জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হবেন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১: ৫১
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২২: ৪৬

জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্বে ভোটাভুটির মাধ্যমে জয়ী হয়ে দেশটির পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তিনি। এর আগে তিনি জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন।

‘এশিয়ান ন্যাটো’ নামে নতুন আঞ্চলিক সামরিক জোট এবং মার্কিন মাটিতে জাপানি সৈন্য মোতায়েনের চিন্তাভাবনার কথা তিনি আগেই বলেছিলেন। এশিয়ার ঘনিষ্ঠতম মিত্র দেশে এমন একজন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ওয়াশিংটন এখন কী ভাবছে, সেটি দেখার অপেক্ষা। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, শিগেরু ইশিয়া নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাব্যথার কারণ হতে যাচ্ছেন। 

আজ শুক্রবার ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির নির্বাচিত নেতা ইশিবা গত সপ্তাহেই মার্কিন থিঙ্কট্যাংক হাডসন ইনস্টিটিউটে একটি গবেষণাপত্রে তাঁর পরিকল্পনার রূপরেখা দিয়েছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, পরিবর্তনগুলো চীনকে এশিয়ায় সামরিক শক্তি ব্যবহার থেকে বিরত রাখবে। 

ইশিবা লিখেছেন, এশিয়াতে ন্যাটোর মতো একটি যৌথ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার অনুপস্থিতির অর্থ হলো, যুদ্ধ শুরু হওয়ার আশঙ্কাকে জিইয়ে রাখা। কারণ, এখানে পারস্পরিক প্রতিরক্ষার জন্য দেশগুলোর কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। 

ইশিবা অনেক জাপানি রাজনীতিবিদের মতো, জাপানি দ্বীপের আশপাশে চীনা সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। 

‘এশিয়ান ন্যাটো’ ধারণাটি অবশ্য ইতিমধ্যেই ওয়াশিংটন প্রত্যাখ্যান করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানিয়েল ক্রিটেনব্রিঙ্ক এমন ধারণাকে ‘তাড়াহুড়ো’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি সরাসরি এটিকে নাকচ করে দিয়েছেন। 

টোকিওর রোরশাচ অ্যাডভাইজরির আর্থিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক জোসেফ ক্রাফট বলেছেন, ইশিবা সামরিক বিষয়ে খুব কৌশলী ও বাস্তববাদী, কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তা কূটনীতির পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সত্যিই খুব বেশি বিচক্ষণতা দেখাতে পারেননি।

ইশিবা অবশ্য তাঁর অবস্থানে অনড়। আজ এই পরিকল্পনার ওপর আরও জোর দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘মার্কিন শক্তির আপেক্ষিক পতন’ একটি এশিয়ান ট্রিটি অর্গানাইজেশনকে (এশিয়ান ন্যাটো) আরও প্রয়োজনীয় করে তুলেছে। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর থেকে জাপান ওয়াশিংটনের মিত্র হয়ে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জাপানের পারমাণবিক অস্ত্রাগারের সুরক্ষা দেয় এবং জাপানের মাটিতে তাদের একটি বিমানবাহী রণতরি, যুদ্ধবিমান এবং প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য রয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করার জন্য চাপ দিচ্ছে, সেই সময় ইশিবার সম্ভাব্য সামরিক ও কৌশলগত পরিবর্তনগুলো খুব একটা নির্বিঘ্ন থাকবে না। এর মধ্যে টোকিও দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চাচ্ছে। সেই সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় ব্রিটেন, ফ্রান্সসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্ক পুনর্গঠনের পথে এগোচ্ছে। 

ইশিবার পরিকল্পিত ন্যাটো বিদ্যমান কূটনৈতিক এবং নিরাপত্তা চুক্তিগুলোর একটি ছাতা হতে চায়। এর মধ্যে রয়েছে কোয়াড গ্রুপ। সেটির সদস্য জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। ২০২১ সালে স্বাক্ষরিত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে অকাস (এইউকেইউএস) সামরিক চুক্তি চুক্তি এবং প্রতিবেশী ও প্রতিদ্বন্দ্বী সিউলের সঙ্গে জাপানের নিরাপত্তা সহযোগিতা গভীর করার পদক্ষেপও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। 

নতুন নিরাপত্তা জোট সম্পর্কে ইশিবা বলেন, এমনকি জাপানের পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হিসেবে ওয়াশিংটনের পারমাণবিক অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণও ভাগ করতে পারে এই জোট। 

শুক্রবার ভোটের আগে প্রচার চালাতে গিয়ে ইশিবা বলেছিলেন, তিনি জাপানে সামরিক ঘাঁটিগুলোর বৃহত্তর তত্ত্বাবধানসহ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে নতুন ভারসাম্য আনতে চান। এই সামরিক অবস্থান স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়মিত সংঘাতের কারণ হয়ে উঠেছে। 

হাডসন পেপারে ইশিবা আরও বলেছেন, টোকিওকে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল গুয়ামে জাপানি সেনা মোতায়েনের অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিক সম্পর্কের একটি পর্যালোচনা হতে পারে। 

১৯৪৪ সালের পর কোনো জাপানি নেতার পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো এমন প্রস্তাব উঠল। 

জননীতি ও পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা এশিয়া গ্রুপ জাপানের সহযোগী রিনতারো নিশিমুরা বলেন, ‘আমার ধারণা এটি (ইশিবার পরিকল্পনা) ঘটবে না। মনে হচ্ছে, তিনি সম্পর্কটিকে মৌলিকভাবে পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন, কিন্তু সম্পূর্ণ নেতিবাচক উপায়ে নয়।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত