আব্দুর রহমান
প্রতিশ্রুতি অনুসারে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানের ‘অপারেশন ট্রুথফুল প্রমিজ’ নামের হামলা ইসরায়েলের আকাশসীমায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলেছে। এই হামলায় ইরান ও এর মিত্র প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। তবে এখন যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, ইসরায়েল ইরানে পাল্টা হামলা চালাবে কি না।
ভূকৌশলগত দিক থেকে ইরান সুবিধাজনক স্থানে, বিপরীতে ইসরায়েল একপ্রকার উন্মুক্ত বলা যায়। ইরানের তিন দিকই পর্বত দিয়ে ঘেরা। দেশটির উত্তর পাশে আলবুর্জ ও পশ্চিম পাশে জাগরোস পর্বতমালা। পূর্ব সীমান্তে আফগানিস্তানের পাশটাও পার্বত্য। ফলে অপর পাশে আরব সাগর হয়েও ইরানকে স্থল আক্রমণ করা কঠিন। খোদ যুক্তরাষ্ট্রই ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় ইরান আক্রমণের সাহস পায়নি।
এ তো গেলো, স্থল আক্রমণের হিসাব। আকাশপথে আক্রমণ বা এরিয়াল অ্যাটাকের বিষয়টিও ইসরায়েলের জন্য সুবিধা হবে না। কারণ ইসরায়েলের প্রায় সব দিকেই ইরানের সামরিক উপস্থিতি আছে। সিরিয়ায় ইরানের সরাসরি সামরিক উপস্থিতি আছে। এ ছাড়া, ইরাক ও লেবাননে ইরানের প্রক্সি গোষ্ঠী আছে। এমনকি খোদ ইসরায়েলের পেটের মধ্যে—গাজার হামাস, যা ইরানের সঙ্গে যুক্ত—ইরানের সামরিক উপস্থিতি আছে।
এই বিবেচনায় ইরান ইসরায়েলের তিন পাশেই সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এর বাইরে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ভূসংযোগ নেই। দুই দেশের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব। মাঝে ইরাক ও সিরিয়ার অবস্থান। ফলে, ইরান-ইসরায়েলের সরাসরি সংঘাতে যাওয়ার সম্ভাবনা ও সুযোগ কম।
এ ছাড়া, কৌশলগত দিক থেকে ইরানের আরেকটা সুবিধার জায়গা হলো পারস্য উপসাগরের এক্সিট পয়েন্ট হরমুজ প্রণালির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকা। ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত ও বাহরাইনের জন্য উন্মুক্ত সাগরে বের হওয়ার একমাত্র পথ এই প্রণালি। আর এই জায়গাকে টুঁটি চেপে ধরার মতো করে চেপে ধরার সক্ষমতা ইরানের আছে। ফলে এই জায়গায় আরবের এই দেশগুলো ইরানের কাছে আটকা।
তবে এত সব সুবিধা ইরানের পক্ষে কথা বললেও সরাসরি এখনই বলে দেওয়া সম্ভব নয় যে ইসরায়েল সরাসরি ইরান আক্রমণ করবে কি না। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানি আক্রমণের অনেক আগেই হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘যারা আমাদের ক্ষতি করবে, আমরাও তাদের ক্ষতি করব।’
হামলার আগে ইসরায়েল সরকার নানা কথা বললেও হামলার পর দেশটি এখনো ইরানকে কোনো শক্ত হুমকি দেয়নি। এ ছাড়া, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলার ইস্যুতে তেল আবিবের পাশে থাকবে কি না, তাও নিশ্চিত নয়।
পশ্চিমা গণমাধ্যমের খবর, ইরানি হামলার পর ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সঙ্গে সঙ্গে এই বার্তাও দিয়েছে যে, ইসরায়েল যদি ইরানে পাল্টা আক্রমণ করতে চায়, তা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে না। নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোন আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার রাতে ইসরায়েলে ইরানি আক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই টেলিফোনে কথা বলেন বাইডেন ও নেতানিয়াহু। সে সময় বাইডেন এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যক্ত করেন এবং জানিয়ে দেন, ইরানে পাল্টা আক্রমণ করতে চাইলে ইসরায়েলকে সমর্থন দেবে না তাঁর দেশ। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি কোনো পাল্টা হামলায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে না। এক্সিওসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে ইসরায়েলের পাল্টা হামলার বিরোধিতা করবে।
ইরানে ইসরায়েলি পাল্টা আক্রমণের বিরোধিতা করলেও দেশটির বিরুদ্ধে তেল আবিবের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে সমর্থন দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল রাতে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করেছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি আমাদের সমর্থন লৌহদৃঢ়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের জনগণের পাশে দাঁড়াবে এবং ইরানের এই হুমকির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে সমর্থন করবে।’
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ, অঞ্চলটির বর্তমান পরিস্থিতি, আরব বিশ্ব কর্তৃক ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টা, গাজায় চলমান যুদ্ধসহ নানা কারণেই এই মুহূর্তে ইসরায়েল ব্যাকফুটে। এই অবস্থায় দেশটি আরও কয়েকটি ফ্রন্টে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়বে কি না, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে দেশটির সমর বিশারদদের।
ইসরায়েল যদি ইরান আক্রমণ করে, তবে আশঙ্কা আছে যে, এটি পুরোপুরিভাবে মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলবে। বিশেষ করে সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক ও লেবাননে থাকা ইরানি প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোকে ইরান অবশ্যই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেবে। সে ক্ষেত্রে গাজা, সিরিয়া ও লেবানন সীমান্তে একাধিক ফ্রন্টে নামতে হবে ইসরায়েলকে, যা দেশটির সামরিক শক্তিকে বিভাজিত করে দেবে। আর এই সুযোগে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি আকাশসীমায় প্রবেশ করবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ইরান সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায় না। ইরানের মিত্র, আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলোর কূটনীতিকেরা মনে করেন, ইরান এমন এক প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা মূলত এর ‘ডিটারেন্স’ বা যেকোনো প্রতিপক্ষকে ঠেকানোর সক্ষমতা প্রকাশ করবে এবং একই সঙ্গে এই অঞ্চলে আঞ্চলিক সংঘাত সৃষ্টির সম্ভাবনাও নাকচ করবে।
পশ্চিমা বিশ্বের একটি সূত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিল, ‘ইরান যদি ইসরায়েলে হামলা চালায়ও, তবে তা হবে খুবই সুপরিকল্পিত ও নিখুঁত। এই হামলা ইরানের তরফ থেকে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়াই নিশ্চিত করবে এবং একই সঙ্গে লেবানন ও সিরিয়ায় ইরানের যে উপস্থিতি সেটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ইরান এ বিষয়ে ভুল করলে প্রতিক্রিয়া হবে খুবই ভয়াবহ।
ইরানের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত হামলা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়েই ছিল বলে জানা গেছে ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো থেকে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তাঁরা ইরান ও এর মিত্রদের কাছ থেকে আসা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯ শতাংশই ধ্বংস করে দিয়েছে। অন্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানি হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য আসেনি ইসরায়েলি গণমাধ্যমে।
বিশ্লেষকেরা অনুমান করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইসরায়েলকে এই হামলা সহ্য করে যাওয়ার পরামর্শই দেবে, যা বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ থেকে অনেকটাই স্পষ্ট। এর আগে, এ বিষয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা বলছেন, ইসরায়েল হয়তো এমন আক্রমণ সহ্য করবে, যা কেবল তাদের সামরিক অবকাঠামোই ধ্বংস করবে। কিন্তু বেসামরিক বা সামরিক কর্মকর্তা যদি ইরানি হামলায় নিহত হয়, তবে ইসরায়েল আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এমনকি দেশটি সরাসরি ইরানেও হামলা চালাতে পারে।
ইরানের পক্ষ থেকে গুলি ছোড়া হয়ে গেছে। এখন ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা। তবে ইসরায়েল হামলা ঠেকিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই ইরান সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েল যদি এই হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়, তার জবাব হবে খুবই ভয়াবহ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে ইরান বলেছে, ইসরায়েলের লাগাম না টানা হলে যুক্তরাষ্ট্রকেও এর ফল ভোগ করতে হবে। সব মিলিয়ে ইরানে আক্রমণ ইসরায়েলের জন্য একেবারেই সহজ বিষয় নয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, অ্যাক্সিওস, তেহরান টাইমস, টাইমস অব ইসরায়েল, প্রিজনার্স অব জিওগ্রাফি ও এএফপি
প্রতিশ্রুতি অনুসারে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ইরানের ‘অপারেশন ট্রুথফুল প্রমিজ’ নামের হামলা ইসরায়েলের আকাশসীমায় প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলেছে। এই হামলায় ইরান ও এর মিত্র প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। তবে এখন যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হলো, ইসরায়েল ইরানে পাল্টা হামলা চালাবে কি না।
ভূকৌশলগত দিক থেকে ইরান সুবিধাজনক স্থানে, বিপরীতে ইসরায়েল একপ্রকার উন্মুক্ত বলা যায়। ইরানের তিন দিকই পর্বত দিয়ে ঘেরা। দেশটির উত্তর পাশে আলবুর্জ ও পশ্চিম পাশে জাগরোস পর্বতমালা। পূর্ব সীমান্তে আফগানিস্তানের পাশটাও পার্বত্য। ফলে অপর পাশে আরব সাগর হয়েও ইরানকে স্থল আক্রমণ করা কঠিন। খোদ যুক্তরাষ্ট্রই ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় ইরান আক্রমণের সাহস পায়নি।
এ তো গেলো, স্থল আক্রমণের হিসাব। আকাশপথে আক্রমণ বা এরিয়াল অ্যাটাকের বিষয়টিও ইসরায়েলের জন্য সুবিধা হবে না। কারণ ইসরায়েলের প্রায় সব দিকেই ইরানের সামরিক উপস্থিতি আছে। সিরিয়ায় ইরানের সরাসরি সামরিক উপস্থিতি আছে। এ ছাড়া, ইরাক ও লেবাননে ইরানের প্রক্সি গোষ্ঠী আছে। এমনকি খোদ ইসরায়েলের পেটের মধ্যে—গাজার হামাস, যা ইরানের সঙ্গে যুক্ত—ইরানের সামরিক উপস্থিতি আছে।
এই বিবেচনায় ইরান ইসরায়েলের তিন পাশেই সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে। এর বাইরে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ভূসংযোগ নেই। দুই দেশের মধ্যে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব। মাঝে ইরাক ও সিরিয়ার অবস্থান। ফলে, ইরান-ইসরায়েলের সরাসরি সংঘাতে যাওয়ার সম্ভাবনা ও সুযোগ কম।
এ ছাড়া, কৌশলগত দিক থেকে ইরানের আরেকটা সুবিধার জায়গা হলো পারস্য উপসাগরের এক্সিট পয়েন্ট হরমুজ প্রণালির নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে থাকা। ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত ও বাহরাইনের জন্য উন্মুক্ত সাগরে বের হওয়ার একমাত্র পথ এই প্রণালি। আর এই জায়গাকে টুঁটি চেপে ধরার মতো করে চেপে ধরার সক্ষমতা ইরানের আছে। ফলে এই জায়গায় আরবের এই দেশগুলো ইরানের কাছে আটকা।
তবে এত সব সুবিধা ইরানের পক্ষে কথা বললেও সরাসরি এখনই বলে দেওয়া সম্ভব নয় যে ইসরায়েল সরাসরি ইরান আক্রমণ করবে কি না। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইরানি আক্রমণের অনেক আগেই হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘যারা আমাদের ক্ষতি করবে, আমরাও তাদের ক্ষতি করব।’
হামলার আগে ইসরায়েল সরকার নানা কথা বললেও হামলার পর দেশটি এখনো ইরানকে কোনো শক্ত হুমকি দেয়নি। এ ছাড়া, ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ইরানে হামলার ইস্যুতে তেল আবিবের পাশে থাকবে কি না, তাও নিশ্চিত নয়।
পশ্চিমা গণমাধ্যমের খবর, ইরানি হামলার পর ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে সঙ্গে সঙ্গে এই বার্তাও দিয়েছে যে, ইসরায়েল যদি ইরানে পাল্টা আক্রমণ করতে চায়, তা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে না। নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোন আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গতকাল শনিবার রাতে ইসরায়েলে ইরানি আক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই টেলিফোনে কথা বলেন বাইডেন ও নেতানিয়াহু। সে সময় বাইডেন এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ব্যক্ত করেন এবং জানিয়ে দেন, ইরানে পাল্টা আক্রমণ করতে চাইলে ইসরায়েলকে সমর্থন দেবে না তাঁর দেশ। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি কোনো পাল্টা হামলায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে না। এক্সিওসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইরানে ইসরায়েলের পাল্টা হামলার বিরোধিতা করবে।
ইরানে ইসরায়েলি পাল্টা আক্রমণের বিরোধিতা করলেও দেশটির বিরুদ্ধে তেল আবিবের প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করতে সমর্থন দেওয়ার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল রাতে হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
হোয়াইট হাউস বলেছে, ‘ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করেছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়েন ওয়াটসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাইডেন স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি আমাদের সমর্থন লৌহদৃঢ়।’ তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের জনগণের পাশে দাঁড়াবে এবং ইরানের এই হুমকির বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে সমর্থন করবে।’
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ, অঞ্চলটির বর্তমান পরিস্থিতি, আরব বিশ্ব কর্তৃক ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রচেষ্টা, গাজায় চলমান যুদ্ধসহ নানা কারণেই এই মুহূর্তে ইসরায়েল ব্যাকফুটে। এই অবস্থায় দেশটি আরও কয়েকটি ফ্রন্টে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়বে কি না, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে দেশটির সমর বিশারদদের।
ইসরায়েল যদি ইরান আক্রমণ করে, তবে আশঙ্কা আছে যে, এটি পুরোপুরিভাবে মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলবে। বিশেষ করে সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক ও লেবাননে থাকা ইরানি প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোকে ইরান অবশ্যই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেবে। সে ক্ষেত্রে গাজা, সিরিয়া ও লেবানন সীমান্তে একাধিক ফ্রন্টে নামতে হবে ইসরায়েলকে, যা দেশটির সামরিক শক্তিকে বিভাজিত করে দেবে। আর এই সুযোগে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলি আকাশসীমায় প্রবেশ করবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ইরান সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে চায় না। ইরানের মিত্র, আরব ও ইউরোপীয় দেশগুলোর কূটনীতিকেরা মনে করেন, ইরান এমন এক প্রতিক্রিয়া দেখানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা মূলত এর ‘ডিটারেন্স’ বা যেকোনো প্রতিপক্ষকে ঠেকানোর সক্ষমতা প্রকাশ করবে এবং একই সঙ্গে এই অঞ্চলে আঞ্চলিক সংঘাত সৃষ্টির সম্ভাবনাও নাকচ করবে।
পশ্চিমা বিশ্বের একটি সূত্র ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছিল, ‘ইরান যদি ইসরায়েলে হামলা চালায়ও, তবে তা হবে খুবই সুপরিকল্পিত ও নিখুঁত। এই হামলা ইরানের তরফ থেকে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়াই নিশ্চিত করবে এবং একই সঙ্গে লেবানন ও সিরিয়ায় ইরানের যে উপস্থিতি সেটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ইরান এ বিষয়ে ভুল করলে প্রতিক্রিয়া হবে খুবই ভয়াবহ।
ইরানের তরফ থেকে এখন পর্যন্ত হামলা নিয়ন্ত্রিত পর্যায়েই ছিল বলে জানা গেছে ইসরায়েলি গণমাধ্যমগুলো থেকে। ইসরায়েল দাবি করেছে, তাঁরা ইরান ও এর মিত্রদের কাছ থেকে আসা ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ৯৯ শতাংশই ধ্বংস করে দিয়েছে। অন্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানি হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য আসেনি ইসরায়েলি গণমাধ্যমে।
বিশ্লেষকেরা অনুমান করছেন, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইসরায়েলকে এই হামলা সহ্য করে যাওয়ার পরামর্শই দেবে, যা বাইডেন-নেতানিয়াহুর ফোনালাপ থেকে অনেকটাই স্পষ্ট। এর আগে, এ বিষয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকেরা বলছেন, ইসরায়েল হয়তো এমন আক্রমণ সহ্য করবে, যা কেবল তাদের সামরিক অবকাঠামোই ধ্বংস করবে। কিন্তু বেসামরিক বা সামরিক কর্মকর্তা যদি ইরানি হামলায় নিহত হয়, তবে ইসরায়েল আক্রমণাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। এমনকি দেশটি সরাসরি ইরানেও হামলা চালাতে পারে।
ইরানের পক্ষ থেকে গুলি ছোড়া হয়ে গেছে। এখন ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা। তবে ইসরায়েল হামলা ঠেকিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখানোর আগেই ইরান সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েল যদি এই হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়, তার জবাব হবে খুবই ভয়াবহ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে ইরান বলেছে, ইসরায়েলের লাগাম না টানা হলে যুক্তরাষ্ট্রকেও এর ফল ভোগ করতে হবে। সব মিলিয়ে ইরানে আক্রমণ ইসরায়েলের জন্য একেবারেই সহজ বিষয় নয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন, অ্যাক্সিওস, তেহরান টাইমস, টাইমস অব ইসরায়েল, প্রিজনার্স অব জিওগ্রাফি ও এএফপি
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
১৮ ঘণ্টা আগেট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
১ দিন আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
২ দিন আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৩ দিন আগে