ঋণ কর্মসূচির আওতায় শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত মিশন। ঋণের কিস্তি পেতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী তিন মাসের মধ্যে রাজস্ব আদায় করতে হবে ২ লাখ কোটি টাকার বেশি। শুধু তাই নয় , রাজস্ব খাতে এমন পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে , যাতে আগামী বছরে অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়।
এ ছাড়াও ন্যূনতম করহার বাড়ানো, বিলাসী পণ্যে শুল্ক বাড়ানো, করছাড় প্রত্যাহার, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটের একক হার ১৫ শতাংশ করার ওপরও আইএমএফ জোর দিয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে গতকাল সোমবার আইএমএফ মিশন দলের সঙ্গে বৈঠক হয়। এতে চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ এনবিআরের সব সদস্য ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যানের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের কর - জিডিপি অনুপাত ৭ দশমিক ৪। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে বাংলাদেশের কর - জিডিপি অনুপাত ৭ দশমিক ৯ - এ উন্নীতি করার তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ। এর জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয় ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা।
তবে এ লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে রয়েছে এনবিআর। এনবিআরের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকা। এ রাজস্ব আদায়ের জন্য এনবিআরের হাতে সময় রয়েছে মাত্র ৩ মাস।
৩ মাসে ২ লাখ
গতকালের বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা জানান, আগামী বছরে অতিরিক্ত ৫৭ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের জন্য নীতি পরিবর্তনসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ। বাড়তি রাজস্ব আয়ের উপায় হিসেবে সানসেট ক্লজ, অর্থাৎ যেসব জায়গায় কর - শুল্ক অব্যাহতি বা ছাড় দেওয়া আছে, সেগুলো প্রত্যাহারের কথা বলেছে আইএমএফ।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আব্দুল মজিদ আজকের পত্রিকা'কে বলেন, 'এনবিআরের হাতে হাতিয়ার আছে রাজস্ব বাড়ানোর। এনবিআর স্পষ্ট করুক যে, আমি চেষ্টা করেও পারছি না। তাহলে কথা থাকবে না।’
দুর্বল ব্যাংককে তারল্য সহায়তায় আপত্তি
তারল্য সংকটে ধুঁকতে থাকা দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কথা ছিল ধারের টাকা ৯০ দিনের মধ্যে শোধ করবে ব্যাংকগুলো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এক টাকাও ফেরত দেয়নি তারা। এমন পরিস্থিতিতে কিছু দুর্বল ব্যাংককে দেওয়া তারল্য সহায়তা নিয়ে গুরুতর আপত্তি জানিয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের কাছে দুর্বল ব্যাংকের তারল্য সহায়তাসহ নানা বিষয়ে জানতে চান আইএমএফ মিশনের সদস্যরা। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংক খাতের ওপর গ্রাহকের আস্থা ফেরাতে দুর্বল ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল নিয়ে শুরু থেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে আইএমএফ। এবার সংস্থাটির কর্মকর্তারা তারল্য সহায়তা নেওয়া ব্যাংকগুলোর উন্নতি হয়েছে কি না, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে তেমন কোনো আশা দেখাতে পারেননি কর্মকর্তারা।
এ সময় আইএমএফ মিশন পরবর্তী করণীয় নিয়ে রোডম্যাপ জানতে চায়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এই ব্যাংকগুলোর অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'আইএমএফ আমাদের সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে প্রশংসা করেছে। আমরা দ্রুতই আর্থিক খাতের সংস্কার বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। এ ছাড়া বিভিন্ন অর্থনৈতিক ইন্ডিকেটর সম্পর্কেও তারা আলোচনা করেছে। সংস্থাটির সঙ্গে সর্বশেষ মিটিংয়ের পরই বিস্তারিত জানানো হবে।’
আরও খবর পড়ুন: