Ajker Patrika

বৃদ্ধনিবাসে পরিণত হচ্ছে কেরালার যে শহর

আপডেট : ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৬: ৫৫
বৃদ্ধনিবাসে পরিণত হচ্ছে কেরালার যে শহর

শুনে অবাক হবেন, ভারতের মতো জনবহুল দেশের কোনো কোনো শহর ধুঁকছে জনসংখ্যা সংকটে। এসব জায়গায় জন্মহার যেমন কম, তেমনি অনেকেই শহর ছেড়েছেন উন্নত জীবনের আশায়। অনেকটা মৃত শহর বা ঘোস্ট টাউনে পরিণত হয়েছে এগুলো, যেখানে বাস মূলত বয়স্কদের। এমনই এক জায়গা কেরালার কুমবানাদ। সেখানে গিয়েছিলেন বিবিসির সৌতিক বিশ্বাস। 

বিগত বছরগুলোতে কেরালার এই অলস শহরের স্কুলগুলো অস্বাভাবিক এক সমস্যায় ভুগছে। শিক্ষার্থী বড় দুষ্প্রাপ্য এখানে, তাদের খোঁজে বের হতে হয় শিক্ষকদের। শুধু তাই নয়, স্কুলে ছাত্রছাত্রী আনতে গাঁটের পয়সা খরচ করতে হয় তাঁদের। 

১৫০ বছর আগে স্থাপিত কুমবানাদের সরকারি আপার প্রাইমারি স্কুলে এখন শিক্ষার্থী আছে কেবল টেনেটুনে ৫০ জন। ১৯৮০ সালের দিকে সংখ্যাটা ছিল ৭০০। এই শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই আবার দরিদ্র পরিবারের, যাদের শহরের প্রান্তে অবস্থান। এর মধ্যে সর্বোচ্চ শ্রেণি গ্রেড সেভেনের শিক্ষার্থী কেবল সাতজন। শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের এই শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়ার ভাড়াও গুনতে হয়। এমনকি এখানে যে কয়েকটি বেসরকারি স্কুল আছে, তার শিক্ষকদেরও শিক্ষার্থীর খোঁজে বের হতে হয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী আছে যে স্কুলে, সেটির শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ৭০। 

বাসিন্দারা বাড়ি ছেড়ে যাওয়ায় ১৫ শতাংশ ঘরেই ঝুলছে তালা‘আমাদের কী করার আছে? শহরে কোনো ছেলেমেয়ে নেই। আরও পরিষ্কারভাবে বললে, এখানে খুব কম মানুষই বাস করে।’ বলেন ওই প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল জয়াদেবী আর.। 

কথাটা মোটেই মিথ্যা নয়। কুমবানাদ শহরটির অবস্থান কেরালার পাথানামথিতা জেলার ঠিক কেন্দ্রে। এখানে জনসংখ্যা যেমন কমছে, তেমনি যারা বাস করছেন তাঁদের বেশির ভাগই বয়স্ক। 

কুমবানাদ ও আশপাশের আধা ডজন গ্রামে মোটামুটি হাজার পঁচিশেক মানুষের বাস। এখানকার ১১ হাজার ১১৮পি বাড়ির শতকরা ১৫ শতাংশ বাড়িতে ঝুলছে তালা। এসব বাড়ির বাসিন্দারা অন্য কোথাও চলে গেছেন কিংবা ছেলেমেয়ের সঙ্গে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। জানান স্থানীয় গ্রাম কাউন্সিল প্রধান আশা সি জে। 

আন্নাম্মা জেকব তাঁর দুই তলা বাড়িতে একাকী জীবন কাটাচ্ছেন কয়েক দশক ধরেএকটি হাসপাতাল, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত একটি ক্লিনিক, ৩০টির বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং ৩টি বৃদ্ধনিবাস এখানকার চুলে পাক ধরা লোকের হার যে বেশি তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এদিকে দুই ডজনের বেশি ব্যাংক, এর মধ্যে আধ কিলোমিটারেরও কম জায়গার মধ্যে ৮টি শাখা পৃথিবীর নানা প্রান্তে বাস ও কাজ করা শহরের মানুষদের অর্থ গ্রহণের জন্য প্রতিযোগিতা করছে। গত বছর ভারতে প্রবাসীদের কাছ থেকে যে ১০ হাজার কোটি ডলার বৈদেশিক মুদ্রা পায় তার ১০ শতাংশ আসে কেরালায়। 

ভারতে এক যুগের জনসংখ্যা বৃদ্ধির শেষ যে জরিপ (২০০১-১১) করা হয়, তাতে তলানিতে ছিল কেরালা ও তার প্রতিবেশী রাজ্য তামিলনাড়ু। জাতীয় গড় আয়ু ৬৯ হলেও কেরালায় জন্মগ্রহণকারী শিশু ৭৫ বছর আয়ুর আশা করতে পারে। 

চাক্কো মাম্মেন তাঁর কলার খামারে দিনে চার ঘণ্টা শ্রম দেনজন্মহারও কম। একজন নারী গড়ে এখানে ১.৭ থেকে ১.৯টি সন্তান জন্ম দেন। ছোট পরিবারগুলো সন্তানদের শিক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব দেয়। এতে তরুণেরা ভালো সুযোগের জন্য দেশে ও দেশের বাইরে পাড়ি জমাচ্ছেন বয়স্ক মা-বাবাকে রেখে। 

আন্নাম্মা জেকব তাঁর দোতলা বাড়িতে একাকী জীবন কাটাচ্ছেন কয়েক দশক ধরে। ৭৪ বছরের অন্নাম্মার স্মৃতিতে কেবল নিঃসঙ্গতা। তাঁর যন্ত্রকৌশল প্রকৌশলী স্বামী ১৯৮০-র দশকেই মারা যান। তাঁর পঞ্চাশে পা দেওয়া ছেলে দুই দশকের বেশি সময় ধরে আবুধাবিতে বাস ও কাজ করছেন। অন্নাম্মার এক মেয়ে থাকেন কয়েক মাইলের মধ্যে, তবে তাঁর স্বামী দুবাইয়ে সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করছেন তিন যুগ ধরে। 

আন্নাম্মার নিকটতম দুই প্রতিবেশীর একজন বাড়িতে তালা দিয়ে মা-বাবাকে নিয়ে গেছে বাহরাইনে, সেখানে নার্সের কাজ করেন তিনি। অপর প্রতিবেশী দুবাই চলে গেছেন, বাড়িটা ভাড়া দিয়েছেন এক বৃদ্ধ দম্পতিকে। 

পুলিশ একাকী থাকা বয়স্ক ব্যক্তিদের বাড়ি যায় তাঁদের খোঁজ নিতেতবে কুমবানাদের অনেক অধিবাসী জায়গাটি ছেড়ে চলে গেলেও ক্ষয় একে পুরোপুরি আঁকড়ে ধরেনি। ফাঁকা বাড়িগুলো নিয়মিত রং করা হয়, যেন যেকোনো দিন মানুষ আশা করছে। যদিও এ ধরনের আগমনের ঘটনা ঘটে কমই। 

 ‘এটা খুব নিঃসঙ্গ এক জীবন। আমার শরীরও ভালো থাকে না।’ বলেন আন্নাম্মা জেকব। তবে হার্টে সমস্যা ও বাত থাকার পরও ছেলে ও নাতিদের সঙ্গে সময় কাটাতে বিদেশে পাড়ি জমান তিনি। 

আন্নাম্মার বাড়ি থেকে কয়েক লেন দূরে চাক্কো মাম্মেন তাঁর কলার খামারে দিনে চার ঘণ্টা শ্রম দেন। তাঁরও হার্টের সমস্যা আছে, সঙ্গে ডায়াবেটিস। ৬৪ বছরের চাক্কো তিন দশক ওমানে কাজ করে পরে দেশে ফিরে আসেন।

পুলিশ একাকী থাকা এই বৃদ্ধদের খোঁজ-খবর নেয় নিয়মিত। তবে এখানে অপরাধের হার কম। পুলিশ জানায়, চুরির ঘটনা এখানে একেবারেই কম, কারণ মানুষ ঘরে বেশি টাকা বা মূল্যবান জিনিস রাখে না। শেষ কবে এখানে খুনের ঘটনা ঘটেছে তাও মনে করতে পারেন না তাঁরা। 

বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া শহরের বড় এক সমস্যা‘সবকিছু মিলিয়ে খুব শান্তিপূর্ণ জায়গা এটি। আমরা কেবল প্রতারণার অভিযোগ পাই। আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে প্রতারিত হন বৃদ্ধরা, কিংবা তাঁদের স্বাক্ষর নকল করে টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটে।’ বলেন স্থানীয় পুলিশ স্টেশনের চিফ ইন্সপেক্টর সাজিশ কুমার ভি। 

শহরে অপরাধ কম হওয়ায় পুলিশ বয়স্ক ব্যক্তিদের দেখভালে বেশি সময় দিতে পারে। ২০২০ সালে একটি বাড়িতে বারবার বেল চেপে সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে পুলিশ। দেখতে পায়, ওই বাড়ির বাসিন্দায় এক বয়স্ক নারী মাটিতে পড়ে আছেন। 

 ‘আমরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে সুস্থ হন তিনি। আমাদের আরেকটি কর্তব্য শহরের বাসিন্দাদের বৃদ্ধনিবাস বা ওল্ড হোমে নিয়ে যাওয়া। আমরা নিয়মিত বয়স্কদের খবর নিই, তাঁদের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই।’ বলেন চিফ ইন্সপেক্টর কুমার। 

শহরে হুইলচেয়ারে পৌঁছা যায় এমন তিনটি ওল্ড হোম আছে। এগুলো বেশ খোলামেলা, দরজা ও হলওয়ে প্রশস্ত। এদের একটি পাঁচতলা দালানের দ্য আলেক্সান্ডার মারথোমা মেমোরিয়াল জেরিয়াট্রিক সেন্টার। এর সঙ্গেই আছে ১৫০ শয্যার একটি হাসপাতাল। এই বৃদ্ধনিবাসে ৮৫ থেকে ১০১ বছর বয়সী ১০০ জন বৃদ্ধের দেখভাল করা হয়। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগ শয্যাশায়ী, পরিবারকে মাসে ৫০ হাজার রুপি করে গুনতে হয় এই সেবার বিনিময়ে। কখনো ছেলেমেয়েরা এসে থাকেন তাঁদের সঙ্গে। 

এর কাছেই ৭৫ বছরের পুরোনো ধর্মগিরি ওল্ড এজ হোম। সেখানে ৬০ জন স্থানীয় বাসিন্দার বাস, যাদের প্রত্যেকের বয়স ৬০-র বেশি। 

অসুস্থ বয়স্ক মানুষ, বৃদ্ধনিবাস, শ্রমিক সংকট, তরুণদের অভিবাসন, জনসংখ্যা হ্রাস, মৃতপ্রায় শহর—এই সবকিছুই যেন এখন কুমবানাদের চিত্র। 

‘জনসংখ্যাতাত্ত্বিক পরিবর্তনের এক গল্প এই শহর। শেষ পর্যন্ত গোটা ভারতের গল্প হবে এটি।’ বলেন মুম্বাইভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর পপুলেশন সায়েন্সের অধ্যাপক কে এস জেমস। 

বিবিসি থেকে অনুবাদ ইশতিয়াক হাসান

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দিল্লিতে ব্যারিকেড ভেঙে বাংলাদেশ হাইকমিশনে প্রবেশের চেষ্টা হিন্দুত্ববাদীদের, উত্তেজনা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৪
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালায় হিন্দুত্ববাদীরা। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা চালায় হিন্দুত্ববাদীরা। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে বিশাল বিক্ষোভ চলছে। এমনকি বিক্ষোভকারীরা নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে হাইকমিশনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের বাইরে ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন’ এবং ‘ময়মনসিংহে দিপু চন্দ্র দাস নামের এক হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে’ বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার চেষ্টা চালিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠী বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) ও বজরং দলের এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে হাইকমিশনের সামনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুরো এলাকাটি তিন স্তরের ব্যারিকেডে ঘিরে রাখা হয়েছে এবং সেখানে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতন ও উপাসনালয় ভাঙচুরের নিন্দা জানাতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরং দল এই বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে। দূতাবাসের সামনে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দিতে দেখা গেছে।

এর আগে ২০ ডিসেম্বর রাতে দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের গেটে বিক্ষোভ করে একদল লোক। এ বিষয়ে দিল্লিতে বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার মো. ফয়সাল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টা নাগাদ তিনটি গাড়িতে করে কিছু লোক এসে বাংলাদেশ ভবনের গেটে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ চিৎকার করে। তারা বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে কিছু কথাবার্তা বলেছে—হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে হবে; হাইকমিশনারকে ধরো। পরে তারা মেইন গেটের সামনে এসে কিছুক্ষণ চিৎকার করে। ওরা চিৎকার করে চলে গেছে—এতটুকুই আমি জানি।’

পরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে ২০ ডিসেম্বর (শনিবার) একদল বিক্ষোভকারীর জমায়েত নিয়ে বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে ‘বিভ্রান্তিকর প্রচারণা’ বলে আখ্যা দেয় ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল রোববার (২১ ডিসেম্বর) এক বিবৃতিতে এমন দাবি করেন।

রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘এ ঘটনা নিয়ে আমরা বাংলাদেশি কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রচারণা লক্ষ করেছি। বাস্তবতা হলো, ২০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সামনে প্রায় ২০-২৫ জন যুবক জড়ো হয়েছিল। ওই যুবকেরা ময়মনসিংহের ভালুকায় পোশাকশ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে স্লোগান দিচ্ছিলেন এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছিলেন।’

মুখপাত্র বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা হাইকমিশনের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভাঙার চেষ্টা করেনি বা কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেনি।’

প্রতিক্রিয়ায় ভারতের প্রেস নোটকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকায় কীভাবে বিক্ষোভকারীরা প্রবেশ করতে পারল, তা নিয়ে গুরুতর নিরাপত্তা ঘাটতির প্রশ্ন তোলে ঢাকা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ২১ ডিসেম্বর বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের ওই প্রেস নোটের বিষয়টি আমরা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করছি। বিষয়টি এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যেন এটি খুবই সাধারণ ঘটনা; অথচ বাস্তবে তা নয়। আমাদের মিশন কূটনৈতিক এলাকার একেবারে ভেতরে অবস্থিত, কোনোভাবেই প্রান্তিক এলাকায় নয়।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতের প্রেস নোটে বিষয়টি অতি সরলীকরণ করা হয়েছে, অথচ নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ মিশন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত কূটনৈতিক অঞ্চলের গভীরে অবস্থিত।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দল, যাদের একটি উগ্র হিন্দু সংগঠনের সদস্য হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে, এমন সংবেদনশীল এলাকায় প্রবেশ করতে সক্ষম হলো। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অনুমতি ছাড়া সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হওয়ার কথা নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

উ. কোরিয়ার এজেন্ট সন্দেহে ১৮০০-এর বেশি চাকরি আবেদন বাতিল করল আমাজন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩: ০৮
উত্তর কোরিয়ার এজেন্ট সন্দেহে অন্তত ১ হাজার ৮০০টি চাকরি আবেদন বাতিল করেছে আমাজন। ছবি: সংগৃহীত
উত্তর কোরিয়ার এজেন্ট সন্দেহে অন্তত ১ হাজার ৮০০টি চাকরি আবেদন বাতিল করেছে আমাজন। ছবি: সংগৃহীত

টেক জায়ান্ট আমাজন উত্তর কোরিয়ার এজেন্ট সন্দেহে ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি চাকরিপ্রার্থীর আবেদন বাতিল করে দিয়েছে; এমনটি জানিয়েছেন আমাজনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

আমাজনের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা স্টিফেন শ্মিট লিংকডইনে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, উত্তর কোরিয়রা চুরি করা অথবা ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে রিমোট আইটি চাকরির জন্য আবেদন করার চেষ্টা করেছিল। তিনি উল্লেখ করেন, ‘তাদের লক্ষ্য সাধারণত খুব সহজ—চাকরিতে যোগ দেওয়া, বেতন নেওয়া এবং সেই অর্থ দিয়ে তাদের দেশের অস্ত্র কর্মসূচিতে তহবিল জোগানো।’ তিনি আরও বলেন, এই প্রবণতা সম্ভবত পুরো শিল্পজুড়ে বড় আকারে ঘটছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে।

যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার কর্তৃপক্ষ পিয়ংইয়ংয়ের এজেন্টদের এই ধরনের অনলাইন জালিয়াতি সম্পর্কে আগেই সতর্ক করেছিল। শ্মিট তাঁর পোস্টে জানান, গত এক বছরে আমাজনে উত্তর কোরিয়দের চাকরির আবেদন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি বলেন, এই এজেন্টরা সাধারণত ‘ল্যাপটপ ফার্ম’ পরিচালনাকারীদের সঙ্গে যোগসাজশে কাজ করে। ল্যাপটপ ফার্ম বলতে এমন সব কম্পিউটারকে বোঝায়, যা যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত হলেও দেশের বাইরে থেকে রিমোটলি পরিচালনা করা হয়।

শ্মিট জানান, চাকরির আবেদনগুলো যাচাই করার জন্য আমাজন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং কর্মী দিয়ে সরাসরি যাচাইকরণের একটি সমন্বিত পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই জালিয়াতিদের কৌশল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত।

দুষ্কৃতকারীরা ভেরিফিকেশন পাওয়ার জন্য ফাঁস হওয়া তথ্য ব্যবহার করে লিংকডইনের নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টগুলো দখল করে নিচ্ছে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তারা প্রকৃত সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের লক্ষ্য বানাচ্ছে। শ্মিট অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সন্দেহজনক চাকরির আবেদনের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানোর অনুরোধ করেন। নিয়োগকর্তাদের প্রতি শ্মিট পরামর্শ দেন—যেন তারা উত্তর কোরিয়ার জালিয়াতিপূর্ণ আবেদনের কিছু লক্ষণের দিকে নজর রাখেন; যেমন ভুল ফরম্যাটের ফোন নম্বর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যে অসংগতি।

গত জুনে মার্কিন সরকার জানিয়েছিল, তারা দেশজুড়ে অবৈধভাবে পরিচালিত ২৯টি ‘ল্যাপটপ ফার্ম’ খুঁজে পেয়েছে, যা উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীরা ব্যবহার করছিল। মার্কিন বিচার বিভাগ জানায়, তারা উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য আমেরিকানদের চুরি করা বা জাল পরিচয় ব্যবহার করত।

এই ঘটনায় উত্তর কোরিয়ার এজেন্টদের চাকরি পেতে সাহায্য করার দায়ে মার্কিন দালালদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া গত জুলাইয়ে অ্যারিজোনার এক নারীকে আট বছরের বেশি কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি ৩০০-এর বেশি মার্কিন কোম্পানিতে উত্তর কোরিয়ার আইটি কর্মীদের রিমোট চাকরি পাইয়ে দিতে ল্যাপটপ ফার্ম পরিচালনা করতেন।

বিচার বিভাগ জানিয়েছে, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ওই নারী এবং পিয়ংইয়ং প্রশাসন ১ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বেশি অবৈধ অর্থ আয় করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুক্তরাষ্ট্র-চীনও মোদিকে ভয় পায়, বাংলাদেশ নিয়ে চুপ থাকবেন না তিনি: বিজেপি নেতার হুঁশিয়ারি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২: ১৪
বিজেপি নেতা সুনীল শর্মা বলেছেন—বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদি চুপ করে থাকবেন না বলেই মনে করেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত
বিজেপি নেতা সুনীল শর্মা বলেছেন—বাংলাদেশ ইস্যুতে মোদি চুপ করে থাকবেন না বলেই মনে করেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের ইস্যুতে চুপ থাকবেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এমনকি তাঁকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশও ভয় পায়; এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ভারতের এক হিন্দু নেতা। জম্মু-কাশ্মীরের কিশতওয়ারে হিন্দু সংগঠনগুলোর ডাকা এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে এই মন্তব্য করেন বিজেপি বিধায়ক ও জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার বিরোধীদলীয় নেতা সুনীল শর্মা।

সনাতন ধর্ম সভার সভাপতি মহন্ত রাম শরণ দাস আচার্যের নেতৃত্বে আয়োজিত এই প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেন বিজেপি নেতারা। বাংলাদেশে এক হিন্দু শ্রমিককে হত্যা ও সহিংসতার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। মিছিলে সুনীল শর্মা বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা ভারতকে উসকানি দেওয়ার এবং দেশটিকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের একটি ষড়যন্ত্র।

কিশতওয়ার শহরের প্রতিবাদ সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় শর্মা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও চীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভয় পায়, যিনি বিশ্বজুড়ে বিশেষ করে বাংলাদেশে হিন্দুদের আশা-ভরসার প্রতীক। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত যেহেতু সামরিক ও অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই ভারতকে দুর্বল করার জন্য একদল দেশের ষড়যন্ত্র চলছে।’

পরে বিক্ষোভকারীদের একটি দল ডেপুটি কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। এ ছাড়া তারা ভারতের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছেও স্মারকলিপি দেবেন, যাতে কেন্দ্র বাংলাদেশে হিন্দু রক্ষা এবং তাদের সম্পত্তি ও উপাসনালয় সুরক্ষায় হস্তক্ষেপ করে। বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। সনাতন ধর্ম সভার ডাকা বন্ধের কারণে বেশ কিছু দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।

শর্মা বলেন, বাংলাদেশে হত্যার শিকার ‘দিপুর একমাত্র অপরাধ ছিল, সে একজন হিন্দু। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে হিন্দু সংখ্যালঘুদের লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে এবং আমরা এখানেও এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘দুই কোটি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ করেছে। এ ছাড়া বার্মা (মিয়ানমার) ও পাকিস্তান থেকেও অনুপ্রবেশকারীরা এখানে এসেছে এবং তাদের অনেকে পরিচয়পত্র পেয়ে ভোটার হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, হিন্দুরা তাদের ‘সংস্কৃতি ও সনাতন’ টিকিয়ে রাখার জন্য প্রতিদিন লড়াই করছে। শর্মা প্রশ্ন তোলেন, ‘আমরা মোগল ও ব্রিটিশ আক্রমণ থেকে বেঁচে ফিরেছি এবং সাম্প্রতিক এই চ্যালেঞ্জ থেকেও টিকে থাকব। কেউ আমাদের মুছে ফেলতে পারবে না...বাংলাদেশে যা ঘটছে, তা নিয়ে জাতিসংঘ বা সংখ্যালঘু অধিকার সংস্থার মতো বিশ্ব সংস্থাগুলো কেন চুপ?’

বিজেপি এই নেতার দাবি, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, তা পিছিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই সেখানে বিক্ষোভের নেপথ্যে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে মোদিজি চুপ করে থাকবেন না, তা সে পাকিস্তান হোক বা বাংলাদেশ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গ্রিনল্যান্ড ‘আমাদের পেতেই হবে’, ‘অভিযান’ চালাতে দূত পাঠাচ্ছেন ট্রাম্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

গ্রিনল্যান্ড নিয়ে ডেনমার্কের সাথে নতুন করে বিবাদে জড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিশাল এই সুমেরু দ্বীপটি দখলের ইচ্ছা তিনি আগেও প্রকাশ করেছিলেন, আর এবার সেখানে একজন বিশেষ দূত নিয়োগ দিয়ে সেই বিতর্ককে আবার উসকে দিলেন।

লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রিকে এই নতুন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিবিসির এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ‘জাতীয় সুরক্ষার’ জন্য গ্রিনল্যান্ড প্রয়োজন এবং ‘এটি আমাদের পেতেই হবে।’ ডেনমার্কের অধীনে থাকা এই আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলটিতে ল্যান্ড্রি ‘অভিযানের নেতৃত্ব দেবেন’ বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেন।

ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ কোপেনহেগেন জানিয়েছে, তারা ‘ব্যাখ্যার’ জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করবে। গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ ‘নিজেদেরই নির্ধারণ করতে হবে’ এবং এর ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

গভর্নর ল্যান্ড্রি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানান, গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার এই ‘স্বেচ্ছাসেবী পদে’ সেবা করা তাঁর জন্য সম্মানের। গত জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকেই ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ডের ব্যাপারে তাঁর দীর্ঘদিনের আগ্রহ পুনরুজ্জীবিত করেছেন। দ্বীপটির কৌশলগত অবস্থান এবং খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যের কথা তিনি বারবার বলে আসছেন।

দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নিতে সামরিক শক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনাও তিনি উড়িয়ে দেননি। ট্রাম্পের এমন অবস্থানে স্তম্ভিত ডেনমার্ক। ন্যাটো মিত্র হিসেবে ওয়াশিংটনের সাথে ডেনমার্কের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘আমাদের এটি সমাধান করতে হবে। খনিজ সম্পদের জন্য নয়, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রিনল্যান্ড আমাদের প্রয়োজন।’ সাগরের নিকটবর্তী অঞ্চলে চীন ও রাশিয়ার জাহাজগুলোকে সম্ভাব্য হুমকি হিসেবেও তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।

প্রায় ৫৭ হাজার মানুষের বসতি গ্রিনল্যান্ডে ১৯৭৯ সাল থেকে ব্যাপক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। যদিও প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি এখনো ডেনমার্কের হাতে। অধিকাংশ গ্রিনল্যান্ডবাসী ডেনমার্ক থেকে চূড়ান্ত স্বাধীনতার পক্ষে থাকলেও, জনমত জরিপ বলছে যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হওয়ার ঘোর বিরোধী।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্ক লোকে রাসমুসেন ল্যান্ড্রির নিয়োগকে ‘গভীর হতাশাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন এবং মার্কিন সার্বভৌমত্বকে সম্মান করার জন্য ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছেন। ড্যানিশ সম্প্রচার মাধ্যম টিভি২-কে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ডেনমার্ক, ফ্যারো দ্বীপপুঞ্জ এবং গ্রিনল্যান্ড নিয়ে আমাদের এই রাজত্ব টিকে আছে, ততক্ষণ আমরা আঞ্চলিক অখণ্ডতা ক্ষুণ্ণকারী কোনো পদক্ষেপ মেনে নিতে পারি না।’

গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেন্স-ফ্রেডেরিক নিলসেন জানিয়েছেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক, তবে তা হতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে। তিনি বলেন, ‘বিশেষ দূত নিয়োগের ফলে আমাদের জন্য কিছুই বদলে যাচ্ছে না। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করি। গ্রিনল্যান্ড কেবল গ্রিনল্যান্ডবাসীর জন্য, আর এর আঞ্চলিক অখণ্ডতাকে অবশ্যই সম্মান করতে হবে।’

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেয়ন এক্সে দেওয়া পোস্টে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডের জনগণের সাথে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে।’ এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ল্যান্ড্রি বোঝেন যে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড কতটা অপরিহার্য’ এবং তিনি মার্কিন স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

এই নিয়োগের তাৎপর্য দুটি জায়গায়—প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিয়েছে যে গ্রিনল্যান্ড ডেনমার্ক থেকে আলাদা; এবং দ্বিতীয়ত, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত দূতের দাবি যে তিনি দ্বীপটিকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে সাহায্য করবেন। বিশেষ দূত সাধারণত অনানুষ্ঠানিক নিয়োগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক কূটনীতিকদের মতো তাঁদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। এই নিয়োগ এটিই প্রমাণ করে যে, গ্রিনল্যান্ড দখলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ট্রাম্পের মনে এখনো অটুট রয়েছে।

ভেনেজুয়েলার প্রতি তাঁর সামরিক ও তাত্ত্বিক আগ্রাসনের মতো এটিও ইঙ্গিত দেয় যে, ট্রাম্প তাঁর সাম্প্রতিক জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে উল্লিখিত ‘পশ্চিম গোলার্ধের’ ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। তিনি চান পুরো আমেরিকা জুড়ে তাঁর এই প্রভাব বলয় বিস্তৃত হোক। ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে গ্রিনল্যান্ড কেনার চেষ্টা করেছিলেন। ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড উভয় সরকারই ২০১৯ সালের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিল, ‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়।’

ল্যান্ড্রি আগেও গ্রিনল্যান্ড নিয়ে তাঁর মতামত দিয়েছিলেন। গত জানুয়ারিতে নিজের ব্যক্তিগত এক্স অ্যাকাউন্টে তিনি লিখেছিলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প একদম ঠিক বলেছেন! আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হয়। তাদের জন্য দারুণ হবে, আমাদের জন্যও দারুণ হবে! চলুন এটা করে ফেলি!’

সামরিক বাহিনীতে কাজ করা এবং সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ল্যান্ড্রি ২০২৩ সালে গভর্নর নির্বাচিত হওয়ার আগে মার্কিন কংগ্রেস সদস্য এবং লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর এই নতুন দায়িত্ব গভর্নর হিসেবে তাঁর কর্তব্যে কোনো ব্যাঘাত ঘটাবে না।

মেরু অঞ্চলে যখন কৌশলগত প্রতিযোগিতা বাড়ছে, ঠিক তখনই এই নিয়োগ ঘিরে বিতর্ক তৈরি হলো। বরফ গলার ফলে সেখানে নতুন নৌপথ উন্মোচিত হচ্ছে এবং মূল্যবান খনিজ সম্পদে প্রবেশের সুযোগ বাড়ছে। উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের মাঝে সুমেরু অঞ্চলে গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর নিরাপত্তা পরিকল্পনার কেন্দ্রে রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিরা ডেনমার্ক দখল করলে যুক্তরাষ্ট্র সেখানে হানা দেয় এবং সামরিক ও রেডিও স্টেশন স্থাপনের মাধ্যমে ঘাঁটি গড়ে তোলে। সেই সময় থেকেই গ্রিনল্যান্ডে মার্কিন ঘাঁটি টিকে আছে। গত মার্চে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গ্রিনল্যান্ডের সেই ঘাঁটি পরিদর্শন করেন এবং সেখানকার মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘একটি চুক্তিতে আসার’ আহ্বান জানান। ১৯৫৩ সালে বন্ধ করে দেওয়ার পর ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০২০ সালে গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুক-এ মার্কিন কনস্যুলেট পুনরায় চালু করা হয়। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এবং কানাডারও গ্রিনল্যান্ডে অনারারি কনস্যুলেট রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত