অনলাইন ডেস্ক
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। গত মাসে আরব লিগের ডাকা জরুরি বৈঠকেও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার’ আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে গাজায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরায়েল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে ২০০৫ সালে দখলদার দেশটি ৮ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেয় ও গাজা হামাসের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন কেউই সঠিকভাবে জানত না এই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে বা ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কেউ কেউ আশা করেছিলেন, ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সদিচ্ছা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে। তবে অন্যরা এখানে ইসরায়েলের চতুর চক্রান্ত দেখেছিলেন। তাঁদের মতে, গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। এই অনুমানই সত্য হয়ে ফলেছে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনের এই অংশে কল্পনাতীতভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর থেকে একই ধরনের দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহতের পর আইডিএফ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। এতে ৯ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর অধিকাংশই আবার শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা। তাঁরা এখন আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ দ্বিতীয় নাকবার (বিপর্যয়) দিকে নিয়ে যাবে। যেখানে ১৯৪৮ সালে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের উত্থানের সময় প্রথম নাকবায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীরা আশা করছেন, এই যুদ্ধ গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং সরিয়ে নেওয়া ইহুদি বসতি পুনর্নির্মাণের সুযোগ দেবে। এত কিছুর মধ্যেও বাইডেন আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেবে।
আপাতত, দ্বি-রাষ্ট্র বা শান্তি চুক্তি এক দূরের স্বপ্ন। হামাসের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে জানাচ্ছেন ইসরায়েলি জেনারেলরা। তবে যুদ্ধ শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে হস্তান্তর করার আশা করছে ইসরায়েল ও বিশ্ব মোড়লেরা। পিএর সঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি ছাড়া এমন কিছু মেনে নেবেন বলে মনে হয় না।
যা হোক, গাজা যুদ্ধের পর একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বা যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বিবেচনা করা দরকার। এর জন্য বিস্তৃত রূপরেখা কয়েক দশক ধরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। গাজা ও পশ্চিম তীর মিলে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে; ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশের জন্য তার ভূখণ্ডের অংশ অদলবদল করবে, যেখানে তারা বড় বসতি তৈরি করেছে। জেরুজালেম বিভক্ত হবে, পুরোনো শহরের ওপর একধরনের যৌথ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী ইসরায়েলে ফিরে যেতে পারে, বাকিরা ফিলিস্তিন বা অন্য কোথাও তাঁদের বর্তমান বাড়িতে বসতি স্থাপন করবে। তবে ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক বাহিনী মুক্ত করার।
দুই দশকের গভীর আলোচনার পর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে অসলো চুক্তির আশাবাদী যুগ ও বারাক ওবামার অধীনে একটি অসংলগ্ন প্রচেষ্টার পর ২০১৪ সালে শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে বড় কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
আগের আলোচনা ঠিক যেখানে থেমেছিল, সেখান থেকেই নতুন আলোচনা শুরুর সুযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সংকট।
২০২১ সালের শেষের দিক পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ছিল, যেখানে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০। বিষয়টি শান্তির জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বাধা হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বসতি এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে যে এগুলো চুক্তিনামায় ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। কিন্তু অবৈধ বসতির সঙ্গে ইসরায়েলে রাজনৈতিক প্রভাবও বেড়ে গগনচুম্বী হয়েছে, ফলে তারা যেসব জমিতে বসতি স্থাপন করেনি সেগুলোও ছাড়তে চাইবে না।
সংকটের পটভূমিই সব
আঞ্চলিক রাজনীতির চিত্রও আরও জটিল। ২০০২ সালে আরব লীগ সৌদি আরবের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়, যেখানে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ছিল। ব্যাপারটি এমন যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটালেই ইসরায়েল সমস্ত আঞ্চলিক সংঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবে। ওই সময় আরব দেশগুলোর এই শান্তি উদ্যোগকে একটি শক্তিশালী প্রস্তাব বলে ধারণা করে হয়েছিল।
আঞ্চলিক হামলার আশঙ্কামুক্ত হলেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মাটি ছাড়তে ইচ্ছুক হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের সমর-রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে ইয়েমেনের হুথিরা এখন দেশ দুটিতে সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গোষ্ঠী দুটি যত দিন সক্রিয় থাকবে, ইসরায়েল তত দিন অনিরাপত্তায় ভুগবে। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো এখন আর চাইলেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ইতি টানতে পারবে না, অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোরও সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এদিকে একটি দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব বাস্তবায়ন বেশ ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের আগেও ফিলিস্তিনিরা গাজা পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই অর্থের পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ২০০০ সালে ব্যর্থ ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে আলোচকেরা ফিলিস্তিনিদের হারানো সম্পত্তির জন্য শরণার্থীদের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে, তারা নিজ দেশ ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের জন্য এই অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দাবি করবে।
তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য এখন বিশদ বিবরণী নয় বরং আলোচনা ও বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্র-ডানপন্থী এবং ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের জোটের সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনা হবে না। এই জোটের গাজা যুদ্ধের পরে টিকে থাকার সম্ভাবনাও নেই।
নেতানিয়াহুর বিরোধীরা আশা করছে, পরবর্তী সরকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আরও উপযুক্ত হবে। একজন মধ্যপন্থী ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা হয়েছে যে তাঁদের (ফিলিস্তিনি) থেকে আমাদের ভালোভাবে আলাদা হতে হবে। এটি আলোচনা শুরুর উপযুক্ত সময়।’ কিন্তু উদার ও বামপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে হামাস সব সময়ই উদ্দেশ্যহীন খেলায় আগ্রহী। নব্বইয়ের দশকে হামাসের প্রথম আত্মঘাতী-বোমা হামলা অসলো শান্তি প্রক্রিয়াকে ঘোলা পানিতে ডুবিয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত হামাসের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (অভ্যুত্থান) হত্যাযজ্ঞ দেখে একটি ইসরায়েলি প্রজন্ম আপসের ধারণা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। এবার গাজা যুদ্ধের পর হামাস হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে—কিন্তু অন্য কোনো দল সেই জায়গা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে আস্থা হারিয়েছে। ইসরায়েলের একটি নির্দলীয় থিংক-ট্যাংক ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, যে ইসরায়েলি ইহুদিদের মাত্র ৩২ শতাংশ দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব সমর্থন করে, যা পাঁচ বছর আগে ৪৭ শতাংশ ছিল।
ইসরায়েলি জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ আরব বংশোদ্ভূত, তাঁরা এখনো এই প্রস্তাব সমর্থন করছে, যদিও তাঁদের সমর্থনও কমে গেছে। ২০১৭ সালে ৮৭ শতাংশ ইসরায়েলি-আরব এর সমর্থন করত, যা ২০২২ সালে ৭১ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসরায়েলি ইহুদিদের অধিকাংশই আবার বর্তমান পরিস্থিতিকেই পছন্দ করে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমর্থন আরও কমে গেছে। প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের চলতি বছরের জুন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ২৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি এখন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাবকে সমর্থন করে। দশ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ, যদিও এটি সম্ভব বলে মনে করেছিল মাত্র ৩৯ শতাংশ ফিলিস্তিনিরা।
তবে আশাবাদীরা মনে করেন এই ফলাফলগুলো উপরি-উপরি। যেটা দৃশ্যত অসম্ভব সেটাকে সমর্থন দেবে না সেটাই স্বাভাবিক। একটি অর্থবহ শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে এই ফলাফল দ্রুত বদলে যাবে। একজন সাবেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, আমাদের জনগণ দখলদারির অবসানের সুযোগ কখনো হাতছাড়া করবে।’ তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহের ঘটনাগুলো উভয় পক্ষকেই সমঝোতার ধারণার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
হামাসের আক্রমণের পর হাতে গোনা ইসরায়েলি জনসমক্ষে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বা সংঘাতের অন্য কোনো সমাধান নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এর কারণ হতে পারে, যুদ্ধের শেষ পরিস্থিতিই পরবর্তী পর্যায়ের রূপ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতেও অক্ষম।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকট নিয়ে তাহলে মধ্যস্থতা করবে কে তা নিয়ে। যদিও রাশিয়া এবং চীন উভয়ের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে তারা যে সত্যিই এগিয়ে আসবে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘সৎ দালাল’ হিসাবে এখানে আসতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইইউকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় না।
ফলে দায়িত্ব পড়ছে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ঘাড়েই। তবে বাইডেন তাঁর শাসনামলের প্রথম তিন বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ২০২৪ সালে তাঁর মাথায় হয়তো অন্যান্য বিষয় থাকবে। ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা কখনোই ক্ষমতার শেষপ্রান্তে থাকা কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কখনোই শান্তি আলোচনা শুরু করবে না—এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেন আবার জয়ী হলে তিনি এ শান্তি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে পারেন।
অপরদিকে, মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে সে হবে এক ভিন্ন গল্প। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। যদিও পরিকল্পনাটি ছিল হাস্যকর ও পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। ওই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মাত্র ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনের অনুকূলে দেওয়া, এই অঞ্চলের রুটির ঝুড়ি জর্ডান উপত্যকা ইসরায়েলের মালিকানায় দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেগেভের অনুর্বর মরুভূমির কিছু অংশ হস্তান্তর ও ফিলিস্তিনের রাজধানী পূর্ব জেরুজালেমের কয়েকটি নিঃস্ব উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব ছিল। ফলে স্বভাবতই ফিলিস্তিনিরা প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করতেও অস্বীকার করে।
দ্য ইকোনোমিস্ট অবলম্বনে আবদুল বাছেদ
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। গত মাসে আরব লিগের ডাকা জরুরি বৈঠকেও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার’ আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে গাজায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরায়েল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে ২০০৫ সালে দখলদার দেশটি ৮ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেয় ও গাজা হামাসের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন কেউই সঠিকভাবে জানত না এই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে বা ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কেউ কেউ আশা করেছিলেন, ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সদিচ্ছা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে। তবে অন্যরা এখানে ইসরায়েলের চতুর চক্রান্ত দেখেছিলেন। তাঁদের মতে, গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। এই অনুমানই সত্য হয়ে ফলেছে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনের এই অংশে কল্পনাতীতভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর থেকে একই ধরনের দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহতের পর আইডিএফ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। এতে ৯ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর অধিকাংশই আবার শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা। তাঁরা এখন আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ দ্বিতীয় নাকবার (বিপর্যয়) দিকে নিয়ে যাবে। যেখানে ১৯৪৮ সালে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের উত্থানের সময় প্রথম নাকবায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীরা আশা করছেন, এই যুদ্ধ গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং সরিয়ে নেওয়া ইহুদি বসতি পুনর্নির্মাণের সুযোগ দেবে। এত কিছুর মধ্যেও বাইডেন আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেবে।
আপাতত, দ্বি-রাষ্ট্র বা শান্তি চুক্তি এক দূরের স্বপ্ন। হামাসের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে জানাচ্ছেন ইসরায়েলি জেনারেলরা। তবে যুদ্ধ শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে হস্তান্তর করার আশা করছে ইসরায়েল ও বিশ্ব মোড়লেরা। পিএর সঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি ছাড়া এমন কিছু মেনে নেবেন বলে মনে হয় না।
যা হোক, গাজা যুদ্ধের পর একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বা যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বিবেচনা করা দরকার। এর জন্য বিস্তৃত রূপরেখা কয়েক দশক ধরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। গাজা ও পশ্চিম তীর মিলে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে; ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশের জন্য তার ভূখণ্ডের অংশ অদলবদল করবে, যেখানে তারা বড় বসতি তৈরি করেছে। জেরুজালেম বিভক্ত হবে, পুরোনো শহরের ওপর একধরনের যৌথ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী ইসরায়েলে ফিরে যেতে পারে, বাকিরা ফিলিস্তিন বা অন্য কোথাও তাঁদের বর্তমান বাড়িতে বসতি স্থাপন করবে। তবে ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক বাহিনী মুক্ত করার।
দুই দশকের গভীর আলোচনার পর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে অসলো চুক্তির আশাবাদী যুগ ও বারাক ওবামার অধীনে একটি অসংলগ্ন প্রচেষ্টার পর ২০১৪ সালে শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে বড় কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
আগের আলোচনা ঠিক যেখানে থেমেছিল, সেখান থেকেই নতুন আলোচনা শুরুর সুযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সংকট।
২০২১ সালের শেষের দিক পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ছিল, যেখানে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০। বিষয়টি শান্তির জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বাধা হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বসতি এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে যে এগুলো চুক্তিনামায় ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। কিন্তু অবৈধ বসতির সঙ্গে ইসরায়েলে রাজনৈতিক প্রভাবও বেড়ে গগনচুম্বী হয়েছে, ফলে তারা যেসব জমিতে বসতি স্থাপন করেনি সেগুলোও ছাড়তে চাইবে না।
সংকটের পটভূমিই সব
আঞ্চলিক রাজনীতির চিত্রও আরও জটিল। ২০০২ সালে আরব লীগ সৌদি আরবের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়, যেখানে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ছিল। ব্যাপারটি এমন যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটালেই ইসরায়েল সমস্ত আঞ্চলিক সংঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবে। ওই সময় আরব দেশগুলোর এই শান্তি উদ্যোগকে একটি শক্তিশালী প্রস্তাব বলে ধারণা করে হয়েছিল।
আঞ্চলিক হামলার আশঙ্কামুক্ত হলেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মাটি ছাড়তে ইচ্ছুক হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের সমর-রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে ইয়েমেনের হুথিরা এখন দেশ দুটিতে সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গোষ্ঠী দুটি যত দিন সক্রিয় থাকবে, ইসরায়েল তত দিন অনিরাপত্তায় ভুগবে। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো এখন আর চাইলেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ইতি টানতে পারবে না, অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোরও সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এদিকে একটি দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব বাস্তবায়ন বেশ ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের আগেও ফিলিস্তিনিরা গাজা পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই অর্থের পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ২০০০ সালে ব্যর্থ ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে আলোচকেরা ফিলিস্তিনিদের হারানো সম্পত্তির জন্য শরণার্থীদের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে, তারা নিজ দেশ ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের জন্য এই অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দাবি করবে।
তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য এখন বিশদ বিবরণী নয় বরং আলোচনা ও বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্র-ডানপন্থী এবং ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের জোটের সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনা হবে না। এই জোটের গাজা যুদ্ধের পরে টিকে থাকার সম্ভাবনাও নেই।
নেতানিয়াহুর বিরোধীরা আশা করছে, পরবর্তী সরকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আরও উপযুক্ত হবে। একজন মধ্যপন্থী ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা হয়েছে যে তাঁদের (ফিলিস্তিনি) থেকে আমাদের ভালোভাবে আলাদা হতে হবে। এটি আলোচনা শুরুর উপযুক্ত সময়।’ কিন্তু উদার ও বামপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে হামাস সব সময়ই উদ্দেশ্যহীন খেলায় আগ্রহী। নব্বইয়ের দশকে হামাসের প্রথম আত্মঘাতী-বোমা হামলা অসলো শান্তি প্রক্রিয়াকে ঘোলা পানিতে ডুবিয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত হামাসের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (অভ্যুত্থান) হত্যাযজ্ঞ দেখে একটি ইসরায়েলি প্রজন্ম আপসের ধারণা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। এবার গাজা যুদ্ধের পর হামাস হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে—কিন্তু অন্য কোনো দল সেই জায়গা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে আস্থা হারিয়েছে। ইসরায়েলের একটি নির্দলীয় থিংক-ট্যাংক ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, যে ইসরায়েলি ইহুদিদের মাত্র ৩২ শতাংশ দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব সমর্থন করে, যা পাঁচ বছর আগে ৪৭ শতাংশ ছিল।
ইসরায়েলি জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ আরব বংশোদ্ভূত, তাঁরা এখনো এই প্রস্তাব সমর্থন করছে, যদিও তাঁদের সমর্থনও কমে গেছে। ২০১৭ সালে ৮৭ শতাংশ ইসরায়েলি-আরব এর সমর্থন করত, যা ২০২২ সালে ৭১ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসরায়েলি ইহুদিদের অধিকাংশই আবার বর্তমান পরিস্থিতিকেই পছন্দ করে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমর্থন আরও কমে গেছে। প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের চলতি বছরের জুন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ২৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি এখন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাবকে সমর্থন করে। দশ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ, যদিও এটি সম্ভব বলে মনে করেছিল মাত্র ৩৯ শতাংশ ফিলিস্তিনিরা।
তবে আশাবাদীরা মনে করেন এই ফলাফলগুলো উপরি-উপরি। যেটা দৃশ্যত অসম্ভব সেটাকে সমর্থন দেবে না সেটাই স্বাভাবিক। একটি অর্থবহ শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে এই ফলাফল দ্রুত বদলে যাবে। একজন সাবেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, আমাদের জনগণ দখলদারির অবসানের সুযোগ কখনো হাতছাড়া করবে।’ তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহের ঘটনাগুলো উভয় পক্ষকেই সমঝোতার ধারণার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
হামাসের আক্রমণের পর হাতে গোনা ইসরায়েলি জনসমক্ষে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বা সংঘাতের অন্য কোনো সমাধান নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এর কারণ হতে পারে, যুদ্ধের শেষ পরিস্থিতিই পরবর্তী পর্যায়ের রূপ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতেও অক্ষম।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকট নিয়ে তাহলে মধ্যস্থতা করবে কে তা নিয়ে। যদিও রাশিয়া এবং চীন উভয়ের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে তারা যে সত্যিই এগিয়ে আসবে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘সৎ দালাল’ হিসাবে এখানে আসতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইইউকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় না।
ফলে দায়িত্ব পড়ছে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ঘাড়েই। তবে বাইডেন তাঁর শাসনামলের প্রথম তিন বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ২০২৪ সালে তাঁর মাথায় হয়তো অন্যান্য বিষয় থাকবে। ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা কখনোই ক্ষমতার শেষপ্রান্তে থাকা কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কখনোই শান্তি আলোচনা শুরু করবে না—এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেন আবার জয়ী হলে তিনি এ শান্তি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে পারেন।
অপরদিকে, মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে সে হবে এক ভিন্ন গল্প। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। যদিও পরিকল্পনাটি ছিল হাস্যকর ও পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। ওই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মাত্র ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনের অনুকূলে দেওয়া, এই অঞ্চলের রুটির ঝুড়ি জর্ডান উপত্যকা ইসরায়েলের মালিকানায় দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেগেভের অনুর্বর মরুভূমির কিছু অংশ হস্তান্তর ও ফিলিস্তিনের রাজধানী পূর্ব জেরুজালেমের কয়েকটি নিঃস্ব উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব ছিল। ফলে স্বভাবতই ফিলিস্তিনিরা প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করতেও অস্বীকার করে।
দ্য ইকোনোমিস্ট অবলম্বনে আবদুল বাছেদ
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
১৪ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১ দিন আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে