ফজলুল কবির

এমন তো হয়ই যে কেউ কাউকে এড়াতে চাইছে, কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না। যেখানেই যায়, ছায়া হয়ে অনুসরণ করে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি। থানা-পুলিশ করেও অনেক সময় সুফল পাওয়া যায় না। আগে হয়তো কাজটি করা হতো কোনো ব্যক্তিকে অনুসরণের দায়িত্ব দিয়ে। এখন সেই জমানা নেই। প্রযুক্তিই এখন এই অনুসরণকারীর দায়িত্ব নিয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে স্টকারওয়্যার। সাদা বাংলায় বললে নজরদারি সফটওয়্যার। আপনাকেও এমন কোনো সফটওয়্যার অনুসরণ করছে না তো? চিনবেন কীভাবে?
নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। বলা অবান্তর, এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুর কোনো সম্মতি নেওয়া হয় না।
এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ তো বটেই, অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথিও হাতিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি ফোনে আড়ি পাতাও সম্ভব।
প্রযুক্তির এই যুগে এমন নজরদারি এক ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছেন ইভা গালপেরিন নামের এক নারী। ওই বছর তিনি কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট স্টকারওয়্যার (সিএএস) নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইভা গালপেরিন ধর্ষণের শিকার এমন কিছু নারীর ভোগান্তি সম্পর্কিত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছিলেন, যাঁরা দিনের পর দিন নিপীড়কের হাত থেকে বাঁচার শত চেষ্টা করেও পারছিলেন না। সেই নিপীড়কেরা তাঁদের ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল। এ জন্য তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছিল।
এ বিষয়ে ইভা গালপেরিন বিবিসিকে বলেন, যখন কেউ আপনার অজ্ঞাতে ফোনে প্রবেশ করবে, তখন এর অপব্যবহারের মাত্রা হয় ভয়াবহ রকমের। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ব্যক্তিগত ছবির কথা। এসব ক্ষেত্রে সবার আগে ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নেয় নিপীড়কেরা। এরপর শুরু হয় এসব ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি। পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের সফটওয়্যারের ব্যবহার দেখা গেছে।
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নর্টন ল্যাবের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্টকারওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বেই এই সংকট ক্রমবর্ধমান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে করোনাকালে বিভিন্ন বিধিনিষেধে মানুষের ঘরে বেশি সময় কাটানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ এই সময়ে ঘরে থাকা সঙ্গীর ব্যক্তিগত ডিভাইস হাতের কাছেই পাওয়া গেছে।
বিবিসি জানায়, গত দুই বছর ইভা গালপেরিন বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এ ধরনের সফটওয়্যারকে অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিগুলোর আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই উদাসীন ভাব দেখিয়ে আসছে। তারা স্টকারওয়্যারকে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়্যার হিসেবে দেখতে রাজি নয়, যেহেতু এর বৈধ ব্যবহারও রয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে গুগল অবশেষে বেশ কিছু অ্যাপের বিজ্ঞাপন তাদের সাইট থেকে সরিয়ে নেয়, যেগুলো সঙ্গীর ফোনে নজর রাখার বিষয়ে ওকালতি করে আসছিল। মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের চলাফেরা এবং সাইবার জগতে তাদের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে স্টকারওয়্যারের একরকম চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত এখানে শেষ হয় না। এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিপীড়কেরাই, যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় নারীরা।
এমনই একটি অ্যাপ হচ্ছে স্পাইফোন, যা গত সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। এ ধরনের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ বিভিন্ন সময়ে নেওয়া হলেও এখনো অনলাইনে এমন বহু স্টকারওয়্যার অ্যাপের খোঁজ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে টিউটোরিয়ালও পাওয়া যায় সহজেই।
ইভা গালপেরিনের ভাষ্যমতে, এখন এফটিসি সেই সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করছে, যারা এ ধরনের অ্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তিনি এই প্রযুক্তিকে ‘ভীষণ শক্তিশালী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
নানা মোড়কে থাকতে পারে
দেখতে হয়তো ক্যালকুলেটর অ্যাপের মতো, কিন্তু কাজ করে নজরদারির—এমনও হতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন একটি উদাহরণ উল্লেখ করে বলা হয়, গুগল অ্যাপ স্টোর থেকেই বিনা মূল্যের একটি কিলগার অ্যাপ নামিয়ে দেখা গেছে, তা ক্যালকুলেটর বা ক্যালেন্ডারের ভেক ধরে থাকছে। আর নামিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ফোনে চাপা প্রতিটি বাটনের খোঁজ রাখছে সে। মূলত এ ধরনের অ্যাপ অভিভাবকেরা সন্তানের ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করেন। কিন্তু এগুলো যে কারও ব্যক্তিগত জীবন বিষিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আগে এ ধরনের অ্যাপের সংখ্যা কয়েক শ হলেও এখন এমন অ্যাপ রয়েছে হাজার হাজার।
এ ধরনের অ্যাপের নাম সাধারণত খুব নিরীহ ধাঁচের হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে ‘মোবাইলটুল’ ‘এজেন্ট’, ‘সারবেরাস’ ইত্যাদি নামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফটিসি ‘স্পাইফোন’ নামের একটি অ্যাপ বাজারে ছাড়ার দায়ে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাপোর্ট কিংকে নিষিদ্ধ করেছে।
প্রযুক্তিবান্ধব হলেই কি চেনা যাবে?
এই অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করা, যাতে এগুলো সহজে শনাক্ত করা না যায়। এমনকি প্রযুক্তিবান্ধব অনেক ব্যক্তির পক্ষেও এগুলোর উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব নয়। এমনই এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। সেখানে তাঁর ছদ্মনাম হিসেবে শার্লট বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
বিবিসিকে শার্লট বলেন, বাগ্দানের পর থেকেই তিনি বেশ কিছু উদ্ভট বিষয় লক্ষ করতে শুরু করেন। ফোনের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হওয়া, ফোন হঠাৎ করেই রিস্ট্রার্ট নেওয়া থেকে শুরু করে নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে তাঁর সঙ্গে। এ দুটিই নজরদারি সফটওয়্যারের আওতায় পড়ে যাওয়ার প্রাথমিক ইঙ্গিত। কিন্তু এই ইঙ্গিতও যথেষ্ট ছিল না বিষয়টি বোঝার জন্য। তাঁর সঙ্গীই তাঁকে একসময় জানান, তিনি সব সময় জানতেন শার্লট কখন কোথায় থাকেন।
করণীয় জানতে শার্লট পরে হ্যাকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর সঙ্গীও এমন একটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনিও এর কিছু ধরনধারণ জানতেন। কিন্তু যখন আলাপ করলেন, দেখলেন সঙ্গীর ওপর নজর রাখার বিষয়ে সম্মতি প্রদানের একটি ভয়াবহ সংস্কৃতি রয়েছে। এটি কোনো অপরাধই যেন নয়। এটি তাঁকে ভীষণভাবে আহত করে। এ থেকেই তিনি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার আগ্রহ পান, যেন এই খাতকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে কাজ করা যায়।
কীভাবে শুরু হয়?
ইন্টারনেট ঘাঁটলে এমন বহু সফটওয়্যার-সেবার খোঁজ পাওয়া যাবে, যা শুধু ফোন নম্বর পেলেই লক্ষ্যবস্তুর ওপর নজরদারি শুরু করতে পারে বলে দাবি করে। এ জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কয়েক শ ডলার মাত্র ব্যয় করতে হয়। এসব সেবাদাতা এমন সব দাবি করে, যে ধরনের নজরদারির সক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে রয়েছে। পেগাসাসের কল্যাণে এই সক্ষমতার মাত্রা নিয়ে কারও অন্তত সন্দেহ থাকার কথা নয়। যদিও এগুলো ঠিকঠাক কাজ করে কি না, এ নিয়ে সংশয়ও রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।
শার্লটের ভাষ্যমতে, এ ধরনের নজরদারি সফটওয়্যার সাধারণত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক সময় কিছু মেসেজ পাঠিয়ে কোনো একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হয় অথবা নানা ধরনের চটকদার অ্যাপের মাধ্যমেও এটি ঘটতে পারে। এমন কিছু শনাক্ত করা মাত্রই তা ডিলিট করার পরামর্শ দেন তিনি। শার্লট বলেন, ‘যত ধরনের সতর্কতাই দিক না কেন, ডিলিটের ক্ষেত্রে ঘাবড়াবেন না।’
খেয়াল রাখুন
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে—
১. আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে কি না। স্টকারওয়্যার আপনার অজান্তে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বলেই হয়তো এমনটা হচ্ছে।
২. ডিভাইসটি বিশ্বস্ত স্টকারওয়্যার ডিটেক্টর দিয়ে স্ক্যান করুন। এ ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যারবাইটস, সারটো, নর্টনলাইফলক, লুকআউট সহায়ক হতে পারে।
৩. ডিভাইসে থাকা প্রতিটি অ্যাপ লক্ষ করুন। এমন কিছু কি আছে, যা আপনি ইনস্টল করেননি। সন্দেহজনক মনে হলে ডিলিটের আগে ভেবে নিন। এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় অভিযোগ জানাতে চাইলে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
৪. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো চিহ্নিত করুন।
করণীয় কী?
ভুক্তভোগী ও পরে সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক হওয়া শার্লট এ ধরনের সংকটে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেন—
১. প্রথম করণীয় হিসেবে সংশ্লিষ্ট অ্যাপ বা সফটওয়্যারটি ডিলিট করতে হবে।
২. ডিলিটের ক্ষেত্রে তথ্য হারিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে। এগুলোতে ঘাবড়ালে চলবে না।
৩. যদি কোনোভাবেই ডিলিট করা না যায়, তবে ডিভাইসটি ফ্যাক্টরি সেটআপ দিতে হবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পাল্টাতে হবে। একই সঙ্গে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করতে হবে।
৫. ঘুরেফিরে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৬. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো বিযুক্ত করুন।
৭. সফটওয়্যার আপডেট করুন। অ্যাপল ও গুগল কিছুদিন পরপরই আপডেট অফার করে। এর মাধ্যমেও এ ধরনের সফটওয়্যারের হাত থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
আইনি ব্যবস্থা
এ তো গেল ব্যক্তিগত পর্যায়ে করণীয়। আইনানুগ পথে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
অধিকাংশ দেশেই এখন বিনা সম্মতিতে এ ধরনের নজরদারি রোধে আইন রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বিবিসির প্রতিবেদনে ফ্রান্সের কথা বলা হয়েছে। ২০২০ সালে দেশটি পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন করেছে, যেখানে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে গোপন নজরদারির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কারও সম্মতি ছাড়া তাঁর অবস্থান জানতে নজর রাখলে তাঁকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সেই আইনে। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এক বছরের জেল ও ৫১ হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে। আর এমন কাজ কারও জীবনসঙ্গী করলে এই জরিমানার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
আইনও কি পারবে সমাধান দিতে?
ইভা গালপেরিন অন্তত এ ধরনের বিষয় পুরোপুরি আইনের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নন। তাঁর দৃষ্টিতে এ ধরনের সংকটের সমাধান শুধু আইন করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তিনি গুগল ও অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি-মোঘলদের সহায়তা চান। তাঁর ভাষ্যমতে, এ দুই প্রতিষ্ঠান চাইলে এ ধরনের অ্যাপের বিক্রি কার্যত অসম্ভব করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে এ ধরনের অভিযোগকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে গেলে তারা একে উড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এমনকি হাস্যরসও করা হয় বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু ভুক্তভোগীর কাছে এটি ভীষণভাবে পীড়াদায়ক। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এ ধরনের ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে আলাদা সংস্থা গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের করনেল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এমন এক প্রতিষ্ঠানের নাম ক্লিনিক টু অ্যান্ড টেক অ্যাবিউজ (সিইটিএ)।
সিইটিএ সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কাজ করে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাকে একীভূত করে কাজ করে। এমন সংকট থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগীদের নানা ধরনের পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
সিইটিএর সঙ্গে কাজ করেন রোসানা বেলিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ফোন থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ আমরা দিই না। তার আগে কিছু নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে নেওয়া হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই এমনটা করা হয়। দেখা গেছে, হুট করেই এ ধরনের কোনো সফটওয়্যার অপসারণ করা হলে নিপীড়ক সহিংস হয়ে ওঠে। তারা তখন নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এ ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।’

এমন তো হয়ই যে কেউ কাউকে এড়াতে চাইছে, কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না। যেখানেই যায়, ছায়া হয়ে অনুসরণ করে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি। থানা-পুলিশ করেও অনেক সময় সুফল পাওয়া যায় না। আগে হয়তো কাজটি করা হতো কোনো ব্যক্তিকে অনুসরণের দায়িত্ব দিয়ে। এখন সেই জমানা নেই। প্রযুক্তিই এখন এই অনুসরণকারীর দায়িত্ব নিয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে স্টকারওয়্যার। সাদা বাংলায় বললে নজরদারি সফটওয়্যার। আপনাকেও এমন কোনো সফটওয়্যার অনুসরণ করছে না তো? চিনবেন কীভাবে?
নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। বলা অবান্তর, এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুর কোনো সম্মতি নেওয়া হয় না।
এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ তো বটেই, অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথিও হাতিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি ফোনে আড়ি পাতাও সম্ভব।
প্রযুক্তির এই যুগে এমন নজরদারি এক ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছেন ইভা গালপেরিন নামের এক নারী। ওই বছর তিনি কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট স্টকারওয়্যার (সিএএস) নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইভা গালপেরিন ধর্ষণের শিকার এমন কিছু নারীর ভোগান্তি সম্পর্কিত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছিলেন, যাঁরা দিনের পর দিন নিপীড়কের হাত থেকে বাঁচার শত চেষ্টা করেও পারছিলেন না। সেই নিপীড়কেরা তাঁদের ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল। এ জন্য তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছিল।
এ বিষয়ে ইভা গালপেরিন বিবিসিকে বলেন, যখন কেউ আপনার অজ্ঞাতে ফোনে প্রবেশ করবে, তখন এর অপব্যবহারের মাত্রা হয় ভয়াবহ রকমের। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ব্যক্তিগত ছবির কথা। এসব ক্ষেত্রে সবার আগে ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নেয় নিপীড়কেরা। এরপর শুরু হয় এসব ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি। পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের সফটওয়্যারের ব্যবহার দেখা গেছে।
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নর্টন ল্যাবের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্টকারওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বেই এই সংকট ক্রমবর্ধমান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে করোনাকালে বিভিন্ন বিধিনিষেধে মানুষের ঘরে বেশি সময় কাটানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ এই সময়ে ঘরে থাকা সঙ্গীর ব্যক্তিগত ডিভাইস হাতের কাছেই পাওয়া গেছে।
বিবিসি জানায়, গত দুই বছর ইভা গালপেরিন বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এ ধরনের সফটওয়্যারকে অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিগুলোর আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই উদাসীন ভাব দেখিয়ে আসছে। তারা স্টকারওয়্যারকে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়্যার হিসেবে দেখতে রাজি নয়, যেহেতু এর বৈধ ব্যবহারও রয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে গুগল অবশেষে বেশ কিছু অ্যাপের বিজ্ঞাপন তাদের সাইট থেকে সরিয়ে নেয়, যেগুলো সঙ্গীর ফোনে নজর রাখার বিষয়ে ওকালতি করে আসছিল। মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের চলাফেরা এবং সাইবার জগতে তাদের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে স্টকারওয়্যারের একরকম চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত এখানে শেষ হয় না। এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিপীড়কেরাই, যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় নারীরা।
এমনই একটি অ্যাপ হচ্ছে স্পাইফোন, যা গত সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। এ ধরনের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ বিভিন্ন সময়ে নেওয়া হলেও এখনো অনলাইনে এমন বহু স্টকারওয়্যার অ্যাপের খোঁজ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে টিউটোরিয়ালও পাওয়া যায় সহজেই।
ইভা গালপেরিনের ভাষ্যমতে, এখন এফটিসি সেই সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করছে, যারা এ ধরনের অ্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তিনি এই প্রযুক্তিকে ‘ভীষণ শক্তিশালী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
নানা মোড়কে থাকতে পারে
দেখতে হয়তো ক্যালকুলেটর অ্যাপের মতো, কিন্তু কাজ করে নজরদারির—এমনও হতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন একটি উদাহরণ উল্লেখ করে বলা হয়, গুগল অ্যাপ স্টোর থেকেই বিনা মূল্যের একটি কিলগার অ্যাপ নামিয়ে দেখা গেছে, তা ক্যালকুলেটর বা ক্যালেন্ডারের ভেক ধরে থাকছে। আর নামিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ফোনে চাপা প্রতিটি বাটনের খোঁজ রাখছে সে। মূলত এ ধরনের অ্যাপ অভিভাবকেরা সন্তানের ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করেন। কিন্তু এগুলো যে কারও ব্যক্তিগত জীবন বিষিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আগে এ ধরনের অ্যাপের সংখ্যা কয়েক শ হলেও এখন এমন অ্যাপ রয়েছে হাজার হাজার।
এ ধরনের অ্যাপের নাম সাধারণত খুব নিরীহ ধাঁচের হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে ‘মোবাইলটুল’ ‘এজেন্ট’, ‘সারবেরাস’ ইত্যাদি নামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফটিসি ‘স্পাইফোন’ নামের একটি অ্যাপ বাজারে ছাড়ার দায়ে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাপোর্ট কিংকে নিষিদ্ধ করেছে।
প্রযুক্তিবান্ধব হলেই কি চেনা যাবে?
এই অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করা, যাতে এগুলো সহজে শনাক্ত করা না যায়। এমনকি প্রযুক্তিবান্ধব অনেক ব্যক্তির পক্ষেও এগুলোর উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব নয়। এমনই এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। সেখানে তাঁর ছদ্মনাম হিসেবে শার্লট বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
বিবিসিকে শার্লট বলেন, বাগ্দানের পর থেকেই তিনি বেশ কিছু উদ্ভট বিষয় লক্ষ করতে শুরু করেন। ফোনের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হওয়া, ফোন হঠাৎ করেই রিস্ট্রার্ট নেওয়া থেকে শুরু করে নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে তাঁর সঙ্গে। এ দুটিই নজরদারি সফটওয়্যারের আওতায় পড়ে যাওয়ার প্রাথমিক ইঙ্গিত। কিন্তু এই ইঙ্গিতও যথেষ্ট ছিল না বিষয়টি বোঝার জন্য। তাঁর সঙ্গীই তাঁকে একসময় জানান, তিনি সব সময় জানতেন শার্লট কখন কোথায় থাকেন।
করণীয় জানতে শার্লট পরে হ্যাকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর সঙ্গীও এমন একটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনিও এর কিছু ধরনধারণ জানতেন। কিন্তু যখন আলাপ করলেন, দেখলেন সঙ্গীর ওপর নজর রাখার বিষয়ে সম্মতি প্রদানের একটি ভয়াবহ সংস্কৃতি রয়েছে। এটি কোনো অপরাধই যেন নয়। এটি তাঁকে ভীষণভাবে আহত করে। এ থেকেই তিনি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার আগ্রহ পান, যেন এই খাতকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে কাজ করা যায়।
কীভাবে শুরু হয়?
ইন্টারনেট ঘাঁটলে এমন বহু সফটওয়্যার-সেবার খোঁজ পাওয়া যাবে, যা শুধু ফোন নম্বর পেলেই লক্ষ্যবস্তুর ওপর নজরদারি শুরু করতে পারে বলে দাবি করে। এ জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কয়েক শ ডলার মাত্র ব্যয় করতে হয়। এসব সেবাদাতা এমন সব দাবি করে, যে ধরনের নজরদারির সক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে রয়েছে। পেগাসাসের কল্যাণে এই সক্ষমতার মাত্রা নিয়ে কারও অন্তত সন্দেহ থাকার কথা নয়। যদিও এগুলো ঠিকঠাক কাজ করে কি না, এ নিয়ে সংশয়ও রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।
শার্লটের ভাষ্যমতে, এ ধরনের নজরদারি সফটওয়্যার সাধারণত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক সময় কিছু মেসেজ পাঠিয়ে কোনো একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হয় অথবা নানা ধরনের চটকদার অ্যাপের মাধ্যমেও এটি ঘটতে পারে। এমন কিছু শনাক্ত করা মাত্রই তা ডিলিট করার পরামর্শ দেন তিনি। শার্লট বলেন, ‘যত ধরনের সতর্কতাই দিক না কেন, ডিলিটের ক্ষেত্রে ঘাবড়াবেন না।’
খেয়াল রাখুন
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে—
১. আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে কি না। স্টকারওয়্যার আপনার অজান্তে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বলেই হয়তো এমনটা হচ্ছে।
২. ডিভাইসটি বিশ্বস্ত স্টকারওয়্যার ডিটেক্টর দিয়ে স্ক্যান করুন। এ ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যারবাইটস, সারটো, নর্টনলাইফলক, লুকআউট সহায়ক হতে পারে।
৩. ডিভাইসে থাকা প্রতিটি অ্যাপ লক্ষ করুন। এমন কিছু কি আছে, যা আপনি ইনস্টল করেননি। সন্দেহজনক মনে হলে ডিলিটের আগে ভেবে নিন। এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় অভিযোগ জানাতে চাইলে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
৪. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো চিহ্নিত করুন।
করণীয় কী?
ভুক্তভোগী ও পরে সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক হওয়া শার্লট এ ধরনের সংকটে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেন—
১. প্রথম করণীয় হিসেবে সংশ্লিষ্ট অ্যাপ বা সফটওয়্যারটি ডিলিট করতে হবে।
২. ডিলিটের ক্ষেত্রে তথ্য হারিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে। এগুলোতে ঘাবড়ালে চলবে না।
৩. যদি কোনোভাবেই ডিলিট করা না যায়, তবে ডিভাইসটি ফ্যাক্টরি সেটআপ দিতে হবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পাল্টাতে হবে। একই সঙ্গে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করতে হবে।
৫. ঘুরেফিরে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৬. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো বিযুক্ত করুন।
৭. সফটওয়্যার আপডেট করুন। অ্যাপল ও গুগল কিছুদিন পরপরই আপডেট অফার করে। এর মাধ্যমেও এ ধরনের সফটওয়্যারের হাত থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
আইনি ব্যবস্থা
এ তো গেল ব্যক্তিগত পর্যায়ে করণীয়। আইনানুগ পথে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
অধিকাংশ দেশেই এখন বিনা সম্মতিতে এ ধরনের নজরদারি রোধে আইন রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বিবিসির প্রতিবেদনে ফ্রান্সের কথা বলা হয়েছে। ২০২০ সালে দেশটি পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন করেছে, যেখানে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে গোপন নজরদারির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কারও সম্মতি ছাড়া তাঁর অবস্থান জানতে নজর রাখলে তাঁকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সেই আইনে। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এক বছরের জেল ও ৫১ হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে। আর এমন কাজ কারও জীবনসঙ্গী করলে এই জরিমানার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
আইনও কি পারবে সমাধান দিতে?
ইভা গালপেরিন অন্তত এ ধরনের বিষয় পুরোপুরি আইনের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নন। তাঁর দৃষ্টিতে এ ধরনের সংকটের সমাধান শুধু আইন করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তিনি গুগল ও অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি-মোঘলদের সহায়তা চান। তাঁর ভাষ্যমতে, এ দুই প্রতিষ্ঠান চাইলে এ ধরনের অ্যাপের বিক্রি কার্যত অসম্ভব করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে এ ধরনের অভিযোগকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে গেলে তারা একে উড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এমনকি হাস্যরসও করা হয় বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু ভুক্তভোগীর কাছে এটি ভীষণভাবে পীড়াদায়ক। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এ ধরনের ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে আলাদা সংস্থা গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের করনেল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এমন এক প্রতিষ্ঠানের নাম ক্লিনিক টু অ্যান্ড টেক অ্যাবিউজ (সিইটিএ)।
সিইটিএ সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কাজ করে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাকে একীভূত করে কাজ করে। এমন সংকট থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগীদের নানা ধরনের পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
সিইটিএর সঙ্গে কাজ করেন রোসানা বেলিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ফোন থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ আমরা দিই না। তার আগে কিছু নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে নেওয়া হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই এমনটা করা হয়। দেখা গেছে, হুট করেই এ ধরনের কোনো সফটওয়্যার অপসারণ করা হলে নিপীড়ক সহিংস হয়ে ওঠে। তারা তখন নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এ ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।’
ফজলুল কবির

এমন তো হয়ই যে কেউ কাউকে এড়াতে চাইছে, কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না। যেখানেই যায়, ছায়া হয়ে অনুসরণ করে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি। থানা-পুলিশ করেও অনেক সময় সুফল পাওয়া যায় না। আগে হয়তো কাজটি করা হতো কোনো ব্যক্তিকে অনুসরণের দায়িত্ব দিয়ে। এখন সেই জমানা নেই। প্রযুক্তিই এখন এই অনুসরণকারীর দায়িত্ব নিয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে স্টকারওয়্যার। সাদা বাংলায় বললে নজরদারি সফটওয়্যার। আপনাকেও এমন কোনো সফটওয়্যার অনুসরণ করছে না তো? চিনবেন কীভাবে?
নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। বলা অবান্তর, এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুর কোনো সম্মতি নেওয়া হয় না।
এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ তো বটেই, অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথিও হাতিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি ফোনে আড়ি পাতাও সম্ভব।
প্রযুক্তির এই যুগে এমন নজরদারি এক ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছেন ইভা গালপেরিন নামের এক নারী। ওই বছর তিনি কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট স্টকারওয়্যার (সিএএস) নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইভা গালপেরিন ধর্ষণের শিকার এমন কিছু নারীর ভোগান্তি সম্পর্কিত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছিলেন, যাঁরা দিনের পর দিন নিপীড়কের হাত থেকে বাঁচার শত চেষ্টা করেও পারছিলেন না। সেই নিপীড়কেরা তাঁদের ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল। এ জন্য তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছিল।
এ বিষয়ে ইভা গালপেরিন বিবিসিকে বলেন, যখন কেউ আপনার অজ্ঞাতে ফোনে প্রবেশ করবে, তখন এর অপব্যবহারের মাত্রা হয় ভয়াবহ রকমের। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ব্যক্তিগত ছবির কথা। এসব ক্ষেত্রে সবার আগে ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নেয় নিপীড়কেরা। এরপর শুরু হয় এসব ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি। পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের সফটওয়্যারের ব্যবহার দেখা গেছে।
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নর্টন ল্যাবের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্টকারওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বেই এই সংকট ক্রমবর্ধমান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে করোনাকালে বিভিন্ন বিধিনিষেধে মানুষের ঘরে বেশি সময় কাটানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ এই সময়ে ঘরে থাকা সঙ্গীর ব্যক্তিগত ডিভাইস হাতের কাছেই পাওয়া গেছে।
বিবিসি জানায়, গত দুই বছর ইভা গালপেরিন বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এ ধরনের সফটওয়্যারকে অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিগুলোর আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই উদাসীন ভাব দেখিয়ে আসছে। তারা স্টকারওয়্যারকে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়্যার হিসেবে দেখতে রাজি নয়, যেহেতু এর বৈধ ব্যবহারও রয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে গুগল অবশেষে বেশ কিছু অ্যাপের বিজ্ঞাপন তাদের সাইট থেকে সরিয়ে নেয়, যেগুলো সঙ্গীর ফোনে নজর রাখার বিষয়ে ওকালতি করে আসছিল। মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের চলাফেরা এবং সাইবার জগতে তাদের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে স্টকারওয়্যারের একরকম চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত এখানে শেষ হয় না। এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিপীড়কেরাই, যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় নারীরা।
এমনই একটি অ্যাপ হচ্ছে স্পাইফোন, যা গত সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। এ ধরনের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ বিভিন্ন সময়ে নেওয়া হলেও এখনো অনলাইনে এমন বহু স্টকারওয়্যার অ্যাপের খোঁজ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে টিউটোরিয়ালও পাওয়া যায় সহজেই।
ইভা গালপেরিনের ভাষ্যমতে, এখন এফটিসি সেই সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করছে, যারা এ ধরনের অ্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তিনি এই প্রযুক্তিকে ‘ভীষণ শক্তিশালী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
নানা মোড়কে থাকতে পারে
দেখতে হয়তো ক্যালকুলেটর অ্যাপের মতো, কিন্তু কাজ করে নজরদারির—এমনও হতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন একটি উদাহরণ উল্লেখ করে বলা হয়, গুগল অ্যাপ স্টোর থেকেই বিনা মূল্যের একটি কিলগার অ্যাপ নামিয়ে দেখা গেছে, তা ক্যালকুলেটর বা ক্যালেন্ডারের ভেক ধরে থাকছে। আর নামিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ফোনে চাপা প্রতিটি বাটনের খোঁজ রাখছে সে। মূলত এ ধরনের অ্যাপ অভিভাবকেরা সন্তানের ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করেন। কিন্তু এগুলো যে কারও ব্যক্তিগত জীবন বিষিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আগে এ ধরনের অ্যাপের সংখ্যা কয়েক শ হলেও এখন এমন অ্যাপ রয়েছে হাজার হাজার।
এ ধরনের অ্যাপের নাম সাধারণত খুব নিরীহ ধাঁচের হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে ‘মোবাইলটুল’ ‘এজেন্ট’, ‘সারবেরাস’ ইত্যাদি নামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফটিসি ‘স্পাইফোন’ নামের একটি অ্যাপ বাজারে ছাড়ার দায়ে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাপোর্ট কিংকে নিষিদ্ধ করেছে।
প্রযুক্তিবান্ধব হলেই কি চেনা যাবে?
এই অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করা, যাতে এগুলো সহজে শনাক্ত করা না যায়। এমনকি প্রযুক্তিবান্ধব অনেক ব্যক্তির পক্ষেও এগুলোর উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব নয়। এমনই এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। সেখানে তাঁর ছদ্মনাম হিসেবে শার্লট বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
বিবিসিকে শার্লট বলেন, বাগ্দানের পর থেকেই তিনি বেশ কিছু উদ্ভট বিষয় লক্ষ করতে শুরু করেন। ফোনের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হওয়া, ফোন হঠাৎ করেই রিস্ট্রার্ট নেওয়া থেকে শুরু করে নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে তাঁর সঙ্গে। এ দুটিই নজরদারি সফটওয়্যারের আওতায় পড়ে যাওয়ার প্রাথমিক ইঙ্গিত। কিন্তু এই ইঙ্গিতও যথেষ্ট ছিল না বিষয়টি বোঝার জন্য। তাঁর সঙ্গীই তাঁকে একসময় জানান, তিনি সব সময় জানতেন শার্লট কখন কোথায় থাকেন।
করণীয় জানতে শার্লট পরে হ্যাকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর সঙ্গীও এমন একটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনিও এর কিছু ধরনধারণ জানতেন। কিন্তু যখন আলাপ করলেন, দেখলেন সঙ্গীর ওপর নজর রাখার বিষয়ে সম্মতি প্রদানের একটি ভয়াবহ সংস্কৃতি রয়েছে। এটি কোনো অপরাধই যেন নয়। এটি তাঁকে ভীষণভাবে আহত করে। এ থেকেই তিনি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার আগ্রহ পান, যেন এই খাতকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে কাজ করা যায়।
কীভাবে শুরু হয়?
ইন্টারনেট ঘাঁটলে এমন বহু সফটওয়্যার-সেবার খোঁজ পাওয়া যাবে, যা শুধু ফোন নম্বর পেলেই লক্ষ্যবস্তুর ওপর নজরদারি শুরু করতে পারে বলে দাবি করে। এ জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কয়েক শ ডলার মাত্র ব্যয় করতে হয়। এসব সেবাদাতা এমন সব দাবি করে, যে ধরনের নজরদারির সক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে রয়েছে। পেগাসাসের কল্যাণে এই সক্ষমতার মাত্রা নিয়ে কারও অন্তত সন্দেহ থাকার কথা নয়। যদিও এগুলো ঠিকঠাক কাজ করে কি না, এ নিয়ে সংশয়ও রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।
শার্লটের ভাষ্যমতে, এ ধরনের নজরদারি সফটওয়্যার সাধারণত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক সময় কিছু মেসেজ পাঠিয়ে কোনো একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হয় অথবা নানা ধরনের চটকদার অ্যাপের মাধ্যমেও এটি ঘটতে পারে। এমন কিছু শনাক্ত করা মাত্রই তা ডিলিট করার পরামর্শ দেন তিনি। শার্লট বলেন, ‘যত ধরনের সতর্কতাই দিক না কেন, ডিলিটের ক্ষেত্রে ঘাবড়াবেন না।’
খেয়াল রাখুন
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে—
১. আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে কি না। স্টকারওয়্যার আপনার অজান্তে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বলেই হয়তো এমনটা হচ্ছে।
২. ডিভাইসটি বিশ্বস্ত স্টকারওয়্যার ডিটেক্টর দিয়ে স্ক্যান করুন। এ ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যারবাইটস, সারটো, নর্টনলাইফলক, লুকআউট সহায়ক হতে পারে।
৩. ডিভাইসে থাকা প্রতিটি অ্যাপ লক্ষ করুন। এমন কিছু কি আছে, যা আপনি ইনস্টল করেননি। সন্দেহজনক মনে হলে ডিলিটের আগে ভেবে নিন। এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় অভিযোগ জানাতে চাইলে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
৪. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো চিহ্নিত করুন।
করণীয় কী?
ভুক্তভোগী ও পরে সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক হওয়া শার্লট এ ধরনের সংকটে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেন—
১. প্রথম করণীয় হিসেবে সংশ্লিষ্ট অ্যাপ বা সফটওয়্যারটি ডিলিট করতে হবে।
২. ডিলিটের ক্ষেত্রে তথ্য হারিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে। এগুলোতে ঘাবড়ালে চলবে না।
৩. যদি কোনোভাবেই ডিলিট করা না যায়, তবে ডিভাইসটি ফ্যাক্টরি সেটআপ দিতে হবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পাল্টাতে হবে। একই সঙ্গে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করতে হবে।
৫. ঘুরেফিরে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৬. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো বিযুক্ত করুন।
৭. সফটওয়্যার আপডেট করুন। অ্যাপল ও গুগল কিছুদিন পরপরই আপডেট অফার করে। এর মাধ্যমেও এ ধরনের সফটওয়্যারের হাত থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
আইনি ব্যবস্থা
এ তো গেল ব্যক্তিগত পর্যায়ে করণীয়। আইনানুগ পথে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
অধিকাংশ দেশেই এখন বিনা সম্মতিতে এ ধরনের নজরদারি রোধে আইন রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বিবিসির প্রতিবেদনে ফ্রান্সের কথা বলা হয়েছে। ২০২০ সালে দেশটি পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন করেছে, যেখানে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে গোপন নজরদারির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কারও সম্মতি ছাড়া তাঁর অবস্থান জানতে নজর রাখলে তাঁকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সেই আইনে। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এক বছরের জেল ও ৫১ হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে। আর এমন কাজ কারও জীবনসঙ্গী করলে এই জরিমানার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
আইনও কি পারবে সমাধান দিতে?
ইভা গালপেরিন অন্তত এ ধরনের বিষয় পুরোপুরি আইনের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নন। তাঁর দৃষ্টিতে এ ধরনের সংকটের সমাধান শুধু আইন করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তিনি গুগল ও অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি-মোঘলদের সহায়তা চান। তাঁর ভাষ্যমতে, এ দুই প্রতিষ্ঠান চাইলে এ ধরনের অ্যাপের বিক্রি কার্যত অসম্ভব করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে এ ধরনের অভিযোগকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে গেলে তারা একে উড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এমনকি হাস্যরসও করা হয় বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু ভুক্তভোগীর কাছে এটি ভীষণভাবে পীড়াদায়ক। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এ ধরনের ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে আলাদা সংস্থা গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের করনেল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এমন এক প্রতিষ্ঠানের নাম ক্লিনিক টু অ্যান্ড টেক অ্যাবিউজ (সিইটিএ)।
সিইটিএ সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কাজ করে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাকে একীভূত করে কাজ করে। এমন সংকট থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগীদের নানা ধরনের পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
সিইটিএর সঙ্গে কাজ করেন রোসানা বেলিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ফোন থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ আমরা দিই না। তার আগে কিছু নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে নেওয়া হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই এমনটা করা হয়। দেখা গেছে, হুট করেই এ ধরনের কোনো সফটওয়্যার অপসারণ করা হলে নিপীড়ক সহিংস হয়ে ওঠে। তারা তখন নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এ ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।’

এমন তো হয়ই যে কেউ কাউকে এড়াতে চাইছে, কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না। যেখানেই যায়, ছায়া হয়ে অনুসরণ করে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি। থানা-পুলিশ করেও অনেক সময় সুফল পাওয়া যায় না। আগে হয়তো কাজটি করা হতো কোনো ব্যক্তিকে অনুসরণের দায়িত্ব দিয়ে। এখন সেই জমানা নেই। প্রযুক্তিই এখন এই অনুসরণকারীর দায়িত্ব নিয়েছে, যাকে বলা হচ্ছে স্টকারওয়্যার। সাদা বাংলায় বললে নজরদারি সফটওয়্যার। আপনাকেও এমন কোনো সফটওয়্যার অনুসরণ করছে না তো? চিনবেন কীভাবে?
নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। বলা অবান্তর, এ ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্তুর কোনো সম্মতি নেওয়া হয় না।
এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ তো বটেই, অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথিও হাতিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি ফোনে আড়ি পাতাও সম্ভব।
প্রযুক্তির এই যুগে এমন নজরদারি এক ভয়াবহ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ সাল থেকে কাজ করছেন ইভা গালপেরিন নামের এক নারী। ওই বছর তিনি কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট স্টকারওয়্যার (সিএএস) নামের একটি সংগঠন গড়ে তোলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ইভা গালপেরিন ধর্ষণের শিকার এমন কিছু নারীর ভোগান্তি সম্পর্কিত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছিলেন, যাঁরা দিনের পর দিন নিপীড়কের হাত থেকে বাঁচার শত চেষ্টা করেও পারছিলেন না। সেই নিপীড়কেরা তাঁদের ছায়ার মতো অনুসরণ করছিল। এ জন্য তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করছিল।
এ বিষয়ে ইভা গালপেরিন বিবিসিকে বলেন, যখন কেউ আপনার অজ্ঞাতে ফোনে প্রবেশ করবে, তখন এর অপব্যবহারের মাত্রা হয় ভয়াবহ রকমের। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ব্যক্তিগত ছবির কথা। এসব ক্ষেত্রে সবার আগে ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নেয় নিপীড়কেরা। এরপর শুরু হয় এসব ছবি ফাঁস করে দেওয়ার হুমকি। পারিবারিক নির্যাতনের ঘটনাগুলোর একটি বড় অংশের ক্ষেত্রেই এ ধরনের সফটওয়্যারের ব্যবহার দেখা গেছে।
সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নর্টন ল্যাবের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, স্টকারওয়্যারের ব্যবহার বৃদ্ধি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা বিশ্বেই এই সংকট ক্রমবর্ধমান। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ে এ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৩ শতাংশ। এর কারণ হিসেবে করোনাকালে বিভিন্ন বিধিনিষেধে মানুষের ঘরে বেশি সময় কাটানোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কারণ এই সময়ে ঘরে থাকা সঙ্গীর ব্যক্তিগত ডিভাইস হাতের কাছেই পাওয়া গেছে।
বিবিসি জানায়, গত দুই বছর ইভা গালপেরিন বিভিন্ন অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, এ ধরনের সফটওয়্যারকে অ্যান্টিভাইরাস কোম্পানিগুলোর আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। কিন্তু এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো অনেকটাই উদাসীন ভাব দেখিয়ে আসছে। তারা স্টকারওয়্যারকে অনাকাঙ্ক্ষিত প্রোগ্রাম বা ম্যালওয়্যার হিসেবে দেখতে রাজি নয়, যেহেতু এর বৈধ ব্যবহারও রয়েছে।
চলতি বছরের অক্টোবরে গুগল অবশেষে বেশ কিছু অ্যাপের বিজ্ঞাপন তাদের সাইট থেকে সরিয়ে নেয়, যেগুলো সঙ্গীর ফোনে নজর রাখার বিষয়ে ওকালতি করে আসছিল। মূলত অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের চলাফেরা এবং সাইবার জগতে তাদের কার্যক্রমের ওপর নজর রাখার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে স্টকারওয়্যারের একরকম চাহিদা রয়েছে। কিন্তু এটি শেষ পর্যন্ত এখানে শেষ হয় না। এগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করে নিপীড়কেরাই, যার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হয় নারীরা।
এমনই একটি অ্যাপ হচ্ছে স্পাইফোন, যা গত সেপ্টেম্বরে নিষিদ্ধ করেছে মার্কিন ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি)। এ ধরনের কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ বিভিন্ন সময়ে নেওয়া হলেও এখনো অনলাইনে এমন বহু স্টকারওয়্যার অ্যাপের খোঁজ পাওয়া যায়। শুধু তাই নয়, এগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি সম্পর্কে টিউটোরিয়ালও পাওয়া যায় সহজেই।
ইভা গালপেরিনের ভাষ্যমতে, এখন এফটিসি সেই সব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তদন্ত করছে, যারা এ ধরনের অ্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত। তিনি এই প্রযুক্তিকে ‘ভীষণ শক্তিশালী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
নানা মোড়কে থাকতে পারে
দেখতে হয়তো ক্যালকুলেটর অ্যাপের মতো, কিন্তু কাজ করে নজরদারির—এমনও হতে পারে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এমন একটি উদাহরণ উল্লেখ করে বলা হয়, গুগল অ্যাপ স্টোর থেকেই বিনা মূল্যের একটি কিলগার অ্যাপ নামিয়ে দেখা গেছে, তা ক্যালকুলেটর বা ক্যালেন্ডারের ভেক ধরে থাকছে। আর নামিয়ে নেওয়ার পর থেকেই ফোনে চাপা প্রতিটি বাটনের খোঁজ রাখছে সে। মূলত এ ধরনের অ্যাপ অভিভাবকেরা সন্তানের ওপর নজর রাখতে ব্যবহার করেন। কিন্তু এগুলো যে কারও ব্যক্তিগত জীবন বিষিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট। আগে এ ধরনের অ্যাপের সংখ্যা কয়েক শ হলেও এখন এমন অ্যাপ রয়েছে হাজার হাজার।
এ ধরনের অ্যাপের নাম সাধারণত খুব নিরীহ ধাঁচের হয়। নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে উদাহরণ হিসেবে ‘মোবাইলটুল’ ‘এজেন্ট’, ‘সারবেরাস’ ইত্যাদি নামের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের এফটিসি ‘স্পাইফোন’ নামের একটি অ্যাপ বাজারে ছাড়ার দায়ে এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সাপোর্ট কিংকে নিষিদ্ধ করেছে।
প্রযুক্তিবান্ধব হলেই কি চেনা যাবে?
এই অ্যাপগুলো এমনভাবে তৈরি করা, যাতে এগুলো সহজে শনাক্ত করা না যায়। এমনকি প্রযুক্তিবান্ধব অনেক ব্যক্তির পক্ষেও এগুলোর উপস্থিতি টের পাওয়া সম্ভব নয়। এমনই এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির প্রতিবেদনে। সেখানে তাঁর ছদ্মনাম হিসেবে শার্লট বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক।
বিবিসিকে শার্লট বলেন, বাগ্দানের পর থেকেই তিনি বেশ কিছু উদ্ভট বিষয় লক্ষ করতে শুরু করেন। ফোনের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হওয়া, ফোন হঠাৎ করেই রিস্ট্রার্ট নেওয়া থেকে শুরু করে নানা অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে তাঁর সঙ্গে। এ দুটিই নজরদারি সফটওয়্যারের আওতায় পড়ে যাওয়ার প্রাথমিক ইঙ্গিত। কিন্তু এই ইঙ্গিতও যথেষ্ট ছিল না বিষয়টি বোঝার জন্য। তাঁর সঙ্গীই তাঁকে একসময় জানান, তিনি সব সময় জানতেন শার্লট কখন কোথায় থাকেন।
করণীয় জানতে শার্লট পরে হ্যাকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর সঙ্গীও এমন একটি ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত। তিনিও এর কিছু ধরনধারণ জানতেন। কিন্তু যখন আলাপ করলেন, দেখলেন সঙ্গীর ওপর নজর রাখার বিষয়ে সম্মতি প্রদানের একটি ভয়াবহ সংস্কৃতি রয়েছে। এটি কোনো অপরাধই যেন নয়। এটি তাঁকে ভীষণভাবে আহত করে। এ থেকেই তিনি সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার আগ্রহ পান, যেন এই খাতকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে কাজ করা যায়।
কীভাবে শুরু হয়?
ইন্টারনেট ঘাঁটলে এমন বহু সফটওয়্যার-সেবার খোঁজ পাওয়া যাবে, যা শুধু ফোন নম্বর পেলেই লক্ষ্যবস্তুর ওপর নজরদারি শুরু করতে পারে বলে দাবি করে। এ জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কয়েক শ ডলার মাত্র ব্যয় করতে হয়। এসব সেবাদাতা এমন সব দাবি করে, যে ধরনের নজরদারির সক্ষমতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর হাতে রয়েছে। পেগাসাসের কল্যাণে এই সক্ষমতার মাত্রা নিয়ে কারও অন্তত সন্দেহ থাকার কথা নয়। যদিও এগুলো ঠিকঠাক কাজ করে কি না, এ নিয়ে সংশয়ও রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের।
শার্লটের ভাষ্যমতে, এ ধরনের নজরদারি সফটওয়্যার সাধারণত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অনেক সময় কিছু মেসেজ পাঠিয়ে কোনো একটি লিংকে ক্লিক করতে বলা হয় অথবা নানা ধরনের চটকদার অ্যাপের মাধ্যমেও এটি ঘটতে পারে। এমন কিছু শনাক্ত করা মাত্রই তা ডিলিট করার পরামর্শ দেন তিনি। শার্লট বলেন, ‘যত ধরনের সতর্কতাই দিক না কেন, ডিলিটের ক্ষেত্রে ঘাবড়াবেন না।’
খেয়াল রাখুন
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে—
১. আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি দ্রুত নিঃশেষ হচ্ছে কি না। স্টকারওয়্যার আপনার অজান্তে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে বলেই হয়তো এমনটা হচ্ছে।
২. ডিভাইসটি বিশ্বস্ত স্টকারওয়্যার ডিটেক্টর দিয়ে স্ক্যান করুন। এ ক্ষেত্রে ম্যালওয়্যারবাইটস, সারটো, নর্টনলাইফলক, লুকআউট সহায়ক হতে পারে।
৩. ডিভাইসে থাকা প্রতিটি অ্যাপ লক্ষ করুন। এমন কিছু কি আছে, যা আপনি ইনস্টল করেননি। সন্দেহজনক মনে হলে ডিলিটের আগে ভেবে নিন। এটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় অভিযোগ জানাতে চাইলে প্রমাণ হিসেবে কাজে লাগতে পারে।
৪. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো চিহ্নিত করুন।
করণীয় কী?
ভুক্তভোগী ও পরে সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক হওয়া শার্লট এ ধরনের সংকটে করণীয় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দেন—
১. প্রথম করণীয় হিসেবে সংশ্লিষ্ট অ্যাপ বা সফটওয়্যারটি ডিলিট করতে হবে।
২. ডিলিটের ক্ষেত্রে তথ্য হারিয়ে ফেলা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হতে পারে। এগুলোতে ঘাবড়ালে চলবে না।
৩. যদি কোনোভাবেই ডিলিট করা না যায়, তবে ডিভাইসটি ফ্যাক্টরি সেটআপ দিতে হবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে নিজের অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পাল্টাতে হবে। একই সঙ্গে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু করতে হবে।
৫. ঘুরেফিরে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
৬. অনলাইনে নিজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে গিয়ে দেখুন সেগুলো থেকে আপনার ডিভাইসে থাকা কোন কোন অ্যাপ তথ্য নিচ্ছে। সন্দেহজনক কিছু পেলে সেগুলো বিযুক্ত করুন।
৭. সফটওয়্যার আপডেট করুন। অ্যাপল ও গুগল কিছুদিন পরপরই আপডেট অফার করে। এর মাধ্যমেও এ ধরনের সফটওয়্যারের হাত থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে।
আইনি ব্যবস্থা
এ তো গেল ব্যক্তিগত পর্যায়ে করণীয়। আইনানুগ পথে কী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে?
অধিকাংশ দেশেই এখন বিনা সম্মতিতে এ ধরনের নজরদারি রোধে আইন রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বিবিসির প্রতিবেদনে ফ্রান্সের কথা বলা হয়েছে। ২০২০ সালে দেশটি পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইন করেছে, যেখানে অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে গোপন নজরদারির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কারও সম্মতি ছাড়া তাঁর অবস্থান জানতে নজর রাখলে তাঁকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সেই আইনে। এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির এক বছরের জেল ও ৫১ হাজার ডলার জরিমানা হতে পারে। আর এমন কাজ কারও জীবনসঙ্গী করলে এই জরিমানার পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
আইনও কি পারবে সমাধান দিতে?
ইভা গালপেরিন অন্তত এ ধরনের বিষয় পুরোপুরি আইনের হাতে ছেড়ে দিতে রাজি নন। তাঁর দৃষ্টিতে এ ধরনের সংকটের সমাধান শুধু আইন করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে তিনি গুগল ও অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি-মোঘলদের সহায়তা চান। তাঁর ভাষ্যমতে, এ দুই প্রতিষ্ঠান চাইলে এ ধরনের অ্যাপের বিক্রি কার্যত অসম্ভব করে তুলতে পারে। একই সঙ্গে এ ধরনের অভিযোগকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এ ধরনের অভিযোগ নিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে গেলে তারা একে উড়িয়ে দেয়। অনেক ক্ষেত্রে এমনকি হাস্যরসও করা হয় বিষয়টি নিয়ে। কিন্তু ভুক্তভোগীর কাছে এটি ভীষণভাবে পীড়াদায়ক। খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই এ ধরনের ভুক্তভোগীদের সহায়তা দিতে আলাদা সংস্থা গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের করনেল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় গড়ে ওঠা এমন এক প্রতিষ্ঠানের নাম ক্লিনিক টু অ্যান্ড টেক অ্যাবিউজ (সিইটিএ)।
সিইটিএ সরাসরি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কাজ করে। একই সঙ্গে প্রযুক্তির অপব্যবহার সম্পর্কিত বিভিন্ন গবেষণাকে একীভূত করে কাজ করে। এমন সংকট থেকে মুক্তি পেতে ভুক্তভোগীদের নানা ধরনের পরামর্শ দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
সিইটিএর সঙ্গে কাজ করেন রোসানা বেলিনি। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা ফোন থেকে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ আমরা দিই না। তার আগে কিছু নিরাপত্তা পরিকল্পনা করে নেওয়া হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণেই এমনটা করা হয়। দেখা গেছে, হুট করেই এ ধরনের কোনো সফটওয়্যার অপসারণ করা হলে নিপীড়ক সহিংস হয়ে ওঠে। তারা তখন নিপীড়নের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তাই এ ক্ষেত্রেও কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।’

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। এটি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ, তার অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি হাত
০৪ ডিসেম্বর ২০২১
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। এটি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ, তার অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি হাত
০৪ ডিসেম্বর ২০২১
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। এটি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ, তার অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি হাত
০৪ ডিসেম্বর ২০২১
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

নজরদারি সফটওয়্যার বা স্টকারওয়্যার বাণিজ্যিকভাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ, যে কেউ চাইলে এমন একটি সফটওয়্যারের সেবা কিনে কাউকে অনুসরণের কাজে লাগাতে পারেন। এর মাধ্যমে মূলত লক্ষ্যবস্তু ব্যক্তির ব্যবহার করা বিভিন্ন ডিভাইসে নজর রাখা হয়। এটি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুর ফোনে আসা মেসেজ, তার অবস্থান, ছবি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি হাত
০৪ ডিসেম্বর ২০২১
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে