Ajker Patrika

পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ন্যানির দল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল ন্যানির দল

বাদামি রঙা জামা-জুতার সঙ্গে সাদা প্যান্ট,মাথায় টুপি, গ্রীষ্মে বাদামি হাতমোজা আর শীতে সাদা। তার সঙ্গে বুকের ডান পাশে গোলাকৃতির ঘড়ি দেখলেই চেনা যায় একজন নরল্যান্ড ন্যানিকে। সাধারণ ন্যানি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা নরল্যান্ড ন্যানিরা। কারণ, তাঁরা পেশাজীবী ন্যানির দায়িত্ব পালন করার জন্য পড়াশোনা করেন স্নাতক পর্যায়ে।

ব্রিটিশ রাজপরিবার থেকে শুরু করে যুক্তরাজ্যের উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোতে ব্যাপক চাহিদা একজন নরল্যান্ড কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করা ন্যানির। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে নরল্যান্ড ন্যানিকে অর্থবিত্তের প্রতীকও বলা চলে। কারও ঘরে নরল্যান্ড ন্যানি থাকলে এটা বাকিরা বুঝে নেন যে পরিবারটি সমাজের উঁচু শ্রেণিতে অবস্থান করে। নরল্যান্ড কলেজ থেকে প্রতিবছর মাত্র ১০০ জন গ্র্যাজুয়েট বের হন। কাজেই রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যায় তাঁদের নিয়ে। প্রত্যেকের জন্য অন্তত ১৪টি কাজের সুযোগ থাকে!

নরল্যান্ড কলেজ 
ন্যানিদের প্রশিক্ষণ দিতে ১৮৯২ সালে এমিলি ওয়ার্ড যুক্তরাজ্যের সামারসেটের বাথে প্রতিষ্ঠা করেন নরল্যান্ড কলেজ। ভিক্টোরিয়ান যুগে শিশু বিকাশ নিয়ে কাজ করা এই নারী লক্ষ করেন, মূলত উচ্চবিত্ত সমাজে প্রচলিত শিশু লালনপালনের পদ্ধতিতে ত্রুটি আছে। এসব পরিবারের গৃহপরিচারিকারা শিশুর দেখাশোনা করেন।

তবে ঘরবাড়ির অন্যান্য কাজের ভিড়ে এ বিষয়টি তাঁদের কাছে যথেষ্ট গুরুত্ব পায় না। তার ওপর শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য ঠিক কীভাবে তাদের বড় করা উচিত, সে সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞানেরও অভাব রয়েছে তাঁদের। তাই এমিলি চিন্তা করেন, কেবল শিশু লালনপালনের জন্যই একদল দক্ষ পেশাজীবী তৈরি করবেন। তাঁর ভাবনা থেকেই পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠিত হয় নরল্যান্ড কলেজ। 

ভর্তিপ্রক্রিয়া ও শিক্ষা কার্যক্রম 
নরল্যান্ড কলেজে ভর্তির আবেদন থেকে প্রতিবছর পরীক্ষার আগেই বাদ পড়ে যান প্রায় ৩০ শতাংশ আবেদনকারী। কারণ, পড়াশোনার নির্দিষ্ট কিছু মানদণ্ড মিললেই কেবল ভর্তির আবেদন করা যায় এ কলেজে। যাঁরা টেকেন, তাঁদের আমন্ত্রণ জানানো হয় ইন্টারভিউর 
জন্য। প্রত্যেক ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে এককভাবে একটি বোর্ডে ভাইভা দিতে হয়। এরপর দলগতভাবে আরেকটি প্রেজেন্টেশন থাকে। বর্তমানে সাধারণত ১০০ আসনের বিপরীতে প্রার্থী ভর্তি করা হয়।

নরল্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিশু বিকাশের ওপর তিন বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রি পান। হালকা কোনো ডিগ্রি নয় এটি। নরল্যান্ড ন্যানিদের ডিগ্রি দেওয়া হয় ইউনিভার্সিটি অব গ্লস্টারশায়ার থেকে। এখানকার শিক্ষার্থীদের শিশু সাইকোলজি, শিশুশিক্ষা ইত্যাদি নিয়ে বিশদভাবে পড়ানো হয়। চতুর্থ বছরে তাঁদের দেওয়া হয় ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ। এর সমাপ্তিতে আলাদা করে একটি ডিপ্লোমাও পেয়ে থাকেন তাঁরা। 

যান্ত্রিক পুতুল 
নরল্যান্ড ন্যানিদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিতে ব্যবহার করা হয় যান্ত্রিক পুতুল। এ পুতুলগুলো মানবশিশুর মতোই আচরণ করে। এমনকি রাতে পুতুল সঙ্গে করেই ঘুমোতে যান তাঁরা, যাতে রাতে শিশু কাঁদলে কীভাবে তাকে শান্ত করতে হয়—এ বিষয়েও বাস্তব অভিজ্ঞতা পেয়ে যান শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা যখন পুতুলগুলোর পরিচর্যা করেন, তখন তা পর্যবেক্ষণ করেন শিক্ষকেরা। 

নরল্যান্ড ন্যানিদের আয় 
যুক্তরাজ্যের একজন চিকিৎসক বা ইঞ্জিনিয়ার গড়ে যা আয় করেন, নরল্যান্ড ন্যানিরাও তার প্রায় সমপরিমাণ অর্থ আয় করেন। লন্ডনে বছরে ৩৫ হাজার থেকে শুরু করে ৬০ হাজার পাউন্ড আয় করেন এসব ন্যানি। 

ব্রিটিশ রাজপরিবারে নিয়োগ 
বলা হয়, শিশুদের এমন কিছু নেই যা নরল্যান্ড ন্যানিদের ব্যবস্থাপনার বাইরে। তাঁদের প্রশিক্ষণ সর্বোচ্চ পর্যায়ের এবং কাজকর্মেও তার প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই ব্রিটিশ রাজপরিবার নরল্যান্ডের ন্যানিদের সাধারণত নিয়োগ দিয়ে আসছে। রাজপরিবারের সন্তানদের সবাই বড় হন নরল্যান্ড ন্যানিদের হাতে। প্রিন্স উইলিয়ামের তিন ছেলেমেয়ে জর্জ, শার্লট আর লুইয়ের ন্যানি মারিয়া বোরাল্লো নরল্যান্ড কলেজের একজন গর্বিত গ্র্যাজুয়েট। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

ফিচার ডেস্ক
আন্তর্জাতিক নারী: অন্ধকার আকাশ যাঁর ল্যাবরেটরি

পোখারা শহরের এক বাড়ির ছাদ। রাতের নিস্তব্ধতায় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে এক কিশোরী। সঙ্গে আছেন তার মা, যিনি পেশায় একজন শিক্ষক। কিশোরী অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মা, ওই দুটো নক্ষত্র কি এখনই ধাক্কা খাবে?’ মা হেসে বুঝিয়ে দেন, ওরা একে অপরের থেকে কত দূরে কিংবা ওই যে ছুটন্ত বিন্দুটি দেখছ, ওটা আসলে নক্ষত্র নয়—একটি স্যাটেলাইট। সেই কৌতূহলী কিশোরীটি আজকের মনীষা শ্রেষ্ঠা—নেপালের সফল জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিদ এবং দেশটির প্রথম নারী অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার। তিনি এখন হাই-এনার্জি অ্যাস্ট্রোফিজিকস বিষয়ে পিএইচডি করছেন।

চ্যালেঞ্জের সঙ্গে শুরু যে লড়াই

মনীষার বিজ্ঞানের পথে আসাটা ছিল অনেকটা জেদের বশে। তিনি যে কলেজে পড়তেন, সেখানে পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসে ছিল ১২০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মাত্র পাঁচ-ছয়জন মেয়ে। অথচ জীববিজ্ঞানের চিত্রটা ছিল ঠিক উল্টো। বন্ধুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে উত্তর পান, মেয়েদের জন্য পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে জীববিজ্ঞান অনেক সহজ। মনীষা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তিনি ভাবলেন, তাঁকে পদার্থবিজ্ঞানই পড়তে হবে।

ক্লাসে ঢোকার পর শুরু হলো অন্য এক লড়াই। পুরুষশাসিত সেই পরিবেশে অনেক সময় মেয়েদের বসার জন্য কোনো আসনই দেওয়া হতো না; তাদের দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হতো। এমনকি ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়ও তরুণেরা কাজ করত, আর মেয়েদের দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখার অনুমতি ছিল। মাস্টার্স পর্যায়ে এসে এই সংকট আরও বাড়ে। পড়াশোনার পদ্ধতি ছিল শুধু নোট নেওয়া আর মুখস্থ করা। একপর্যায়ে হতাশ হয়ে মনীষা ডিগ্রি শেষ না করেই পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির যাত্রা

২০১৩ সালে মনীষা নেপাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে (এনএএসও) প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর হিসেবে যোগ দেন। তখন সংগঠনটির কোনো অফিস ছিল না, ছিল খুব সীমিত সুবিধা। মনীষা ও তাঁর দল মিলে বছরের পর বছর পরিশ্রম করে সেটিকে আন্তর্জাতিক উচ্চতায় নিয়ে যান।

সম্প্রতি এই সোসাইটি ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়নের সদস্যপদ পেয়েছে, যা নেপালের ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রথম।

আজ এনএএসও শিক্ষা, গবেষণা ও প্রচার—তিনটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য সৃজনশীল চিন্তার উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। মনীষার দল সারা দেশে সংখ্যালঘু গোষ্ঠী এবং শিক্ষার্থীদের হাতে টেলিস্কোপ ও বই তুলে দিচ্ছে। যাতে তারাও বিজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে পারে।

অলিম্পিয়াড ও বৈশ্বিক সাফল্য

মনীষা শ্রেষ্ঠা নেপালের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমি অলিম্পিয়াডের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি নেপালি শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত করেন। তাঁর হাত ধরে অনেক শিক্ষার্থী ফ্রান্স, আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ডে আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করেছেন। এমনকি এই অলিম্পিয়াডে অংশ নেওয়া তিন শিক্ষার্থী বর্তমানে বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। ২০২০ সালে তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে স্টারস শাইন ফর এভরিওয়ান সংস্থা তাঁকে বিশেষ সম্মাননা দেয়।

ডার্ক স্কাই বা অন্ধকার আকাশ রক্ষা

মনীষা শুধু বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন দক্ষ আলোকচিত্রীও। নেপালের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় তাঁর তোলা মহাকাশের ছবি নিয়মিত প্রকাশিত হয়। তিনি বর্তমান সময়ের বড় একটি সমস্যা আলোকদূষণ নিয়ে কাজ করছেন।

২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ মানুষ শহর ও অবকাঠামোর কৃত্রিম আলোর কারণে রাতের আকাশের আসল সৌন্দর্য দেখতে পায় না। মনীষা তাদের সতর্ক করে জানান, আগামী ২০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে নক্ষত্ররাজি অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। তাই নেপালে ‘অ্যাস্ট্রো-ট্যুরিজম’ কিংবা জ্যোতি-পর্যটন বিকাশের মাধ্যমে আকাশ রক্ষার স্বপ্ন দেখেন মনীষা শ্রেষ্ঠা।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন

মনীষার স্বপ্ন নেপালে একটি নিজস্ব মানমন্দির তৈরি করা, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। তিনি মনে করেন, নেপালের কাছে দামি যন্ত্রপাতি না থাকলেও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরি আছে। সেটা হলো, মাথার ওপরের অন্ধকার আকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন, আকাশ আমাদের সবাইকে এক সুতোয় বাঁধে। তিনি চান তাঁর জীবনের গল্প শুনে অন্য মেয়েরাও যেন বিজ্ঞানের কঠিন পথে পা বাড়াতে পিছপা না হয়।

সূত্র: এশিয়া নিউজ নেটওয়ার্ক, দ্য কাঠমান্ডু পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অধিকারের পক্ষে মার্থার লড়াই

ফিচার ডেস্ক
অধিকারের পক্ষে মার্থার লড়াই

একজন নারীর জীবনী ও চিঠিপত্র ঐতিহাসিকদের কাছে উনিশ শতকের নারী আন্দোলনের অমূল্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তাঁর নাম মার্থা কফিন রাইট। তিনি ছিলেন একজন প্রভাবশালী নারী অধিকারকর্মী, দাসপ্রথাবিরোধী ও সমাজসংস্কারক। ১৮৪৮ সালের ঐতিহাসিক সেনেকা ফলস কনভেনশনের পাঁচজন আয়োজকের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি।

১৮৪৮ সালের ১৯ ও ২০ জুলাই নিউইয়র্কের সেনেকা ফলসে অনুষ্ঠিত সে সম্মেলনটি ছিল আধুনিক নারী অধিকার আন্দোলনের বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ। সেটিই ছিল আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম কোনো প্রকাশ্য সম্মেলন, যা আয়োজিত হয়েছিল শুধু নারীদের সামাজিক, নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকার নিয়ে আলোচনার জন্য। শুধু এর আয়োজক হিসেবে নয়, উনিশ শতকের পঞ্চাশের দশকে একাধিক জাতীয় নারী অধিকার সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মার্থা। ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত আমেরিকান ইকুয়াল রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন তিনি। সাম্যবাদে বিশ্বাসী একটি পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন মার্থা। তিনি কাজ করেছেন দাসপ্রথার বিরুদ্ধে। নিউইয়র্কের অবার্নে তাঁর বাড়িটি ছিল আন্ডারগ্রাউন্ড রেল রোডের একটি অন্যতম প্রধান স্টেশনের পাশেই। তিনি পালিয়ে আসা দাসদের আশ্রয় দিতেন এবং তাদের স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতেন।

সাত সন্তানের জননী মার্থা পারিবারিক দায়িত্বের পাশাপাশি রাজনৈতিক লড়াইয়ে কখনো পিছপা হননি। তাঁর জন্ম ১৮০৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর। ১৮৭৫ সালের ৪ জানুয়ারি মৃত্যুর পর তাঁকে অবার্নের ফোর্ট হিল সিমেট্রিতে সমাহিত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘মেয়েদের ফুটবলে বাধা দিতে খোঁড়া হয়েছিল মাঠ’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি সংস্থা এডুকো বাংলাদেশ বাস্তবায়িত বিভিন্ন শিশু অধিকার প্রকল্পের’ লার্নিং-শেয়ারিং’ অনুষ্ঠান হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি সংস্থা এডুকো বাংলাদেশ বাস্তবায়িত বিভিন্ন শিশু অধিকার প্রকল্পের’ লার্নিং-শেয়ারিং’ অনুষ্ঠান হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘মেয়েদের ফুটবলে বাধা দিতে খনন করে রাখা হয়েছিল খেলার মাঠ। মাঠটা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, যাতে গ্রামের মেয়েরা সেখানে খেলতে না পারে।’ কথাগুলো বলছিল ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশৈংকল উপজেলার পূর্ব বলদানি গ্রামের কিশোরী ফুটবলার প্রতিমা রানী। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে বেসরকারি সংস্থা এডুকো বাংলাদেশ বাস্তবায়িত বিভিন্ন শিশু অধিকার প্রকল্পের’ লার্নিং-শেয়ারিং’ অনুষ্ঠানে এসেছিল সে।

প্রতিমা জানায়, তার বাবা একটি ছোট চায়ের দোকান চালান। মা গৃহিণী। বাবাই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। সীমিত আয়ের কারণে তাদের জীবন সব সময়ই সংগ্রামের। সঙ্গে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাও বড় হুমকি হয়ে এসেছিল। তবে এসব কিছুই তাকে আটকে রাখতে পারেনি। গ্রামের সেই খুঁড়ে রাখা মাঠের গণ্ডি পেরিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে প্রতিমা। ফুটবলে লেফট-উইং পজিশনে খেলে এই কিশোরী। তার স্বপ্ন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা।

প্রতিমা বলে, পাড়া-প্রতিবেশী শুরুর দিকে তেমন সাপোর্ট (সমর্থন) করত না। ভালো নজরে দেখত না। মেয়েরা হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলবে, এটা নিয়ে নানা কটুকথা বলত তারা। এখন তারা দেখতেছে মেয়েরা ফুটবল খেলে অনেকটা এগিয়ে যাচ্ছে, তখন একটু ‘সাপোর্ট’ করতেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের শিশু-কিশোরদের সক্ষমতা গড়ে তোলার জন্য একটি সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ করা উচিত। কারণ, তারা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ। বেসরকারি সংস্থাগুলো যে প্রকল্পগুলো নিচ্ছে, সেগুলো চলমান থাকা উচিত। সমস্যা সমাধানে সমষ্টিগত ও প্রভাবমুখী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যা প্রকল্পের সীমার বাইরে দীর্ঘমেয়াদি সুফল নিশ্চিত করবে।’

অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরের শিক্ষা, সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে বাস্তবায়িত ৯টি প্রকল্পের মূল শিক্ষাগুলো তুলে ধরে এডুকো বাংলাদেশ। তারা জানায়, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত গত তিন বছরে এডুকো বাংলাদেশের প্রকল্পগুলো থেকে বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক ফল এসেছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইদুর রহমান খান বলেন, ‘এডুকো শিশু সুরক্ষায় সমন্বিত পদ্ধতি বাস্তবায়ন করছে, যা প্রতিটি শিশুর জন্য নিরাপদ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্ব দেয়। আমরা ইতিমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করেছি। ধারাবাহিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা সব শিশুর কল্যাণ ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আরও শক্তিশালী প্রচেষ্টা নিতে পারি।’

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, প্রকল্পের উপকারভোগী, উন্নয়ন অংশীদার এবং সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন। তারা দেশের শিশু-কিশোর ও যুব উন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে মতামত তুলে ধরেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য মন্ত্রণালয় ও সংসদে আসনের দাবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘সমতার বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘সমতার বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রতিবন্ধিতাবিষয়ক শব্দচয়নের ক্ষেত্রে দেশের গণমাধ্যম এখনো পিছিয়ে আছে। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের’ নিয়ে সংবাদ প্রচারের সময় অনেক ক্ষেত্রে শুধু ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ আইনে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তি’ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া শারীরিক ও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধিতার ক্ষেত্রে পঙ্গু, অন্ধসহ বিভিন্ন নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা অমানবিক।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ‘সমতার বাংলাদেশ গঠনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার নিশ্চিতকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সংলাপে বক্তারা গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধিতার বিষয়টি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলকভাবে ও মানবাধিকারের দৃষ্টিকোণ থেকে উপস্থাপনের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় আসনের দাবি জানান। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশ ও সাইটসেভার্সের ‘ইকুয়াল বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইনের সহযোগিতায় জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট এই সংলাপের আয়োজন করে।

মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাসের (বি-স্ক্যান) সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব এবং সাইটসেভার্সের ক্যাম্পেইন অ্যাডভাইজার অয়ন দেবনাথ। সালমা মাহবুব বলেন, ‘প্রতিবন্ধিতা নিয়ে শব্দচয়নের ক্ষেত্রে আমাদের গণমাধ্যম অনেক পিছিয়ে আছে। এখনো যেন আমরা সেই আগের যুগে রয়ে গিয়েছি। প্রতিবন্ধী মানসিক বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে গেলে প্রথমেই বোঝা দরকার যে প্রতিবন্ধিতাটা কী। এটা সম্পর্কে যদি সুস্পষ্ট ধারণা থাকে, তাহলে কাজ করতে কোনো অসুবিধা হবে না।’

অয়ন দেবনাথ বলেন, যদি একটি ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি না যেতে পারে, তাহলে সেটা ভবনটির সমস্যা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অপ্রতিবন্ধী ব্যক্তির সমাজের অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ অধিকার থাকতে হবে। এখানে কোনো বৈষম্য করা যাবে না।

সংলাপে আলোচকেরা বলেন, বাংলাদেশে স্কুল, অফিস, সেবা প্রতিষ্ঠানসহ বেশির ভাগ জায়গায় প্রতিবন্ধীবান্ধব অবকাঠামো নেই। যার ফলে তাঁরা চাইলেও অনেক জায়গায় অংশ নিতে পারেন না। আসন্ন নির্বাচনেও বহু প্রতিবন্ধী ব্যক্তি তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন না।

ইউএনডিপির নির্বাচনী সহায়তা ব্যালট/ ড্রিপ প্রকল্পের প্রধান কারিগরি উপদেষ্টা আন্দ্রেজ দেল ক্যাস্তিলো সানচেজ বলেন, নির্বাচন অবশ্যই অন্তর্ভুক্তিমূলক হওয়া উচিত। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও যেন সেখানে সবার মতো অংশ নিতে পারেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা থাকা উচিত।

সংলাপে স্বাগত বক্তব্য দেন সাইটসেভার্সের কান্ট্রি ডিরেক্টর অমৃতা রেজিনা রোজারিও। সমাপনী বক্তব্য দেন ইউএনডিপির নেটওয়ার্কিং অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি স্পেশালিস্ট অসীম ডিও। আলোচনায় বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। যদিও অধিকার সংখ্যা দিয়ে বিচার হয় না। যদি একজন মানুষ থাকে, তাকেও পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে একেক রকম তথ্য দেয়, কিন্তু কেউই সঠিক তথ্য দেয় না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক তথ্য থাকা উচিত।

বক্তারা বলেন, গণমাধ্যমের উচিত প্রতিবন্ধিতাকে মানববৈচিত্র্য ও অধিকারের অংশ হিসেবে তুলে ধরা। তবেই সমাজে প্রচলিত নেতিবাচক ধারণা ভাঙবে এবং দেশের নীতি-পরিকল্পনা ও জনমানসে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত