Ajker Patrika

মননরেখা: প্রান্তবাসী এক বড় কাগজের কথা

একলব্য 
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২১, ১৫: ৩৩
মননরেখা: প্রান্তবাসী এক বড় কাগজের কথা

ঠিক ছোট কাগজ বলব, নাকি বড় কাগজের ছোট সংস্করণ বলব—বিষয়টি বুঝে ওঠা কঠিন। ‘মননরেখা’ নামের মুদ্রিত পুস্তকখানি হাতে আসার পর সেরকমই অনুভূতি হলো। আবার ‘পুস্তক’ শব্দটি আমাদের সামনে যে চিত্রকল্প তুলে ধরে, তাতে এই শব্দও সুপ্রযুক্ত হচ্ছে কি না, সেটাও ভাববার বিষয়। শুরু থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত এটি বছরে একটি বিশেষ সংখ্যা ও একটি সাধারণ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হতো। কিন্তু ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মননরেখা পুরোপুরি বিশেষ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে। তাই মননরেখাকে আমরা আপাতত ‘সংকলন’ই বলি। বলতে চাইছি, কোনো বিশেষ ব্র্যাকেটে মননরেখা নামের সংকলনটিকে না বেঁধেও সেটি নিয়ে আলোচনা করা চলে, পড়া চলে, সংগ্রহে রাখা চলে। 

পরিচয় আরও একটু দেওয়া দরকার। মননরেখা নামের এই সংকলন প্রকাশিত হচ্ছে রংপুর থেকে। অবশ্য মুদ্রণ ও বিপণনের বড় অংশ হয় রাজধানীতে। বিষয়বৈচিত্র্য, লেখার মান—সব দিক থেকে মননরেখার বিশেষ সংখ্যা, মানে ‘বিশেষ সংখ্যা’ই। সংখ্যাগুলোর বিষয়বস্তু জানলে অনেকেই চমকে উঠবেন। মোনাজাত উদ্দিন ও বিবিধ (ডিসেম্বর ২০১৭), বাংলাদেশের উর্দু কবি নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর ২০১৮), বাংলাদেশের নারী কবি (ডিসেম্বর ২০১৯), বাংলাদেশের উর্দু কবি আহমেদ ইলিয়াস (ডিসেম্বর ২০২০), চিলমারী বন্দর (জুন ২০২১) এবং সর্বশেষ বেহুলা (ডিসেম্বর ২০২১)। 

‘মননরেখা’ নামের এই সংকলনের সম্পাদক মিজানুর রহমান নাসিম। তিনি দর্শনের ছাত্র ও শিক্ষক। পড়ান কুড়িগ্রামের চিলমারীর গোলাম হাবিব মহিলা ডিগ্রি কলেজে। তাই সর্বান্তকরণে এই সংকলনকে ‘প্রান্তিক’ তকমা দেওয়া যায় খুব সহজে। কিন্তু কেন এত শব্দ খরচ মননরেখা নামের এই সংকলনের জন্য? বিবেচনার বিষয় সেটিই। 

বাংলাদেশের ছোট কাগজের ইতিহাসে অনেক প্রকাশনা আছে। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা হাতে গোনা—সেটি সাহিত্য কিংবা যেকোনো বিষয় নিয়েই হোক না কেন। এ বিষয়ে বিস্তর আলাপ হতে পারে, তর্কবিতর্কও হতে পারে। প্রসঙ্গটি তুলে রাখা ভালো যে, স্থানীয় ইতিহাস নিয়ে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনার সংখ্যা এতই কম যে, তা কোনো দিন সামনেই আসে না। অথচ স্থানীয় ইতিহাসের ওপর ভিত্তি করেই একটি দেশের জাতীয় ইতিহাস রচিত হয়। মননরেখা ইতিহাস রচনার সে প্রক্রিয়াকে তুড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে নিজের পথ খুঁজে নিয়েছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশনাগুলোর একটি মীজানুর রহমানের ত্রৈমাসিক পত্রিকা। গুণে ও মানে সেটিই বাংলাদেশের বিশেষ সম্পদ। ‘নিরন্তর’ নামে আরেকটি সংকলনের কথা বলা যায়। ‘ঝলক’ দেখিয়ে সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। উল্লেখ করে রাখা ভালো, আমি কোনো তুলনায় যাচ্ছি না। প্রচেষ্টার কথা বলছি। মননরেখা অনেক রাস্তার ঘোরপ্যাঁচে নিজের রাস্তা খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টার মধ্যে আছে। 

দুই. 
মননরেখার ‘বেহুলা সংখ্যা’ কয়েক দিন আগেই প্রকাশিত হয়েছে। প্রায় ৫০০ বছরের চর্চিত চরিত্র বেহুলাকে নিয়ে ২১টি ভিন্ন স্বাদের প্রবন্ধ রয়েছে এই সংকলনে। জীবনানন্দ, বিষ্ণু দে, শামসুর রাহমানসহ আট কবির আটটি কবিতার পুনর্মুদ্রণ, আছে শওকত আলীর ‘শুন হে লখিন্দর’ গল্পের পুনর্মুদ্রণসহ আরও তিনটি গল্প, মহাশ্বেতা দেবীর ‘বেহুলা’ গল্পের আলোচনা, বই আলোচনা দুটি এবং বেশ কিছু রঙিন ও সাদাকালো ছবি আছে সংকলনটিতে। এ ছাড়া আছে ‘বেহুলা’ সিনেমার অভিনেত্রী সুচন্দা ও ‘ফিরে এসো বেহুলা’ সিনেমার পরিচালক তানিম নূরের সাক্ষাৎকার। সংকলনটির শুরু হয়েছে হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও ভূপেন হাজারিকার গান দিয়ে। 

মননরেখা, চলতি সংখ্যাসূচিপত্র দেখলেই বোঝা যায়, সম্পাদক বেহুলাকে যতভাবে, যত দৃষ্টিকোণ থেকে সম্ভব বোঝার চেষ্টা করেছেন। প্রায় ৫০০ বছর ধরে যে আখ্যান চলে আসছে বিহার থেকে বাংলা পর্যন্ত, বিভিন্ন দৃষ্টিতে সেই আখ্যানকে বিশ্লেষণ করার মতো কোনো প্রয়াস কোথাও নেই। ‘আধুনিক’ তকমার অধীনে যে সাহিত্য ও শিল্পকলার চর্চা হয়ে চলেছে আমাদের দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় বসে, তাতে বেহুলা অস্পৃশ্য—যেমন দেবতাদের জগতে অস্পৃশ্য ছিল মনসা। অথচ শ পাঁচেক বছর ধরে এই একই আখ্যান বিভিন্ন পাঠে গীত ও পরিবেশিত হয়ে আসছে আমাদের সমাজে, যাকে আমরা লোকসংস্কৃতি বলি সেই ধারার গানে, নাটকে, পুঁথিতে, কবিতায় ও চিত্রশিল্পে। আর বড় অংশ লোকধর্মের আধারে। ১৯৪৭ সালে যে কারণে একটি বৃহৎ ভূখণ্ড তিন টুকরো হয়ে গেল, বেহুলার মতো অনেক কিছুর চর্চায় তার অভিঘাত অস্বীকার করা যায় না বর্তমান বাংলাদেশে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ? সেখানেও তো বেহুলা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা নেই। কারণ কী? 

খুঁজে দেখলেই বোঝা যায়, এর পেছনের মূল কারণ মনসার মতো ‘উনকোটি’ বা অপ্রধান দেবতারা আসলে ক্ষমতাকাঠামোর বাইরের বলয়ের গল্প। যে ‘বত্রিশ জন-কোটি’ দেবতা বা প্রধান দেবতা, তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা সবখানেই। যেমন, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ইত্যাদি ‘কোটি’ বা প্রধান দেবতারা কিন্তু সাড়ম্বরে পূজিত সবখানে। অন্যদিকে মনসা, শনি বা এ রকম অপ্রধান বা উনকোটি দেবতারা থেকে গেছেন সমাজের নিচের তলায়। কাজেই তাঁদেরও চাঁদ বেনেদের সহায়তা দরকার সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে। বেহুলার আখ্যান সে কারণে তথাকথিত ‘আধুনিক’ সাহিত্য বা শিল্পকলার ‘দণ্ডধারী’দের কাছে তেমন পাত্তা পায়নি। একুশ শতকের সিকিভাগ চলে যাওয়ার কালে মননরেখা বেহুলাকে নিয়ে একটি বিস্তারিত সংকলন তৈরির চেষ্টা করেছে সীমাবদ্ধতার কথা বিবেচনায় রেখেও।

এই সংখ্যার সীমাবদ্ধতা কিছু আছে। সাদা চোখে বলা যায়, (১) বেহুলা নিয়ে আলোচনা হবে আর নদীর কথা থাকবে না, সেটা মানা যায় না। নদী নিয়ে একটি লেখা থাকা উচিত ছিল। তাহলে পুরো আলোচনাটা পূর্ণতা পেত। বেহুলার আলোচনায় নদী অনুপস্থিত থাকায় সংকলনের অঙ্গহানি হয়েছে। (২) বেহুলা ও মনসার সমাজতাত্ত্বিক আলোচনা নেই। কিন্তু ক্ষমতাকাঠামোর আলোকে কিংবা নারী ও পুরুষতান্ত্রিকতার আলোকে বেহুলাকে বিচার করার আলোচনা আছে। (৩) মনসামঙ্গল বা পদ্মাপুরাণের পরিচিতিমূলক একটা লেখা থাকতেই পারত। কারণ, বেহুলার আখ্যান এগুলোর মাধ্যমেই প্রচারিত হয়েছে। (৪) লেখার জন্য শব্দসংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কোনো লেখা দেড় হাজার আর কোনো লেখা তিন হাজার শব্দের হলে দৃষ্টিদূষণ তৈরি হয়। তার চেয়ে বরং মাঝামাঝি হওয়া ভালো। (৫) বুক ডিজাইনে আরেকটু যত্নবান হওয়া দরকার। প্রচ্ছদ, ইনার ডিজাইন, শব্দসংখ্যা, ফন্টের আকারসহ সবকিছু দিন শেষে বইয়েরই অংশ। এই সব মিলিয়েই একখানি দৃষ্টিনন্দন পুস্তক তৈরি হয়। আশা করব, ভবিষ্যতের মননরেখা সর্বাঙ্গীণ সুন্দর হবে। 

মননরেখার নয়টি সংখ্যাতিন. 
এবার মননরেখার আগের সংখ্যাগুলো নিয়ে একটু কথা বলা যাক।

মননরেখার এই সংখ্যার আগের সংখ্যাটি ছিল চিলমারী বন্দর নিয়ে। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই/ হাঁকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে রে’ ভাওয়াইয়া গানের এই চিলমারী বন্দর যে এককালে বাণিজ্য-অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল, সে কথা কজন জানে? ভুলে যাওয়া এই বন্দরকে নতুন করে চিনিয়েছে মননরেখা (জুন, ২০২১ সংখ্যা)। 

মোনাজাতউদ্দিনকে আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। কিন্তু মননরেখা তাঁকে আবার খুঁজে এনেছে (ডিসেম্বর, ২০১৭)। শুধু খুঁজেই আনেনি, বিবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে মোনাজাতউদ্দিনকে চেনার চেষ্টা করেছে নতুনভাবে। এই চেষ্টা বড় একটা চোখে পড়ে না। মোনাজাতউদ্দিন রংপুরের মানুষ বলে নয়, সাংবাদিকতার ইতিহাসে দেশে একজন ‘প্রাতঃস্মরণীয়’ মানুষ তিনি। কোনো নির্দিষ্টতা দিয়ে মোনাজাতউদ্দিন ও তাঁর মানুষের গল্পকে যে ছকে বাঁধা যায় না, তাঁকে যে সাংবাদিক তকমার একরৈখিকতায় ধরা যায় না, বোঝা যায় না, সে বোধটুকু দেখিয়েছেন সম্পাদক। 

জাতীয়তাবাদের একরৈখিক ধারায় নওশাদ নূরী (ডিসেম্বর, ২০১৮ সংখ্যা) ও আহমেদ ইলিয়াসকে (ডিসেম্বর, ২০২০ সংখ্যা) আমরা ভুলে গেছি বেমালুম। অথচ ‘খামোখা’ই বাস্তুচ্যুত হয়ে তাঁরা দুজনই ঘরের খোঁজ করেছেন প্রায় পুরো জীবন। অশীতিপর আহমেদ ইলিয়াস এখনো জীবিত থাকলেও নওশাদ নূরী মারা গেছেন ২০০০ সালে। এ দুই উর্দুভাষী কবিই বাংলা ভাষা ও বাঙালির জন্য কবিতা লিখেছেন, কথা বলেছেন। সে জন্য পাকিস্তানি শাসকদের রোষানলে পড়ে দেশ ছেড়েছেন, আবার ফিরে এসেছেন। পরিবার-স্বজন যখন তাঁদের ছেড়ে গেছেন, তখন তাঁরা এ দেশের মায়ায় পড়ে থেকে গেছেন এখানেই। মননরেখা আমাদের সেই সব গল্পই শুনিয়েছে। সেই সব ইতিহাস তুলে আনার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা করেছে। এখানেই মননরেখার গুরুত্ব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
গাবতলী সেতু বধ্যভূমি

মুক্তিযুদ্ধের সময় সমগ্র মিরপুর পরিণত হয়েছিল এক বধ্যভূমিতে। আর বৃহত্তর মিরপুরে অবস্থিত গাবতলী এলাকা। তুরাগ নদের ওপরই গাবতলী সেতু অবস্থিত। সেই গাবতলীতে কয়েক বছর আগেও নদের ওপর ছিল পুরোনো একটি লোহার সেতু। সেই পুরোনো সেতুতে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা চালিয়েছিল পাশবিক হত্যাযজ্ঞ। ঢাকার গাবতলীর পাশের তুরাগ নদের উত্তর পারেই সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নের ইসাকাবাদ গ্রাম অবস্থিত। গ্রামটি থেকে স্পষ্ট দেখা যেত গাবতলী সেতু। সেই গ্রামেরই বয়স্ক এক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা করেছেন এভাবে, প্রতিদিন রাতের বেলা মিলিটারি আর বিহারিরা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রাকে করে এই সেতুতে মানুষদের নিয়ে আসত। রাত গভীর হলে সেতুর দুই পাশের বাতি নিভিয়ে গুলি চালানো হতো। পুরো যুদ্ধের সময় এখানে এমন রাত ছিল না, যে রাতের বেলা সেখানে লাশ ফেলানো হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পাঁচ দশকের বেশি সময় পার হলেও এখনো এ জায়গাকে বধ্যভূমি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সম্পাদকীয়
সাহিত্যচর্চা এবং মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট

সৃজনশীল সাহিত্য কিন্তু দেয়াললিখন বা স্লোগান দেওয়া নয়। জীবন এতই জটিল যে তাকে কোনো ফর্মুলায় বেঁধে ফেলা যায় না। মানুষের মূল্যবোধ নানা রকমের। আর সেগুলো দিয়ে যে সিস্টেমগুলো পাওয়া যেতে পারে, তা-ও নানা রকমের। একেক লেখকের কমিটমেন্ট একেক রকম মূল্যবোধের কাছে।

অনেক লেখকই আছেন যাঁরা খুব ধর্মপ্রাণ, কেউবা আবার কমিউনিস্ট ৷ হিউম্যানিস্ট লেখক যেমন আছেন, তেমনই আছেন অথোরিটারিয়ান লেখক।

তবে সে যা-ই হোক, ভালো সাহিত্যিকের মধ্যে দুটো কমিটমেন্ট থাকতেই হবে—সততা আর স্টাইলের দক্ষতা। নিজের কাছেই যে-লেখক অসৎ, যা লেখেন তা যদি তিনি নিজেই না বিশ্বাস করেন, তাহলে সেই লেখকের পতন অনিবার্য।

কোনো লেখক আবার যদি নিজের ভাষার ঐশ্বর্যকে ছেঁকে তুলতে ব্যর্থ হন, একজন সংগীতশিল্পীকে ঠিক যেভাবে তাঁর যন্ত্রটিকে নিজের বশে আনতে হয়, ভাষার ক্ষেত্রেও তেমনটা যদি কোনো লেখক করতে না পারেন, তাহলে একজন সাংবাদিক ছাড়া আর কিছুই হতে পারবেন না তিনি। সত্য এবং স্টাইল—একজন সাহিত্যিকের বেসিক কমিটমেন্ট হলো শুধু এই দুটো।

সূত্র: সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ টুডে’ পত্রিকার মার্চ, ১৯৮৪ সংখ্যায়, সাক্ষাৎকার গ্রহীতা সেরাজুল ইসলাম কাদির, অনুবাদক নীলাজ্জ দাস, শিবনারায়ণ রায়ের সাক্ষাৎকার সংগ্রহ, পৃষ্ঠা-২৭।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

সম্পাদকীয়
রমনা কালীবাড়ি বধ্যভূমি

বর্তমান ঢাকার সোহরাওয়ার্দি উদ্যানের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত রমনা কালী মন্দির ও আনন্দময়ীর আশ্রম। এটি রমনা কালীবাড়ি নামেও পরিচিত। ইংরেজ আমলে এই মন্দিরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছিল। কথিত আছে, শংকরাচার্যের অনুগামী দর্শনার্থী সম্প্রদায় এ কালী মন্দির প্রতিষ্ঠা করে। প্রায় ৫০০ বছর আগে বদ্রী নারায়ণের যোশী মঠের সন্ন্যাসী গোপাল গিরি ঢাকায় এসে রমনায় প্রথমে একটি আখড়া স্থাপন করেন। তখন এ আখড়াটি কাঠঘর নামে পরিচিত ছিল।

পরে সম্ভবত ১৭ শতকের প্রথম দিকে এ স্থানেই হরিচরণ গিরি মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেন। কালীবাড়ি মন্দিরটি ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণে বিধ্বস্ত হয়। তারা মন্দির ও আশ্রমটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। মন্দিরের সেবায়েতসহ প্রায় ১০০ সন্ন্যাসী, ভক্ত এবং সেখানে বসবাসরত সাধারণ মানুষ নিহত হন। যদিও এখন বধ্যভূমির কোনো চিহ্ন নেই। তবে সেটাকে বধ্যভূমি হিসেবে অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ছবি: সংগৃহীত

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আমাদের অর্জন অনেক

সম্পাদকীয়
আমাদের অর্জন অনেক

...এটা অনস্বীকার্য যে আমরা বিজয়ী। আমরা জয়ী আর শোষকেরা পরাজিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্বপ্ন সামনে রেখেই, তাঁদের ত্যাগকে স্বীকার করেই আমরা সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলেছিলাম, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার নির্ধারণ করবে।

এগুলো নিয়ে কোনো বিতর্ক আছে বলে মনে করি না। কিন্তু বর্তমানে এটা কী হচ্ছে? যদি বলি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিক পথে এগোচ্ছে না, তাহলে সেই না এগোনোর কারণটা কী, তা নিয়ে কেন অর্থপূর্ণ আলোচনা হচ্ছে না? আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন আকারেই উত্থাপন করছি। আমাদের অর্জন অনেক। আজ আমাদের গার্মেন্টসশিল্প বিশ্বে তৃতীয়। আমরা খুব দ্রুত দ্বিতীয় বা প্রথমের কাতারে চলে যাব। আমাদের লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে বিদেশে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠাচ্ছে। প্রতিবছর কৃষির উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এসবের পরেও কী হচ্ছে? বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে।

... পাকিস্তানিদের কথা আর কী বলব! আক্ষরিক অর্থেই তারা তখন আমাদের পা ধরেছিল। ‘তোমরা এদের ছেড়ে দাও, আমরা নিজের দেশে নিয়ে গিয়ে এদের বিচার করব।’ ১৯৫ জনকে আমরা চিহ্নিত করি তখন। বঙ্গবন্ধু তখন রাশিয়াতে ছিলেন, তারা সেখানে বঙ্গবন্ধুর কাছে লোক পাঠিয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে বলেছে, ‘আপনারা যদি এ বিচার করেন তাহলে ভুট্টোর কল্লা থাকবে না। আমাদের কাছে ফেরত দিন, আমরা এদের বিচার করব।’ এটা সে সময় ‘লন্ডন টাইমস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। একেবারে তারা আন্ডারটেকিং দিয়েছে, ‘ছেড়ে দিন, আমরা বিচার করব। আর কোনো সাক্ষী লাগলে তোমাদের ডেকে পাঠানো হবে।’ শিল্পকলা একাডেমির যে বিল্ডিং ভেঙে এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট হয়েছে, ওই বিল্ডিংয়ে ভর্তি ছিল স্টেটমেন্টগুলো। এগুলো কী হয়েছে, কে গুম করেছে, আমি জানি না। এর মধ্যে অনেক সরকার এসেছে, গেছে। তবে আমরা খুব পরিশ্রম করেই এগুলো সংগ্রহ করেছিলাম।

সূত্র: শারমিনুর নাহার কর্তৃক ড. কামাল হোসেনের সাক্ষাৎকার গ্রহণ; ‘সময় সমাজ ও রাজনীতির ভাষ্য’, পৃষ্ঠা: ৩১-৩২।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপি থেকে পাঁচবার বহিষ্কৃত আখতারুজ্জামান

হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, মস্তিষ্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত, ফুসফুসেও আঘাত: মেডিকেল বোর্ড

মা-বাবাকে নির্যাতন, ছেলেকে কোমর পর্যন্ত মাটিতে পুঁতে রাখল প্রতিবেশীরা

অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২ অবিলম্বে চালু হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেসিকে কলকাতায় আনার মূল উদ্যোক্তা আটক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত