জাহাঙ্গীর আলম
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:
জাহাঙ্গীর আলম
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:
‘নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;/ অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়-/ আরও এক বিপন্ন বিস্ময়/ আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে/ খেলা করে;/ আমাদের ক্লান্ত করে;/ ক্লান্ত-ক্লান্ত করে:’
কখন যে কোথা থেকে মানুষের মনে ভর করে আকাশ সমান ক্লান্তি, বিষণ্নতার কালো মেঘ আচ্ছন্ন করে ফেলে তাকে। জীবন হয়ে ওঠে এক অসহ্য যন্ত্রণার নাম। রাজ্যের নৈরাশ্য গ্রাস করে, ঘুম কেড়ে নেয় তার। কোনো এক ‘ফাল্গুনের রাতের আঁধারে, যখন ডুবে যায় পঞ্চমীর চাঁদ, মরণের সাধ জাগে দুর্নিবার।’ প্রেম, স্নেহ-পৃথিবীর তাবৎ সৌন্দর্য, ঘৃণা, পিছুটান তুচ্ছ মনে হয়। অর্থশূন্য মানবজীবনের অবসানই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত হয়ে ওঠে তখন।
আত্মহত্যার মনো-সামাজিক উদ্দীপক এমনই এক রহস্য। জীবনানন্দের মৃত্যুও বুঝি সে কারণেই রহস্যই থেকে গেল!
কী আশ্চর্য! ফাল্গুনের রাতই কেন বেছে নিলেন তিনি? বাংলাদেশে আত্মহত্যায় মৌসুমি প্রভাব আছে কি-না, সে ব্যাপারে কোনো গবেষণা না হলেও তথ্য-উপাত্ত বলছে, নির্দিষ্ট মাসে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্তত পাঁচ বছরে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
দেখা গেছে, মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার হার বেশি। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের কারণে আত্মহত্যার প্রাপ্ত মাসভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, বসন্ত ও বর্ষায় বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার বেশি থাকে। অন্যভাবে বললে, বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরুর দিকে আত্মহত্যার পরিমাণ বেশি। অবশ্য বিশ্বের অন্যান্য দেশেও প্রায় একই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
দেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যার মাসভিত্তিক প্রবণতায় খুব কমই হেরফের হয়। এর মধ্যে ঝিনাইদহ জেলায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি।
স্বাধীন গবেষক এস এম ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন ধরে আত্মহত্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। আত্মহত্যার সিজনাল প্যাটার্ন বা ঋতুভিত্তিক প্রবণতা বুঝতে তিনি নমুনা হিসেবে ঠাকুরগাঁও জেলাকে বেছে নেন। ওই জেলার ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, এ জেলায় মার্চ ও আগস্টে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি থাকে। ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ গবেষণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ঝিনাইদহ জেলার ২০১৮ সাল ও ২০১৯ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে মার্চ-এপ্রিল-মে এবং জুন-জুলাই-আগস্ট এই সময়কালে মোট আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি—এ পর্যবেক্ষণের পক্ষে সমর্থন পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে এস এম ইয়াসির আরাফাত তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও বসন্ত ও বর্ষায় (স্প্রিং ও ফল) আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ঋতুভিত্তিক এ প্যাটার্ন বুঝতে আমাদের অধিকতর ও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে। আর আত্মহত্যার প্রতিরোধ করতে কৌশল নির্ধারণে এটি বোঝা জরুরি।
২০১৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসের প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ২০১৭ সালে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। এক বছরে অন্তত ৩৮টি দেশ আত্মহত্যা প্রতিরোধে বেশ অগ্রগতি করলেও ২০১৮ সালেও প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। ফলে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব কম। এ কারণে ওই বছরের ১০ অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্যও ছিল আত্মহত্যা প্রতিরোধ।
গত বছর প্রতি লাখে আত্মহত্যার হার ছিল ১০ দশমিক ৫। তবে এ হার দেশভেদে ৫ থেকে ৩০ পর্যন্ত। আত্মহত্যায় মোট মৃত্যুর হিসাবে ৭৯ শতাংশ ঘটেছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে। উচ্চ আয়ের দেশে আত্মহত্যা হার বরাবরের মতো সবচেয়ে বেশি; দেখা গেছে, লাখে ১১ দশমিক ৫। উচ্চ আয়ের দেশে পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার নারীর প্রায় তিনগুণ। তবে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে দুই লিঙ্গের মধ্যে পার্থক্য খুব কম দেখা গেছে। এমনকি বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
২০১৬ সালের তথ্যের ভিত্তিতে ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার প্রতি লাখে ৫ দশমিক ৯। এ সময় সারা দেশে সাড়ে ৯ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে।
কিশোর ও তরুণদের মধ্যেই আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। ১৫-২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ আত্মহত্যা। প্রথমেই রয়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। নারীদের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যুর পরে মৃত্যুর প্রধান কারণ আত্মহত্যা। আর ছেলেদের অপমৃত্যুর প্রথম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা, দ্বিতীয় সহিংসতা এবং তৃতীয় আত্মহত্যা।
আত্মহত্যার প্রধান কৌশল গলায় ফাঁস দেওয়া, এর পর রয়েছে কীটনাশক পান ও আগ্নেয়াস্ত্র। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্ত বলছে, আত্মহত্যার কৌশলে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। যদিও কৃষিপ্রধান দেশগুলোতে বা গ্রামীণ এলাকায় কীটনাশক পানে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি।
উইন্টার ব্লু সিনড্রোম
শীত ও বর্ষাকালে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বাড়ে। একে বলে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিসঅর্ডার (এসএডি—স্যাড)। তবে মানুষের মধ্যে সাধারণ ধারণা উইন্টার ব্লু সিনড্রোমের প্রকোপের কারণে শীতকালেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সারা বিশ্বেই বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে বসন্ত ও গ্রীষ্মকালে।
২০১৪ সালে আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সোসাইটির সাইকিয়াট্রি সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখানো হয়, রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ার সঙ্গে আত্মহত্যার প্রবণতার সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেন, ঋতু কোনো বিষয় নয়; বরং রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের সঙ্গে আত্মহননের সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও উদ্দীপকের কাজ করে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আত্মহত্যার আগে টানা দুই সপ্তাহ রৌদ্রোজ্জ্বল দিন ছিল। তা ছাড়া টানা ১৫ দিন বা মাসব্যাপী রৌদ্রোজ্জ্বল দিনের চেয়ে কয়েক দিন রোদ ছিল—এ রকম আবহাওয়াতে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি দেখা গেছে। অর্থাৎ, যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য উজ্জ্বল দিন আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা এ বিষয়টির ব্যাখ্যা দিতে না পারলেও স্নায়ুবিজ্ঞানে একটি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে মানুষের শরীরে সেরোটনিন হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়। স্নায়ু সংকেত পরিবাহক এ উপাদান মানুষের মস্তিষ্কে আনন্দ এবং পাশাপাশি লাগামহীন আবেগ উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। সুতরাং যারা আত্মহত্যার কথা ভাবছেন, তাঁদের হঠাৎ করে সেরোটনিন মাত্রা বেড়ে গেলে বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়তে পারেন এবং দ্রুত আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত কার্যকর করে ফেলতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’ দিতে পারে একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন।
বিপরীত পক্ষে, টানা রোদ হলে বা উজ্জ্বল দিন থাকলে একটি স্থিতিশীল মানসিক ভাব তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এ রকম আবহাওয়ায় আত্মহত্যার ঘটনা কম ঘটতে পারে। যদিও এটি নিয়ে এখনো ব্যাপকভিত্তিক কোনো গবেষণা হয়নি। উপরিউক্ত গবেষণাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন ‘উইন্টার ব্লু’ বইয়ের লেখক ও মনোবিদ ড. নরমান রসেনথাল।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে। এ কারণে নির্দিষ্ট মাসে নিয়মিত উজ্জ্বল দিনের পরিমাণ নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে গেছে। বাংলাদেশেও শীত ও বর্ষা ইদানীং অনেক দেরিতে আসছে এবং ঋতুগুলো আজ থেকে ৫০ বছর আগের মতো আচরণ করছে না।
এদিকে শীত ও বর্ষাকালে সিজনাল অ্যাফেক্ট ডিজঅর্ডারের (স্যাড) কারণে মানুষের মধ্যে বিষণ্নতার প্রবণতা বেশি দেখা গেলেও আত্মহত্যার প্রবণতা কম। অপরদিকে গ্রীষ্ম ও বসন্তে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি থাকার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন মনোবিদেরা। তাঁরা বলছেন, শীত ও বর্ষায় মানুষের কর্মতৎপরতা অনেক কমে যায়। পারস্পরিক যোগাযোগও বেশ হ্রাস পায়। কিন্তু গ্রীষ্ম ও বসন্তে পূর্ণোদ্যমে তৎপরতা শুরু হয়, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ও লেনদেন বাড়ে। ফলে নানা বিষয় তখন মানুষের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। ভারতের কর্নাটক রাজ্যের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেব্রুয়ারি-মে সময়ে ৪০ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জুন-জানুয়ারি (১০ শতাংশ)। ফলে সময় ভেদে আত্মহত্যা প্রবণতার এই হ্রাস-বৃদ্ধি ও সম্ভাব্য কারণের এ চিহ্নায়নকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও এটি এখনো অনুমান মাত্র।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অঞ্চলের মানুষ বেশি বেশি সামুদ্রিক মাছ খায়, সেসব এলাকায় স্যাডের প্রভাব কম। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় নর্ডিক ও জাপানের তুলনায় স্যাডের প্রভাব বেশি। ২০০৭ সালে পরিচালিত এ গবেষণায় দেখা গেছে, নর্ডিক ও জাপানের মানুষ বছরে মাথাপিছু যথাক্রমে ৯০ কেজি ও ৬০ কেজি মাছ খায়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় মাত্র ২৪ কেজি। ফলে এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়।
আত্মহত্যায় ঋতুভিত্তিক প্রবণতার সঙ্গে শারীর-রাসায়নিক-জৈব ফ্যাক্টর যেমন: দিনের দৈর্ঘ্য, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, দূষণ, জীবাণু অথবা ফুলের রেণুঘটিত বা অন্য কারণে সৃষ্ট অ্যালার্জিজনিত প্রদাহ ইত্যাদি বিষয় জড়িত আছে। উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত (ইউরোপ ও এশিয়ার বিস্তীর্ণ অংশ, বাংলাদেশ ও ভারত, চীনসহ) দেশগুলোতে বসন্তকালে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। ১৯৭৯-২০১১ সালের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এমন একটি পর্যবেক্ষণ সম্বলিত গবেষণা প্রতিবেদন ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এ প্রকাশিত হয়েছে। অঞ্চলভেদে বসন্তের শেষ নাগাদ থেকে গ্রীষ্মের শুরুতে এবং বর্ষাকালে আত্মহত্যার হার বেশি লক্ষ্য করা গেছে। জার্নাল অব অ্যাফেকটিভ ডিজঅর্ডারে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণা প্রতিবেদনেও বসন্তে আত্মহত্যা প্রবণতা বেশি থাকার তথ্য দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০১৬ সালে প্রকাশিত ১৬টি দেশের ২৯টি গবেষণা প্রবন্ধের রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, বসন্ত ও গ্রীষ্মে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি থাকে।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঋতুর চরিত্র বদলে যাওয়ার কারণে ঋতুভিত্তিক এ প্রবণতায় ব্যত্যয় ঘটছে। গত এক দশক ধরেই এ ব্যত্যয় লক্ষ্য করছেন গবেষকেরা।
আত্মহত্যা বেশি করে পুরুষেরা, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ
বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই পুরুষের আত্মহত্যার হার নারীদের চেয়ে বেশি। তবে বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এ দেশে নারীদের আত্মহত্যার হার পুরুষের প্রায় দ্বিগুণ (৭ ও ৪.৭)। অবশ্য এ তালিকায় বাংলাদেশের পাশে আরও কয়েকটি দেশ রয়েছে: লেসোথো, পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, মরক্কো, গ্রেনাডা ও অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা। পার্শ্ববর্তী ভারতেও নারীদের চেয়ে পুরুষের আত্মহত্যার হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। বাংলাদেশে নারীর আত্মহত্যার হার বেশি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে যৌতুক, ধর্ষণ, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি বিষয়কে উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করে সামাজিক ও মানসিক সংকট হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। এ অনুযায়ী সরকার ও সচেতন নাগরিকদের নানা পদক্ষেপ নিতে হবে। তাহলেই আত্মহত্যা প্রবণতা কমানো সম্ভব। ভারতেও যেখানে আত্মহত্যাকে আর ফৌজদারি অপরাধ গণ্য করাহয় না, সেখানে বাংলাদেশে এমন আইন এখনো রয়ে গেছে। কিন্তু বিপরীতে মানসিক সংকট নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
আত্মহত্যার খবর প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীল ভূমিকা, তরুণদের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা তৈরির প্রশিক্ষণ এবং আত্মহত্যার উপকরণ প্রাপ্তি কঠিন করে তুলতে সরকারি পদক্ষেপ আত্মহত্যা কমানোতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে কীটনাশকের বিপণন ও ব্যবহারবিষয়ক আইন কঠোর করে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ কোরিয়া দারুণ সফলতা পেয়েছে। ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে শ্রীলঙ্কা আত্মহত্যা ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি আত্মহত্যাকে একটি মানসিক বিকার হিসেবেই চিহ্নিত করেন মনোবিদেরা। গবেষণায় দেখা গেছে, আত্মহত্যাকারীদের ৯০ শতাংশেরও বেশি মনোবিকারে ভুগছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে, মোড ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ও সিজোফ্রেনিয়া সম্পর্কিত ডিজঅর্ডার অন্যতম। তবে এসব বিকার সৃষ্টি ও এর প্রাবল্য বৃদ্ধিতে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিষণ্নতা, হতাশা, ক্ষুধা, অনিশ্চয়তা ইত্যাদি বিষয় ‘রিস্ক ফ্যাক্টর’ হিসেবে কাজ করে।
আত্মহত্যার বিষয়টিকে ভারত কিন্তু গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আত্মহত্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য না করতে ২০১৭ সালে আইন সংশোধন করেছে দেশটি। বাংলাদেশে আত্মহত্যায় সহায়তা বা প্ররোচনাদানকারীকে দণ্ডবিধির ৩০৬ ধারা অনুযায়ী ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া আত্মহত্যার চেষ্টাকারীর শাস্তি দণ্ডবিধির ৩০৯ ধারায় এক বছর কারাদণ্ডের বিধান আছে। যদিও এমন আইন আত্মহত্যা প্রতিরোধে সহায়ক হয়—এমন কোনো প্রমাণ নেই।
আরও পড়ুন:

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।
আত্মহত্যাকে শুধু ব্যক্তির সংকট হিসেবে দেখার একটা প্রবণতা আছে। কিন্তু আত্মহত্যার প্রবণতায় রয়েছে ঋতুভিত্তিক ভেদ। একেক দেশে আবার একেক রকম। আবার এক দেশের সবখানেও প্রবণতায় হেরফের আছে। যেমন বাংলাদেশের আত্মহত্যাপ্রবণ অন্যতম দুটি জেলা ঝিনাইদহ ও ঠাকুরগাঁও।
১০ সেপ্টেম্বর ২০২১
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে