অনলাইন ডেস্ক
গাজার হাজার হাজার মানুষের মতোই ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন হামাসের প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ার। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বাহিনী ধাওয়া দিয়ে তাঁকে হত্যা করে। ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। তাঁর হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির গতিপথ বদলে দেবে। তবে অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত পথে নয়।
সিনওয়ার হত্যা এই অঞ্চলের ভাগ্যে নতুন মোড় দেবে। হামাসকে নেতৃত্বশূন্য করার পাশাপাশি তাঁর মৃত্যু গাজাকে অভিভাবকহীন করেছে। এই অবস্থায় অঞ্চলটিতে ইসরায়েল বহুপ্রতীক্ষিত বিজয় দাবি করতে পারে, যার জন্য ৪২ হাজারের বেশি মানুষকে এরই মধ্যে প্রাণ দিতে হয়েছে।
এসব ঘটনা হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি ও গাজায় যুদ্ধবিরতির ক্ষীণ সম্ভাবনাকে কিঞ্চিৎ বাড়িয়ে তুলেছে। তা ঘটলে এই অঞ্চলে উত্তেজনা থিতিয়ে আনার সংকীর্ণ পথ কিছুটা প্রশস্ত হতে পারে। এমনকি লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার পরও এ ক্ষেত্রে সম্ভাবনা আছে ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করেছেন ৬১ বছর বয়সী সিনওয়ার। সেদিনের হামলায় ইসরায়েলের প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে হামাস। তারপর থেকেই সিনওয়ার গাজায় হামাসের গোলকধাঁধার টানেলের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন। সেখান থেকেই তাঁর সহযোদ্ধাদের সঙ্গে হাতে লিখিত নির্দেশাবলির মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন দূত মারফত।
লুকিয়ে থাকলেও দলের ওপর সিনওয়ারের দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিল, যেমনটা বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা রাখেন। টানেলে বসেই জিম্মিদের দেখভাল করেছেন, প্রক্সির মাধ্যমে সিআইএ ও অন্য পক্ষের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চালিয়েছেন এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে হামাসের অভিযানের কৌশল নির্ধারণ করেছেন।
ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ও ট্যাংকের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় তিনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর (আইডিএফ) ‘হিট লিস্টের’ প্রথম ব্যক্তি ছিলেন। তাঁকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেই অভিযান কোনো পরিকল্পিত অভিযান ছিল না। বরং ভাগ্যবশত সিনওয়ার ইসরায়েলি বাহিনীর সম্মুখে পড়ে যান।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাফাহে আরও দুই সহযোদ্ধার সঙ্গে ছিলেন তিনি। দুর্ভাগ্যক্রমে আইডিএফের পদাতিক দল তাঁকে শনাক্ত করে। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে তিনি নিহত হন। কিন্তু তার পরও ইসরায়েলি বাহিনীর টহল দলটি তাঁর মরদেহের কাছে যায়নি। কিন্তু তাদের একটি ড্রোন যখন সিনওয়ার যে নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানে নজরদারি করে, তখন তাঁকে শনাক্ত করা হয়।
সিনওয়ার বিশ্বাস করতেন, তিনি ইসরায়েলে যে আক্রমণ করেছিলেন তা ইহুদি রাষ্ট্রটির ধ্বংসের সূত্রপাত করে দেবে। তিনি ১৯৮০-র দশকে হামাসের প্রতিষ্ঠার সময়কার সদস্য। দীর্ঘ ২৩ বছর ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। ইসরায়েলকে ‘সহযোগিতায়’ চার ফিলিস্তিনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অপরাধে তাঁকে এই কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালে বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় তিনি মুক্তি পান। এর পরই তিনি ইসরায়েল আক্রমণের পরিকল্পনা শুরু করেন বলে দাবি দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার।
ইসরায়েলের দাবি, সিনওয়ার এই আক্রমণের জন্য লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে সমন্বয় করেছিলেন। যাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক ফ্রন্টে আক্রমণ চালানো যায়। ৭ অক্টোবর হামাস প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জনের পরপরই হিজবুল্লাহও ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করে ছোট পরিসরে। জবাবে ইসরায়েল সীমান্ত অঞ্চলে সেনাসংখ্যা বাড়িয়ে দেয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয় এবং এই হামলার পরদিন গাজায় আগ্রাসন শুরু করে।
সিনওয়ারের ইসরায়েলে আক্রমণের মূল্যায়ন নিয়ে গোয়েন্দারা বিভক্ত। একদল মনে করে, গাজায় সেনা পাঠিয়ে অভিযান চালানোর মতো ঝুঁকি ইসরায়েল নেবে না ভেবে সিনওয়ার হামলা চালিয়েছিল, যেটা ছিল মারাত্মক ভুল। এক বিশ্লেষক বলেন, ‘সিনওয়ার ভেবেছিলেন, তিনি ইসরায়েলি সমাজের গতি-প্রকৃতি বুঝতে পেরেছেন; তারা নরম হয়ে গেছে।’
আরেক দল মনে করে, সিনওয়ার ধর্মীয় উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে এই হামলা করেছিলেন। সিনওয়ারের বিষয়ে অভিজ্ঞ এক প্রবীণ আইডিএফ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গাজা এবং গাজার লোকদের জীবন উৎসর্গ করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন সিনওয়ার।’ যাই হোক না কেন, তিনি ইসরায়েলে যে আক্রমণ করেছিলেন সেটি এবং তাঁর হত্যাকাণ্ড, কোনোটার ফলেই কোনো পক্ষের বিজয় অর্জিত হয়নি।
ইসরায়েলের দাবি, তারা হামাসের সামরিক শাখাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাদের দাবির সত্যতা থাক বা না থাক, এই অভিযানের জন্য ৪২ হাজার মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ বেড়েছে। হামাসের পাশাপাশি ইসরায়েল হিজবুল্লাহরও শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যা করেছে।
এদিকে ইরানও ইসরায়েলের ওপর একাধিকবার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। সর্বশেষ হামলা চালিয়েছে গত ১ অক্টোবর। প্রতিক্রিয়ায় নিজের শক্তি দেখানোর লক্ষ্যে ইসরায়েল এই অঞ্চলে ইরানি প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা বাড়িয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, আগামী দিনে ইসরায়েল ইরানে সরাসরি হামলা চালাবে।
এ অবস্থায় তিনটি বড় প্রশ্ন হাজির হয়েছে। প্রথমত, হামাসের কী হবে? হামাস বর্তমানে নেতৃত্বহীনতায় ভুগছে। এর ফলে গাজায় গোষ্ঠীটির যে শক্তিমত্তা আছে, তা-ও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। হামাসের সামরিক শাখার তিন নেতা সিনওয়ার, মোহাম্মদ দায়েফ ও মারওয়ান ঈসাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি কো হয়েছে। এ ছাড়া গাজায় গোষ্ঠীটির শীর্ষস্থানীয় আরও ছয় নেতাকেও হত্যার দাবি করেছে। সিনওয়ার ২০১৭ সাল থেকে গাজায় হামাসের প্রধান ছিলেন। পরে চলতি বছরের জুলাইয়ে হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হয়ে মারা যাওয়ার পর তিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।
গাজায় হামাসের এখনো হাজারো যোদ্ধা রয়ে গেছে। আইডিএফ বলছে, হামাসের যোদ্ধারা এখন গেরিলা স্টাইলে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সবগুলো দলই এখন প্রায় শীর্ষ নেতৃত্বহীন। ইয়াহইয়া সিনওয়ারের ভাই ও তাঁর ডান হাত বলে খ্যাত মোহাম্মদ সিনওয়ারকে গাজায় হামাসের পরবর্তী প্রধান হিসেবে অনুমান করা হচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে হামাস নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে।
কিছু ইসরায়েলি বিশ্লেষক মনে করেন, গাজায় হামাসের নেতৃত্বে একটি শূন্যতা তৈরি হবে। কারণ গোষ্ঠীটির অনেকেই গাজা থেকে তাঁদের কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনের বিরোধী। কাতার, তুরস্ক ও লেবাননে হামাসের বিপুলসংখ্যক নেতা আছেন। এই নেতাদের অন্যতম খালিদ মেশাল, যিনি সিনওয়ারের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তিনিও গোষ্ঠীটির হাল ধরতে পারেন। তিনি হামাসের বাস্তববাদী নেতাদের একজন। তিনি ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের বিরোধী। তবে ইসমাইল হানিয়া ও সিনওয়ারের আমলে দেশটির সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, এখন কি গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি আনার উপযুক্ত সময়? হামাসের অবশিষ্ট সদস্যরা তাদের হাতে থাকা ১০১ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে (যাদের প্রায় অর্ধেককে মৃত বলে অনুমান করা হচ্ছে) ব্যবহার করে কোনো একটি চুক্তি করার চেষ্টা করতে পারে, যাতে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় এবং তারা গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারে এবং নেতারা নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারেন।
ইয়াহইয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়ার সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেও এই সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা অস্ত্র ত্যাগ করবে, আমরা তাদের চলে যেতে এবং বেঁচে থাকার সুযোগ দেব।’ এরই মধ্যে ইসরায়েল সরকার আগে যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানা গেছে।
ইয়াহইয়া সিনওয়ার যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত হিসেবে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ ও স্থায়ী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বিভাগের শীর্ষ নেতাদের অনুরোধ থাকার পরও নেতানিয়াহু এই পদক্ষেপের বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নেন। তবে এখন হয়তো এই চুক্তি গ্রহণের জন্য ‘প্রণোদনা’ থাকতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনও তাঁকে এ ধরনের চুক্তি মেনে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছে। তবে শর্ত হলো, হামাসকে সত্যিই তাদের দাবি কমাতে প্রস্তুত হতে হবে।
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছিল। কিন্তু তিনি হয়তো ভাবছেন, তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে আবারও একটি ‘অসম্ভব প্রত্যাবর্তন’ করার চেষ্টা তিনি করতে পারবেন। ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় একদল ধর্মীয় চরমপন্থী ছাড়া ইসরায়েলের গাজার দায়িত্ব নেওয়ার বা এটিকে পুনর্নির্মাণের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। এ অবস্থায় একটি বিকল্প শাসন কর্তৃপক্ষ যুদ্ধবিরতির পরে যদি গাজার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তাহলে অন্তত এটি সম্ভব যে গাজার ভবিষ্যৎ স্থায়ী দারিদ্র্য ও বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হওয়া কিংবা ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া ছাড়াও অন্য কোনো পরিণতির দিকে যেতে পারে।
তৃতীয় ও শেষ প্রশ্নটি হলো—গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাবনা কি এই অঞ্চলে বিস্তৃত উত্তেজনা প্রশমনের দিকে নিয়ে যেতে পারবে? ইরানের নেতারা অন্তত অস্থায়ীভাবে হলেও এটি চাইতে পারেন। যদিও তাঁরা এবং তাঁদের সহযোগী গোষ্ঠীগুলো, যেমন হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতি, যারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াইয়ের দাবি করছে, তারা ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান প্রক্সি যুদ্ধের অংশীদার। হামাস ও হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞের পরও তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ কমে যেতে পারে। হামাস নেতা ইয়াহইয়া সিনওয়ার এবং হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে ইসরায়েল হত্যা করেছে। আরও ক্ষতির আশঙ্কা আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আমেরিকা ইয়েমেনে হুতিদের অবস্থানে বোমা হামলা চালিয়েছে। ইরান তার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরায়েলের পাল্টা আঘাতের অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক বা তেল স্থাপনায় আঘাতের ওপর আপত্তি করেছে। তার পরও ইসরায়েল সম্ভবত ইরানের সামরিক অবস্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করবে।
উল্লিখিত ৩টি প্রশ্নের বাইরেও এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—ইসরায়েল কি বিশ্বাস করে, তারা নিরাপদে যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম? এখন পর্যন্ত ইহুদি রাষ্ট্রটির ওপর ইতিহাসের ‘সবচেয়ে গুরুতর’ আঘাত হানতে সফল হয়েছেন সিনওয়ার। তবে ইসরায়েল সেই আঘাতের জবাবে তার ‘মিলিটারি ডিটারেন্স’ বা ‘সামরিক প্রতিরোধ’ সক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যদিও এর ফলে দেশটি বিশ্বজুড়ে বড় রকমের সুনামহানির শিকার হয়েছে এবং গাজা বিশাল মানবিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি এবং রাষ্ট্রহীন ফিলিস্তিনিদের ট্র্যাজেডিও অব্যাহত। তবুও এই অঞ্চলে বিস্তৃত উত্তেজনা প্রশমনের দিশা পাওয়া যাচ্ছে। ইরানের ওপর সুনির্দিষ্ট ইসরায়েলি পাল্টা আক্রমণ, গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার মাধ্যমে সমাপ্তি এবং লেবাননে উত্তেজনা প্রশমিত করার মাধ্যমে এটি হতে পারে। প্রয়াত ইয়াহইয়া সিনওয়ার হয়তো এটি অপছন্দ করবেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যু ইসরায়েলের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে, যাতে সম্ভবত এই যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
গাজার হাজার হাজার মানুষের মতোই ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন হামাসের প্রধান ইয়াহইয়া সিনওয়ার। গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি বাহিনী ধাওয়া দিয়ে তাঁকে হত্যা করে। ইয়াহইয়া সিনওয়ারকে গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। তাঁর হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতির গতিপথ বদলে দেবে। তবে অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত পথে নয়।
সিনওয়ার হত্যা এই অঞ্চলের ভাগ্যে নতুন মোড় দেবে। হামাসকে নেতৃত্বশূন্য করার পাশাপাশি তাঁর মৃত্যু গাজাকে অভিভাবকহীন করেছে। এই অবস্থায় অঞ্চলটিতে ইসরায়েল বহুপ্রতীক্ষিত বিজয় দাবি করতে পারে, যার জন্য ৪২ হাজারের বেশি মানুষকে এরই মধ্যে প্রাণ দিতে হয়েছে।
এসব ঘটনা হামাসের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি ও গাজায় যুদ্ধবিরতির ক্ষীণ সম্ভাবনাকে কিঞ্চিৎ বাড়িয়ে তুলেছে। তা ঘটলে এই অঞ্চলে উত্তেজনা থিতিয়ে আনার সংকীর্ণ পথ কিছুটা প্রশস্ত হতে পারে। এমনকি লেবাননে হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ এবং ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার পরও এ ক্ষেত্রে সম্ভাবনা আছে ।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করেছেন ৬১ বছর বয়সী সিনওয়ার। সেদিনের হামলায় ইসরায়েলের প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং প্রায় ২৫০ জনকে জিম্মি করে হামাস। তারপর থেকেই সিনওয়ার গাজায় হামাসের গোলকধাঁধার টানেলের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন। সেখান থেকেই তাঁর সহযোদ্ধাদের সঙ্গে হাতে লিখিত নির্দেশাবলির মাধ্যমে যোগাযোগ করতেন দূত মারফত।
লুকিয়ে থাকলেও দলের ওপর সিনওয়ারের দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিল, যেমনটা বিশ্বের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা রাখেন। টানেলে বসেই জিম্মিদের দেখভাল করেছেন, প্রক্সির মাধ্যমে সিআইএ ও অন্য পক্ষের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চালিয়েছেন এবং গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে হামাসের অভিযানের কৌশল নির্ধারণ করেছেন।
ইসরায়েলি বিমানবাহিনী ও ট্যাংকের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজায় তিনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাবাহিনীর (আইডিএফ) ‘হিট লিস্টের’ প্রথম ব্যক্তি ছিলেন। তাঁকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেই অভিযান কোনো পরিকল্পিত অভিযান ছিল না। বরং ভাগ্যবশত সিনওয়ার ইসরায়েলি বাহিনীর সম্মুখে পড়ে যান।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রাফাহে আরও দুই সহযোদ্ধার সঙ্গে ছিলেন তিনি। দুর্ভাগ্যক্রমে আইডিএফের পদাতিক দল তাঁকে শনাক্ত করে। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলিতে তিনি নিহত হন। কিন্তু তার পরও ইসরায়েলি বাহিনীর টহল দলটি তাঁর মরদেহের কাছে যায়নি। কিন্তু তাদের একটি ড্রোন যখন সিনওয়ার যে নির্মাণাধীন ভবনে আশ্রয় নিয়েছিলেন সেখানে নজরদারি করে, তখন তাঁকে শনাক্ত করা হয়।
সিনওয়ার বিশ্বাস করতেন, তিনি ইসরায়েলে যে আক্রমণ করেছিলেন তা ইহুদি রাষ্ট্রটির ধ্বংসের সূত্রপাত করে দেবে। তিনি ১৯৮০-র দশকে হামাসের প্রতিষ্ঠার সময়কার সদস্য। দীর্ঘ ২৩ বছর ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি। ইসরায়েলকে ‘সহযোগিতায়’ চার ফিলিস্তিনির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার অপরাধে তাঁকে এই কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে ২০১১ সালে বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় তিনি মুক্তি পান। এর পরই তিনি ইসরায়েল আক্রমণের পরিকল্পনা শুরু করেন বলে দাবি দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার।
ইসরায়েলের দাবি, সিনওয়ার এই আক্রমণের জন্য লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে সমন্বয় করেছিলেন। যাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একাধিক ফ্রন্টে আক্রমণ চালানো যায়। ৭ অক্টোবর হামাস প্রাথমিক লক্ষ্য অর্জনের পরপরই হিজবুল্লাহও ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করে ছোট পরিসরে। জবাবে ইসরায়েল সীমান্ত অঞ্চলে সেনাসংখ্যা বাড়িয়ে দেয়, স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নেয় এবং এই হামলার পরদিন গাজায় আগ্রাসন শুরু করে।
সিনওয়ারের ইসরায়েলে আক্রমণের মূল্যায়ন নিয়ে গোয়েন্দারা বিভক্ত। একদল মনে করে, গাজায় সেনা পাঠিয়ে অভিযান চালানোর মতো ঝুঁকি ইসরায়েল নেবে না ভেবে সিনওয়ার হামলা চালিয়েছিল, যেটা ছিল মারাত্মক ভুল। এক বিশ্লেষক বলেন, ‘সিনওয়ার ভেবেছিলেন, তিনি ইসরায়েলি সমাজের গতি-প্রকৃতি বুঝতে পেরেছেন; তারা নরম হয়ে গেছে।’
আরেক দল মনে করে, সিনওয়ার ধর্মীয় উগ্রবাদে অনুপ্রাণিত হয়ে এই হামলা করেছিলেন। সিনওয়ারের বিষয়ে অভিজ্ঞ এক প্রবীণ আইডিএফ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘গাজা এবং গাজার লোকদের জীবন উৎসর্গ করার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিলেন সিনওয়ার।’ যাই হোক না কেন, তিনি ইসরায়েলে যে আক্রমণ করেছিলেন সেটি এবং তাঁর হত্যাকাণ্ড, কোনোটার ফলেই কোনো পক্ষের বিজয় অর্জিত হয়নি।
ইসরায়েলের দাবি, তারা হামাসের সামরিক শাখাকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাদের দাবির সত্যতা থাক বা না থাক, এই অভিযানের জন্য ৪২ হাজার মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ বেড়েছে। হামাসের পাশাপাশি ইসরায়েল হিজবুল্লাহরও শীর্ষ নেতৃত্বকে হত্যা করেছে।
এদিকে ইরানও ইসরায়েলের ওপর একাধিকবার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। সর্বশেষ হামলা চালিয়েছে গত ১ অক্টোবর। প্রতিক্রিয়ায় নিজের শক্তি দেখানোর লক্ষ্যে ইসরায়েল এই অঞ্চলে ইরানি প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোর ওপর হামলা বাড়িয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, আগামী দিনে ইসরায়েল ইরানে সরাসরি হামলা চালাবে।
এ অবস্থায় তিনটি বড় প্রশ্ন হাজির হয়েছে। প্রথমত, হামাসের কী হবে? হামাস বর্তমানে নেতৃত্বহীনতায় ভুগছে। এর ফলে গাজায় গোষ্ঠীটির যে শক্তিমত্তা আছে, তা-ও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। হামাসের সামরিক শাখার তিন নেতা সিনওয়ার, মোহাম্মদ দায়েফ ও মারওয়ান ঈসাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি কো হয়েছে। এ ছাড়া গাজায় গোষ্ঠীটির শীর্ষস্থানীয় আরও ছয় নেতাকেও হত্যার দাবি করেছে। সিনওয়ার ২০১৭ সাল থেকে গাজায় হামাসের প্রধান ছিলেন। পরে চলতি বছরের জুলাইয়ে হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়া তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হয়ে মারা যাওয়ার পর তিনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন।
গাজায় হামাসের এখনো হাজারো যোদ্ধা রয়ে গেছে। আইডিএফ বলছে, হামাসের যোদ্ধারা এখন গেরিলা স্টাইলে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সবগুলো দলই এখন প্রায় শীর্ষ নেতৃত্বহীন। ইয়াহইয়া সিনওয়ারের ভাই ও তাঁর ডান হাত বলে খ্যাত মোহাম্মদ সিনওয়ারকে গাজায় হামাসের পরবর্তী প্রধান হিসেবে অনুমান করা হচ্ছে। তবে সামগ্রিকভাবে হামাস নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে।
কিছু ইসরায়েলি বিশ্লেষক মনে করেন, গাজায় হামাসের নেতৃত্বে একটি শূন্যতা তৈরি হবে। কারণ গোষ্ঠীটির অনেকেই গাজা থেকে তাঁদের কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচনের বিরোধী। কাতার, তুরস্ক ও লেবাননে হামাসের বিপুলসংখ্যক নেতা আছেন। এই নেতাদের অন্যতম খালিদ মেশাল, যিনি সিনওয়ারের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তিনিও গোষ্ঠীটির হাল ধরতে পারেন। তিনি হামাসের বাস্তববাদী নেতাদের একজন। তিনি ইরানের সঙ্গে সম্পর্কের বিরোধী। তবে ইসমাইল হানিয়া ও সিনওয়ারের আমলে দেশটির সঙ্গে হামাসের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে তা হলো, এখন কি গাজায় একটি যুদ্ধবিরতি আনার উপযুক্ত সময়? হামাসের অবশিষ্ট সদস্যরা তাদের হাতে থাকা ১০১ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে (যাদের প্রায় অর্ধেককে মৃত বলে অনুমান করা হচ্ছে) ব্যবহার করে কোনো একটি চুক্তি করার চেষ্টা করতে পারে, যাতে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় এবং তারা গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারে এবং নেতারা নিরাপদে পালিয়ে যেতে পারেন।
ইয়াহইয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়ার সময় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজেও এই সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা অস্ত্র ত্যাগ করবে, আমরা তাদের চলে যেতে এবং বেঁচে থাকার সুযোগ দেব।’ এরই মধ্যে ইসরায়েল সরকার আগে যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যস্থতাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে জানা গেছে।
ইয়াহইয়া সিনওয়ার যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত হিসেবে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ ও স্থায়ী প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছিলেন। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বিভাগের শীর্ষ নেতাদের অনুরোধ থাকার পরও নেতানিয়াহু এই পদক্ষেপের বিপক্ষে কঠোর অবস্থান নেন। তবে এখন হয়তো এই চুক্তি গ্রহণের জন্য ‘প্রণোদনা’ থাকতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনও তাঁকে এ ধরনের চুক্তি মেনে নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেছে। তবে শর্ত হলো, হামাসকে সত্যিই তাদের দাবি কমাতে প্রস্তুত হতে হবে।
হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছিল। কিন্তু তিনি হয়তো ভাবছেন, তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে আবারও একটি ‘অসম্ভব প্রত্যাবর্তন’ করার চেষ্টা তিনি করতে পারবেন। ইসরায়েলি মন্ত্রিসভায় একদল ধর্মীয় চরমপন্থী ছাড়া ইসরায়েলের গাজার দায়িত্ব নেওয়ার বা এটিকে পুনর্নির্মাণের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। এ অবস্থায় একটি বিকল্প শাসন কর্তৃপক্ষ যুদ্ধবিরতির পরে যদি গাজার দায়িত্ব গ্রহণ করে, তাহলে অন্তত এটি সম্ভব যে গাজার ভবিষ্যৎ স্থায়ী দারিদ্র্য ও বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হওয়া কিংবা ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া ছাড়াও অন্য কোনো পরিণতির দিকে যেতে পারে।
তৃতীয় ও শেষ প্রশ্নটি হলো—গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাবনা কি এই অঞ্চলে বিস্তৃত উত্তেজনা প্রশমনের দিকে নিয়ে যেতে পারবে? ইরানের নেতারা অন্তত অস্থায়ীভাবে হলেও এটি চাইতে পারেন। যদিও তাঁরা এবং তাঁদের সহযোগী গোষ্ঠীগুলো, যেমন হিজবুল্লাহ ও ইয়েমেনের হুতি, যারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াইয়ের দাবি করছে, তারা ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান প্রক্সি যুদ্ধের অংশীদার। হামাস ও হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের ধ্বংসযজ্ঞের পরও তাদের যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার আগ্রহ কমে যেতে পারে। হামাস নেতা ইয়াহইয়া সিনওয়ার এবং হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহকে ইসরায়েল হত্যা করেছে। আরও ক্ষতির আশঙ্কা আছে। গতকাল বৃহস্পতিবার আমেরিকা ইয়েমেনে হুতিদের অবস্থানে বোমা হামলা চালিয়েছে। ইরান তার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরায়েলের পাল্টা আঘাতের অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও আমেরিকা ইরানের পারমাণবিক বা তেল স্থাপনায় আঘাতের ওপর আপত্তি করেছে। তার পরও ইসরায়েল সম্ভবত ইরানের সামরিক অবস্থানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা করবে।
উল্লিখিত ৩টি প্রশ্নের বাইরেও এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো—ইসরায়েল কি বিশ্বাস করে, তারা নিরাপদে যুদ্ধ বন্ধ করতে সক্ষম? এখন পর্যন্ত ইহুদি রাষ্ট্রটির ওপর ইতিহাসের ‘সবচেয়ে গুরুতর’ আঘাত হানতে সফল হয়েছেন সিনওয়ার। তবে ইসরায়েল সেই আঘাতের জবাবে তার ‘মিলিটারি ডিটারেন্স’ বা ‘সামরিক প্রতিরোধ’ সক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। যদিও এর ফলে দেশটি বিশ্বজুড়ে বড় রকমের সুনামহানির শিকার হয়েছে এবং গাজা বিশাল মানবিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি এবং রাষ্ট্রহীন ফিলিস্তিনিদের ট্র্যাজেডিও অব্যাহত। তবুও এই অঞ্চলে বিস্তৃত উত্তেজনা প্রশমনের দিশা পাওয়া যাচ্ছে। ইরানের ওপর সুনির্দিষ্ট ইসরায়েলি পাল্টা আক্রমণ, গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার মাধ্যমে সমাপ্তি এবং লেবাননে উত্তেজনা প্রশমিত করার মাধ্যমে এটি হতে পারে। প্রয়াত ইয়াহইয়া সিনওয়ার হয়তো এটি অপছন্দ করবেন, কিন্তু তাঁর মৃত্যু ইসরায়েলের জন্য একটি সুযোগ তৈরি করেছে, যাতে সম্ভবত এই যুদ্ধ অবসানের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।
দ্য ইকোনমিস্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
১৭ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১ দিন আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
৩ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে