জাহাঙ্গীর আলম

হামাস একটা ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গ্রুপ। তারা আইএসের মতোই বর্বর। হামাস শান্তি চায় না। তারা ইসরায়েলের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে চায়। তারা পৃথিবীর সব ইহুদিকে নির্মূল করতে চায়। এটাই তাদের একমাত্র মিশন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় আরেক ধর্মান্ধ গ্রুপ লিবিয়ার হিজবুল্লাহ। এই উভয় ধর্মান্ধ উগ্র ইসলামপন্থী গ্রুপের পেছনে রয়েছে ধর্মান্ধ শিয়া রাষ্ট্র ইরান।
ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থী সশস্ত্র গ্রুপ হামাস সম্পর্কে এই হলো ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। হামাসের ওপর সব দায় চাপিয়ে দুই দশক ধরে অবরুদ্ধ গাজাবাসীর ওপর নির্বিচার বোমা হামলা, বর্বরতা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। পশ্চিমারাও বলে আসছে, ইসরায়েলের অবশ্যই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। যদিও পশ্চিম তীরে হামাসের অস্তিত্ব না থাকলেও, সেখানে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এযাবৎ কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামাসকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বলা হয়, হামাস গাজার ২২ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে ঢাল বানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও ফিলিস্তিনে ২০০৭ সালের পর আর কোনো জাতীয় নির্বাচন হয়নি। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল হামাস। এর আগে যখন হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিন ইসরায়েলি গুপ্তহত্যার শিকার হন, তখন গাজায় হামাসের পক্ষে বিশাল বিক্ষোভ দেখে ইসরায়েলও রীতিমতো ভড়কে গিয়েছিল।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, হামাস—যা আরবিতে ‘ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ—ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত না হলে হয়তো গাজায় এত শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে টিকে থাকতে পারত না, অথবা অস্তিত্বই থাকত না!
ইসরায়েল ও আমেরিকার একাধিক সরকারি কর্মকর্তার বরাতেই জানা যায়, ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে একগুচ্ছ ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে সংগঠিত করে একটি একক সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীতে পরিণত করতে সহায়তা দিয়েছে খোদ ইসরায়েল! আজকের ‘হামাস’ নামের সেই গোষ্ঠীটিই এখন ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, জেনেবুঝে একটি উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠনকে শক্তি-সামর্থ্যে পুষ্ট করা কি দুধ-কলা দিয়ে বিষধর সাপ পোষার মতো নয়? ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের নিশ্চয়ই সেই বোধবুদ্ধি আছে। কী এমন স্বার্থ থাকতে পারে এর পেছনে?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে জানার চেষ্টা করা যাক, এটি কেন একটি নিছক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নয়। এর পেছনে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মুখে শোনা যাক সেই গল্প। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইতজাক সেগেভ, ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক গভর্নর ছিলেন। সেগেভ পরে নিউইয়র্ক টাইমসের একজন সাংবাদিককে বলেছিলেন, ইসরায়েল সরকারের সিদ্ধান্তেই তিনি ফিলিস্তিনি ইসলামি আন্দোলনকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন।
সেগেভ বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার আমাকে একটি বাজেট দিয়েছিল এবং গাজার সামরিক সরকার সেই টাকা মসজিদে দেয়।
‘আমার বড় খেদের বিষয় হলো হামাস ইসরায়েলের সৃষ্টি।’ এটিও কিন্তু একজন উচ্চপদস্থ ইসরায়েলি কর্মকর্তার বক্তব্য। আভনার কোহেন, ইসরায়েলের ধর্মীয় বিষয়ক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। গাজায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে তিনি এ কথা বলেন।
২০১০ সালের ২৮ নভেম্বর মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁস করে উইকিলিকস। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের অংশে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের প্রসঙ্গও এসেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, গাজায় ফাতাহ এবং হামাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০০৭ সালের জুনে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন পরিচালক মেজর জেনারেল আমোস ইয়াদলিন মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড জোনসকে বলেন, হামাস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ইসরায়েল খুশিই হবে। কারণ, ইসরায়েল তখন গাজাকে সরাসরি শত্রুভূমি হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। মার্কিন দূত তখন বলেন, ফাতাহ সেখানে নিয়ন্ত্রণ হারালে মাহমুদ আব্বাস পশ্চিম তীরে আলাদা সরকার গঠনের তাগিদ বোধ করতে পারেন। জবাবে ইয়াদলিন বলেন, এ ধরনের কিছু ঘটলে ইসরায়েল খুশি হবে। কারণ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) তখন হামাসের মতো একটি রাষ্ট্রহীন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আর ফাতাহ নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীরে তখন ইসরায়েল সহযোগিতা করতে পারবে।
হামাস সৃষ্টির পেছনে ইসরায়েলের সম্ভাব্য ভূমিকা প্রসঙ্গে উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদাহ নস্যাৎ করে দিতে ‘প্রোটেক্টিভ এজ’ সামরিক অভিযানকালে ইসরায়েল হামাসকে শক্তিশালী করার আগ্রহ দেখায়। ১৯৮৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক আলাপের নথিতে পাওয়া যাচ্ছে, ওই সময় পশ্চিম তীরের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করতেন—ইসরায়েল হামাসকে সহযোগিতা করছে। অনেক দোকানি বলেছেন, ফাতাহ যখন ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়ে গোপনে লিফলেট বিলি করছিল, তখন হামাসকে প্রকাশ্যেই তাদের লিফলেট বিলি করতে দেখা গেছে। ওই সময় মার্কিন নথিতে বলা হয়েছে, বিপুলসংখ্যক গ্রেপ্তার হলেও হামাসের লোক খুব কমই গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, ইসরায়েল হামাসের ব্যাপারে শুধু চোখ বন্ধ করেই থাকছে না, বরং তারা হামাসকে সহযোগিতা করছে।
একুশ শতকের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯, ২০১২, ২০১৪ এবং চলতি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখনো চলমান। প্রথম তিন যুদ্ধে ইসরায়েল গাজায় প্রায় আড়াই হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। আর চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে গাজায় নিহত তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আর হামাস, এ পর্যন্ত যে পরিমাণ ইসরায়েলি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে, তা ফিলিস্তিনের কোনো ধর্মনিরপেক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠীর চেয়ে অনেক বেশি। চলমান যুদ্ধে ১ হাজার ৪০০-র বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তেল আবিব। আর গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি কমপক্ষে ২০০। এর মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধও রয়েছেন। স্পষ্টত হামাসের কারণে ইসরায়েলকেও কম মানবিক মূল্য দিতে হয়নি!
নাকের ডগায় এই হামাসকে এত দিন কেন বাড়তে দিল ইসরায়েল? যাদের এখন নির্মূল করার জন্য গাজায় নির্বিচারে বোমা ফেলছে নেতানিয়াহুর সরকার? ৭ অক্টোবরের ঘটনার বারবার উল্লেখ করে এই নৃশংসতাকে তারা ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। পশ্চিমের গণমাধ্যমগুলোও সাফাই গাইছে।
এর উত্তরটিও দিয়েছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইৎজাক সেগেভ নিউইয়র্ক টাইমসে বলেছিলেন, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও বামপন্থী এবং ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ফাতাহ পার্টির বিপরীতে অক্ষশক্তি হিসেবে ফিলিস্তিনি ইসলামি আন্দোলনকে অর্থ সহায়তা করেছিল ইসরায়েল।
ইয়াসির আরাফাত নিজেও হামাসকে ‘ইসরায়েলের সৃষ্টি’ বলে অভিমত দিয়েছিলেন।
আর গাজার সাবেক ধর্মবিষয়ক কর্মকর্তা আভনার কোহেন ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি ফিলিস্তিনে ইসলামপন্থীদের সহযোগিতা দেওয়ার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন।
সেই প্রতিবেদনে কোহেন ফিলিস্তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের সমর্থন করে অধিকৃত অঞ্চলে ‘বিভাজন ও শাসনের’ (ডিভাইড অ্যান্ড রুল) খেলা বন্ধ করতে ঊর্ধ্বতনদের সতর্ক করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি...এই বাস্তবতা আমাদের মুখের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে, এই দানবকে ভেঙে দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করার প্রচেষ্টার ওপর মনোযোগ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।’
কিন্তু ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকেরা কথা শোনেননি। এমনকি বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অগোচরেই তারা হামাসকে সংগঠিত হতে সহযোগিতা করে গেছে।
অবশ্য একই ভুল যুক্তরাষ্ট্রও আফগানিস্তানে করেছে। সেখানে কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন ঠেকিয়ে দিতে মুজাহিদিনদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, অর্থ, রসদ সবকিছুই দিয়েছে। মুজাহিদিনদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে সোভিয়েতদের সফলভাবেই হটিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু সেখানে গড়ে উঠেছে আরেক দানব—তালেবান। এর মূল্য দিতে হয়েছে নাইন-ইলেভেনে। এরপর আফগানিস্তানে দীর্ঘ ক্লান্তিকর এবং অবশ্যই ব্যয়বহুল একটি যুদ্ধ বয়ে বেড়াতে হয়েছে। পরিহাসের বিষয়, পরাজিত হয়ে ফিরে এসেছে মার্কিন সেনারা, সেই আফগানিস্তানের মসনদে এখন আবার সেই তালেবান।
ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদাহতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন সারা বিশ্বের বামপন্থীরা। স্নায়ুযুদ্ধের কালে সেটি একটি বড় আতঙ্কের বিষয় তো বটেই। সেই আন্দোলনকে হীনবল করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে বিভাজনের কৌশলকেই বেছে নিয়েছিল ইসরায়েল। সেটি যে একাবারে কাজে দেয়নি তা নয়। ফিলিস্তিন এখন বহুধা বিভক্ত। সেখানে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ, আর হামাস। অবশ্য গাজার বাইরে হামাসের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পশ্চিম তীর এবং রামাল্লাও ফাতাহর একক নিয়ন্ত্রণে নেই। সেখানে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত হচ্ছে। ফলে শান্তি আলোচনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধি কে হবে—সেই প্রশ্ন তুলে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েল।
আরেকটি বড় সুবিধা ইসরায়েল এখনো নিচ্ছে, সেটি হলো—ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে যা-তা প্রোপাগান্ডাকে পশ্চিমা বিশ্বে সহজে বিশ্বাসযোগ্য করতে পারার সুযোগ। চলমান যুদ্ধেও হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নারীদের নির্যাতন, ধর্ষণ, শিশুদের শিরশ্ছেদ করার মতো প্রোপাগান্ডা শুরুতে পশ্চিমে প্রায় বিশ্বাসযোগ্য করতে পেরেছিল ইসরায়েল। যদিও শেষ পর্যন্ত এসব অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। কিন্তু নাইন-ইলেভেনের পর পশ্চিমে ইসলামপন্থীদের ব্যাপারে যে ধারণা প্রোথিত হয়েছে তাতে এ ধরনের সংগঠনের বিরুদ্ধে পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বরতার অভিযোগও পশ্চিম চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে প্রস্তুত। এতে সুবিধা হলো, গাজায় প্রতিশোধমূলক নির্বিচার নৃশংসতার ন্যায্যতা আদায় করে নেওয়া গেল!
তবে একই সঙ্গে এটিও সত্য যে হামাস এখন ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে কঠিন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। ঘটনাটির ক্রম এমন: প্রথমত, ইসরায়েলিরা হামাস এবং তার মুসলিম ব্রাদারহুডের পূর্বসূরিদের সংগঠিত করে ফিলিস্তিনে রাজনৈতিক ইসলামের একটি যুদ্ধংদেহী ধারা গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে; এরপর, ইসরায়েলিরা কৌশল পরিবর্তন করেছে এবং হামাসকে নির্মূল করার কৌশল নিয়েছে। সেই কৌশলের ভুক্তভোগী গাজার ২২ লাখ মানুষ, যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী বোমা, অবরোধ ও অপমান।
১৯৮০-এর দশকে গাজায় অবস্থানকারী ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আরববিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড হাচাম পরে মন্তব্য করেছিলেন, ‘যখন আমি ঘটনার শৃঙ্খলের দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমার মনে হয়, আমরা একটি ভুল করেছি। কিন্তু সেই সময়ে, সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে কেউ ভাবেনি।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদাহ শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরেই হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনি ইমাম এবং অধিকারকর্মী শেখ আহমেদ ইয়াসিন তাঁর মুজামা আল ইসলামিয়া নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেই হামাসে রূপ দেন। এই ধর্মীয় দাতব্য সংস্থাটি প্রথমে গাজায় প্রতিষ্ঠিত করেন ১৯৭৩ সালে। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের মতাদর্শে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয় এ সংগঠন।
১৯৯০-এর দশক থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়েছে হামাস। মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহর সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর গাজা নিয়ন্ত্রণে নেয় হামাস। শুরুর দিকে তারা ফাতাহ প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধিতা করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রস্তাবে সম্মত থাকার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ২০০৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পরও ক্ষমতায় বসতে না পারা হামাস এখনো ফিলিস্তিনের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী বলে দাবি করে। ফলে ফিলিস্তিনের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা প্রতিনিধিত্ব করতে চায়।
জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

হামাস একটা ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গ্রুপ। তারা আইএসের মতোই বর্বর। হামাস শান্তি চায় না। তারা ইসরায়েলের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে চায়। তারা পৃথিবীর সব ইহুদিকে নির্মূল করতে চায়। এটাই তাদের একমাত্র মিশন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় আরেক ধর্মান্ধ গ্রুপ লিবিয়ার হিজবুল্লাহ। এই উভয় ধর্মান্ধ উগ্র ইসলামপন্থী গ্রুপের পেছনে রয়েছে ধর্মান্ধ শিয়া রাষ্ট্র ইরান।
ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থী সশস্ত্র গ্রুপ হামাস সম্পর্কে এই হলো ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। হামাসের ওপর সব দায় চাপিয়ে দুই দশক ধরে অবরুদ্ধ গাজাবাসীর ওপর নির্বিচার বোমা হামলা, বর্বরতা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। পশ্চিমারাও বলে আসছে, ইসরায়েলের অবশ্যই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। যদিও পশ্চিম তীরে হামাসের অস্তিত্ব না থাকলেও, সেখানে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এযাবৎ কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামাসকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বলা হয়, হামাস গাজার ২২ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে ঢাল বানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও ফিলিস্তিনে ২০০৭ সালের পর আর কোনো জাতীয় নির্বাচন হয়নি। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল হামাস। এর আগে যখন হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিন ইসরায়েলি গুপ্তহত্যার শিকার হন, তখন গাজায় হামাসের পক্ষে বিশাল বিক্ষোভ দেখে ইসরায়েলও রীতিমতো ভড়কে গিয়েছিল।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, হামাস—যা আরবিতে ‘ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ—ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত না হলে হয়তো গাজায় এত শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে টিকে থাকতে পারত না, অথবা অস্তিত্বই থাকত না!
ইসরায়েল ও আমেরিকার একাধিক সরকারি কর্মকর্তার বরাতেই জানা যায়, ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে একগুচ্ছ ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে সংগঠিত করে একটি একক সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীতে পরিণত করতে সহায়তা দিয়েছে খোদ ইসরায়েল! আজকের ‘হামাস’ নামের সেই গোষ্ঠীটিই এখন ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, জেনেবুঝে একটি উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠনকে শক্তি-সামর্থ্যে পুষ্ট করা কি দুধ-কলা দিয়ে বিষধর সাপ পোষার মতো নয়? ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের নিশ্চয়ই সেই বোধবুদ্ধি আছে। কী এমন স্বার্থ থাকতে পারে এর পেছনে?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে জানার চেষ্টা করা যাক, এটি কেন একটি নিছক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নয়। এর পেছনে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মুখে শোনা যাক সেই গল্প। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইতজাক সেগেভ, ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক গভর্নর ছিলেন। সেগেভ পরে নিউইয়র্ক টাইমসের একজন সাংবাদিককে বলেছিলেন, ইসরায়েল সরকারের সিদ্ধান্তেই তিনি ফিলিস্তিনি ইসলামি আন্দোলনকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন।
সেগেভ বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার আমাকে একটি বাজেট দিয়েছিল এবং গাজার সামরিক সরকার সেই টাকা মসজিদে দেয়।
‘আমার বড় খেদের বিষয় হলো হামাস ইসরায়েলের সৃষ্টি।’ এটিও কিন্তু একজন উচ্চপদস্থ ইসরায়েলি কর্মকর্তার বক্তব্য। আভনার কোহেন, ইসরায়েলের ধর্মীয় বিষয়ক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। গাজায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে তিনি এ কথা বলেন।
২০১০ সালের ২৮ নভেম্বর মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁস করে উইকিলিকস। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের অংশে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের প্রসঙ্গও এসেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, গাজায় ফাতাহ এবং হামাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০০৭ সালের জুনে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন পরিচালক মেজর জেনারেল আমোস ইয়াদলিন মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড জোনসকে বলেন, হামাস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ইসরায়েল খুশিই হবে। কারণ, ইসরায়েল তখন গাজাকে সরাসরি শত্রুভূমি হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। মার্কিন দূত তখন বলেন, ফাতাহ সেখানে নিয়ন্ত্রণ হারালে মাহমুদ আব্বাস পশ্চিম তীরে আলাদা সরকার গঠনের তাগিদ বোধ করতে পারেন। জবাবে ইয়াদলিন বলেন, এ ধরনের কিছু ঘটলে ইসরায়েল খুশি হবে। কারণ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) তখন হামাসের মতো একটি রাষ্ট্রহীন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আর ফাতাহ নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীরে তখন ইসরায়েল সহযোগিতা করতে পারবে।
হামাস সৃষ্টির পেছনে ইসরায়েলের সম্ভাব্য ভূমিকা প্রসঙ্গে উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদাহ নস্যাৎ করে দিতে ‘প্রোটেক্টিভ এজ’ সামরিক অভিযানকালে ইসরায়েল হামাসকে শক্তিশালী করার আগ্রহ দেখায়। ১৯৮৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক আলাপের নথিতে পাওয়া যাচ্ছে, ওই সময় পশ্চিম তীরের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করতেন—ইসরায়েল হামাসকে সহযোগিতা করছে। অনেক দোকানি বলেছেন, ফাতাহ যখন ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়ে গোপনে লিফলেট বিলি করছিল, তখন হামাসকে প্রকাশ্যেই তাদের লিফলেট বিলি করতে দেখা গেছে। ওই সময় মার্কিন নথিতে বলা হয়েছে, বিপুলসংখ্যক গ্রেপ্তার হলেও হামাসের লোক খুব কমই গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, ইসরায়েল হামাসের ব্যাপারে শুধু চোখ বন্ধ করেই থাকছে না, বরং তারা হামাসকে সহযোগিতা করছে।
একুশ শতকের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯, ২০১২, ২০১৪ এবং চলতি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখনো চলমান। প্রথম তিন যুদ্ধে ইসরায়েল গাজায় প্রায় আড়াই হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। আর চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে গাজায় নিহত তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আর হামাস, এ পর্যন্ত যে পরিমাণ ইসরায়েলি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে, তা ফিলিস্তিনের কোনো ধর্মনিরপেক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠীর চেয়ে অনেক বেশি। চলমান যুদ্ধে ১ হাজার ৪০০-র বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তেল আবিব। আর গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি কমপক্ষে ২০০। এর মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধও রয়েছেন। স্পষ্টত হামাসের কারণে ইসরায়েলকেও কম মানবিক মূল্য দিতে হয়নি!
নাকের ডগায় এই হামাসকে এত দিন কেন বাড়তে দিল ইসরায়েল? যাদের এখন নির্মূল করার জন্য গাজায় নির্বিচারে বোমা ফেলছে নেতানিয়াহুর সরকার? ৭ অক্টোবরের ঘটনার বারবার উল্লেখ করে এই নৃশংসতাকে তারা ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। পশ্চিমের গণমাধ্যমগুলোও সাফাই গাইছে।
এর উত্তরটিও দিয়েছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইৎজাক সেগেভ নিউইয়র্ক টাইমসে বলেছিলেন, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও বামপন্থী এবং ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ফাতাহ পার্টির বিপরীতে অক্ষশক্তি হিসেবে ফিলিস্তিনি ইসলামি আন্দোলনকে অর্থ সহায়তা করেছিল ইসরায়েল।
ইয়াসির আরাফাত নিজেও হামাসকে ‘ইসরায়েলের সৃষ্টি’ বলে অভিমত দিয়েছিলেন।
আর গাজার সাবেক ধর্মবিষয়ক কর্মকর্তা আভনার কোহেন ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি ফিলিস্তিনে ইসলামপন্থীদের সহযোগিতা দেওয়ার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন।
সেই প্রতিবেদনে কোহেন ফিলিস্তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের সমর্থন করে অধিকৃত অঞ্চলে ‘বিভাজন ও শাসনের’ (ডিভাইড অ্যান্ড রুল) খেলা বন্ধ করতে ঊর্ধ্বতনদের সতর্ক করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি...এই বাস্তবতা আমাদের মুখের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে, এই দানবকে ভেঙে দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করার প্রচেষ্টার ওপর মনোযোগ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।’
কিন্তু ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকেরা কথা শোনেননি। এমনকি বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অগোচরেই তারা হামাসকে সংগঠিত হতে সহযোগিতা করে গেছে।
অবশ্য একই ভুল যুক্তরাষ্ট্রও আফগানিস্তানে করেছে। সেখানে কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন ঠেকিয়ে দিতে মুজাহিদিনদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, অর্থ, রসদ সবকিছুই দিয়েছে। মুজাহিদিনদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে সোভিয়েতদের সফলভাবেই হটিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু সেখানে গড়ে উঠেছে আরেক দানব—তালেবান। এর মূল্য দিতে হয়েছে নাইন-ইলেভেনে। এরপর আফগানিস্তানে দীর্ঘ ক্লান্তিকর এবং অবশ্যই ব্যয়বহুল একটি যুদ্ধ বয়ে বেড়াতে হয়েছে। পরিহাসের বিষয়, পরাজিত হয়ে ফিরে এসেছে মার্কিন সেনারা, সেই আফগানিস্তানের মসনদে এখন আবার সেই তালেবান।
ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদাহতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন সারা বিশ্বের বামপন্থীরা। স্নায়ুযুদ্ধের কালে সেটি একটি বড় আতঙ্কের বিষয় তো বটেই। সেই আন্দোলনকে হীনবল করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে বিভাজনের কৌশলকেই বেছে নিয়েছিল ইসরায়েল। সেটি যে একাবারে কাজে দেয়নি তা নয়। ফিলিস্তিন এখন বহুধা বিভক্ত। সেখানে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ, আর হামাস। অবশ্য গাজার বাইরে হামাসের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পশ্চিম তীর এবং রামাল্লাও ফাতাহর একক নিয়ন্ত্রণে নেই। সেখানে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত হচ্ছে। ফলে শান্তি আলোচনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধি কে হবে—সেই প্রশ্ন তুলে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েল।
আরেকটি বড় সুবিধা ইসরায়েল এখনো নিচ্ছে, সেটি হলো—ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে যা-তা প্রোপাগান্ডাকে পশ্চিমা বিশ্বে সহজে বিশ্বাসযোগ্য করতে পারার সুযোগ। চলমান যুদ্ধেও হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নারীদের নির্যাতন, ধর্ষণ, শিশুদের শিরশ্ছেদ করার মতো প্রোপাগান্ডা শুরুতে পশ্চিমে প্রায় বিশ্বাসযোগ্য করতে পেরেছিল ইসরায়েল। যদিও শেষ পর্যন্ত এসব অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। কিন্তু নাইন-ইলেভেনের পর পশ্চিমে ইসলামপন্থীদের ব্যাপারে যে ধারণা প্রোথিত হয়েছে তাতে এ ধরনের সংগঠনের বিরুদ্ধে পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বরতার অভিযোগও পশ্চিম চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে প্রস্তুত। এতে সুবিধা হলো, গাজায় প্রতিশোধমূলক নির্বিচার নৃশংসতার ন্যায্যতা আদায় করে নেওয়া গেল!
তবে একই সঙ্গে এটিও সত্য যে হামাস এখন ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে কঠিন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। ঘটনাটির ক্রম এমন: প্রথমত, ইসরায়েলিরা হামাস এবং তার মুসলিম ব্রাদারহুডের পূর্বসূরিদের সংগঠিত করে ফিলিস্তিনে রাজনৈতিক ইসলামের একটি যুদ্ধংদেহী ধারা গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে; এরপর, ইসরায়েলিরা কৌশল পরিবর্তন করেছে এবং হামাসকে নির্মূল করার কৌশল নিয়েছে। সেই কৌশলের ভুক্তভোগী গাজার ২২ লাখ মানুষ, যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী বোমা, অবরোধ ও অপমান।
১৯৮০-এর দশকে গাজায় অবস্থানকারী ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আরববিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড হাচাম পরে মন্তব্য করেছিলেন, ‘যখন আমি ঘটনার শৃঙ্খলের দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমার মনে হয়, আমরা একটি ভুল করেছি। কিন্তু সেই সময়ে, সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে কেউ ভাবেনি।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদাহ শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরেই হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনি ইমাম এবং অধিকারকর্মী শেখ আহমেদ ইয়াসিন তাঁর মুজামা আল ইসলামিয়া নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেই হামাসে রূপ দেন। এই ধর্মীয় দাতব্য সংস্থাটি প্রথমে গাজায় প্রতিষ্ঠিত করেন ১৯৭৩ সালে। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের মতাদর্শে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয় এ সংগঠন।
১৯৯০-এর দশক থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়েছে হামাস। মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহর সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর গাজা নিয়ন্ত্রণে নেয় হামাস। শুরুর দিকে তারা ফাতাহ প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধিতা করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রস্তাবে সম্মত থাকার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ২০০৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পরও ক্ষমতায় বসতে না পারা হামাস এখনো ফিলিস্তিনের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী বলে দাবি করে। ফলে ফিলিস্তিনের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা প্রতিনিধিত্ব করতে চায়।
জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহাঙ্গীর আলম

হামাস একটা ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গ্রুপ। তারা আইএসের মতোই বর্বর। হামাস শান্তি চায় না। তারা ইসরায়েলের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে চায়। তারা পৃথিবীর সব ইহুদিকে নির্মূল করতে চায়। এটাই তাদের একমাত্র মিশন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় আরেক ধর্মান্ধ গ্রুপ লিবিয়ার হিজবুল্লাহ। এই উভয় ধর্মান্ধ উগ্র ইসলামপন্থী গ্রুপের পেছনে রয়েছে ধর্মান্ধ শিয়া রাষ্ট্র ইরান।
ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থী সশস্ত্র গ্রুপ হামাস সম্পর্কে এই হলো ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। হামাসের ওপর সব দায় চাপিয়ে দুই দশক ধরে অবরুদ্ধ গাজাবাসীর ওপর নির্বিচার বোমা হামলা, বর্বরতা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। পশ্চিমারাও বলে আসছে, ইসরায়েলের অবশ্যই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। যদিও পশ্চিম তীরে হামাসের অস্তিত্ব না থাকলেও, সেখানে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এযাবৎ কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামাসকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বলা হয়, হামাস গাজার ২২ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে ঢাল বানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও ফিলিস্তিনে ২০০৭ সালের পর আর কোনো জাতীয় নির্বাচন হয়নি। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল হামাস। এর আগে যখন হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিন ইসরায়েলি গুপ্তহত্যার শিকার হন, তখন গাজায় হামাসের পক্ষে বিশাল বিক্ষোভ দেখে ইসরায়েলও রীতিমতো ভড়কে গিয়েছিল।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, হামাস—যা আরবিতে ‘ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ—ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত না হলে হয়তো গাজায় এত শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে টিকে থাকতে পারত না, অথবা অস্তিত্বই থাকত না!
ইসরায়েল ও আমেরিকার একাধিক সরকারি কর্মকর্তার বরাতেই জানা যায়, ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে একগুচ্ছ ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে সংগঠিত করে একটি একক সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীতে পরিণত করতে সহায়তা দিয়েছে খোদ ইসরায়েল! আজকের ‘হামাস’ নামের সেই গোষ্ঠীটিই এখন ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, জেনেবুঝে একটি উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠনকে শক্তি-সামর্থ্যে পুষ্ট করা কি দুধ-কলা দিয়ে বিষধর সাপ পোষার মতো নয়? ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের নিশ্চয়ই সেই বোধবুদ্ধি আছে। কী এমন স্বার্থ থাকতে পারে এর পেছনে?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে জানার চেষ্টা করা যাক, এটি কেন একটি নিছক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নয়। এর পেছনে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মুখে শোনা যাক সেই গল্প। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইতজাক সেগেভ, ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক গভর্নর ছিলেন। সেগেভ পরে নিউইয়র্ক টাইমসের একজন সাংবাদিককে বলেছিলেন, ইসরায়েল সরকারের সিদ্ধান্তেই তিনি ফিলিস্তিনি ইসলামি আন্দোলনকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন।
সেগেভ বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার আমাকে একটি বাজেট দিয়েছিল এবং গাজার সামরিক সরকার সেই টাকা মসজিদে দেয়।
‘আমার বড় খেদের বিষয় হলো হামাস ইসরায়েলের সৃষ্টি।’ এটিও কিন্তু একজন উচ্চপদস্থ ইসরায়েলি কর্মকর্তার বক্তব্য। আভনার কোহেন, ইসরায়েলের ধর্মীয় বিষয়ক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। গাজায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে তিনি এ কথা বলেন।
২০১০ সালের ২৮ নভেম্বর মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁস করে উইকিলিকস। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের অংশে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের প্রসঙ্গও এসেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, গাজায় ফাতাহ এবং হামাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০০৭ সালের জুনে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন পরিচালক মেজর জেনারেল আমোস ইয়াদলিন মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড জোনসকে বলেন, হামাস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ইসরায়েল খুশিই হবে। কারণ, ইসরায়েল তখন গাজাকে সরাসরি শত্রুভূমি হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। মার্কিন দূত তখন বলেন, ফাতাহ সেখানে নিয়ন্ত্রণ হারালে মাহমুদ আব্বাস পশ্চিম তীরে আলাদা সরকার গঠনের তাগিদ বোধ করতে পারেন। জবাবে ইয়াদলিন বলেন, এ ধরনের কিছু ঘটলে ইসরায়েল খুশি হবে। কারণ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) তখন হামাসের মতো একটি রাষ্ট্রহীন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আর ফাতাহ নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীরে তখন ইসরায়েল সহযোগিতা করতে পারবে।
হামাস সৃষ্টির পেছনে ইসরায়েলের সম্ভাব্য ভূমিকা প্রসঙ্গে উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদাহ নস্যাৎ করে দিতে ‘প্রোটেক্টিভ এজ’ সামরিক অভিযানকালে ইসরায়েল হামাসকে শক্তিশালী করার আগ্রহ দেখায়। ১৯৮৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক আলাপের নথিতে পাওয়া যাচ্ছে, ওই সময় পশ্চিম তীরের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করতেন—ইসরায়েল হামাসকে সহযোগিতা করছে। অনেক দোকানি বলেছেন, ফাতাহ যখন ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়ে গোপনে লিফলেট বিলি করছিল, তখন হামাসকে প্রকাশ্যেই তাদের লিফলেট বিলি করতে দেখা গেছে। ওই সময় মার্কিন নথিতে বলা হয়েছে, বিপুলসংখ্যক গ্রেপ্তার হলেও হামাসের লোক খুব কমই গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, ইসরায়েল হামাসের ব্যাপারে শুধু চোখ বন্ধ করেই থাকছে না, বরং তারা হামাসকে সহযোগিতা করছে।
একুশ শতকের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯, ২০১২, ২০১৪ এবং চলতি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখনো চলমান। প্রথম তিন যুদ্ধে ইসরায়েল গাজায় প্রায় আড়াই হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। আর চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে গাজায় নিহত তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আর হামাস, এ পর্যন্ত যে পরিমাণ ইসরায়েলি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে, তা ফিলিস্তিনের কোনো ধর্মনিরপেক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠীর চেয়ে অনেক বেশি। চলমান যুদ্ধে ১ হাজার ৪০০-র বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তেল আবিব। আর গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি কমপক্ষে ২০০। এর মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধও রয়েছেন। স্পষ্টত হামাসের কারণে ইসরায়েলকেও কম মানবিক মূল্য দিতে হয়নি!
নাকের ডগায় এই হামাসকে এত দিন কেন বাড়তে দিল ইসরায়েল? যাদের এখন নির্মূল করার জন্য গাজায় নির্বিচারে বোমা ফেলছে নেতানিয়াহুর সরকার? ৭ অক্টোবরের ঘটনার বারবার উল্লেখ করে এই নৃশংসতাকে তারা ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। পশ্চিমের গণমাধ্যমগুলোও সাফাই গাইছে।
এর উত্তরটিও দিয়েছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইৎজাক সেগেভ নিউইয়র্ক টাইমসে বলেছিলেন, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও বামপন্থী এবং ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ফাতাহ পার্টির বিপরীতে অক্ষশক্তি হিসেবে ফিলিস্তিনি ইসলামি আন্দোলনকে অর্থ সহায়তা করেছিল ইসরায়েল।
ইয়াসির আরাফাত নিজেও হামাসকে ‘ইসরায়েলের সৃষ্টি’ বলে অভিমত দিয়েছিলেন।
আর গাজার সাবেক ধর্মবিষয়ক কর্মকর্তা আভনার কোহেন ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি ফিলিস্তিনে ইসলামপন্থীদের সহযোগিতা দেওয়ার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন।
সেই প্রতিবেদনে কোহেন ফিলিস্তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের সমর্থন করে অধিকৃত অঞ্চলে ‘বিভাজন ও শাসনের’ (ডিভাইড অ্যান্ড রুল) খেলা বন্ধ করতে ঊর্ধ্বতনদের সতর্ক করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি...এই বাস্তবতা আমাদের মুখের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে, এই দানবকে ভেঙে দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করার প্রচেষ্টার ওপর মনোযোগ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।’
কিন্তু ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকেরা কথা শোনেননি। এমনকি বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অগোচরেই তারা হামাসকে সংগঠিত হতে সহযোগিতা করে গেছে।
অবশ্য একই ভুল যুক্তরাষ্ট্রও আফগানিস্তানে করেছে। সেখানে কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন ঠেকিয়ে দিতে মুজাহিদিনদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, অর্থ, রসদ সবকিছুই দিয়েছে। মুজাহিদিনদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে সোভিয়েতদের সফলভাবেই হটিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু সেখানে গড়ে উঠেছে আরেক দানব—তালেবান। এর মূল্য দিতে হয়েছে নাইন-ইলেভেনে। এরপর আফগানিস্তানে দীর্ঘ ক্লান্তিকর এবং অবশ্যই ব্যয়বহুল একটি যুদ্ধ বয়ে বেড়াতে হয়েছে। পরিহাসের বিষয়, পরাজিত হয়ে ফিরে এসেছে মার্কিন সেনারা, সেই আফগানিস্তানের মসনদে এখন আবার সেই তালেবান।
ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদাহতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন সারা বিশ্বের বামপন্থীরা। স্নায়ুযুদ্ধের কালে সেটি একটি বড় আতঙ্কের বিষয় তো বটেই। সেই আন্দোলনকে হীনবল করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে বিভাজনের কৌশলকেই বেছে নিয়েছিল ইসরায়েল। সেটি যে একাবারে কাজে দেয়নি তা নয়। ফিলিস্তিন এখন বহুধা বিভক্ত। সেখানে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ, আর হামাস। অবশ্য গাজার বাইরে হামাসের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পশ্চিম তীর এবং রামাল্লাও ফাতাহর একক নিয়ন্ত্রণে নেই। সেখানে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত হচ্ছে। ফলে শান্তি আলোচনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধি কে হবে—সেই প্রশ্ন তুলে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েল।
আরেকটি বড় সুবিধা ইসরায়েল এখনো নিচ্ছে, সেটি হলো—ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে যা-তা প্রোপাগান্ডাকে পশ্চিমা বিশ্বে সহজে বিশ্বাসযোগ্য করতে পারার সুযোগ। চলমান যুদ্ধেও হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নারীদের নির্যাতন, ধর্ষণ, শিশুদের শিরশ্ছেদ করার মতো প্রোপাগান্ডা শুরুতে পশ্চিমে প্রায় বিশ্বাসযোগ্য করতে পেরেছিল ইসরায়েল। যদিও শেষ পর্যন্ত এসব অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। কিন্তু নাইন-ইলেভেনের পর পশ্চিমে ইসলামপন্থীদের ব্যাপারে যে ধারণা প্রোথিত হয়েছে তাতে এ ধরনের সংগঠনের বিরুদ্ধে পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বরতার অভিযোগও পশ্চিম চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে প্রস্তুত। এতে সুবিধা হলো, গাজায় প্রতিশোধমূলক নির্বিচার নৃশংসতার ন্যায্যতা আদায় করে নেওয়া গেল!
তবে একই সঙ্গে এটিও সত্য যে হামাস এখন ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে কঠিন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। ঘটনাটির ক্রম এমন: প্রথমত, ইসরায়েলিরা হামাস এবং তার মুসলিম ব্রাদারহুডের পূর্বসূরিদের সংগঠিত করে ফিলিস্তিনে রাজনৈতিক ইসলামের একটি যুদ্ধংদেহী ধারা গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে; এরপর, ইসরায়েলিরা কৌশল পরিবর্তন করেছে এবং হামাসকে নির্মূল করার কৌশল নিয়েছে। সেই কৌশলের ভুক্তভোগী গাজার ২২ লাখ মানুষ, যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী বোমা, অবরোধ ও অপমান।
১৯৮০-এর দশকে গাজায় অবস্থানকারী ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আরববিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড হাচাম পরে মন্তব্য করেছিলেন, ‘যখন আমি ঘটনার শৃঙ্খলের দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমার মনে হয়, আমরা একটি ভুল করেছি। কিন্তু সেই সময়ে, সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে কেউ ভাবেনি।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদাহ শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরেই হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনি ইমাম এবং অধিকারকর্মী শেখ আহমেদ ইয়াসিন তাঁর মুজামা আল ইসলামিয়া নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেই হামাসে রূপ দেন। এই ধর্মীয় দাতব্য সংস্থাটি প্রথমে গাজায় প্রতিষ্ঠিত করেন ১৯৭৩ সালে। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের মতাদর্শে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয় এ সংগঠন।
১৯৯০-এর দশক থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়েছে হামাস। মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহর সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর গাজা নিয়ন্ত্রণে নেয় হামাস। শুরুর দিকে তারা ফাতাহ প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধিতা করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রস্তাবে সম্মত থাকার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ২০০৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পরও ক্ষমতায় বসতে না পারা হামাস এখনো ফিলিস্তিনের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী বলে দাবি করে। ফলে ফিলিস্তিনের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা প্রতিনিধিত্ব করতে চায়।
জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

হামাস একটা ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী গ্রুপ। তারা আইএসের মতোই বর্বর। হামাস শান্তি চায় না। তারা ইসরায়েলের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে চায়। তারা পৃথিবীর সব ইহুদিকে নির্মূল করতে চায়। এটাই তাদের একমাত্র মিশন। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় আরেক ধর্মান্ধ গ্রুপ লিবিয়ার হিজবুল্লাহ। এই উভয় ধর্মান্ধ উগ্র ইসলামপন্থী গ্রুপের পেছনে রয়েছে ধর্মান্ধ শিয়া রাষ্ট্র ইরান।
ফিলিস্তিনের ইসলামপন্থী সশস্ত্র গ্রুপ হামাস সম্পর্কে এই হলো ইসরায়েল ও পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। হামাসের ওপর সব দায় চাপিয়ে দুই দশক ধরে অবরুদ্ধ গাজাবাসীর ওপর নির্বিচার বোমা হামলা, বর্বরতা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। পশ্চিমারাও বলে আসছে, ইসরায়েলের অবশ্যই আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। যদিও পশ্চিম তীরে হামাসের অস্তিত্ব না থাকলেও, সেখানে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এযাবৎ কয়েক হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামাসকে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। বলা হয়, হামাস গাজার ২২ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে ঢাল বানিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও ফিলিস্তিনে ২০০৭ সালের পর আর কোনো জাতীয় নির্বাচন হয়নি। ওই নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিল হামাস। এর আগে যখন হামাসের আধ্যাত্মিক নেতা শেখ আহমেদ ইয়াসিন ইসরায়েলি গুপ্তহত্যার শিকার হন, তখন গাজায় হামাসের পক্ষে বিশাল বিক্ষোভ দেখে ইসরায়েলও রীতিমতো ভড়কে গিয়েছিল।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, হামাস—যা আরবিতে ‘ইসলামিক প্রতিরোধ আন্দোলন’-এর সংক্ষিপ্ত রূপ—ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল প্রতিষ্ঠিত না হলে হয়তো গাজায় এত শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে টিকে থাকতে পারত না, অথবা অস্তিত্বই থাকত না!
ইসরায়েল ও আমেরিকার একাধিক সরকারি কর্মকর্তার বরাতেই জানা যায়, ১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে একগুচ্ছ ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে সংগঠিত করে একটি একক সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীতে পরিণত করতে সহায়তা দিয়েছে খোদ ইসরায়েল! আজকের ‘হামাস’ নামের সেই গোষ্ঠীটিই এখন ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, জেনেবুঝে একটি উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠনকে শক্তি-সামর্থ্যে পুষ্ট করা কি দুধ-কলা দিয়ে বিষধর সাপ পোষার মতো নয়? ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের নিশ্চয়ই সেই বোধবুদ্ধি আছে। কী এমন স্বার্থ থাকতে পারে এর পেছনে?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে জানার চেষ্টা করা যাক, এটি কেন একটি নিছক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব নয়। এর পেছনে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
সাবেক ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মুখে শোনা যাক সেই গল্প। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইতজাক সেগেভ, ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক গভর্নর ছিলেন। সেগেভ পরে নিউইয়র্ক টাইমসের একজন সাংবাদিককে বলেছিলেন, ইসরায়েল সরকারের সিদ্ধান্তেই তিনি ফিলিস্তিনি ইসলামি আন্দোলনকে অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন।
সেগেভ বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার আমাকে একটি বাজেট দিয়েছিল এবং গাজার সামরিক সরকার সেই টাকা মসজিদে দেয়।
‘আমার বড় খেদের বিষয় হলো হামাস ইসরায়েলের সৃষ্টি।’ এটিও কিন্তু একজন উচ্চপদস্থ ইসরায়েলি কর্মকর্তার বক্তব্য। আভনার কোহেন, ইসরায়েলের ধর্মীয় বিষয়ক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। গাজায় দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন। ২০০৯ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে তিনি এ কথা বলেন।
২০১০ সালের ২৮ নভেম্বর মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তা ফাঁস করে উইকিলিকস। সেখানে মধ্যপ্রাচ্যের অংশে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের প্রসঙ্গও এসেছে।
সেখানে বলা হয়েছে, গাজায় ফাতাহ এবং হামাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২০০৭ সালের জুনে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন পরিচালক মেজর জেনারেল আমোস ইয়াদলিন মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড জোনসকে বলেন, হামাস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে ইসরায়েল খুশিই হবে। কারণ, ইসরায়েল তখন গাজাকে সরাসরি শত্রুভূমি হিসেবে ঘোষণা করতে পারবে। মার্কিন দূত তখন বলেন, ফাতাহ সেখানে নিয়ন্ত্রণ হারালে মাহমুদ আব্বাস পশ্চিম তীরে আলাদা সরকার গঠনের তাগিদ বোধ করতে পারেন। জবাবে ইয়াদলিন বলেন, এ ধরনের কিছু ঘটলে ইসরায়েল খুশি হবে। কারণ, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) তখন হামাসের মতো একটি রাষ্ট্রহীন গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আর ফাতাহ নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীরে তখন ইসরায়েল সহযোগিতা করতে পারবে।
হামাস সৃষ্টির পেছনে ইসরায়েলের সম্ভাব্য ভূমিকা প্রসঙ্গে উইকিলিকসের ফাঁস করা নথিতে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদাহ নস্যাৎ করে দিতে ‘প্রোটেক্টিভ এজ’ সামরিক অভিযানকালে ইসরায়েল হামাসকে শক্তিশালী করার আগ্রহ দেখায়। ১৯৮৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরায়েলের কূটনৈতিক আলাপের নথিতে পাওয়া যাচ্ছে, ওই সময় পশ্চিম তীরের অধিকাংশ মানুষই বিশ্বাস করতেন—ইসরায়েল হামাসকে সহযোগিতা করছে। অনেক দোকানি বলেছেন, ফাতাহ যখন ইসরায়েলি বাহিনীর ভয়ে গোপনে লিফলেট বিলি করছিল, তখন হামাসকে প্রকাশ্যেই তাদের লিফলেট বিলি করতে দেখা গেছে। ওই সময় মার্কিন নথিতে বলা হয়েছে, বিপুলসংখ্যক গ্রেপ্তার হলেও হামাসের লোক খুব কমই গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাস, ইসরায়েল হামাসের ব্যাপারে শুধু চোখ বন্ধ করেই থাকছে না, বরং তারা হামাসকে সহযোগিতা করছে।
একুশ শতকের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েল হামাসের সঙ্গে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছে। এর মধ্যে ২০০৯, ২০১২, ২০১৪ এবং চলতি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখনো চলমান। প্রথম তিন যুদ্ধে ইসরায়েল গাজায় প্রায় আড়াই হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে। আর চলমান যুদ্ধে এরই মধ্যে গাজায় নিহত তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
আর হামাস, এ পর্যন্ত যে পরিমাণ ইসরায়েলি বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে, তা ফিলিস্তিনের কোনো ধর্মনিরপেক্ষ সশস্ত্র গোষ্ঠীর চেয়ে অনেক বেশি। চলমান যুদ্ধে ১ হাজার ৪০০-র বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে তেল আবিব। আর গাজায় হামাসের হাতে জিম্মি কমপক্ষে ২০০। এর মধ্যে নারী, শিশু ও বৃদ্ধও রয়েছেন। স্পষ্টত হামাসের কারণে ইসরায়েলকেও কম মানবিক মূল্য দিতে হয়নি!
নাকের ডগায় এই হামাসকে এত দিন কেন বাড়তে দিল ইসরায়েল? যাদের এখন নির্মূল করার জন্য গাজায় নির্বিচারে বোমা ফেলছে নেতানিয়াহুর সরকার? ৭ অক্টোবরের ঘটনার বারবার উল্লেখ করে এই নৃশংসতাকে তারা ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। পশ্চিমের গণমাধ্যমগুলোও সাফাই গাইছে।
এর উত্তরটিও দিয়েছেন ইসরায়েলের কর্মকর্তারা।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইৎজাক সেগেভ নিউইয়র্ক টাইমসে বলেছিলেন, প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী ও বামপন্থী এবং ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে ফাতাহ পার্টির বিপরীতে অক্ষশক্তি হিসেবে ফিলিস্তিনি ইসলামি আন্দোলনকে অর্থ সহায়তা করেছিল ইসরায়েল।
ইয়াসির আরাফাত নিজেও হামাসকে ‘ইসরায়েলের সৃষ্টি’ বলে অভিমত দিয়েছিলেন।
আর গাজার সাবেক ধর্মবিষয়ক কর্মকর্তা আভনার কোহেন ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি ফিলিস্তিনে ইসলামপন্থীদের সহযোগিতা দেওয়ার বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছিলেন।
সেই প্রতিবেদনে কোহেন ফিলিস্তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বিরুদ্ধে ইসলামপন্থীদের সমর্থন করে অধিকৃত অঞ্চলে ‘বিভাজন ও শাসনের’ (ডিভাইড অ্যান্ড রুল) খেলা বন্ধ করতে ঊর্ধ্বতনদের সতর্ক করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি...এই বাস্তবতা আমাদের মুখের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে, এই দানবকে ভেঙে দেওয়ার উপায় খুঁজে বের করার প্রচেষ্টার ওপর মনোযোগ দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছি।’
কিন্তু ইসরায়েলের নীতিনির্ধারকেরা কথা শোনেননি। এমনকি বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অগোচরেই তারা হামাসকে সংগঠিত হতে সহযোগিতা করে গেছে।
অবশ্য একই ভুল যুক্তরাষ্ট্রও আফগানিস্তানে করেছে। সেখানে কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসন ঠেকিয়ে দিতে মুজাহিদিনদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ, অর্থ, রসদ সবকিছুই দিয়েছে। মুজাহিদিনদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে সোভিয়েতদের সফলভাবেই হটিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। কিন্তু সেখানে গড়ে উঠেছে আরেক দানব—তালেবান। এর মূল্য দিতে হয়েছে নাইন-ইলেভেনে। এরপর আফগানিস্তানে দীর্ঘ ক্লান্তিকর এবং অবশ্যই ব্যয়বহুল একটি যুদ্ধ বয়ে বেড়াতে হয়েছে। পরিহাসের বিষয়, পরাজিত হয়ে ফিরে এসেছে মার্কিন সেনারা, সেই আফগানিস্তানের মসনদে এখন আবার সেই তালেবান।
ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদাহতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন সারা বিশ্বের বামপন্থীরা। স্নায়ুযুদ্ধের কালে সেটি একটি বড় আতঙ্কের বিষয় তো বটেই। সেই আন্দোলনকে হীনবল করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হিসেবে বিভাজনের কৌশলকেই বেছে নিয়েছিল ইসরায়েল। সেটি যে একাবারে কাজে দেয়নি তা নয়। ফিলিস্তিন এখন বহুধা বিভক্ত। সেখানে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহ, আর হামাস। অবশ্য গাজার বাইরে হামাসের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পশ্চিম তীর এবং রামাল্লাও ফাতাহর একক নিয়ন্ত্রণে নেই। সেখানে বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে সরকার পরিচালিত হচ্ছে। ফলে শান্তি আলোচনায় ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধি কে হবে—সেই প্রশ্ন তুলে আলোচনা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে ইসরায়েল।
আরেকটি বড় সুবিধা ইসরায়েল এখনো নিচ্ছে, সেটি হলো—ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে যা-তা প্রোপাগান্ডাকে পশ্চিমা বিশ্বে সহজে বিশ্বাসযোগ্য করতে পারার সুযোগ। চলমান যুদ্ধেও হামাস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নারীদের নির্যাতন, ধর্ষণ, শিশুদের শিরশ্ছেদ করার মতো প্রোপাগান্ডা শুরুতে পশ্চিমে প্রায় বিশ্বাসযোগ্য করতে পেরেছিল ইসরায়েল। যদিও শেষ পর্যন্ত এসব অভিযোগের সপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। কিন্তু নাইন-ইলেভেনের পর পশ্চিমে ইসলামপন্থীদের ব্যাপারে যে ধারণা প্রোথিত হয়েছে তাতে এ ধরনের সংগঠনের বিরুদ্ধে পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম বর্বরতার অভিযোগও পশ্চিম চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতে প্রস্তুত। এতে সুবিধা হলো, গাজায় প্রতিশোধমূলক নির্বিচার নৃশংসতার ন্যায্যতা আদায় করে নেওয়া গেল!
তবে একই সঙ্গে এটিও সত্য যে হামাস এখন ইসরায়েলের জন্য সবচেয়ে কঠিন নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ। ঘটনাটির ক্রম এমন: প্রথমত, ইসরায়েলিরা হামাস এবং তার মুসলিম ব্রাদারহুডের পূর্বসূরিদের সংগঠিত করে ফিলিস্তিনে রাজনৈতিক ইসলামের একটি যুদ্ধংদেহী ধারা গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে; এরপর, ইসরায়েলিরা কৌশল পরিবর্তন করেছে এবং হামাসকে নির্মূল করার কৌশল নিয়েছে। সেই কৌশলের ভুক্তভোগী গাজার ২২ লাখ মানুষ, যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী বোমা, অবরোধ ও অপমান।
১৯৮০-এর দশকে গাজায় অবস্থানকারী ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আরববিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড হাচাম পরে মন্তব্য করেছিলেন, ‘যখন আমি ঘটনার শৃঙ্খলের দিকে ফিরে তাকাই, তখন আমার মনে হয়, আমরা একটি ভুল করেছি। কিন্তু সেই সময়ে, সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে কেউ ভাবেনি।’
উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রথম ইন্তিফাদাহ শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরেই হামাস প্রতিষ্ঠিত হয়। ফিলিস্তিনি ইমাম এবং অধিকারকর্মী শেখ আহমেদ ইয়াসিন তাঁর মুজামা আল ইসলামিয়া নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকেই হামাসে রূপ দেন। এই ধর্মীয় দাতব্য সংস্থাটি প্রথমে গাজায় প্রতিষ্ঠিত করেন ১৯৭৩ সালে। মিসরের মুসলিম ব্রাদারহুডের মতাদর্শে প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত হয় এ সংগঠন।
১৯৯০-এর দশক থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে বেশ কয়েকটি যুদ্ধে জড়িয়েছে হামাস। মাহমুদ আব্বাসের ফাতাহর সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর গাজা নিয়ন্ত্রণে নেয় হামাস। শুরুর দিকে তারা ফাতাহ প্রস্তাবিত ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দুই রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধিতা করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রস্তাবে সম্মত থাকার কথা জানিয়েছে। কিন্তু ২০০৬ সালে নির্বাচিত হওয়ার পরও ক্ষমতায় বসতে না পারা হামাস এখনো ফিলিস্তিনের একমাত্র বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী বলে দাবি করে। ফলে ফিলিস্তিনের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তারা প্রতিনিধিত্ব করতে চায়।
জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে একগুচ্ছ ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে সংগঠিত করে একটি একক সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীতে পরিণত করতে সহায়তা দিয়েছে খোদ ইসরায়েল! আজকের ‘হামাস’ নামের সেই গোষ্ঠীটিই এখন ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২১ অক্টোবর ২০২৩
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে একগুচ্ছ ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে সংগঠিত করে একটি একক সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীতে পরিণত করতে সহায়তা দিয়েছে খোদ ইসরায়েল! আজকের ‘হামাস’ নামের সেই গোষ্ঠীটিই এখন ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২১ অক্টোবর ২০২৩
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে একগুচ্ছ ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে সংগঠিত করে একটি একক সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীতে পরিণত করতে সহায়তা দিয়েছে খোদ ইসরায়েল! আজকের ‘হামাস’ নামের সেই গোষ্ঠীটিই এখন ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২১ অক্টোবর ২০২৩
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে একগুচ্ছ ফিলিস্তিনি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীকে সংগঠিত করে একটি একক সশস্ত্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠীতে পরিণত করতে সহায়তা দিয়েছে খোদ ইসরায়েল! আজকের ‘হামাস’ নামের সেই গোষ্ঠীটিই এখন ইসরায়েলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২১ অক্টোবর ২০২৩
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে