জাহাঙ্গীর আলম
উনিশ শতকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথিবী থেকে দাস প্রথার বিলোপ ঘটেছে। কিন্তু বর্তমানে এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে যেভাবে জাহাজ বা ডিঙি নৌকা ভরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যেভাবে মানুষ উন্নত দেশের উদ্দেশে ছুটছে তাতে এই অমানবিক প্রথা ফিরে আসার শঙ্কাই প্রবল হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন নতুন চেহারায় দাসপ্রথা প্রায় সব দেশেই বিরাজমান। নতুন রূপটি হচ্ছে শ্রমবাজার ও দাসের পারস্পরিক নির্ভরশীলতার। সুবিধাবঞ্চিত নিম্ন আয়ের মানুষেরা পুঁজিবাদী ও বাজার অর্থনীতির পৃথিবীর কাঠামোয় আধুনিক দাসে পরিণত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাবে, ২০১৬ সালে আনুমানিক ৪ কোটি ৩ লাখ মানুষ আধুনিক দাসত্বের নিগড়ে বাঁধা ছিল। এর মধ্যে ২ কোটি ৪৯ লাখ জোরপূর্বক বা বাধ্যতামূলক শ্রম এবং ১ কোটি ৫৪ লাখ জোরপূর্বক বিয়ের শিকার।
এর অর্থ হলো, তখনকার হিসেবে বিশ্বে প্রতি ১ হাজার জন মানুষের জন্য ৫ দশমিক ৪ জনই আধুনিক দাসত্বের শিকার। আর আধুনিক দাসত্বের শিকার ৪ টির মধ্যে ১টি শিশু।
বাধ্যতামূলক শ্রমের শিকলে বাঁধা পড়া ২ কোটি ৪৯ লাখ লোকের মধ্যে ১ কোটি ৬০ লাখ লোক বেসরকারি খাতে যেমন—গৃহকর্ম, নির্মাণ বা কৃষি শ্রমিক; ৪৮ লখ ব্যক্তি জোরপূর্বক যৌন শোষণের শিকার হয় এবং ৪০ লাখ ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক শ্রমের শিকার। নারী ও কিশোরীরা অসমানুপাতিক ভাবে জোরপূর্বক শ্রমের শিকার। এর মধ্যে প্রধানত বাণিজ্যিক যৌন ব্যবসার শিকার ৯৯ শতাংশই নারী ও কিশোরী। আর অন্যান্য খাতে তাদের অনুপাত ৫৮ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া সংজ্ঞানুযায়ী, যৌন ব্যবসার জন্য পাচার এবং বাধ্যতামূলক শ্রম উভয়ই বোঝাতে মানব পাচার এবং আধুনিক দাসত্ব শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়। ২০০০ সালের পাচারের শিকার সুরক্ষা আইনে (সংশোধিত) জাতিসংঘের কনভেনশনের পরিপূরক হিসেবে বাধ্যতামূলক শ্রম বলতে—অনৈচ্ছিক দাসত্ব, দাসত্ব বা দাসত্বের মতো ব্যবহার, ঋণের শিকল এবং জোরপূর্বক শ্রম ইত্যাদি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আধুনিক দাসত্বের রূপ:
মানব পাচার—জোরপূর্বক যৌনবৃত্তি, শ্রম, অপরাধমূলক কাজ, বিয়ে বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপসারণের উদ্দেশ্যে কাউকে পরিবহন, নিয়োগ বা আশ্রয় দেওয়ার জন্য নির্যাতন, হুমকি বা জবরদস্তি করা।
জোরপূর্বক শ্রম—শাস্তির হুমকি দিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ বা পরিষেবা দানে বাধ্য করা।
ঋণের শিকল/বন্ধন শ্রম—বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত দাসপ্রথা এটি। দারিদ্র্যে জর্জরিত লোকেরা অর্থ ধার করে এবং ঋণ পরিশোধের জন্য কাজ করতে বাধ্য হয়। তারা তখন কর্ম পরিবেশ এবং ঋণ উভয়ের ওপরই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
বংশ-পরম্পরায় দাসত্ব—এগুলোর বেশিরভাগই ঐতিহ্যগত ব্যাপার। এ ধরনের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিতে মানুষকে সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ধরনের ‘দাসত্ব’ সাধারণত মায়ের বংশ পরম্পরায় বইতে থাকে।
শিশুদের দাসত্ব—যখন একটি শিশু অন্য কারও লাভের জন্য শোষিত হয়। এর মধ্যে শিশু পাচার, শিশু সৈনিক, বাল্যবিবাহ এবং শিশু গৃহ দাসত্ব অন্তর্ভুক্ত।
জোরপূর্বক বিয়ে ও বাল্যবিবাহ—যখন কেউ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করে এবং আর ছেড়ে যেতে পারে না। বেশিরভাগ বাল্যবিবাহকে দাসত্ব হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
মানুষ আধুনিক দাসত্বে আটকা পড়ে কারণ তারা প্রায়শই দারিদ্র্য এবং বঞ্চনার কারণে প্রতারিত, ফাঁদ বন্দী এবং শোষিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এই বাহ্যিক পরিস্থিতিই মানুষকে তাদের পরিবারের ভরণপোষণের সুযোগের সন্ধানে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। অথবা শোষণমূলক কর্মপরিবেশে নিজেদের ঠেলে দেয়।
যখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বলপ্রয়োগ, বলপ্রয়োগের হুমকি, প্রতারণা, জবরদস্তি বা এই জাতীয় কোনো উপায়ের সংমিশ্রণে পাচারের শিকার হয়ে যৌন পেশার মতো বাণিজ্যিক যৌনকর্মে লিপ্ত হয়—সেটি হলো সেক্স ট্রাফিকিং বা যৌন ব্যবসার জন্য পাচার। তাদের একাধিকবার বিক্রি করা হয়। অনেক সময় তাদের ঋণের জালে ফেলে পেশায় থাকতে বাধ্য করা হয়। শিশুদের (১৮ বছরের কম বয়সী) ক্ষেত্রে ঘটনাটি আরও ভয়ানক। যৌনতার জন্য পাচারের শিকার শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক আঘাত, রোগ (এইচআইভি/এইডস সহ), মাদকাসক্তি, অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ, অপুষ্টি, সামাজিক বর্বরতা, এমনকি মৃত্যুই হয় পরিণতি।
আর জোরপূর্বক শ্রমের শিকার ব্যক্তিরা সাধারণত পাচার হয়। নির্যাতন বা নির্যাতনের হুমকি, মানসিকভাবে জবরদস্তি, আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার, প্রতারণা বা অন্য কোনোভাবে জবরদস্তি করা হয় তাদের ওপর। অভিবাসীরা এই ধরনের মানব পাচারের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। জোরপূর্বক বা বন্ডেড শ্রমের শিকার নারীরা, বিশেষ করে গৃহস্থালি দাসত্বের নারী ও কিশোরীরা প্রায়ই যৌন নির্যাতন বা শোষণের শিকার হয়।
বন্ডেড লেবার বা দাদন শ্রমিকদের বড় উদাহরণ হতে পারে ইট ভাটার শ্রমিক, উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায় ইত্যাদি। এর মধ্যে কিছু শ্রমিক উত্তরাধিকারসূত্রে ঋণের দায় বহন করে। ধারণা করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় যে লাখ লাখ মানুষ পাচারের শিকার হয়, তাদের পূর্বপুরুষদের ঋণ পরিশোধের জন্য তারা এখনো কাজ করছে। অন্যরা পাচারকারী বা নিয়োগকারীদের ঋণের জালে পড়ে আছে। কাজ হারানো এবং দেশে যাওয়ার ভয়ে এসব শ্রমিক আইনের আশ্রয় নেয় না।
গার্হস্থ্য দাসত্ব আমাদের দেশে খুবই সাধারণ ঘটনা। সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের খবর আসে। বিশেষ করে শহরের মধ্যবিত্তরা গ্রাম থেকে এই শ্রমিকদের আনেন। তারা একটি বাড়িতে সারা জীবন বা জীবনের অধিকাংশ সময় বন্দী থাকে। পান থেকে চুন খসলেই নির্যাতনের শিকার হয়। এরা বেতনও পায় অনেক কম। অনেক গৃহকর্মী মৌলিক সুবিধা এবং সুরক্ষা পায় না। অবাধে চলাফেরা করার ক্ষমতা প্রায়শই সীমিত হয় এবং বাড়িতে আবদ্ধ কর্মসংস্থান তাদের বিচ্ছিন্নতা এবং দুর্বলতা বাড়ায়। ফলে এরা বেশি বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার হয়। গৃহকর্মীরা, বিশেষ করে নারীরা, যৌন ও লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা সহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন, হয়রানি এবং শোষণের মুখোমুখি হয়। একজন গৃহকর্মীর নিয়োগকর্তার যখন সামাজিক মর্যাদা থাকে এবং কিছু আইনি এখতিয়ার থেকে সুরক্ষা ভোগ করে, তখন গৃহকর্মীর নিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়ে।
আধুনিক দাসত্বের আরেকটি ভয়ংকর উদাহরণ হলো শিশু সৈনিক। এটি মানব পাচারের একটি ধরন। সরকারি সশস্ত্র বাহিনী, আধা সামরিক সংস্থা বা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দ্বারা বলপ্রয়োগ, জালিয়াতি বা জবরদস্তির মাধ্যমে শিশুদের যৌন কাজে বা যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগকে যোদ্ধা হিসেবে এবং অন্যদের দারোয়ান, বাবুর্চি, পাহারাদার, চাকর, বার্তাবাহক বা গুপ্তচর হিসেবে কাজ করানো হয়। অল্পবয়সী মেয়েদের ‘বিয়ে’ করতে বাধ্য করা হতে পারে বা কমান্ডার এবং পুরুষ যোদ্ধাদের দ্বারা ধর্ষিত হতে পারে। কম্বোডিয়া, মিয়ানমার এবং আফ্রিকার বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলে এমন ঘটনা ঘটে।
শ্রমিক সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
উনিশ শতকের পর আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথিবী থেকে দাস প্রথার বিলোপ ঘটেছে। কিন্তু বর্তমানে এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে যেভাবে জাহাজ বা ডিঙি নৌকা ভরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যেভাবে মানুষ উন্নত দেশের উদ্দেশে ছুটছে তাতে এই অমানবিক প্রথা ফিরে আসার শঙ্কাই প্রবল হচ্ছে। এ ছাড়া নতুন নতুন চেহারায় দাসপ্রথা প্রায় সব দেশেই বিরাজমান। নতুন রূপটি হচ্ছে শ্রমবাজার ও দাসের পারস্পরিক নির্ভরশীলতার। সুবিধাবঞ্চিত নিম্ন আয়ের মানুষেরা পুঁজিবাদী ও বাজার অর্থনীতির পৃথিবীর কাঠামোয় আধুনিক দাসে পরিণত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) হিসাবে, ২০১৬ সালে আনুমানিক ৪ কোটি ৩ লাখ মানুষ আধুনিক দাসত্বের নিগড়ে বাঁধা ছিল। এর মধ্যে ২ কোটি ৪৯ লাখ জোরপূর্বক বা বাধ্যতামূলক শ্রম এবং ১ কোটি ৫৪ লাখ জোরপূর্বক বিয়ের শিকার।
এর অর্থ হলো, তখনকার হিসেবে বিশ্বে প্রতি ১ হাজার জন মানুষের জন্য ৫ দশমিক ৪ জনই আধুনিক দাসত্বের শিকার। আর আধুনিক দাসত্বের শিকার ৪ টির মধ্যে ১টি শিশু।
বাধ্যতামূলক শ্রমের শিকলে বাঁধা পড়া ২ কোটি ৪৯ লাখ লোকের মধ্যে ১ কোটি ৬০ লাখ লোক বেসরকারি খাতে যেমন—গৃহকর্ম, নির্মাণ বা কৃষি শ্রমিক; ৪৮ লখ ব্যক্তি জোরপূর্বক যৌন শোষণের শিকার হয় এবং ৪০ লাখ ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া বাধ্যতামূলক শ্রমের শিকার। নারী ও কিশোরীরা অসমানুপাতিক ভাবে জোরপূর্বক শ্রমের শিকার। এর মধ্যে প্রধানত বাণিজ্যিক যৌন ব্যবসার শিকার ৯৯ শতাংশই নারী ও কিশোরী। আর অন্যান্য খাতে তাদের অনুপাত ৫৮ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া সংজ্ঞানুযায়ী, যৌন ব্যবসার জন্য পাচার এবং বাধ্যতামূলক শ্রম উভয়ই বোঝাতে মানব পাচার এবং আধুনিক দাসত্ব শব্দগুলো ব্যবহৃত হয়। ২০০০ সালের পাচারের শিকার সুরক্ষা আইনে (সংশোধিত) জাতিসংঘের কনভেনশনের পরিপূরক হিসেবে বাধ্যতামূলক শ্রম বলতে—অনৈচ্ছিক দাসত্ব, দাসত্ব বা দাসত্বের মতো ব্যবহার, ঋণের শিকল এবং জোরপূর্বক শ্রম ইত্যাদি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
আধুনিক দাসত্বের রূপ:
মানব পাচার—জোরপূর্বক যৌনবৃত্তি, শ্রম, অপরাধমূলক কাজ, বিয়ে বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অপসারণের উদ্দেশ্যে কাউকে পরিবহন, নিয়োগ বা আশ্রয় দেওয়ার জন্য নির্যাতন, হুমকি বা জবরদস্তি করা।
জোরপূর্বক শ্রম—শাস্তির হুমকি দিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ বা পরিষেবা দানে বাধ্য করা।
ঋণের শিকল/বন্ধন শ্রম—বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত দাসপ্রথা এটি। দারিদ্র্যে জর্জরিত লোকেরা অর্থ ধার করে এবং ঋণ পরিশোধের জন্য কাজ করতে বাধ্য হয়। তারা তখন কর্ম পরিবেশ এবং ঋণ উভয়ের ওপরই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।
বংশ-পরম্পরায় দাসত্ব—এগুলোর বেশিরভাগই ঐতিহ্যগত ব্যাপার। এ ধরনের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতিতে মানুষকে সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ধরনের ‘দাসত্ব’ সাধারণত মায়ের বংশ পরম্পরায় বইতে থাকে।
শিশুদের দাসত্ব—যখন একটি শিশু অন্য কারও লাভের জন্য শোষিত হয়। এর মধ্যে শিশু পাচার, শিশু সৈনিক, বাল্যবিবাহ এবং শিশু গৃহ দাসত্ব অন্তর্ভুক্ত।
জোরপূর্বক বিয়ে ও বাল্যবিবাহ—যখন কেউ তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করে এবং আর ছেড়ে যেতে পারে না। বেশিরভাগ বাল্যবিবাহকে দাসত্ব হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।
মানুষ আধুনিক দাসত্বে আটকা পড়ে কারণ তারা প্রায়শই দারিদ্র্য এবং বঞ্চনার কারণে প্রতারিত, ফাঁদ বন্দী এবং শোষিত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। এই বাহ্যিক পরিস্থিতিই মানুষকে তাদের পরিবারের ভরণপোষণের সুযোগের সন্ধানে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করে। অথবা শোষণমূলক কর্মপরিবেশে নিজেদের ঠেলে দেয়।
যখন একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি বলপ্রয়োগ, বলপ্রয়োগের হুমকি, প্রতারণা, জবরদস্তি বা এই জাতীয় কোনো উপায়ের সংমিশ্রণে পাচারের শিকার হয়ে যৌন পেশার মতো বাণিজ্যিক যৌনকর্মে লিপ্ত হয়—সেটি হলো সেক্স ট্রাফিকিং বা যৌন ব্যবসার জন্য পাচার। তাদের একাধিকবার বিক্রি করা হয়। অনেক সময় তাদের ঋণের জালে ফেলে পেশায় থাকতে বাধ্য করা হয়। শিশুদের (১৮ বছরের কম বয়সী) ক্ষেত্রে ঘটনাটি আরও ভয়ানক। যৌনতার জন্য পাচারের শিকার শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক ও মানসিক আঘাত, রোগ (এইচআইভি/এইডস সহ), মাদকাসক্তি, অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ, অপুষ্টি, সামাজিক বর্বরতা, এমনকি মৃত্যুই হয় পরিণতি।
আর জোরপূর্বক শ্রমের শিকার ব্যক্তিরা সাধারণত পাচার হয়। নির্যাতন বা নির্যাতনের হুমকি, মানসিকভাবে জবরদস্তি, আইনি প্রক্রিয়ার অপব্যবহার, প্রতারণা বা অন্য কোনোভাবে জবরদস্তি করা হয় তাদের ওপর। অভিবাসীরা এই ধরনের মানব পাচারের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকির মধ্যে থাকে। জোরপূর্বক বা বন্ডেড শ্রমের শিকার নারীরা, বিশেষ করে গৃহস্থালি দাসত্বের নারী ও কিশোরীরা প্রায়ই যৌন নির্যাতন বা শোষণের শিকার হয়।
বন্ডেড লেবার বা দাদন শ্রমিকদের বড় উদাহরণ হতে পারে ইট ভাটার শ্রমিক, উপকূলীয় জেলে সম্প্রদায় ইত্যাদি। এর মধ্যে কিছু শ্রমিক উত্তরাধিকারসূত্রে ঋণের দায় বহন করে। ধারণা করা হয়, দক্ষিণ এশিয়ায় যে লাখ লাখ মানুষ পাচারের শিকার হয়, তাদের পূর্বপুরুষদের ঋণ পরিশোধের জন্য তারা এখনো কাজ করছে। অন্যরা পাচারকারী বা নিয়োগকারীদের ঋণের জালে পড়ে আছে। কাজ হারানো এবং দেশে যাওয়ার ভয়ে এসব শ্রমিক আইনের আশ্রয় নেয় না।
গার্হস্থ্য দাসত্ব আমাদের দেশে খুবই সাধারণ ঘটনা। সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের খবর আসে। বিশেষ করে শহরের মধ্যবিত্তরা গ্রাম থেকে এই শ্রমিকদের আনেন। তারা একটি বাড়িতে সারা জীবন বা জীবনের অধিকাংশ সময় বন্দী থাকে। পান থেকে চুন খসলেই নির্যাতনের শিকার হয়। এরা বেতনও পায় অনেক কম। অনেক গৃহকর্মী মৌলিক সুবিধা এবং সুরক্ষা পায় না। অবাধে চলাফেরা করার ক্ষমতা প্রায়শই সীমিত হয় এবং বাড়িতে আবদ্ধ কর্মসংস্থান তাদের বিচ্ছিন্নতা এবং দুর্বলতা বাড়ায়। ফলে এরা বেশি বঞ্চনা ও নির্যাতনের শিকার হয়। গৃহকর্মীরা, বিশেষ করে নারীরা, যৌন ও লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা সহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন, হয়রানি এবং শোষণের মুখোমুখি হয়। একজন গৃহকর্মীর নিয়োগকর্তার যখন সামাজিক মর্যাদা থাকে এবং কিছু আইনি এখতিয়ার থেকে সুরক্ষা ভোগ করে, তখন গৃহকর্মীর নিরাপত্তা আরও হুমকির মুখে পড়ে।
আধুনিক দাসত্বের আরেকটি ভয়ংকর উদাহরণ হলো শিশু সৈনিক। এটি মানব পাচারের একটি ধরন। সরকারি সশস্ত্র বাহিনী, আধা সামরিক সংস্থা বা বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দ্বারা বলপ্রয়োগ, জালিয়াতি বা জবরদস্তির মাধ্যমে শিশুদের যৌন কাজে বা যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। বেশিরভাগকে যোদ্ধা হিসেবে এবং অন্যদের দারোয়ান, বাবুর্চি, পাহারাদার, চাকর, বার্তাবাহক বা গুপ্তচর হিসেবে কাজ করানো হয়। অল্পবয়সী মেয়েদের ‘বিয়ে’ করতে বাধ্য করা হতে পারে বা কমান্ডার এবং পুরুষ যোদ্ধাদের দ্বারা ধর্ষিত হতে পারে। কম্বোডিয়া, মিয়ানমার এবং আফ্রিকার বিদ্রোহী অধ্যুষিত অঞ্চলে এমন ঘটনা ঘটে।
শ্রমিক সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৫ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে