Ajker Patrika

সাতক্ষীরায় চিংড়ি উৎপাদন

চিংড়িঘেরে মড়ক, দিশেহারা চাষি

  • পোনা ভাইরাসমুক্ত ও পুষ্ট না হওয়ায় মারা যাচ্ছে।
  • নিম্নমানের পোনা না ছাড়ার পরামর্শ মৎস্য কর্মকর্তাদের।
  • চাষিরা মৎস্য কর্মকর্তাদের সরেজমিনে দেখতে চান
  • ঋণের টাকা শোধ নিয়ে চিন্তায় ঘেরের মালিকেরা।
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ১৩
মড়কে আক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়া গলদা চিংড়ি হাতে এক চাষি। সম্প্রতি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার একটি ঘেরে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মড়কে আক্রান্ত হয়ে মরে যাওয়া গলদা চিংড়ি হাতে এক চাষি। সম্প্রতি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার একটি ঘেরে। ছবি: আজকের পত্রিকা

সাতক্ষীরায় বাগদা চিংড়ির ঘেরে মড়ক লেগেছে। এতে দিশেহারা চাষিরা। বছরের শুরুতে মড়ক লাগায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মাছ মরার অভিযোগ উঠলেও মৎস্য বিভাগের দাবি, ঘেরে পানি কমে যাওয়ায় দাবদাহে মরে যাচ্ছে মাছ।

সদর উপজেলার এল্লারচর এলাকার ঘেরচাষি আহমেদ করিম বলেন, ‘মাস দেড়েক আগে ঘেরে বাগদা পোনা ছেড়েছিলাম। মাছ যতটুকু বড় হয়েছে, তাতে কেজিতে ৬০টি হবে। সাম্প্রতিক সময়ে মাছ মরা শুরু হয়েছে। সমিতি থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করেছিলাম। সেই টাকা শোধ করার আমার কোনো উপায় নেই।’

বিনেরপোতা এলাকার ঘেরচাষি তারেক আহমেদ বলেন, ‘আমি ১৫ বিঘা জমিতে ১ লাখ পোনা ছেড়েছিলাম। এখন জাল টানলেই মরা বাগদা ওঠে। এ ছাড়া মরা মাছে পানি দূষিত হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে আমরা ঘেরচাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছি।’

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরায় ৫৫ হাজার ঘের রয়েছে।

আয়তনে ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে বাগদা চাষ হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩০ হাজার টন। তবে সরেজমিনে জানা যায়, এক-তৃতীয়াংশ ঘেরে মড়ক লেগেছে। তাই এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সাদা সোনাখ্যাত বাগদা জেলার প্রধান অর্থকরী পণ্য। অন্যান্য বছরের মতো এবারও চাষিরা ভালো ফলনের আশায় ঘেরে ছেড়েছেন বাগদার পোনা। তবে এবারও বিধি বাম। গত বছরের মতো এবারও পোনা ছাড়ার পরে একটু বড় হতে না হতেই মারা যাচ্ছে বাগদা। সপ্তাহ দুয়েক চলছে এই অবস্থা। প্রথম চালান পোনা ছাড়ার পরে মাছ ধরার মুহূর্তে মড়কে উজাড় হয়ে গেছে অধিকাংশ ঘের। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা।

অনেকে বলছেন, কক্সবাজার থেকে আসা পোনা ভাইরাসমুক্ত ও পুষ্ট না থাকার কারণে মারা যাচ্ছে মাছ।

কালীগঞ্জ উপজেলার শ্রীকলা গ্রামের মৎস্যচাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ওষুধে কাজ না হওয়ায় ঘের শুকিয়ে মাছ চাষের উপযোগী করছি। কিন্তু আগে জমির হারি, মাছ ছাড়া ও খাদ্যের সব খরচ তো হয়ে গেছে। এই পুঁজি ফেরত আনার সুযোগ নেই।’

মৎস্য বিভাগের পরামর্শ না পাওয়ার অভিযোগ করছেন অনেক চাষি। তাঁদের দাবি, মৎস্য কর্মকর্তারা যেন সরেজমিনে দেখে চাষিদের পরামর্শ দেন।

মাছ মারা যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে পুষ্ট পোনার অভাবকে দায়ী করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা। এদিকে মানসম্মত পোনা স্ক্যান করার জন্য দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা একটি ল্যাবও রয়েছে এল্লারচর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রে। কিন্তু সেখানে পোনার ভাইরাস স্ক্যান করার সুযোগ পান না অধিকাংশ চাষি। এ নিয়ে ক্ষোভ চাষিদের।

সদর উপজেলার এল্লারচর এলাকার চাষি মিনহাজুল আবেদীন বলেন, ‘কক্সবাজারে যারা পোনা উৎপাদন করে, তাদের সমস্যা আছে। পুষ্ট পোনা তারা উৎপাদন করতে পারে না। তাই তো আমরা ২০১৯ থেকে এই ২০২৫ সাল পর্যন্ত ঘেরে মার খাচ্ছি। আমরা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছি। আমাদের ব্যবসা সব শেষ।’ প্রযুক্তির এই যুগে পোনার ভাইরাস স্ক্যান করার সুযোগ না পাওয়া এবং মৎস্য কর্মকর্তাদের সরেজমিনে এসে পরামর্শ না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন মিনহাজ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জি এম সেলিম বলেন, ‘বাগদা মারা যাওয়ার কিছু অভিযোগ আসছে। আমরা পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছি, নিম্নমানের পোনা ঘেরে ছাড়া যাবে না। এ ছাড়া আধানিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে হবে। অবকাঠামোগত বিষয়টিও দেখতে হবে, যাতে পানি পরিমাণমতো থাকে। প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পরিচর্যা করতে হবে। তাহলে মাছ মরবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত