বর্তমানে প্রজনন মৌসুম চলায় সুন্দরবনে কাঁকড়া শিকারের ওপর সরকারিভাবে নিষেধাজ্ঞা চলছে। এতে করে বিপাকে পড়েছেন সাতক্ষীরা রেঞ্জের ১২ হাজার জেলে। আয়রোজগার বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাঁরা কাঁকড়া ধরা বন্ধের দিনগুলোয় সরকারি সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য সাতক্ষীরা রেঞ্জে ১ হাজার ৭২৮টি নৌকার অনুমতি রয়েছে। এসব নৌকা দিয়ে কমপক্ষে ১২ হাজার জেলে সুন্দরবনে যান কাঁকড়া ধরতে। প্রজনন মৌসুম হওয়ায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাস বন্ধ থাকে কাঁকড়া শিকার। এ সময় শিলা প্রজাতির কাঁকড়া সাগর থেকে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদীতে ঝাঁকে ঝাঁকে উঠে আসে ডিম পাড়ার জন্য। এ ছাড়া বনের প্রাণপ্রকৃতি রক্ষায় জুন, জুলাই ও আগস্ট—এই তিন মাস বন্ধ থাকে জেলেদের বনে প্রবেশ। সব মিলিয়ে পাঁচ মাস মাছ ও কাঁকড়া ধরা বন্ধ থাকে।
এ সময়ে জেলে পরিবারগুলো আর্থিক সংকটে থাকে বলে সদস্যরা দাবি করেছেন। শ্যামনগরের ভেটখালী এলাকার গীতা রায় বলেন, ‘এখন দুই মাস কাঁকড়া ধরা বন্ধ। অন্য সময় তিন মাস সুন্দরবনে যাওয়া বন্ধ। এই পাঁচ মাসে এক ছটাক সরকারি চালও আমরা পাই না। তাহলে কী করে খাব?’
একই এলাকার ভবতোষ রায় বলেন, ‘নদীর ধারে আমাদের বাড়ি। কাঁকড়া ধরে খেতে হয়। আমাদের জমিজমা নেই। তা ছাড়া অধিকাংশ এলাকা ঘের হওয়ায় কাজকাম নেই। ১০০ বিঘা জমির ঘেরে একজন কর্মচারীই যথেষ্ট। তাহলে আমাদের উপায় কী হবে?’
আশাশুনির প্রতাপনগরের বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘দুই মাস কাঁকড়া ধরা বন্ধ। ফলে খুব কষ্ট যাচ্ছে। সরকার যদি একটু সাহায্য করত, তাহলে আমরা বাঁচতে পারতাম।’
এদিকে সমস্যায় পড়েছেন কাঁকড়াচাষিরা। রেণুর সংকটে কাঁকড়ার খামার বন্ধ হওয়ার উপক্রম। শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী এলাকার কাঁকড়াচাষি বিকাশ দাস বলেন, ‘বছরের পাঁচ মাস যদি কাঁকড়ার পোনা না পাওয়া যায়, তবে উপায় কী? জেলেরা কাঁকড়া দিতে পারছে না, তাই মালিকেরাও চাষ করতে পারছে না। আমরা কেউ আর্থিকভাবে ভালো নেই। করোনার সময় থেকে লোকসানে জর্জরিত। জেলেরা পোনা বা বড় কাঁকড়া দিলে আমরা সেটা ঘেরে ছেড়ে দিই। জেলেরা বছরের প্রায় ছয় মাস বেকার থাকছে। তারা কাঁকড়া দিতে পারে না। আর আমরাও ঘেরে কাঁকড়া চাষ করতে পারি না।’
একই এলাকার চাষি বিজয় দাস জানান, কাঁকড়া উৎপাদনের বিকাশ ঘটাতে হলে পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারি স্থাপন করতে হবে। না হলে পোনার অভাবে কাঁকড়াচাষিরা দিশেহারা হয়ে যাচ্ছেন।
এখন দুই মাস কাঁকড়া ধরা বন্ধ। অন্য সময় তিন মাস সুন্দরবনে যাওয়া বন্ধ। এই পাঁচ মাসে এক ছটাক সরকারি চালও আমরা পাই না। তাহলে কী করে খাব?’
জেলেদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে কথা হলে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক হাছানুর রহমান বলেন, জীবন ও প্রকৃতি রক্ষায় সরকারের আদেশে সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ থাকে। তবে বেকার হয়ে যাওয়া জেলেদের সরকারিভাবে সহায়তা করার কোনো উদ্যোগ বন বিভাগের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় না।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. রনী খাতুন বলেন, ‘শ্যামনগরে ২৩ হাজার ৯২৮টি জেলে পরিবার রয়েছে, যাদের আপৎকালীন প্রণোদনা দেওয়ার জন্য উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আহ্বান করেছি। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সেফটি নেটের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।’