অনলাইন ডেস্ক
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয়পতাকা উড়েছে। দলটি ছয়টি রাজ্যের সব আসনেই জিতেছিল। কিন্তু মাত্র একটি করে আসন পেয়েছিল তিনটি রাজ্যে এবং মাত্র দুটি করে আসন পেয়েছিল দুটি রাজ্যে। তবে এবারের নির্বাচনের চিত্রটি ভিন্ন। বিজেপির তরি এক ধাঁধায় পড়ে গেছে এবং মনে হচ্ছে, এতে অনেকগুলো ফুটো থাকায় তা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতেও আছে।
ভারতীয় লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। মনে হচ্ছে, বিজেপির প্রতি প্রত্যাশার যে চিত্র ছিল, তা উল্টে গেছে। আত্মতৃপ্ত পণ্ডিতেরা অনেক আগেই উপসংহারে পৌঁছেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল বিজেপি স্বাচ্ছন্দ্যে জিতবে। কিন্তু সাত ধাপের নির্বাচনের পর পরিস্থিতি আর তেমনটা অনুকূলে মনে হচ্ছে না।
ভারতের স্বায়ত্তশাসিত নির্বাচন কমিশন ভোটের সাতটি ধাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বুথফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ নিষিদ্ধ করেছে। অবশ্য ১ জুন শেষ ধাপের ভোট গ্রহণ হয়ে যাওয়ার পর বুথফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা যাবে। তবে ফল প্রকাশ মাত্র তিন দিন দূরে। যা–ই হোক, ভোট দেওয়ার পর ভোটাররা যে অনুভূতি প্রকাশ করছেন তা দৃঢ়ভাবে নির্দেশ করে যে নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিজেপির অনুকূলে যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, জনসাধারণ বিজেপিকে তৃতীয়বার ভোট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ খুঁজে পাননি।
২০১৪ সালে মোদিকে যাঁরা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিলেন এই আশায়, তিনি তাঁদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবেন, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় তাঁরা আবারও মোদিকে ভোট দেওয়ার কোনো কারণই খুঁজে পাননি। তাঁর শাসনামলে বেকারত্ব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে গেছে, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বেকারত্বের হার কিছুটা কমেছে। কিন্তু এটি বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে বেকারত্ব নিয়ে সরকারি যে ডেটা দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবতার চেয়ে অনেক কম। অধিকন্তু, অন্তত ৮০ শতাংশ ভারতীয়ই দেখতে পেয়েছেন, ২০১৪ সালের পর থেকে তাঁদের আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। একই সঙ্গে, তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা ও গৃহস্থালি সঞ্চয়ে ব্যাপক ধস নেমেছে। অনেক নাগরিকের অভিযোগ, সরকার তাঁদের কল্যাণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তবে এটি স্বীকার করতে হয়, মোদি নিজে এখনো অনেক জনপ্রিয়। এ ক্ষেত্রে তিনি কঠোর শ্রম দিয়ে তাঁর যে কাল্ট ইমেজ তৈরি করেছেন, সেটিকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। কিন্তু তাঁর দলের অন্য প্রার্থীদের ভোটাররা অবজ্ঞার চোখে না দেখলেও উপেক্ষার চোখে দেখছেন—সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর মোদির হাবভাব থেকেই এ বিষয়ক অস্থিরতা স্পষ্ট ফুটে উঠছে। বিশেষ করে, আগে তিনি রাখঢাক করে মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে খোলাখুলি এসব বিষয়ে কথা বলছেন।
মোদি তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ জাতীয় কংগ্রেসের ওপরও আক্রমণ চালিয়েছেন তীব্র ভাষায়। তিনি দাবি করেছেন, কংগ্রেসের ইশতেহারে ‘মুসলিম লীগের ছাপ’ আছে। এমনকি তিনি গত মাসে এক প্রচার সভায় বলেছিলেন, কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার হিন্দুদের বেসরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করবে।
কংগ্রেসের ইশতেহারে যা আছে, সেটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন না করা হলে এতে কোথাও ‘মুসলিম’ বা ‘পুনর্বণ্টন’ শব্দটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরং উল্টো মোদি মুসলমানদের প্রতি আরও তীব্র আক্রমণ শাণিয়ে মুসলিমদের ‘ভারতীয়’ উল্লেখ না করে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলছেন এবং বলছেন, ‘মুসলিমরা বেশি বেশি সন্তান নেয়।’ এ ধরনের চরম গা জ্বালানো বক্তব্যের মাধ্যমে মোদি তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্বকে অবজ্ঞা করেছেন এবং যেখানে তাঁর দেশের সব মানুষের সেবা করার কথা সেখানে তিনি প্রকাশ্যে ২০ কোটি মানুষের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করেছেন।
বিজেপির অন্য নেতারাও তাঁর মতো ভীত–সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন এবং তাঁরা ক্রমেই সেই হতাশাই প্রকাশ করছেন। যেমন, সেই ভয় থেকেই বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন, বিজেপি পরাজিত হলে ভারতে শরিয়া আইন চালু হবে।
এ ধরনের চরম বয়ান বিজেপির কাছ থেকে আসাটা আশ্চর্যের বিষয় নয়। ধর্মের ভিত্তিতে ভোটারদের মেরুকরণের চেষ্টা বিজেপির একটি পরীক্ষিত কৌশল। এ বিষয়ে তাদের পক্ষের যুক্তিটি খুবই সহজ। যদি মুসলমানদের দানব হিসেবে হাজির করার মাধ্যমে ভারতের হিন্দুদের অর্ধেককেও (যারা ভারতের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ) বিজেপির পক্ষে টানা যায় তাহলে জাতীয় নির্বাচনে আরও একটি বিজয় নিশ্চিত।
কিন্তু এই কৌশলও ফুলপ্রুফ বা নিশ্ছিদ্র নয়। তাই বিজেপি এই কৌশলের সঙ্গে অন্যান্য কৌশলও কাজে লাগাচ্ছে। যেমন—নির্বাচনের আগে তারা বিরোধী দলগুলোর একটি বড় সংখ্যক নেতাকে দলে ভিড়িয়েছে। এটা করতে গিয়ে বিজেপি সরকার তাদের কখনো কখনো দুর্নীতির মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে, এমনকি কয়েকজনকে ফাঁসিয়েছেও। তবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে! বিজেপি যেন ‘ওয়াশিং মেশিন’ যেখানে কালিমালিপ্ত রাজনীতিবিদদের গায়ের কলঙ্ক দূর করা হয়। কিন্তু বিজেপির এই কৌশল জাতীয় তামাশায় পরিণত হয়েছে।
আরেকটি কৌশলের অংশ হিসেবে বিজেপি অনেকগুলো বিরোধী দলের সঙ্গে জোট গড়ারও চেষ্টা করেছে। তার মধ্যে একটি হলো অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টি। কয়েক বছর আগেই এই দলটি লোকসভায় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল এবং দলটির নেতারা মোদির কড়া সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বিজেপি এবং মোদি সব যেন ভুলে গেছেন, তেলেগু দেশমের সব পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন।
তেলেগু দেশম তো বটেই বিজেপি প্রকাশ্যে আরও দুটি দলের সমর্থন কেনার চেষ্টা করেছে। একটি হলো ওডিশার বিজু জনতা দল এবং অপরটি পাঞ্জাবের আকালি দল। এর আগেও এই দল দুটি বিজেপির নেতৃত্বে জোট ত্যাগ করে বের হয়ে এসেছিল। এবারও বিজেপি ব্যর্থ হয়েছে এবং উভয় দলই বিজেপির আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
দলগুলোকে নিজের পক্ষপুটে আনতে গিয়ে সোজা আঙুলে ঘি না ওঠায় বিজেপি হুমকি–ধমকির আশ্রয় নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে দিল্লি ও পাঞ্জাবে ক্ষমতায় থাকা আম আদমি পার্টির কথাই ধরা যাক। দলটির প্রধান ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বিজেপি সরকার মাঝরাতে গ্রেপ্তার করে কারাগারে টেনে নিয়েছে তদন্তের নামে। কেবল তা–ই নয়, কেজরিওয়ালের সহযোগী ও দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকে বিজেপি সরকার দুর্নীতির মামলায় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে বন্দী রেখেছে। তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
হুমকি–ধমকির অংশ হিসেবে বিজেপি সরকার নির্বাচনী প্রচারের ঠিক আগে আগে কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। এমনকি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর হেলিকপ্টারে তল্লাশি চালানো হয়েছে অবৈধ চোরাইমাল থাকার অভিযোগ তুলে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ব্যাপক জনসমর্থিত আত্মবিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের হতে পারে না। বরং এগুলো এমন এক দলের কর্মকাণ্ড যারা ভয়ে আছে, ক্ষমতার লাগাম যেকোনো সময় হাতের মুঠো থেকে বের হয়ে যেতে পারে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির জয়পতাকা উড়েছে। দলটি ছয়টি রাজ্যের সবগুলো আসনেই জিতেছিল। কিন্তু মাত্র একটি করে আসন পেয়েছিল তিনটি রাজ্যে এবং মাত্র দুটি করে আসন পেয়েছিল দুটি রাজ্যে। চলতি নির্বাচনে এসব রাজ্যে বিজেপির সামনে এখন একটি পথই খোলা আছে, তা হলো—পতন। এমনকি মাত্র ৩২টি আসন থাকা এসব রাজ্যের প্রতিটিতে যদি মাত্র কয়েকটি আসনও হারায়, তবে বিজেপি লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে।
এমনটা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি বহরেও ওপর হামলার ফল ঘরে তুলেছিল বিজেপি। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জইশ–ই–মোহাম্মদ এই হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ভোটারদের মন ঘোরানোর জন্য এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর তাই বিজেপি গতবারের নির্বাচনের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটনাতে পারবে এমন আশা না করাই ভালো।
জনগণ বিজেপির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে মোহে আর পড়তে চায় না এবং সব মিলিয়ে বিরোধীরাও নতুন আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে। পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বাতাসে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয়পতাকা উড়েছে। দলটি ছয়টি রাজ্যের সব আসনেই জিতেছিল। কিন্তু মাত্র একটি করে আসন পেয়েছিল তিনটি রাজ্যে এবং মাত্র দুটি করে আসন পেয়েছিল দুটি রাজ্যে। তবে এবারের নির্বাচনের চিত্রটি ভিন্ন। বিজেপির তরি এক ধাঁধায় পড়ে গেছে এবং মনে হচ্ছে, এতে অনেকগুলো ফুটো থাকায় তা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতেও আছে।
ভারতীয় লোকসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। মনে হচ্ছে, বিজেপির প্রতি প্রত্যাশার যে চিত্র ছিল, তা উল্টে গেছে। আত্মতৃপ্ত পণ্ডিতেরা অনেক আগেই উপসংহারে পৌঁছেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর দল বিজেপি স্বাচ্ছন্দ্যে জিতবে। কিন্তু সাত ধাপের নির্বাচনের পর পরিস্থিতি আর তেমনটা অনুকূলে মনে হচ্ছে না।
ভারতের স্বায়ত্তশাসিত নির্বাচন কমিশন ভোটের সাতটি ধাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বুথফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ নিষিদ্ধ করেছে। অবশ্য ১ জুন শেষ ধাপের ভোট গ্রহণ হয়ে যাওয়ার পর বুথফেরত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা যাবে। তবে ফল প্রকাশ মাত্র তিন দিন দূরে। যা–ই হোক, ভোট দেওয়ার পর ভোটাররা যে অনুভূতি প্রকাশ করছেন তা দৃঢ়ভাবে নির্দেশ করে যে নির্বাচন–সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিজেপির অনুকূলে যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে, জনসাধারণ বিজেপিকে তৃতীয়বার ভোট দেওয়ার জন্য যথেষ্ট কারণ খুঁজে পাননি।
২০১৪ সালে মোদিকে যাঁরা ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিলেন এই আশায়, তিনি তাঁদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবেন, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় তাঁরা আবারও মোদিকে ভোট দেওয়ার কোনো কারণই খুঁজে পাননি। তাঁর শাসনামলে বেকারত্ব উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে গেছে, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বেকারত্বের হার কিছুটা কমেছে। কিন্তু এটি বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে যে বেকারত্ব নিয়ে সরকারি যে ডেটা দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবতার চেয়ে অনেক কম। অধিকন্তু, অন্তত ৮০ শতাংশ ভারতীয়ই দেখতে পেয়েছেন, ২০১৪ সালের পর থেকে তাঁদের আয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। একই সঙ্গে, তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা ও গৃহস্থালি সঞ্চয়ে ব্যাপক ধস নেমেছে। অনেক নাগরিকের অভিযোগ, সরকার তাঁদের কল্যাণে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তবে এটি স্বীকার করতে হয়, মোদি নিজে এখনো অনেক জনপ্রিয়। এ ক্ষেত্রে তিনি কঠোর শ্রম দিয়ে তাঁর যে কাল্ট ইমেজ তৈরি করেছেন, সেটিকে ধন্যবাদ দিতেই হয়। কিন্তু তাঁর দলের অন্য প্রার্থীদের ভোটাররা অবজ্ঞার চোখে না দেখলেও উপেক্ষার চোখে দেখছেন—সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আর মোদির হাবভাব থেকেই এ বিষয়ক অস্থিরতা স্পষ্ট ফুটে উঠছে। বিশেষ করে, আগে তিনি রাখঢাক করে মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্য দিলেও সাম্প্রতিক সময়ে খোলাখুলি এসব বিষয়ে কথা বলছেন।
মোদি তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ জাতীয় কংগ্রেসের ওপরও আক্রমণ চালিয়েছেন তীব্র ভাষায়। তিনি দাবি করেছেন, কংগ্রেসের ইশতেহারে ‘মুসলিম লীগের ছাপ’ আছে। এমনকি তিনি গত মাসে এক প্রচার সভায় বলেছিলেন, কংগ্রেসের নেতৃত্বে সরকার হিন্দুদের বেসরকারি ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে পুনর্বণ্টন করবে।
কংগ্রেসের ইশতেহারে যা আছে, সেটিকে ভুলভাবে উপস্থাপন না করা হলে এতে কোথাও ‘মুসলিম’ বা ‘পুনর্বণ্টন’ শব্দটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। বরং উল্টো মোদি মুসলমানদের প্রতি আরও তীব্র আক্রমণ শাণিয়ে মুসলিমদের ‘ভারতীয়’ উল্লেখ না করে ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলছেন এবং বলছেন, ‘মুসলিমরা বেশি বেশি সন্তান নেয়।’ এ ধরনের চরম গা জ্বালানো বক্তব্যের মাধ্যমে মোদি তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের দায়িত্বকে অবজ্ঞা করেছেন এবং যেখানে তাঁর দেশের সব মানুষের সেবা করার কথা সেখানে তিনি প্রকাশ্যে ২০ কোটি মানুষের প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করেছেন।
বিজেপির অন্য নেতারাও তাঁর মতো ভীত–সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন এবং তাঁরা ক্রমেই সেই হতাশাই প্রকাশ করছেন। যেমন, সেই ভয় থেকেই বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ঘোষণা করেছেন, বিজেপি পরাজিত হলে ভারতে শরিয়া আইন চালু হবে।
এ ধরনের চরম বয়ান বিজেপির কাছ থেকে আসাটা আশ্চর্যের বিষয় নয়। ধর্মের ভিত্তিতে ভোটারদের মেরুকরণের চেষ্টা বিজেপির একটি পরীক্ষিত কৌশল। এ বিষয়ে তাদের পক্ষের যুক্তিটি খুবই সহজ। যদি মুসলমানদের দানব হিসেবে হাজির করার মাধ্যমে ভারতের হিন্দুদের অর্ধেককেও (যারা ভারতের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ) বিজেপির পক্ষে টানা যায় তাহলে জাতীয় নির্বাচনে আরও একটি বিজয় নিশ্চিত।
কিন্তু এই কৌশলও ফুলপ্রুফ বা নিশ্ছিদ্র নয়। তাই বিজেপি এই কৌশলের সঙ্গে অন্যান্য কৌশলও কাজে লাগাচ্ছে। যেমন—নির্বাচনের আগে তারা বিরোধী দলগুলোর একটি বড় সংখ্যক নেতাকে দলে ভিড়িয়েছে। এটা করতে গিয়ে বিজেপি সরকার তাদের কখনো কখনো দুর্নীতির মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়েছে, এমনকি কয়েকজনকে ফাঁসিয়েছেও। তবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তাঁদের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে! বিজেপি যেন ‘ওয়াশিং মেশিন’ যেখানে কালিমালিপ্ত রাজনীতিবিদদের গায়ের কলঙ্ক দূর করা হয়। কিন্তু বিজেপির এই কৌশল জাতীয় তামাশায় পরিণত হয়েছে।
আরেকটি কৌশলের অংশ হিসেবে বিজেপি অনেকগুলো বিরোধী দলের সঙ্গে জোট গড়ারও চেষ্টা করেছে। তার মধ্যে একটি হলো অন্ধ্র প্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টি। কয়েক বছর আগেই এই দলটি লোকসভায় বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল এবং দলটির নেতারা মোদির কড়া সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ বিজেপি এবং মোদি সব যেন ভুলে গেছেন, তেলেগু দেশমের সব পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন।
তেলেগু দেশম তো বটেই বিজেপি প্রকাশ্যে আরও দুটি দলের সমর্থন কেনার চেষ্টা করেছে। একটি হলো ওডিশার বিজু জনতা দল এবং অপরটি পাঞ্জাবের আকালি দল। এর আগেও এই দল দুটি বিজেপির নেতৃত্বে জোট ত্যাগ করে বের হয়ে এসেছিল। এবারও বিজেপি ব্যর্থ হয়েছে এবং উভয় দলই বিজেপির আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
দলগুলোকে নিজের পক্ষপুটে আনতে গিয়ে সোজা আঙুলে ঘি না ওঠায় বিজেপি হুমকি–ধমকির আশ্রয় নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে দিল্লি ও পাঞ্জাবে ক্ষমতায় থাকা আম আদমি পার্টির কথাই ধরা যাক। দলটির প্রধান ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বিজেপি সরকার মাঝরাতে গ্রেপ্তার করে কারাগারে টেনে নিয়েছে তদন্তের নামে। কেবল তা–ই নয়, কেজরিওয়ালের সহযোগী ও দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকে বিজেপি সরকার দুর্নীতির মামলায় বছরেরও বেশি সময় ধরে বিনা বিচারে বন্দী রেখেছে। তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।
হুমকি–ধমকির অংশ হিসেবে বিজেপি সরকার নির্বাচনী প্রচারের ঠিক আগে আগে কংগ্রেসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। এমনকি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর হেলিকপ্টারে তল্লাশি চালানো হয়েছে অবৈধ চোরাইমাল থাকার অভিযোগ তুলে। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ব্যাপক জনসমর্থিত আত্মবিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের হতে পারে না। বরং এগুলো এমন এক দলের কর্মকাণ্ড যারা ভয়ে আছে, ক্ষমতার লাগাম যেকোনো সময় হাতের মুঠো থেকে বের হয়ে যেতে পারে।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির জয়পতাকা উড়েছে। দলটি ছয়টি রাজ্যের সবগুলো আসনেই জিতেছিল। কিন্তু মাত্র একটি করে আসন পেয়েছিল তিনটি রাজ্যে এবং মাত্র দুটি করে আসন পেয়েছিল দুটি রাজ্যে। চলতি নির্বাচনে এসব রাজ্যে বিজেপির সামনে এখন একটি পথই খোলা আছে, তা হলো—পতন। এমনকি মাত্র ৩২টি আসন থাকা এসব রাজ্যের প্রতিটিতে যদি মাত্র কয়েকটি আসনও হারায়, তবে বিজেপি লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে।
এমনটা হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে। ২০১৯ সালের নির্বাচনের ঠিক আগে কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি বহরেও ওপর হামলার ফল ঘরে তুলেছিল বিজেপি। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পাকিস্তানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জইশ–ই–মোহাম্মদ এই হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু এবারের নির্বাচনে ভোটারদের মন ঘোরানোর জন্য এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর তাই বিজেপি গতবারের নির্বাচনের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটনাতে পারবে এমন আশা না করাই ভালো।
জনগণ বিজেপির প্রতিশ্রুতি ভঙ্গে মোহে আর পড়তে চায় না এবং সব মিলিয়ে বিরোধীরাও নতুন আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছে। পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে বাতাসে।
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৯ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১৭ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে