জন বোল্টন
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অভিযান পরিচালনার পর এখনো কিয়েভ দখল কিংবা ভলোদিমির জেলেনস্কিকে হত্যা বা উৎখাত করে সমস্ত ইউক্রেন দখল করতে না পারায় রাশিয়ার যে ব্যর্থতা, তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলবিদদের জন্য একটি যুগান্তকারী গবেষণার বিষয় হয়ে থাকবে। ফলে রাশিয়ার পরবর্তী সিদ্ধান্ত ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো আক্রমণাত্মক লড়াইয়ের মাধ্যমে বিশেষত পূর্ব ইউক্রেনে প্রতিদিন কয়েক মাইল করে নতুন নতুন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
এই যুদ্ধের পরবর্তী পর্ব হবে গ্রীষ্ম শেষের সঙ্গে সঙ্গে। এই সবকিছু সামরিক বিষয়ের চেয়ে রাজনৈতিক কৌশলের ওপর বেশি নির্ভর করবে বলে মনে হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এই সামরিক পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ও পরিবর্তনশীল। আসন্ন মাসগুলোতে যুদ্ধের পরিস্থিতি কী হবে, তা অস্পষ্ট। এ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাও কঠিন। কারণ অনেক রাজনৈতিক ইস্যু তখন নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে।
হিসাব অনুযায়ী, ন্যাটো ও ইউক্রেনের অন্য সমর্থকদের উচিত কূটনৈতিকভাবে এই পরিস্থিতির সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ করা থেকে মস্কোকে বিরত রাখার উপায় খুঁজে বের করা। এটি অবশ্য তাদের অনেক আগেই ভেবে রাখা উচিত ছিল। এই সংঘাতকে কোনো শর্তসাপেক্ষে সাময়িকভাবে স্থগিত করাটা অন্তত জরুরি। আগামী নব্বই দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। কারণ, দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচন আগামী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে এখনো ধীরগতিতে অভিযান চালাচ্ছে। আগামী নব্বই দিন এই পরিস্থিতির নাটকীয় কোনো পরিবর্তন হবে না। এর মধ্যে রাশিয়া ধ্বংসাত্মক কোনো আক্রমণ করবে না। নতুন করে কোনো বিমান হামলা করবে না। এমনকি সীমানা ডিঙিয়ে নতুন কোনো অঞ্চলে অনুপ্রবেশেরও চেষ্টা তারা করবে না। ফুটবলে এই কৌশলকে ‘ছোট ছোট পাসে খেলা’ বলে। একবারে লম্বা পাস দিয়ে আগ্রাসী হওয়ার চেয়ে এভাবে চাপ জিইয়ে রাখাটা ফুটবলে জনপ্রিয় কৌশল। মস্কোর অভিযানে যখন হতাহতের সংখ্যা বেশি হচ্ছিল, তখন অভ্যন্তরীণ জনমতে মিশ্র প্রভাব পড়ছিল। এটি দীর্ঘ মেয়াদে সমরশক্তি ও সেনাক্ষয়ও করে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো মস্কোর যুদ্ধ প্রচেষ্টায় চাপ সৃষ্টি করছিল, যদিও এর প্রভাব দৃশ্যমান ছিল না।
এদিকে ইউক্রেন খেরসন পুনরুদ্ধারে এবং বিদ্যমান সীমানায় প্রভাব বিস্তার করে কৃষ্ণসাগরের পাশে ম্যাইকোলেইভে পৌঁছানোর জন্য একটি ‘দক্ষিণ কৌশল’ ঠিক করেছে বলে মনে হচ্ছে। যেন দনবাস থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সরাসরি রুশ অনুপ্রবেশ ঠেকানো যায়। ইউক্রেনের সম্মুখযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ন্যাটোর অন্য সদস্যদের দেওয়া ভারী অস্ত্র উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে, যদিও তা কিয়েভের সামরিক বাহিনী যে পরিমাণে ও যে সময়ের মধ্যে চেয়েছিল, সেই সময়ে আসেনি। ইউক্রেন তার সামরিক হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা ভালোভাবেই চেপে গেছে। কিন্তু জনপ্রিয় পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোয় যে সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে, তার চেয়ে সেই সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক জনসংখ্যার মধ্যে হতাহতের সংখ্যা এবং সর্বাধিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঞ্চলে যে সম্পত্তি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে (যার পরিমাণ খুব একটা উল্লেখ করা হয় না), তাও অজ্ঞাত।
শেষ পর্যন্ত সম্ভবত এই যুদ্ধ শেষ হবে কোনো বোধগম্য উপসংহার ছাড়াই। এই সমাপ্তি আগামী ৯০ দিনের মধ্যে হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যা হোক, এবার রাশিয়ার রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের নিষ্পত্তি হতে পারে। এই যুদ্ধের আগে ও যুদ্ধ চলাকালে পশ্চিমারা রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি সংকল্প, এর লাভ-ক্ষতির বিশ্লেষণকে অবমূল্যায়ন করেছে বারবার। ‘পুতিনের ব্যক্তিগত যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে এই সংঘাতকে রাশিয়ায় অজনপ্রিয় হিসেবে দেখাতে গিয়ে ভুল করেছেন। ‘ইউক্রেনসহ সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোকে অবৈধভাবে মাতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল’—এমন অনুভূতি রুশদের মধ্যে কতটা বিস্তৃত ও গভীর, তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁরা। ২০০৫ সাল থেকে পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে দেখতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে; কিন্তু পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক বিপর্যয় হিসেবেই বিশ্বাস করেন।
‘ঐতিহাসিক রাশিয়ার’ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে মস্কো প্রয়োজনে ক্ষতির শিকার হতেও রাজি। অথচ এই মনোভাবকেই বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা অনেক ক্ষতির বিনিময়ে তুলনামূলক কম অঞ্চলের অধিকার আদায় বিবেচনায় ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ হিসেবে দেখছে। এটি থেকে সহজেই ব্যাখ্যা করা যায় যে, কেন এই যুদ্ধ মস্কোতে গ্রহণযোগ্য হলেও পশ্চিমে নয়। আমেরিকার গৃহযুদ্ধেও ১৮৬৪-৬৫ সালে উত্তর ভার্জিনিয়ার রবার্ট ই লির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চালানো অভিযানের জন্য ইউলিসিস এস গ্রান্ট কঠোরভাবে সমালোচিত। এ জন্য কেউ কেউ তো তাঁকে ‘কসাই’ বলে ডাকেন। ঠিক উইলিয়াম টেকুমসেহ শেরম্যান ১৮৬৪ সালে আটলান্টা থেকে সাভানা পর্যন্ত সমুদ্রমুখী অভিযানের জন্য সমালোচিত। লির বিরুদ্ধে গ্রান্টের যুদ্ধ এবং শেরম্যানের ধ্বংসলীলা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের চূড়ান্ত পরাজয়ের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। একইভাবে ১৯৩৯-১৯৪০ সালের ফিনল্যান্ডের সঙ্গে ‘শীতকালীন যুদ্ধে’ মস্কোও প্রচুর রক্তপাত করেছিল; এবং বিজয় অর্জন করেছিল।
সুতরাং এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, রাশিয়া তার সংকল্প থেকে পিছু হটেনি। যা হোক, পুতিন এটুকু ঝুঁকি ঠিকই বুঝতে পারছেন যে, ইউক্রেনের হাতে ন্যাটোর কাছ থেকে পর্যাপ্ত অত্যাধুনিক অস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধসামগ্রী পৌঁছালে রুশ বাহিনীর এত দিনের অর্জন বিপন্ন হবে। তিনি এ-ও জানেন, ন্যাটোর নেতারা ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপের সমর্থনের কথা যেমনটা বলেন তেমনটা নয়, বিশেষ করে ফ্রান্স ও জার্মানির ক্ষেত্রে। এই যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা তাঁর নিজের করা গভীর সংকল্পের সঙ্গে মেলে না। এর মধ্যেই ইউক্রেনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে মতানৈক্যের বিভিন্ন লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে, যা রোধ করা দূরের কথা, বরং দিনদিন আরও প্রকাশ্যে আসছে।
এখন রাশিয়াকে একটি কঠিন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পুতিন ইউক্রেনের আরও কিছু অঞ্চল পুনরুদ্ধারের সুযোগ হারাতে চাইবেন না, বিশেষত যেহেতু তিনি তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্যগুলো থেকে এখনো অনেক দূরে আছেন। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, এখন পিছু হটে রুশ বাহিনীর সঙ্গে তিনি ধরা পড়তে চান না। কারণ, এ ধরনের যেকোনো কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকেই এখন দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে ধরা হবে। পশ্চিমাদের মধ্যে যাঁরা মনে করেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মানসিকভাবে ও বৈষয়িকভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, সে সম্পর্কে পুতিন ভালো করে জানেন না, তাঁরা বোকামো করছেন। কারণ পুতিন ভালো করেই জানেন, এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে তাঁর একটি মোক্ষম সুযোগ দরকার এবং সেই সুযোগ নিজের নির্ধারিত শর্তেই তাঁকে পেতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সেরা বিকল্প হতে পারে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে, ‘স্পষ্ট মিথ্যা’ হলেও ‘ক্রেমলিন লক্ষ্য অর্জন করেছে’ বলে ঘোষণা দেওয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পুতিনকে আক্রমণাত্মক সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিয়ে ইউক্রেনের কাছেও একই দাবি তুলতে হবে। একই সঙ্গে উভয় বাহিনীর মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারণের লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনার ডাক দিতে হবে তাঁকে। যদিও এসব করতে পুতিন নাখোশ হবেন। কিন্তু তিনি ভালো করেই জানেন যে, এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি রাশিয়াকে তার সামরিক বাহিনী পুনর্গঠন করতে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে এবং সম্ভবত বেলারুশ থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত রুশ সাম্রাজ্যের দুর্বল অংশগুলোকে পুনরায় আয়ত্তে নিতে কিছুটা সময় দেবে।
মস্কো এখন হিসোব কষবে কীভাবে কিয়েভকে অতর্কিতে করায়ত্ত করা যায়। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছ, এখনো ইউক্রেনের ২৫ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে থাকা অবস্থায় জেলেনস্কি এভাবে সংঘাত থামানোর বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করবেন। কারণ তিনি ভালো করেই জানেন, এখন ‘যুদ্ধবিরতি’ মানে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে নতুন সীমান্ত নির্ধারণ। দুর্ভাগ্যবশত, জেলেনস্কি স্নেক আইল্যান্ড নিয়ে সংঘাতের সময়কার মতো প্রতিক্রিয়া দেখানোর অবস্থানে নেই।
ন্যাটোর সঙ্গে আগাম কূটনৈতিক কৌশল নির্ধারণ না করায় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান সদস্যদের রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে জেলেনস্কি যে এখন রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিতে আছেন, পুতিন তা জানেন। এবং জেলেনস্কির এই ঝুঁকি কাজে লাগাতেও পুতিন প্রস্তুত। এদিকে শীত আসছে। জার্মানিসহ ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে রাশিয়ার সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে উদ্বিগ্ন। আর সত্যি কথা হচ্ছে, পশ্চিম ইউরোপের অনেক দেশ এরই মধ্যে এই যুদ্ধ নিয়ে ক্ষুব্ধ। ধারাবাহিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি বা মন্দা বা উভয়ের কারণে তাদের ক্ষোভ বাড়ছে। তাদের মনে হচ্ছে মাত্র ছয়-নয় মাসের মধ্যে এটি এক ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ হয়ে উঠেছে, যা শেষ হওয়া দরকার। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা ঘোষণা করে, রাশিয়ার সঙ্গে ২৪ ফেব্রুয়ারির আগের সম্পর্কে ফিরে যেতে তারা ‘যুদ্ধবিরতির’ সুযোগকেই ব্যবহার করবে।
ইউক্রেন ও ন্যাটোর মধ্যে এখন এই রুশ ‘চক্রান্তের’ বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চুক্তির প্রয়োজন। যুদ্ধের ময়দানে যা-ই ঘটুক না কেন, এই উদ্যোগ শুরু হতে পারে। আগামী সপ্তাহগুলোতে উল্লেখযোগ্য আরও সামরিক লাভের সম্ভাবনা কমার কারণে রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে।
পশ্চিমাদের পাল্টা কৌশলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হবে এটা একবারে স্পষ্ট করে দেওয়া যে, ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে রুশ বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এখন রুশদের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার, যাতে অর্থনীতি ও সামরিক বাহিনীকে তারা পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। কারণ, শত্রুতা তো চাইলে যেকোনো সময় শুরু করা যাবে। ইউক্রেনীয় সার্বভৌমত্ব পুরোপুরি পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকরভাবে স্থায়ী বলে মনে হলে পুতিন প্রথমেই বাধার মুখে পড়বেন। ক্ষতিপূরণ, যুদ্ধবন্দী ও দায়বদ্ধতাসহ অন্য অনেক বিষয়ও সমাধান করা প্রয়োজন। তবে মূল বিষয় হলো রাশিয়াকে একতরফা ‘যুদ্ধবিরতির’ মাধ্যমে তার দখল করা অঞ্চলগুলো ধরে রাখতে না দেওয়া।
ফ্রান্স ও জার্মানি কি এমন পাল্টা কৌশলে রাজি হবে? বাইডেন কি নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে এতটাই দুর্বল হবেন যে, তিনি ৮ নভেম্বর দলের জয়ের সম্ভাবনা বাড়াতে একটি কূটনৈতিক ‘জয়’ করার সুযোগ পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন? পশ্চিমকে বিভক্ত করে ইউক্রেনকে বিপদে ফেলতে রুশ প্রচেষ্টা ঠেকাতে যে জোরদার রাজনৈতিক অবস্থানের প্রয়োজন, তার জন্য ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নিবিড় ঐক্যের দরকার। সেই ঐক্য অর্জনে ন্যাটোকেই যথেষ্ট ভার বইতে হবে। এখন সময় তা শুরু করার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের লেখাটি আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন তুষার পাল
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি অভিযান পরিচালনার পর এখনো কিয়েভ দখল কিংবা ভলোদিমির জেলেনস্কিকে হত্যা বা উৎখাত করে সমস্ত ইউক্রেন দখল করতে না পারায় রাশিয়ার যে ব্যর্থতা, তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশলবিদদের জন্য একটি যুগান্তকারী গবেষণার বিষয় হয়ে থাকবে। ফলে রাশিয়ার পরবর্তী সিদ্ধান্ত ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মতো আক্রমণাত্মক লড়াইয়ের মাধ্যমে বিশেষত পূর্ব ইউক্রেনে প্রতিদিন কয়েক মাইল করে নতুন নতুন অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
এই যুদ্ধের পরবর্তী পর্ব হবে গ্রীষ্ম শেষের সঙ্গে সঙ্গে। এই সবকিছু সামরিক বিষয়ের চেয়ে রাজনৈতিক কৌশলের ওপর বেশি নির্ভর করবে বলে মনে হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এই সামরিক পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ও পরিবর্তনশীল। আসন্ন মাসগুলোতে যুদ্ধের পরিস্থিতি কী হবে, তা অস্পষ্ট। এ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করাও কঠিন। কারণ অনেক রাজনৈতিক ইস্যু তখন নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে।
হিসাব অনুযায়ী, ন্যাটো ও ইউক্রেনের অন্য সমর্থকদের উচিত কূটনৈতিকভাবে এই পরিস্থিতির সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ করা থেকে মস্কোকে বিরত রাখার উপায় খুঁজে বের করা। এটি অবশ্য তাদের অনেক আগেই ভেবে রাখা উচিত ছিল। এই সংঘাতকে কোনো শর্তসাপেক্ষে সাময়িকভাবে স্থগিত করাটা অন্তত জরুরি। আগামী নব্বই দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। কারণ, দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের নির্বাচন আগামী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।
রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে এখনো ধীরগতিতে অভিযান চালাচ্ছে। আগামী নব্বই দিন এই পরিস্থিতির নাটকীয় কোনো পরিবর্তন হবে না। এর মধ্যে রাশিয়া ধ্বংসাত্মক কোনো আক্রমণ করবে না। নতুন করে কোনো বিমান হামলা করবে না। এমনকি সীমানা ডিঙিয়ে নতুন কোনো অঞ্চলে অনুপ্রবেশেরও চেষ্টা তারা করবে না। ফুটবলে এই কৌশলকে ‘ছোট ছোট পাসে খেলা’ বলে। একবারে লম্বা পাস দিয়ে আগ্রাসী হওয়ার চেয়ে এভাবে চাপ জিইয়ে রাখাটা ফুটবলে জনপ্রিয় কৌশল। মস্কোর অভিযানে যখন হতাহতের সংখ্যা বেশি হচ্ছিল, তখন অভ্যন্তরীণ জনমতে মিশ্র প্রভাব পড়ছিল। এটি দীর্ঘ মেয়াদে সমরশক্তি ও সেনাক্ষয়ও করে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো মস্কোর যুদ্ধ প্রচেষ্টায় চাপ সৃষ্টি করছিল, যদিও এর প্রভাব দৃশ্যমান ছিল না।
এদিকে ইউক্রেন খেরসন পুনরুদ্ধারে এবং বিদ্যমান সীমানায় প্রভাব বিস্তার করে কৃষ্ণসাগরের পাশে ম্যাইকোলেইভে পৌঁছানোর জন্য একটি ‘দক্ষিণ কৌশল’ ঠিক করেছে বলে মনে হচ্ছে। যেন দনবাস থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সরাসরি রুশ অনুপ্রবেশ ঠেকানো যায়। ইউক্রেনের সম্মুখযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ন্যাটোর অন্য সদস্যদের দেওয়া ভারী অস্ত্র উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে, যদিও তা কিয়েভের সামরিক বাহিনী যে পরিমাণে ও যে সময়ের মধ্যে চেয়েছিল, সেই সময়ে আসেনি। ইউক্রেন তার সামরিক হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা ভালোভাবেই চেপে গেছে। কিন্তু জনপ্রিয় পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোয় যে সংখ্যা প্রকাশ পেয়েছে, তার চেয়ে সেই সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক জনসংখ্যার মধ্যে হতাহতের সংখ্যা এবং সর্বাধিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঞ্চলে যে সম্পত্তি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে (যার পরিমাণ খুব একটা উল্লেখ করা হয় না), তাও অজ্ঞাত।
শেষ পর্যন্ত সম্ভবত এই যুদ্ধ শেষ হবে কোনো বোধগম্য উপসংহার ছাড়াই। এই সমাপ্তি আগামী ৯০ দিনের মধ্যে হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যা হোক, এবার রাশিয়ার রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের নিষ্পত্তি হতে পারে। এই যুদ্ধের আগে ও যুদ্ধ চলাকালে পশ্চিমারা রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদি সংকল্প, এর লাভ-ক্ষতির বিশ্লেষণকে অবমূল্যায়ন করেছে বারবার। ‘পুতিনের ব্যক্তিগত যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে এই সংঘাতকে রাশিয়ায় অজনপ্রিয় হিসেবে দেখাতে গিয়ে ভুল করেছেন। ‘ইউক্রেনসহ সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোকে অবৈধভাবে মাতৃভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল’—এমন অনুভূতি রুশদের মধ্যে কতটা বিস্তৃত ও গভীর, তা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন তাঁরা। ২০০৫ সাল থেকে পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে দেখতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে; কিন্তু পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে শতাব্দীর সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক বিপর্যয় হিসেবেই বিশ্বাস করেন।
‘ঐতিহাসিক রাশিয়ার’ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে মস্কো প্রয়োজনে ক্ষতির শিকার হতেও রাজি। অথচ এই মনোভাবকেই বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা অনেক ক্ষতির বিনিময়ে তুলনামূলক কম অঞ্চলের অধিকার আদায় বিবেচনায় ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ’ হিসেবে দেখছে। এটি থেকে সহজেই ব্যাখ্যা করা যায় যে, কেন এই যুদ্ধ মস্কোতে গ্রহণযোগ্য হলেও পশ্চিমে নয়। আমেরিকার গৃহযুদ্ধেও ১৮৬৪-৬৫ সালে উত্তর ভার্জিনিয়ার রবার্ট ই লির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে চালানো অভিযানের জন্য ইউলিসিস এস গ্রান্ট কঠোরভাবে সমালোচিত। এ জন্য কেউ কেউ তো তাঁকে ‘কসাই’ বলে ডাকেন। ঠিক উইলিয়াম টেকুমসেহ শেরম্যান ১৮৬৪ সালে আটলান্টা থেকে সাভানা পর্যন্ত সমুদ্রমুখী অভিযানের জন্য সমালোচিত। লির বিরুদ্ধে গ্রান্টের যুদ্ধ এবং শেরম্যানের ধ্বংসলীলা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের চূড়ান্ত পরাজয়ের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। একইভাবে ১৯৩৯-১৯৪০ সালের ফিনল্যান্ডের সঙ্গে ‘শীতকালীন যুদ্ধে’ মস্কোও প্রচুর রক্তপাত করেছিল; এবং বিজয় অর্জন করেছিল।
সুতরাং এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, রাশিয়া তার সংকল্প থেকে পিছু হটেনি। যা হোক, পুতিন এটুকু ঝুঁকি ঠিকই বুঝতে পারছেন যে, ইউক্রেনের হাতে ন্যাটোর কাছ থেকে পর্যাপ্ত অত্যাধুনিক অস্ত্র ও অন্যান্য যুদ্ধসামগ্রী পৌঁছালে রুশ বাহিনীর এত দিনের অর্জন বিপন্ন হবে। তিনি এ-ও জানেন, ন্যাটোর নেতারা ইউক্রেনের প্রতি ইউরোপের সমর্থনের কথা যেমনটা বলেন তেমনটা নয়, বিশেষ করে ফ্রান্স ও জার্মানির ক্ষেত্রে। এই যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা তাঁর নিজের করা গভীর সংকল্পের সঙ্গে মেলে না। এর মধ্যেই ইউক্রেনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে মতানৈক্যের বিভিন্ন লক্ষণ এখন দেখা যাচ্ছে, যা রোধ করা দূরের কথা, বরং দিনদিন আরও প্রকাশ্যে আসছে।
এখন রাশিয়াকে একটি কঠিন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পুতিন ইউক্রেনের আরও কিছু অঞ্চল পুনরুদ্ধারের সুযোগ হারাতে চাইবেন না, বিশেষত যেহেতু তিনি তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্যগুলো থেকে এখনো অনেক দূরে আছেন। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, এখন পিছু হটে রুশ বাহিনীর সঙ্গে তিনি ধরা পড়তে চান না। কারণ, এ ধরনের যেকোনো কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকেই এখন দুর্বলতার লক্ষণ হিসেবে ধরা হবে। পশ্চিমাদের মধ্যে যাঁরা মনে করেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী মানসিকভাবে ও বৈষয়িকভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে, সে সম্পর্কে পুতিন ভালো করে জানেন না, তাঁরা বোকামো করছেন। কারণ পুতিন ভালো করেই জানেন, এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে তাঁর একটি মোক্ষম সুযোগ দরকার এবং সেই সুযোগ নিজের নির্ধারিত শর্তেই তাঁকে পেতে হবে।
এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার সেরা বিকল্প হতে পারে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে, ‘স্পষ্ট মিথ্যা’ হলেও ‘ক্রেমলিন লক্ষ্য অর্জন করেছে’ বলে ঘোষণা দেওয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতেই পুতিনকে আক্রমণাত্মক সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ দিয়ে ইউক্রেনের কাছেও একই দাবি তুলতে হবে। একই সঙ্গে উভয় বাহিনীর মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারণের লক্ষ্যে যুদ্ধবিরতির আলোচনার ডাক দিতে হবে তাঁকে। যদিও এসব করতে পুতিন নাখোশ হবেন। কিন্তু তিনি ভালো করেই জানেন যে, এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি রাশিয়াকে তার সামরিক বাহিনী পুনর্গঠন করতে, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে এবং সম্ভবত বেলারুশ থেকে মধ্য এশিয়া পর্যন্ত রুশ সাম্রাজ্যের দুর্বল অংশগুলোকে পুনরায় আয়ত্তে নিতে কিছুটা সময় দেবে।
মস্কো এখন হিসোব কষবে কীভাবে কিয়েভকে অতর্কিতে করায়ত্ত করা যায়। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছ, এখনো ইউক্রেনের ২৫ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার দখলে থাকা অবস্থায় জেলেনস্কি এভাবে সংঘাত থামানোর বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করবেন। কারণ তিনি ভালো করেই জানেন, এখন ‘যুদ্ধবিরতি’ মানে রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে নতুন সীমান্ত নির্ধারণ। দুর্ভাগ্যবশত, জেলেনস্কি স্নেক আইল্যান্ড নিয়ে সংঘাতের সময়কার মতো প্রতিক্রিয়া দেখানোর অবস্থানে নেই।
ন্যাটোর সঙ্গে আগাম কূটনৈতিক কৌশল নির্ধারণ না করায় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান সদস্যদের রাজনৈতিক দুর্বলতার কারণে জেলেনস্কি যে এখন রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিতে আছেন, পুতিন তা জানেন। এবং জেলেনস্কির এই ঝুঁকি কাজে লাগাতেও পুতিন প্রস্তুত। এদিকে শীত আসছে। জার্মানিসহ ইউরোপের বেশির ভাগ দেশ জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে রাশিয়ার সুবিধাজনক অবস্থানের কারণে উদ্বিগ্ন। আর সত্যি কথা হচ্ছে, পশ্চিম ইউরোপের অনেক দেশ এরই মধ্যে এই যুদ্ধ নিয়ে ক্ষুব্ধ। ধারাবাহিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি বা মন্দা বা উভয়ের কারণে তাদের ক্ষোভ বাড়ছে। তাদের মনে হচ্ছে মাত্র ছয়-নয় মাসের মধ্যে এটি এক ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ হয়ে উঠেছে, যা শেষ হওয়া দরকার। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার কথা ঘোষণা করে, রাশিয়ার সঙ্গে ২৪ ফেব্রুয়ারির আগের সম্পর্কে ফিরে যেতে তারা ‘যুদ্ধবিরতির’ সুযোগকেই ব্যবহার করবে।
ইউক্রেন ও ন্যাটোর মধ্যে এখন এই রুশ ‘চক্রান্তের’ বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চুক্তির প্রয়োজন। যুদ্ধের ময়দানে যা-ই ঘটুক না কেন, এই উদ্যোগ শুরু হতে পারে। আগামী সপ্তাহগুলোতে উল্লেখযোগ্য আরও সামরিক লাভের সম্ভাবনা কমার কারণে রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে।
পশ্চিমাদের পাল্টা কৌশলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি হবে এটা একবারে স্পষ্ট করে দেওয়া যে, ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে রুশ বাহিনী সম্পূর্ণ প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত রাশিয়ার বিরুদ্ধে সমস্ত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এখন রুশদের প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার, যাতে অর্থনীতি ও সামরিক বাহিনীকে তারা পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। কারণ, শত্রুতা তো চাইলে যেকোনো সময় শুরু করা যাবে। ইউক্রেনীয় সার্বভৌমত্ব পুরোপুরি পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এসব নিষেধাজ্ঞা কার্যকরভাবে স্থায়ী বলে মনে হলে পুতিন প্রথমেই বাধার মুখে পড়বেন। ক্ষতিপূরণ, যুদ্ধবন্দী ও দায়বদ্ধতাসহ অন্য অনেক বিষয়ও সমাধান করা প্রয়োজন। তবে মূল বিষয় হলো রাশিয়াকে একতরফা ‘যুদ্ধবিরতির’ মাধ্যমে তার দখল করা অঞ্চলগুলো ধরে রাখতে না দেওয়া।
ফ্রান্স ও জার্মানি কি এমন পাল্টা কৌশলে রাজি হবে? বাইডেন কি নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে এতটাই দুর্বল হবেন যে, তিনি ৮ নভেম্বর দলের জয়ের সম্ভাবনা বাড়াতে একটি কূটনৈতিক ‘জয়’ করার সুযোগ পেয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন? পশ্চিমকে বিভক্ত করে ইউক্রেনকে বিপদে ফেলতে রুশ প্রচেষ্টা ঠেকাতে যে জোরদার রাজনৈতিক অবস্থানের প্রয়োজন, তার জন্য ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে নিবিড় ঐক্যের দরকার। সেই ঐক্য অর্জনে ন্যাটোকেই যথেষ্ট ভার বইতে হবে। এখন সময় তা শুরু করার।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের লেখাটি আজকের পত্রিকার পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন তুষার পাল
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৪ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১২ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে