নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে রাজপথে। এ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা, সংবিধান বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
এর আগে বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রথমে তারা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। পরে সরকারের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে বিক্ষোভকারীদের একাংশ কর্মসূচি স্থগিত করলেও আরেক পক্ষ বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।
এই অবস্থায় রাতে বঙ্গভবনের আশপাশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ভ্যানের ওপরও হামলা চালানো হলে পুলিশ সদস্যরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।
একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বঙ্গভবনের ভেতরে চলে যান। হামলার মুখে কয়েকজন পুলিশ সদস্য অস্ত্র ফেলে চলে যান। পরে আন্দোলনকারীরা অস্ত্রগুলো সেনাবাহিনীর কাছে জমা দেন। এ সময় সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে নিরাপত্তা ব্যারিকেডে কড়া অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী।
আহতদের মধ্যে সাংবাদিকসহ পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন শ্যামপুর বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৪), হকার শফিকুল ইসলাম (৪৫), বার্তা ২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার রাজু আহমেদ (২৫), ভিডিও জার্নালিস্ট রিপন রেজা (২৮), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ খান (২০)।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সারজিস বলেন, ‘আমরা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিনকে সময় দিয়েছি। এর মধ্যে এই ঘটনার সুরাহা হবে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কে আসবে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করা হবে।’
সবাইকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ঘরে ফেরার আহ্বান জানান ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কিছু বিক্ষোভকারী সেখানে অবস্থান করছিলেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তখন এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি পাননি। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন এবং এর মাধ্যমে তাঁর শপথ ভঙ্গ হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত।
এদিকে রাষ্ট্রপতির ওই মন্তব্যের পর বিক্ষোভ শুরু হয় রাজপথে। কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। তারা দ্রুত রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি তোলে।
ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ৩টার দিক থেকে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে দলে দলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন ছাত্র-জনতা। শহীদ মিনারে অবস্থান ও সমাবেশ শেষে বিকেলে ৫টার দিকে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে শহীদ মিনারে কর্মসূচিতে ৫ দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে এই সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে; অবিলম্বে সংবিধান বাতিল করে গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন সংবিধান লিখতে হবে; ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে এই সপ্তাহের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের আলোকে ‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া গণতন্ত্রকামী ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলবে এবং ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত যথাক্রমে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এই তিন নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তাঁরা যেন কখনো বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না পারেন, সে জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যে শহীদ মিনার থেকে আমরা ১ দফা দাবি তুলেছিলাম, সেই শহীদ মিনার থেকে আমরা ৫ দফা ঘোষণা দিচ্ছি। এই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ৫ দফা দাবি না মানা হলে আমরা আবার রাজপথে নামব।’
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যে ছাত্রলীগের হাতে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।
পদ ছাড়তে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
বিকেলে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন ছাত্র-জনতা। বঙ্গভবনের সামনে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তার জন্য বঙ্গভবনের সামনে ব্যারিকেড, সাঁজোয়া যান ও জলকামান রাখা হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা।
দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল শুরু করে বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি। হাইকোর্ট মাজার মোড়ে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে বঙ্গভবনের সামনের মোড়ে অবস্থান নেয় তারা।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, বঙ্গভবন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের লোকজন দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাই কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে, সে জন্য পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্য রাখা হয়।
বঙ্গভবনের সামনে কয়েক ঘণ্টা আন্দোলনের পর সন্ধ্যায় উপদেষ্টাদের আশ্বাসে আন্দোলনকারীদের একাংশ ইনকিলাব মঞ্চ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।
ইনকিলাব মঞ্চ কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও বঙ্গভবনের সামনে রয়ে যান রক্তিম জুলাই-২০২৪ সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার দোসর। তাঁর এমন বক্তব্যের পর তিনি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না। তাই তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন, তাহলে তাঁকে কীভাবে পথ থেকে সরাতে হয়, তা ছাত্র-জনতা জানেন।
দুই দলের বিক্ষোভ
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীর বিজয়নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে এবি পার্টি। মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী চক্রান্ত করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
এরপর একই এলাকায় লাঠি মিছিল করে গণঅধিকার পরিষদ। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে পদত্যাগের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গাইবান্ধা, পিরোজপুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গতকাল দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে মো. সাহাবুদ্দিন বক্তব্য দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ এবং সর্বস্তরের আওয়ামী সন্ত্রাসী-কুশীলবদের বিচার করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, কোনো অবস্থাতেই আর কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হতে দেওয়া হবে না।’
একই দাবিতে গতকাল বিকেলে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভ মিছিল বের করে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করে তারা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তিনিও আওয়ামী লীগের দোসর। শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে তিনি দুই রকম কথা বলেছেন। আমরা তাঁর অপসারণ চাই। একই সঙ্গে ছাত্রলীগ ১৫ বছর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।’
পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের হয়ে শহরে বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।
দুপুরে বরিশালে নগরের অশ্বিনীকুমার টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ ও লাঠি মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। একই দাবিতে বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে রাজপথে। এ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা, সংবিধান বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
এর আগে বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রথমে তারা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। পরে সরকারের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে বিক্ষোভকারীদের একাংশ কর্মসূচি স্থগিত করলেও আরেক পক্ষ বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।
এই অবস্থায় রাতে বঙ্গভবনের আশপাশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ভ্যানের ওপরও হামলা চালানো হলে পুলিশ সদস্যরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।
একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বঙ্গভবনের ভেতরে চলে যান। হামলার মুখে কয়েকজন পুলিশ সদস্য অস্ত্র ফেলে চলে যান। পরে আন্দোলনকারীরা অস্ত্রগুলো সেনাবাহিনীর কাছে জমা দেন। এ সময় সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে নিরাপত্তা ব্যারিকেডে কড়া অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী।
আহতদের মধ্যে সাংবাদিকসহ পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন শ্যামপুর বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৪), হকার শফিকুল ইসলাম (৪৫), বার্তা ২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার রাজু আহমেদ (২৫), ভিডিও জার্নালিস্ট রিপন রেজা (২৮), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ খান (২০)।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সারজিস বলেন, ‘আমরা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিনকে সময় দিয়েছি। এর মধ্যে এই ঘটনার সুরাহা হবে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কে আসবে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করা হবে।’
সবাইকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ঘরে ফেরার আহ্বান জানান ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কিছু বিক্ষোভকারী সেখানে অবস্থান করছিলেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তখন এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি পাননি। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন এবং এর মাধ্যমে তাঁর শপথ ভঙ্গ হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত।
এদিকে রাষ্ট্রপতির ওই মন্তব্যের পর বিক্ষোভ শুরু হয় রাজপথে। কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। তারা দ্রুত রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি তোলে।
ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ৩টার দিক থেকে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে দলে দলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন ছাত্র-জনতা। শহীদ মিনারে অবস্থান ও সমাবেশ শেষে বিকেলে ৫টার দিকে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে শহীদ মিনারে কর্মসূচিতে ৫ দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে এই সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে; অবিলম্বে সংবিধান বাতিল করে গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন সংবিধান লিখতে হবে; ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে এই সপ্তাহের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের আলোকে ‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া গণতন্ত্রকামী ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলবে এবং ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত যথাক্রমে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এই তিন নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তাঁরা যেন কখনো বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না পারেন, সে জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যে শহীদ মিনার থেকে আমরা ১ দফা দাবি তুলেছিলাম, সেই শহীদ মিনার থেকে আমরা ৫ দফা ঘোষণা দিচ্ছি। এই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ৫ দফা দাবি না মানা হলে আমরা আবার রাজপথে নামব।’
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যে ছাত্রলীগের হাতে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।
পদ ছাড়তে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
বিকেলে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন ছাত্র-জনতা। বঙ্গভবনের সামনে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তার জন্য বঙ্গভবনের সামনে ব্যারিকেড, সাঁজোয়া যান ও জলকামান রাখা হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা।
দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল শুরু করে বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি। হাইকোর্ট মাজার মোড়ে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে বঙ্গভবনের সামনের মোড়ে অবস্থান নেয় তারা।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, বঙ্গভবন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের লোকজন দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাই কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে, সে জন্য পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্য রাখা হয়।
বঙ্গভবনের সামনে কয়েক ঘণ্টা আন্দোলনের পর সন্ধ্যায় উপদেষ্টাদের আশ্বাসে আন্দোলনকারীদের একাংশ ইনকিলাব মঞ্চ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।
ইনকিলাব মঞ্চ কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও বঙ্গভবনের সামনে রয়ে যান রক্তিম জুলাই-২০২৪ সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার দোসর। তাঁর এমন বক্তব্যের পর তিনি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না। তাই তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন, তাহলে তাঁকে কীভাবে পথ থেকে সরাতে হয়, তা ছাত্র-জনতা জানেন।
দুই দলের বিক্ষোভ
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীর বিজয়নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে এবি পার্টি। মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী চক্রান্ত করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
এরপর একই এলাকায় লাঠি মিছিল করে গণঅধিকার পরিষদ। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে পদত্যাগের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গাইবান্ধা, পিরোজপুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গতকাল দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে মো. সাহাবুদ্দিন বক্তব্য দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ এবং সর্বস্তরের আওয়ামী সন্ত্রাসী-কুশীলবদের বিচার করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, কোনো অবস্থাতেই আর কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হতে দেওয়া হবে না।’
একই দাবিতে গতকাল বিকেলে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভ মিছিল বের করে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করে তারা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তিনিও আওয়ামী লীগের দোসর। শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে তিনি দুই রকম কথা বলেছেন। আমরা তাঁর অপসারণ চাই। একই সঙ্গে ছাত্রলীগ ১৫ বছর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।’
পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের হয়ে শহরে বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।
দুপুরে বরিশালে নগরের অশ্বিনীকুমার টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ ও লাঠি মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। একই দাবিতে বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে রাজপথে। এ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা, সংবিধান বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
এর আগে বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রথমে তারা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। পরে সরকারের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে বিক্ষোভকারীদের একাংশ কর্মসূচি স্থগিত করলেও আরেক পক্ষ বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।
এই অবস্থায় রাতে বঙ্গভবনের আশপাশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ভ্যানের ওপরও হামলা চালানো হলে পুলিশ সদস্যরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।
একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বঙ্গভবনের ভেতরে চলে যান। হামলার মুখে কয়েকজন পুলিশ সদস্য অস্ত্র ফেলে চলে যান। পরে আন্দোলনকারীরা অস্ত্রগুলো সেনাবাহিনীর কাছে জমা দেন। এ সময় সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে নিরাপত্তা ব্যারিকেডে কড়া অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী।
আহতদের মধ্যে সাংবাদিকসহ পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন শ্যামপুর বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৪), হকার শফিকুল ইসলাম (৪৫), বার্তা ২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার রাজু আহমেদ (২৫), ভিডিও জার্নালিস্ট রিপন রেজা (২৮), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ খান (২০)।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সারজিস বলেন, ‘আমরা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিনকে সময় দিয়েছি। এর মধ্যে এই ঘটনার সুরাহা হবে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কে আসবে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করা হবে।’
সবাইকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ঘরে ফেরার আহ্বান জানান ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কিছু বিক্ষোভকারী সেখানে অবস্থান করছিলেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তখন এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি পাননি। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন এবং এর মাধ্যমে তাঁর শপথ ভঙ্গ হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত।
এদিকে রাষ্ট্রপতির ওই মন্তব্যের পর বিক্ষোভ শুরু হয় রাজপথে। কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। তারা দ্রুত রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি তোলে।
ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ৩টার দিক থেকে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে দলে দলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন ছাত্র-জনতা। শহীদ মিনারে অবস্থান ও সমাবেশ শেষে বিকেলে ৫টার দিকে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে শহীদ মিনারে কর্মসূচিতে ৫ দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে এই সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে; অবিলম্বে সংবিধান বাতিল করে গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন সংবিধান লিখতে হবে; ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে এই সপ্তাহের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের আলোকে ‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া গণতন্ত্রকামী ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলবে এবং ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত যথাক্রমে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এই তিন নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তাঁরা যেন কখনো বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না পারেন, সে জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যে শহীদ মিনার থেকে আমরা ১ দফা দাবি তুলেছিলাম, সেই শহীদ মিনার থেকে আমরা ৫ দফা ঘোষণা দিচ্ছি। এই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ৫ দফা দাবি না মানা হলে আমরা আবার রাজপথে নামব।’
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যে ছাত্রলীগের হাতে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।
পদ ছাড়তে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
বিকেলে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন ছাত্র-জনতা। বঙ্গভবনের সামনে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তার জন্য বঙ্গভবনের সামনে ব্যারিকেড, সাঁজোয়া যান ও জলকামান রাখা হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা।
দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল শুরু করে বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি। হাইকোর্ট মাজার মোড়ে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে বঙ্গভবনের সামনের মোড়ে অবস্থান নেয় তারা।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, বঙ্গভবন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের লোকজন দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাই কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে, সে জন্য পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্য রাখা হয়।
বঙ্গভবনের সামনে কয়েক ঘণ্টা আন্দোলনের পর সন্ধ্যায় উপদেষ্টাদের আশ্বাসে আন্দোলনকারীদের একাংশ ইনকিলাব মঞ্চ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।
ইনকিলাব মঞ্চ কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও বঙ্গভবনের সামনে রয়ে যান রক্তিম জুলাই-২০২৪ সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার দোসর। তাঁর এমন বক্তব্যের পর তিনি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না। তাই তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন, তাহলে তাঁকে কীভাবে পথ থেকে সরাতে হয়, তা ছাত্র-জনতা জানেন।
দুই দলের বিক্ষোভ
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীর বিজয়নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে এবি পার্টি। মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী চক্রান্ত করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
এরপর একই এলাকায় লাঠি মিছিল করে গণঅধিকার পরিষদ। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে পদত্যাগের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গাইবান্ধা, পিরোজপুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গতকাল দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে মো. সাহাবুদ্দিন বক্তব্য দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ এবং সর্বস্তরের আওয়ামী সন্ত্রাসী-কুশীলবদের বিচার করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, কোনো অবস্থাতেই আর কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হতে দেওয়া হবে না।’
একই দাবিতে গতকাল বিকেলে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভ মিছিল বের করে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করে তারা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তিনিও আওয়ামী লীগের দোসর। শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে তিনি দুই রকম কথা বলেছেন। আমরা তাঁর অপসারণ চাই। একই সঙ্গে ছাত্রলীগ ১৫ বছর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।’
পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের হয়ে শহরে বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।
দুপুরে বরিশালে নগরের অশ্বিনীকুমার টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ ও লাঠি মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। একই দাবিতে বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে রাজপথে। এ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা, সংবিধান বাতিলসহ পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়েছে।
এর আগে বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রথমে তারা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগে ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয়। পরে সরকারের সঙ্গে আলোচনার আশ্বাসে বিক্ষোভকারীদের একাংশ কর্মসূচি স্থগিত করলেও আরেক পক্ষ বিক্ষোভ চালিয়ে যায়।
এই অবস্থায় রাতে বঙ্গভবনের আশপাশে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কিছু পুলিশ সদস্য ঘটনাস্থলে পৌঁছার চেষ্টা করেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের একটি অংশ পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা করে। বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করা হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ভ্যানের ওপরও হামলা চালানো হলে পুলিশ সদস্যরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তখন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন।
একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বঙ্গভবনের ভেতরে চলে যান। হামলার মুখে কয়েকজন পুলিশ সদস্য অস্ত্র ফেলে চলে যান। পরে আন্দোলনকারীরা অস্ত্রগুলো সেনাবাহিনীর কাছে জমা দেন। এ সময় সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে গেলে নিরাপত্তা ব্যারিকেডে কড়া অবস্থান নেয় সেনাবাহিনী।
আহতদের মধ্যে সাংবাদিকসহ পাঁচজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন শ্যামপুর বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৪), হকার শফিকুল ইসলাম (৪৫), বার্তা ২৪ এর স্টাফ রিপোর্টার রাজু আহমেদ (২৫), ভিডিও জার্নালিস্ট রিপন রেজা (২৮), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ খান (২০)।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম বঙ্গভবনের সামনে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় সারজিস বলেন, ‘আমরা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিনকে সময় দিয়েছি। এর মধ্যে এই ঘটনার সুরাহা হবে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কে আসবে। বুধ ও বৃহস্পতিবারের মধ্যেই নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করা হবে।’
সবাইকে আন্দোলন প্রত্যাহার করে ঘরে ফেরার আহ্বান জানান ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কিছু বিক্ষোভকারী সেখানে অবস্থান করছিলেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে শেখ হাসিনা সরকারের। দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন শেখ হাসিনা। তখন এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি জানিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু কয়েক দিন আগে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র তিনি পাননি। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল অভিযোগ করেন, রাষ্ট্রপতি মিথ্যাচার করেছেন এবং এর মাধ্যমে তাঁর শপথ ভঙ্গ হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে আইন উপদেষ্টার বক্তব্যের সঙ্গে সরকার একমত।
এদিকে রাষ্ট্রপতির ওই মন্তব্যের পর বিক্ষোভ শুরু হয় রাজপথে। কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। তারা দ্রুত রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি তোলে।
ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বেলা ৩টার দিক থেকে বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে দলে দলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে শুরু করেন ছাত্র-জনতা। শহীদ মিনারে অবস্থান ও সমাবেশ শেষে বিকেলে ৫টার দিকে শহীদ মিনার থেকে একটি মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে শহীদ মিনারে কর্মসূচিতে ৫ দফা দাবি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনকে এই সপ্তাহের মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে; অবিলম্বে সংবিধান বাতিল করে গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন সংবিধান লিখতে হবে; ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে এই সপ্তাহের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে হবে; এই সপ্তাহের মধ্যে জুলাই বিপ্লবের আলোকে ‘প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক’ ঘোষণা করতে হবে। এ ছাড়া গণতন্ত্রকামী ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ চলবে এবং ২০১৪ সাল, ২০১৮ সাল এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত যথাক্রমে দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এই তিন নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তাঁরা যেন কখনো বাংলাদেশে নির্বাচন করতে না পারেন, সে জন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘যে শহীদ মিনার থেকে আমরা ১ দফা দাবি তুলেছিলাম, সেই শহীদ মিনার থেকে আমরা ৫ দফা ঘোষণা দিচ্ছি। এই সপ্তাহের মধ্যে আমাদের ৫ দফা দাবি না মানা হলে আমরা আবার রাজপথে নামব।’
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। যে ছাত্রলীগের হাতে মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।
পদ ছাড়তে রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
বিকেলে রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেন ছাত্র-জনতা। বঙ্গভবনের সামনে ইনকিলাব মঞ্চ, রক্তিম জুলাই-২০২৪, সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় ওই এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নিরাপত্তার জন্য বঙ্গভবনের সামনে ব্যারিকেড, সাঁজোয়া যান ও জলকামান রাখা হয়। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা।
দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য থেকে মিছিল শুরু করে বঙ্গভবনের দিকে যাত্রা শুরু করে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটি। হাইকোর্ট মাজার মোড়ে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে বঙ্গভবনের সামনের মোড়ে অবস্থান নেয় তারা।
ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, বঙ্গভবন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের লোকজন দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ করেন। তাই কোনো ধরনের অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে, সে জন্য পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র্যাবের সদস্য রাখা হয়।
বঙ্গভবনের সামনে কয়েক ঘণ্টা আন্দোলনের পর সন্ধ্যায় উপদেষ্টাদের আশ্বাসে আন্দোলনকারীদের একাংশ ইনকিলাব মঞ্চ তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে।
ইনকিলাব মঞ্চ কর্মসূচি প্রত্যাহার করলেও বঙ্গভবনের সামনে রয়ে যান রক্তিম জুলাই-২০২৪ সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
আন্দোলনকারীরা বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার দোসর। তাঁর এমন বক্তব্যের পর তিনি রাষ্ট্রপতি পদে থাকতে পারেন না। তাই তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ করতে হবে। তিনি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদত্যাগ না করেন, তাহলে তাঁকে কীভাবে পথ থেকে সরাতে হয়, তা ছাত্র-জনতা জানেন।
দুই দলের বিক্ষোভ
রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীর বিজয়নগরে বিক্ষোভ মিছিল করে এবি পার্টি। মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসে গণ-অভ্যুত্থানবিরোধী চক্রান্ত করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না।
এরপর একই এলাকায় লাঠি মিছিল করে গণঅধিকার পরিষদ। এ ছাড়া সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনের সামনে পদত্যাগের দাবিতে রাষ্ট্রপতির কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ।
ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবিতে গাইবান্ধা, পিরোজপুর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গতকাল দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে মো. সাহাবুদ্দিন বক্তব্য দিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে। এ ছাড়া ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি বন্ধ এবং সর্বস্তরের আওয়ামী সন্ত্রাসী-কুশীলবদের বিচার করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট ঘোষণা দিতে চাই, কোনো অবস্থাতেই আর কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র হতে দেওয়া হবে না।’
একই দাবিতে গতকাল বিকেলে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বিক্ষোভ মিছিল বের করে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করে তারা। সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘রাষ্ট্রপতিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তিনিও আওয়ামী লীগের দোসর। শেখ হাসিনার পদত্যাগের বিষয়ে তিনি দুই রকম কথা বলেছেন। আমরা তাঁর অপসারণ চাই। একই সঙ্গে ছাত্রলীগ ১৫ বছর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়েছে। তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে।’
পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের হয়ে শহরে বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে।
দুপুরে বরিশালে নগরের অশ্বিনীকুমার টাউন হলের সামনে বিক্ষোভ ও লাঠি মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা। একই দাবিতে বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গাইবান্ধায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে।
৩ মিনিট আগে
বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
২২ মিনিট আগে
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
১ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ও মাঠপর্যায়ের অফিসের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে। ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটি হতে না দেওয়া। এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই সতর্কবার্তা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর আক্রমণটি ‘খুবই সিম্বলিক’ আখ্যায়িত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়।
রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতা যতই থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু কাউকে শত্রু ভাবা বা আক্রমণ করার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। নির্বাচনের সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে মাথায় রাখতে হবে—এটি যেন একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন দলের বৈঠকের পর তাঁর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। শাহবাগ অথবা শহীদ মিনারে যে প্রতিবাদ সভা হবে, সেখানে যেন সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পরদিন শুক্রবার রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করা হয় জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় নেতা ওসমান হাদিকে। মাথায় গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।
জুলাই আন্দোলনের সময় এক থাকলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে অভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তির মধ্যে দূরত্ব দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। এই অবস্থার মধ্যে হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে হাদির ওপর হামলাকে ‘ষড়যন্ত্রের’অংশ হিসেবে তুলে ধরেন তিন দলের নেতারা। সেখানে হারিয়ে যাওয়া ঐক্য পুনরুদ্ধারের তাগিদও দেন তাঁরা।
বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেকোনো অবস্থাতেই পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে আমাদের বিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। জাতিকে বিভক্ত করে, এমন কথা আমরা কেন বলব?’
হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে মনে হয় যারা অভ্যুত্থান করেছে, তারা অপরাধ করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নরমালাইজ করতে নানা চেষ্টা চলছে। টিভি টক শোতে তারা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মিলিত হচ্ছে এবং আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দিচ্ছে।
অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিচ্ছে মন্তব্য করে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো আওয়ামী লীগকে নানা রকম সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।’
বৈঠকে উপস্থিত থাকা আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দলগুলোকে সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা যতই থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য দলগুলোর আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এ ক্ষেত্রে সুদৃঢ় অবস্থান নেবে তারা। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে, সে জন্য পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর কথাও বলেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা।
যমুনায় ওসমান হাদির পরিবার
ওসমান হাদির পরিবার গতকাল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আবদুল্লাহ আল জাবের, ফাতিমা তাসনিম জুমা ও মো. বোরহান উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টা এ সময় ওসমান হাদির সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁদের।
ওসমান হাদির বোন বলেন, ‘সে ছোটবেলা থেকেই দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। ছোটবেলা থেকেই সে বিপ্লবী। বিদ্রোহী কবিতা তার প্রিয়, সে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসত। তার একটি ১০ মাসের সন্তান আছে। হাদি আমাদের মেরুদণ্ড।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওর অনেক কাজ, ওকে বেঁচে থাকতে হবে। আপনারা বিপ্লবী সরকার। যে করেই হোক জুলাই বিপ্লবীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।’
অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা জাবের বলেন, ‘৫ই আগস্টের পর অনেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু ওসমান হাদি বাসায় ফিরে যায়নি। সে জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করত এবং জুলাই বিপ্লবের জন্য দিনরাত কাজ করছে। যে ছেলেটা গুলি করেছে, শুনতে পাচ্ছি সে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। কোন প্রক্রিয়ায় সে জামিন পেয়েছে সেটা তদন্ত করতে হবে।’
এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে। ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটি হতে না দেওয়া। এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে এই সতর্কবার্তা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদির ওপর আক্রমণটি ‘খুবই সিম্বলিক’ আখ্যায়িত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়।
রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতা যতই থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু কাউকে শত্রু ভাবা বা আক্রমণ করার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে। নির্বাচনের সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে মাথায় রাখতে হবে—এটি যেন একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে থাকে।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তিন দলের বৈঠকের পর তাঁর প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় সর্বদলীয় প্রতিবাদ সভা করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। শাহবাগ অথবা শহীদ মিনারে যে প্রতিবাদ সভা হবে, সেখানে যেন সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা না পেরোতেই পরদিন শুক্রবার রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করা হয় জুলাই আন্দোলনের সক্রিয় নেতা ওসমান হাদিকে। মাথায় গুলিবিদ্ধ ওসমান হাদি এখন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।
জুলাই আন্দোলনের সময় এক থাকলেও নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে অভ্যুত্থানের পক্ষ শক্তির মধ্যে দূরত্ব দেখা দিয়েছে এরই মধ্যে। এই অবস্থার মধ্যে হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে সরকারসহ রাজনৈতিক দলগুলো। গতকাল যমুনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে হাদির ওপর হামলাকে ‘ষড়যন্ত্রের’অংশ হিসেবে তুলে ধরেন তিন দলের নেতারা। সেখানে হারিয়ে যাওয়া ঐক্য পুনরুদ্ধারের তাগিদও দেন তাঁরা।
বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যেকোনো অবস্থাতেই পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে আমাদের বিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে। ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। জাতিকে বিভক্ত করে, এমন কথা আমরা কেন বলব?’
হাদির ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে, যাতে মনে হয় যারা অভ্যুত্থান করেছে, তারা অপরাধ করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নরমালাইজ করতে নানা চেষ্টা চলছে। টিভি টক শোতে তারা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় মিলিত হচ্ছে এবং আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দিচ্ছে।
অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলোর অনৈক্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিচ্ছে মন্তব্য করে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো আওয়ামী লীগকে নানা রকম সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।’
বৈঠকে উপস্থিত থাকা আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল দলগুলোকে সতর্ক করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতা যতই থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য দলগুলোর আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, এ ক্ষেত্রে সুদৃঢ় অবস্থান নেবে তারা। ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক ঐক্যে যাতে ফাটল না ধরে, সে জন্য পরস্পরের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর কথাও বলেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতারা।
যমুনায় ওসমান হাদির পরিবার
ওসমান হাদির পরিবার গতকাল প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আবদুল্লাহ আল জাবের, ফাতিমা তাসনিম জুমা ও মো. বোরহান উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টা এ সময় ওসমান হাদির সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁদের।
ওসমান হাদির বোন বলেন, ‘সে ছোটবেলা থেকেই দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। ছোটবেলা থেকেই সে বিপ্লবী। বিদ্রোহী কবিতা তার প্রিয়, সে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসত। তার একটি ১০ মাসের সন্তান আছে। হাদি আমাদের মেরুদণ্ড।’ তিনি আরও বলেন, ‘ওর অনেক কাজ, ওকে বেঁচে থাকতে হবে। আপনারা বিপ্লবী সরকার। যে করেই হোক জুলাই বিপ্লবীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।’
অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা জাবের বলেন, ‘৫ই আগস্টের পর অনেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু ওসমান হাদি বাসায় ফিরে যায়নি। সে জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করত এবং জুলাই বিপ্লবের জন্য দিনরাত কাজ করছে। যে ছেলেটা গুলি করেছে, শুনতে পাচ্ছি সে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। কোন প্রক্রিয়ায় সে জামিন পেয়েছে সেটা তদন্ত করতে হবে।’
এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে রাজপথে। এ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
২৩ অক্টোবর ২০২৪
বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
২২ মিনিট আগে
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
১ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ও মাঠপর্যায়ের অফিসের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
৩ ঘণ্টা আগেশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাসই বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছিল, তবে ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে একযোগে ধরে নেওয়া হয় বহু বুদ্ধিজীবীকে। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে। এদিনটিকে তাই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করে জাতি।
পাকিস্তানের সামরিক জান্তা পরিকল্পনা করেছিল, বুদ্ধিজীবীশূন্য করে দিলে বাংলাদেশ কোনো দিন স্বাধীন হলেও আত্মনির্ভর হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ ছিলেন শিক্ষক। ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতিবাদী ভূমিকার কারণে পাকিস্তান আমলের গোড়ার দিক থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সামরিক শাসকদের ক্ষোভ ছিল। একাত্তরে সে ক্ষোভ ঘৃণায় পরিণত হয়।
গবেষকদের ধারণা, বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা রাও ফরমান আলী। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গভর্নর হাউস থেকে তাঁর একটি ডায়েরি পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা ছিল। তাঁদের অধিকাংশই ১৪ ডিসেম্বরে আটক হয়ে প্রাণ হারান। পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীসহ অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে গবেষকেরা মনে করেন।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা—তখনই খবর পাওয়া যায়, রাজধানীর রায়েরবাজারের বধ্যভূমির। সেখানে ইটের গাদার মধ্যে পড়ে ছিল বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর বিকৃত মরদেহ। কারও হাত-চোখ বাঁধা। বুক, মাথা ও পিঠে ছিল গুলির আঘাত এবং সারা দেহে বেয়নেটের ক্ষতচিহ্ন। ভয়ঙ্কর নির্মমভাবে নির্যাতনের পর তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল। ক্রমেই বের হতে থাকে আরও বধ্যভূমি। বিজয়ের আনন্দের মধ্যে শোকাতুর হয় জাতি। বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে চিরজাগরূক রাখতে রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমির স্থানে পরবর্তী সময়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধ।
রায়েরবাজার ছাড়া ঢাকা শহরের প্রধান বধ্যভূমি ছিল আলেকদি, কালাপানি, রাইনখোলা, মিরপুর বাঙলা কলেজের পশ্চাদ্ভাগ, হরিরামপুর গোরস্তান, মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এবং মোহাম্মদপুর থানার পূর্বপ্রান্ত। ডিসেম্বরের বিভিন্ন সময়ে ধরে নিয়ে হত্যা করা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, সিরাজুদ্দীন হোসেন, ফজলে রাব্বী, আলীম চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, নিজামুদ্দীন আহমদ, সেলিনা পারভীন, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। সাহিত্য, সাংবাদিকতা, চিকিৎসাসেবাসহ নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী স্থানীয় আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাই মূলত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল বলে নিহতদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, সমকালীন সংবাদপত্রের খবর ও গবেষণা সূত্রে জানা যায়। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গ্রামাঞ্চলে এ কাজ করেছিল বাঙালি রাজাকার ও মুসলিম লীগাররা। তারা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে এসে লোকজনকে চিনিয়ে দিয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের পরামর্শ দিয়েছে। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আগে ঢাকা শহরে ঘন ঘন কারফিউয়ের মধ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে বেরিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল।
বাংলাপিডিয়ার হিসাব অনুযায়ী, পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। শহীদদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী এবং অন্যান্য ২ জন। রাও ফরমান আলী হত্যার জন্য মোট ১৫০০ বাঙালির তালিকা করেছিলেন বলে জানা যায়।
যুদ্ধের শেষ কয়েক দিন
এদিকে নিশ্চিত পরাজয়ের প্রাক্কালে এসে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানিদের শীর্ষপর্যায়ে মতভেদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে রাও ফরমান আলীর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যুদ্ধবিরতির আবেদন পাঠানোকে তারই প্রমাণ মনে করা হয়। ঢাকার শহরতলিতে অগ্রসরমান ভারতীয় বাহিনীর গোলা এসে পড়ছিল। শহরের কয়েকটি স্থানে তো মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা অপারেশন আগে থেকেই চলছিল। জেনারেল নিয়াজী তখনো দ্বিধার মধ্যে ছিলেন। মনস্থির করতে পারেননি প্রাদেশিক গভর্নর মালেকও। তবে ১৪ ডিসেম্বরই গভর্নর হাউসে (বর্তমান বঙ্গভবন) মালেক মন্ত্রিসভার বৈঠক চলার সময় ভারতীয় বিমানের বোমা হামলার পর তিনি ভড়কে গিয়ে সপারিষদ পদত্যাগ করে বসেন। ছটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের হামলায় গভর্নর হাউসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এদিকে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য মিত্রবাহিনীর জেনারেল মানেকশর আহ্বান রেডিওতে বারবার প্রচারিত হতে থাকে। ১৪ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেল নিয়াজী ও গভর্নর মালেককে ‘যুদ্ধ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণের অনুমোদন দেন। উপায় না দেখে নিয়াজী শেষ চেষ্টা হিসেবে মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। তাঁর প্রস্তাব ছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর অবশিষ্ট সেনারা এক জায়গায় সমবেত হবে। সেখান থেকে তাদের পশ্চিম পাকিস্তানে অক্ষত অবস্থায় ফিরে যেতে দিতে হবে। ১৫ তারিখ প্রস্তাবটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছায়।
এদিকে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের জাহাজ চট্টগ্রাম উপকূলে ঘেঁষার চেষ্টা করতে পারে, এই আশঙ্কায় বাংলাদেশি বাহিনীর সেনারা বন্দর অচল করতে উদ্যোগ নেন। ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনী এতে সহায়তা করে। বন্দরে প্রচুর বোমা ফেলে তা অচল করে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের অদূরে কুমিরার কাছে ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় ২৩ ডিভিশনের ৮৩ ব্রিগেডের যোদ্ধারা। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, যত দ্রুত সম্ভব চট্টগ্রাম দখলে নেওয়া। সব মিলিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় এবং ঢাকার পতন তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাসই বুদ্ধিজীবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছিল, তবে ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে একযোগে ধরে নেওয়া হয় বহু বুদ্ধিজীবীকে। বিজয়ের পরই তাঁদের অনেকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহের সন্ধান মেলে। এদিনটিকে তাই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করে জাতি।
পাকিস্তানের সামরিক জান্তা পরিকল্পনা করেছিল, বুদ্ধিজীবীশূন্য করে দিলে বাংলাদেশ কোনো দিন স্বাধীন হলেও আত্মনির্ভর হয়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ ছিলেন শিক্ষক। ছাত্র-শিক্ষকদের প্রতিবাদী ভূমিকার কারণে পাকিস্তান আমলের গোড়ার দিক থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সামরিক শাসকদের ক্ষোভ ছিল। একাত্তরে সে ক্ষোভ ঘৃণায় পরিণত হয়।
গবেষকদের ধারণা, বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনা করেছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা রাও ফরমান আলী। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গভর্নর হাউস থেকে তাঁর একটি ডায়েরি পাওয়া গিয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের অনেক বুদ্ধিজীবীর নাম লেখা ছিল। তাঁদের অধিকাংশই ১৪ ডিসেম্বরে আটক হয়ে প্রাণ হারান। পাকিস্তানি বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজীসহ অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারাও প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনায় জড়িত ছিলেন বলে গবেষকেরা মনে করেন।
১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর বাংলাদেশের মানুষ যখন বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা—তখনই খবর পাওয়া যায়, রাজধানীর রায়েরবাজারের বধ্যভূমির। সেখানে ইটের গাদার মধ্যে পড়ে ছিল বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর বিকৃত মরদেহ। কারও হাত-চোখ বাঁধা। বুক, মাথা ও পিঠে ছিল গুলির আঘাত এবং সারা দেহে বেয়নেটের ক্ষতচিহ্ন। ভয়ঙ্কর নির্মমভাবে নির্যাতনের পর তাঁদের হত্যা করা হয়েছিল। ক্রমেই বের হতে থাকে আরও বধ্যভূমি। বিজয়ের আনন্দের মধ্যে শোকাতুর হয় জাতি। বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের স্মৃতিকে চিরজাগরূক রাখতে রায়েরবাজার ও মিরপুরের বধ্যভূমির স্থানে পরবর্তী সময়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্মৃতিসৌধ।
রায়েরবাজার ছাড়া ঢাকা শহরের প্রধান বধ্যভূমি ছিল আলেকদি, কালাপানি, রাইনখোলা, মিরপুর বাঙলা কলেজের পশ্চাদ্ভাগ, হরিরামপুর গোরস্তান, মিরপুরের শিয়ালবাড়ি এবং মোহাম্মদপুর থানার পূর্বপ্রান্ত। ডিসেম্বরের বিভিন্ন সময়ে ধরে নিয়ে হত্যা করা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে ছিলেন মুনীর চৌধুরী, সিরাজুদ্দীন হোসেন, ফজলে রাব্বী, আলীম চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, নিজামুদ্দীন আহমদ, সেলিনা পারভীন, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। সাহিত্য, সাংবাদিকতা, চিকিৎসাসেবাসহ নিজ নিজ ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন সুপ্রতিষ্ঠিত।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী স্থানীয় আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্যরাই মূলত বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছিল বলে নিহতদের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, সমকালীন সংবাদপত্রের খবর ও গবেষণা সূত্রে জানা যায়। লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, গ্রামাঞ্চলে এ কাজ করেছিল বাঙালি রাজাকার ও মুসলিম লীগাররা। তারা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে এসে লোকজনকে চিনিয়ে দিয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের পরামর্শ দিয়েছে। পাকসেনাদের আত্মসমর্পণের আগে ঢাকা শহরে ঘন ঘন কারফিউয়ের মধ্যে মাইক্রোবাস নিয়ে বেরিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবীকে ধরে নেওয়া হয়েছিল।
বাংলাপিডিয়ার হিসাব অনুযায়ী, পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় ১ হাজার ১১১ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। শহীদদের মধ্যে ছিলেন ৯৯১ জন শিক্ষাবিদ, ১৩ জন সাংবাদিক, ৪৯ জন চিকিৎসক, ৪২ জন আইনজীবী, ৯ জন সাহিত্যিক ও শিল্পী, ৫ জন প্রকৌশলী এবং অন্যান্য ২ জন। রাও ফরমান আলী হত্যার জন্য মোট ১৫০০ বাঙালির তালিকা করেছিলেন বলে জানা যায়।
যুদ্ধের শেষ কয়েক দিন
এদিকে নিশ্চিত পরাজয়ের প্রাক্কালে এসে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে পাকিস্তানিদের শীর্ষপর্যায়ে মতভেদ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে এড়িয়ে রাও ফরমান আলীর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে যুদ্ধবিরতির আবেদন পাঠানোকে তারই প্রমাণ মনে করা হয়। ঢাকার শহরতলিতে অগ্রসরমান ভারতীয় বাহিনীর গোলা এসে পড়ছিল। শহরের কয়েকটি স্থানে তো মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা অপারেশন আগে থেকেই চলছিল। জেনারেল নিয়াজী তখনো দ্বিধার মধ্যে ছিলেন। মনস্থির করতে পারেননি প্রাদেশিক গভর্নর মালেকও। তবে ১৪ ডিসেম্বরই গভর্নর হাউসে (বর্তমান বঙ্গভবন) মালেক মন্ত্রিসভার বৈঠক চলার সময় ভারতীয় বিমানের বোমা হামলার পর তিনি ভড়কে গিয়ে সপারিষদ পদত্যাগ করে বসেন। ছটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমানের হামলায় গভর্নর হাউসের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। এদিকে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য মিত্রবাহিনীর জেনারেল মানেকশর আহ্বান রেডিওতে বারবার প্রচারিত হতে থাকে। ১৪ তারিখ সন্ধ্যার মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জেনারেল নিয়াজী ও গভর্নর মালেককে ‘যুদ্ধ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণের অনুমোদন দেন। উপায় না দেখে নিয়াজী শেষ চেষ্টা হিসেবে মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। তাঁর প্রস্তাব ছিল, পাকিস্তানি বাহিনীর অবশিষ্ট সেনারা এক জায়গায় সমবেত হবে। সেখান থেকে তাদের পশ্চিম পাকিস্তানে অক্ষত অবস্থায় ফিরে যেতে দিতে হবে। ১৫ তারিখ প্রস্তাবটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছায়।
এদিকে মার্কিন সপ্তম নৌবহরের জাহাজ চট্টগ্রাম উপকূলে ঘেঁষার চেষ্টা করতে পারে, এই আশঙ্কায় বাংলাদেশি বাহিনীর সেনারা বন্দর অচল করতে উদ্যোগ নেন। ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনী এতে সহায়তা করে। বন্দরে প্রচুর বোমা ফেলে তা অচল করে দেওয়া হয়। চট্টগ্রামের অদূরে কুমিরার কাছে ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলামের বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন ভারতীয় ২৩ ডিভিশনের ৮৩ ব্রিগেডের যোদ্ধারা। তাঁদের লক্ষ্য ছিল, যত দ্রুত সম্ভব চট্টগ্রাম দখলে নেওয়া। সব মিলিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় এবং ঢাকার পতন তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে রাজপথে। এ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
২৩ অক্টোবর ২০২৪
জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে।
৩ মিনিট আগে
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
১ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ও মাঠপর্যায়ের অফিসের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ৬ জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরও ৮ জনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।
তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।
বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালনের সময় আমাদের ৬ জন বীর শান্তিরক্ষীর শাহাদাত বরণ এবং আরও ৮ জনের আহত হওয়ার সংবাদে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বিপুল অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত; বীরদের এই আত্মত্যাগ একদিকে জাতির গৌরব, অন্যদিকে গভীর বেদনার।
তিনি নিহত শান্তিরক্ষীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। একই সঙ্গে আহত শান্তিরক্ষীদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আহত শান্তিরক্ষীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করতে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। এই দুঃসময়ে সরকার শান্তিরক্ষীদের পরিবারগুলোর পাশে থাকবে।
বিবৃতিতে তিনি এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, শান্তিরক্ষীদের ওপর হামলা আন্তর্জাতিক শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ। তিনি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে শান্তিরক্ষীদের নিরাপত্তা আরও জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
নিহত শান্তিরক্ষীদের মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনা এবং আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যোগাযোগ চালিয়ে যাবে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে রাজপথে। এ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
২৩ অক্টোবর ২০২৪
জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে।
৩ মিনিট আগে
বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
২২ মিনিট আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ও মাঠপর্যায়ের অফিসের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
৩ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ও মাঠপর্যায়ের অফিসের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারকে দেওয়া ইসির এক চিঠিতে বলা হয়, ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারি করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার এবং সিনিয়র সচিবের বিশেষ নিরাপত্তা বিধান প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট বিদ্যমান থাকলেও নির্বাচনকালে তাঁর জন্য অতিরিক্ত আরও একটি গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট প্রয়োজন। এ ছাড়া চারজন নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবের ঢাকার বাসভবন ও অফিসে যাতায়াতসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট দেওয়া প্রয়োজন।
এ ছাড়া মহাপুলিশ পরিদর্শককে দেওয়া অন্য চিঠিতে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারির পর দুর্বৃত্তরা লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিস এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ প্রেক্ষাপটে সারা দেশে মাঠপর্যায়ের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিস এবং উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসসমূহে নির্বাচন-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালপত্র, যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে বিধায় উক্ত অফিসসমূহে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি ও নির্বাচনী মালপত্রের সুরক্ষাসহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক বলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিস, উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসসমূহের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হয় ওই চিঠিতে।
এছাড়া পুলিশ কমিশনার বরাবর দেওয়া আরেকটি চিঠিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য গানম্যান নিয়োগ করতে বলা হয়েছে।
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ও মাঠপর্যায়ের অফিসের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আজ শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনারকে দেওয়া ইসির এক চিঠিতে বলা হয়, ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারি করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার নির্বাচন কমিশনার এবং সিনিয়র সচিবের বিশেষ নিরাপত্তা বিধান প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের জন্য গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট বিদ্যমান থাকলেও নির্বাচনকালে তাঁর জন্য অতিরিক্ত আরও একটি গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট প্রয়োজন। এ ছাড়া চারজন নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিবের ঢাকার বাসভবন ও অফিসে যাতায়াতসহ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য গাড়িসহ পুলিশি এসকর্ট দেওয়া প্রয়োজন।
এ ছাড়া মহাপুলিশ পরিদর্শককে দেওয়া অন্য চিঠিতে বলা হয়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারির পর দুর্বৃত্তরা লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন অফিস এবং পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ প্রেক্ষাপটে সারা দেশে মাঠপর্যায়ের আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিস এবং উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসসমূহে নির্বাচন-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, নির্বাচনী মালপত্র, যন্ত্রপাতি সংরক্ষিত রয়েছে বিধায় উক্ত অফিসসমূহে সংরক্ষিত গুরুত্বপূর্ণ নথি ও নির্বাচনী মালপত্রের সুরক্ষাসহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক বলে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস, সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন অফিস, উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসসমূহের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশিত হয়ে অনুরোধ করা হয় ওই চিঠিতে।
এছাড়া পুলিশ কমিশনার বরাবর দেওয়া আরেকটি চিঠিতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার আঞ্চলিক কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য গানম্যান নিয়োগ করতে বলা হয়েছে।
ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি জোরালো হয়েছে রাজপথে। এ দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবন অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠন।
২৩ অক্টোবর ২০২৪
জাতীয় নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে রাজনৈতিক দলগুলোকে হুঁশিয়ার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে।
৩ মিনিট আগে
বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগেই পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে ওঠে। পূর্ব দিগন্তে দেখা যেতে থাকে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যের আভা। বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকানো যাচ্ছে না বুঝতে পেরে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যে শেষ মরণ আঘাত হানে পাকিস্তানি বাহিনী।
২২ মিনিট আগে
সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের অতর্কিত ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীদের হতাহতের ঘটনায় গভীর শোক ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
১ ঘণ্টা আগে