আব্দুর রহমান
মালয়েশিয়ার ১০ম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। দীর্ঘ ২৫ বছরের অপেক্ষা অবসান ঘটল। ১৯৯৮ সালেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু একসময়ের রাজনৈতিক গুরু আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার খ্যাত মাহাথির মোহাম্মদের কোপানলে পড়ে জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে তাঁকে। ২০২০ সালে জোট করে ক্ষমতায় এলেও মাহাথির শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি।
কিন্তু এবার আর হতাশ হতে হয়নি তাঁকে। মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট দেওয়ান রাকায়েতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসন না পেলেও সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দলের প্রধান হিসেবে দেশটির সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমদ শাহ আনোয়ারকেই পছন্দ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের পাকাতান হারাপান জোট সর্বোচ্চ ৮২টি এবং ইসমাইল ইয়াকোবের ইউনাইটেড মালয়েস ন্যাশনাল জোট ৩০টি আসনে জয়ী হয়। অন্যদিকে মুহিদ্দিন ইয়াসিনের পেরিকাতান ন্যাশনাল ৭৩টি আসনে জয় পায়। মালয়েশিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে সংসদের ২২২টি আসনের মধ্যে অন্তত ১১২টি আসনে জয় পেতে হয়।
আনোয়ার ইব্রাহিমের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু ১৯৮২ সালে। সে বছর মাহাথির মোহাম্মদের ইউনাইটেড মালয়াস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগ দেন তিনি। দ্রুত উত্থান ঘটতে থাকে তাঁর। ১১ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৩ সালে মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী হন। একই সঙ্গে দেশটির অর্থমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ধারণা করা হচ্ছিল, মাহাথিরের পর তিনিই হবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু তা আর হয়নি। ১৯৯৮ সালের দিকে এশিয়াজুড়ে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। সংকট মোকাবিলার পদ্ধতি নিয়ে মাহাথির এবং আনোয়ারের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। মাহাথির চাইছিলেন নিজের মতো করে সংকট মোকাবিলা করতে। আনোয়ার ইব্রাহিমের ভূমিকা খর্ব করতে থাকেন। আনোয়ার তখন মাহাথির সরকারের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকেন। দুজনের দূরত্ব আরও বাড়ে।
অথচ একসময় মাহাথির এবং আনোয়ার এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে, মাহাথির আনোয়ারকে বন্ধু এবং শিষ্য বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন। সেই আনোয়ার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে সমকামিতা এবং দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাঁকে পদচ্যুত করা হয়। তবে মাহাথিরের এমন আচরণের জবাবে চুপ ছিলেন না আনোয়ারও। দেশটির অধিকাংশ মুসলিম এবং বৃহত্তর নৃগোষ্ঠীগুলোর সমর্থন আদায়ে সমর্থ হন তিনি এবং তাঁর সমর্থনে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।
পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে সমর্থকদের নিয়ে আনোয়ার ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি-কিয়াদিলান নামে একটি রাজনৈতিক দল গড়েন। সে বছরই আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দেয়। কারাদণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় আনোয়ারে দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু তাঁর আরজি আমলে নেয়নি আদালত।
২০০৩ সালে মাহাথির মোহাম্মদ দীর্ঘ ২২ বছর স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়েন। তাঁর পদত্যাগের পর ধারণা করা হচ্ছিল, এবার আনোয়ার মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। হয়ও তাই। ২০০৪ সালে মুক্তি পান তিনি। মুক্তির চার বছর পর আবার তাঁর বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগ আনা হয়। এ সময়ে তিনি দেশটির পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, তাঁকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতেই এই চক্রান্ত। সে সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মাহাথিরেরই আরেক শিষ্য ড. নাজিব রাজাক। নাজিব সরকারের সময় ২০১৫ সালে আনোয়ার ইব্রাহিমকে আবারও কারাদণ্ড দেওয়া হয়, সেই সমকামিতার অভিযোগেই।
ক্ষমতার খেলা বড় বিচিত্র! ২০১৬ সালে এসে পাশার ছক বদলে যায়। ‘ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহার্ড’ কেলেঙ্কারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের পদত্যাগ দাবি করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন মাহাথির। আন্দোলন গড়ে তোলেন নাজিব সরকারের বিরুদ্ধে। এই সময় রাজনৈতিক দর-কষাকষির বাজারে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি হয়ে ওঠেন আনোয়ার ইব্রাহিম। মাহাথির রাজার কাছে আনোয়ারের সাজা মওকুফের আবেদন করবেন এবং নাজিব রাজাককে অপসারণের কিছুদিন পর আনোয়ারকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে— দুজনের মধ্যে এই সমঝোতা হয়।
এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। ২০১৮ সালের ৯ মে মাহাথির-আনোয়ারের জোট পাকাতান হারাপান নাজিবের দল ইউএমএনওর বিরুদ্ধে বিশাল জয় পায়। এর মধ্য দিয়ে মাহাথির সাবেক দলটির টানা ৬০ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই আনোয়ার মুক্তি পান জেল থেকে। তবে ক্ষমতা থেকে যায় মাহাথিরের হাতেই।
প্রতিশ্রুতি দিলেও ২০২০ সালে এসে মাহাথির আনোয়ারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করেন। আনোয়ারের দল এ নিয়ে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একপর্যায়ে মাহাথিরের দলের সঙ্গে জোট ভেঙে যায় এবং দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর সেখানেই সবচেয়ে বেশি আসন পায় আনোয়ারের দল। নিজের নির্বাচনী আসনে মাহাথির মাত্র ৪ হাজার ৫৬৬ বা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জামানত হারান। ১৯৬৯ সালের পর মালয়েশিয়ার সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো পরাজয়ের স্বাদ পান ৯৭ বছর বয়সী মাহাথির মোহাম্মদ।
অবশেষে দীর্ঘ অচলাবস্থা ভেঙে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমঝোতার ভিত্তিতে আনোয়ার ইব্রাহিমকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পাঠ করান দেশটির সুলতান।
আনোয়ার ইব্রাহিমের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে কেউ তুলনা করেন ‘রোলার কোস্টারের’ সঙ্গে, আবার কেউ কেউ তাঁকে তুলনা করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ–বিরোধী কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে। যেমন সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের ফেলো ই সুন ওহ বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আনোয়ারের রাজনৈতিক সংগ্রামকে অনেকটা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তুলনা করা যায়। তাঁরা দুজনই নিজ দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালুর লক্ষ্যে নানা মাত্রায় বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন।’
তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রধানমন্ত্রী হলেও বিদ্যমান পরিস্থিতি আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য খুব মধুর কোনো স্মৃতি দিতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ, দেশটি কোভিড মহামারি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এবং জ্বালানি সংকটের কারণে বেশ খানিকটা ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া পার্লামেন্টেও তাঁর দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। এটি তাঁর জন্য বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আইন প্রণয়ন, বিভিন্ন বিল পাসের ক্ষেত্রে তাঁর কোনো আধিপত্য থাকছে না। পরিণতিতে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
আনোয়ার ইব্রাহিম নিজেও পরিস্থিতি আঁচ করে নিজের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগেই তিনি এক সাক্ষাৎকারে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘আমি আমার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত।’
তবে, সন্দেহ নেই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্ব আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য বহু কাঙ্ক্ষিত। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তাঁকে বলা হচ্ছে জনগণের ভোটে এবং রাজার পছন্দে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, এপি, এনপিআর, আল-জাজিরা ও স্ট্রেইট টাইম
মালয়েশিয়ার ১০ম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। দীর্ঘ ২৫ বছরের অপেক্ষা অবসান ঘটল। ১৯৯৮ সালেই প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু একসময়ের রাজনৈতিক গুরু আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার খ্যাত মাহাথির মোহাম্মদের কোপানলে পড়ে জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে কাটাতে হয়েছে তাঁকে। ২০২০ সালে জোট করে ক্ষমতায় এলেও মাহাথির শেষ পর্যন্ত কথা রাখেননি।
কিন্তু এবার আর হতাশ হতে হয়নি তাঁকে। মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট দেওয়ান রাকায়েতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক আসন না পেলেও সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া দলের প্রধান হিসেবে দেশটির সুলতান আবদুল্লাহ সুলতান আহমদ শাহ আনোয়ারকেই পছন্দ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন তিনি।
নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের পাকাতান হারাপান জোট সর্বোচ্চ ৮২টি এবং ইসমাইল ইয়াকোবের ইউনাইটেড মালয়েস ন্যাশনাল জোট ৩০টি আসনে জয়ী হয়। অন্যদিকে মুহিদ্দিন ইয়াসিনের পেরিকাতান ন্যাশনাল ৭৩টি আসনে জয় পায়। মালয়েশিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে সংসদের ২২২টি আসনের মধ্যে অন্তত ১১২টি আসনে জয় পেতে হয়।
আনোয়ার ইব্রাহিমের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু ১৯৮২ সালে। সে বছর মাহাথির মোহাম্মদের ইউনাইটেড মালয়াস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশনে (ইউএমএনও) যোগ দেন তিনি। দ্রুত উত্থান ঘটতে থাকে তাঁর। ১১ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৩ সালে মালয়েশিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রী হন। একই সঙ্গে দেশটির অর্থমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ধারণা করা হচ্ছিল, মাহাথিরের পর তিনিই হবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু তা আর হয়নি। ১৯৯৮ সালের দিকে এশিয়াজুড়ে আর্থিক সংকট দেখা দেয়। সংকট মোকাবিলার পদ্ধতি নিয়ে মাহাথির এবং আনোয়ারের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। মাহাথির চাইছিলেন নিজের মতো করে সংকট মোকাবিলা করতে। আনোয়ার ইব্রাহিমের ভূমিকা খর্ব করতে থাকেন। আনোয়ার তখন মাহাথির সরকারের দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকেন। দুজনের দূরত্ব আরও বাড়ে।
অথচ একসময় মাহাথির এবং আনোয়ার এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলেন যে, মাহাথির আনোয়ারকে বন্ধু এবং শিষ্য বলেও আখ্যা দিয়েছিলেন। সেই আনোয়ার ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে সমকামিতা এবং দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাঁকে পদচ্যুত করা হয়। তবে মাহাথিরের এমন আচরণের জবাবে চুপ ছিলেন না আনোয়ারও। দেশটির অধিকাংশ মুসলিম এবং বৃহত্তর নৃগোষ্ঠীগুলোর সমর্থন আদায়ে সমর্থ হন তিনি এবং তাঁর সমর্থনে লাখো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে।
পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯৯ সালে সমর্থকদের নিয়ে আনোয়ার ন্যাশনাল জাস্টিস পার্টি-কিয়াদিলান নামে একটি রাজনৈতিক দল গড়েন। সে বছরই আদালত তাঁকে কারাদণ্ড দেয়। কারাদণ্ডের প্রতিক্রিয়ায় আনোয়ারে দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কিন্তু তাঁর আরজি আমলে নেয়নি আদালত।
২০০৩ সালে মাহাথির মোহাম্মদ দীর্ঘ ২২ বছর স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়েন। তাঁর পদত্যাগের পর ধারণা করা হচ্ছিল, এবার আনোয়ার মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। হয়ও তাই। ২০০৪ সালে মুক্তি পান তিনি। মুক্তির চার বছর পর আবার তাঁর বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগ আনা হয়। এ সময়ে তিনি দেশটির পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, তাঁকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতেই এই চক্রান্ত। সে সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মাহাথিরেরই আরেক শিষ্য ড. নাজিব রাজাক। নাজিব সরকারের সময় ২০১৫ সালে আনোয়ার ইব্রাহিমকে আবারও কারাদণ্ড দেওয়া হয়, সেই সমকামিতার অভিযোগেই।
ক্ষমতার খেলা বড় বিচিত্র! ২০১৬ সালে এসে পাশার ছক বদলে যায়। ‘ওয়ান মালয়েশিয়া ডেভেলপমেন্ট বেরহার্ড’ কেলেঙ্কারিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের পদত্যাগ দাবি করে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন মাহাথির। আন্দোলন গড়ে তোলেন নাজিব সরকারের বিরুদ্ধে। এই সময় রাজনৈতিক দর-কষাকষির বাজারে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি হয়ে ওঠেন আনোয়ার ইব্রাহিম। মাহাথির রাজার কাছে আনোয়ারের সাজা মওকুফের আবেদন করবেন এবং নাজিব রাজাককে অপসারণের কিছুদিন পর আনোয়ারকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে— দুজনের মধ্যে এই সমঝোতা হয়।
এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল। ২০১৮ সালের ৯ মে মাহাথির-আনোয়ারের জোট পাকাতান হারাপান নাজিবের দল ইউএমএনওর বিরুদ্ধে বিশাল জয় পায়। এর মধ্য দিয়ে মাহাথির সাবেক দলটির টানা ৬০ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এর এক সপ্তাহের মধ্যেই আনোয়ার মুক্তি পান জেল থেকে। তবে ক্ষমতা থেকে যায় মাহাথিরের হাতেই।
প্রতিশ্রুতি দিলেও ২০২০ সালে এসে মাহাথির আনোয়ারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করেন। আনোয়ারের দল এ নিয়ে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। একপর্যায়ে মাহাথিরের দলের সঙ্গে জোট ভেঙে যায় এবং দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৯ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর সেখানেই সবচেয়ে বেশি আসন পায় আনোয়ারের দল। নিজের নির্বাচনী আসনে মাহাথির মাত্র ৪ হাজার ৫৬৬ বা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জামানত হারান। ১৯৬৯ সালের পর মালয়েশিয়ার সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো পরাজয়ের স্বাদ পান ৯৭ বছর বয়সী মাহাথির মোহাম্মদ।
অবশেষে দীর্ঘ অচলাবস্থা ভেঙে বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমঝোতার ভিত্তিতে আনোয়ার ইব্রাহিমকেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পাঠ করান দেশটির সুলতান।
আনোয়ার ইব্রাহিমের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে কেউ তুলনা করেন ‘রোলার কোস্টারের’ সঙ্গে, আবার কেউ কেউ তাঁকে তুলনা করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ–বিরোধী কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে। যেমন সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের ফেলো ই সুন ওহ বার্তা সংস্থা এপিকে বলেন, ‘আনোয়ারের রাজনৈতিক সংগ্রামকে অনেকটা নেলসন ম্যান্ডেলার সঙ্গে তুলনা করা যায়। তাঁরা দুজনই নিজ দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালুর লক্ষ্যে নানা মাত্রায় বিচারের সম্মুখীন হয়েছেন।’
তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রধানমন্ত্রী হলেও বিদ্যমান পরিস্থিতি আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য খুব মধুর কোনো স্মৃতি দিতে পারবে বলে মনে হয় না। কারণ, দেশটি কোভিড মহামারি, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক এবং জ্বালানি সংকটের কারণে বেশ খানিকটা ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া পার্লামেন্টেও তাঁর দলের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। এটি তাঁর জন্য বড় মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আইন প্রণয়ন, বিভিন্ন বিল পাসের ক্ষেত্রে তাঁর কোনো আধিপত্য থাকছে না। পরিণতিতে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বই ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
আনোয়ার ইব্রাহিম নিজেও পরিস্থিতি আঁচ করে নিজের সীমাবদ্ধতার বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার আগেই তিনি এক সাক্ষাৎকারে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘আমি আমার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবগত।’
তবে, সন্দেহ নেই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রিত্ব আনোয়ার ইব্রাহিমের জন্য বহু কাঙ্ক্ষিত। যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় তাঁকে বলা হচ্ছে জনগণের ভোটে এবং রাজার পছন্দে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স, এপি, এনপিআর, আল-জাজিরা ও স্ট্রেইট টাইম
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৫ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১২ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে