ইশতিয়াক হাসান

একটা সময় বাংলাদেশের অনেক অরণ্য-পাহাড়েই দেখা মিলত বুনো হাতিদের। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়ের মতো জায়গাগুলোতে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরে পোষ মানানো হতো। এখন অল্প কিছু জঙ্গলেই আর এরা টিকে আছে। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে সংঘাত মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হাতি নিয়ে অনেক কিছু।
হাতির খোঁজে
শুরুটা করছি ঠিক এক যুগ আগের একটি ঘটনা দিয়ে। সালটা ২০১১। হাতি দেখতে দুই বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ গিয়েছিলাম রাঙামাটির পাবলাখালীর অরণ্যে। এর আগে যে জায়গায় হাতি দেখতে গিয়েছি সেখানেই হাতিরা ফাঁকি দিয়েছে। রাঙামাটির কাপ্তাই মুখ খাল কিংবা বান্দরবানের দুধপুকুরিয়ার জঙ্গলে গিয়ে হাতির উপস্থিতির তাজা চিহ্ন পেয়েও এদের দেখা পাইনি। পাবলাখালী গিয়েও শুনলাম হাতি আছে রাঙ্গীপাড়ার বনে। সেখানে পৌঁছাতে হলে প্রথমে যেতে হবে মাইনি।
চটজলদি একটা ট্রলার ভাড়া করলাম। কাসালং নদী দিয়ে মাইনি যাওয়ার পথে পড়ল বন বিভাগের মাহিল্লা বিট অফিস। এটা এবং দুপারের ছড়ানো-ছিটানো গাছপালা দেখে অদ্ভুত একটা মন খারাপ করা অনুভূতি হয়। এনায়েত মাওলা ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে মাইনি আর মাহিল্লায় বাঘ ও চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। অবশ্য সেটা গত শতকের মাঝামাঝি কিংবা তার কিছু পরের ঘটনা। তখন কাপ্তাই বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। এদিকটায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনাও দিয়েছেন এনায়েত মাওলা। নদীর দুই ধারে ছিল দিনেও আঁধার নামিয়ে দেওয়া অরণ্য।
বন বিভাগের মাইনি বাংলোতে বাক্স-পেটরা রেখে আবার ছুটলাম। নৌকায় করে মাইনি নদীর অন্য পাড়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বন বিভাগের রাঙ্গীপাড়া বিট অফিসে। বিট কর্মকর্তা জানালেন, দলে ২৭-২৮টা হাতি আছে। তবে দুটি উপদলে ভাগ হয়ে একটা পাল আছে অফিসের পেছনে সেগুনবাগানে, আর বড় দলটা ৮ নম্বর নামে পরিচিত একটা জায়গায়। আমাদের সঙ্গে লম্বা, হ্যাংলা-পাতলা গড়নের এক লোক আর বন বিভাগের দুজন কর্মচারীকে দিলেন গাইড হিসেবে। ঠাঠা রোদের মধ্যে বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে ৮ নম্বরে পৌঁছে মিলল কেবল হাতির নাদি আর বিশাল পায়ের ছাপ।
ওই পাহাড়ে আছে হাতি
জানলাম, আমাদের সঙ্গের তালপাতার সেপাইর নাম আব্দুর রহমান। সবার কাছে রহম আলী নামেই বেশি পরিচিত। হাতির আচার-আচরণ সম্পর্কে নাকি তাঁর অগাধ জ্ঞান। আট নম্বরে হাতিদের না পেয়ে বন বিভাগের অফিসের কাছের সেগুন বাগানের দিকে রওনা হলাম। এক ছড়ার ওপরে মরা গাছের ডাল দিয়ে বানানো নড়বড়ে এক সেতু পেরিয়ে ওঠে এলাম পাহাড়ের একটা ঢালে। এখানে বেশ কিছু ছেলে জড়ো হয়েছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পরে নিচু একটা জায়গা। তারপরই আবার উঁচু জমি। সবার দৃষ্টি সেদিকেই। মাঝে মাঝে এখান থেকেই কেউ কেউ হাতির ডাক নকল করে শব্দ করছে। বুঝতে বাকি রইল না ওই পাহাড়েই আছে হাতি। গাছপালার ফাঁক গলে প্রথম একটা হাতির শুঁড় নজর কাড়ল। ভালোভাবে ঠাহর করতে বোঝা গেল কয়েকটা শুয়ে, কয়েকটা দাঁড়িয়ে আছে।
হাতির মুখোমুখি
ঢুকলাম হাতির পাহাড়ে। একটু অসাবধান হলেই পায়ের নিচে মচমচ করে উঠছে শুকনো পাতা। রহম আলীর পিছু পিছু কিছুটা পথ পেরোতেই হাতিগুলোকে দেখলাম। কোনোটা শুয়ে কানোটা বসে, আমাদের দিকে পেছন ফিরে। হাতিগুলোর কাছাকাছি চলে এলাম, বড়জোর গজ পনেরো দূরে। রহম আলী আরও সামনে বাড়ল। ইশারা করতেই তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতির পালের সাত-আট গজের মধ্যে চলে এসেছি। ফুট খানিক উঁচু একটা কাটা গাছের ওপর দাঁড়ালাম। পড়ে বুঝেছিলাম এতো কাছাকাছি যাওয়াটা খুব বোকার মতো কাজ হয়ে গিয়েছিল। তিনটা হাতি একেবারে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারটা বড় আর একটা বাচ্চা শুয়ে আছে। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই দৌড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। একটা শুঁড় তুলল মাথার ওপর। দেখাদেখি দাঁড়ানো বাকিদুটোও। রহম আলী বলল, আপনারে সালাম দিছে। আসলে কী জন্য শুঁড় তুলেছে কে জানে! মিনিট দশেক স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতিরাও নিশ্চল। কেবল কান নাড়ছে। আর এখানে থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। তবে মনটা আনন্দে ভরে গেছে! শেষ পর্যন্ত বুনো হাতির সঙ্গে দেখা হলো।
এশীয় হাতি আছে যেসব দেশে
এই ভ্রমণের মূল রোমাঞ্চটাই তখনো বাকি। তবে সেটা বলার আগে একটু অন্য দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যা বুঝেছি এশীয় হাতি আছে এখন যে তেরোটি দেশে এর সবগুলোই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ বাদে বাকি বারোটি দেশ হলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ভুটান, নেপাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, লাওস ও চীন। এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতি আছে ভারতের জঙ্গলে। ধারণা করা হয় এই ১৩টি দেশের জঙ্গলে টিকে থাকা বুনো হাতির সংখ্যা ৫০ হাজারের আশপাশে। এদের মধ্যে ২৬০০০ থেকে ২৮০০০ আছে ভারতে। আমরা সৌভাগ্যবান যে এখনো যে কটি দেশে বুনো হাতিরা আছে এর একটি আমাদের দেশ। তবে যেভাবে হাতি মৃত্যুর খবর আসছে ভয় হয়, এক সময় হয়তো আর এ দেশ থেকে যেভাবে গন্ডার, বুনো মোষের মতো প্রাণীরা হারিয়ে গেছে সেভাবে হয়তো হারিয়ে যেতে পারে হাতিরাও। তখন কেবল রূপকথা গল্পেই ওদের কথা পড়বে আমাদের শিশুরা।
পুরোনো দিনের গল্প
মাইনি বন বাংলোর ডাইনিং রুমের দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো দেখলে এক লাফে ষাট-সত্তর বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি পিছিয়ে যাবেন আপনি। হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অনেক পুরোনো ফটোগ্রাফ চোখে পড়বে। সত্যি আগে হাতিরা কী সুন্দর দিন কাটাত।
কাপ্তাই আর কাসালং রিজার্ভে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরার বর্ণনা আছে ইউসুফ এস আহমদের ‘উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেল’স অব বেঙ্গল’ বইয়েও। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বিংশ শতকের মাঝামাঝির দিকে রাঙামাটির কাসালংয়ের মাইনিমুখ, মাহিল্লা, শিশক, কাপ্তাইয়ের অরণ্যে ঘটা করে খেদার আয়োজন হতো। এক একটা খেদায় ত্রিশ-চল্লিশ, এমনকি ষাট-সত্তরটি হাতিও ধরা পড়ত। ওই জঙ্গলগুলোতে যে তখন বিস্তর হাতি ঘুরে বেড়াত, তাতে সন্দেহ নেই। মাইনিতে এক বৃদ্ধ এক যুগ আগে বলেছিলেন, তরুণ বয়সে কাসালংয়ের অরণ্যে ১০০ হাতির পালও দেখেছেন। ১২ বছর আগের সেই অভিযানে আমি প্রায় ৩০টি হাতির দলের খোঁজ পেয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালের জরিপে রাঙামাটির কাসালং, কাপ্তাই মিলিয়ে সাকল্যে ৫০ টির মতো বুনো হাতি থাকার খবর অশনিসংকেত আমাদের জন্য।
এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে থানচি থেকে সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে যাওয়ার পথে মধু নামের এক জায়গায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনা আছে। ওই হাতিটার ভয়ে ম্রোরা গাছের ওপর মাচা বানিয়ে থাকা শুরু করেছিল। ওই সময় রেমাক্রি নদীর তীরের বড় মোদক ও সাঙ্গু রিজার্ভে বুনো হাতির বিচরণ ছিল বেশ। তবে এখন আর ওদিকে স্থায়ী হাতির আস্তানা নেই। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৬ সালের জরিপ বলছে সাঙ্গু রিজার্ভে ১৫-২০টি বুনো হাতি মিয়ানমারের সীমানা পেরিয়ে বেড়াতে আসে কখনো-সখনো। অবশ্য এখন ওই হাতিগুলোর কী অবস্থা কে জানে।
মধুপুর জঙ্গলেও বিচরণ ছিল বুনো হাতির। ময়মনসিংহের মহারাজারা গারো পাহাড়ে খেদার আয়োজন করতেন। অবশ্য এটি সোয়া শ বছর আগের ঘটনা! তেমনি সিলেটের লালাখালের ওদিকটাসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় এই কয়েক দশক আগেও হাতিরা নামত ভারত থেকে। বুঝুন তাহলে, বুনো হাতির দিক থেকে মোটামুটি গর্ব করার জায়গায় ছিলাম আমরা!
হাতির তাড়া
আবার ফিরে যাই সেই ২০১১ সালে। হাতির পালের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম যেদিন তার পরের দিন সকালে আবার এলাম রাঙ্গীপাড়া। শুনলাম অন্য হাতিগুলো রাতে দূরের পাহাড়ে চলে গেলেও বাচ্চাসহ মা হাতি আটকা পড়েছে বন বিভাগের ওষুধি গাছের এক বাগানে। আজকেও সঙ্গী রহম আলী। বারবার মানা করা সত্ত্বেও জুটে গেছে এক দল ছেলে-ছোকরা। মনে কু গাইছে। মা হাতি খুবই বিপজ্জনক। বাচ্চাটার যে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে লঙ্কা কাণ্ড বাধাবে।
বাগানে ঢুকলাম রহম আলীর পিছু পিছু। গাছপালা বেশ ফাঁকা ফাঁকা হওয়ায় একটু এগোতেই বাচ্চাসহ মা হাতিটাকে দেখলাম। একপর্যায়ে মানুষের উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে ক্ষেপে জোরে চিৎকার দিয়ে একটা গাছ ভাঙল প্রচণ্ড শব্দে মা হাতি। আমাদেরতো ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছে। রহম আলীর ধমকে ওটা শান্ত হলো। আবারও বাচ্চা নিয়ে দূরে সরে যেতে চাইল। হাতি এক্সপার্ট রহম আলী ভুলটা করল তখনই। আবার হস্তিনীকে এদিকে ফিরাতে চাইল। আমরা তখন দাঁড়িয়ে মোটামুটি চওড়া একটা বনপথের ওপর। হঠাৎই ক্ষেপে গিয়ে দৌড়ে এই পথে উঠে এল হাতিটা। তারপর কলজে কাঁপিয়ে চিৎকার করে ছুটে আসল। রহম আলীর কণ্ঠে আতঙ্কের ছোঁয়া, বলল, ‘দৌড়ান’।
ছুটছি পাগলের মতো। বিশাল শরীর নিয়ে কীভাবে এত জোরে দৌড়াচ্ছে মা হাতি খোদা জানে। দৌড়ানোর ফাঁকে এক পায়ের স্যান্ডেল ছুটে গেল। থোড়াই কেয়ার করে ছুটলাম। এখন ভেবে হাসি পায়, আমাদের মধ্যে তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান মিশুক ছিল দৌড়ে সবার আগে। হাতিটা আমাদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছিল, নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম একটা অঘটন আজ ঘটছে, তখনই হঠাৎ ঘুরে, বাচ্চার কাছে ফিরে গেল হাতিটা।
হাতি আছে বিপদে
এখন আমাদের দেশে স্থায়ী বুনো হাতি আছে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে। ড. রেজা খান ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের বনগুলোতে ৪০০ টির মতো স্থায়ী বন্য হাতি আছে বলে ধারণা করেছিলেন। তবে আইইউসিএনের ২০১৬ সালের জরিপে হাতির গড় সংখ্যা ২৬৮ টির মতো বলে ধারণা করা হয়েছে। অস্থায়ী হাতিগুলোর বেশির ভাগের আবাস গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এ ছাড়া সিলেটের লাঠিটিলা ও ভারতের জঙ্গল মিলিয়ে চারটি বুনো হাতির বিচরণের খবর মেলে।
কিন্তু ঘটনা হলো গত কয়েক বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের বনাঞ্চলে একের পর এক হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। এগুলোর অনেকগুলোই গুলি ও বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়ে। গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী শেরপুর-জামালপুরেও হাতি-মানুষ সংঘাতে হাতি মারা পড়ছে। বন বিভাগের হিসেবে ১৯৯২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে বুনো হাতি মৃত্যুর ঘটনা ১৫১। এর মধ্যে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মারা যাওয়া হাতির সংখ্যা ৮৬ টি। বিশেষ করে ২০২০ এবং ২১ এই দুই বছরে মৃত হাতির সংখ্যা ৩৬। বুঝতেই পারছেন হাতিরা মোটেই ভালো নেই।
অবশ্য হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায় ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন মানুষ মারা গিয়েছে হাতির আক্রমণে।
এদিকে কক্সবাজারের দিকে রেল চলাচল শুরু হলেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ, ওই হাতিগুলোর রেলগাড়ি নামক জিনিসটির সঙ্গে পরিচয়ই নেই।
হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব
সত্যি বিপদে আছে হাতিরা। বন-জঙ্গল কাটা পড়ায় অনেক জায়গায় আশ্রয় হারিয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে যে পথে হাতিরা চলাফেরা করে আসছে তার মধ্যে, চারপাশেই গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি, খেত খামার। এ ছাড়া বনে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে চোরা শিকারিরা। দাঁতাল হাতি এখন চোখে পড়ে একেবারে কম। এমনকি এক যুগ আগে রাঙীপাড়ার সেগুন বাগানে যে দলটি দেখেছিলাম তার মধ্যে একটাও দাঁতাল হাতি নেই।
কক্সবাজার-টেকনাফ-লামা-আলীকদম—এই জায়গাগুলোয় বেশ কয়েকটি বড় পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতিদের, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে ওগুলোর চলার পথ আটকে গেছে, আবাস স্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। আছে চরম খাবার সংকটে।
এবার একটু গারো পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। মেঘালয়ের বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের মূল অংশ ভারতে, বাংলাদেশে পড়েছে ছোট কিছু টিলা। আর এই গারো পাহাড় সব সময়ই হাতির জন্য বিখ্যাত। পুরোনো দিনে গারো পাহাড় ছিল সুসঙ্গ রাজ্যের অধীনে। প্রায় তিন হাজার ৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল সুসঙ্গ রাজ্য। পরে সুসঙ্গের সঙ্গে দুর্গাপুর যোগ করে নাম হয় সুসঙ্গ দুর্গাপুর। রাজধানী ছিল দুর্গাপুর।
সুসঙ্গ মুল্লুকের হাতির খবর ছিল মোগল বাদশাহর কাছেও। সুসঙ্গের রাজারা খেদার মাধ্যমে গারো পাহাড় থেকে হাতি ধরতেন। এসব হাতি বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। খেদায় ধরা এই হাতি নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকায়। তখন ঢাকায়ই ছিল সরকারের খেদা অফিস। ময়মনসিংহের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ও রাজা জগৎকশোর আচার্যও গারো পাহাড়ে বেশ কয়েকবার খেদা পরিচালনা করেছেন।
তবে এগুলো সবই অতীত ইতিহাস। বহু বছর ধরেই স্থায়ী হাতি নেই গারো পাহাড়ের বাংলাদেশ অংশে। তবে হাতির বড় একটা দল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলাফেরা করে শেরপুর-ময়মনসিংহের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। কিন্তু এই এলাকাটিকে এখন হাতি-মানুষ সংঘাত বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাতির আক্রমণে মারা পড়ছে মানুষ, আবার মানুষের পেতে রাখা বিদ্যুতের ফাঁদে প্রাণ যাচ্ছে হাতির। ঘটনা হলো, এই এলাকার বন-পাহাড়ে এখন হাতির প্রয়োজনীয় খাবার নেই। তাই হাতিরা নিয়মিত হানা দিচ্ছে মানুষের কৃষি জমিতে। এদিকে সীমান্তের ওই পাশের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে হাতিদের ভারত-বাংলাদেশের বন-পাহাড়ে যাতায়াত আগের মতো সহজ নেই। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বিপজ্জনক এক পরিস্থিতি।
হাতি বাঁচাব কেন
এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা হাতি বাঁচাব কেন? উত্তরটা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল খান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে হাতি। হাতির নাদি বা মলের সঙ্গে মাটিতে পড়া বীজের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে। আবার হাতি চলাফেরার কারণে ঘন জঙ্গলের গাছপালার ঠাসবুনোটের মাঝখানে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় সেখান দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে উদ্ভিদকে পর্যাপ্ত আলো পেতে সাহায্য করে।
চাই হাতি শিশুর নিরাপদ আবাস
সেদিন তাড়া খাওয়ার পরে মা হাতিটাকে দেখেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে ছড়া পাড় হয়ে আরেকটা পাহাড়ে উঠে যাচ্চে। বাচ্চাটাকে দেখে একটা কষ্ট দানা বাঁধছিল মনে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, এখনো আমার ওর কথা মনে হয়, কষ্টটা ফিরে আসে বুকে। কেমন আছে ও? হাতি গড়ে ৭০ বছর বাঁচে। সে হিসাবে ছোট্ট হাতি তো বটেই ওর মারও জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াবার কথা! কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, ভয় হয়, ওই ছোট্ট হাতি, যার কিনা এখন যুবা বয়সে বন-পাহাড় শাসন করার কথা, সেই বেঁচে আছে তো?
তারপরও আশা হারাতে চাই না। হাতিদের রক্ষায় কাজ করছেন অনেকেই। বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত এলাকায়গুলোয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। এর সদস্যরা মানুষকে হাতির আসার সংবাদ দেয়। হাতির কাছাকাছি যেতে নিরুৎসাহিত করে। এভাবে তাঁরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া হাতি রক্ষায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা আছে। এর সদস্যরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে।
এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকারিভাবে হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্ল্যানিং কমিশনে একটি প্রজেক্ট পেশ করা হয়েছে। যেটা পাশ হলে হাতি রক্ষায় সুবিধা হবে। এর আওতায় ইআরটিদের জন্যও একটা ভাতার ব্যবস্থা করা যাবে। তেমনি হাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সোলার ফেন্সিংয়রে ব্যবস্থা করা হবে। এটাও হাতি রক্ষায় সাহায্য করবে।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে ট্রেন চালু হয়ে গেলে হাতিরা যেন বিপদে না পড়ে সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত যেসব এলাকাগুলোর ভেতর দিয়ে রেলপথ গিয়েছে সেখানে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডার পাস ও ওভার পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতির বিচরণের ব্যাপারে আগে থেকে যেন ট্রেনে বসেই সতর্ক বার্তা পাওয়া যায় এ ব্যাপারে আধুনিক ডিভাইস স্থাপন ও সিগন্যালিং সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
বরাবরের মতো আশা নিয়েই তাই শেষ করতে চাই। আশা করি হাতিরা আবার পুরনো দিনের মতো নিরাপদে বন-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবে। কমে যাবে হাতি-মানুষ সংঘাত। হয়তো নিজের অজান্তেই সেই ছোট্ট হাতির সঙ্গে (যে এখন বয়সে তরুণ) দেখা হয়ে যাবে রাঙামাটির কোনো পাহাড়ে, কিংবা ছড়া বা জঙ্গলে। স্বাভাবিকভাবেই সে আমাকে চিনবেই না, আমিও তাকে চিনব না।

একটা সময় বাংলাদেশের অনেক অরণ্য-পাহাড়েই দেখা মিলত বুনো হাতিদের। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়ের মতো জায়গাগুলোতে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরে পোষ মানানো হতো। এখন অল্প কিছু জঙ্গলেই আর এরা টিকে আছে। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে সংঘাত মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হাতি নিয়ে অনেক কিছু।
হাতির খোঁজে
শুরুটা করছি ঠিক এক যুগ আগের একটি ঘটনা দিয়ে। সালটা ২০১১। হাতি দেখতে দুই বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ গিয়েছিলাম রাঙামাটির পাবলাখালীর অরণ্যে। এর আগে যে জায়গায় হাতি দেখতে গিয়েছি সেখানেই হাতিরা ফাঁকি দিয়েছে। রাঙামাটির কাপ্তাই মুখ খাল কিংবা বান্দরবানের দুধপুকুরিয়ার জঙ্গলে গিয়ে হাতির উপস্থিতির তাজা চিহ্ন পেয়েও এদের দেখা পাইনি। পাবলাখালী গিয়েও শুনলাম হাতি আছে রাঙ্গীপাড়ার বনে। সেখানে পৌঁছাতে হলে প্রথমে যেতে হবে মাইনি।
চটজলদি একটা ট্রলার ভাড়া করলাম। কাসালং নদী দিয়ে মাইনি যাওয়ার পথে পড়ল বন বিভাগের মাহিল্লা বিট অফিস। এটা এবং দুপারের ছড়ানো-ছিটানো গাছপালা দেখে অদ্ভুত একটা মন খারাপ করা অনুভূতি হয়। এনায়েত মাওলা ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে মাইনি আর মাহিল্লায় বাঘ ও চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। অবশ্য সেটা গত শতকের মাঝামাঝি কিংবা তার কিছু পরের ঘটনা। তখন কাপ্তাই বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। এদিকটায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনাও দিয়েছেন এনায়েত মাওলা। নদীর দুই ধারে ছিল দিনেও আঁধার নামিয়ে দেওয়া অরণ্য।
বন বিভাগের মাইনি বাংলোতে বাক্স-পেটরা রেখে আবার ছুটলাম। নৌকায় করে মাইনি নদীর অন্য পাড়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বন বিভাগের রাঙ্গীপাড়া বিট অফিসে। বিট কর্মকর্তা জানালেন, দলে ২৭-২৮টা হাতি আছে। তবে দুটি উপদলে ভাগ হয়ে একটা পাল আছে অফিসের পেছনে সেগুনবাগানে, আর বড় দলটা ৮ নম্বর নামে পরিচিত একটা জায়গায়। আমাদের সঙ্গে লম্বা, হ্যাংলা-পাতলা গড়নের এক লোক আর বন বিভাগের দুজন কর্মচারীকে দিলেন গাইড হিসেবে। ঠাঠা রোদের মধ্যে বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে ৮ নম্বরে পৌঁছে মিলল কেবল হাতির নাদি আর বিশাল পায়ের ছাপ।
ওই পাহাড়ে আছে হাতি
জানলাম, আমাদের সঙ্গের তালপাতার সেপাইর নাম আব্দুর রহমান। সবার কাছে রহম আলী নামেই বেশি পরিচিত। হাতির আচার-আচরণ সম্পর্কে নাকি তাঁর অগাধ জ্ঞান। আট নম্বরে হাতিদের না পেয়ে বন বিভাগের অফিসের কাছের সেগুন বাগানের দিকে রওনা হলাম। এক ছড়ার ওপরে মরা গাছের ডাল দিয়ে বানানো নড়বড়ে এক সেতু পেরিয়ে ওঠে এলাম পাহাড়ের একটা ঢালে। এখানে বেশ কিছু ছেলে জড়ো হয়েছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পরে নিচু একটা জায়গা। তারপরই আবার উঁচু জমি। সবার দৃষ্টি সেদিকেই। মাঝে মাঝে এখান থেকেই কেউ কেউ হাতির ডাক নকল করে শব্দ করছে। বুঝতে বাকি রইল না ওই পাহাড়েই আছে হাতি। গাছপালার ফাঁক গলে প্রথম একটা হাতির শুঁড় নজর কাড়ল। ভালোভাবে ঠাহর করতে বোঝা গেল কয়েকটা শুয়ে, কয়েকটা দাঁড়িয়ে আছে।
হাতির মুখোমুখি
ঢুকলাম হাতির পাহাড়ে। একটু অসাবধান হলেই পায়ের নিচে মচমচ করে উঠছে শুকনো পাতা। রহম আলীর পিছু পিছু কিছুটা পথ পেরোতেই হাতিগুলোকে দেখলাম। কোনোটা শুয়ে কানোটা বসে, আমাদের দিকে পেছন ফিরে। হাতিগুলোর কাছাকাছি চলে এলাম, বড়জোর গজ পনেরো দূরে। রহম আলী আরও সামনে বাড়ল। ইশারা করতেই তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতির পালের সাত-আট গজের মধ্যে চলে এসেছি। ফুট খানিক উঁচু একটা কাটা গাছের ওপর দাঁড়ালাম। পড়ে বুঝেছিলাম এতো কাছাকাছি যাওয়াটা খুব বোকার মতো কাজ হয়ে গিয়েছিল। তিনটা হাতি একেবারে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারটা বড় আর একটা বাচ্চা শুয়ে আছে। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই দৌড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। একটা শুঁড় তুলল মাথার ওপর। দেখাদেখি দাঁড়ানো বাকিদুটোও। রহম আলী বলল, আপনারে সালাম দিছে। আসলে কী জন্য শুঁড় তুলেছে কে জানে! মিনিট দশেক স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতিরাও নিশ্চল। কেবল কান নাড়ছে। আর এখানে থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। তবে মনটা আনন্দে ভরে গেছে! শেষ পর্যন্ত বুনো হাতির সঙ্গে দেখা হলো।
এশীয় হাতি আছে যেসব দেশে
এই ভ্রমণের মূল রোমাঞ্চটাই তখনো বাকি। তবে সেটা বলার আগে একটু অন্য দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যা বুঝেছি এশীয় হাতি আছে এখন যে তেরোটি দেশে এর সবগুলোই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ বাদে বাকি বারোটি দেশ হলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ভুটান, নেপাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, লাওস ও চীন। এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতি আছে ভারতের জঙ্গলে। ধারণা করা হয় এই ১৩টি দেশের জঙ্গলে টিকে থাকা বুনো হাতির সংখ্যা ৫০ হাজারের আশপাশে। এদের মধ্যে ২৬০০০ থেকে ২৮০০০ আছে ভারতে। আমরা সৌভাগ্যবান যে এখনো যে কটি দেশে বুনো হাতিরা আছে এর একটি আমাদের দেশ। তবে যেভাবে হাতি মৃত্যুর খবর আসছে ভয় হয়, এক সময় হয়তো আর এ দেশ থেকে যেভাবে গন্ডার, বুনো মোষের মতো প্রাণীরা হারিয়ে গেছে সেভাবে হয়তো হারিয়ে যেতে পারে হাতিরাও। তখন কেবল রূপকথা গল্পেই ওদের কথা পড়বে আমাদের শিশুরা।
পুরোনো দিনের গল্প
মাইনি বন বাংলোর ডাইনিং রুমের দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো দেখলে এক লাফে ষাট-সত্তর বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি পিছিয়ে যাবেন আপনি। হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অনেক পুরোনো ফটোগ্রাফ চোখে পড়বে। সত্যি আগে হাতিরা কী সুন্দর দিন কাটাত।
কাপ্তাই আর কাসালং রিজার্ভে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরার বর্ণনা আছে ইউসুফ এস আহমদের ‘উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেল’স অব বেঙ্গল’ বইয়েও। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বিংশ শতকের মাঝামাঝির দিকে রাঙামাটির কাসালংয়ের মাইনিমুখ, মাহিল্লা, শিশক, কাপ্তাইয়ের অরণ্যে ঘটা করে খেদার আয়োজন হতো। এক একটা খেদায় ত্রিশ-চল্লিশ, এমনকি ষাট-সত্তরটি হাতিও ধরা পড়ত। ওই জঙ্গলগুলোতে যে তখন বিস্তর হাতি ঘুরে বেড়াত, তাতে সন্দেহ নেই। মাইনিতে এক বৃদ্ধ এক যুগ আগে বলেছিলেন, তরুণ বয়সে কাসালংয়ের অরণ্যে ১০০ হাতির পালও দেখেছেন। ১২ বছর আগের সেই অভিযানে আমি প্রায় ৩০টি হাতির দলের খোঁজ পেয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালের জরিপে রাঙামাটির কাসালং, কাপ্তাই মিলিয়ে সাকল্যে ৫০ টির মতো বুনো হাতি থাকার খবর অশনিসংকেত আমাদের জন্য।
এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে থানচি থেকে সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে যাওয়ার পথে মধু নামের এক জায়গায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনা আছে। ওই হাতিটার ভয়ে ম্রোরা গাছের ওপর মাচা বানিয়ে থাকা শুরু করেছিল। ওই সময় রেমাক্রি নদীর তীরের বড় মোদক ও সাঙ্গু রিজার্ভে বুনো হাতির বিচরণ ছিল বেশ। তবে এখন আর ওদিকে স্থায়ী হাতির আস্তানা নেই। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৬ সালের জরিপ বলছে সাঙ্গু রিজার্ভে ১৫-২০টি বুনো হাতি মিয়ানমারের সীমানা পেরিয়ে বেড়াতে আসে কখনো-সখনো। অবশ্য এখন ওই হাতিগুলোর কী অবস্থা কে জানে।
মধুপুর জঙ্গলেও বিচরণ ছিল বুনো হাতির। ময়মনসিংহের মহারাজারা গারো পাহাড়ে খেদার আয়োজন করতেন। অবশ্য এটি সোয়া শ বছর আগের ঘটনা! তেমনি সিলেটের লালাখালের ওদিকটাসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় এই কয়েক দশক আগেও হাতিরা নামত ভারত থেকে। বুঝুন তাহলে, বুনো হাতির দিক থেকে মোটামুটি গর্ব করার জায়গায় ছিলাম আমরা!
হাতির তাড়া
আবার ফিরে যাই সেই ২০১১ সালে। হাতির পালের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম যেদিন তার পরের দিন সকালে আবার এলাম রাঙ্গীপাড়া। শুনলাম অন্য হাতিগুলো রাতে দূরের পাহাড়ে চলে গেলেও বাচ্চাসহ মা হাতি আটকা পড়েছে বন বিভাগের ওষুধি গাছের এক বাগানে। আজকেও সঙ্গী রহম আলী। বারবার মানা করা সত্ত্বেও জুটে গেছে এক দল ছেলে-ছোকরা। মনে কু গাইছে। মা হাতি খুবই বিপজ্জনক। বাচ্চাটার যে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে লঙ্কা কাণ্ড বাধাবে।
বাগানে ঢুকলাম রহম আলীর পিছু পিছু। গাছপালা বেশ ফাঁকা ফাঁকা হওয়ায় একটু এগোতেই বাচ্চাসহ মা হাতিটাকে দেখলাম। একপর্যায়ে মানুষের উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে ক্ষেপে জোরে চিৎকার দিয়ে একটা গাছ ভাঙল প্রচণ্ড শব্দে মা হাতি। আমাদেরতো ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছে। রহম আলীর ধমকে ওটা শান্ত হলো। আবারও বাচ্চা নিয়ে দূরে সরে যেতে চাইল। হাতি এক্সপার্ট রহম আলী ভুলটা করল তখনই। আবার হস্তিনীকে এদিকে ফিরাতে চাইল। আমরা তখন দাঁড়িয়ে মোটামুটি চওড়া একটা বনপথের ওপর। হঠাৎই ক্ষেপে গিয়ে দৌড়ে এই পথে উঠে এল হাতিটা। তারপর কলজে কাঁপিয়ে চিৎকার করে ছুটে আসল। রহম আলীর কণ্ঠে আতঙ্কের ছোঁয়া, বলল, ‘দৌড়ান’।
ছুটছি পাগলের মতো। বিশাল শরীর নিয়ে কীভাবে এত জোরে দৌড়াচ্ছে মা হাতি খোদা জানে। দৌড়ানোর ফাঁকে এক পায়ের স্যান্ডেল ছুটে গেল। থোড়াই কেয়ার করে ছুটলাম। এখন ভেবে হাসি পায়, আমাদের মধ্যে তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান মিশুক ছিল দৌড়ে সবার আগে। হাতিটা আমাদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছিল, নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম একটা অঘটন আজ ঘটছে, তখনই হঠাৎ ঘুরে, বাচ্চার কাছে ফিরে গেল হাতিটা।
হাতি আছে বিপদে
এখন আমাদের দেশে স্থায়ী বুনো হাতি আছে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে। ড. রেজা খান ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের বনগুলোতে ৪০০ টির মতো স্থায়ী বন্য হাতি আছে বলে ধারণা করেছিলেন। তবে আইইউসিএনের ২০১৬ সালের জরিপে হাতির গড় সংখ্যা ২৬৮ টির মতো বলে ধারণা করা হয়েছে। অস্থায়ী হাতিগুলোর বেশির ভাগের আবাস গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এ ছাড়া সিলেটের লাঠিটিলা ও ভারতের জঙ্গল মিলিয়ে চারটি বুনো হাতির বিচরণের খবর মেলে।
কিন্তু ঘটনা হলো গত কয়েক বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের বনাঞ্চলে একের পর এক হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। এগুলোর অনেকগুলোই গুলি ও বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়ে। গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী শেরপুর-জামালপুরেও হাতি-মানুষ সংঘাতে হাতি মারা পড়ছে। বন বিভাগের হিসেবে ১৯৯২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে বুনো হাতি মৃত্যুর ঘটনা ১৫১। এর মধ্যে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মারা যাওয়া হাতির সংখ্যা ৮৬ টি। বিশেষ করে ২০২০ এবং ২১ এই দুই বছরে মৃত হাতির সংখ্যা ৩৬। বুঝতেই পারছেন হাতিরা মোটেই ভালো নেই।
অবশ্য হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায় ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন মানুষ মারা গিয়েছে হাতির আক্রমণে।
এদিকে কক্সবাজারের দিকে রেল চলাচল শুরু হলেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ, ওই হাতিগুলোর রেলগাড়ি নামক জিনিসটির সঙ্গে পরিচয়ই নেই।
হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব
সত্যি বিপদে আছে হাতিরা। বন-জঙ্গল কাটা পড়ায় অনেক জায়গায় আশ্রয় হারিয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে যে পথে হাতিরা চলাফেরা করে আসছে তার মধ্যে, চারপাশেই গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি, খেত খামার। এ ছাড়া বনে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে চোরা শিকারিরা। দাঁতাল হাতি এখন চোখে পড়ে একেবারে কম। এমনকি এক যুগ আগে রাঙীপাড়ার সেগুন বাগানে যে দলটি দেখেছিলাম তার মধ্যে একটাও দাঁতাল হাতি নেই।
কক্সবাজার-টেকনাফ-লামা-আলীকদম—এই জায়গাগুলোয় বেশ কয়েকটি বড় পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতিদের, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে ওগুলোর চলার পথ আটকে গেছে, আবাস স্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। আছে চরম খাবার সংকটে।
এবার একটু গারো পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। মেঘালয়ের বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের মূল অংশ ভারতে, বাংলাদেশে পড়েছে ছোট কিছু টিলা। আর এই গারো পাহাড় সব সময়ই হাতির জন্য বিখ্যাত। পুরোনো দিনে গারো পাহাড় ছিল সুসঙ্গ রাজ্যের অধীনে। প্রায় তিন হাজার ৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল সুসঙ্গ রাজ্য। পরে সুসঙ্গের সঙ্গে দুর্গাপুর যোগ করে নাম হয় সুসঙ্গ দুর্গাপুর। রাজধানী ছিল দুর্গাপুর।
সুসঙ্গ মুল্লুকের হাতির খবর ছিল মোগল বাদশাহর কাছেও। সুসঙ্গের রাজারা খেদার মাধ্যমে গারো পাহাড় থেকে হাতি ধরতেন। এসব হাতি বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। খেদায় ধরা এই হাতি নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকায়। তখন ঢাকায়ই ছিল সরকারের খেদা অফিস। ময়মনসিংহের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ও রাজা জগৎকশোর আচার্যও গারো পাহাড়ে বেশ কয়েকবার খেদা পরিচালনা করেছেন।
তবে এগুলো সবই অতীত ইতিহাস। বহু বছর ধরেই স্থায়ী হাতি নেই গারো পাহাড়ের বাংলাদেশ অংশে। তবে হাতির বড় একটা দল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলাফেরা করে শেরপুর-ময়মনসিংহের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। কিন্তু এই এলাকাটিকে এখন হাতি-মানুষ সংঘাত বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাতির আক্রমণে মারা পড়ছে মানুষ, আবার মানুষের পেতে রাখা বিদ্যুতের ফাঁদে প্রাণ যাচ্ছে হাতির। ঘটনা হলো, এই এলাকার বন-পাহাড়ে এখন হাতির প্রয়োজনীয় খাবার নেই। তাই হাতিরা নিয়মিত হানা দিচ্ছে মানুষের কৃষি জমিতে। এদিকে সীমান্তের ওই পাশের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে হাতিদের ভারত-বাংলাদেশের বন-পাহাড়ে যাতায়াত আগের মতো সহজ নেই। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বিপজ্জনক এক পরিস্থিতি।
হাতি বাঁচাব কেন
এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা হাতি বাঁচাব কেন? উত্তরটা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল খান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে হাতি। হাতির নাদি বা মলের সঙ্গে মাটিতে পড়া বীজের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে। আবার হাতি চলাফেরার কারণে ঘন জঙ্গলের গাছপালার ঠাসবুনোটের মাঝখানে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় সেখান দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে উদ্ভিদকে পর্যাপ্ত আলো পেতে সাহায্য করে।
চাই হাতি শিশুর নিরাপদ আবাস
সেদিন তাড়া খাওয়ার পরে মা হাতিটাকে দেখেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে ছড়া পাড় হয়ে আরেকটা পাহাড়ে উঠে যাচ্চে। বাচ্চাটাকে দেখে একটা কষ্ট দানা বাঁধছিল মনে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, এখনো আমার ওর কথা মনে হয়, কষ্টটা ফিরে আসে বুকে। কেমন আছে ও? হাতি গড়ে ৭০ বছর বাঁচে। সে হিসাবে ছোট্ট হাতি তো বটেই ওর মারও জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াবার কথা! কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, ভয় হয়, ওই ছোট্ট হাতি, যার কিনা এখন যুবা বয়সে বন-পাহাড় শাসন করার কথা, সেই বেঁচে আছে তো?
তারপরও আশা হারাতে চাই না। হাতিদের রক্ষায় কাজ করছেন অনেকেই। বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত এলাকায়গুলোয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। এর সদস্যরা মানুষকে হাতির আসার সংবাদ দেয়। হাতির কাছাকাছি যেতে নিরুৎসাহিত করে। এভাবে তাঁরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া হাতি রক্ষায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা আছে। এর সদস্যরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে।
এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকারিভাবে হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্ল্যানিং কমিশনে একটি প্রজেক্ট পেশ করা হয়েছে। যেটা পাশ হলে হাতি রক্ষায় সুবিধা হবে। এর আওতায় ইআরটিদের জন্যও একটা ভাতার ব্যবস্থা করা যাবে। তেমনি হাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সোলার ফেন্সিংয়রে ব্যবস্থা করা হবে। এটাও হাতি রক্ষায় সাহায্য করবে।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে ট্রেন চালু হয়ে গেলে হাতিরা যেন বিপদে না পড়ে সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত যেসব এলাকাগুলোর ভেতর দিয়ে রেলপথ গিয়েছে সেখানে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডার পাস ও ওভার পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতির বিচরণের ব্যাপারে আগে থেকে যেন ট্রেনে বসেই সতর্ক বার্তা পাওয়া যায় এ ব্যাপারে আধুনিক ডিভাইস স্থাপন ও সিগন্যালিং সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
বরাবরের মতো আশা নিয়েই তাই শেষ করতে চাই। আশা করি হাতিরা আবার পুরনো দিনের মতো নিরাপদে বন-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবে। কমে যাবে হাতি-মানুষ সংঘাত। হয়তো নিজের অজান্তেই সেই ছোট্ট হাতির সঙ্গে (যে এখন বয়সে তরুণ) দেখা হয়ে যাবে রাঙামাটির কোনো পাহাড়ে, কিংবা ছড়া বা জঙ্গলে। স্বাভাবিকভাবেই সে আমাকে চিনবেই না, আমিও তাকে চিনব না।
ইশতিয়াক হাসান

একটা সময় বাংলাদেশের অনেক অরণ্য-পাহাড়েই দেখা মিলত বুনো হাতিদের। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়ের মতো জায়গাগুলোতে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরে পোষ মানানো হতো। এখন অল্প কিছু জঙ্গলেই আর এরা টিকে আছে। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে সংঘাত মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হাতি নিয়ে অনেক কিছু।
হাতির খোঁজে
শুরুটা করছি ঠিক এক যুগ আগের একটি ঘটনা দিয়ে। সালটা ২০১১। হাতি দেখতে দুই বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ গিয়েছিলাম রাঙামাটির পাবলাখালীর অরণ্যে। এর আগে যে জায়গায় হাতি দেখতে গিয়েছি সেখানেই হাতিরা ফাঁকি দিয়েছে। রাঙামাটির কাপ্তাই মুখ খাল কিংবা বান্দরবানের দুধপুকুরিয়ার জঙ্গলে গিয়ে হাতির উপস্থিতির তাজা চিহ্ন পেয়েও এদের দেখা পাইনি। পাবলাখালী গিয়েও শুনলাম হাতি আছে রাঙ্গীপাড়ার বনে। সেখানে পৌঁছাতে হলে প্রথমে যেতে হবে মাইনি।
চটজলদি একটা ট্রলার ভাড়া করলাম। কাসালং নদী দিয়ে মাইনি যাওয়ার পথে পড়ল বন বিভাগের মাহিল্লা বিট অফিস। এটা এবং দুপারের ছড়ানো-ছিটানো গাছপালা দেখে অদ্ভুত একটা মন খারাপ করা অনুভূতি হয়। এনায়েত মাওলা ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে মাইনি আর মাহিল্লায় বাঘ ও চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। অবশ্য সেটা গত শতকের মাঝামাঝি কিংবা তার কিছু পরের ঘটনা। তখন কাপ্তাই বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। এদিকটায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনাও দিয়েছেন এনায়েত মাওলা। নদীর দুই ধারে ছিল দিনেও আঁধার নামিয়ে দেওয়া অরণ্য।
বন বিভাগের মাইনি বাংলোতে বাক্স-পেটরা রেখে আবার ছুটলাম। নৌকায় করে মাইনি নদীর অন্য পাড়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বন বিভাগের রাঙ্গীপাড়া বিট অফিসে। বিট কর্মকর্তা জানালেন, দলে ২৭-২৮টা হাতি আছে। তবে দুটি উপদলে ভাগ হয়ে একটা পাল আছে অফিসের পেছনে সেগুনবাগানে, আর বড় দলটা ৮ নম্বর নামে পরিচিত একটা জায়গায়। আমাদের সঙ্গে লম্বা, হ্যাংলা-পাতলা গড়নের এক লোক আর বন বিভাগের দুজন কর্মচারীকে দিলেন গাইড হিসেবে। ঠাঠা রোদের মধ্যে বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে ৮ নম্বরে পৌঁছে মিলল কেবল হাতির নাদি আর বিশাল পায়ের ছাপ।
ওই পাহাড়ে আছে হাতি
জানলাম, আমাদের সঙ্গের তালপাতার সেপাইর নাম আব্দুর রহমান। সবার কাছে রহম আলী নামেই বেশি পরিচিত। হাতির আচার-আচরণ সম্পর্কে নাকি তাঁর অগাধ জ্ঞান। আট নম্বরে হাতিদের না পেয়ে বন বিভাগের অফিসের কাছের সেগুন বাগানের দিকে রওনা হলাম। এক ছড়ার ওপরে মরা গাছের ডাল দিয়ে বানানো নড়বড়ে এক সেতু পেরিয়ে ওঠে এলাম পাহাড়ের একটা ঢালে। এখানে বেশ কিছু ছেলে জড়ো হয়েছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পরে নিচু একটা জায়গা। তারপরই আবার উঁচু জমি। সবার দৃষ্টি সেদিকেই। মাঝে মাঝে এখান থেকেই কেউ কেউ হাতির ডাক নকল করে শব্দ করছে। বুঝতে বাকি রইল না ওই পাহাড়েই আছে হাতি। গাছপালার ফাঁক গলে প্রথম একটা হাতির শুঁড় নজর কাড়ল। ভালোভাবে ঠাহর করতে বোঝা গেল কয়েকটা শুয়ে, কয়েকটা দাঁড়িয়ে আছে।
হাতির মুখোমুখি
ঢুকলাম হাতির পাহাড়ে। একটু অসাবধান হলেই পায়ের নিচে মচমচ করে উঠছে শুকনো পাতা। রহম আলীর পিছু পিছু কিছুটা পথ পেরোতেই হাতিগুলোকে দেখলাম। কোনোটা শুয়ে কানোটা বসে, আমাদের দিকে পেছন ফিরে। হাতিগুলোর কাছাকাছি চলে এলাম, বড়জোর গজ পনেরো দূরে। রহম আলী আরও সামনে বাড়ল। ইশারা করতেই তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতির পালের সাত-আট গজের মধ্যে চলে এসেছি। ফুট খানিক উঁচু একটা কাটা গাছের ওপর দাঁড়ালাম। পড়ে বুঝেছিলাম এতো কাছাকাছি যাওয়াটা খুব বোকার মতো কাজ হয়ে গিয়েছিল। তিনটা হাতি একেবারে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারটা বড় আর একটা বাচ্চা শুয়ে আছে। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই দৌড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। একটা শুঁড় তুলল মাথার ওপর। দেখাদেখি দাঁড়ানো বাকিদুটোও। রহম আলী বলল, আপনারে সালাম দিছে। আসলে কী জন্য শুঁড় তুলেছে কে জানে! মিনিট দশেক স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতিরাও নিশ্চল। কেবল কান নাড়ছে। আর এখানে থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। তবে মনটা আনন্দে ভরে গেছে! শেষ পর্যন্ত বুনো হাতির সঙ্গে দেখা হলো।
এশীয় হাতি আছে যেসব দেশে
এই ভ্রমণের মূল রোমাঞ্চটাই তখনো বাকি। তবে সেটা বলার আগে একটু অন্য দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যা বুঝেছি এশীয় হাতি আছে এখন যে তেরোটি দেশে এর সবগুলোই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ বাদে বাকি বারোটি দেশ হলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ভুটান, নেপাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, লাওস ও চীন। এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতি আছে ভারতের জঙ্গলে। ধারণা করা হয় এই ১৩টি দেশের জঙ্গলে টিকে থাকা বুনো হাতির সংখ্যা ৫০ হাজারের আশপাশে। এদের মধ্যে ২৬০০০ থেকে ২৮০০০ আছে ভারতে। আমরা সৌভাগ্যবান যে এখনো যে কটি দেশে বুনো হাতিরা আছে এর একটি আমাদের দেশ। তবে যেভাবে হাতি মৃত্যুর খবর আসছে ভয় হয়, এক সময় হয়তো আর এ দেশ থেকে যেভাবে গন্ডার, বুনো মোষের মতো প্রাণীরা হারিয়ে গেছে সেভাবে হয়তো হারিয়ে যেতে পারে হাতিরাও। তখন কেবল রূপকথা গল্পেই ওদের কথা পড়বে আমাদের শিশুরা।
পুরোনো দিনের গল্প
মাইনি বন বাংলোর ডাইনিং রুমের দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো দেখলে এক লাফে ষাট-সত্তর বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি পিছিয়ে যাবেন আপনি। হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অনেক পুরোনো ফটোগ্রাফ চোখে পড়বে। সত্যি আগে হাতিরা কী সুন্দর দিন কাটাত।
কাপ্তাই আর কাসালং রিজার্ভে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরার বর্ণনা আছে ইউসুফ এস আহমদের ‘উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেল’স অব বেঙ্গল’ বইয়েও। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বিংশ শতকের মাঝামাঝির দিকে রাঙামাটির কাসালংয়ের মাইনিমুখ, মাহিল্লা, শিশক, কাপ্তাইয়ের অরণ্যে ঘটা করে খেদার আয়োজন হতো। এক একটা খেদায় ত্রিশ-চল্লিশ, এমনকি ষাট-সত্তরটি হাতিও ধরা পড়ত। ওই জঙ্গলগুলোতে যে তখন বিস্তর হাতি ঘুরে বেড়াত, তাতে সন্দেহ নেই। মাইনিতে এক বৃদ্ধ এক যুগ আগে বলেছিলেন, তরুণ বয়সে কাসালংয়ের অরণ্যে ১০০ হাতির পালও দেখেছেন। ১২ বছর আগের সেই অভিযানে আমি প্রায় ৩০টি হাতির দলের খোঁজ পেয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালের জরিপে রাঙামাটির কাসালং, কাপ্তাই মিলিয়ে সাকল্যে ৫০ টির মতো বুনো হাতি থাকার খবর অশনিসংকেত আমাদের জন্য।
এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে থানচি থেকে সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে যাওয়ার পথে মধু নামের এক জায়গায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনা আছে। ওই হাতিটার ভয়ে ম্রোরা গাছের ওপর মাচা বানিয়ে থাকা শুরু করেছিল। ওই সময় রেমাক্রি নদীর তীরের বড় মোদক ও সাঙ্গু রিজার্ভে বুনো হাতির বিচরণ ছিল বেশ। তবে এখন আর ওদিকে স্থায়ী হাতির আস্তানা নেই। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৬ সালের জরিপ বলছে সাঙ্গু রিজার্ভে ১৫-২০টি বুনো হাতি মিয়ানমারের সীমানা পেরিয়ে বেড়াতে আসে কখনো-সখনো। অবশ্য এখন ওই হাতিগুলোর কী অবস্থা কে জানে।
মধুপুর জঙ্গলেও বিচরণ ছিল বুনো হাতির। ময়মনসিংহের মহারাজারা গারো পাহাড়ে খেদার আয়োজন করতেন। অবশ্য এটি সোয়া শ বছর আগের ঘটনা! তেমনি সিলেটের লালাখালের ওদিকটাসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় এই কয়েক দশক আগেও হাতিরা নামত ভারত থেকে। বুঝুন তাহলে, বুনো হাতির দিক থেকে মোটামুটি গর্ব করার জায়গায় ছিলাম আমরা!
হাতির তাড়া
আবার ফিরে যাই সেই ২০১১ সালে। হাতির পালের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম যেদিন তার পরের দিন সকালে আবার এলাম রাঙ্গীপাড়া। শুনলাম অন্য হাতিগুলো রাতে দূরের পাহাড়ে চলে গেলেও বাচ্চাসহ মা হাতি আটকা পড়েছে বন বিভাগের ওষুধি গাছের এক বাগানে। আজকেও সঙ্গী রহম আলী। বারবার মানা করা সত্ত্বেও জুটে গেছে এক দল ছেলে-ছোকরা। মনে কু গাইছে। মা হাতি খুবই বিপজ্জনক। বাচ্চাটার যে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে লঙ্কা কাণ্ড বাধাবে।
বাগানে ঢুকলাম রহম আলীর পিছু পিছু। গাছপালা বেশ ফাঁকা ফাঁকা হওয়ায় একটু এগোতেই বাচ্চাসহ মা হাতিটাকে দেখলাম। একপর্যায়ে মানুষের উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে ক্ষেপে জোরে চিৎকার দিয়ে একটা গাছ ভাঙল প্রচণ্ড শব্দে মা হাতি। আমাদেরতো ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছে। রহম আলীর ধমকে ওটা শান্ত হলো। আবারও বাচ্চা নিয়ে দূরে সরে যেতে চাইল। হাতি এক্সপার্ট রহম আলী ভুলটা করল তখনই। আবার হস্তিনীকে এদিকে ফিরাতে চাইল। আমরা তখন দাঁড়িয়ে মোটামুটি চওড়া একটা বনপথের ওপর। হঠাৎই ক্ষেপে গিয়ে দৌড়ে এই পথে উঠে এল হাতিটা। তারপর কলজে কাঁপিয়ে চিৎকার করে ছুটে আসল। রহম আলীর কণ্ঠে আতঙ্কের ছোঁয়া, বলল, ‘দৌড়ান’।
ছুটছি পাগলের মতো। বিশাল শরীর নিয়ে কীভাবে এত জোরে দৌড়াচ্ছে মা হাতি খোদা জানে। দৌড়ানোর ফাঁকে এক পায়ের স্যান্ডেল ছুটে গেল। থোড়াই কেয়ার করে ছুটলাম। এখন ভেবে হাসি পায়, আমাদের মধ্যে তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান মিশুক ছিল দৌড়ে সবার আগে। হাতিটা আমাদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছিল, নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম একটা অঘটন আজ ঘটছে, তখনই হঠাৎ ঘুরে, বাচ্চার কাছে ফিরে গেল হাতিটা।
হাতি আছে বিপদে
এখন আমাদের দেশে স্থায়ী বুনো হাতি আছে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে। ড. রেজা খান ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের বনগুলোতে ৪০০ টির মতো স্থায়ী বন্য হাতি আছে বলে ধারণা করেছিলেন। তবে আইইউসিএনের ২০১৬ সালের জরিপে হাতির গড় সংখ্যা ২৬৮ টির মতো বলে ধারণা করা হয়েছে। অস্থায়ী হাতিগুলোর বেশির ভাগের আবাস গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এ ছাড়া সিলেটের লাঠিটিলা ও ভারতের জঙ্গল মিলিয়ে চারটি বুনো হাতির বিচরণের খবর মেলে।
কিন্তু ঘটনা হলো গত কয়েক বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের বনাঞ্চলে একের পর এক হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। এগুলোর অনেকগুলোই গুলি ও বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়ে। গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী শেরপুর-জামালপুরেও হাতি-মানুষ সংঘাতে হাতি মারা পড়ছে। বন বিভাগের হিসেবে ১৯৯২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে বুনো হাতি মৃত্যুর ঘটনা ১৫১। এর মধ্যে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মারা যাওয়া হাতির সংখ্যা ৮৬ টি। বিশেষ করে ২০২০ এবং ২১ এই দুই বছরে মৃত হাতির সংখ্যা ৩৬। বুঝতেই পারছেন হাতিরা মোটেই ভালো নেই।
অবশ্য হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায় ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন মানুষ মারা গিয়েছে হাতির আক্রমণে।
এদিকে কক্সবাজারের দিকে রেল চলাচল শুরু হলেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ, ওই হাতিগুলোর রেলগাড়ি নামক জিনিসটির সঙ্গে পরিচয়ই নেই।
হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব
সত্যি বিপদে আছে হাতিরা। বন-জঙ্গল কাটা পড়ায় অনেক জায়গায় আশ্রয় হারিয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে যে পথে হাতিরা চলাফেরা করে আসছে তার মধ্যে, চারপাশেই গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি, খেত খামার। এ ছাড়া বনে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে চোরা শিকারিরা। দাঁতাল হাতি এখন চোখে পড়ে একেবারে কম। এমনকি এক যুগ আগে রাঙীপাড়ার সেগুন বাগানে যে দলটি দেখেছিলাম তার মধ্যে একটাও দাঁতাল হাতি নেই।
কক্সবাজার-টেকনাফ-লামা-আলীকদম—এই জায়গাগুলোয় বেশ কয়েকটি বড় পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতিদের, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে ওগুলোর চলার পথ আটকে গেছে, আবাস স্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। আছে চরম খাবার সংকটে।
এবার একটু গারো পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। মেঘালয়ের বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের মূল অংশ ভারতে, বাংলাদেশে পড়েছে ছোট কিছু টিলা। আর এই গারো পাহাড় সব সময়ই হাতির জন্য বিখ্যাত। পুরোনো দিনে গারো পাহাড় ছিল সুসঙ্গ রাজ্যের অধীনে। প্রায় তিন হাজার ৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল সুসঙ্গ রাজ্য। পরে সুসঙ্গের সঙ্গে দুর্গাপুর যোগ করে নাম হয় সুসঙ্গ দুর্গাপুর। রাজধানী ছিল দুর্গাপুর।
সুসঙ্গ মুল্লুকের হাতির খবর ছিল মোগল বাদশাহর কাছেও। সুসঙ্গের রাজারা খেদার মাধ্যমে গারো পাহাড় থেকে হাতি ধরতেন। এসব হাতি বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। খেদায় ধরা এই হাতি নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকায়। তখন ঢাকায়ই ছিল সরকারের খেদা অফিস। ময়মনসিংহের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ও রাজা জগৎকশোর আচার্যও গারো পাহাড়ে বেশ কয়েকবার খেদা পরিচালনা করেছেন।
তবে এগুলো সবই অতীত ইতিহাস। বহু বছর ধরেই স্থায়ী হাতি নেই গারো পাহাড়ের বাংলাদেশ অংশে। তবে হাতির বড় একটা দল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলাফেরা করে শেরপুর-ময়মনসিংহের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। কিন্তু এই এলাকাটিকে এখন হাতি-মানুষ সংঘাত বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাতির আক্রমণে মারা পড়ছে মানুষ, আবার মানুষের পেতে রাখা বিদ্যুতের ফাঁদে প্রাণ যাচ্ছে হাতির। ঘটনা হলো, এই এলাকার বন-পাহাড়ে এখন হাতির প্রয়োজনীয় খাবার নেই। তাই হাতিরা নিয়মিত হানা দিচ্ছে মানুষের কৃষি জমিতে। এদিকে সীমান্তের ওই পাশের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে হাতিদের ভারত-বাংলাদেশের বন-পাহাড়ে যাতায়াত আগের মতো সহজ নেই। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বিপজ্জনক এক পরিস্থিতি।
হাতি বাঁচাব কেন
এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা হাতি বাঁচাব কেন? উত্তরটা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল খান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে হাতি। হাতির নাদি বা মলের সঙ্গে মাটিতে পড়া বীজের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে। আবার হাতি চলাফেরার কারণে ঘন জঙ্গলের গাছপালার ঠাসবুনোটের মাঝখানে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় সেখান দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে উদ্ভিদকে পর্যাপ্ত আলো পেতে সাহায্য করে।
চাই হাতি শিশুর নিরাপদ আবাস
সেদিন তাড়া খাওয়ার পরে মা হাতিটাকে দেখেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে ছড়া পাড় হয়ে আরেকটা পাহাড়ে উঠে যাচ্চে। বাচ্চাটাকে দেখে একটা কষ্ট দানা বাঁধছিল মনে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, এখনো আমার ওর কথা মনে হয়, কষ্টটা ফিরে আসে বুকে। কেমন আছে ও? হাতি গড়ে ৭০ বছর বাঁচে। সে হিসাবে ছোট্ট হাতি তো বটেই ওর মারও জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াবার কথা! কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, ভয় হয়, ওই ছোট্ট হাতি, যার কিনা এখন যুবা বয়সে বন-পাহাড় শাসন করার কথা, সেই বেঁচে আছে তো?
তারপরও আশা হারাতে চাই না। হাতিদের রক্ষায় কাজ করছেন অনেকেই। বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত এলাকায়গুলোয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। এর সদস্যরা মানুষকে হাতির আসার সংবাদ দেয়। হাতির কাছাকাছি যেতে নিরুৎসাহিত করে। এভাবে তাঁরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া হাতি রক্ষায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা আছে। এর সদস্যরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে।
এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকারিভাবে হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্ল্যানিং কমিশনে একটি প্রজেক্ট পেশ করা হয়েছে। যেটা পাশ হলে হাতি রক্ষায় সুবিধা হবে। এর আওতায় ইআরটিদের জন্যও একটা ভাতার ব্যবস্থা করা যাবে। তেমনি হাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সোলার ফেন্সিংয়রে ব্যবস্থা করা হবে। এটাও হাতি রক্ষায় সাহায্য করবে।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে ট্রেন চালু হয়ে গেলে হাতিরা যেন বিপদে না পড়ে সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত যেসব এলাকাগুলোর ভেতর দিয়ে রেলপথ গিয়েছে সেখানে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডার পাস ও ওভার পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতির বিচরণের ব্যাপারে আগে থেকে যেন ট্রেনে বসেই সতর্ক বার্তা পাওয়া যায় এ ব্যাপারে আধুনিক ডিভাইস স্থাপন ও সিগন্যালিং সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
বরাবরের মতো আশা নিয়েই তাই শেষ করতে চাই। আশা করি হাতিরা আবার পুরনো দিনের মতো নিরাপদে বন-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবে। কমে যাবে হাতি-মানুষ সংঘাত। হয়তো নিজের অজান্তেই সেই ছোট্ট হাতির সঙ্গে (যে এখন বয়সে তরুণ) দেখা হয়ে যাবে রাঙামাটির কোনো পাহাড়ে, কিংবা ছড়া বা জঙ্গলে। স্বাভাবিকভাবেই সে আমাকে চিনবেই না, আমিও তাকে চিনব না।

একটা সময় বাংলাদেশের অনেক অরণ্য-পাহাড়েই দেখা মিলত বুনো হাতিদের। এমনকি পার্বত্য চট্টগ্রাম, গারো পাহাড়ের মতো জায়গাগুলোতে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরে পোষ মানানো হতো। এখন অল্প কিছু জঙ্গলেই আর এরা টিকে আছে। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে সংঘাত মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হাতি নিয়ে অনেক কিছু।
হাতির খোঁজে
শুরুটা করছি ঠিক এক যুগ আগের একটি ঘটনা দিয়ে। সালটা ২০১১। হাতি দেখতে দুই বন্ধু মিশুক-মেহেদীসহ গিয়েছিলাম রাঙামাটির পাবলাখালীর অরণ্যে। এর আগে যে জায়গায় হাতি দেখতে গিয়েছি সেখানেই হাতিরা ফাঁকি দিয়েছে। রাঙামাটির কাপ্তাই মুখ খাল কিংবা বান্দরবানের দুধপুকুরিয়ার জঙ্গলে গিয়ে হাতির উপস্থিতির তাজা চিহ্ন পেয়েও এদের দেখা পাইনি। পাবলাখালী গিয়েও শুনলাম হাতি আছে রাঙ্গীপাড়ার বনে। সেখানে পৌঁছাতে হলে প্রথমে যেতে হবে মাইনি।
চটজলদি একটা ট্রলার ভাড়া করলাম। কাসালং নদী দিয়ে মাইনি যাওয়ার পথে পড়ল বন বিভাগের মাহিল্লা বিট অফিস। এটা এবং দুপারের ছড়ানো-ছিটানো গাছপালা দেখে অদ্ভুত একটা মন খারাপ করা অনুভূতি হয়। এনায়েত মাওলা ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে মাইনি আর মাহিল্লায় বাঘ ও চিতা বাঘ শিকারের কাহিনি বর্ণনা করেছেন। অবশ্য সেটা গত শতকের মাঝামাঝি কিংবা তার কিছু পরের ঘটনা। তখন কাপ্তাই বাঁধ তৈরির কাজ চলছে। এদিকটায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনাও দিয়েছেন এনায়েত মাওলা। নদীর দুই ধারে ছিল দিনেও আঁধার নামিয়ে দেওয়া অরণ্য।
বন বিভাগের মাইনি বাংলোতে বাক্স-পেটরা রেখে আবার ছুটলাম। নৌকায় করে মাইনি নদীর অন্য পাড়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ভাড়া করলাম। মিনিট বিশেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম বন বিভাগের রাঙ্গীপাড়া বিট অফিসে। বিট কর্মকর্তা জানালেন, দলে ২৭-২৮টা হাতি আছে। তবে দুটি উপদলে ভাগ হয়ে একটা পাল আছে অফিসের পেছনে সেগুনবাগানে, আর বড় দলটা ৮ নম্বর নামে পরিচিত একটা জায়গায়। আমাদের সঙ্গে লম্বা, হ্যাংলা-পাতলা গড়নের এক লোক আর বন বিভাগের দুজন কর্মচারীকে দিলেন গাইড হিসেবে। ঠাঠা রোদের মধ্যে বেশ কিছুটা পথ পাড়ি দিয়ে ৮ নম্বরে পৌঁছে মিলল কেবল হাতির নাদি আর বিশাল পায়ের ছাপ।
ওই পাহাড়ে আছে হাতি
জানলাম, আমাদের সঙ্গের তালপাতার সেপাইর নাম আব্দুর রহমান। সবার কাছে রহম আলী নামেই বেশি পরিচিত। হাতির আচার-আচরণ সম্পর্কে নাকি তাঁর অগাধ জ্ঞান। আট নম্বরে হাতিদের না পেয়ে বন বিভাগের অফিসের কাছের সেগুন বাগানের দিকে রওনা হলাম। এক ছড়ার ওপরে মরা গাছের ডাল দিয়ে বানানো নড়বড়ে এক সেতু পেরিয়ে ওঠে এলাম পাহাড়ের একটা ঢালে। এখানে বেশ কিছু ছেলে জড়ো হয়েছে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তার পরে নিচু একটা জায়গা। তারপরই আবার উঁচু জমি। সবার দৃষ্টি সেদিকেই। মাঝে মাঝে এখান থেকেই কেউ কেউ হাতির ডাক নকল করে শব্দ করছে। বুঝতে বাকি রইল না ওই পাহাড়েই আছে হাতি। গাছপালার ফাঁক গলে প্রথম একটা হাতির শুঁড় নজর কাড়ল। ভালোভাবে ঠাহর করতে বোঝা গেল কয়েকটা শুয়ে, কয়েকটা দাঁড়িয়ে আছে।
হাতির মুখোমুখি
ঢুকলাম হাতির পাহাড়ে। একটু অসাবধান হলেই পায়ের নিচে মচমচ করে উঠছে শুকনো পাতা। রহম আলীর পিছু পিছু কিছুটা পথ পেরোতেই হাতিগুলোকে দেখলাম। কোনোটা শুয়ে কানোটা বসে, আমাদের দিকে পেছন ফিরে। হাতিগুলোর কাছাকাছি চলে এলাম, বড়জোর গজ পনেরো দূরে। রহম আলী আরও সামনে বাড়ল। ইশারা করতেই তার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। হাতির পালের সাত-আট গজের মধ্যে চলে এসেছি। ফুট খানিক উঁচু একটা কাটা গাছের ওপর দাঁড়ালাম। পড়ে বুঝেছিলাম এতো কাছাকাছি যাওয়াটা খুব বোকার মতো কাজ হয়ে গিয়েছিল। তিনটা হাতি একেবারে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। চারটা বড় আর একটা বাচ্চা শুয়ে আছে। বুক ঢিপ ঢিপ করছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই দৌড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। একটা শুঁড় তুলল মাথার ওপর। দেখাদেখি দাঁড়ানো বাকিদুটোও। রহম আলী বলল, আপনারে সালাম দিছে। আসলে কী জন্য শুঁড় তুলেছে কে জানে! মিনিট দশেক স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম, হাতিরাও নিশ্চল। কেবল কান নাড়ছে। আর এখানে থাকা নিরাপদ মনে করলাম না। তবে মনটা আনন্দে ভরে গেছে! শেষ পর্যন্ত বুনো হাতির সঙ্গে দেখা হলো।
এশীয় হাতি আছে যেসব দেশে
এই ভ্রমণের মূল রোমাঞ্চটাই তখনো বাকি। তবে সেটা বলার আগে একটু অন্য দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যা বুঝেছি এশীয় হাতি আছে এখন যে তেরোটি দেশে এর সবগুলোই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। বাংলাদেশ বাদে বাকি বারোটি দেশ হলো ভারত, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া, ভুটান, নেপাল, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার, লাওস ও চীন। এই দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হাতি আছে ভারতের জঙ্গলে। ধারণা করা হয় এই ১৩টি দেশের জঙ্গলে টিকে থাকা বুনো হাতির সংখ্যা ৫০ হাজারের আশপাশে। এদের মধ্যে ২৬০০০ থেকে ২৮০০০ আছে ভারতে। আমরা সৌভাগ্যবান যে এখনো যে কটি দেশে বুনো হাতিরা আছে এর একটি আমাদের দেশ। তবে যেভাবে হাতি মৃত্যুর খবর আসছে ভয় হয়, এক সময় হয়তো আর এ দেশ থেকে যেভাবে গন্ডার, বুনো মোষের মতো প্রাণীরা হারিয়ে গেছে সেভাবে হয়তো হারিয়ে যেতে পারে হাতিরাও। তখন কেবল রূপকথা গল্পেই ওদের কথা পড়বে আমাদের শিশুরা।
পুরোনো দিনের গল্প
মাইনি বন বাংলোর ডাইনিং রুমের দেয়ালে ঝোলানো ছবিগুলো দেখলে এক লাফে ষাট-সত্তর বছর কিংবা তার চেয়েও বেশি পিছিয়ে যাবেন আপনি। হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অনেক পুরোনো ফটোগ্রাফ চোখে পড়বে। সত্যি আগে হাতিরা কী সুন্দর দিন কাটাত।
কাপ্তাই আর কাসালং রিজার্ভে খেদার মাধ্যমে বুনো হাতি ধরার বর্ণনা আছে ইউসুফ এস আহমদের ‘উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যানিমেল’স অব বেঙ্গল’ বইয়েও। এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বই থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়, বিংশ শতকের মাঝামাঝির দিকে রাঙামাটির কাসালংয়ের মাইনিমুখ, মাহিল্লা, শিশক, কাপ্তাইয়ের অরণ্যে ঘটা করে খেদার আয়োজন হতো। এক একটা খেদায় ত্রিশ-চল্লিশ, এমনকি ষাট-সত্তরটি হাতিও ধরা পড়ত। ওই জঙ্গলগুলোতে যে তখন বিস্তর হাতি ঘুরে বেড়াত, তাতে সন্দেহ নেই। মাইনিতে এক বৃদ্ধ এক যুগ আগে বলেছিলেন, তরুণ বয়সে কাসালংয়ের অরণ্যে ১০০ হাতির পালও দেখেছেন। ১২ বছর আগের সেই অভিযানে আমি প্রায় ৩০টি হাতির দলের খোঁজ পেয়েছিলাম। কিন্তু ২০১৬ সালের জরিপে রাঙামাটির কাসালং, কাপ্তাই মিলিয়ে সাকল্যে ৫০ টির মতো বুনো হাতি থাকার খবর অশনিসংকেত আমাদের জন্য।
এনায়েত মাওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে গত শতকের পঞ্চাশের দশকে থানচি থেকে সাঙ্গু নদী ধরে রেমাক্রির দিকে যাওয়ার পথে মধু নামের এক জায়গায় পাগলা হাতি শিকারের বর্ণনা আছে। ওই হাতিটার ভয়ে ম্রোরা গাছের ওপর মাচা বানিয়ে থাকা শুরু করেছিল। ওই সময় রেমাক্রি নদীর তীরের বড় মোদক ও সাঙ্গু রিজার্ভে বুনো হাতির বিচরণ ছিল বেশ। তবে এখন আর ওদিকে স্থায়ী হাতির আস্তানা নেই। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) ২০১৬ সালের জরিপ বলছে সাঙ্গু রিজার্ভে ১৫-২০টি বুনো হাতি মিয়ানমারের সীমানা পেরিয়ে বেড়াতে আসে কখনো-সখনো। অবশ্য এখন ওই হাতিগুলোর কী অবস্থা কে জানে।
মধুপুর জঙ্গলেও বিচরণ ছিল বুনো হাতির। ময়মনসিংহের মহারাজারা গারো পাহাড়ে খেদার আয়োজন করতেন। অবশ্য এটি সোয়া শ বছর আগের ঘটনা! তেমনি সিলেটের লালাখালের ওদিকটাসহ আরও বিভিন্ন এলাকায় এই কয়েক দশক আগেও হাতিরা নামত ভারত থেকে। বুঝুন তাহলে, বুনো হাতির দিক থেকে মোটামুটি গর্ব করার জায়গায় ছিলাম আমরা!
হাতির তাড়া
আবার ফিরে যাই সেই ২০১১ সালে। হাতির পালের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলাম যেদিন তার পরের দিন সকালে আবার এলাম রাঙ্গীপাড়া। শুনলাম অন্য হাতিগুলো রাতে দূরের পাহাড়ে চলে গেলেও বাচ্চাসহ মা হাতি আটকা পড়েছে বন বিভাগের ওষুধি গাছের এক বাগানে। আজকেও সঙ্গী রহম আলী। বারবার মানা করা সত্ত্বেও জুটে গেছে এক দল ছেলে-ছোকরা। মনে কু গাইছে। মা হাতি খুবই বিপজ্জনক। বাচ্চাটার যে কোনো ক্ষতির আশঙ্কা দেখলে লঙ্কা কাণ্ড বাধাবে।
বাগানে ঢুকলাম রহম আলীর পিছু পিছু। গাছপালা বেশ ফাঁকা ফাঁকা হওয়ায় একটু এগোতেই বাচ্চাসহ মা হাতিটাকে দেখলাম। একপর্যায়ে মানুষের উপস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে ক্ষেপে জোরে চিৎকার দিয়ে একটা গাছ ভাঙল প্রচণ্ড শব্দে মা হাতি। আমাদেরতো ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছে। রহম আলীর ধমকে ওটা শান্ত হলো। আবারও বাচ্চা নিয়ে দূরে সরে যেতে চাইল। হাতি এক্সপার্ট রহম আলী ভুলটা করল তখনই। আবার হস্তিনীকে এদিকে ফিরাতে চাইল। আমরা তখন দাঁড়িয়ে মোটামুটি চওড়া একটা বনপথের ওপর। হঠাৎই ক্ষেপে গিয়ে দৌড়ে এই পথে উঠে এল হাতিটা। তারপর কলজে কাঁপিয়ে চিৎকার করে ছুটে আসল। রহম আলীর কণ্ঠে আতঙ্কের ছোঁয়া, বলল, ‘দৌড়ান’।
ছুটছি পাগলের মতো। বিশাল শরীর নিয়ে কীভাবে এত জোরে দৌড়াচ্ছে মা হাতি খোদা জানে। দৌড়ানোর ফাঁকে এক পায়ের স্যান্ডেল ছুটে গেল। থোড়াই কেয়ার করে ছুটলাম। এখন ভেবে হাসি পায়, আমাদের মধ্যে তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান মিশুক ছিল দৌড়ে সবার আগে। হাতিটা আমাদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে ফেলেছিল, নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম একটা অঘটন আজ ঘটছে, তখনই হঠাৎ ঘুরে, বাচ্চার কাছে ফিরে গেল হাতিটা।
হাতি আছে বিপদে
এখন আমাদের দেশে স্থায়ী বুনো হাতি আছে কেবল পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে। ড. রেজা খান ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের বনগুলোতে ৪০০ টির মতো স্থায়ী বন্য হাতি আছে বলে ধারণা করেছিলেন। তবে আইইউসিএনের ২০১৬ সালের জরিপে হাতির গড় সংখ্যা ২৬৮ টির মতো বলে ধারণা করা হয়েছে। অস্থায়ী হাতিগুলোর বেশির ভাগের আবাস গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। এ ছাড়া সিলেটের লাঠিটিলা ও ভারতের জঙ্গল মিলিয়ে চারটি বুনো হাতির বিচরণের খবর মেলে।
কিন্তু ঘটনা হলো গত কয়েক বছরে কক্সবাজার ও আশপাশের বনাঞ্চলে একের পর এক হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর পাচ্ছি। এগুলোর অনেকগুলোই গুলি ও বৈদ্যুতিক ফাঁদে আটকা পড়ে। গারো পাহাড় সীমান্তবর্তী শেরপুর-জামালপুরেও হাতি-মানুষ সংঘাতে হাতি মারা পড়ছে। বন বিভাগের হিসেবে ১৯৯২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশে বুনো হাতি মৃত্যুর ঘটনা ১৫১। এর মধ্যে ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মারা যাওয়া হাতির সংখ্যা ৮৬ টি। বিশেষ করে ২০২০ এবং ২১ এই দুই বছরে মৃত হাতির সংখ্যা ৩৬। বুঝতেই পারছেন হাতিরা মোটেই ভালো নেই।
অবশ্য হাতির আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনাও কম নয়। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যে জানা যায় ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৪৮ জন মানুষ মারা গিয়েছে হাতির আক্রমণে।
এদিকে কক্সবাজারের দিকে রেল চলাচল শুরু হলেও বাড়তি সতর্কতা জরুরি। কারণ, ওই হাতিগুলোর রেলগাড়ি নামক জিনিসটির সঙ্গে পরিচয়ই নেই।
হাতি-মানুষ দ্বন্দ্ব
সত্যি বিপদে আছে হাতিরা। বন-জঙ্গল কাটা পড়ায় অনেক জায়গায় আশ্রয় হারিয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে যে পথে হাতিরা চলাফেরা করে আসছে তার মধ্যে, চারপাশেই গড়ে উঠেছে মানুষের বসতি, খেত খামার। এ ছাড়া বনে সুযোগের অপেক্ষায় থাকে চোরা শিকারিরা। দাঁতাল হাতি এখন চোখে পড়ে একেবারে কম। এমনকি এক যুগ আগে রাঙীপাড়ার সেগুন বাগানে যে দলটি দেখেছিলাম তার মধ্যে একটাও দাঁতাল হাতি নেই।
কক্সবাজার-টেকনাফ-লামা-আলীকদম—এই জায়গাগুলোয় বেশ কয়েকটি বড় পাল ঘুরে বেড়াচ্ছে হাতিদের, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে। রোহিঙ্গা বসতির কারণে ওগুলোর চলার পথ আটকে গেছে, আবাস স্থল ধ্বংস হয়ে গেছে। আছে চরম খাবার সংকটে।
এবার একটু গারো পাহাড়ের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। মেঘালয়ের বিশাল অংশজুড়ে গারো পাহাড়। গারো পাহাড়ের মূল অংশ ভারতে, বাংলাদেশে পড়েছে ছোট কিছু টিলা। আর এই গারো পাহাড় সব সময়ই হাতির জন্য বিখ্যাত। পুরোনো দিনে গারো পাহাড় ছিল সুসঙ্গ রাজ্যের অধীনে। প্রায় তিন হাজার ৩৫৯ বর্গমাইল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত ছিল সুসঙ্গ রাজ্য। পরে সুসঙ্গের সঙ্গে দুর্গাপুর যোগ করে নাম হয় সুসঙ্গ দুর্গাপুর। রাজধানী ছিল দুর্গাপুর।
সুসঙ্গ মুল্লুকের হাতির খবর ছিল মোগল বাদশাহর কাছেও। সুসঙ্গের রাজারা খেদার মাধ্যমে গারো পাহাড় থেকে হাতি ধরতেন। এসব হাতি বিক্রি করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করতেন। খেদায় ধরা এই হাতি নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকায়। তখন ঢাকায়ই ছিল সরকারের খেদা অফিস। ময়মনসিংহের মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য ও রাজা জগৎকশোর আচার্যও গারো পাহাড়ে বেশ কয়েকবার খেদা পরিচালনা করেছেন।
তবে এগুলো সবই অতীত ইতিহাস। বহু বছর ধরেই স্থায়ী হাতি নেই গারো পাহাড়ের বাংলাদেশ অংশে। তবে হাতির বড় একটা দল ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে চলাফেরা করে শেরপুর-ময়মনসিংহের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয়। কিন্তু এই এলাকাটিকে এখন হাতি-মানুষ সংঘাত বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে। হাতির আক্রমণে মারা পড়ছে মানুষ, আবার মানুষের পেতে রাখা বিদ্যুতের ফাঁদে প্রাণ যাচ্ছে হাতির। ঘটনা হলো, এই এলাকার বন-পাহাড়ে এখন হাতির প্রয়োজনীয় খাবার নেই। তাই হাতিরা নিয়মিত হানা দিচ্ছে মানুষের কৃষি জমিতে। এদিকে সীমান্তের ওই পাশের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে হাতিদের ভারত-বাংলাদেশের বন-পাহাড়ে যাতায়াত আগের মতো সহজ নেই। সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে বিপজ্জনক এক পরিস্থিতি।
হাতি বাঁচাব কেন
এখন হয়তো আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে আমরা হাতি বাঁচাব কেন? উত্তরটা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও বন্যপ্রাণী গবেষক মনিরুল খান। তিনি বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে হাতি। হাতির নাদি বা মলের সঙ্গে মাটিতে পড়া বীজের মাধ্যমে বিভিন্ন উদ্ভিদের বিস্তার ঘটে। আবার হাতি চলাফেরার কারণে ঘন জঙ্গলের গাছপালার ঠাসবুনোটের মাঝখানে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হয় সেখান দিয়ে সূর্যের আলো প্রবেশ করে উদ্ভিদকে পর্যাপ্ত আলো পেতে সাহায্য করে।
চাই হাতি শিশুর নিরাপদ আবাস
সেদিন তাড়া খাওয়ার পরে মা হাতিটাকে দেখেছিলাম বাচ্চাটাকে নিয়ে ছড়া পাড় হয়ে আরেকটা পাহাড়ে উঠে যাচ্চে। বাচ্চাটাকে দেখে একটা কষ্ট দানা বাঁধছিল মনে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, এখনো আমার ওর কথা মনে হয়, কষ্টটা ফিরে আসে বুকে। কেমন আছে ও? হাতি গড়ে ৭০ বছর বাঁচে। সে হিসাবে ছোট্ট হাতি তো বটেই ওর মারও জঙ্গল দাপিয়ে বেড়াবার কথা! কিন্তু এখন যে পরিস্থিতি, ভয় হয়, ওই ছোট্ট হাতি, যার কিনা এখন যুবা বয়সে বন-পাহাড় শাসন করার কথা, সেই বেঁচে আছে তো?
তারপরও আশা হারাতে চাই না। হাতিদের রক্ষায় কাজ করছেন অনেকেই। বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত এলাকায়গুলোয় এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম (ইআরটি) গঠন করা হয়েছে। এর সদস্যরা মানুষকে হাতির আসার সংবাদ দেয়। হাতির কাছাকাছি যেতে নিরুৎসাহিত করে। এভাবে তাঁরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে। তা ছাড়া হাতি রক্ষায় বিভিন্ন জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করা আছে। এর সদস্যরা হাতি-মানুষ সংঘাত এড়াতে সাহায্য করে।
এই বন কর্মকর্তা আরও বলেন, সরকারিভাবে হাতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ক্ষতিপূরণে অর্থ সাহায্য দেওয়া হয়। তা ছাড়া প্ল্যানিং কমিশনে একটি প্রজেক্ট পেশ করা হয়েছে। যেটা পাশ হলে হাতি রক্ষায় সুবিধা হবে। এর আওতায় ইআরটিদের জন্যও একটা ভাতার ব্যবস্থা করা যাবে। তেমনি হাতি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সোলার ফেন্সিংয়রে ব্যবস্থা করা হবে। এটাও হাতি রক্ষায় সাহায্য করবে।
এদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দিকে ট্রেন চালু হয়ে গেলে হাতিরা যেন বিপদে না পড়ে সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে ইমরান আহমেদ বলেন, হাতি অধ্যুষিত যেসব এলাকাগুলোর ভেতর দিয়ে রেলপথ গিয়েছে সেখানে হাতি চলাচলের জন্য আন্ডার পাস ও ওভার পাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া হাতির বিচরণের ব্যাপারে আগে থেকে যেন ট্রেনে বসেই সতর্ক বার্তা পাওয়া যায় এ ব্যাপারে আধুনিক ডিভাইস স্থাপন ও সিগন্যালিং সিস্টেম চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।
বরাবরের মতো আশা নিয়েই তাই শেষ করতে চাই। আশা করি হাতিরা আবার পুরনো দিনের মতো নিরাপদে বন-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারবে। কমে যাবে হাতি-মানুষ সংঘাত। হয়তো নিজের অজান্তেই সেই ছোট্ট হাতির সঙ্গে (যে এখন বয়সে তরুণ) দেখা হয়ে যাবে রাঙামাটির কোনো পাহাড়ে, কিংবা ছড়া বা জঙ্গলে। স্বাভাবিকভাবেই সে আমাকে চিনবেই না, আমিও তাকে চিনব না।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
১ দিন আগে
জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
২ দিন আগে
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
২ দিন আগে
আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।
২ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মোট ১৪টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই জলবায়ু অধিকারভিত্তিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সম্মেলনের আগে আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাবেশের ঘোষণা দেন অ্যাসেম্বলি কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল।
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর লক্ষ্য, প্রস্তুতি, অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি অতিথিসহ দুই দিনের সেশন পরিকল্পনা, র্যালি এবং অন্যান্য আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের প্রথম দিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ক্লাইমেট র্যালিতে অংশগ্রহণ এবং র্যালি শেষে ক্লাইমেট জাস্টিজ এসেম্বলি ২০২৫ উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ধরার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
দিনব্যাপী প্রোগ্রামে ৩টি প্লান্যারি সেশন থাকবে। বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে আসা ভুক্তভোগীরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেবেন।
দ্বিতীয় দিনে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রথম দিনের আলোচনার সারসংক্ষেপ, সুপারিশ ও করণীয় নিয়ে উপস্থাপন করা হবে ‘ড্রাফট অ্যাসেম্বলি ডিক্লারেশন’।
শরীফ জামিল বলেন, ‘প্রান্তিক এবং অপ্রান্তিক সকল মানুষের সচেতনতার মধ্য দিয়েই রূপান্তরের বাস্তবতার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যে এই জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫।’
ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পরিবেশকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে; যা একটি মহৎ কাজ। কোনো কিছুর বিনিময়ে এ কাজের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রয়োজন। আমার যে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ করতে যাচ্ছি, তাতে অনেক সহযোগীর সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সঠিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যায্য প্রতিফলন পাওয়া সম্ভব।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কো-কনভেনর, ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর কো-কনভেনর এম এস সিদ্দিকি, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিলা আজিজ এবং জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫ এর সমন্বয়ক এবং সহযোগী সমন্বয়কেরা।
জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫-এর আয়োজক ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা)। সহযোগী আয়োজক সিপিআরডি, কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, মিশনগ্রিন বাংলাদেশ, ব্রাইটার্স, ওএবি ফাউন্ডেশন, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অলটারনেটিভ ল কালেকটিভ, আর্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ, ফসিল ফ্রি জাপান, গ্রিন কাউন্সিল, জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি, এলডিসি ওয়াচ, মাইনস, মিনারেলস অ্যান্ড পিপল, নেটজভের্ক এনার্জিভেন্ডে, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট ফর ইকুটেবল ডেভেলপমেন্ট, রিভারফক্স, সিডব্লিউটি।

ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে আগামী ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মোট ১৪টি দেশের প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিশিষ্ট পরিবেশবিদ, গবেষক, নীতিনির্ধারক ও সামাজিক আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ এই জলবায়ু অধিকারভিত্তিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সম্মেলনের আগে আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর আহ্বায়ক কমিটির আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সমাবেশের ঘোষণা দেন অ্যাসেম্বলি কমিটির সদস্যসচিব শরীফ জামিল।
‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’-এর লক্ষ্য, প্রস্তুতি, অংশগ্রহণকারী দেশি-বিদেশি অতিথিসহ দুই দিনের সেশন পরিকল্পনা, র্যালি এবং অন্যান্য আয়োজন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই দিনব্যাপী এই সমাবেশের প্রথম দিন ১৩ ডিসেম্বর সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে ক্লাইমেট র্যালিতে অংশগ্রহণ এবং র্যালি শেষে ক্লাইমেট জাস্টিজ এসেম্বলি ২০২৫ উদ্বোধন করবেন সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ধরার উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এই উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার।
দিনব্যাপী প্রোগ্রামে ৩টি প্লান্যারি সেশন থাকবে। বাংলাদেশে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল থেকে আসা ভুক্তভোগীরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বক্তব্য দেবেন।
দ্বিতীয় দিনে ১৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টায় সমাবেশের প্রথম দিনের আলোচনার সারসংক্ষেপ, সুপারিশ ও করণীয় নিয়ে উপস্থাপন করা হবে ‘ড্রাফট অ্যাসেম্বলি ডিক্লারেশন’।
শরীফ জামিল বলেন, ‘প্রান্তিক এবং অপ্রান্তিক সকল মানুষের সচেতনতার মধ্য দিয়েই রূপান্তরের বাস্তবতার ন্যায্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সেই লক্ষ্যে এই জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫।’
ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর আহ্বায়ক ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘পরিবেশ ও জলবায়ু বিশ্বব্যাপী হুমকির মুখে, ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশও। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় আমাদের পরিবেশকর্মীরা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছে; যা একটি মহৎ কাজ। কোনো কিছুর বিনিময়ে এ কাজের মূল্যায়ন সম্ভব নয়। কিন্তু এই ঝুঁকি মোকাবিলায় অর্থায়ন প্রয়োজন। আমার যে জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ করতে যাচ্ছি, তাতে অনেক সহযোগীর সহযোগিতা প্রয়োজন রয়েছে, তা-ও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সঠিক রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে জলবায়ু ন্যায্যতার ন্যায্য প্রতিফলন পাওয়া সম্ভব।
এ ছাড়া সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন কো-কনভেনর, ক্লাইমেট জাস্টিজ অ্যাসেম্বলি ২০২৫-এর কো-কনভেনর এম এস সিদ্দিকি, সিপিআরডির প্রধান নির্বাহী মো. শামসুদ্দোহা, সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক, শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাকিলা আজিজ এবং জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫ এর সমন্বয়ক এবং সহযোগী সমন্বয়কেরা।
জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫-এর আয়োজক ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা)। সহযোগী আয়োজক সিপিআরডি, কোস্ট ফাউন্ডেশন, সেন্টার ফর রিনিউয়েবল এনার্জি সার্ভিসেস, ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ, মিশনগ্রিন বাংলাদেশ, ব্রাইটার্স, ওএবি ফাউন্ডেশন, এশিয়ান পিপলস মুভমেন্ট অন ডেবট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, অলটারনেটিভ ল কালেকটিভ, আর্টিভিস্ট নেটওয়ার্ক, ফসিল ফুয়েল নন-প্রলিফারেশন ট্রিটি ইনিশিয়েটিভ, ফসিল ফ্রি জাপান, গ্রিন কাউন্সিল, জাপান সেন্টার ফর আ সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি, এলডিসি ওয়াচ, মাইনস, মিনারেলস অ্যান্ড পিপল, নেটজভের্ক এনার্জিভেন্ডে, ফিলিপাইন মুভমেন্ট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউট ফর ইকুটেবল ডেভেলপমেন্ট, রিভারফক্স, সিডব্লিউটি।

বাংলাদেশের অল্প কিছু বন-পাহাড়েই এখন টিকে আছে বুনো হাতিরা। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হা
১২ আগস্ট ২০২৩
জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
২ দিন আগে
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
২ দিন আগে
আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে। মূল কম্পনের পর বেশ কয়েকটি ছোট আফটারশকও অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য সতর্কতা হিসেবে ‘সুনামি অ্যাডভাইজরি’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, ঢেউগুলো প্রায় এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, তাই উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে একই অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এতে বহু বাসিন্দা আহত হয়েছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।

জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০ কিলোমিটার গভীরে। মূল কম্পনের পর বেশ কয়েকটি ছোট আফটারশকও অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে জাপানের পূর্বাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলোর জন্য সতর্কতা হিসেবে ‘সুনামি অ্যাডভাইজরি’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া সংস্থা সতর্ক করে জানিয়েছে, ঢেউগুলো প্রায় এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে, তাই উপকূলবাসীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের গোড়ার দিকে একই অঞ্চলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এতে বহু বাসিন্দা আহত হয়েছেন। সর্বশেষ পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে এখনো বিস্তারিত জানা যায়নি।

বাংলাদেশের অল্প কিছু বন-পাহাড়েই এখন টিকে আছে বুনো হাতিরা। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হা
১২ আগস্ট ২০২৩
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
১ দিন আগে
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
২ দিন আগে
আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি।
আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির বায়ুমান ৩৮৫, যা বিপজ্জনক বাতাসের নির্দেশক।
শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভিয়েতনামের হ্যানয়, ভারতের কলকাতা, কুয়েতের কুয়েত সিটি ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৫৫, ২৪৬, ২১৭ ও ২১১।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি।
আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক। আর শীর্ষে থাকা দিল্লির বায়ুমান ৩৮৫, যা বিপজ্জনক বাতাসের নির্দেশক।
শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্য শহরগুলো হলো— ভিয়েতনামের হ্যানয়, ভারতের কলকাতা, কুয়েতের কুয়েত সিটি ও পাকিস্তানের লাহোর। শহরগুলোর বায়ুমান যথাক্রমে ২৫৫, ২৪৬, ২১৭ ও ২১১।
বাতাসের গুণমান সূচকের (একিউআই) মাধ্যমে দূষণের মাত্রা নির্ধারণ করে নিয়মিত বায়ু পরিস্থিতি তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার। তাদের তালিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকার বাতাসে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণাই দূষণের প্রধান উৎস। বেশি মাত্রার দূষণ শ্বাসতন্ত্রের রোগ, হৃদ্রোগ এবং দীর্ঘ মেয়াদে ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।
বৈশ্বিক মানদণ্ড অনুযায়ী, বায়ুমান সূচক ৫০-এর নিচে থাকলে বিশুদ্ধ বাতাস ধরা হয়। ৫১-১০০ হলে তা সহনীয়। ১০১-১৫০ এর মধ্যে হলে সতর্কতামূলক বা সংবেদনশীল মানুষের (শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি) জন্য অস্বাস্থ্যকর। ১৫১-২০০ হলে সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর এবং সূচক ২০১ থেকে ৩০০ হলে বাতাসকে খুব অস্বাস্থ্যকর বলা হয়। আর সূচক ৩০০ ছাড়ালে সেই বাতাস দুর্যোগপূর্ণ।
বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রতি বছর বহু মানুষ মারা যায়। জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বায়ুদূষণ প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৫২ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ বলে ২০২৩ সালের নভেম্বরে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় তুলে ধরা হয়।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, গৃহস্থালি ও পারিপার্শ্বিক বায়ুদূষণের সম্মিলিত প্রভাবে বছরে ৬৭ লাখ মানুষ মারা যায়।
দীর্ঘদিন ঢাকার বাতাস অতিমাত্রায় দূষিত হওয়ায় বাইরে বের হলে সবাইকে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ইটভাটা, শিল্পকারখানার মালিক এবং সাধারণ মানুষকে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ রাখা, নির্মাণস্থলে ছাউনি ও বেষ্টনী স্থাপন করা, নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা, নির্মাণসামগ্রী পরিবহনের সময় ট্রাক বা লরি ঢেকে নেওয়া, নির্মাণস্থলের আশপাশে দিনে অন্তত দুবার পানি ছিটানো এবং পুরোনো ও ধোঁয়া তৈরি করা যানবাহন রাস্তায় বের না করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশের অল্প কিছু বন-পাহাড়েই এখন টিকে আছে বুনো হাতিরা। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হা
১২ আগস্ট ২০২৩
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
১ দিন আগে
জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
২ দিন আগে
আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

রাজধানী ঢাকায় গত কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রা কমছিল। তবে আজ শুক্রবার শীত বেশ ভালোভাবেই জেঁকে বসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকালে সেটি কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাস থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৩ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ৩৩ মিনিটে।

রাজধানী ঢাকায় গত কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রা কমছিল। তবে আজ শুক্রবার শীত বেশ ভালোভাবেই জেঁকে বসেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ সকালে সেটি কমে হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আজ সকাল ৭টায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার পূর্বাভাস থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়, আজ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক এবং আকাশ পরিষ্কার থাকতে পারে। সকাল ৬টায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৮৫ শতাংশ। দুপুর পর্যন্ত এই অঞ্চলের ওপর দিয়ে উত্তর অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৮ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বাতাস বয়ে যেতে পারে। দিনের তাপমাত্রা সাধারণত অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্তের সময় সন্ধ্যা ৫টা ১৩ মিনিটে, আগামীকাল সূর্যাস্ত ৬টা ৩৩ মিনিটে।

বাংলাদেশের অল্প কিছু বন-পাহাড়েই এখন টিকে আছে বুনো হাতিরা। তাও থাকার জায়গার সংকট, খাবারের অভাব আর মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিলিয়ে বিশাল আকারের এই প্রাণীরা আছে বড় বিপদে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে আমাদের দেশে বুনো হাতির অবস্থা, মানুষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, হাতির মুখোমুখি হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প ছাড়াও থাকছে হা
১২ আগস্ট ২০২৩
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’—ধরা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ২১টি সংগঠনের উদ্যোগে ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিলনায়তন, শেরেবাংলা নগর, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন ৩য় ‘জলবায়ু ন্যায্যতা সমাবেশ ২০২৫’ (Climate Justice Assembly 2025)।
১ দিন আগে
জাপানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আঘাত হেনেছে রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। জাপান আবহাওয়া সংস্থার বরাতে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ শুক্রবার স্থানীয় সময় বেলা ১১টা ৪৪ মিনিট (গ্রিনিচ মান সময় ২টা ৪৪ মিনিট) নাগাদ এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
২ দিন আগে
বায়ুমান নিয়ে কাজ করা সুইস প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের দূষিত শহর তালিকার ১২৭টি দেশের মধ্যে আজ শুক্রবার ঢাকার অবস্থান ১০ম। অন্যদিকে গতকালের মতো আজও শীর্ষস্থানে দিল্লি। আজ সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের রেকর্ড অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান আজ ১৬৭, যা সবার জন্য অস্বাস্থ্যকর বাতাসের নির্দেশক।
২ দিন আগে