নে স্লটের সঙ্গে সালাহর বিরোধ সৃষ্টি হয়। যদিও সেই সমস্যা পুরোপুরি কাটেনি। তবে মাঠের পারফরম্যান্সে সেটার বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়তে দেননি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে শেষ মুহূর্তের ভেলকিতে মিসরকে জেতানো সালাহ নিশ্চয়ই মিসরের হয়ে প্রথম কোনো শিরোপা জিততে চাইবেন। এর আগে ২০১৭, ২০২১ সালে আফকনের ফাইনালে উঠলেও দুইবারই রানার্সআপ হয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত