Ajker Patrika

টেসলা ও স্টারলিংক ভারতে কতটা সুবিধা করতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
টেক মোগল ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত
টেক মোগল ইলন মাস্ক। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে নানা সংকটের মুখে পড়েছে টেক মোগল ইলন মাস্কের ব্যবসা। এমন সময়ে তিনি ভারতে টেসলা ও স্টারলিংকের ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে, ভারতে টেসলা ও স্টারলিংক ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক সংকট কাটাতে পারবে কি না। এমন একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিকস টাইমস।

ইকোনমিকস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টেসলা শুরুতে ভারতের ইলেকট্রিক যানবাহন (ইভি) ও টেলিকম বাজারে বড় পরিবর্তন আনতে পারে বলে মনে করা হলেও এখন সেই সম্ভাবনা কিছুটা ম্লান হয়ে গেছে। বাজারের প্রতিযোগিতা, সরকারের নিয়মকানুন ও গ্রাহকদের পছন্দের কারণে মাস্কের কোম্পানিগুলো কতটা সফল হবে, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

ভারতে স্টারলিংকের ভবিষ্যৎ কী?

বিশ্বের সবচেয়ে বড় লো আর্থ অরবিট (এলইও) স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক পরিচালনাকারী স্টারলিংক ইতিমধ্যে শতাধিক দেশে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে। ডেলয়েট পূর্বাভাস দিয়েছে, ভারতে এই খাতের বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ১.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। তবে সবকিছুর আগে ভারতে স্টারলিংককে সরকারি অনুমোদন পেতে হবে, যা এ মুহূর্তে একটি বড় বাধা।

ইতিমধ্যে রিলায়েন্স জিও ও ভারতী এয়ারটেল স্টারলিংকের সঙ্গে অংশীদারত্ব চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলো স্টারলিংকের সরঞ্জাম বিক্রি করবে এবং জিও ইনস্টলেশন ও অ্যাক্টিভেশনে সাপোর্ট দেবে। তারা গ্রামীণ এলাকায় ব্যবসা, স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে স্টারলিংকের পরিষেবা দেবে। তবে এই চুক্তিগুলো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদনের অধীন। কারণ, স্পেসএক্স এখনো ভারতে স্টারলিংকের পরিষেবা বিক্রির জন্য অনুমোদন পায়নি।

স্টারলিংকের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের প্রধান টেলিকম কোম্পানিগুলো। জেএম ফিন্যান্সিয়ালের একটি বিশ্লেষণ বলছে, স্টারলিংকের সেবা জিও ও এয়ারটেলের ব্রডব্যান্ডের তুলনায় দামি ও কম গতির। ফলে এটি শহরের গ্রাহকদের কাছে ততটা আকর্ষণীয় নয়, বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবার পরিধি বাড়াতে পারে।

শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিরেক্ট টু সেল স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড বেশ কয়েকটি কারণে ভারতের ওয়্যারলেস বাজারে পরিবর্তন আনতে পারবে না। প্রথমত, প্রযুক্তিটি এখনো নানা প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যেমন—শক্তি ও অ্যান্টেনার সীমাবদ্ধতার কারণে নির্ভরযোগ্য স্মার্টফোন সংযোগ বজায় রাখতে অসুবিধা। দ্বিতীয়ত, স্টারলিংক ফোরজি বা এলটিই স্পেকট্রামের অ্যাকসেসের জন্য এখনো টেলিকম সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরশীল। তৃতীয়ত, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সাধারণত ফাইবার বা ওয়্যারলেস পরিষেবাগুলোর তুলনায় ধীর ও কম নির্ভরযোগ্য।

এ ছাড়া ভারতের সরকার স্টারলিংককে বিশেষ সুবিধা দিতে আগ্রহী নয়। রয়টার্সের একটি সূত্র বলছে, সরকার শুরুতে পাঁচ বছরের জন্য স্যাটেলাইট ব্রডব্যান্ড স্পেকট্রাম বরাদ্দ করতে চায়। কিন্তু মাস্কের কোম্পানি ২০ বছরের অনুমোদন চাচ্ছে। ভারতে স্টারলিংকের একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করতেও নির্দেশ দিয়েছে সরকার, যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রয়োজনে সংযোগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

স্টারলিংক ভারতীয় টেলিকম বাজারে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা এখন বলা মুশকিল। তবে এটা স্পষ্ট, খুব বড় পরিবর্তন আনতে পারবে না।

ভারতে টেসলার ভবিষ্যৎ কী?

টেসলা মুম্বাইয়ে শোরুম খোলার পরিকল্পনা করেছে। ইতিমধ্যে একটি বাণিজ্যিক স্পেস ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্মী নিয়োগ ও মহারাষ্ট্রে একটি কারখানা স্থাপনের আলোচনা করছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে টেসলা বিশ্বব্যাপী ইলেকট্রিক গাড়ির শীর্ষ ব্র্যান্ড হলেও ভারতে এর সাফল্য নিয়ে কিছু সংশয় রয়েছে।

মূল্যায়ন সংস্থা সিএলএসএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের গাড়ির বাজার মূলত দাম সংবেদনশীল। টেসলার সবচেয়ে সস্তা মডেল—‘মডেল ৩’ যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার ডলার (প্রায় ২৫ লাখ রুপি) থেকে শুরু হলেও ভারতে অধিকাংশ যাত্রীবাহী গাড়ির বিক্রয়মূল্য ২০ লাখ রুপির নিচে। যদিও বলা হয়েছে, ভারতে টেসলার দাম হতে পারে ৩৫ লাখ রুপি। তবে আমদানি শুল্ক ও উৎপাদন ব্যয়ের কারণে এর দাম আরও বাড়তে পারে।

জেএসডব্লিউ গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ভারতীয় বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী সজ্জন জিন্দাল ভারতীয় বাজারে মাস্কের সফল হওয়ার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় কোম্পানিগুলোও টেসলার প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত। টাটা মোটরস ও মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা ইতিমধ্যে ভারতীয় ইভি বাজারে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। মাহিন্দ্রার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাজেশ জেজুরিকার বলেন, ভারতীয় কোম্পানিগুলো এখন বৈশ্বিক প্রতিযোগীদের মোকাবিলা করতে প্রস্তুত এবং টেসলাকে স্বাগত জানাতেও ভয় পায় না।

ভারত কি মাস্কের ব্যবসার জন্য স্বস্তির জায়গা হতে পারে?

বর্তমানে মাস্কের কোম্পানিগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ববাজারে নানা সংকটের সম্মুখীন। সম্প্রতি টেসলার শেয়ারমূল্য ১৩০ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে এবং এটি অক্টোবরের পর সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে জেপি মরগান টেসলার স্টকের মূল্য লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে। কারণ, প্রতিষ্ঠানটি আশঙ্কা করছে, টানা দ্বিতীয় বছরেও টেসলা ডেলিভারি তেমন প্রত্যাশিত হবে না।

বিশ্ববাজারেও প্রতিযোগিতামূলক বাধার মুখে পড়ছে স্টারলিংক। স্পেসএক্স অভিযোগ করেছে, বিদেশি প্রতিযোগীরা যুক্তরাষ্ট্রে বিনা মূল্যে প্রবেশ পেলেও স্টারলিংককে বিদেশি সরকারগুলোর কাছে লাইসেন্স ফি, আমদানি শুল্ক ও অন্যান্য খরচ দিতে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে ভারত এখনই মাস্কের ব্যবসার জন্য বড় স্বস্তি দেবে বলে মনে হয় না। স্টারলিংক ও টেসলা উভয় ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা ও নিয়মকানুনের চ্যালেঞ্জে রয়েছে, যা তাদের সাফল্যের পথ কঠিন করে তুলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত