বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি: শিক্ষকশিক্ষার্থী এককাট্টা, সম্মতি আদায়ে সেমিনার করবে ছাত্রলীগ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্ররাজনীতি চালু করতে হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়েছেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা এবং ছাত্রলীগ ও সরকারি দল সংশ্লিষ্টরা। তবে আদালতের আদেশের কপি আনুষ্ঠানিকভাবে না পাওয়ায় জবাব দেওয়ার অপেক্ষায় আছে প্রশাসন। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরাও ক্যাম্পাসে রাজনীতি চান না। রাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাসের দাবিতে অনড় শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঈদের পরেও তাঁদের আন্দোলন চলবে। অবস্থান এবং পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে। 

বুয়েটে পরীক্ষা বর্জন ও চলমান আন্দোলনের মধ্যেই ঈদুল ফিতর ও পয়লা বৈশাখ মিলিয়ে ১৩ দিনের ছুটিতে হল ছেড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ৪ এপ্রিল থেকে ছুটি শুরু হয়েছে। ঈদের পর আগামী ১৭ এপ্রিল আবারও একাডেমিক কার্যক্রম চালু হবে বুয়েটে। 

আন্দোলনরত একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ছুটির পর পরীক্ষা বর্জন এবং ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে তাঁদের চলমান অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চান তাঁরা। এরই মধ্যে শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতি চালু প্রসঙ্গে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিপরীতে আপিলের জন্য প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বুয়েটের প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, ছুটির পর ১৭ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত থাকা পরীক্ষাগুলোর তারিখ পুনর্নির্ধারণ করতে উপাচার্যের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, পরীক্ষার তারিখ পুনর্নির্ধারণ করা না হলে পরীক্ষা বর্জন করবেন তাঁরা। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের বিপরীতে আপিলেরও প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ঈদের পরে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আপিল করতে চান শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে বুয়েট উপাচার্য সত্য প্রসাদ মজুমদার বলছেন, আদালতের আদেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, বুয়েট সেই অনুযায়ী চলবে। হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত যেটা বলবেন, আমাকে সেটা মানতে হবে। আদালতের আদেশ শিরোধার্য। আমাদের আইন ও নিয়ম অনুযায়ী এগোতে হবে।’ বুয়েটের আইন উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী তাঁরা এগিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি। 

তবে আদালতের আদেশের কপি আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো হাতে পায়নি বুয়েট প্রশাসন। এ বিষয়ে বুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুল জব্বার খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আদালতের আদেশের কপি যখন আমাদের হাতে আসবে, তার পরে আমরা আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব। আইনি প্রক্রিয়া শুরু না করার কোনো সুযোগ নেই।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘রুল জারি হলে আমাদের অবশ্যই জবাব দিতে হবে। উত্তর দিতে আমরা মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি। আমাদের কাছে কী ব্যাখ্যা চাওয়া হবে তা আমরা এখনো জানি না। আমরা মূলত আদেশ হাতে পাওয়ার অপেক্ষায় আছি।’

এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত গুরুত্ব পাবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘ছাত্ররাজনীতি স্থগিতের বিজ্ঞপ্তি তো প্রশাসন দিয়েছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে সেটাকে রক্ষা করা।’

এদিকে সাংগঠনিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে দেওয়া জরুরি বিজ্ঞপ্তির কার্যকারিতা স্থগিত করার যে রায় হাইকোর্ট দিয়েছেন, তার বিপরীতে আপিল করতে প্রশাসনকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বুয়েট শিক্ষক সমিতিও। সোমবার (৮ এপ্রিল) সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ কে এম মনজুর মোরশেদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, আপিলের বিষয়ে শিক্ষক সমিতি সব সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে তাঁরা বলেন, বিগত বছরগুলোতে বুয়েটে শিক্ষা কার্যক্রম অবাধে চলেছে এবং সুষ্ঠু একাডেমিক পরিবেশ বজায় ছিল। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা, নিরাপদ রাখা, বিদ্যাচর্চা অক্ষুণ্ন রাখা ইত্যাদি আমাদের সবার দায়িত্ব। শিক্ষক সমিতি এমন পরিবেশই প্রত্যাশা করে।

এর বিপরীতে বুয়েটে নিয়মতান্ত্রিক ও আধুনিক ছাত্ররাজনীতি চালুর লক্ষ্যে ৪ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ। ঈদের পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে সম্মতি তৈরিতে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণে বুয়েট শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের কথা জানিয়েছে ছাত্রলীগ। এ ছাড়া বুয়েটে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ঈদের পর প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। 

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বুয়েট ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরাই রাজনীতি করবে। সর্বোচ্চ মেধাবীদের প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাঁদের রাজনীতি যেমন হওয়া উচিত, সেরকমই হবে। শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে সেটি হবে।’ 

তবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়নসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠন লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতির বিপরীতে বুয়েটে ছাত্রসংসদ ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি চালুর দাবি জানিয়েছে।