জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ
বয়স, পেশা ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বয়োজ্যেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বাংলা সিনেমার অভিনয়ের সম্রাট, মহানায়ক উত্তম কুমারের একনিষ্ঠ অনুরাগী। তারা একান্তে উত্তমকে বাঁচিয়ে রেখেছেন স্মৃতির মণিকোঠায়। তারা উপলব্ধি করেছেন, সংবেদনশীল ও মানব দরদি উত্তম কুমার তাঁর সিনেমায় জীবনের থেকেও বড়, চিরন্তন এক প্রেমিক-প্রতিমূর্তি গড়েছিলেন অভিনয়ের মাধ্যমে এবং তিনি তা করেছিলেন জেনে-বুঝেই। দেখে মনে হয়, একাডেমিশিয়ানরা সিনেমায় উত্তম কুমারের অভিনয়ের ব্যাপারটা পূর্বধারণা বা ঘরানার নিরিখে দেখলেও দর্শক তা দেখেছে হৃদয় দিয়ে। তাই আমাদের সিনেমা পণ্ডিতেরা উত্তম কুমারকে বুঝে উঠতে পারেননি, বোঝার চেষ্টাও করেননি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংগঠক ও চলচ্চিত্র আন্দোলনের নেতাদের মনে এ বিষয়ে সচেতনতা ও সুস্পষ্ট বোঝাপড়া সৃষ্টি না হওয়ার কারণেই সম্ভবত পাশের বাড়ির অভিনয় শিল্পীর বিরাটত্বের বিষয়টি তাদের কাছে যোগ্য মর্যাদা পায়নি বা অবহেলিতই থেকে গেছে।
অভিনয়ের বরপুত্র উত্তম কুমারের ৪১ তম প্রয়াণবার্ষিকীতে এ কথা বলতেই হচ্ছে, কালেভদ্রে সংবাদপত্রের বিনোদন পাতা ছাড়া, বাংলাদেশের একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিমণ্ডলে বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমারকে নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয় না বললেই চলে। অনলাইনে কিছু গ্রুপ অ্যাকটিভিটি থাকলেও উত্তম-চর্চার কোনো সাংগঠনিক কাঠামোর ভিত্তি বা তৎপরতা বাংলাদেশে এখনো দৃশ্যমান নয়। এর কারণ হতে পারে ঐতিহাসিক ও খণ্ডিত ভৌগোলিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উত্তম কুমার সম্পর্কে জানাশোনার সুযোগ ও সময় দুটোই কম পেয়েছে।
এখানকার চলচ্চিত্রের অভিনয়ের মান এখনো অপরিপক্ব অবস্থায় রয়েছে। তা ছাড়া যাত্রা, পালাগান ও মঞ্চ অধ্যুষিত বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের অভিনয়ের স্বাতন্ত্র্যের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত। এমনকি সম্প্রতি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিভাগ খোলা হয়েছে এবং সরকারিভাবে যে ‘বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’ (বিসিটিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিকুলামেও অভিনয়ের বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব পায়নি এখনো। একদল একাডেমিশিয়ানের মনে এ ধারণাও বদ্ধমূল হয়তো—উত্তম কুমার বাণিজ্যিক সিনেমার অভিনেতা, তিনি ইউরোপীয় সিনেমার কেউ নন, তাঁকে নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? তাঁরা উপমহাদেশের চলচ্চিত্র আলোচনার ক্ষেত্রে সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিক–এর বাইরে ইদানীং অপর্ণা সেন-ঋতুপর্ণ ঘোষ-মণিকাউল-মীরা নায়ার, আর নানামুখী আলোচনায় স্মিতা পাতিল-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-শাবানা আজমি পর্যন্ত আলোচনা করতে রাজি আছেন, এর বাইরে একদম নয়।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলের যখন এই ঘোর অমানিশা, তখন প্রশ্ন হলো এ দেশের মানুষের কাছে উত্তম কুমার এত জনপ্রিয় হলেন কীভাবে? বিশেষত, মৃত্যুর চার দশক পরও কীভাবে তিনি দর্শক হৃদয়ে অক্ষয়–অব্যয় আসন ধরে রাখতে পারলেন? মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশের উত্তম কুমার দেশভাগ-পরবর্তী সময়ের চলচ্চিত্রের প্রতিনিধি। তখন সার্বিকভাবে দেশভাগের পর বেদনা-জর্জরিত ছিল বাংলার উভয় অংশের মানুষের মন। দেশভাগের দগদগে ক্ষত এবং আর্থিক সমস্যা তখন বিভক্ত দুই বাংলার ঘরে ঘরে। সাধারণ দর্শক এই দৈন্য ও দুর্দশার বিপরীতে বাংলা ছবির পর্দায় তাদেরই জীবনের ছোট ছোট সাফল্য ও অবদমিত আকাঙ্ক্ষার চিত্রায়ণ দেখতে পায়। বিগত শতাব্দীর সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই এমন সব চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল অভিনয় করতে শুরু করেন উত্তম কুমার। পশ্চিমবঙ্গের মতো পূর্ববঙ্গের দর্শকেরও তখন মনে হয়, ছেলেটা তাদের মনের কথা বলছে। যুবক-যুবতীরা ভাবত উত্তমের ফ্যাশনের কথা। পত্রিকার কাটতি হতো উত্তম কুমার কী খাচ্ছেন, কার সঙ্গে প্রেম করছেন—এসব খবর ছেপে! তা নিয়ে তুমুল তর্ক হতো চায়ের স্টলে, বাঙালির আড্ডায়। নরসুন্দরের দোকানের দেয়ালে টানানো থাকত খবরের কাগজে ছাপা উত্তম কুমারের ছবি। স্কুল–কলেজে, বাজারে–খেয়াঘাটে, রান্নাঘরে, ড্রয়িংরুমে—সর্বত্র সবারই মনে হতো, যদি উত্তম হতে পারতাম! এভাবেই উত্তম কুমার চলচ্চিত্র তারকার গণ্ডি টপকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ঘরে ঢোকেন এবং হয়ে ওঠেন মধ্যবিত্ত বাঙালির স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিরূপ। এভাবেই বাঙালি দর্শকের মনে রোমান্টিক শিল্পী উত্তম কুমারের জাদুকরী প্রভাব বলয়ের সৃষ্টি হয়।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উত্তমের উত্থান হলেও চেনা উত্তম কুমারকে পাড়ার অভিনেতা থেকে ‘মহানায়ক উত্তম কুমার’ হয়ে উঠতে কিন্তু বিপুল পরিশ্রম করতে হয়েছে! ছোটবেলার খেলার সাথি ও প্রাণাধিক প্রিয় দিদির মৃত্যুর নিদারুণ শোক আজীবন বয়ে বেড়ানো ছাড়াও তাঁকে দীর্ঘ স্নায়ুক্ষয়ী সংগ্রামের দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। সংগীত রচনা থেকে অশ্বারোহণ, ঘরের বেড়া দেওয়া থেকে সাঁতার কাটা, জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ—সবই শিখতে হয়েছিল জীবন থেকে। এই পরিক্রমায় তাঁকে সময়ের অভিঘাত পর্যবেক্ষণ ও মর্মস্থ করতে হয়, মাতৃভাষা ছাড়াও হিন্দি ও ইংরেজিসহ অনেক ভাষাও মজ্জাগত করতে হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, অনেকের চক্রান্তে তাঁর প্রযোজনায় নির্মিত হিন্দি ছবি ছোটিসি মুলাকাত (১৯৬৭)–এ অপরিমেয় ব্যয়ের পরও ছবিটি ফ্লপ হয়। তিনি প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে যান। টাকার জন্য তিনি তখন বিভিন্ন মঞ্চেও গান গেয়েছেন।
বিশেষত সংগীতের প্রতি উত্তমের ছিল অসীম একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসা। প্রাথমিক জীবনে গানের শিক্ষক হিসেবেই কিন্তু তিনি টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। স্ত্রী গৌরী দেবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও হয়েছিল এই গান শেখানোর মধ্য দিয়ে। অসামান্য গলা আর অসাধারণ গায়ন রীতির অধিকারী ছিলেন তিনি। অভিনয় যদি তিনি না করতেন, তাহলে উত্তম কুমার হয়তো হতেন উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী। উত্তম গান শিখেছিলেন ক্ল্যাসিক সংগীত শিল্পী নিদান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। প্রায় ৩০টি রাগের ওপর তিনি দীক্ষা দিয়েছিলেন উত্তম কুমারকে। উত্তমকে তিনি স্পেশাল সারগাম প্র্যাকটিস করাতেন, যাতে সুরের ওপর তিনি স্পষ্ট দখল প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। শৈশব থেকেই মঞ্চনাটক, গান, আর যাত্রাপালার ভক্ত ছিলেন; ছিলেন সম্পৃক্তও। উত্তম কুমার একসময় স্টার থিয়েটারে নিয়মিত অভিনয় করতেন। তাঁর অভিনীত শ্যামলী (১৯৫৩) নাটকটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। যৌবনে ভারতবর্ষ পরাধীন থাকাকালের উন্মাতাল বৈশ্বিক রাজনীতি এবং আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তাঁর মনে স্বাজাত্যবোধ, সাম্য ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা উসকে দিয়েছিল। তাই পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও মাতৃভূমির স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিতে শুরু করেন উত্তম কুমার। তরুণ বয়স থেকেই রচনা করতে শুরু করেন দেশাত্মবোধক গান ও বিপ্লবী গণসংগীত। এসব গানে সুর দিয়ে স্বকণ্ঠে ও সদলবলে গাইতেন সভা-সমিতিতে, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী মিছিলেও অংশ নিতেন। স্বদেশি ও স্বাধীনতা আন্দোলন এবং কুৎসিত সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে গিয়ে আত্মগোপনে থাকতে এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিতেও দেখা গেছে তাঁকে। দেশের মানুষ এই রোমান্টিক-বিপ্লবী ও সংগ্রামী উত্তমকে ভালোবাসত।
ভাবলে অবাক লাগে ১৯৪৭ সালে মুক্তি না-পাওয়া হিন্দি সিনেমা মায়াডোর-এ মাত্র পাঁচ-সিকা পারিশ্রমিকে মূকাভিনয়ের মাধ্যমে একস্ট্রা শিল্পী হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করেন উত্তম কুমার। সে ছবি কখনো আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে সাহসী ছেলেটি বাড়ি থেকে পালিয়ে পাড়ার মেয়ে ও নিজের গানের ছাত্রী গৌরী দেবীকে বিয়ে করে ফেললেন। সিনেমাপাড়ার ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’ (এফএমজি) তখনো অসফলতার ধারাবাহিকতায় ছবিতে নাম পাল্টাচ্ছেন একের পর এক। প্রথমে অরুণ কুমার থেকে অরূপ কুমার, তারপর অরূপ কুমার থেকে উত্তম কুমার। অতঃপর পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেন বসু পরিবার (১৯৫২) ছবিতে। অভিনয়ের জন্য এবার প্রশংসিত হলেন। ভাগ্যদেবী তাঁর প্রতি সুপ্রসন্ন হলেন প্রথমবারের মতো। সেখান থেকেই একটু একটু করে জনপ্রিয়তার শিখরে ওঠার শুরু। ক্যারিয়ারের ৩৩ বছরে অন্তত ৫০টি অসাধারণ মানের ছবিসহ বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে প্রায় আড়াই শ ছবি উপহার দিয়ে হয়ে উঠলেন একাধারে চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনয় শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক, সংগীত পরিচালক ও সংগঠক। এভাবে নিজেই বাংলা চলচ্চিত্রের এক ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তরিত হলেন।
উত্তম কুমার তাঁর যুগের এবং বাংলা সিনেমার সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। মঞ্চ ও যাত্রার ফর্ম ভেঙে দিয়ে, তিনিই প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রে পরিশীলিত অভিনয় রীতির প্রবর্তন করেন। বিচিত্র ছিল তাঁর অভিনয় প্রতিভা। সিনেমার চিত্রভাষা বুঝতেন তিনি। বাঙালির মন ও রুচি ভালো করেই বুঝতেন। তিনি জানতেন বাঙালি-মানস প্রেমের জলে হাবুডুবু খায় ঠিকই, কিন্তু প্রকাশ্যে বিবাহপূর্ব মেলামেশা অনুমোদন করে না কিছুতেই। দৈহিক সম্পর্ক দেখালে ‘ভদ্র-বাঙালি’ পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে আসে না। কিন্তু লুকিয়ে বাইজি নাচের আসরে তার নিত্য আসা যাওয়া। তিনি আরও জানতেন, বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে প্রেমিকের বাহ্যিক আচরণ অভিভাবকসুলভ। তাই শারীরিক সান্নিধ্য ছাড়াই তিনি প্রেমের রসায়ন জমিয়ে দিলেন বাংলা সিনেমার পর্দায়। আর মধ্যবিত্তের অবদমিত আকাঙ্ক্ষা, বেদনা ও সংযম পরিশীলন; শিক্ষা ও রুচিশীলতার চর্চা; ইতিহাস, দেশাত্মবোধ ও রাজনৈতিক চেতনার পরিচর্যা ও পরিমিতিবোধের লালন—এসবই ছিল উত্তম কুমারের অভিনয়ের মৌলিক উপাদান! তাই তো তাঁর অভিনয়ে প্রতিফলন ঘটল বাঙালির ভদ্রতার মুখোশ ও আদর্শ—দুটোরই।
উত্তম কুমার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে ও শ্যামল মিত্রের গানে অবলীলায় ঠোঁট মিলিয়েছেন। কারণ, গানটা তিনি বুঝতেন। জীবনের শুরুতেই গানের সঙ্গে বোঝা-পড়াটা তাঁর হয়েছিল একবারে অন্তর্গতভাবেই। আর এসব অমর গান বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া করে তোলে। রোমান্টিক প্রেমের ছবির পাশাপাশি প্রচুর ভিন্ন স্বাদের ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। কমেডি ও ট্র্যাজেডিতেও ছিলেন সমান পারদর্শী। মানুষের সঙ্গে একদম তার মতো মিশে যেতে পারতেন। যে চরিত্রে অভিনয় করতেন, মনে হতো তিনি সেই মানুষটাই। প্রতিটি চরিত্রের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতেন। চরিত্রটির মতো হয়ে ওঠার জন্য আর তাঁর সেন্স অব টাইমিং ছিল অসাধারণ। অভিনয়ের এই নিষ্ঠার জন্য মূল্য দিতে গিয়ে ১৯৭১ সালে নকশালদের হাতে খুন হতে হতেও বেঁচে যান। কিন্তু এ জন্য তিনি ভয় পেয়ে অভিনয় ছেড়ে দেননি। কিছুদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে বিপুল সাহসের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন। বন্যা-ঝঞ্ঝা-খরা ও নিপীড়িত বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের কাছে তাই এই হার না-মানা সংগ্রামী উত্তম কুমার ভীষণ পছন্দের; একান্ত আপনার।
বাংলাদেশের পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেন এবং ঢাকার মেয়ে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়সহ সিনেমায় উত্তমের নায়িকা হয়েছিলেন সর্বমোট ৪৬ জন। প্রথম ছয় বছরে নয়জন বয়োজ্যেষ্ঠ নায়িকার সঙ্গে উত্তমের অভিনয় তাঁর ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও এরপরই শুরু হয় কিংবদন্তি উত্তম-সুচিত্রা যুগের। তরুণী নায়িকা সুচিত্রা সেনকে পাশে পেয়ে অভিনয়ে মনপ্রাণ ঢেলে দেন উত্তম। তিনি নিজেই বলেন—‘সুচিত্রা পাশে না থাকলে আমি কখনোই উত্তম কুমার হতে পারতাম না।’ বাংলাদেশের মানুষ এ জন্য এখনো গর্ববোধ করে এবং তারা কথাটা বিশ্বাসও করে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই উত্তম-সুচিত্রা জুটি এক অপার বিস্ময়ের নাম।
তাঁদের প্রথম ছবি সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩)-এর পর থেকেই বাংলা চলচ্চিত্রের এক জাদুকরী রসায়নের নাম হয়ে ওঠেন উত্তম-সুচিত্রা। এ যেন প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনের একসঙ্গে স্ট্রাগল করা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাপোষণ করা, দুজন দুজনার আশ্রয় হয়ে ওঠা—বাঙালি রুচির এমন ধারণার সমার্থক চিরকালীন রোমান্টিক তারকা জুটি! বাংলা সিনেমায় রোমান্টিসিজমের ধারাই পাল্টে দেন তাঁরা। অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), সবার উপরে (১৯৫৫), শাপ মোচন (১৯৫৫), শিল্পী (১৯৫৬), সাগরিকা (১৯৫৬), পথে হলো দেরী (১৯৫৭), হারানো সুর (১৯৫৭), রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), সপ্তপদী (১৯৬১), আলো আমার আলো (১৯৭১)-সহ একে একে ৩১টি ছবিতে অভিনয় করে তাঁরা হয়ে যান বাংলা চলচ্চিত্রের চিরকালীন রোমান্টিক আইকন। বাংলাদেশের দর্শকের কাছে উত্তম-সুচিত্রা তাই এক ও অদ্বিতীয়, অবিচ্ছেদ্য, চিরসবুজ ও চিরতরুণ জুটির নাম। উত্তমকে ছাড়া সুচিত্রাকে কিংবা সুচিত্রাকে ছাড়া উত্তমকে বাঙালি দর্শক একেবারেই দেখতে চান না। কারণ, দুর্দিনে বাঙালিকে যে হাসিয়ে-কাঁদিয়ে উত্তেজনায় কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন এঁরা! তাই তো উত্তমের মৃত্যুর দীর্ঘ চার দশক পর এখনো কান পাতলে শোনা যায় পর্দায় উত্তম-সুচিত্রা জুটির বিচ্ছেদ-ব্যথায় কাতর প্রৌঢ় বাঙালির দীর্ঘশ্বাস।
সমকালীন অন্য ডাকসাইটে নায়িকাদের মধ্যে উত্তম কুমারের হৃদয়ের রানি ছিলেন আরেক কিংবদন্তিতুল্য নায়িকা সুপ্রিয়া দেবী। সাজগোজ নিয়ে আধুনিকা সুপ্রিয়ার ছিল না কোনো মাথাব্যথা, ছিল পড়াশোনার নেশা। উত্তম কুমারকে সাম্প্রতিক সাহিত্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতেন তিনি। নির্মল দের বসু পরিবার (১৯৫২) ছবিতে উত্তম তাঁর বন্ধুর বোন বেণু ওরফে সুপ্রিয়া দেবীকে পেয়েছিলেন সহ–অভিনেত্রী হিসেবে। পরে তিনিই পর্দায় উত্তমের অন্যতম সফল সিনেমা-জুটি এবং ব্যক্তি ও দাম্পত্যজীবনে প্রেরণাদাত্রী হয়ে ওঠেন। বাস্তব জীবনেও তাঁরা ছিলেন সত্যিকারের জুটি। উত্তম-সুপ্রিয়া উত্তরায়ণ (১৯৬৩), কাল তুমি আলেয়া (১৯৬৬), বন পলাশীর পদাবলী (১৯৭৩), বাঘ বন্দীর খেলা (১৯৭৫), সন্ন্যাসী রাজা (১৯৭৫) প্রভৃতি তুমুল জনপ্রিয় ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে উত্তম কুমারের সঙ্গে ঢাকার মেয়ে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জুটিও জনপ্রিয় হয়। তাঁর অভিনয়গুণে মুগ্ধ ছিলেন মহানায়ক। হাত বাড়ালেই বন্ধু (১৯৬০), দুই ভাই (১৯৬১), মোমের আলো (১৯৬৮), নিশি পদ্ম (১৯৭০) ইত্যাদি সিনেমায় তাঁদের জুটিও প্রশংসিত হয়। ধন্যি মেয়ে (১৯৭১), মৌচাক (১৯৭৫)-এর মত কমেডি ছবিতে সাবিত্রী-উত্তম জুটির অভিনয় রীতিমতো কিংবদন্তি হয়ে আছে।
পঞ্চাশের দশকে যখন চলচ্চিত্রের আকাশ রাঙিয়ে দিতে শুরু করেন, তখন থেকেই বাংলাদেশের মানুষের কাছেও আপন হয়ে আছেন উত্তম কুমার। কারণ, ১৯৪৭-এ দেশভাগ হলেও এ দেশের সিনেমা হলগুলোতে তখনো ভারতীয় বাংলা সিনেমা প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল না। পরে পাকিস্তানে ভারত-বিদ্বেষ প্রকট ও নিষেধাজ্ঞা জারি হলে সেই সুযোগ সীমিত হয়ে হয়ে পড়ে। কিন্তু তত দিনে উত্তম-সুচিত্রা জুটির স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বাঙালি দর্শকের ঘরে ঘরে, অন্দর মহলে। উত্তমের সাবলীল অভিনয়ই তাঁর প্রতি মানুষের এই আকর্ষণের চুম্বকশক্তি। এখনো বাংলা সিনেমার পুরোনো দর্শকেরা তাই উত্তম কুমারকেই খুঁজে ফেরে। সিনেমা হলে ভিএইচএস ক্যাসেটে, সিডি/ডিভিডিতে, ইন্টারনেটে যে ফর্মেই হোক, বাংলাদেশে ‘উত্তমকুমারের সিনেমা’ দেখার জোয়ার কমেনি কখনো। এমনকি করোনাকালীন লকডাউনের সময়েও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে উত্তম কুমারের দর্শক বেড়েছে; তারা ঘুরেফিরে বারবারই দেখছেন উত্তম কুমার অভিনীত ছবি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও চলচ্চিত্রের বন্দিদশা কিন্তু রয়ে গেছে আগের মতোই। ছিটেফোঁটা ছাড়া ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অবাধ চলচ্চিত্র বিনিময় বন্ধ রয়েছে যথারীতি আগের মতোই। বাণিজ্যিক স্বার্থের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের সিনেমা হলে ভারতীয় বাংলা ছবিই প্রদর্শিত হচ্ছে না, আর পুরোনো দিনের সিনেমা তো একদমই নিষিদ্ধ বস্তু। কিন্তু ওই বস্তুর প্রতিই বাঙালির অমোঘ আকর্ষণের পেছনের কারণ সেই উত্তম কুমারই। আকাশ সংস্কৃতি আর অন্তর্জালের দুনিয়া আজ সব বাধা-বিপত্তি বানের জলের মতো ঘুচিয়ে দিয়েছে। রাত জেগে, নিজের ঘরে বসে অথবা হাতের তালুতে অবাধে উত্তম কুমারের সংবর্ধনা রচনা করছে বাংলাদেশের মানুষ। তাঁর ছবি গোগ্রাসে গিলছে মধ্যবয়সী নারী ও পুরুষ থেকে নতুন প্রজন্ম পর্যন্ত সবাই। শুনেছি বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এখন ‘টেলিভিশনের খবরে, সিনেমার পর্দায়, বাস্তবে—সর্বত্রই মানুষ প্রতিনিয়ত জটিল ও নিম্ন রুচির কনটেন্ট আর অশ্লীলতা ও ভায়োলেন্স দেখানো হয়, যা দর্শকের মনে স্বস্তি দিতে পারে না। বিশেষ করে, মানুষ যখন দৈনন্দিন জীবনের জটিলতায় বিধ্বস্ত, তখন সে রূঢ়-বাস্তবতা থেকে পালিয়ে মুক্তি পেতে চায়। উত্তমের ছবিতে সেই স্বস্তির সন্ধান আছে, আজকের বাঙালি নির্বিশেষে তাই ফিরে যেতে চায় সেই রোমান্টিকতার জগতে! বাংলা সিনেমার রোমান্টিক নায়ক হিসেবে তাই এখনো উত্তম কুমারই সবার পছন্দ। প্রয়াণ দিবসে তাই আমিও মহানায়ক উত্তম কুমারকে জানাই প্রাণের প্রণতি।
জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ: কবি, গবেষক ও চলচ্চিত্রকার
আরও পড়ুন
বয়স, পেশা ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বয়োজ্যেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ বাংলা সিনেমার অভিনয়ের সম্রাট, মহানায়ক উত্তম কুমারের একনিষ্ঠ অনুরাগী। তারা একান্তে উত্তমকে বাঁচিয়ে রেখেছেন স্মৃতির মণিকোঠায়। তারা উপলব্ধি করেছেন, সংবেদনশীল ও মানব দরদি উত্তম কুমার তাঁর সিনেমায় জীবনের থেকেও বড়, চিরন্তন এক প্রেমিক-প্রতিমূর্তি গড়েছিলেন অভিনয়ের মাধ্যমে এবং তিনি তা করেছিলেন জেনে-বুঝেই। দেখে মনে হয়, একাডেমিশিয়ানরা সিনেমায় উত্তম কুমারের অভিনয়ের ব্যাপারটা পূর্বধারণা বা ঘরানার নিরিখে দেখলেও দর্শক তা দেখেছে হৃদয় দিয়ে। তাই আমাদের সিনেমা পণ্ডিতেরা উত্তম কুমারকে বুঝে উঠতে পারেননি, বোঝার চেষ্টাও করেননি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সংগঠক ও চলচ্চিত্র আন্দোলনের নেতাদের মনে এ বিষয়ে সচেতনতা ও সুস্পষ্ট বোঝাপড়া সৃষ্টি না হওয়ার কারণেই সম্ভবত পাশের বাড়ির অভিনয় শিল্পীর বিরাটত্বের বিষয়টি তাদের কাছে যোগ্য মর্যাদা পায়নি বা অবহেলিতই থেকে গেছে।
অভিনয়ের বরপুত্র উত্তম কুমারের ৪১ তম প্রয়াণবার্ষিকীতে এ কথা বলতেই হচ্ছে, কালেভদ্রে সংবাদপত্রের বিনোদন পাতা ছাড়া, বাংলাদেশের একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিমণ্ডলে বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মহানায়ক’ উত্তম কুমারকে নিয়ে তেমন একটা আলোচনা হয় না বললেই চলে। অনলাইনে কিছু গ্রুপ অ্যাকটিভিটি থাকলেও উত্তম-চর্চার কোনো সাংগঠনিক কাঠামোর ভিত্তি বা তৎপরতা বাংলাদেশে এখনো দৃশ্যমান নয়। এর কারণ হতে পারে ঐতিহাসিক ও খণ্ডিত ভৌগোলিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উত্তম কুমার সম্পর্কে জানাশোনার সুযোগ ও সময় দুটোই কম পেয়েছে।
এখানকার চলচ্চিত্রের অভিনয়ের মান এখনো অপরিপক্ব অবস্থায় রয়েছে। তা ছাড়া যাত্রা, পালাগান ও মঞ্চ অধ্যুষিত বাংলাদেশে চলচ্চিত্র শিল্পের অভিনয়ের স্বাতন্ত্র্যের বিষয়টি এখনো উপেক্ষিত। এমনকি সম্প্রতি যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে চলচ্চিত্র বিভাগ খোলা হয়েছে এবং সরকারিভাবে যে ‘বাংলাদেশ সিনেমা ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’ (বিসিটিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিকুলামেও অভিনয়ের বিষয়টি যথাযথ গুরুত্ব পায়নি এখনো। একদল একাডেমিশিয়ানের মনে এ ধারণাও বদ্ধমূল হয়তো—উত্তম কুমার বাণিজ্যিক সিনেমার অভিনেতা, তিনি ইউরোপীয় সিনেমার কেউ নন, তাঁকে নিয়ে এত মাতামাতির কী আছে? তাঁরা উপমহাদেশের চলচ্চিত্র আলোচনার ক্ষেত্রে সত্যজিৎ-মৃণাল-ঋত্বিক–এর বাইরে ইদানীং অপর্ণা সেন-ঋতুপর্ণ ঘোষ-মণিকাউল-মীরা নায়ার, আর নানামুখী আলোচনায় স্মিতা পাতিল-সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-শাবানা আজমি পর্যন্ত আলোচনা করতে রাজি আছেন, এর বাইরে একদম নয়।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমণ্ডলের যখন এই ঘোর অমানিশা, তখন প্রশ্ন হলো এ দেশের মানুষের কাছে উত্তম কুমার এত জনপ্রিয় হলেন কীভাবে? বিশেষত, মৃত্যুর চার দশক পরও কীভাবে তিনি দর্শক হৃদয়ে অক্ষয়–অব্যয় আসন ধরে রাখতে পারলেন? মনে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশের উত্তম কুমার দেশভাগ-পরবর্তী সময়ের চলচ্চিত্রের প্রতিনিধি। তখন সার্বিকভাবে দেশভাগের পর বেদনা-জর্জরিত ছিল বাংলার উভয় অংশের মানুষের মন। দেশভাগের দগদগে ক্ষত এবং আর্থিক সমস্যা তখন বিভক্ত দুই বাংলার ঘরে ঘরে। সাধারণ দর্শক এই দৈন্য ও দুর্দশার বিপরীতে বাংলা ছবির পর্দায় তাদেরই জীবনের ছোট ছোট সাফল্য ও অবদমিত আকাঙ্ক্ষার চিত্রায়ণ দেখতে পায়। বিগত শতাব্দীর সেই পঞ্চাশের দশক থেকেই এমন সব চলচ্চিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল অভিনয় করতে শুরু করেন উত্তম কুমার। পশ্চিমবঙ্গের মতো পূর্ববঙ্গের দর্শকেরও তখন মনে হয়, ছেলেটা তাদের মনের কথা বলছে। যুবক-যুবতীরা ভাবত উত্তমের ফ্যাশনের কথা। পত্রিকার কাটতি হতো উত্তম কুমার কী খাচ্ছেন, কার সঙ্গে প্রেম করছেন—এসব খবর ছেপে! তা নিয়ে তুমুল তর্ক হতো চায়ের স্টলে, বাঙালির আড্ডায়। নরসুন্দরের দোকানের দেয়ালে টানানো থাকত খবরের কাগজে ছাপা উত্তম কুমারের ছবি। স্কুল–কলেজে, বাজারে–খেয়াঘাটে, রান্নাঘরে, ড্রয়িংরুমে—সর্বত্র সবারই মনে হতো, যদি উত্তম হতে পারতাম! এভাবেই উত্তম কুমার চলচ্চিত্র তারকার গণ্ডি টপকে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের ঘরে ঢোকেন এবং হয়ে ওঠেন মধ্যবিত্ত বাঙালির স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিরূপ। এভাবেই বাঙালি দর্শকের মনে রোমান্টিক শিল্পী উত্তম কুমারের জাদুকরী প্রভাব বলয়ের সৃষ্টি হয়।
সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উত্তমের উত্থান হলেও চেনা উত্তম কুমারকে পাড়ার অভিনেতা থেকে ‘মহানায়ক উত্তম কুমার’ হয়ে উঠতে কিন্তু বিপুল পরিশ্রম করতে হয়েছে! ছোটবেলার খেলার সাথি ও প্রাণাধিক প্রিয় দিদির মৃত্যুর নিদারুণ শোক আজীবন বয়ে বেড়ানো ছাড়াও তাঁকে দীর্ঘ স্নায়ুক্ষয়ী সংগ্রামের দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়। সংগীত রচনা থেকে অশ্বারোহণ, ঘরের বেড়া দেওয়া থেকে সাঁতার কাটা, জুতা সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ—সবই শিখতে হয়েছিল জীবন থেকে। এই পরিক্রমায় তাঁকে সময়ের অভিঘাত পর্যবেক্ষণ ও মর্মস্থ করতে হয়, মাতৃভাষা ছাড়াও হিন্দি ও ইংরেজিসহ অনেক ভাষাও মজ্জাগত করতে হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, অনেকের চক্রান্তে তাঁর প্রযোজনায় নির্মিত হিন্দি ছবি ছোটিসি মুলাকাত (১৯৬৭)–এ অপরিমেয় ব্যয়ের পরও ছবিটি ফ্লপ হয়। তিনি প্রায় সর্বস্বান্ত হয়ে যান। টাকার জন্য তিনি তখন বিভিন্ন মঞ্চেও গান গেয়েছেন।
বিশেষত সংগীতের প্রতি উত্তমের ছিল অসীম একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসা। প্রাথমিক জীবনে গানের শিক্ষক হিসেবেই কিন্তু তিনি টিকে থাকার চেষ্টা করেছিলেন। স্ত্রী গৌরী দেবীর সঙ্গে তাঁর পরিচয়ও হয়েছিল এই গান শেখানোর মধ্য দিয়ে। অসামান্য গলা আর অসাধারণ গায়ন রীতির অধিকারী ছিলেন তিনি। অভিনয় যদি তিনি না করতেন, তাহলে উত্তম কুমার হয়তো হতেন উপমহাদেশের একজন প্রখ্যাত সংগীত শিল্পী। উত্তম গান শিখেছিলেন ক্ল্যাসিক সংগীত শিল্পী নিদান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। প্রায় ৩০টি রাগের ওপর তিনি দীক্ষা দিয়েছিলেন উত্তম কুমারকে। উত্তমকে তিনি স্পেশাল সারগাম প্র্যাকটিস করাতেন, যাতে সুরের ওপর তিনি স্পষ্ট দখল প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। শৈশব থেকেই মঞ্চনাটক, গান, আর যাত্রাপালার ভক্ত ছিলেন; ছিলেন সম্পৃক্তও। উত্তম কুমার একসময় স্টার থিয়েটারে নিয়মিত অভিনয় করতেন। তাঁর অভিনীত শ্যামলী (১৯৫৩) নাটকটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। যৌবনে ভারতবর্ষ পরাধীন থাকাকালের উন্মাতাল বৈশ্বিক রাজনীতি এবং আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতি তাঁর মনে স্বাজাত্যবোধ, সাম্য ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা উসকে দিয়েছিল। তাই পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও মাতৃভূমির স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিতে শুরু করেন উত্তম কুমার। তরুণ বয়স থেকেই রচনা করতে শুরু করেন দেশাত্মবোধক গান ও বিপ্লবী গণসংগীত। এসব গানে সুর দিয়ে স্বকণ্ঠে ও সদলবলে গাইতেন সভা-সমিতিতে, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী মিছিলেও অংশ নিতেন। স্বদেশি ও স্বাধীনতা আন্দোলন এবং কুৎসিত সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে গিয়ে আত্মগোপনে থাকতে এমনকি জীবনের ঝুঁকি নিতেও দেখা গেছে তাঁকে। দেশের মানুষ এই রোমান্টিক-বিপ্লবী ও সংগ্রামী উত্তমকে ভালোবাসত।
ভাবলে অবাক লাগে ১৯৪৭ সালে মুক্তি না-পাওয়া হিন্দি সিনেমা মায়াডোর-এ মাত্র পাঁচ-সিকা পারিশ্রমিকে মূকাভিনয়ের মাধ্যমে একস্ট্রা শিল্পী হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করেন উত্তম কুমার। সে ছবি কখনো আলোর মুখ দেখেনি। এরই মধ্যে সাহসী ছেলেটি বাড়ি থেকে পালিয়ে পাড়ার মেয়ে ও নিজের গানের ছাত্রী গৌরী দেবীকে বিয়ে করে ফেললেন। সিনেমাপাড়ার ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’ (এফএমজি) তখনো অসফলতার ধারাবাহিকতায় ছবিতে নাম পাল্টাচ্ছেন একের পর এক। প্রথমে অরুণ কুমার থেকে অরূপ কুমার, তারপর অরূপ কুমার থেকে উত্তম কুমার। অতঃপর পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেন বসু পরিবার (১৯৫২) ছবিতে। অভিনয়ের জন্য এবার প্রশংসিত হলেন। ভাগ্যদেবী তাঁর প্রতি সুপ্রসন্ন হলেন প্রথমবারের মতো। সেখান থেকেই একটু একটু করে জনপ্রিয়তার শিখরে ওঠার শুরু। ক্যারিয়ারের ৩৩ বছরে অন্তত ৫০টি অসাধারণ মানের ছবিসহ বাংলা-হিন্দি মিলিয়ে প্রায় আড়াই শ ছবি উপহার দিয়ে হয়ে উঠলেন একাধারে চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনয় শিল্পী, প্রযোজক, পরিচালক, সংগীত পরিচালক ও সংগঠক। এভাবে নিজেই বাংলা চলচ্চিত্রের এক ইন্ডাস্ট্রিতে রূপান্তরিত হলেন।
উত্তম কুমার তাঁর যুগের এবং বাংলা সিনেমার সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। মঞ্চ ও যাত্রার ফর্ম ভেঙে দিয়ে, তিনিই প্রথম বাংলা চলচ্চিত্রে পরিশীলিত অভিনয় রীতির প্রবর্তন করেন। বিচিত্র ছিল তাঁর অভিনয় প্রতিভা। সিনেমার চিত্রভাষা বুঝতেন তিনি। বাঙালির মন ও রুচি ভালো করেই বুঝতেন। তিনি জানতেন বাঙালি-মানস প্রেমের জলে হাবুডুবু খায় ঠিকই, কিন্তু প্রকাশ্যে বিবাহপূর্ব মেলামেশা অনুমোদন করে না কিছুতেই। দৈহিক সম্পর্ক দেখালে ‘ভদ্র-বাঙালি’ পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখতে আসে না। কিন্তু লুকিয়ে বাইজি নাচের আসরে তার নিত্য আসা যাওয়া। তিনি আরও জানতেন, বাঙালি মধ্যবিত্তের কাছে প্রেমিকের বাহ্যিক আচরণ অভিভাবকসুলভ। তাই শারীরিক সান্নিধ্য ছাড়াই তিনি প্রেমের রসায়ন জমিয়ে দিলেন বাংলা সিনেমার পর্দায়। আর মধ্যবিত্তের অবদমিত আকাঙ্ক্ষা, বেদনা ও সংযম পরিশীলন; শিক্ষা ও রুচিশীলতার চর্চা; ইতিহাস, দেশাত্মবোধ ও রাজনৈতিক চেতনার পরিচর্যা ও পরিমিতিবোধের লালন—এসবই ছিল উত্তম কুমারের অভিনয়ের মৌলিক উপাদান! তাই তো তাঁর অভিনয়ে প্রতিফলন ঘটল বাঙালির ভদ্রতার মুখোশ ও আদর্শ—দুটোরই।
উত্তম কুমার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে ও শ্যামল মিত্রের গানে অবলীলায় ঠোঁট মিলিয়েছেন। কারণ, গানটা তিনি বুঝতেন। জীবনের শুরুতেই গানের সঙ্গে বোঝা-পড়াটা তাঁর হয়েছিল একবারে অন্তর্গতভাবেই। আর এসব অমর গান বাংলাদেশের মানুষের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া করে তোলে। রোমান্টিক প্রেমের ছবির পাশাপাশি প্রচুর ভিন্ন স্বাদের ছবিতেও অভিনয় করেন তিনি। কমেডি ও ট্র্যাজেডিতেও ছিলেন সমান পারদর্শী। মানুষের সঙ্গে একদম তার মতো মিশে যেতে পারতেন। যে চরিত্রে অভিনয় করতেন, মনে হতো তিনি সেই মানুষটাই। প্রতিটি চরিত্রের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতেন। চরিত্রটির মতো হয়ে ওঠার জন্য আর তাঁর সেন্স অব টাইমিং ছিল অসাধারণ। অভিনয়ের এই নিষ্ঠার জন্য মূল্য দিতে গিয়ে ১৯৭১ সালে নকশালদের হাতে খুন হতে হতেও বেঁচে যান। কিন্তু এ জন্য তিনি ভয় পেয়ে অভিনয় ছেড়ে দেননি। কিছুদিন লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে বিপুল সাহসের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন। বন্যা-ঝঞ্ঝা-খরা ও নিপীড়িত বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের কাছে তাই এই হার না-মানা সংগ্রামী উত্তম কুমার ভীষণ পছন্দের; একান্ত আপনার।
বাংলাদেশের পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেন এবং ঢাকার মেয়ে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়সহ সিনেমায় উত্তমের নায়িকা হয়েছিলেন সর্বমোট ৪৬ জন। প্রথম ছয় বছরে নয়জন বয়োজ্যেষ্ঠ নায়িকার সঙ্গে উত্তমের অভিনয় তাঁর ক্যারিয়ারে নেতিবাচক প্রভাব ফেললেও এরপরই শুরু হয় কিংবদন্তি উত্তম-সুচিত্রা যুগের। তরুণী নায়িকা সুচিত্রা সেনকে পাশে পেয়ে অভিনয়ে মনপ্রাণ ঢেলে দেন উত্তম। তিনি নিজেই বলেন—‘সুচিত্রা পাশে না থাকলে আমি কখনোই উত্তম কুমার হতে পারতাম না।’ বাংলাদেশের মানুষ এ জন্য এখনো গর্ববোধ করে এবং তারা কথাটা বিশ্বাসও করে। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এই উত্তম-সুচিত্রা জুটি এক অপার বিস্ময়ের নাম।
তাঁদের প্রথম ছবি সাড়ে চুয়াত্তর (১৯৫৩)-এর পর থেকেই বাংলা চলচ্চিত্রের এক জাদুকরী রসায়নের নাম হয়ে ওঠেন উত্তম-সুচিত্রা। এ যেন প্রেমিক-প্রেমিকা দুজনের একসঙ্গে স্ট্রাগল করা, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাপোষণ করা, দুজন দুজনার আশ্রয় হয়ে ওঠা—বাঙালি রুচির এমন ধারণার সমার্থক চিরকালীন রোমান্টিক তারকা জুটি! বাংলা সিনেমায় রোমান্টিসিজমের ধারাই পাল্টে দেন তাঁরা। অগ্নিপরীক্ষা (১৯৫৪), সবার উপরে (১৯৫৫), শাপ মোচন (১৯৫৫), শিল্পী (১৯৫৬), সাগরিকা (১৯৫৬), পথে হলো দেরী (১৯৫৭), হারানো সুর (১৯৫৭), রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত (১৯৫৮), সপ্তপদী (১৯৬১), আলো আমার আলো (১৯৭১)-সহ একে একে ৩১টি ছবিতে অভিনয় করে তাঁরা হয়ে যান বাংলা চলচ্চিত্রের চিরকালীন রোমান্টিক আইকন। বাংলাদেশের দর্শকের কাছে উত্তম-সুচিত্রা তাই এক ও অদ্বিতীয়, অবিচ্ছেদ্য, চিরসবুজ ও চিরতরুণ জুটির নাম। উত্তমকে ছাড়া সুচিত্রাকে কিংবা সুচিত্রাকে ছাড়া উত্তমকে বাঙালি দর্শক একেবারেই দেখতে চান না। কারণ, দুর্দিনে বাঙালিকে যে হাসিয়ে-কাঁদিয়ে উত্তেজনায় কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন এঁরা! তাই তো উত্তমের মৃত্যুর দীর্ঘ চার দশক পর এখনো কান পাতলে শোনা যায় পর্দায় উত্তম-সুচিত্রা জুটির বিচ্ছেদ-ব্যথায় কাতর প্রৌঢ় বাঙালির দীর্ঘশ্বাস।
সমকালীন অন্য ডাকসাইটে নায়িকাদের মধ্যে উত্তম কুমারের হৃদয়ের রানি ছিলেন আরেক কিংবদন্তিতুল্য নায়িকা সুপ্রিয়া দেবী। সাজগোজ নিয়ে আধুনিকা সুপ্রিয়ার ছিল না কোনো মাথাব্যথা, ছিল পড়াশোনার নেশা। উত্তম কুমারকে সাম্প্রতিক সাহিত্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলতেন তিনি। নির্মল দের বসু পরিবার (১৯৫২) ছবিতে উত্তম তাঁর বন্ধুর বোন বেণু ওরফে সুপ্রিয়া দেবীকে পেয়েছিলেন সহ–অভিনেত্রী হিসেবে। পরে তিনিই পর্দায় উত্তমের অন্যতম সফল সিনেমা-জুটি এবং ব্যক্তি ও দাম্পত্যজীবনে প্রেরণাদাত্রী হয়ে ওঠেন। বাস্তব জীবনেও তাঁরা ছিলেন সত্যিকারের জুটি। উত্তম-সুপ্রিয়া উত্তরায়ণ (১৯৬৩), কাল তুমি আলেয়া (১৯৬৬), বন পলাশীর পদাবলী (১৯৭৩), বাঘ বন্দীর খেলা (১৯৭৫), সন্ন্যাসী রাজা (১৯৭৫) প্রভৃতি তুমুল জনপ্রিয় ছবিতে জুটি বেঁধে অভিনয় করেন। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে উত্তম কুমারের সঙ্গে ঢাকার মেয়ে সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের জুটিও জনপ্রিয় হয়। তাঁর অভিনয়গুণে মুগ্ধ ছিলেন মহানায়ক। হাত বাড়ালেই বন্ধু (১৯৬০), দুই ভাই (১৯৬১), মোমের আলো (১৯৬৮), নিশি পদ্ম (১৯৭০) ইত্যাদি সিনেমায় তাঁদের জুটিও প্রশংসিত হয়। ধন্যি মেয়ে (১৯৭১), মৌচাক (১৯৭৫)-এর মত কমেডি ছবিতে সাবিত্রী-উত্তম জুটির অভিনয় রীতিমতো কিংবদন্তি হয়ে আছে।
পঞ্চাশের দশকে যখন চলচ্চিত্রের আকাশ রাঙিয়ে দিতে শুরু করেন, তখন থেকেই বাংলাদেশের মানুষের কাছেও আপন হয়ে আছেন উত্তম কুমার। কারণ, ১৯৪৭-এ দেশভাগ হলেও এ দেশের সিনেমা হলগুলোতে তখনো ভারতীয় বাংলা সিনেমা প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল না। পরে পাকিস্তানে ভারত-বিদ্বেষ প্রকট ও নিষেধাজ্ঞা জারি হলে সেই সুযোগ সীমিত হয়ে হয়ে পড়ে। কিন্তু তত দিনে উত্তম-সুচিত্রা জুটির স্থায়ী আসন প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে বাঙালি দর্শকের ঘরে ঘরে, অন্দর মহলে। উত্তমের সাবলীল অভিনয়ই তাঁর প্রতি মানুষের এই আকর্ষণের চুম্বকশক্তি। এখনো বাংলা সিনেমার পুরোনো দর্শকেরা তাই উত্তম কুমারকেই খুঁজে ফেরে। সিনেমা হলে ভিএইচএস ক্যাসেটে, সিডি/ডিভিডিতে, ইন্টারনেটে যে ফর্মেই হোক, বাংলাদেশে ‘উত্তমকুমারের সিনেমা’ দেখার জোয়ার কমেনি কখনো। এমনকি করোনাকালীন লকডাউনের সময়েও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে উত্তম কুমারের দর্শক বেড়েছে; তারা ঘুরেফিরে বারবারই দেখছেন উত্তম কুমার অভিনীত ছবি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও চলচ্চিত্রের বন্দিদশা কিন্তু রয়ে গেছে আগের মতোই। ছিটেফোঁটা ছাড়া ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অবাধ চলচ্চিত্র বিনিময় বন্ধ রয়েছে যথারীতি আগের মতোই। বাণিজ্যিক স্বার্থের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের সিনেমা হলে ভারতীয় বাংলা ছবিই প্রদর্শিত হচ্ছে না, আর পুরোনো দিনের সিনেমা তো একদমই নিষিদ্ধ বস্তু। কিন্তু ওই বস্তুর প্রতিই বাঙালির অমোঘ আকর্ষণের পেছনের কারণ সেই উত্তম কুমারই। আকাশ সংস্কৃতি আর অন্তর্জালের দুনিয়া আজ সব বাধা-বিপত্তি বানের জলের মতো ঘুচিয়ে দিয়েছে। রাত জেগে, নিজের ঘরে বসে অথবা হাতের তালুতে অবাধে উত্তম কুমারের সংবর্ধনা রচনা করছে বাংলাদেশের মানুষ। তাঁর ছবি গোগ্রাসে গিলছে মধ্যবয়সী নারী ও পুরুষ থেকে নতুন প্রজন্ম পর্যন্ত সবাই। শুনেছি বাংলাদেশের মতো পশ্চিমবঙ্গেও এখন ‘টেলিভিশনের খবরে, সিনেমার পর্দায়, বাস্তবে—সর্বত্রই মানুষ প্রতিনিয়ত জটিল ও নিম্ন রুচির কনটেন্ট আর অশ্লীলতা ও ভায়োলেন্স দেখানো হয়, যা দর্শকের মনে স্বস্তি দিতে পারে না। বিশেষ করে, মানুষ যখন দৈনন্দিন জীবনের জটিলতায় বিধ্বস্ত, তখন সে রূঢ়-বাস্তবতা থেকে পালিয়ে মুক্তি পেতে চায়। উত্তমের ছবিতে সেই স্বস্তির সন্ধান আছে, আজকের বাঙালি নির্বিশেষে তাই ফিরে যেতে চায় সেই রোমান্টিকতার জগতে! বাংলা সিনেমার রোমান্টিক নায়ক হিসেবে তাই এখনো উত্তম কুমারই সবার পছন্দ। প্রয়াণ দিবসে তাই আমিও মহানায়ক উত্তম কুমারকে জানাই প্রাণের প্রণতি।
জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ: কবি, গবেষক ও চলচ্চিত্রকার
আরও পড়ুন
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৩ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১১ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে