অনলাইন ডেস্ক
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের নীরব দর্শক ও অজনপ্রিয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের হাতে ফিলিস্তিনের ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৮৮ বছর বয়সী এই পৌঢ়ই এখন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ভরসা। তিনি এই সংঘাতকে শান্তির প্রান্তরে নিয়ে আসবেন—এমন আস্থা থেকেই শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিম তীর সফর করেছেন।
১৯৯৩ সালের ইসরায়েলের সঙ্গে অসলো শান্তিচুক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই আব্বাস। ওই চুক্তি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আশা জাগিয়েছিল। তবে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে। কেউ কেউ তাঁর বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। অনেক ফিলিস্তিনি এখন তাঁর প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত, অগণতান্ত্রিক এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে মনে করে।২০০৫ সাল থেকে যেটি আব্বাস পরিচালনা করেছেন
তবে ইসরায়েলের ওপর হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি দেখতে চান পুনরুজ্জীবিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, গাজায় সংঘাত শেষ ফিলিস্তিনকে একত্র করে দায়িত্ব দিতে চান এই কর্তৃপক্ষরই হাতে।
বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত শুক্রবার আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের জন্য ফিলিস্তিন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বশেষ মুখ্য মার্কিন কর্মকর্তা হয়ে উঠেছেন সুলিভান। এর আগে সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত নভেম্বরের শেষ দিকে ফিলিস্তিনি এই নেতার সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সুশীল সমাজের ক্ষমতায়ন এবং একটি মুক্ত সংবাদপত্রকে সমর্থনের জন্য সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিন ফিলিস্তিনি এবং একজন জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক কর্মকর্তা কথোপকথনের বিষয়ে ব্রিফ করে বলেছেন, রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে আব্বাস কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের বিষয়ে ওয়াশিংটন প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারে।
ফিলিস্তিনি ও আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবের অধীনে আব্বাস একজন ডেপুটি নিয়োগ করতে পারেন, তাঁর প্রেসিডেন্টর কাছে বৃহত্তর নির্বাহী ক্ষমতা তুলে দিতে পারেন এবং সংগঠনের নেতৃত্বে নতুন মুখ আনতে পারেন। এই ক্ষেত্রে যুক্তররাষ্ট্র ও ইসরায়েল- দুই দেশেরই পছন্দের পিএলওর শীর্ষ নেতা হুসেইন আল শেখকে বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
এবিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তর দেয়নি হোয়াইট হাউস। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, নেতৃত্বের পছন্দ ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি প্রশ্ন ছিল। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি।
রামাল্লায় রয়টার্সের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে আব্বাস বলেছিলেন, তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নতুন নেতাদের নিয়ে পুনর্গঠন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত। ২০০৬ সালে হামাস সর্বশেষ ভোটে জয়লাভ করার পর থেকে গাজা থেকে একপ্রকার নির্বাসিত পিএ একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তির কথা বলেছে, যা একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দিকে পরিচালিত করবে।
যদিও এখনো ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর উগ্র ডানপন্থী জোট ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অস্বীকার করেছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রস্তাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আব্বাস সাক্ষাৎকারে রয়টার্সকে বলেছিলেন, সমস্যাটি ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদদের পরিবর্তন এবং একটি নতুন সরকার গঠন করা নয়, সমস্যাটি ইসরায়েলি সরকারের নীতি।
যদিও আব্বাস মেনে নিতে পারেন যে তাঁর দীর্ঘ শাসনের সমাপ্তি ঘটছে, তিনি এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান কৌশলগত মিত্র। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রকেই গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমকে নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নেতানিয়াহুর সরকারকে চাপ দিতে হবে।
বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত ওয়াশিংটনের এক ব্যক্তির মতে, আব্বাস ব্যক্তিগতভাবে পিএর সংস্কারের জন্য কিছু মার্কিন প্রস্তাবের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন, যেগুলোর মধ্যে টেকনোক্র্যাট দক্ষতার সঙ্গে ‘নতুন মুখ’ আনা এবং প্রেসিডেন্টর কার্যালয়কে নতুন নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া।
যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, তাঁরা আব্বাসের কাছে কোনো নাম প্রস্তাব করেননি। আঞ্চলিক সূত্র এবং কূটনীতিকেরা বলছেন, ওয়াশিংটন ও ইসরায়েলের কেউ কেউ ঊর্ধ্বতন পিএলও কর্মকর্তা হোসেইন আল-শেখকে সম্ভাব্য ডেপুটি এবং ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে সমর্থন করেন।
দুই প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ চারটি মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, আব্বাসকে জরুরি ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য রাজি করাতে ওয়াশিংটন জর্ডান, মিসর এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে আবেদন করেছে। তবে জর্ডান, মিসর, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি।
মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, আব্বাস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রশাসন সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই বললেই চলে। তাই সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা আবারও আব্বাসের সংস্কারের মনোভাব পরীক্ষার জন্য চাপ দিতে থাকবেন এবং অপেক্ষা করবেন, তিনি কী করেন তা দেখার জন্য।
মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অজনপ্রিয় এবং ইসরায়েলের বিশ্বাসভাজন না হওয়া সত্ত্বেও আব্বাসই আপাতত একমাত্র বাস্তববাদী ফিলিস্তিনি নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, বাইডেনের সহযোগীরা গোপনে ইসরায়েলি নেতাদের পিএর বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিরোধী আচরণ বন্ধের জন্য অনুরোধ করেছেন। একবার পিএ পুনরুজ্জীবিত হলে গাজা-পরবর্তী সংঘর্ষে অগ্রণী ভূমিকা নেবে।
মার্কিন সূত্রের অন্য একজন বলেছেন, ‘শহরে অন্য কিছু নিয়েই এত ব্যতিব্যস্ততা নেই, যতটা এখন পিএ নিয়ে।’ মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, স্বল্প মেয়াদে ইসরায়েলকে পিএতে আরও ট্যাক্স স্থানান্তরের সুযোগ দিতে হবে, যা ৭ অক্টোবরের পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ রয়েছে, যাতে এটি বেতন দিতে পারে।
গোঁয়ার গোবিন্দ ইসরায়েল
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা গত কয়েক সপ্তাহে বেড়েছে। তবে ফিলিস্তিনি এবং মার্কিন কূটনৈতিক সূত্রে আব্বাসের কাছে কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়নি।
ফিলিস্তিনে নারী-শিশু নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সারা বিশ্বে ইসরায়েলি আগ্রাসনের আন্তর্জাতিক নিন্দা বেড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ১৯ হাজার নিরপরাধ গাজাবাসী নিহত হয়েছেন। এরপরও নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত, জিম্মিদের মুক্তির আগপর্যন্ত এবং ইসরায়েল ভবিষ্যতের আক্রমণ থেকে নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।
দুই মাসের বেশি সময় আগে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় আগ্রাসন শুরু করে। গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণকে নমনীয় করতে গত বৃহস্পতিবার সুলিভান নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলকে বলছে, যুদ্ধের পরে পিএ নিরাপত্তা বাহিনীকে অবশ্যই গাজায় উপস্থিতি থাকতে হবে, যেমন তাঁরা এরই মধ্যে পশ্চিম তীরের কিছু অংশে করেছে।
নেতানিয়াহু গত মঙ্গলবার বলেছেন, গাজায় পিএর শাসন নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য রয়েছে। গাজা কোনো হামাস-স্তান বা ফাতাহ-স্তান হবে না।
১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পরে প্রতিষ্ঠিত আব্বাসের ফাতাহ পার্টি নিয়ন্ত্রিত পিএ একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন হিসেবে দেখানো হয়েছিল। এরপর ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্বাধীনতা না এলেও আব্বাস পিএ পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, আব্বাসের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কিছু বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি তিনি দুর্নীতির মূলোৎপাটন করেন, নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বের সুযোগ দেন, যুদ্ধের পরে গাজা পুনর্গঠনে বিদেশি সাহায্য নেন এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য বিদেশে সমর্থন তৈরি করতে পারেন।
রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আব্বাস ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের চূড়ান্ত পদক্ষেপে সম্মত হওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান। ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ কর্তৃক ডাকা ১৯৯১ সালের মাদ্রিদ শীর্ষ সম্মেলনের মডেলে এটি হতে পারে।
একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, সম্মেলনের ধারণাটি অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, তবে প্রস্তাবটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
আব্বাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতা বিশ্বাস করেন, গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমকে ঘিরে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলকে আরও কঠোরভাবে চাপ দিতে হবে।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, এটাই একমাত্র শক্তি যে ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং তাঁর দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিতে পারে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা করে না।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাতায়েহ নিরাপত্তা পরিষদের ভোট, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ এবং বসতি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলের ওপর সত্যিকারের চাপ প্রয়োগের জন্য ওয়াশিংটনকে আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্লিঙ্কেন এই মাসে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার জন্য দায়ী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছেন। এরপরও মার্কিন সরকার জাতিসংঘে ইসরায়েলের কট্টর রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছে। মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বাইডেন সাম্প্রতিক সপ্তাহে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিয়েছেন।
নখ-দন্তহীন এক কর্তৃপক্ষ
জেরুজালেমের একজন মধ্যপন্থী ফিলিস্তিনি ও আল কুদস ইউনিভার্সিটির সাবেক সভাপতি সারি নুসিবেহ বলেছেন, ক্ষমতার ওপর পিএর একচেটিয়া আধিপত্য সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে। এটি মূলত বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের দখলদারির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সায় না দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
দর্শনের অধ্যাপক নুসিবেহ বলেন, ‘সমস্যা শুধু আব্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; কারণ, আব্বাস যদি চলে যায়, তাহলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত যে-ই হোক, কিছুই করতে পারবে না।’
এমনকি পশ্চিম তীরে পিএ এখন অজনপ্রিয়; কারণ, এটিকে ইসরায়েলি দখলদারির দালাল হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসরায়েলি বাহিনী প্রায়ই রামাল্লাসহ পিএ শাসনাধীন এলাকায় অভিযান চালায়।
গত বুধবার প্রকাশিত ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং আব্বাস অজনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। এমনকি হামাস বর্তমানে ফিলিস্তিনের যেকোনো অঞ্চলে নির্বাচনে জয়ী হতে পারে।
মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফিলিস্তিনে নির্বাচন অনুষ্ঠান সঠিক হবে না। মার্কিন কর্মকর্তাদের ২০০৬ সালের আইনসভা নির্বাচনে হামাসের বিজয়ের কথা ভালোভাবেই মনে আছে। ওই নির্বাচনের সময় ওয়াশিংটন এবং অন্যান্য পশ্চিমা সরকার হামাসের জয়ে বেশ উচ্ছ্বাস দেখিয়েছিল। তাই যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অবশ্যই হামাসকে বাদ দিতে হবে।
পশ্চিম তীরে ক্রমবর্ধমানভাবে ইসরায়েলি বসতি এবং নিরাপত্তা চেকপয়েন্টগুলো সম্প্রসারিত হচ্ছে, যা ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন চলাফেরা কঠিন করে তুলছে। অনেকেই হিংসাত্মক হামলা বৃদ্ধির অভিযোগ করেছেন। গত দুই মাসে ইসরায়েলিরা পশ্চিম তীরে অন্তত ২৮৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম উঠে আসা স্বতন্ত্র ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ ড. মোস্তফা বারঘৌতি বলেছেন, এটি কর্তৃত্বহীন এক কর্তৃত্ব। পিএ নিজে রাজস্ব বা নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করে না। এটি ইসরায়েলি দখলদারির অবসানে কিছুই করে না, অভ্যন্তরীণ সংস্কারও নয়, যা ফিলিস্তিনি নেতৃত্বকে বৈধতা দেবে।
বারঘৌতি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি দখলদারির দালালি করা কোনো ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষই টিকতে পারবে না। তারা অসম্মানিত এবং অবৈধ হবে বলে গণ্য হবে।’
কিছু ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, পিএ কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারের জন্য গাজা এবং পশ্চিম তীরে জাতীয় ঐক্য প্রশাসনের ভিত্তি প্রসারিত করতে হবে, এর মধ্যে অবশ্যই হামাস অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াশিংটন হামাস নেতাদের যেকোনো ভূমিকার বিরুদ্ধে অনড়, এমনকি জুনিয়র পার্টনার হিসেবেও। তাঁরা আরও বলেছেন, যুদ্ধ শেষে ইসরায়েলি সৈন্যদের একটি অনির্দিষ্ট ‘ক্রান্তিকালীন’ সময়ের বেশি গাজায় থাকা উচিত নয়।
বাইডেন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের গাজায় কিছু দরকার। সেটি হামাসের সঙ্গে হতে পারে না, যা গাজার জনগণের জন্য খারাপ এবং ইসরায়েলের জন্য হুমকি। ইসরায়েল এর পক্ষে দাঁড়াবে না। শূন্যতাও কোনো সমাধান নয়; কারণ, এটি ভয়ানক হবে এবং হামাসকে ফিরে যাওয়ার জায়গা দিতে পারে।’
হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধের নীরব দর্শক ও অজনপ্রিয় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের হাতে ফিলিস্তিনের ক্ষমতা হস্তান্তরের চিন্তা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ৮৮ বছর বয়সী এই পৌঢ়ই এখন হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের শেষ ভরসা। তিনি এই সংঘাতকে শান্তির প্রান্তরে নিয়ে আসবেন—এমন আস্থা থেকেই শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা গত কয়েক সপ্তাহে পশ্চিম তীর সফর করেছেন।
১৯৯৩ সালের ইসরায়েলের সঙ্গে অসলো শান্তিচুক্তির এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এই আব্বাস। ওই চুক্তি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আশা জাগিয়েছিল। তবে পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বন্ধে ব্যর্থ হওয়ায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে। কেউ কেউ তাঁর বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। অনেক ফিলিস্তিনি এখন তাঁর প্রশাসনকে দুর্নীতিগ্রস্ত, অগণতান্ত্রিক এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে বলে মনে করে।২০০৫ সাল থেকে যেটি আব্বাস পরিচালনা করেছেন
তবে ইসরায়েলের ওপর হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন স্পষ্ট করে বলেছেন, তিনি দেখতে চান পুনরুজ্জীবিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, গাজায় সংঘাত শেষ ফিলিস্তিনকে একত্র করে দায়িত্ব দিতে চান এই কর্তৃপক্ষরই হাতে।
বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান গত শুক্রবার আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তনের জন্য ফিলিস্তিন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বশেষ মুখ্য মার্কিন কর্মকর্তা হয়ে উঠেছেন সুলিভান। এর আগে সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গত নভেম্বরের শেষ দিকে ফিলিস্তিনি এই নেতার সঙ্গে দেখা করার পর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, সুশীল সমাজের ক্ষমতায়ন এবং একটি মুক্ত সংবাদপত্রকে সমর্থনের জন্য সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।
তিন ফিলিস্তিনি এবং একজন জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক কর্মকর্তা কথোপকথনের বিষয়ে ব্রিফ করে বলেছেন, রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে আব্বাস কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তরের বিষয়ে ওয়াশিংটন প্রস্তাব দিয়ে থাকতে পারে।
ফিলিস্তিনি ও আঞ্চলিক সূত্র জানিয়েছে, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবের অধীনে আব্বাস একজন ডেপুটি নিয়োগ করতে পারেন, তাঁর প্রেসিডেন্টর কাছে বৃহত্তর নির্বাহী ক্ষমতা তুলে দিতে পারেন এবং সংগঠনের নেতৃত্বে নতুন মুখ আনতে পারেন। এই ক্ষেত্রে যুক্তররাষ্ট্র ও ইসরায়েল- দুই দেশেরই পছন্দের পিএলওর শীর্ষ নেতা হুসেইন আল শেখকে বিকল্প ভাবা হচ্ছে।
এবিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তর দেয়নি হোয়াইট হাউস। স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, নেতৃত্বের পছন্দ ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য একটি প্রশ্ন ছিল। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেনি।
রামাল্লায় রয়টার্সের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে আব্বাস বলেছিলেন, তিনি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে নতুন নেতাদের নিয়ে পুনর্গঠন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত। ২০০৬ সালে হামাস সর্বশেষ ভোটে জয়লাভ করার পর থেকে গাজা থেকে একপ্রকার নির্বাসিত পিএ একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক চুক্তির কথা বলেছে, যা একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের দিকে পরিচালিত করবে।
যদিও এখনো ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তাঁর উগ্র ডানপন্থী জোট ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অস্বীকার করেছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন প্রস্তাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আব্বাস সাক্ষাৎকারে রয়টার্সকে বলেছিলেন, সমস্যাটি ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদদের পরিবর্তন এবং একটি নতুন সরকার গঠন করা নয়, সমস্যাটি ইসরায়েলি সরকারের নীতি।
যদিও আব্বাস মেনে নিতে পারেন যে তাঁর দীর্ঘ শাসনের সমাপ্তি ঘটছে, তিনি এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রধান কৌশলগত মিত্র। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রকেই গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমকে নিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নেতানিয়াহুর সরকারকে চাপ দিতে হবে।
বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত ওয়াশিংটনের এক ব্যক্তির মতে, আব্বাস ব্যক্তিগতভাবে পিএর সংস্কারের জন্য কিছু মার্কিন প্রস্তাবের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন, যেগুলোর মধ্যে টেকনোক্র্যাট দক্ষতার সঙ্গে ‘নতুন মুখ’ আনা এবং প্রেসিডেন্টর কার্যালয়কে নতুন নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া।
যদিও মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলছেন, তাঁরা আব্বাসের কাছে কোনো নাম প্রস্তাব করেননি। আঞ্চলিক সূত্র এবং কূটনীতিকেরা বলছেন, ওয়াশিংটন ও ইসরায়েলের কেউ কেউ ঊর্ধ্বতন পিএলও কর্মকর্তা হোসেইন আল-শেখকে সম্ভাব্য ডেপুটি এবং ভবিষ্যৎ উত্তরসূরি হিসেবে সমর্থন করেন।
দুই প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ চারটি মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, আব্বাসকে জরুরি ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের জন্য রাজি করাতে ওয়াশিংটন জর্ডান, মিসর এবং উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছে আবেদন করেছে। তবে জর্ডান, মিসর, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য অনুরোধের তাৎক্ষণিক সাড়া দেননি।
মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, আব্বাস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রশাসন সংস্কারের জন্য বেশ কয়েকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই বললেই চলে। তাই সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা আবারও আব্বাসের সংস্কারের মনোভাব পরীক্ষার জন্য চাপ দিতে থাকবেন এবং অপেক্ষা করবেন, তিনি কী করেন তা দেখার জন্য।
মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে অজনপ্রিয় এবং ইসরায়েলের বিশ্বাসভাজন না হওয়া সত্ত্বেও আব্বাসই আপাতত একমাত্র বাস্তববাদী ফিলিস্তিনি নেতা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তার মতে, বাইডেনের সহযোগীরা গোপনে ইসরায়েলি নেতাদের পিএর বিরুদ্ধে তাঁদের প্রতিরোধী আচরণ বন্ধের জন্য অনুরোধ করেছেন। একবার পিএ পুনরুজ্জীবিত হলে গাজা-পরবর্তী সংঘর্ষে অগ্রণী ভূমিকা নেবে।
মার্কিন সূত্রের অন্য একজন বলেছেন, ‘শহরে অন্য কিছু নিয়েই এত ব্যতিব্যস্ততা নেই, যতটা এখন পিএ নিয়ে।’ মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, স্বল্প মেয়াদে ইসরায়েলকে পিএতে আরও ট্যাক্স স্থানান্তরের সুযোগ দিতে হবে, যা ৭ অক্টোবরের পরিপ্রেক্ষিতে বন্ধ রয়েছে, যাতে এটি বেতন দিতে পারে।
গোঁয়ার গোবিন্দ ইসরায়েল
যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা গত কয়েক সপ্তাহে বেড়েছে। তবে ফিলিস্তিনি এবং মার্কিন কূটনৈতিক সূত্রে আব্বাসের কাছে কোনো পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়নি।
ফিলিস্তিনে নারী-শিশু নিহতের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সারা বিশ্বে ইসরায়েলি আগ্রাসনের আন্তর্জাতিক নিন্দা বেড়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত ১৯ হাজার নিরপরাধ গাজাবাসী নিহত হয়েছেন। এরপরও নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত, জিম্মিদের মুক্তির আগপর্যন্ত এবং ইসরায়েল ভবিষ্যতের আক্রমণ থেকে নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।
দুই মাসের বেশি সময় আগে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় আগ্রাসন শুরু করে। গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণকে নমনীয় করতে গত বৃহস্পতিবার সুলিভান নেতানিয়াহুর সঙ্গে আলোচনা করেছেন। জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলকে বলছে, যুদ্ধের পরে পিএ নিরাপত্তা বাহিনীকে অবশ্যই গাজায় উপস্থিতি থাকতে হবে, যেমন তাঁরা এরই মধ্যে পশ্চিম তীরের কিছু অংশে করেছে।
নেতানিয়াহু গত মঙ্গলবার বলেছেন, গাজায় পিএর শাসন নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে তাঁর মতানৈক্য রয়েছে। গাজা কোনো হামাস-স্তান বা ফাতাহ-স্তান হবে না।
১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির পরে প্রতিষ্ঠিত আব্বাসের ফাতাহ পার্টি নিয়ন্ত্রিত পিএ একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন হিসেবে দেখানো হয়েছিল। এরপর ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্বাধীনতা না এলেও আব্বাস পিএ পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করেন, আব্বাসের ফিলিস্তিনিদের মধ্যে কিছু বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, যদি তিনি দুর্নীতির মূলোৎপাটন করেন, নতুন প্রজন্মকে নেতৃত্বের সুযোগ দেন, যুদ্ধের পরে গাজা পুনর্গঠনে বিদেশি সাহায্য নেন এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের জন্য বিদেশে সমর্থন তৈরি করতে পারেন।
রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আব্বাস ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের চূড়ান্ত পদক্ষেপে সম্মত হওয়ার জন্য একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলনের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আহ্বান জানান। ১৯৯০-৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ কর্তৃক ডাকা ১৯৯১ সালের মাদ্রিদ শীর্ষ সম্মেলনের মডেলে এটি হতে পারে।
একজন সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, সম্মেলনের ধারণাটি অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে, তবে প্রস্তাবটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
আব্বাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি নেতা বিশ্বাস করেন, গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমকে ঘিরে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইসরায়েলকে আরও কঠোরভাবে চাপ দিতে হবে।
তিনি রয়টার্সকে বলেন, এটাই একমাত্র শক্তি যে ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করতে এবং তাঁর দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিতে পারে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত তা করে না।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাতায়েহ নিরাপত্তা পরিষদের ভোট, অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ এবং বসতি সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলের ওপর সত্যিকারের চাপ প্রয়োগের জন্য ওয়াশিংটনকে আহ্বান জানিয়েছেন।
ব্লিঙ্কেন এই মাসে ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলার জন্য দায়ী ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা করেছেন। এরপরও মার্কিন সরকার জাতিসংঘে ইসরায়েলের কট্টর রক্ষকের ভূমিকা পালন করেছে। মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বাইডেন সাম্প্রতিক সপ্তাহে ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিয়েছেন।
নখ-দন্তহীন এক কর্তৃপক্ষ
জেরুজালেমের একজন মধ্যপন্থী ফিলিস্তিনি ও আল কুদস ইউনিভার্সিটির সাবেক সভাপতি সারি নুসিবেহ বলেছেন, ক্ষমতার ওপর পিএর একচেটিয়া আধিপত্য সম্পর্কে ভুল ধারণা রয়েছে। এটি মূলত বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এবং দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল পশ্চিম তীরের দখলদারির অবসান ঘটিয়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে সায় না দিলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
দর্শনের অধ্যাপক নুসিবেহ বলেন, ‘সমস্যা শুধু আব্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; কারণ, আব্বাস যদি চলে যায়, তাহলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত যে-ই হোক, কিছুই করতে পারবে না।’
এমনকি পশ্চিম তীরে পিএ এখন অজনপ্রিয়; কারণ, এটিকে ইসরায়েলি দখলদারির দালাল হিসেবে গণ্য করা হয়। ইসরায়েলি বাহিনী প্রায়ই রামাল্লাসহ পিএ শাসনাধীন এলাকায় অভিযান চালায়।
গত বুধবার প্রকাশিত ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চ পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাসের জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং আব্বাস অজনপ্রিয় হয়ে উঠছেন। এমনকি হামাস বর্তমানে ফিলিস্তিনের যেকোনো অঞ্চলে নির্বাচনে জয়ী হতে পারে।
মার্কিন সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে, যুদ্ধ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ফিলিস্তিনে নির্বাচন অনুষ্ঠান সঠিক হবে না। মার্কিন কর্মকর্তাদের ২০০৬ সালের আইনসভা নির্বাচনে হামাসের বিজয়ের কথা ভালোভাবেই মনে আছে। ওই নির্বাচনের সময় ওয়াশিংটন এবং অন্যান্য পশ্চিমা সরকার হামাসের জয়ে বেশ উচ্ছ্বাস দেখিয়েছিল। তাই যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, অবশ্যই হামাসকে বাদ দিতে হবে।
পশ্চিম তীরে ক্রমবর্ধমানভাবে ইসরায়েলি বসতি এবং নিরাপত্তা চেকপয়েন্টগুলো সম্প্রসারিত হচ্ছে, যা ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন চলাফেরা কঠিন করে তুলছে। অনেকেই হিংসাত্মক হামলা বৃদ্ধির অভিযোগ করেছেন। গত দুই মাসে ইসরায়েলিরা পশ্চিম তীরে অন্তত ২৮৭ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম উঠে আসা স্বতন্ত্র ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ ড. মোস্তফা বারঘৌতি বলেছেন, এটি কর্তৃত্বহীন এক কর্তৃত্ব। পিএ নিজে রাজস্ব বা নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করে না। এটি ইসরায়েলি দখলদারির অবসানে কিছুই করে না, অভ্যন্তরীণ সংস্কারও নয়, যা ফিলিস্তিনি নেতৃত্বকে বৈধতা দেবে।
বারঘৌতি আরও বলেন, ‘ইসরায়েলি দখলদারির দালালি করা কোনো ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষই টিকতে পারবে না। তারা অসম্মানিত এবং অবৈধ হবে বলে গণ্য হবে।’
কিছু ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, পিএ কর্তৃপক্ষের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধারের জন্য গাজা এবং পশ্চিম তীরে জাতীয় ঐক্য প্রশাসনের ভিত্তি প্রসারিত করতে হবে, এর মধ্যে অবশ্যই হামাস অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ওয়াশিংটন হামাস নেতাদের যেকোনো ভূমিকার বিরুদ্ধে অনড়, এমনকি জুনিয়র পার্টনার হিসেবেও। তাঁরা আরও বলেছেন, যুদ্ধ শেষে ইসরায়েলি সৈন্যদের একটি অনির্দিষ্ট ‘ক্রান্তিকালীন’ সময়ের বেশি গাজায় থাকা উচিত নয়।
বাইডেন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমাদের গাজায় কিছু দরকার। সেটি হামাসের সঙ্গে হতে পারে না, যা গাজার জনগণের জন্য খারাপ এবং ইসরায়েলের জন্য হুমকি। ইসরায়েল এর পক্ষে দাঁড়াবে না। শূন্যতাও কোনো সমাধান নয়; কারণ, এটি ভয়ানক হবে এবং হামাসকে ফিরে যাওয়ার জায়গা দিতে পারে।’
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগেট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
১৪ ঘণ্টা আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
১ দিন আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
২ দিন আগে