গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
সারা দুনিয়ায় হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছে ওপেনএআই কোম্পানির নতুন চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি। এ নিয়ে উচ্ছ্বাস ও আশঙ্কার শেষ নেই। অনেকে ভাবছেন, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবার বিশ্ব বদলে দেবে। মানুষের রুটি-রুজিতেও ভাগ বসাবে বলে অনেকের আশঙ্কা। এক কথায় পুরো বিশ্ব মাতিয়ে রেখেছে চ্যাটজিপিটি।
চ্যাট জিপিটি আসলে কী করছে? সহজ কথায়—এই চ্যাটবটের সঙ্গে আমরা যেকোনো আলাপ চালিয়ে যেতে পারি। সে কোটি কোটি তথ্য নিয়ে বসে থাকা এক জ্ঞানী বৃদ্ধের মতো! তার কাছে সব বিষয় সম্পর্কিত তথ্য আছে। উইকিপিডিয়া, ব্লগ পোস্ট, বই এবং একাডেমিক নিবন্ধগুলোর সব তথ্যই তার কাছে আছে। তাকে প্রশ্ন করলে উত্তর দেয় জ্ঞানী মানুষের মতো।
মনে হবে যেন, একজন মানুষ আরেকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলছে। অর্থাৎ ইন্টারপার্সোনাল কমিউনিকেশনে পারদর্শী চ্যাটজিপিটি। আর এ কারণে অনেকেই ভাবছেন, এটি মানুষের জায়গা দখল করবে।
বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যাচ্ছে বলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় সবাই এটি পরখ করে দেখছেন। এটি সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী হোমওয়ার্কও করে ফেলছে চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়ে। রচনা, প্যারাগ্রাফ ইত্যাদি লিখছে। এ কারণে চীনের একটি স্কুলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে এটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে, এটা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা অসদুপায় অবলম্বন করছে, যা তাদের মেধাকে নষ্ট করে দেবে। পড়াবিমুখ হয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা।
অনেকে আবার এটা দিয়ে নিজের ছোটখাটো অনেক কাজ করছেন। যেমন—কনটেন্টের হেডলাইন বাছাই, অ্যাসাইনমেন্টের কাজে সহায়তা, ছোটখাটো নিবন্ধ বা প্রবন্ধ লেখা, এমনকি আদেশ করলে প্রোগ্রামিং কোডও সরবরাহ করছে চ্যাটজিপিটি। এরই মধ্যে অনলাইনে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে বানানো।
ফলে এরই মধ্যে অনেকের মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, চ্যাটজিপিটি মানুষের কর্মসংস্থানে ভাগ বসাবে কি না। লেখালেখি বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজে যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকের ভয় চ্যাটজিপিটি চাকরিটা কেড়ে নেয় কি না! তাহলে বেকার হয়ে যাবে অনেকে। বড় বড় কোম্পানি কর্মী ছাঁটাই করে বসিয়ে দেবে এআই সিস্টেম। মানুষের জায়গা নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
আদৌ কি মানুষের জায়গা নিতে পারবে চ্যাটজিপিটি
এই প্রশ্নের আসলে সরল কোনো উত্তর নেই। পৃথিবীতে প্রযুক্তির উন্নয়নে বহু পেশা বিলীন হয়ে গেছে, আবার নতুন পেশার উদয় হয়েছে। যদিও কর্মসংস্থানের সংকট দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। সারা বিশ্বেই রাজনীতির বড় চ্যালেঞ্জের নাম কর্মসংস্থান।
তবে নতুন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে যদি প্রশ্ন করা হয়, চ্যাটজিপিটি কি নিজে নিজে কাজ করতে পারে? উত্তর, ‘না’। কারণ এখন পর্যন্ত চ্যাটজিপিটি নতুন কোনো ধারণা হাজির করতে পারেনি। যতটুকু তথ্য দিয়ে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেই তথ্যের বাইরে কোনো প্রশ্নের উত্তর সে দিতে পারছে না। তা ছাড়া নিজে থেকে কোনো বিষয় নিয়ে আলাপ করতে পারে না। অর্থাৎ তার চিন্তা করার শক্তি নেই।
চ্যাটজিপিটিকে তথ্য দিয়েছে তো মানুষই। আপাতত এই সিস্টেম চালাতে প্রয়োজন পড়ছে মানুষেরই। তার মানে, এটি পরিচালনার জন্য প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন এখনো রয়েছে। লড়াইটা হবে হয়তো দক্ষতায়। দক্ষতাসম্পন্ন মানুষ কাজের প্যাটার্ন পরিবর্তন করে টিকে থাকবে এই সিস্টেমের সঙ্গে লড়ে। যারা আগে কন্টেট লিখত, তারা এই সিস্টেম পরিচালনার কাজ করবে। পরিবর্তন এমনই হতে পারে।
আদৌ কি চ্যাটজিপিটি মানুষের জন্য আতঙ্কের? এটাকে যেভাবে দেখছি বা দেখানো হচ্ছে, আসলেই কি তাই? এটাতে কি কোনো বাগ নেই? এর প্রশংসা করলেও এর আছে বেশ কিছু সমস্যা বা ত্রুটি। অনেকেই এটা ব্যবহার করতে গিয়ে এই ত্রুটিগুলোর কথা তুলে ধরেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক তাঁর সম্পর্কে চ্যাটজিপিটির কাছে জানতে চাইলে চ্যাটজিপিটি এমন কিছু তথ্য দেয়, যা সঠিক নয়। যেমন ফাহমিদুল হক সম্পর্কে বলেছে, তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন। এ বিষয়ে ফাহমিদুল হক তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চ্যাট জিপিটিকে আমার সম্পর্কে লিখতে বলেছিলাম। কিন্তু আমি এটা দেখে খুবই খুশি যে এই সর্বজ্ঞানী এআই মেশিন আপনাকে কিছু ভুল তথ্যও দিচ্ছে। আমি কখনো কোনো ছবি পরিচালনা করিনি বা কারও জন্য কোনো চিত্রনাট্য লিখিনি।’
ফাহমিদুল হক সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে চ্যাটজিপিটি, তার অনেক কিছুই ঠিক নেই।
চ্যাটজিপিটি নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক অধ্যাপক মফিজুর রহমান। তিনি তাঁর ফেসবুক আইডিতে চ্যাটজিপিটির সমস্যা তুলে ধরেছেন। তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলে ভুলভাল তথ্য দিয়েছে এই সিস্টেম।
সামাজিক ঝুঁকির বিষয়ে কথা বলছেন অনেকে। যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান অ্যাডা লাভলেস ইনস্টিটিউটের কার্লি কাইন্ড। তাঁর মতে, চ্যাটজিপিটি এবং অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বিভিন্ন নৈতিক এবং সামাজিক ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কাইন্ডের উদ্বেগের সম্ভাব্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে এআই ভুল তথ্য বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পরিষেবায়ও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে লৈঙ্গিক পক্ষপাত ও জাতিগত পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের মনোবিজ্ঞান ও নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক স্টিভেন পিয়ানতাডোসি এক টুইটার পোস্টে বলেছেন, চ্যাটজিপিটিতে নির্দিষ্ট পাঠ্য ইনপুট করার সময় আমি উদ্বেগজনক ফলাফল আবিষ্কার করেছি।
অধ্যাপক স্টিভেন পিয়ানতাডোসি আরও বলেছেন, জাতি ও লিঙ্গের ওপর ভিত্তি করে কেউ ভালো বিজ্ঞানী হবে কি না, কেউ ভালো বুদ্ধিজীবী হবে কি না—এসব জিজ্ঞেস করুন, চ্যাটজিপিটি ভয়ংকর ফলাফল দেখাবে। দেখবেন, ফলাফলে শ্বেতাঙ্গ ও পুরুষেরা প্রাধান্য পেয়েছে। নারী ও অন্যান্য বর্ণের মানুষ সেখানে নেই বললেই চলে।
ওই টুইটের মন্তব্যের ঘরে অনেকেই বলেছেন, পাইথন ফাংশন তৈরি করতে পারে না চ্যাটজিপিটি। কিন্তু মানুষ পারে। কাজেই মানুষের অসীম সম্ভাবনার কাছে যেতে পারে না চ্যাটজিপিটি।
অনেকে কনটেন্ট তৈরি করতে গিয়ে এমন ঝামেলায় পড়েছেন। ইন্টারনেটে চ্যাটজিপিটি দিয়ে তৈরি অনেক ব্লগ দেখা যাচ্ছে। অনেকে নাকি এ দিয়ে আয়-উপার্জনও শুরু করেছেন। তবে এই কনটেন্টগুলো কিন্তু ঠিকই সম্পাদনা করতে হয়েছে। তার মানে কারিগরি জ্ঞান, লেখা ও ডিজাইনের মান সম্পর্কে ধারণা না থাকলে চ্যাটজিপিটির মতো মিডজার্নি বা ডালই এআই দিয়েও তেমন কোনো কাজ হবে না। এ ক্ষেত্রে দক্ষ মানুষের জন্য নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।
চ্যাটজিপিটি সিস্টেমকে যখন প্রশ্ন করা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানুষের লেখালেখির কাজ নিজের দখলে নেবে? এটি বলে, ‘না’। এর যুক্তিতে বটটি বলে, ‘আমার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিস্টেমগুলো পরামর্শ ও ধারণা প্রদান করে লেখকদের সাহায্য করতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি চূড়ান্ত ফলাফল তৈরির জন্য এটি মানব লেখকের ওপরই নির্ভর করে।’
একইভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমের সামাজিক প্রভাব কী হবে, জানতে চাইলে বটটি উত্তর দেয়, সে বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।
কিছু বিজ্ঞানী এটিকে বিপজ্জনক বলছেন। বিশেষ করে চিকিৎসা পরামর্শের মতো কিছু জানতে চাইলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
বেশ কিছু সমস্যা থাকলেও চ্যাটজিপিটি মানুষের ভালো সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। এটির সঠিক ব্যবহার মানুষের জন্য উদ্বেগের চেয়ে সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে এই সিস্টেম মানুষের স্থান দখল করবে এমনটা বলার সময় এখনো হয়নি।
সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, বিজনেস ইনসাইডার, ডিজিটাল ট্রেন্ডস
সারা দুনিয়ায় হুলুস্থুল ফেলে দিয়েছে ওপেনএআই কোম্পানির নতুন চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি। এ নিয়ে উচ্ছ্বাস ও আশঙ্কার শেষ নেই। অনেকে ভাবছেন, এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবার বিশ্ব বদলে দেবে। মানুষের রুটি-রুজিতেও ভাগ বসাবে বলে অনেকের আশঙ্কা। এক কথায় পুরো বিশ্ব মাতিয়ে রেখেছে চ্যাটজিপিটি।
চ্যাট জিপিটি আসলে কী করছে? সহজ কথায়—এই চ্যাটবটের সঙ্গে আমরা যেকোনো আলাপ চালিয়ে যেতে পারি। সে কোটি কোটি তথ্য নিয়ে বসে থাকা এক জ্ঞানী বৃদ্ধের মতো! তার কাছে সব বিষয় সম্পর্কিত তথ্য আছে। উইকিপিডিয়া, ব্লগ পোস্ট, বই এবং একাডেমিক নিবন্ধগুলোর সব তথ্যই তার কাছে আছে। তাকে প্রশ্ন করলে উত্তর দেয় জ্ঞানী মানুষের মতো।
মনে হবে যেন, একজন মানুষ আরেকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলছে। অর্থাৎ ইন্টারপার্সোনাল কমিউনিকেশনে পারদর্শী চ্যাটজিপিটি। আর এ কারণে অনেকেই ভাবছেন, এটি মানুষের জায়গা দখল করবে।
বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যাচ্ছে বলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় সবাই এটি পরখ করে দেখছেন। এটি সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন। অনেক শিক্ষার্থী হোমওয়ার্কও করে ফেলছে চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়ে। রচনা, প্যারাগ্রাফ ইত্যাদি লিখছে। এ কারণে চীনের একটি স্কুলে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে এটি ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে, এটা ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা অসদুপায় অবলম্বন করছে, যা তাদের মেধাকে নষ্ট করে দেবে। পড়াবিমুখ হয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা।
অনেকে আবার এটা দিয়ে নিজের ছোটখাটো অনেক কাজ করছেন। যেমন—কনটেন্টের হেডলাইন বাছাই, অ্যাসাইনমেন্টের কাজে সহায়তা, ছোটখাটো নিবন্ধ বা প্রবন্ধ লেখা, এমনকি আদেশ করলে প্রোগ্রামিং কোডও সরবরাহ করছে চ্যাটজিপিটি। এরই মধ্যে অনলাইনে বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট পাওয়া যাচ্ছে যেগুলো চ্যাটজিপিটিকে দিয়ে বানানো।
ফলে এরই মধ্যে অনেকের মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে যে, চ্যাটজিপিটি মানুষের কর্মসংস্থানে ভাগ বসাবে কি না। লেখালেখি বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের কাজে যাঁরা আছেন, তাঁদের অনেকের ভয় চ্যাটজিপিটি চাকরিটা কেড়ে নেয় কি না! তাহলে বেকার হয়ে যাবে অনেকে। বড় বড় কোম্পানি কর্মী ছাঁটাই করে বসিয়ে দেবে এআই সিস্টেম। মানুষের জায়গা নেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
আদৌ কি মানুষের জায়গা নিতে পারবে চ্যাটজিপিটি
এই প্রশ্নের আসলে সরল কোনো উত্তর নেই। পৃথিবীতে প্রযুক্তির উন্নয়নে বহু পেশা বিলীন হয়ে গেছে, আবার নতুন পেশার উদয় হয়েছে। যদিও কর্মসংস্থানের সংকট দিনে দিনে প্রকট হচ্ছে। সারা বিশ্বেই রাজনীতির বড় চ্যালেঞ্জের নাম কর্মসংস্থান।
তবে নতুন এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে যদি প্রশ্ন করা হয়, চ্যাটজিপিটি কি নিজে নিজে কাজ করতে পারে? উত্তর, ‘না’। কারণ এখন পর্যন্ত চ্যাটজিপিটি নতুন কোনো ধারণা হাজির করতে পারেনি। যতটুকু তথ্য দিয়ে তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, সেই তথ্যের বাইরে কোনো প্রশ্নের উত্তর সে দিতে পারছে না। তা ছাড়া নিজে থেকে কোনো বিষয় নিয়ে আলাপ করতে পারে না। অর্থাৎ তার চিন্তা করার শক্তি নেই।
চ্যাটজিপিটিকে তথ্য দিয়েছে তো মানুষই। আপাতত এই সিস্টেম চালাতে প্রয়োজন পড়ছে মানুষেরই। তার মানে, এটি পরিচালনার জন্য প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন মানুষের প্রয়োজন এখনো রয়েছে। লড়াইটা হবে হয়তো দক্ষতায়। দক্ষতাসম্পন্ন মানুষ কাজের প্যাটার্ন পরিবর্তন করে টিকে থাকবে এই সিস্টেমের সঙ্গে লড়ে। যারা আগে কন্টেট লিখত, তারা এই সিস্টেম পরিচালনার কাজ করবে। পরিবর্তন এমনই হতে পারে।
আদৌ কি চ্যাটজিপিটি মানুষের জন্য আতঙ্কের? এটাকে যেভাবে দেখছি বা দেখানো হচ্ছে, আসলেই কি তাই? এটাতে কি কোনো বাগ নেই? এর প্রশংসা করলেও এর আছে বেশ কিছু সমস্যা বা ত্রুটি। অনেকেই এটা ব্যবহার করতে গিয়ে এই ত্রুটিগুলোর কথা তুলে ধরেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ফাহমিদুল হক তাঁর সম্পর্কে চ্যাটজিপিটির কাছে জানতে চাইলে চ্যাটজিপিটি এমন কিছু তথ্য দেয়, যা সঠিক নয়। যেমন ফাহমিদুল হক সম্পর্কে বলেছে, তিনি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন এবং চিত্রনাট্য লিখেছেন। এ বিষয়ে ফাহমিদুল হক তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন, ‘চ্যাট জিপিটিকে আমার সম্পর্কে লিখতে বলেছিলাম। কিন্তু আমি এটা দেখে খুবই খুশি যে এই সর্বজ্ঞানী এআই মেশিন আপনাকে কিছু ভুল তথ্যও দিচ্ছে। আমি কখনো কোনো ছবি পরিচালনা করিনি বা কারও জন্য কোনো চিত্রনাট্য লিখিনি।’
ফাহমিদুল হক সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছে চ্যাটজিপিটি, তার অনেক কিছুই ঠিক নেই।
চ্যাটজিপিটি নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক অধ্যাপক মফিজুর রহমান। তিনি তাঁর ফেসবুক আইডিতে চ্যাটজিপিটির সমস্যা তুলে ধরেছেন। তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলে ভুলভাল তথ্য দিয়েছে এই সিস্টেম।
সামাজিক ঝুঁকির বিষয়ে কথা বলছেন অনেকে। যুক্তরাজ্যের প্রতিষ্ঠান অ্যাডা লাভলেস ইনস্টিটিউটের কার্লি কাইন্ড। তাঁর মতে, চ্যাটজিপিটি এবং অন্যান্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেম বিভিন্ন নৈতিক এবং সামাজিক ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কাইন্ডের উদ্বেগের সম্ভাব্য সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে এআই ভুল তথ্য বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পরিষেবায়ও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
চ্যাটজিপিটির বিরুদ্ধে লৈঙ্গিক পক্ষপাত ও জাতিগত পক্ষপাতের অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের মনোবিজ্ঞান ও নিউরোসায়েন্সের অধ্যাপক স্টিভেন পিয়ানতাডোসি এক টুইটার পোস্টে বলেছেন, চ্যাটজিপিটিতে নির্দিষ্ট পাঠ্য ইনপুট করার সময় আমি উদ্বেগজনক ফলাফল আবিষ্কার করেছি।
অধ্যাপক স্টিভেন পিয়ানতাডোসি আরও বলেছেন, জাতি ও লিঙ্গের ওপর ভিত্তি করে কেউ ভালো বিজ্ঞানী হবে কি না, কেউ ভালো বুদ্ধিজীবী হবে কি না—এসব জিজ্ঞেস করুন, চ্যাটজিপিটি ভয়ংকর ফলাফল দেখাবে। দেখবেন, ফলাফলে শ্বেতাঙ্গ ও পুরুষেরা প্রাধান্য পেয়েছে। নারী ও অন্যান্য বর্ণের মানুষ সেখানে নেই বললেই চলে।
ওই টুইটের মন্তব্যের ঘরে অনেকেই বলেছেন, পাইথন ফাংশন তৈরি করতে পারে না চ্যাটজিপিটি। কিন্তু মানুষ পারে। কাজেই মানুষের অসীম সম্ভাবনার কাছে যেতে পারে না চ্যাটজিপিটি।
অনেকে কনটেন্ট তৈরি করতে গিয়ে এমন ঝামেলায় পড়েছেন। ইন্টারনেটে চ্যাটজিপিটি দিয়ে তৈরি অনেক ব্লগ দেখা যাচ্ছে। অনেকে নাকি এ দিয়ে আয়-উপার্জনও শুরু করেছেন। তবে এই কনটেন্টগুলো কিন্তু ঠিকই সম্পাদনা করতে হয়েছে। তার মানে কারিগরি জ্ঞান, লেখা ও ডিজাইনের মান সম্পর্কে ধারণা না থাকলে চ্যাটজিপিটির মতো মিডজার্নি বা ডালই এআই দিয়েও তেমন কোনো কাজ হবে না। এ ক্ষেত্রে দক্ষ মানুষের জন্য নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।
চ্যাটজিপিটি সিস্টেমকে যখন প্রশ্ন করা হয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি মানুষের লেখালেখির কাজ নিজের দখলে নেবে? এটি বলে, ‘না’। এর যুক্তিতে বটটি বলে, ‘আমার মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিস্টেমগুলো পরামর্শ ও ধারণা প্রদান করে লেখকদের সাহায্য করতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি চূড়ান্ত ফলাফল তৈরির জন্য এটি মানব লেখকের ওপরই নির্ভর করে।’
একইভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সিস্টেমের সামাজিক প্রভাব কী হবে, জানতে চাইলে বটটি উত্তর দেয়, সে বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।
কিছু বিজ্ঞানী এটিকে বিপজ্জনক বলছেন। বিশেষ করে চিকিৎসা পরামর্শের মতো কিছু জানতে চাইলে তা বিপজ্জনক হতে পারে।
বেশ কিছু সমস্যা থাকলেও চ্যাটজিপিটি মানুষের ভালো সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। এটির সঠিক ব্যবহার মানুষের জন্য উদ্বেগের চেয়ে সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে এই সিস্টেম মানুষের স্থান দখল করবে এমনটা বলার সময় এখনো হয়নি।
সূত্র: বিবিসি, সিএনএন, বিজনেস ইনসাইডার, ডিজিটাল ট্রেন্ডস
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৭ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১৫ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে