অনলাইন ডেস্ক
জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী চীনকে টপকে ভারত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৪৫ কোটি। এই অবস্থায় অনেকেই ভাবতে পারে যে, দেশটিতে বেশি সন্তান জন্ম দেওয়ার আলোচনা কিছুটা স্তিমিত হবে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, এই প্রসঙ্গে আলোচনা হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে।
দক্ষিণ ভারতের দুটি রাজ্যের নেতারা—অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু—সম্প্রতি বেশি সন্তান নেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। অন্ধ্রপ্রদেশ কম প্রজনন হার এবং বয়স্ক জনসংখ্যার কথা উল্লেখ করে প্রণোদনা দেওয়ার কথা ভাবছে। রাজ্যটি ‘দুই-সন্তান নীতি’ বাতিল করেছে এবং প্রতিবেশী তেলেঙ্গানাও একই পথে হাঁটতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। পাশের রাজ্য তামিলনাড়ুও একই ধরনের পদক্ষেপ আরও তীব্রভাবে অনুসরণের কথা ভাবছে।
ভারতের প্রজনন হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ১৯৫০ সালে দেশটিতে যেখানে প্রত্যেক নারী গড়ে ৫ দশমিক ৭টি হারে সন্তান জন্ম দিতেন, তা বর্তমানে ২—এ নেমে এসেছে। ভারতের ১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রজনন হার এমন স্তরের নেমে গেছে যা আগামী কয়েক দশক অব্যাহত থাকলে দেশটির জনসংখ্যা আরও স্থিতিশীল থাকবে না, কমতে শুরু করবে।
ভারতের দক্ষিণের পাঁচটি রাজ্য দেশটির জনসংখ্যার এই পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এসব রাজ্যের প্রজনন হার আগে এমন একটা পর্যায়ে ছিল, যখন জনসংখ্যা সংকোচনের কোনো আশঙ্কা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে এই পাঁচটি দক্ষিণী রাজ্যের গড় প্রজনন হার ১ দশমিক ৬—এর নিচে। কর্ণাটকের প্রজনন হার ১ দশমিক ৬ এবং তামিলনাড়ুর ১ দশমিক ৪। অর্থাৎ, এই রাজ্যগুলোর প্রজনন হার ইউরোপের অনেক দেশের সমান বা তার চেয়েও কম।
এই রাজ্যগুলো আশঙ্কা করছে, ভারতের জনসংখ্যার পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে জনসংখ্যা ভাগাভাগির পরিবর্তন তাদের নির্বাচনী প্রতিনিধিত্ব এবং ফেডারেল রাজস্ব বণ্টনে বড় প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিক জনসংখ্যা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের জনসংখ্যাতত্ত্বের অধ্যাপক শ্রীনিবাস গোলি বিবিসিকে বলেছেন, ‘উচ্চতর অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা এবং ফেডারেল রাজস্বে বড় অবদান থাকা সত্ত্বেও কার্যকর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতির জন্য তারা শাস্তি পাওয়ার ভয় করছে।’
ভারত ২০২৬ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচনী এলাকা পুনর্বিন্যাস (ডিলিমিটেশন) করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটি দক্ষিণী রাজ্যগুলোর জন্য আরও একটি বড় উদ্বেগের কারণ। এই প্রক্রিয়ায় জনসংখ্যার পরিবর্তন অনুযায়ী নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে ভারতের পার্লামেন্টে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দক্ষিণী রাজ্যগুলোর সংসদীয় আসন কমে যেতে পারে। যেহেতু ফেডারেল রাজস্ব রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে বরাদ্দ করা হয়, তাই অনেকের আশঙ্কা—এটি তাদের আর্থিক সংগ্রামকে আরও গভীর করবে এবং নীতিনির্ধারণের স্বাধীনতা সীমিত করবে।
জনসংখ্যাতত্ত্ববিদ কেএস জেমস এবং শুভ্রা কৃতি অনুমান করছেন, উত্তর ভারতের জনবহুল রাজ্যগুলো—যেমন: উত্তর প্রদেশ ও বিহার ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে আরও বেশি আসন পাবে। বিপরীতে তামিলনাড়ু, কেরালা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো দক্ষিণী রাজ্যগুলো আসন হারাতে পারে। ফলে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের ভারসাম্য আরও বদলে যেতে পারে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অনেকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজস্ব ভাগাভাগি ও সংসদীয় আসন বণ্টনের ফলে যে পরিবর্তন হবে তা শিগগির কার্যকর হবে না। শ্রীনিবাস গোলি বলেন, ‘একজন জনসংখ্যাবিদ হিসেবে আমি মনে করি না যে, রাজ্যগুলোকে এসব বিষয়ে বাড়তি চিন্তা করতে হবে। এগুলো কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। আমার উদ্বেগ অন্যত্র।’
জনসংখ্যাবিদদের মতে, ভারতের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দ্রুত দেশটির মানুষের বয়স্ক হয়ে যাওয়ার হার। আর এটি হতে পেরেছে মূলত দেশটির মানুষের জন্মহার কমে যাওয়ার কারণে। ফ্রান্স-সুইডেনের মতো দেশের বৃদ্ধ জনসংখ্যার পরিমাণ ৭ থেকে ১৪ শতাংশ হতে সময় লেগেছিল যথাক্রমে ১২০ ও ৮০ বছর। তবে ভারতের ক্ষেত্রে এই অবস্থানে যেতে সময় লাগবে আর মাত্র ২৮ বছর বলে জানান শ্রীনিবাস গোলি।
ভারতের নারীদের প্রজনন উর্বরতার হার কমে যাওয়া ও বৃদ্ধ জনসংখ্যা বাড়তে থাকার পেছনে একটি ইতিবাচক বিষয়ও অবশ্য আছে। বেশির ভাগ দেশে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা এবং নগরায়ণ স্বাভাবিকভাবেই জন্মহার কমাতে সহায়ক কারণ এসব বিষয়ে শিশুদের বেঁচে থাকার হার বাড়ায়। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে অল্প সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও ছোট পরিবারকে শক্তিশালী করতে পরিবার কল্যাণ কর্মসূচি এবং প্রণোদনার কারণে প্রজনন হার কমে গেছে।
কিন্তু এর পরিণতি কী? উদাহরণস্বরূপ, অন্ধ্রপ্রদেশের কথাই ধরা যাক। এই রাজ্যের জন্মহার ১ দশমিক ৫, যা সুইডেনের সমান। কিন্তু এই রাজ্যের মানুষের মাথাপিছু আয় সুইডেনের চেয়ে ২৮ গুণ কম বলে জানান শ্রীনিবাস গোলি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বাড়তে থাকা ঋণ এবং সীমিত সম্পদ নিয়ে কী এসব রাজ্য দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জনসংখ্যার জন্য উচ্চতর পেনশন বা সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করতে সক্ষম হবে?’
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের ৪০ শতাংশ বৃদ্ধ (৬০ বছরের বেশি বয়সী) গরিবতম শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, জনসংখ্যার ২০ শতাংশই ধনী না। শ্রীনিবাস গোলি বলেন, ‘অন্য কথায় বলতে গেলে, ভারত ধনী হওয়ার আগেই বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
কম সন্তান থাকার মানে হলো—বৃদ্ধ বা অবসরকালে মানুষের নির্ভরশীলতার অনুপাত বাড়ছে। এর ফলে বৃদ্ধরা তাদের সেবাযত্ন করার জন্য কাউকে পাচ্ছেন না। জনসংখ্যাবিদেরা সতর্ক করেছেন, ভারতের স্বাস্থ্যসেবা, কমিউনিটি সেন্টার এবং বৃদ্ধাশ্রমগুলো এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত নয়। নগরায়ণ, অভিবাসন এবং পরিবর্তিত শ্রম বাজার ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক সহায়তাকে আরও কমিয়ে ফেলছে, যার ফলে আরও বেশি বৃদ্ধ মানুষ একা হয়ে পড়ছে। শ্রীনিবাস গোলি বলেন, ‘বৃদ্ধদের যত্ন নেওয়ার জন্য (বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার হার ঠেকাতে) প্রতিরোধ, প্যালিয়েটিভ কেয়ার এবং সামাজিক অবকাঠামোতে শক্তিশালী বিনিয়োগ জরুরি।’
দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলোর উদ্বেগের পাশাপাশি চলতি মাসের শুরুর দিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) তাদের দায়িত্ববান সদস্যদের অন্তত ৩টি সন্তান গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, ‘জনসংখ্যা বিজ্ঞানের মতে, যখন বৃদ্ধি ২ দশমিক ১—এর নিচে চলে আসে, তখন একটি সমাজ নিজেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কেউ সেটি ধ্বংস করে না।’
মোহন ভাগবতের উদ্বেগের কিছু ভিত্তি থাকতে পারে, তবে তিনি যা বলেছেন তা পুরোপুরি সঠিক নয়। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের জনসংখ্যাবিদ টিম ডাইসন বিবিসিকে জানান, ‘খুব কম জন্মহার’ এক থেকে দুই দশক অব্যাহত থাকলে যেকোনো দেশেরই জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাবে। তিনি জানান, কোনো একটি দেশের নারীদের প্রজনন হার ১ দশমিক ৮ হলে জনসংখ্যার ধীরে ও নিয়ন্ত্রণযোগ্যভাবে কমতে থাকে। কিন্তু হার ১ দশমিক ৬ বা তার হলে জনসংখ্যা দ্রুত ও অসংশোধনযোগ্য হারে কমতে থাকে।
ডাইসন বলেন, ‘এটি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়কর। এটি একটি জনসংখ্যাগত প্রক্রিয়া এবং এটি ব্যাপকভাবে পাল্টানো অত্যন্ত কঠিন। কিছু দেশে এটি ইতিমধ্যেই ঘটছে।’
চলতি বছরের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল দেশটির রেকর্ড নিম্ন জন্মহারের কারণে এটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন এবং একটি বিশেষ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। গ্রিসের জন্মহার ১ দশমিক ৩—এ নেমে এসেছে এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস ‘এক অস্তিত্বগত’ হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছেন এটিকে। ডাইসন আরও বলেন, ‘মানুষকে আরও সন্তান জন্ম দিতে উৎসাহিত করার বিষয়টি বৃথা। সামাজিক পরিবর্তনগুলোর কারণে এই প্রবণতা উল্টানো সম্ভব নয়।’
জাতিসংঘের অনুমান অনুযায়ী চীনকে টপকে ভারত বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ। বর্তমানে দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৪৫ কোটি। এই অবস্থায় অনেকেই ভাবতে পারে যে, দেশটিতে বেশি সন্তান জন্ম দেওয়ার আলোচনা কিছুটা স্তিমিত হবে। কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, এই প্রসঙ্গে আলোচনা হঠাৎ করেই বাড়তে শুরু করেছে।
দক্ষিণ ভারতের দুটি রাজ্যের নেতারা—অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু—সম্প্রতি বেশি সন্তান নেওয়ার পক্ষে কথা বলেছেন। অন্ধ্রপ্রদেশ কম প্রজনন হার এবং বয়স্ক জনসংখ্যার কথা উল্লেখ করে প্রণোদনা দেওয়ার কথা ভাবছে। রাজ্যটি ‘দুই-সন্তান নীতি’ বাতিল করেছে এবং প্রতিবেশী তেলেঙ্গানাও একই পথে হাঁটতে পারে বলে জানা যাচ্ছে। পাশের রাজ্য তামিলনাড়ুও একই ধরনের পদক্ষেপ আরও তীব্রভাবে অনুসরণের কথা ভাবছে।
ভারতের প্রজনন হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ১৯৫০ সালে দেশটিতে যেখানে প্রত্যেক নারী গড়ে ৫ দশমিক ৭টি হারে সন্তান জন্ম দিতেন, তা বর্তমানে ২—এ নেমে এসেছে। ভারতের ১৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে প্রজনন হার এমন স্তরের নেমে গেছে যা আগামী কয়েক দশক অব্যাহত থাকলে দেশটির জনসংখ্যা আরও স্থিতিশীল থাকবে না, কমতে শুরু করবে।
ভারতের দক্ষিণের পাঁচটি রাজ্য দেশটির জনসংখ্যার এই পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এসব রাজ্যের প্রজনন হার আগে এমন একটা পর্যায়ে ছিল, যখন জনসংখ্যা সংকোচনের কোনো আশঙ্কা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে এই পাঁচটি দক্ষিণী রাজ্যের গড় প্রজনন হার ১ দশমিক ৬—এর নিচে। কর্ণাটকের প্রজনন হার ১ দশমিক ৬ এবং তামিলনাড়ুর ১ দশমিক ৪। অর্থাৎ, এই রাজ্যগুলোর প্রজনন হার ইউরোপের অনেক দেশের সমান বা তার চেয়েও কম।
এই রাজ্যগুলো আশঙ্কা করছে, ভারতের জনসংখ্যার পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে জনসংখ্যা ভাগাভাগির পরিবর্তন তাদের নির্বাচনী প্রতিনিধিত্ব এবং ফেডারেল রাজস্ব বণ্টনে বড় প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিক জনসংখ্যা বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের জনসংখ্যাতত্ত্বের অধ্যাপক শ্রীনিবাস গোলি বিবিসিকে বলেছেন, ‘উচ্চতর অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতা এবং ফেডারেল রাজস্বে বড় অবদান থাকা সত্ত্বেও কার্যকর জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতির জন্য তারা শাস্তি পাওয়ার ভয় করছে।’
ভারত ২০২৬ সালে প্রথমবারের মতো নির্বাচনী এলাকা পুনর্বিন্যাস (ডিলিমিটেশন) করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এটি দক্ষিণী রাজ্যগুলোর জন্য আরও একটি বড় উদ্বেগের কারণ। এই প্রক্রিয়ায় জনসংখ্যার পরিবর্তন অনুযায়ী নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে। এর ফলে ভারতের পার্লামেন্টে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দক্ষিণী রাজ্যগুলোর সংসদীয় আসন কমে যেতে পারে। যেহেতু ফেডারেল রাজস্ব রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে বরাদ্দ করা হয়, তাই অনেকের আশঙ্কা—এটি তাদের আর্থিক সংগ্রামকে আরও গভীর করবে এবং নীতিনির্ধারণের স্বাধীনতা সীমিত করবে।
জনসংখ্যাতত্ত্ববিদ কেএস জেমস এবং শুভ্রা কৃতি অনুমান করছেন, উত্তর ভারতের জনবহুল রাজ্যগুলো—যেমন: উত্তর প্রদেশ ও বিহার ডিলিমিটেশনের মাধ্যমে আরও বেশি আসন পাবে। বিপরীতে তামিলনাড়ু, কেরালা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মতো দক্ষিণী রাজ্যগুলো আসন হারাতে পারে। ফলে রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের ভারসাম্য আরও বদলে যেতে পারে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অনেকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন, রাজস্ব ভাগাভাগি ও সংসদীয় আসন বণ্টনের ফলে যে পরিবর্তন হবে তা শিগগির কার্যকর হবে না। শ্রীনিবাস গোলি বলেন, ‘একজন জনসংখ্যাবিদ হিসেবে আমি মনে করি না যে, রাজ্যগুলোকে এসব বিষয়ে বাড়তি চিন্তা করতে হবে। এগুলো কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। আমার উদ্বেগ অন্যত্র।’
জনসংখ্যাবিদদের মতে, ভারতের প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো দ্রুত দেশটির মানুষের বয়স্ক হয়ে যাওয়ার হার। আর এটি হতে পেরেছে মূলত দেশটির মানুষের জন্মহার কমে যাওয়ার কারণে। ফ্রান্স-সুইডেনের মতো দেশের বৃদ্ধ জনসংখ্যার পরিমাণ ৭ থেকে ১৪ শতাংশ হতে সময় লেগেছিল যথাক্রমে ১২০ ও ৮০ বছর। তবে ভারতের ক্ষেত্রে এই অবস্থানে যেতে সময় লাগবে আর মাত্র ২৮ বছর বলে জানান শ্রীনিবাস গোলি।
ভারতের নারীদের প্রজনন উর্বরতার হার কমে যাওয়া ও বৃদ্ধ জনসংখ্যা বাড়তে থাকার পেছনে একটি ইতিবাচক বিষয়ও অবশ্য আছে। বেশির ভাগ দেশে জীবনযাত্রার মান, শিক্ষা এবং নগরায়ণ স্বাভাবিকভাবেই জন্মহার কমাতে সহায়ক কারণ এসব বিষয়ে শিশুদের বেঁচে থাকার হার বাড়ায়। কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে অল্প সামাজিক-অর্থনৈতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও ছোট পরিবারকে শক্তিশালী করতে পরিবার কল্যাণ কর্মসূচি এবং প্রণোদনার কারণে প্রজনন হার কমে গেছে।
কিন্তু এর পরিণতি কী? উদাহরণস্বরূপ, অন্ধ্রপ্রদেশের কথাই ধরা যাক। এই রাজ্যের জন্মহার ১ দশমিক ৫, যা সুইডেনের সমান। কিন্তু এই রাজ্যের মানুষের মাথাপিছু আয় সুইডেনের চেয়ে ২৮ গুণ কম বলে জানান শ্রীনিবাস গোলি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘বাড়তে থাকা ঋণ এবং সীমিত সম্পদ নিয়ে কী এসব রাজ্য দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত জনসংখ্যার জন্য উচ্চতর পেনশন বা সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করতে সক্ষম হবে?’
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতের ৪০ শতাংশ বৃদ্ধ (৬০ বছরের বেশি বয়সী) গরিবতম শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ, জনসংখ্যার ২০ শতাংশই ধনী না। শ্রীনিবাস গোলি বলেন, ‘অন্য কথায় বলতে গেলে, ভারত ধনী হওয়ার আগেই বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
কম সন্তান থাকার মানে হলো—বৃদ্ধ বা অবসরকালে মানুষের নির্ভরশীলতার অনুপাত বাড়ছে। এর ফলে বৃদ্ধরা তাদের সেবাযত্ন করার জন্য কাউকে পাচ্ছেন না। জনসংখ্যাবিদেরা সতর্ক করেছেন, ভারতের স্বাস্থ্যসেবা, কমিউনিটি সেন্টার এবং বৃদ্ধাশ্রমগুলো এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত নয়। নগরায়ণ, অভিবাসন এবং পরিবর্তিত শ্রম বাজার ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক সহায়তাকে আরও কমিয়ে ফেলছে, যার ফলে আরও বেশি বৃদ্ধ মানুষ একা হয়ে পড়ছে। শ্রীনিবাস গোলি বলেন, ‘বৃদ্ধদের যত্ন নেওয়ার জন্য (বৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার হার ঠেকাতে) প্রতিরোধ, প্যালিয়েটিভ কেয়ার এবং সামাজিক অবকাঠামোতে শক্তিশালী বিনিয়োগ জরুরি।’
দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলোর উদ্বেগের পাশাপাশি চলতি মাসের শুরুর দিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) তাদের দায়িত্ববান সদস্যদের অন্তত ৩টি সন্তান গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত বলেছেন, ‘জনসংখ্যা বিজ্ঞানের মতে, যখন বৃদ্ধি ২ দশমিক ১—এর নিচে চলে আসে, তখন একটি সমাজ নিজেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। কেউ সেটি ধ্বংস করে না।’
মোহন ভাগবতের উদ্বেগের কিছু ভিত্তি থাকতে পারে, তবে তিনি যা বলেছেন তা পুরোপুরি সঠিক নয়। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের জনসংখ্যাবিদ টিম ডাইসন বিবিসিকে জানান, ‘খুব কম জন্মহার’ এক থেকে দুই দশক অব্যাহত থাকলে যেকোনো দেশেরই জনসংখ্যা দ্রুত কমে যাবে। তিনি জানান, কোনো একটি দেশের নারীদের প্রজনন হার ১ দশমিক ৮ হলে জনসংখ্যার ধীরে ও নিয়ন্ত্রণযোগ্যভাবে কমতে থাকে। কিন্তু হার ১ দশমিক ৬ বা তার হলে জনসংখ্যা দ্রুত ও অসংশোধনযোগ্য হারে কমতে থাকে।
ডাইসন বলেন, ‘এটি সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়কর। এটি একটি জনসংখ্যাগত প্রক্রিয়া এবং এটি ব্যাপকভাবে পাল্টানো অত্যন্ত কঠিন। কিছু দেশে এটি ইতিমধ্যেই ঘটছে।’
চলতি বছরের মে মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইয়ুন সুক ইওল দেশটির রেকর্ড নিম্ন জন্মহারের কারণে এটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন এবং একটি বিশেষ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেন। গ্রিসের জন্মহার ১ দশমিক ৩—এ নেমে এসেছে এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস ‘এক অস্তিত্বগত’ হুমকি বলে আখ্যা দিয়েছেন এটিকে। ডাইসন আরও বলেন, ‘মানুষকে আরও সন্তান জন্ম দিতে উৎসাহিত করার বিষয়টি বৃথা। সামাজিক পরিবর্তনগুলোর কারণে এই প্রবণতা উল্টানো সম্ভব নয়।’
যদিও রাশিয়া ও চীন শেখ হাসিনার সমর্থক ছিল, তবে বাংলাদেশিরা ভারত সরকারকে সবচেয়ে বেশি দায়ী মনে করে। অন্যদের তুলনায় ভারতকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সবচেয়ে সক্রিয় হস্তক্ষেপকারী এবং শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের নির্লজ্জ রক্ষাকর্তা হিসেবে দেখা হয়...
৮ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশি হিন্দুরা প্রকৃতপক্ষে কতটা সহিংসতার শিকার হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে জানা কঠিন। এই সোশ্যাল মিডিয়া এবং ভুয়া খবরের যুগে প্রতিটি খবরকেই সন্দেহের চোখে দেখা উচিত। ‘গণহত্যা’ শব্দটি অবশ্যই অত্যন্ত শক্তিশালী একটি দাবি। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে অধ্যয়নকারী হিসেবে আমি বলতে পারি যে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে যা পড়
১ দিন আগেবিগত ৭৫ বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য সহজ শর্তে ঋণের অন্যতম প্রধান উৎস হয়ে আছে বিশ্বব্যাংক। বৈশ্বিক এই আর্থিক সংস্থার সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) প্রতিবছর বিশ্বের ৭৮টি দেশে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার ঋণ বিতরণ করে থাকে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা গত ৬ ডিসেম্ব
১ দিন আগেবাংলাদেশের হিন্দুদের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায় প্রথম প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে হিন্দু জাগরণ মঞ্চ। এই ইস্যুতে ভারতের প্রতিবাদকারী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে হিন্দু জাগরণ মঞ্চই ছিল প্রথম। ৮ আগস্ট ড. ইউনূস শপথ নেওয়ার আগেই এই প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে সংগঠনটি। কিন্তু বাংলাদেশে...
২ দিন আগে