আমিনুল ইসলাম নাবিল
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে আফগান সরকার ও তালেবান। আফগান সেনাবাহিনীর সঙ্গে তালেবানের সংঘাত সাম্প্রতিক সময়ে এসে বড় আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে ১৮টি প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নিয়ে তালেবান পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে যাবে।
মার্কিন গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলকে ৩০ দিনে বিচ্ছিন্ন এবং ৯০ দিনের মধ্যে দখলে নিতে পারে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান।
এদিকে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় এলে লাভ-ক্ষতির হিসাব কষতে শুরু করেছে অনেক দেশ। কারণ ধরেই নেওয়া হচ্ছে, তালেবানের হাতেই উঠছে আফগানিস্তানের ক্ষমতার দণ্ড।
তালেবানের আফগানিস্তান দখল করা নিয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর মিত্র দেশগুলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউর পক্ষ থেকে আফগান সরকারকে তালেবানের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আবার ন্যাটোর সদস্য দেশ জার্মানি সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিলে এবং শরিয়া আইন চালু করলে আর্থিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
আবার শেষমেশ তালেবান ক্ষমতায় এলে তাদের সমর্থন দেওয়ার কথা ভাবছে ন্যাটোর আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, তালেবানেরও কাবুল সরকারের অংশ হওয়া উচিত। তাদের সঙ্গে ব্রিটেন সরকারের কাজ করতে দ্বিধা নেই।
এদিকে আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নিলেও যুক্তরাষ্ট্র চাইছে দূরে থেকেই আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ করতে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের হাতিয়ার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকা ঘানি সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ ভারত। মিত্র দেশগুলোকে দিয়ে চীনের বিপরীতে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র।
আফগানিস্তান ইস্যুতে ন্যাটোর সদস্য দেশ তুরস্কের অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়। শেষমেশ তারা তালেবানের পক্ষ নেবে, নাকি আফগান সরকারের পক্ষ নেবে—সে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও দেশটি আফগানিস্তানে সেনা রেখে দেওয়ার চিন্তা করছে। তবে আফগানিস্তানে তুর্কি সেনারা তালেবানের সামনে টিকতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তুরস্ক যেহেতু ন্যাটোর সদস্য, সে হিসেবে ওয়াশিংটন এবং আঙ্কারাকে খুব বেশি আলাদা করে দেখে না তালেবান। যদিও তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ তুরস্ককে ‘ভ্রাতৃপ্রতিম ইসলামি দেশ’ বলে বর্ণনা করেছেন। এসব কারণে আফগানিস্তান নিয়ে তুরস্কের ভূমিকা এখনো দোদুল্যমান।
এদিকে তালেবানের ক্ষমতা দখল করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো উদ্বিগ্ন থাকলেও মৃদু হাসছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সামনে সুযোগ থাকছে তালেবানকে কাছে টেনে আফগানিস্তান থেকে স্বার্থ হাসিল করার।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানকে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পে যুক্ত করার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে চীন। সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদের ওপর চীনের লোভ রয়েছে বলেও অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ব্র্যান্ড করপোরেশনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, ‘চীন নীরবে আফগানিস্তানে তাদের স্বার্থ রক্ষায় তৎপরতা শুরু করেছে।’
ডেরেক গ্রসম্যান লিখেছেন, চীন এরই মধ্যে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের (সিপেক) সঙ্গে আফগানিস্তানকে যুক্ত করার কথা বলছে। পেশোয়ার ও কাবুলের মধ্যে একটি মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাবুল সরকারের সঙ্গে বছর দু–এক ধরে কথা বলছে চীন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হবে—এই ভয়ে আফগান সরকার তাতে সায় দেয়নি। তা ছাড়া, শিনজিয়াং প্রদেশের ওয়াকান করিডর দিয়ে আফগানিস্তানের সীমান্ত পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করছে চীন। কাবুল সরকারের এই আপত্তি মুহূর্তেই অনাপত্তিতে বদলে যেতে পারে, যদি তালেবান ক্ষমতায় আসে। ফলে চীনের জন্য আফগানিস্তানে তালেবান নিয়ন্ত্রণ সব অর্থেই অর্থকরী। আর বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যশক্তি এই সুযোগ ছাড়বে কেন? না, এখনো তালেবানকে চীন কোনোভাবে সরাসরি সহযোগিতা করছে বলে নিশ্চিত খবর আসেনি। বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্রই তাদের শক্তির উৎস। তারপরও হিসাবটি ঠিক মিলছে না। আর এমন ভূ–রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনার নির্মাণে চীন হাত গুটিয়ে বসে থাকবে এবং শেষ পাতে সুফল নেবে—এমনটা ভাবারও সুযোগ নেই।
ফেরা যাক ডেরেক গ্রসম্যানের বিশ্লেষণে আবার। তিনি বলছেন, আফগানিস্তানকে বিআরআইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নিজের প্রভাবে বলয়ে ঢোকানোর একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন তৎপর হয়ে উঠেছে। গ্রসম্যান না বললেও এই সরল সমীকরণটি সবাই বোঝে।
এ ক্ষেত্রে চীন অবধারিতভাবেই পাশে পাচ্ছে আঞ্চলিক মিত্র পাকিস্তানকে। আফগানিস্তানের বড় এলাকাজুড়ে সীমান্ত থাকায় পাকিস্তানকে পাশে পাওয়াটা চীনের জন্য ভীষণ জরুরিও। যদিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান কোনো পক্ষেই অবস্থান নেয়নি।’
ইমরান খান এমন দাবি করলেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তালেবানকে সার্বিক সহায়তা করার কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। হিন্দুস্থান টাইমস এক প্রতিবেদনে লিখেছে, পাকিস্তান তালেবানকে অস্ত্রসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। মজার বিষয় হলো, তালেবানকে সহযোগিতার জন্য পাকিস্তানের সরকারকে সরাসরি উদ্যোগ না নিলেও চলে। কারণ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবান প্রভাব অনেক তীব্র। গত মে মাসেই মার্কিন সেনা পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের ঘোষণা নিশ্চিত হওয়ার পরপর পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন ধর্মীয় নেতা ও কিছু সংগঠন তালেবানের হয়ে তহবিল সংগ্রহ শুরু করে। ওই সময় এ ধরনের বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফলে অর্থ ও অস্ত্র দুই ক্ষেত্রেই যে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সহায়তা পাচ্ছে তালেবান—এতে কোনো সন্দেহ নেই।
চীন যেহেতু আফগানিস্তানে নিজেদের স্বার্থ খুঁজছে, সেহেতু পাকিস্তান চীনের পক্ষেই থাকবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। আফগানিস্তানে চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বিস্তার হলে নিঃসন্দেহে চাপে পড়বে ভারত। আর এতেই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য জোরদারের সুযোগ পাবে চীন ও পাকিস্তান। ফলে অন্য সব হিসাব ছেড়ে দিলেও আঞ্চলিক আধিপত্য এবং সেই বিবেচনায় ভারতের বিরুদ্ধে উভয় দেশের সমস্বার্থ, দুই দেশকে আরও কাছে টানছে স্বাভাবিকভাবেই।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ভরদ্বাজও বিষয়টি শনাক্ত করেছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে এবং লাদাখ নিয়ে চীনের সঙ্গে বিপজ্জনক দ্বন্দ্ব রয়েছে ভারতের। এখন আফগানিস্তান শত্রু রাষ্ট্রে পরিণত হলে ভারতের জন্য তা বড় রকম মাথা ব্যথার কারণ হবে।’ অধ্যাপক ভরদ্বাজ আরও বলেন, ‘তবে ভারতের সবচেয়ে বড় চিন্তা পাকিস্তান। পাকিস্তান যদি আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি এবং নিরাপত্তা নীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, তা হবে ভারতের জন্য দুঃস্বপ্ন।’
শুধু পাকিস্তানই নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে এবং আঞ্চলিক স্বার্থ বিবেচনায় ভারতও তো আফগানিস্তানে কম বিনিয়োগ করেনি। শিক্ষা, খেলা, সামরিক প্রশিক্ষণ ও মহড়া থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই আফগান সরকারের ঘনিষ্ঠ ভারত। ফলে দেশটিতে তালেবান উত্থান কোনোভাবেই চাইছে না ভারত। আর আঞ্চলিক রাজনীতিতে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা বা নেপালের মতো করেই চীনের কৌশল ভারতের সহায়তাপুষ্ট পক্ষের বিপরীত পক্ষকে বেছে নেওয়া এবং তার মাথার ওপর ছায়া হিসেবে বিরাজ করা। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই। সঙ্গে পাকিস্তানের সমীকরণের কথা তো আগই বলা হয়েছে। গোটা সমীকরণ এখন যেদিকে এবং যেভাবে যাচ্ছে, তাতে তালেবান, তথা আফগানিস্তানে অনেকটা অলক্ষ্যে হাজির হওয়া চীনেরই বিজয় হতে চলেছে বলে মনে হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে আফগান সরকার ও তালেবান। আফগান সেনাবাহিনীর সঙ্গে তালেবানের সংঘাত সাম্প্রতিক সময়ে এসে বড় আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রাদেশিক রাজধানীর মধ্যে ১৮টি প্রাদেশিক রাজধানী দখলে নিয়ে তালেবান পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এভাবে চলতে থাকলে শিগগিরই পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ তালেবানের হাতে যাবে।
মার্কিন গোয়েন্দাদের উদ্ধৃতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলকে ৩০ দিনে বিচ্ছিন্ন এবং ৯০ দিনের মধ্যে দখলে নিতে পারে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান।
এদিকে আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতায় এলে লাভ-ক্ষতির হিসাব কষতে শুরু করেছে অনেক দেশ। কারণ ধরেই নেওয়া হচ্ছে, তালেবানের হাতেই উঠছে আফগানিস্তানের ক্ষমতার দণ্ড।
তালেবানের আফগানিস্তান দখল করা নিয়ে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তাঁর মিত্র দেশগুলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউর পক্ষ থেকে আফগান সরকারকে তালেবানের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আবার ন্যাটোর সদস্য দেশ জার্মানি সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিলে এবং শরিয়া আইন চালু করলে আর্থিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।
আবার শেষমেশ তালেবান ক্ষমতায় এলে তাদের সমর্থন দেওয়ার কথা ভাবছে ন্যাটোর আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ যুক্তরাজ্য। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেছেন, তালেবানেরও কাবুল সরকারের অংশ হওয়া উচিত। তাদের সঙ্গে ব্রিটেন সরকারের কাজ করতে দ্বিধা নেই।
এদিকে আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নিলেও যুক্তরাষ্ট্র চাইছে দূরে থেকেই আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ করতে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের হাতিয়ার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় থাকা ঘানি সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ ভারত। মিত্র দেশগুলোকে দিয়ে চীনের বিপরীতে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া যুক্তরাষ্ট্র।
আফগানিস্তান ইস্যুতে ন্যাটোর সদস্য দেশ তুরস্কের অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়। শেষমেশ তারা তালেবানের পক্ষ নেবে, নাকি আফগান সরকারের পক্ষ নেবে—সে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। যদিও দেশটি আফগানিস্তানে সেনা রেখে দেওয়ার চিন্তা করছে। তবে আফগানিস্তানে তুর্কি সেনারা তালেবানের সামনে টিকতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তুরস্ক যেহেতু ন্যাটোর সদস্য, সে হিসেবে ওয়াশিংটন এবং আঙ্কারাকে খুব বেশি আলাদা করে দেখে না তালেবান। যদিও তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ তুরস্ককে ‘ভ্রাতৃপ্রতিম ইসলামি দেশ’ বলে বর্ণনা করেছেন। এসব কারণে আফগানিস্তান নিয়ে তুরস্কের ভূমিকা এখনো দোদুল্যমান।
এদিকে তালেবানের ক্ষমতা দখল করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো উদ্বিগ্ন থাকলেও মৃদু হাসছে চীন। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সামনে সুযোগ থাকছে তালেবানকে কাছে টেনে আফগানিস্তান থেকে স্বার্থ হাসিল করার।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানকে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পে যুক্ত করার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে চীন। সেই সঙ্গে আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদের ওপর চীনের লোভ রয়েছে বলেও অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক মনে করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ব্র্যান্ড করপোরেশনের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, ‘চীন নীরবে আফগানিস্তানে তাদের স্বার্থ রক্ষায় তৎপরতা শুরু করেছে।’
ডেরেক গ্রসম্যান লিখেছেন, চীন এরই মধ্যে চীন-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডরের (সিপেক) সঙ্গে আফগানিস্তানকে যুক্ত করার কথা বলছে। পেশোয়ার ও কাবুলের মধ্যে একটি মহাসড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে কাবুল সরকারের সঙ্গে বছর দু–এক ধরে কথা বলছে চীন। যদিও যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হবে—এই ভয়ে আফগান সরকার তাতে সায় দেয়নি। তা ছাড়া, শিনজিয়াং প্রদেশের ওয়াকান করিডর দিয়ে আফগানিস্তানের সীমান্ত পর্যন্ত একটি সড়ক নির্মাণ করছে চীন। কাবুল সরকারের এই আপত্তি মুহূর্তেই অনাপত্তিতে বদলে যেতে পারে, যদি তালেবান ক্ষমতায় আসে। ফলে চীনের জন্য আফগানিস্তানে তালেবান নিয়ন্ত্রণ সব অর্থেই অর্থকরী। আর বিশ্বের অন্যতম বাণিজ্যশক্তি এই সুযোগ ছাড়বে কেন? না, এখনো তালেবানকে চীন কোনোভাবে সরাসরি সহযোগিতা করছে বলে নিশ্চিত খবর আসেনি। বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানের সরকারি বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্রই তাদের শক্তির উৎস। তারপরও হিসাবটি ঠিক মিলছে না। আর এমন ভূ–রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনার নির্মাণে চীন হাত গুটিয়ে বসে থাকবে এবং শেষ পাতে সুফল নেবে—এমনটা ভাবারও সুযোগ নেই।
ফেরা যাক ডেরেক গ্রসম্যানের বিশ্লেষণে আবার। তিনি বলছেন, আফগানিস্তানকে বিআরআইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে নিজের প্রভাবে বলয়ে ঢোকানোর একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চীন তৎপর হয়ে উঠেছে। গ্রসম্যান না বললেও এই সরল সমীকরণটি সবাই বোঝে।
এ ক্ষেত্রে চীন অবধারিতভাবেই পাশে পাচ্ছে আঞ্চলিক মিত্র পাকিস্তানকে। আফগানিস্তানের বড় এলাকাজুড়ে সীমান্ত থাকায় পাকিস্তানকে পাশে পাওয়াটা চীনের জন্য ভীষণ জরুরিও। যদিও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান কোনো পক্ষেই অবস্থান নেয়নি।’
ইমরান খান এমন দাবি করলেও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তালেবানকে সার্বিক সহায়তা করার কথা উঠে এসেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে। হিন্দুস্থান টাইমস এক প্রতিবেদনে লিখেছে, পাকিস্তান তালেবানকে অস্ত্রসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছে। মজার বিষয় হলো, তালেবানকে সহযোগিতার জন্য পাকিস্তানের সরকারকে সরাসরি উদ্যোগ না নিলেও চলে। কারণ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবান প্রভাব অনেক তীব্র। গত মে মাসেই মার্কিন সেনা পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের ঘোষণা নিশ্চিত হওয়ার পরপর পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন ধর্মীয় নেতা ও কিছু সংগঠন তালেবানের হয়ে তহবিল সংগ্রহ শুরু করে। ওই সময় এ ধরনের বেশ কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফলে অর্থ ও অস্ত্র দুই ক্ষেত্রেই যে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সহায়তা পাচ্ছে তালেবান—এতে কোনো সন্দেহ নেই।
চীন যেহেতু আফগানিস্তানে নিজেদের স্বার্থ খুঁজছে, সেহেতু পাকিস্তান চীনের পক্ষেই থাকবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে। আফগানিস্তানে চীন ও পাকিস্তানের প্রভাব বিস্তার হলে নিঃসন্দেহে চাপে পড়বে ভারত। আর এতেই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য জোরদারের সুযোগ পাবে চীন ও পাকিস্তান। ফলে অন্য সব হিসাব ছেড়ে দিলেও আঞ্চলিক আধিপত্য এবং সেই বিবেচনায় ভারতের বিরুদ্ধে উভয় দেশের সমস্বার্থ, দুই দেশকে আরও কাছে টানছে স্বাভাবিকভাবেই।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ভরদ্বাজও বিষয়টি শনাক্ত করেছেন। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে এবং লাদাখ নিয়ে চীনের সঙ্গে বিপজ্জনক দ্বন্দ্ব রয়েছে ভারতের। এখন আফগানিস্তান শত্রু রাষ্ট্রে পরিণত হলে ভারতের জন্য তা বড় রকম মাথা ব্যথার কারণ হবে।’ অধ্যাপক ভরদ্বাজ আরও বলেন, ‘তবে ভারতের সবচেয়ে বড় চিন্তা পাকিস্তান। পাকিস্তান যদি আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি এবং নিরাপত্তা নীতির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, তা হবে ভারতের জন্য দুঃস্বপ্ন।’
শুধু পাকিস্তানই নয়। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র হিসেবে এবং আঞ্চলিক স্বার্থ বিবেচনায় ভারতও তো আফগানিস্তানে কম বিনিয়োগ করেনি। শিক্ষা, খেলা, সামরিক প্রশিক্ষণ ও মহড়া থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই আফগান সরকারের ঘনিষ্ঠ ভারত। ফলে দেশটিতে তালেবান উত্থান কোনোভাবেই চাইছে না ভারত। আর আঞ্চলিক রাজনীতিতে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা বা নেপালের মতো করেই চীনের কৌশল ভারতের সহায়তাপুষ্ট পক্ষের বিপরীত পক্ষকে বেছে নেওয়া এবং তার মাথার ওপর ছায়া হিসেবে বিরাজ করা। আফগানিস্তানের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার সুযোগ নেই। সঙ্গে পাকিস্তানের সমীকরণের কথা তো আগই বলা হয়েছে। গোটা সমীকরণ এখন যেদিকে এবং যেভাবে যাচ্ছে, তাতে তালেবান, তথা আফগানিস্তানে অনেকটা অলক্ষ্যে হাজির হওয়া চীনেরই বিজয় হতে চলেছে বলে মনে হয়।
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
১৭ ঘণ্টা আগেট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
১ দিন আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
২ দিন আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৩ দিন আগে