শফিকুল কবীর চন্দন
‘শহরের কোন অস্তিত্ব নেই
কেবল এক চিলতে কালোকেশী গাছ ছাড়া
উষ্ণ আকাশে মাথা তুলে থাকা অঙ্কিত নারী যেন!
নীরব শহর। রাত ফুটছে একাদশী নক্ষত্রে।
আহ্ নক্ষত্রখচিত রাত। এই তো যাতে
আমি বিলীন হতে চাই।
এটা চলমান। নক্ষত্ররা জীবিত।
এমনকি নক্ষত্রের বিস্তার তার কমলা নিগড়ে
শিশুও তার চোখে দেখে দেবতাসম।
এক অতি প্রাচীন সাপ নক্ষত্র গিলতে চায়।
আহ নক্ষত্রখচিত রাত। এই তো যাতে
আমি বিলীন হতে চাই।’ ১
—নক্ষত্র কথা
হিন্দুপুরাণ মতে সাতাশটি নক্ষত্র কোনো দীপ্তিমান জড়বস্তু নয়। প্রকৃতপক্ষে সাতাশটি নক্ষত্র মূলত দক্ষের সাতাশ কন্যা। চন্দ্র এই সাতাশ কন্যাকে বিয়ে করেছেন। চন্দ্র পর্যায়ক্রমে একেক পত্নীর কাছে একেকদিন অবস্থান করেন। উল্লিখিত চন্দ্রের সাতাশ নক্ষত্র পত্নীর নাম—অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিণী, মৃগশিরা, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্যা, অশ্লেষা, মঘা, পূর্ব-ফাল্গুনী, উত্তর-ফাল্গুনী, হস্তা, চিত্রা, স্বাতি, বিশাখা, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা, মূলা, পূর্বাষাঢ়া, উত্তরাষাঢ়া, শ্রবণা, ধনিষ্ঠা, শতভিষা, পূর্ব-ভাদ্রপদ, উত্তর-ভাদ্রপদ ও রেবতী।
এবার আসা যাক নক্ষত্রখচিত রাতের কথায়। দক্ষের সাতাশ নক্ষত্র কন্যা থাকলেও যেখানে গঘ স্রষ্টা, সেখানে নক্ষত্র সংখ্যা এগারো।
‘নক্ষত্রখচিত রাত’ এর আলাপ
‘চলো তোমায় নিয়ে যাই সেই দৃষ্টিপথে,
আকাশে, যেখানে তারাদের মাঝে স্পন্দিত ভ্যান গঘ।’
এক বাতুল রোগীর আনচান দেহ-মন। সেন্টরেমির বাতুলাশ্রমে গৃহান্তরীণ। তাঁর মন-চোখ চোরাগতির! তিনি শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। উন্মাদাশ্রমের কামরায় তাঁর অনভিপ্রেত বাস। স্নায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রণে শিল্পকর্ম রচনার আয়াস। একদিন এই আবাসের খিড়কির অতটুকু ফাঁক গলে দৃশ্য চক্ষু উন্মীলিত হলো, নাকি আচমকা দৈব সাক্ষাৎ তারাভরা নিশি প্রকৃতির? এই প্রথম এমন করে বুঝি ভিনসেন্টকে আকাশ বলছে—
‘ঐ যে, ঐ যে, কী ওটা, তাহলে?
‘না, ওখানে নয়। ঐখানে, আমি বলছি ওখানে।’
‘ওদিকে-ওদিকে-তাকাও, তাকাও ওদিকে। বলতে চাইছি
ঠিক ঐ জায়গাটায় দেখ।’ ২
রোগ নিদানে ব্রতী এই লোক তখন তুলি চেপে রং নিনাদে চেচায় বুঝি ক্যানভাসে! সালটা ১৮৮৯। খিড়কি গলে দৃষ্টি আটকানো গাছের ঔদ্ধত্যকে কেয়ার করে আগ্রাসী দেখা। ধুয়ে যাওয়া ধবল জোছনা। নীলাম্বর রাত। খোয়াব রাত। চাঁদ। আলোর ইশারা, যা ভূপ্রকৃতিকে আমূল দৃশ্যমান করে তুলেছিল এই চক্ষুষ্মানের কাছে। এ কোনো সাদাসিধে অবলোকন নয়! আলো নিভে গেলে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় যেন ক্ষিপ্রতায় খামচে ধরা ধরাধামের জ্যোৎস্না রাত।
‘গভীর হাওয়ার রাত ছিলো কাল—অসংখ্য নক্ষত্রের রাত;’ ৩
আকাশে জ্যোৎস্নার প্লাবন তখন! আলোর খোয়াব দেখানোর পাঁয়তারা! আকাশ দেখো। দেখো চাঁদ। আকাশে জোছনা প্রলয়! আলোর প্লাবন! এ আসলে এক ভিন্ন চিত্রাখ্যান।
আসমান জমিনের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত আবিষ্কারের পটে তখন রঙের প্রলেপের পর প্রলেপ পড়ছে। আন্তঃনাক্ষত্রিক বার্তা ব্যবস্থার যেন সূচনা তখন। গ্রহান্তরের ভাষা স্থাপিত হতে অস্থির।
‘রংভিত্তি হলো...
দৃশ্যের অসংগঠন, অবনির্মাণ।
আলোর বিচ্ছুরণে—
পৃথিবীটা যেন আকাশসুদ্ধ নামিয়ে দিয়েছে।’
রহস্য অপার। তাই নিরীহ ভাষা। কথা নেই। কলরব আছে বলবার আগেই বলা কথাদের! নক্ষত্র না আকাশ, প্রকৃতি না আলো? তিনিই জানেন।
এমনই সব সমবায়ী প্রতিষ্ঠা। এ যেন বৈষয়িক মানুষেরা কাপড় কেটে বানায় সব দারুণ পোশাক। গঘের ধৃত জোছনা রাষ্ট্রের ভেতরে এ আরেক সমাজ।
‘আমি স্পষ্টতই বুঝতে পারছি যে, ‘চাঁদের আলোতে গ্রামে’-এর মতো বিষয় ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে তোমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে...কিন্তু আমি মনে করি শৈলীগত অনুসন্ধান হয়তো তোমার বাস্তব অনুভূতির প্রকাশ থেকে বিরত রাখে।’ ৪
জ্যোৎস্নার ‘রাত্রিকরোজ্বল’তায় অগণন তাপী সাধারণ প্রাচী অবাচীর উদীচীর মতো একাকী খণ্ডাকাশ ঘিরে স্মরণীয় নক্ষত্রেরা এসেছে। এ যেন নিবিড় নক্ষত্র থেকে সমাগত রাত্রির সংকেত যত দূর ভেসে যায় আপনার অভিজ্ঞান নিয়ে স্থির শুভ্র নৈসর্গিক কথা বলবার অবসর। আলোর রঙের মতো ম্লান জ্যোৎস্নায় চুমুক দিয়ে চর্মচক্ষু স্থির হয়ে থাকা। সময়ের প্রশান্তির ফুঁয়ে, স্তব্ধতার জোছনাকে ছুঁয়ে আঁজলায় স্থির শান্ত সলিলের অন্ধকারে খুঁজে পাওয়া জিজ্ঞাসার মানে। তারার অনটন নেই, ব্যাপক বিপুল রাতের মতন তার একটিমাত্র নির্জন নক্ষত্রকে ধরে থাকা নয়, বরং তারাদের সমাগমে আকাশের গায়ে আমাদের জনমানবিক রাত্রে নক্ষত্রেরা জ্যোৎস্নার জোগান হয়ে ভাসে।
‘রাতে-রাতে হেঁটে-হেঁটে নক্ষত্রের সনে’ ৫
প্রস্তাবিত দৃশ্য, পরিবেশ, আবহ যত সব মহড়ায় মেতেছে জোছনা রাতে। সব উপাদানে অভাব উচাটন নেই, আটকে দেওয়া খাই খরচের কেরদানি নেই! রং-তুলি-ক্যানভাস, ও মনমর্জির একটা সমবায়ী রাত। আধুনিক রং-রাষ্ট্রের অনুমিত আবহ, মোটেই নাটকীয় নয়। দারিদ্র্য আর পাপ, সংঘটন আর অসংঘটনের জীবন, কতখানি আর কতখানি নয়। কেবল রাত্রি। মায়াবী আলোর ঘূর্ণিঝড়! তুলির ডগায় মস্তিস্কক্রিয়া। নক্ষত্রোজ্জ্বল প্রকৃতির স্বরূপ, মূর্ত বা প্রকাশমান হতে নয় গররাজি।
‘সমস্ত মৃত নক্ষত্রেরা কাল জেগে উঠেছিল—আকাশে এক তিল
ফাঁক ছিল না;
পৃথিবীর সমস্ত ধূসর প্রিয় মৃতদের মুখও সেই নক্ষত্রের ভিতর দেখেছি আমি;
অন্ধকার রাতে অশ্বত্থের চূড়ায় প্রেমিক চিলপুরুষের শিশির-ভেজা চোখের মতো
ঝলমল করছিলো সমস্ত নক্ষত্রেরা;
জ্যোৎস্নারাতে বেবিলনের রানীর ঘাড়ের ওপর চিতার উজ্জ্বল চামড়ার
শালের মতো জ্বলজ্বল করছিলো বিশাল আকাশ!
কাল এমন আশ্চর্য রাত ছিলো।' ৬
জীবন যখন প্রখর ‘যাপনলোক’ থেকে দূর অবস্থিত, তখন তার নিজস্ব তারাভরা রাতের সোহাগী কোমল অনুজ্জ্বল কিন্তু মায়াবী আলোর আলিম্পন আঁকা হয়ে যায়। যা হৃদয় অভীপ্সিত এক চন্দ্রালোকিত দৃশ্যরূপ।
শৈলীর বিপরীতে প্রাকৃত বনাম অপ্রাকৃত, স্বপ্ন বনাম বাস্তব, এর এক নক্ষত্র প্রণাম। আকাশ সেখানে আকাশে লীন-মনোগ্রাহী, সমাহিত এক প্রকৃতি পুরাণ।
মস্তিষ্কের জ্বালানি সমেত ডাচ যুবকের হাতের রং-তুলিতে প্রকাশমান হতে থাকল অনবদ্য সংগতে, সাবলীল ঢঙে চিত্রার্পিত অবলোকনের বিবরণ। ছবি ও মনের বিপ্রতীপ অবস্থানেও এমন কাহিনি রচয়িতা একমাত্র ভিনসেন্ট।
‘এই জ্যোৎস্না রাতে জাগে আমার প্রাণ’ ৭
মনোদৈহিক দুর্যোগের অনবরত আবির্ভাব। শিল্পীর আঁকবার দুর্নিবার জ্বরে আক্রান্ত সময় তখন। অথচ সৃষ্টির সুরে সেখানে উপস্থিত বীণার মন্ত্র ঝংকার। মস্তিষ্কের ঋদ্ধ ও উর্বর জমিন, নিজস্বতাপূর্ণ, সজীব ও ব্যক্তিত্বময় চরিত্রের এমন মানুষ আবার নির্ভীক ও নমনীয়।
পূর্ণ শশীতে ‘তারাস্তীর্ণ আকাশের তলে বাস’, (৮) ‘বেদনার ছন্দে উঠে গান তারাস্তোমে তৃণে তৃণে’ (৯)—এমন বয়ান ওঠে আসে গঘের এই চিত্রতলে। চন্দ্রপত্নীরূপে সাতাশ তারারা সফেদ আলোয় উদ্ভাসিত! অপূর্ব চান্দ্রায়ণ! সেদিন চন্দ্র কান্তি শোভায় ভিনসেন্টের রোগাক্রান্ত সময়ও বুঝি প্রীতিপ্রদ হয়ে উঠেছিল!
‘তুমি যদি “নক্ষত্রখচিত রাত” ও “কর্ষিত জমি” পছন্দ করো, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কেননা অন্য দৃশ্যচিত্রগুলি থেকে এগুলিতে একটু বেশি প্রশান্তির ভাব রয়েছে।’ ১০
পত্রে উল্লেখিত এই ‘প্রশান্তি’ শব্দটির ব্যবহার এই ইঙ্গিত দেয় যে, এমন রাতের আকাশ তার মনে এক অনাবিল প্রশান্তির জন্ম দিয়েছিল। আজও দর্শকদের ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের নক্ষত্রখচিত রাতের গভীরতায় ডুব দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায় এবং ‘মিথিক্যাল’ এই শিল্পকর্মের উপর্যুপরি অধ্যয়ন, বিশ্লেষণ, বিবরণ মুগ্ধ করে চলেছে শিল্পামোদীদের।
চন্দ্রালোকিত আভায় সমর্পিত তিমিরবিনাশী রাত্রির যে মুখচ্ছবি আঁকা, সেটি ধ্যানীর বীক্ষা না শিল্পীর বীক্ষণ—সে সিদ্ধান্তে আসা সহজ নয়! বিষণ্নতার সময়েও কেমন সুচির স্মিতোজ্বল চিত্রকল্প খচিত প্রস্বর এক গহন স্বভাবেরই উপহার। ফলে নক্ষত্রখচিত রাত হয়ে ওঠে এই নন্দন-কারিগরের সেন্টরেমিবাসের লিখিত উজ্জ্বল এক পৃষ্ঠা। যেখানে লেখা হয়েছে তুলির রঙিন পোঁচে অনন্য প্রাণপ্রীতির কথা।
‘আমি নিশ্চিত কিছুই জানি না, তবে তারাগুলি দেখে নিজের কাছে স্বপ্নাদৃষ্ট বলে মনে হয়।’ ১১
দালি ও জীবনানন্দনীয় পরাবাস্তবতার এক নান্দনিক অভিব্যক্তিক চিত্রকর্ম এই নক্ষত্রখচিত রাত। পর্বত বেষ্টিত শহরের উপর চাঁদের ঝলক, তার আবেগ ও চেতনার শান্তি ও নির্মলতা একই সমগ্রতায় ধরতে চেয়েছেন যেন। কোনো বাড়তি শোরগোল নেই। একদিকে ঝলকানো আলোর নাচন, আর বিপরীতে নিদ্রাতুর প্রশান্তি!
ভারতীয় উপকথার সাতাশ নক্ষত্র-পত্নী, গঘের পটে এগারো হয়ে আসীন। কর্ণচ্ছেদন, গগ্যাঁর সাথে বিচ্ছেদ-পরবর্তী মানসিক উন্মার্গগামিতার দুঃসহ দিনে সাইপ্রাস গাছের অনমনীয় দৃঢ় ঋজু দন্ডায়মানতা এক প্রতীকী সুন্দর!
পূর্বে আঁকা ‘রোন’-এর উপর ‘নক্ষত্রখচিত আকাশ’ ও ‘ক্যাফের ছাদ থেকে রাত’—এই চিত্র দুটিতে নিশাচর প্রকৃতিকে অধিবক্তা না করে সমুদয় উপাত্তসহ পার্শ্বচরিত্র হিসেবে রেখে আকর্ষণীয় করে চিত্রিত করেছেন।
‘…উদাহরণ হিসেবে একটি তারকাময় আকাশ, চমৎকার-আমি এমন একটি দৃশ্যচিত্র রচনা করতে চাই, কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব যদি না বাড়িতে থেকে কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে তা আঁকবার সিদ্ধান্ত না নিতে পারি?’ ১২
সে সময়ে সরাসরি উন্মুক্ত দৃশ্যচিত্র আঁকার বিপরীতে রাতের আকাশ আঁকার মানসিক অবসন্নতার সাথে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। প্রকৃতি দর্শনের মেজাজ আঁকড়ে ধরে, তাকে কল্পরূপে সাজিয়ে বাস্তবতা থেকে আলগা করে ব্যক্তিগত আবেগের চিত্রায়ণে গঘের শিল্প সক্ষমতার শিখরারোহন বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হয় না। যেখানে মানসিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশে তৎপর একটি দীর্ঘ লালিত ধারণার বিপরীতে, ‘শর্ত বিবেচিত’ ব্যক্তিগত ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিবিম্বিত উদ্ভাবনী নিদর্শন এবং প্রতিনিধিত্বশীল স্বাতন্ত্রিকতা।
‘এখন আমি তারা ঝিলমিল আকাশ আঁকতে চাই। রাতের সৌন্দর্য, অন্ধকারের আলো অনেকই বেশি, দিনের শোভার চেয়ে। আমি দেখি তো! হরেকরকম বেগুনি, নীল আর সবুজের বাহার। তুমিও চেষ্টা করে দেখো। দেখবে কোনো কোনো তারা যেন একটু বেশি লেবু রং ঘেঁষা হলুদ, কোনটিতে ঝিনুকের গোলাপি আভা, কোনোটি কেমন ঝিম ধরানো নীলাভ। শুধু কালচে নীল ক্যানভাসে সাদা বিন্দু ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলেই কি আর রাতের আকাশ আঁকা যায়?’ ১৩
দেখার ও আঁকার পূর্ব ধার্য সীমানা মাড়িয়ে আত্মিক শিল্পায়নের দিকে যাত্রাপথে ভ্যান গঘ নক্ষত্রখচিত রাতে চন্দ্রকরের সাথে স্বতন্ত্র কথোপকথন মূর্ত করেন, মুসাবিদা করেন তাঁর একান্ত নিজস্ব ভাষায়। যেখানে তিনি নিজস্বতার ইঞ্চি মাত্রও ত্যাগ না করে হয়ে ওঠেন সকলের। কথিত ‘দুঃখী’ ভ্যান গঘ এমনি করেই নিজেকে অবলীলায় ধার দিয়ে হয়ে ওঠেন আমাদের। আর আমরাও ভ্যান গঘের ধৃতজ্যোৎস্নারাষ্ট্রে দেখা নক্ষত্রখচিত রাতের আমূল অংশীদার করে নিই স্বেচ্ছায়, নিজ দায়িত্বে। নক্ষত্রখচিত আলোক বন্যায় ধুয়ে যাওয়া সে রাত আমরা বিহার করি। ভাঁওতাহীন, নিঃসংশয়, নিঃসংকোচে। প্রাণের তামাম সুদে।
‘নক্ষত্রের তলে শুয়ে ঘুমায়েছে মন
এক দিন;
এই সব সাধ
জানিয়াছি একদিন-অবাধ-অগাধ;’ ১৪
উদ্ধৃতি সূত্র:
১. নক্ষত্রখচিত রাত, আন্নি সেক্সন (১৯৬১), আর্সেনেই তারকোভস্কি
২. অঁতন্যা আর্ত্যও, না, আর কোন আকাশ নেই
৩. হাওয়ার রাত, জীবনানন্দ দাশ
৪. থিও, ২২ অক্টোবর, ১৮৮৯
৫. নির্জন স্বাক্ষর, জীবনানন্দ দাশ
৬. হাওয়ার রাত, জীবনানন্দ দাশ
৭. গীতাঞ্জলি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৮. মোহিতলাল মজুমদার
৯. সুফী মোতাহার হোসেন
১০. ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ
১১. ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ
১২. এমিল বের্নার্ড কে লেখা গঘ এর পত্র, ১৮৮৮ বসন্ত
১৩. ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ
১৪. বোধ, জীবনানন্দ দাশ
নক্ষত্রখচিত রাত (স্টারি নাইট)
১৮৮৯ সালে আঁকা
উচ্চতা: ৭৩.৭০ সেন্টিমিটার
চওড়া: ৯২.১০ সেন্টিমিটার
মাধ্যম: তেলরং
চিত্রকাঠামো: ক্যানভাস
বিষয়: ভূচিত্র
ধরন: পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট
শিল্প আন্দোলন: পোস্ট ইম্প্রেশনিজম
শিল্পী: ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ
বর্তমান সংরক্ষণের স্থান: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
সংগ্রহ মালিকানা: মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট
‘শহরের কোন অস্তিত্ব নেই
কেবল এক চিলতে কালোকেশী গাছ ছাড়া
উষ্ণ আকাশে মাথা তুলে থাকা অঙ্কিত নারী যেন!
নীরব শহর। রাত ফুটছে একাদশী নক্ষত্রে।
আহ্ নক্ষত্রখচিত রাত। এই তো যাতে
আমি বিলীন হতে চাই।
এটা চলমান। নক্ষত্ররা জীবিত।
এমনকি নক্ষত্রের বিস্তার তার কমলা নিগড়ে
শিশুও তার চোখে দেখে দেবতাসম।
এক অতি প্রাচীন সাপ নক্ষত্র গিলতে চায়।
আহ নক্ষত্রখচিত রাত। এই তো যাতে
আমি বিলীন হতে চাই।’ ১
—নক্ষত্র কথা
হিন্দুপুরাণ মতে সাতাশটি নক্ষত্র কোনো দীপ্তিমান জড়বস্তু নয়। প্রকৃতপক্ষে সাতাশটি নক্ষত্র মূলত দক্ষের সাতাশ কন্যা। চন্দ্র এই সাতাশ কন্যাকে বিয়ে করেছেন। চন্দ্র পর্যায়ক্রমে একেক পত্নীর কাছে একেকদিন অবস্থান করেন। উল্লিখিত চন্দ্রের সাতাশ নক্ষত্র পত্নীর নাম—অশ্বিনী, ভরণী, কৃত্তিকা, রোহিণী, মৃগশিরা, আর্দ্রা, পুনর্বসু, পুষ্যা, অশ্লেষা, মঘা, পূর্ব-ফাল্গুনী, উত্তর-ফাল্গুনী, হস্তা, চিত্রা, স্বাতি, বিশাখা, অনুরাধা, জ্যেষ্ঠা, মূলা, পূর্বাষাঢ়া, উত্তরাষাঢ়া, শ্রবণা, ধনিষ্ঠা, শতভিষা, পূর্ব-ভাদ্রপদ, উত্তর-ভাদ্রপদ ও রেবতী।
এবার আসা যাক নক্ষত্রখচিত রাতের কথায়। দক্ষের সাতাশ নক্ষত্র কন্যা থাকলেও যেখানে গঘ স্রষ্টা, সেখানে নক্ষত্র সংখ্যা এগারো।
‘নক্ষত্রখচিত রাত’ এর আলাপ
‘চলো তোমায় নিয়ে যাই সেই দৃষ্টিপথে,
আকাশে, যেখানে তারাদের মাঝে স্পন্দিত ভ্যান গঘ।’
এক বাতুল রোগীর আনচান দেহ-মন। সেন্টরেমির বাতুলাশ্রমে গৃহান্তরীণ। তাঁর মন-চোখ চোরাগতির! তিনি শিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ। উন্মাদাশ্রমের কামরায় তাঁর অনভিপ্রেত বাস। স্নায়ুর চাপ নিয়ন্ত্রণে শিল্পকর্ম রচনার আয়াস। একদিন এই আবাসের খিড়কির অতটুকু ফাঁক গলে দৃশ্য চক্ষু উন্মীলিত হলো, নাকি আচমকা দৈব সাক্ষাৎ তারাভরা নিশি প্রকৃতির? এই প্রথম এমন করে বুঝি ভিনসেন্টকে আকাশ বলছে—
‘ঐ যে, ঐ যে, কী ওটা, তাহলে?
‘না, ওখানে নয়। ঐখানে, আমি বলছি ওখানে।’
‘ওদিকে-ওদিকে-তাকাও, তাকাও ওদিকে। বলতে চাইছি
ঠিক ঐ জায়গাটায় দেখ।’ ২
রোগ নিদানে ব্রতী এই লোক তখন তুলি চেপে রং নিনাদে চেচায় বুঝি ক্যানভাসে! সালটা ১৮৮৯। খিড়কি গলে দৃষ্টি আটকানো গাছের ঔদ্ধত্যকে কেয়ার করে আগ্রাসী দেখা। ধুয়ে যাওয়া ধবল জোছনা। নীলাম্বর রাত। খোয়াব রাত। চাঁদ। আলোর ইশারা, যা ভূপ্রকৃতিকে আমূল দৃশ্যমান করে তুলেছিল এই চক্ষুষ্মানের কাছে। এ কোনো সাদাসিধে অবলোকন নয়! আলো নিভে গেলে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় যেন ক্ষিপ্রতায় খামচে ধরা ধরাধামের জ্যোৎস্না রাত।
‘গভীর হাওয়ার রাত ছিলো কাল—অসংখ্য নক্ষত্রের রাত;’ ৩
আকাশে জ্যোৎস্নার প্লাবন তখন! আলোর খোয়াব দেখানোর পাঁয়তারা! আকাশ দেখো। দেখো চাঁদ। আকাশে জোছনা প্রলয়! আলোর প্লাবন! এ আসলে এক ভিন্ন চিত্রাখ্যান।
আসমান জমিনের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত আবিষ্কারের পটে তখন রঙের প্রলেপের পর প্রলেপ পড়ছে। আন্তঃনাক্ষত্রিক বার্তা ব্যবস্থার যেন সূচনা তখন। গ্রহান্তরের ভাষা স্থাপিত হতে অস্থির।
‘রংভিত্তি হলো...
দৃশ্যের অসংগঠন, অবনির্মাণ।
আলোর বিচ্ছুরণে—
পৃথিবীটা যেন আকাশসুদ্ধ নামিয়ে দিয়েছে।’
রহস্য অপার। তাই নিরীহ ভাষা। কথা নেই। কলরব আছে বলবার আগেই বলা কথাদের! নক্ষত্র না আকাশ, প্রকৃতি না আলো? তিনিই জানেন।
এমনই সব সমবায়ী প্রতিষ্ঠা। এ যেন বৈষয়িক মানুষেরা কাপড় কেটে বানায় সব দারুণ পোশাক। গঘের ধৃত জোছনা রাষ্ট্রের ভেতরে এ আরেক সমাজ।
‘আমি স্পষ্টতই বুঝতে পারছি যে, ‘চাঁদের আলোতে গ্রামে’-এর মতো বিষয় ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলতে তোমাকে বিশেষভাবে আকর্ষণ করে...কিন্তু আমি মনে করি শৈলীগত অনুসন্ধান হয়তো তোমার বাস্তব অনুভূতির প্রকাশ থেকে বিরত রাখে।’ ৪
জ্যোৎস্নার ‘রাত্রিকরোজ্বল’তায় অগণন তাপী সাধারণ প্রাচী অবাচীর উদীচীর মতো একাকী খণ্ডাকাশ ঘিরে স্মরণীয় নক্ষত্রেরা এসেছে। এ যেন নিবিড় নক্ষত্র থেকে সমাগত রাত্রির সংকেত যত দূর ভেসে যায় আপনার অভিজ্ঞান নিয়ে স্থির শুভ্র নৈসর্গিক কথা বলবার অবসর। আলোর রঙের মতো ম্লান জ্যোৎস্নায় চুমুক দিয়ে চর্মচক্ষু স্থির হয়ে থাকা। সময়ের প্রশান্তির ফুঁয়ে, স্তব্ধতার জোছনাকে ছুঁয়ে আঁজলায় স্থির শান্ত সলিলের অন্ধকারে খুঁজে পাওয়া জিজ্ঞাসার মানে। তারার অনটন নেই, ব্যাপক বিপুল রাতের মতন তার একটিমাত্র নির্জন নক্ষত্রকে ধরে থাকা নয়, বরং তারাদের সমাগমে আকাশের গায়ে আমাদের জনমানবিক রাত্রে নক্ষত্রেরা জ্যোৎস্নার জোগান হয়ে ভাসে।
‘রাতে-রাতে হেঁটে-হেঁটে নক্ষত্রের সনে’ ৫
প্রস্তাবিত দৃশ্য, পরিবেশ, আবহ যত সব মহড়ায় মেতেছে জোছনা রাতে। সব উপাদানে অভাব উচাটন নেই, আটকে দেওয়া খাই খরচের কেরদানি নেই! রং-তুলি-ক্যানভাস, ও মনমর্জির একটা সমবায়ী রাত। আধুনিক রং-রাষ্ট্রের অনুমিত আবহ, মোটেই নাটকীয় নয়। দারিদ্র্য আর পাপ, সংঘটন আর অসংঘটনের জীবন, কতখানি আর কতখানি নয়। কেবল রাত্রি। মায়াবী আলোর ঘূর্ণিঝড়! তুলির ডগায় মস্তিস্কক্রিয়া। নক্ষত্রোজ্জ্বল প্রকৃতির স্বরূপ, মূর্ত বা প্রকাশমান হতে নয় গররাজি।
‘সমস্ত মৃত নক্ষত্রেরা কাল জেগে উঠেছিল—আকাশে এক তিল
ফাঁক ছিল না;
পৃথিবীর সমস্ত ধূসর প্রিয় মৃতদের মুখও সেই নক্ষত্রের ভিতর দেখেছি আমি;
অন্ধকার রাতে অশ্বত্থের চূড়ায় প্রেমিক চিলপুরুষের শিশির-ভেজা চোখের মতো
ঝলমল করছিলো সমস্ত নক্ষত্রেরা;
জ্যোৎস্নারাতে বেবিলনের রানীর ঘাড়ের ওপর চিতার উজ্জ্বল চামড়ার
শালের মতো জ্বলজ্বল করছিলো বিশাল আকাশ!
কাল এমন আশ্চর্য রাত ছিলো।' ৬
জীবন যখন প্রখর ‘যাপনলোক’ থেকে দূর অবস্থিত, তখন তার নিজস্ব তারাভরা রাতের সোহাগী কোমল অনুজ্জ্বল কিন্তু মায়াবী আলোর আলিম্পন আঁকা হয়ে যায়। যা হৃদয় অভীপ্সিত এক চন্দ্রালোকিত দৃশ্যরূপ।
শৈলীর বিপরীতে প্রাকৃত বনাম অপ্রাকৃত, স্বপ্ন বনাম বাস্তব, এর এক নক্ষত্র প্রণাম। আকাশ সেখানে আকাশে লীন-মনোগ্রাহী, সমাহিত এক প্রকৃতি পুরাণ।
মস্তিষ্কের জ্বালানি সমেত ডাচ যুবকের হাতের রং-তুলিতে প্রকাশমান হতে থাকল অনবদ্য সংগতে, সাবলীল ঢঙে চিত্রার্পিত অবলোকনের বিবরণ। ছবি ও মনের বিপ্রতীপ অবস্থানেও এমন কাহিনি রচয়িতা একমাত্র ভিনসেন্ট।
‘এই জ্যোৎস্না রাতে জাগে আমার প্রাণ’ ৭
মনোদৈহিক দুর্যোগের অনবরত আবির্ভাব। শিল্পীর আঁকবার দুর্নিবার জ্বরে আক্রান্ত সময় তখন। অথচ সৃষ্টির সুরে সেখানে উপস্থিত বীণার মন্ত্র ঝংকার। মস্তিষ্কের ঋদ্ধ ও উর্বর জমিন, নিজস্বতাপূর্ণ, সজীব ও ব্যক্তিত্বময় চরিত্রের এমন মানুষ আবার নির্ভীক ও নমনীয়।
পূর্ণ শশীতে ‘তারাস্তীর্ণ আকাশের তলে বাস’, (৮) ‘বেদনার ছন্দে উঠে গান তারাস্তোমে তৃণে তৃণে’ (৯)—এমন বয়ান ওঠে আসে গঘের এই চিত্রতলে। চন্দ্রপত্নীরূপে সাতাশ তারারা সফেদ আলোয় উদ্ভাসিত! অপূর্ব চান্দ্রায়ণ! সেদিন চন্দ্র কান্তি শোভায় ভিনসেন্টের রোগাক্রান্ত সময়ও বুঝি প্রীতিপ্রদ হয়ে উঠেছিল!
‘তুমি যদি “নক্ষত্রখচিত রাত” ও “কর্ষিত জমি” পছন্দ করো, তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই, কেননা অন্য দৃশ্যচিত্রগুলি থেকে এগুলিতে একটু বেশি প্রশান্তির ভাব রয়েছে।’ ১০
পত্রে উল্লেখিত এই ‘প্রশান্তি’ শব্দটির ব্যবহার এই ইঙ্গিত দেয় যে, এমন রাতের আকাশ তার মনে এক অনাবিল প্রশান্তির জন্ম দিয়েছিল। আজও দর্শকদের ভিনসেন্ট ভ্যান গঘের নক্ষত্রখচিত রাতের গভীরতায় ডুব দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায় এবং ‘মিথিক্যাল’ এই শিল্পকর্মের উপর্যুপরি অধ্যয়ন, বিশ্লেষণ, বিবরণ মুগ্ধ করে চলেছে শিল্পামোদীদের।
চন্দ্রালোকিত আভায় সমর্পিত তিমিরবিনাশী রাত্রির যে মুখচ্ছবি আঁকা, সেটি ধ্যানীর বীক্ষা না শিল্পীর বীক্ষণ—সে সিদ্ধান্তে আসা সহজ নয়! বিষণ্নতার সময়েও কেমন সুচির স্মিতোজ্বল চিত্রকল্প খচিত প্রস্বর এক গহন স্বভাবেরই উপহার। ফলে নক্ষত্রখচিত রাত হয়ে ওঠে এই নন্দন-কারিগরের সেন্টরেমিবাসের লিখিত উজ্জ্বল এক পৃষ্ঠা। যেখানে লেখা হয়েছে তুলির রঙিন পোঁচে অনন্য প্রাণপ্রীতির কথা।
‘আমি নিশ্চিত কিছুই জানি না, তবে তারাগুলি দেখে নিজের কাছে স্বপ্নাদৃষ্ট বলে মনে হয়।’ ১১
দালি ও জীবনানন্দনীয় পরাবাস্তবতার এক নান্দনিক অভিব্যক্তিক চিত্রকর্ম এই নক্ষত্রখচিত রাত। পর্বত বেষ্টিত শহরের উপর চাঁদের ঝলক, তার আবেগ ও চেতনার শান্তি ও নির্মলতা একই সমগ্রতায় ধরতে চেয়েছেন যেন। কোনো বাড়তি শোরগোল নেই। একদিকে ঝলকানো আলোর নাচন, আর বিপরীতে নিদ্রাতুর প্রশান্তি!
ভারতীয় উপকথার সাতাশ নক্ষত্র-পত্নী, গঘের পটে এগারো হয়ে আসীন। কর্ণচ্ছেদন, গগ্যাঁর সাথে বিচ্ছেদ-পরবর্তী মানসিক উন্মার্গগামিতার দুঃসহ দিনে সাইপ্রাস গাছের অনমনীয় দৃঢ় ঋজু দন্ডায়মানতা এক প্রতীকী সুন্দর!
পূর্বে আঁকা ‘রোন’-এর উপর ‘নক্ষত্রখচিত আকাশ’ ও ‘ক্যাফের ছাদ থেকে রাত’—এই চিত্র দুটিতে নিশাচর প্রকৃতিকে অধিবক্তা না করে সমুদয় উপাত্তসহ পার্শ্বচরিত্র হিসেবে রেখে আকর্ষণীয় করে চিত্রিত করেছেন।
‘…উদাহরণ হিসেবে একটি তারকাময় আকাশ, চমৎকার-আমি এমন একটি দৃশ্যচিত্র রচনা করতে চাই, কিন্তু তা কীভাবে সম্ভব যদি না বাড়িতে থেকে কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে তা আঁকবার সিদ্ধান্ত না নিতে পারি?’ ১২
সে সময়ে সরাসরি উন্মুক্ত দৃশ্যচিত্র আঁকার বিপরীতে রাতের আকাশ আঁকার মানসিক অবসন্নতার সাথে নিবিড় সম্পর্কযুক্ত। প্রকৃতি দর্শনের মেজাজ আঁকড়ে ধরে, তাকে কল্পরূপে সাজিয়ে বাস্তবতা থেকে আলগা করে ব্যক্তিগত আবেগের চিত্রায়ণে গঘের শিল্প সক্ষমতার শিখরারোহন বললে বোধ হয় অত্যুক্তি হয় না। যেখানে মানসিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশে তৎপর একটি দীর্ঘ লালিত ধারণার বিপরীতে, ‘শর্ত বিবেচিত’ ব্যক্তিগত ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিবিম্বিত উদ্ভাবনী নিদর্শন এবং প্রতিনিধিত্বশীল স্বাতন্ত্রিকতা।
‘এখন আমি তারা ঝিলমিল আকাশ আঁকতে চাই। রাতের সৌন্দর্য, অন্ধকারের আলো অনেকই বেশি, দিনের শোভার চেয়ে। আমি দেখি তো! হরেকরকম বেগুনি, নীল আর সবুজের বাহার। তুমিও চেষ্টা করে দেখো। দেখবে কোনো কোনো তারা যেন একটু বেশি লেবু রং ঘেঁষা হলুদ, কোনটিতে ঝিনুকের গোলাপি আভা, কোনোটি কেমন ঝিম ধরানো নীলাভ। শুধু কালচে নীল ক্যানভাসে সাদা বিন্দু ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিলেই কি আর রাতের আকাশ আঁকা যায়?’ ১৩
দেখার ও আঁকার পূর্ব ধার্য সীমানা মাড়িয়ে আত্মিক শিল্পায়নের দিকে যাত্রাপথে ভ্যান গঘ নক্ষত্রখচিত রাতে চন্দ্রকরের সাথে স্বতন্ত্র কথোপকথন মূর্ত করেন, মুসাবিদা করেন তাঁর একান্ত নিজস্ব ভাষায়। যেখানে তিনি নিজস্বতার ইঞ্চি মাত্রও ত্যাগ না করে হয়ে ওঠেন সকলের। কথিত ‘দুঃখী’ ভ্যান গঘ এমনি করেই নিজেকে অবলীলায় ধার দিয়ে হয়ে ওঠেন আমাদের। আর আমরাও ভ্যান গঘের ধৃতজ্যোৎস্নারাষ্ট্রে দেখা নক্ষত্রখচিত রাতের আমূল অংশীদার করে নিই স্বেচ্ছায়, নিজ দায়িত্বে। নক্ষত্রখচিত আলোক বন্যায় ধুয়ে যাওয়া সে রাত আমরা বিহার করি। ভাঁওতাহীন, নিঃসংশয়, নিঃসংকোচে। প্রাণের তামাম সুদে।
‘নক্ষত্রের তলে শুয়ে ঘুমায়েছে মন
এক দিন;
এই সব সাধ
জানিয়াছি একদিন-অবাধ-অগাধ;’ ১৪
উদ্ধৃতি সূত্র:
১. নক্ষত্রখচিত রাত, আন্নি সেক্সন (১৯৬১), আর্সেনেই তারকোভস্কি
২. অঁতন্যা আর্ত্যও, না, আর কোন আকাশ নেই
৩. হাওয়ার রাত, জীবনানন্দ দাশ
৪. থিও, ২২ অক্টোবর, ১৮৮৯
৫. নির্জন স্বাক্ষর, জীবনানন্দ দাশ
৬. হাওয়ার রাত, জীবনানন্দ দাশ
৭. গীতাঞ্জলি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
৮. মোহিতলাল মজুমদার
৯. সুফী মোতাহার হোসেন
১০. ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ
১১. ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ
১২. এমিল বের্নার্ড কে লেখা গঘ এর পত্র, ১৮৮৮ বসন্ত
১৩. ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ
১৪. বোধ, জীবনানন্দ দাশ
নক্ষত্রখচিত রাত (স্টারি নাইট)
১৮৮৯ সালে আঁকা
উচ্চতা: ৭৩.৭০ সেন্টিমিটার
চওড়া: ৯২.১০ সেন্টিমিটার
মাধ্যম: তেলরং
চিত্রকাঠামো: ক্যানভাস
বিষয়: ভূচিত্র
ধরন: পোস্ট ইম্প্রেশনিস্ট
শিল্প আন্দোলন: পোস্ট ইম্প্রেশনিজম
শিল্পী: ভিনসেন্ট ভ্যান গঘ
বর্তমান সংরক্ষণের স্থান: নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
সংগ্রহ মালিকানা: মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট
প্রকৃত নাম জন গ্রিফিথ চেইনে হলেও জ্যাক লন্ডন নামে খ্যাতি পেয়েছেন এই বিখ্যাত মার্কিন লেখক। তাঁর জন্ম ১৮৭৬ সালের ১২ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়।
১৭ ঘণ্টা আগেআবদুস সালাম ছিলেন বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়া প্রথম মুসলিম এবং প্রথম পাকিস্তানি বিজ্ঞানী। পাকিস্তানি এই তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ইলেক্ট্রোউইক ইউনিফিকেশন থিওরির জন্য নোবেল পুরস্কার পান।
২ দিন আগেঢাকা কলেজ, এ দেশের শিক্ষা ইতিহাসেই শুধু নয়, জাতির ইতিহাসেরও এক অনন্য অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িত এক নাম। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে এ কলেজের ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য। এ কলেজের কৃ
২ দিন আগে‘ভাষাকন্যা’ হিসেবে খ্যাত সুফিয়া আহমেদের জন্ম ১৯৩২ সালের ২০ নভেম্বর ফরিদপুরে। ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রী একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারীদের মধ্যে অন্যতম। সেদিন তিনি পুলিশি নির্যাতনে আহত হন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য...
৩ দিন আগে