Ajker Patrika

বাল্ট্রা দ্বীপের রহস্য: বৃষ্টি হয় না, পশুপাখি নেই—এ দাবি সঠিক নয়

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৫: ৫৩
বাল্ট্রা দ্বীপের রহস্য: বৃষ্টি হয় না, পশুপাখি নেই—এ দাবি সঠিক নয়

প্রশান্ত মহাসাগরে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে একটি দ্বীপ বাল্ট্রা! যে দ্বীপে বৃষ্টি হয় না, পাখিও ওড়ে না! এ দ্বীপে গেলেই নাকি নাবিকেরা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। নাবিক বা অভিযাত্রীদের সঙ্গে থাকা কম্পাসের আচরণও বদলে যায়। সবসময় উত্তর দিক নির্দেশকারী কম্পাসের কাঁটা এখানে কোনো সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে! কখনো এলোপাতাড়ি ঘুরতে থাকে অথবা ভুল দিক নির্দেশ করে। 

সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো, বাল্ট্রা দ্বীপের ওপরের আকাশে থাকার সময় উড়োজাহাজের কম্পাসও এমন অদ্ভুত আচরণ করে। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক হয়ে যা।

বাল্ট্রা নামের এই দ্বীপ নিয়ে গত ১১ মার্চ ‘বিশ্ব ও মহাকাশ’ নামে ১ লাখ ২৬ হাজার সদস্যের একটি ফেসবুক গ্রুপে ইউসুফ সরকার নামের একটি মডারেটর অ্যাকাউন্ট থেকে এই তথ্যগুলো উল্লেখ করে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টটি আজ শুক্রবার (১৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩শ শেয়ার হয়েছে, রিয়েকশন পড়েছে সাড়ে ৮ হাজারের বেশি। কমেন্ট পড়েছে দেড়শর বেশি।

পোস্টটিতে বাল্ট্রা দ্বীপ সম্পর্কে আরও দাবি করা হয়, ‘দ্বীপটির আরেকটি অদ্ভুত দিক হলো, এর মানসিক দিক। বাল্ট্রায় পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারও মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অজানা-অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য রকম অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। বেশিক্ষণ এ দ্বীপে থাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পর কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন গাছ নেই। নেই কোনো পশুপাখি। কোনো পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না। জোর করে এলেও কোনো পশুপাখিকে বসতি করানো যায়নি। বাল্ট্রার পাশ দিয়ে প্রাণী হেঁটে গেলেও এ দ্বীপে প্রবেশ করেনা। শুধু তাই নয়, পাখিরাও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যায়। দেখে মনে হয় যেন কোনো দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা। আরেকটি রহস্য হলো ওই দ্বীপটির চারপাশে প্রচুর বৃষ্টি হলেও এর ভেতরে কোন বৃষ্টির ফোটা পড়ে না! এমন অনেক আজব আজব রহস্যের কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি।’ 

দ্বীপটি নিয়ে দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেল সময় এন্টারটেইনমেন্টে ২০২২ সালের ২৩ মে একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতেও দাবি করা হয়, বাল্ট্রা দ্বীপে কখনো বৃষ্টি হয় না এবং বাল্ট্রা দ্বীপ একদম প্রাণীশূন্য। সময় টিভির এই প্রতিবেদন ছাড়াও দেশীয় একাধিক সংবাদমাধ্যম যেমন, জাগোনিউজ ২৪, বাংলা নিউজ ২৪, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অনলাইন নিউজ পোর্টাল আরএমপির ওয়েবসাইট, ভারতের দ্য ওয়ালের বাংলা সংস্করণসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দ্বীপটি সম্পর্কিত প্রতিবেদনে একই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বাল্ট্রা দ্বীপটি কোথায়?
বিশ্বকোষ ব্রিটানিকা সূত্রে জানা যায়, বাল্ট্রা গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যতম ছোট একটি দ্বীপ। এর আয়তন ৮ বর্গমাইল বা ২১ বর্গকিলোমিটার। এটি ইকুয়েডর থেকে প্রায় ৬০০ মাইল বা ১ হাজার কিলোমিটার পশ্চিমে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। দ্বীপটি সান্তা ক্রুজ নামে আরেকটি দ্বীপের অংশ ছিল। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের প্রভাবে এর বিচ্যুতি ঘটে এবং আলাদা একটি দ্বীপ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ইকুয়েডর দ্বীপটিতে বিমানঘাঁটি স্থাপনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনুমতি দেয়। ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র বিমানঘাঁটি নির্মাণ শুরু করে এবং দুই মাসের মাথায় দ্বীপটিতে প্রায় এক মাইল দীর্ঘ একটি এয়ারস্ট্রিপ (বিমান চলাচলের উপযোগী জায়গা) নির্মাণ করে। পরে দ্বীপটিকে ঘিরে পর্যটনের গুরুত্ব বাড়লে ইকুয়েডর সরকার বিমানঘাঁটিটি সংস্কার করে। এটি এখন দেশটির একটি সক্রিয় সামরিক ঘাঁটি।

বাল্ট্রা দ্বীপে বৃষ্টি পড়ে, আছে পাখি, উদ্ভিদ। ছবি: গ্যালাপাগোস ক্রুসেরোসদ্বীপটি নিয়ে প্রচারিত তথ্যগুলোর ভিত্তি কী?
বাল্ট্রা দ্বীপে কখনো বৃষ্টি হয় না—এমন দাবির সত্যতা অনুসন্ধানে পৃথিবীর যেসব স্থানে বৃষ্টিপাত খুবই কম হয় বা হয় না এমন জায়গা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে দেখেছে আজকের পত্রিকার ফ্যাক্টচেক বিভাগ। বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদমাধ্যম লাইভ সায়েন্সে পৃথিবীর এমন দশটি জায়গার একটি তালিকা খুঁজে পাওয়া যায়। এই তালিকায় দক্ষিণ আমেরিকা, উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের একাধিক দেশ ও অ্যান্টার্কটিকার নাম খুঁজে পাওয়া গেলেও বাল্ট্রা দ্বীপের নাম নেই। লাইভ সায়েন্সের প্রতিবেদনটিতে এই স্থানগুলো সম্পর্কে বলা হয়েছে, এসব স্থানে বৃষ্টি খুব কমই হয় এবং কিছু স্থানে লাখ লাখ বছরেও বৃষ্টিপাত হয়নি। এমন শুষ্ক জলবায়ুতে কোনো প্রাণের বেড়ে ওঠা প্রায় অসম্ভব। কারণ, ক্রমাগত বাষ্পীভবনের কারণে প্রাণের জন্য অপরিহার্য পানি মাটিতে জমে থাকে না।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন ফোর্বসের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চলগুলোর একটি উত্তর আফ্রিকা। বিশ্বের বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি সাহারার অবস্থান এখানে। এই অঞ্চল অত্যন্ত শুষ্ক, এখানে কিছু জায়গায় টানা এক বছরেরও বেশি সময় বৃষ্টিপাত না হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। 

শিক্ষামূলক স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল ডিসকোভারির ওয়েবসাইটে পৃথিবীর শুষ্কতম অঞ্চল নিয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আতাকামা মরুভূমি। এই মরুভূমি চিলির আরিকাতে অবস্থিত। আতাকামা মরুভূমিতেও বৃষ্টি হয়। যদিও স্থানটিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র শূন্য দশমিক ০৩ ইঞ্চি।

আন্তদেশীয় মহাকাশ সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ওয়েবসাইটেও আতাকামা মরুভূমিকে পৃথিবীর সবচেয়ে শুষ্ক স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

ওপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইটগুলোর বর্ণনায় কোথাও বাল্ট্রা দ্বীপের নাম পাওয়া যায়নি। 

বরং গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ কেন্দ্রিক বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও গবেষণা নিবন্ধ সূত্রে জানা যায়, বাল্ট্রা দ্বীপে বৃষ্টিপাত হয়। গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে বৃষ্টিপাত ও সেখানে বসবাসরত ফিঞ্চ পাখির ডেমোগ্রাফি (পরিসংখ্যান) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার দুজন গবেষকের করা একটি গবেষণা নিবন্ধ পাওয়া যায়। নিবন্ধটি আমেরিকান অর্নিথোলজিক্যাল সোসাইটির গবেষণা সাময়িকী অর্নিথোলজিতে ১৯৮০ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের অন্যান্য দ্বীপের তুলনায় বাল্ট্রাতে বার্ষিক বৃষ্টিপাত অনেক কম। গবেষণা চলাকালে দ্বীপটিতে ১৯৬৭ এবং ১৯৭০ উভয় সময়েই ১ মিলিমিটারের কম বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।

এঞ্জি ড্রেক নামে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমন বিষয়ক উদ্যোক্তা বাল্ট্রা দ্বীপ ঘুরে এসে ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট নট ইয়ুর অ্যাভারেজ আমেরিকান নামের একটি ট্রাভেল ব্লগে নিজের অভিজ্ঞতা লেখেন। সেখানে ড্রেক জানান, তাঁরা যখন বাল্ট্রাতে পৌঁছান, সেখানে হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল এবং তখন বর্ষাকাল ছিল। ব্লগে তিনি সেখানকার বৃষ্টির ছবিও যুক্ত করেন।

দ্বীপটি সম্পর্কে গ্যালাপাগোস কনজারভেন্সি নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ইকুয়েডরের সঙ্গে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জকে সংযোগকারী দুটি বিমানবন্দরের একটির অবস্থান এই বাল্ট্রা দ্বীপে। দ্বীপটি এখন গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে পর্যটকদের প্রধান প্রবেশদ্বার। গ্যালাপাগোসে প্রতি বছর ২ হাজারেরও বেশি বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলে, যার প্রায় দুই–তৃতীয়াংশ বাল্ট্রায় ওঠা–নামা করে। প্রতি বছর কয়েকশ ব্যক্তিগত উড়োজাহাজও নামে। 

তবে বাল্ট্রা বেশ শুষ্ক। দ্বীপে গাছপালার মধ্যে আছে– লবণ সহিষ্ণু উদ্ভিদ, ক্যাকটাস এবং পালো সান্টো নামের এক জাতীয় উদ্ভিদ। দ্বীপটিতে বুবি এবং ফ্রিগেটবার্ডসহ প্রচুর পাখি রয়েছে।

বাল্ট্রা দ্বীপের প্রাণী ল্যান্ড ইগুয়ানা। ছবি: গ্যালাপাগোস কনজারভেন্সিগ্যালাপাগোস ক্রুসেরোস নামের আরেকটি ওয়েবসাইট থেকেও বাল্ট্রা দ্বীপটির প্রাণী ও উদ্ভিদ সম্পর্কে প্রায় একই তথ্য পাওয়া যায়। ওয়েবসাইটটি থেকে জানায়, বাল্ট্রা দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ এবং পালো সান্টো নামের এক জাতীয় উদ্ভিদ আছে। দ্বীপটিতে বসবাসরত প্রাণীর মধ্যে রয়েছে— ল্যান্ড ইগুয়ানা নামের এক ধরনের বড় আকৃতির টিকটিকি, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক পাখি, যেমন: নীল পায়ের বুবি এবং পেলিকান। 

প্রজনন ঋতুতে পাখিদের দ্বীপটির পাহাড় এবং সৈকতে ভিড় করতে দেখা যায়। সামুদ্রিক পাখি ছাড়াও বাল্ট্রা দ্বীপে সি গাল এবং বাজপাখির মতো পাখিরও দেখা মেলে। এ ছাড়া বাল্ট্রা দ্বীপের সৈকত এবং উপকূলে সি লায়নদের দেখা পাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনা। এদের বাল্ট্রার বালুময় সৈকতে বিশ্রাম নিতে বা আশেপাশের জলে সাঁতার কাটতে দেখা যায়। দ্বীপটিতে ডিসেম্বর থেকে মে মাসের মধ্যে ঘন ঘন বৃষ্টিপাতও হয় বলে ওয়েবসাইটটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

হোয়্যার অ্যান্ড হোয়েন নামের একটি ভ্রমণ বিষয়ক ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বাল্ট্রাতে ফেব্রুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। দ্বীপটিতে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০০ মিলিমিটার। সর্বনিম্ন ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় অক্টোবরে এবং সর্বোচ্চ ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয় ফেব্রুয়ারিতে।

অনুসন্ধানে বাল্ট্রা দ্বীপটি সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইন্টারনেটে প্রচারিত দাবিগুলোর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। বরং দেখা যাচ্ছে, দ্বীপটিতে প্রচুর পর্যটকের আনাগোনা রয়েছে। আছে কয়েক প্রজাতির উদ্ভিদ এবং প্রাণী। এ ছাড়া দ্বীপটিতে বেশ বৃষ্টিপাতও হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ২১
আজকের পত্রিকার নামে ছড়িয়ে পড়া এই ফটোকার্ডটি ভুয়া

সম্প্রতি আজকের পত্রিকার নাম ও ফটোকার্ড ব্যবহার করে ‘হরেকৃষ্ণ হরিবোল, দাঁড়িপাল্লা টেনে তোলঃ পরওয়ার’ শিরোনামে একটি ভুয়া ফটোকার্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভুয়া ফটোকার্ড।

আজকের পত্রিকা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করছে, এই ধরনের কোনো খবর আজকের পত্রিকাতে কখনোই প্রকাশিত হয়নি। ফটোকার্ডটিতে আজকের পত্রিকার লোগো ব্যবহার করা হলেও এর ভেতরের খবর ও শিরোনাম সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

আজকের পত্রিকা সর্বদা সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

বর্তমান সময়ে এ ধরনের ভুয়া ফটোকার্ড ও খবর নিয়ে পাঠকদের সচেতনতা জরুরি। যেকোনো সন্দেহজনক খবর যাচাই করার জন্য অনুরোধ রইল।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৪
মধ্যরাতে মাঝরাস্তায় বাঘকে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করছে মাতাল—ভাইরাল ভিডিওটি ফেক

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাতে রাস্তার মাঝখানে এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি এক হাতে একটি স্বচ্ছ বোতল, অপর হাতে বাঘের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। এমনকি বাঘটির মুখে বোতল গুঁজে দিতেও দেখা যায় তাঁকে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে এই ভিডিও শেয়ার করে দাবি করছেন, একটি সিসিটিভি ফুটেজ। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ঘটনাটি ভারতের মধ্যপ্রদেশের পেঞ্চ এলাকার। ওই ব্যক্তি দেশীয় মদ পান করে মাতাল হয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। তিনি এতটা মাতাল ছিলেন যে বাঘকেও মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। বাঘ অবশ্য তাঁর হাতে মদ্যপানে রাজি হয়নি! পরে ওই বাঘটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগ। বাঘটি ওই ব্যক্তির কোনো ক্ষতি করেনি।

বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত
বাঘকে বোতল থেকে মদ খাওয়ার দাবি করা ভিডিওর ক্যাপশন, যেখান থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বিস্মিত ও উদ্বিগ্ন—কেউ বিশ্বাস করেছেন, এটি বাস্তব কোনো ঘটনা; কেউ আবার মনে করছেন, এটি নিছকই কৃত্রিম ভিডিও। কিন্তু সত্যিটা কী? দ্য কুইন্টের সাংবাদিক অভিষেক আনন্দ ও ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা বুম বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করেছে।

বুম ভিডিওটি নিয়ে বিভিন্ন কিওয়ার্ড দিয়ে এ-সম্পর্কিত প্রতিবেদন অনুসন্ধান করেছে, কিন্তু কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এরপর তারা সরাসরি মধ্যপ্রদেশের সেওনি জেলার পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে। দ্য কুইন্ট ও বুমকে সেওনি জেলার পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে স্পষ্ট জানানো হয়—তাদের জানামতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা হয়। তিনি বলেন, ভিডিওটির সঙ্গে পেঞ্চ এলাকার কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরও ব্যাখ্যা দেন, বনের বাঘের সঙ্গে এমন ঘনিষ্ঠভাবে মানুষের যোগাযোগ সম্ভব নয়, যদি না বাঘটিকে বন্দী করে দীর্ঘদিন ধরে পোষ মানানো হয়। তাঁর ভাষায়, ‘বনের বাঘ কখনো এমন আচরণ করে না, এটা বাস্তবে সম্ভব নয়।’

ভিডিওর সন্দেহজনক দিক বা ভিজ্যুয়াল অসংগতি

বুম ভিডিওটির একটি উচ্চমানের সংস্করণ সংগ্রহ করে তাতে কিছু অস্বাভাবিক দিক লক্ষ করে। দেখা যায়, ভিডিওটির পটভূমির দৃশ্যে কিছু অস্পষ্ট বস্তু নড়াচড়া করছে, যা বাস্তব ভিডিওর মতো স্বাভাবিক নয়।

বাঘের মাথায় হাত রাখা ব্যক্তির আঙুলগুলো বিকৃতভাবে বাঁকানো, যেন সফটওয়্যারে তৈরি কৃত্রিম ছায়া। এমনকি হাতে থাকা বোতলের মুখ কখনো দেখা যায়, আবার মিলিয়ে যায়—এই ভিজ্যুয়াল অসংগতিগুলো ইঙ্গিত দেয়, এটি ধারণকৃত কোনো ফুটেজ নয়। সব মিলিয়ে ভিডিওটির একাধিক ফ্রেমে গ্রাফিক বিকৃতি স্পষ্ট।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর বিশ্লেষণ

এরপর ভিডিওটি পরীক্ষা করা হয় ডিপফেক-ও-মিটার নামের একটি উন্নত টুলে। এটি তৈরি করেছে ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর মিডিয়া ফরেনসিকস ল্যাব। এই টুল ভিডিওটির বিভিন্ন অংশ বিশ্লেষণ করে দেখায়, এতে ‘উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক নির্মাণের চিহ্ন’ রয়েছে।

এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
এআই টুল দিয়ে ভিডিওটির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি হওয়ার প্রমাণ পরীক্ষার ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

এরপর বুম তাদের অংশীদার ডিপফেক অ্যানালাইসিস ইউনিটের সাহায্য নেয়। তারা ভিডিওটি পরীক্ষা করে ‘Is It AI’ এবং ‘AI Or Not’—নামক দুটি আলাদা টুলে। উভয় টুলের বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভিডিওটি এআই দিয়ে নির্মিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় ৬৯ শতাংশ।

এই ফলাফল অনুযায়ী বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিডিওর মানুষের সঙ্গে প্রাণীর মিথস্ক্রিয়া এবং আলো-ছায়ার ত্রুটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে এটি আসল নয়, বরং জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো একটি দৃশ্য।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর বহু ব্যবহারকারী এটিকে সত্যি বলে বিশ্বাস করেছেন। কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওর ওই ব্যক্তির নাম রাজু পাতিল। ৫২ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন দিনমজুর। তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় রাস্তায় বাঘটিকে আদর করছিলেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে অক্ষত অবস্থায় রয়ে গেছেন।

একাধিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ টুলের ফলাফল এবং প্রশাসনিক যাচাই মিলিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যায়—ভিডিওটি বাস্তব নয়, বরং এআই প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি একটি কৃত্রিম দৃশ্য। পেঞ্চ টাইগার রিজার্ভের উপপরিচালক রাজনীশ সিংহও সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই ভিডিওর কোনো অংশই পেঞ্চের নয়। এটি সম্পূর্ণ ভুয়া।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি জেনারেলকে ‘ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলযুক্ত বাংলাদেশের পতাকা উপহারে’র দাবি নিয়ে যা বলল সিএ ফ্যাক্ট চেক

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ০৩
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং
ছবি : সিএ ফ্যাক্ট চেকিং

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যানকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্ত বাংলাদেশের মানচিত্রসংবলিত পতাকা উপহার দিয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের দাবি সম্পূর্ণ অসত্য ও কল্পনাপ্রসূত বলে জানিয়েছে সিএ (প্রধান উপদেষ্টা) ফ্যাক্ট চেক।

ভারতের সংবাদমাধ্যমটি গতকাল এক প্রতিবেদনে দাবি করে, পাকিস্তানের যৌথবাহিনীর চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জাকে এমন একটি পতাকা উপহার দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বাংলাদেশের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

সিএ ফ্যাক্ট চেক জানায়, প্রকৃতপক্ষে অধ্যাপক ইউনূস উপহার দিয়েছেন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ নামে একটি চিত্রসংকলন—যেখানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের আঁকা রঙিন গ্রাফিতি ও দেয়ালচিত্র সংকলিত হয়েছে।

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন প্রকাশিত একটি সচিত্র দলিল, যেখানে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত বিপ্লবের ইতিহাস ফুটে উঠেছে।

গ্রাফিতি সংকলনের প্রচ্ছদে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ আবু সাইদের পিছনে রক্তরাঙ্গা বাংলাদেশের মানচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে।

প্রচ্ছদে দৃশ্যমান মানচিত্রটি গ্রাফিতি হিসেবে অঙ্কিত হওয়ায় বাংলাদেশের মূল মানচিত্রের পরিমাপের কিছুটা হেরফের হয়েছে বলে কারো কাছে মনে হতে পারে। কিন্তু ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের কোনো অংশ গ্রাফিতি মানচিত্রটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বলে দাবি করাটা সম্পূর্ণ অসত্য এবং কল্পনাপ্রসূত। বাংলাদেশের মানচিত্রের সাথে উল্লেখিত গ্রাফিতিতে দৃশ্যমান মানচিত্রের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অঙ্কিত মানচিত্রটিতে বাংলাদেশের প্রকৃত মানচিত্র প্রায় হুবহুভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা এর আগেও একই গ্রাফিতি সংকলন ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ জাতিসংঘের মহাসচিব, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোসহ বিশ্ব নেতাদের উপহার দিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৫৮
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট
ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য। ছবি: স্ক্রিনশট

একটি মেরিন পার্কে এক নারী প্রশিক্ষককে চুবিয়ে হত্যা করেছে অরকা বা কিলার তিমি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মর্মান্তিক ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, প্যাসিফিক ব্লু মেরিন পার্কে ‘জেসিকা র‍্যাডক্লিফ’ নামে একজন প্রশিক্ষককে একটি অরকা আক্রমণ করে হত্যা করেছে।

ভিডিওটি টিকটক, ফেসবুক এবং এক্সে ভাইরাল হয়েছে। তবে, একাধিক ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, এই ভিডিওটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।

ভিডিওতে যা দেখানো হয়েছে

ভাইরাল হওয়া ক্লিপটিতে দেখা যায়, একজন তরুণী একটি অরকার পিঠে দাঁড়িয়ে নাচছেন। দর্শকেরা তখন উল্লাস করছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অরকাটি ওই তরুণীকে আক্রমণ করে পানির নিচে টেনে নিয়ে যায়। ভিডিওটি শেয়ার করা অনেক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, পানির নিচে নিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

ঘটনা বা প্রশিক্ষকের কোনো প্রমাণ নেই

ভিডিওটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হওয়া সত্ত্বেও, জেসিকা র‍্যাডক্লিফ নামে একজন প্রশিক্ষক অরকার আক্রমণে মারা গেছেন—এই দাবির পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কর্তৃপক্ষ, মেরিন পার্ক এবং প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের অস্তিত্ব বা এমন কোনো ঘটনার রেকর্ড খুঁজে পায়নি। দ্য স্টার পত্রিকার মতে, ভিডিওটি কাল্পনিক; এমনকি ভিডিওতে থাকা কণ্ঠস্বরগুলোও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যান্য প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এমন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত যে ধরনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া হয়, এই ঘটনায় তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি। ফরেনসিক বিশ্লেষণ অনুসারে, ভিডিওর মধ্যে পানির অস্বাভাবিক গতিবিধি এবং অদ্ভুত বিরতিও নিশ্চিত করে যে এটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এমনকি ভিডিওতে যে পার্কের নাম বলা হয়েছে, সেটিও ভুয়া।

এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট
এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া ভিডিও। ছবি: স্ক্রিনশট

সম্পূর্ণভাবে এআই-নির্মিত

ফোর্বস ম্যাগাজিন ক্লিপটিকে ‘একটি প্রতারণা’ বলে চিহ্নিত করেছে। তারা উল্লেখ করেছে, এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনা যদি সত্যিই ঘটতো, তাহলে তা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে শিরোনাম হতো। ভিডিওর দৃশ্য এবং শব্দ সম্ভবত চাঞ্চল্যকর প্রভাব তৈরির জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দ্য ইকোনমিক টাইমস উল্লেখ করেছে, এই গল্পের চরিত্র এবং নাম কোনো যাচাইযোগ্য রেকর্ডের সঙ্গে মেলে না। ফলে বলা যেতে পারে যে, পুরো গল্পটি বানোয়াট।

সত্যিকারের দুর্ঘটনার সঙ্গে মিল

এই ধরনের প্রতারণামূলক ভিডিওগুলোতে কিছুটা সত্যের ওপর ভিত্তি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করা হয়। ভিডিওটি ২০১০ সালে সি ওয়ার্ল্ডে ডন ব্রাঞ্চেউ এবং ২০০৯ সালে অ্যালেক্সিস মার্টিনেজ-এর বাস্তব জীবনের মৃত্যুর ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়। উভয় প্রশিক্ষকই অরকার আক্রমণে মারা যান। কিন্তু এই ঘটনাগুলো জেসিকা র‍্যাডক্লিফের গল্পের মতো নয়, কারণ সেগুলো নথিভুক্ত এবং কর্তৃপক্ষের তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে।

কেন এই ধরনের প্রতারণা ভাইরাল হয়

বিশেষজ্ঞরা বলেন, একটি ভিডিওর আবেগপূর্ণ তীব্রতা এবং বাস্তবসম্মত উৎপাদন কৌশল এটি ভাইরাল হতে সাহায্য করে। এই ধরনের ক্লিপগুলো বুদ্ধিমান সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বন্দী করে রাখার নৈতিকতা নিয়ে মানুষের গভীর উদ্বেগগুলোকে কাজে লাগায়। একই সঙ্গে, এগুলো চাঞ্চল্যকর বিষয়বস্তু ব্যবহার করে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ফ্যাক্টচেকিং হলেও ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়।

কথিত জেসিকা র‍্যাডক্লিফকে নিয়ে অরকার আক্রমণের ভিডিওটি একটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। এই নামে কোনো প্রশিক্ষকের অস্তিত্বেরও কোনো প্রমাণ নেই।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত