Ajker Patrika

আলুর চিপস

আহমেদ রিয়াজ
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২: ০৫
আলুর চিপস

বাইরে থেকে হঠাৎ হাঁক শুনতে পেল চালাকু, ‘চালাকু! ও চালাকু!’

বারান্দায় ছুটে গেল চালাকু। দোতলা থেকে উঁকি মারল রাস্তায়। ছোটমামা! কালো হয়ে গেল চালাকুর মুখ। ছোটমামাকে ও একটুও পছন্দ করে না। কেন? ছোটমামার মতো কিপটে ও দ্বিতীয়টা দেখেনি।

চালাকুর সঙ্গেও কম কিপটেমি করেননি। মামার জামায় পকেট নেই। এমনকি তাঁর প্যান্টেও কখনো পকেট খুঁজে পায়নি চালাকু। পকেট থাকলেই পকেটে টাকা রাখতে হবে। টাকা থাকলেই খরচ করতে হবে। আর খরচই যদি করে, তবে কিপটেমি করবে কী করে?

জীবন্ত কিংবদন্তি কিপটে হিসেবে অন্য কিপটেদের কাছে আদর্শ ছোটমামা।

ছোটমামাকে না দেখার ভান করে সটকে পড়তে চেয়েছিল চালাকু। কিন্তু ছোটমামার ছোট ছোট চোখজোড়ায় বাজপাখির মতো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। সেই দৃষ্টিতে ধরা পড়ে গেল চালাকু। তাড়া দিলেন মামা, ‘হাঁ করে তাকিয়ে আছিস কেন? বুবুর কাছ থেকে অটোরিকশার ভাড়াটা নিয়ে আয়।’

ততক্ষণে চালাকুর পেছনে মা এসে হাজির। মা কিন্তু ছোটমামার কিপটেমিতে কিছু মনে করেন না; বরং মায়ের উদারতার সুযোগ সুদে-আসলে আদায় করে নেন ছোটমামা।

অটোভাড়া নিয়ে চটপট নিচে নামল চালাকু। সঙ্গে মামি আর মামাতো ভাই রবিন। ওদের চালাকুদের ঘরে পাঠিয়ে দিলেন মামা।
নিচে নেমে অটোরিকশার মিটারের দিকে তাকাল চালাকু। কিন্তু এ কী! ভাড়া দেখাচ্ছে ২০০ টাকা। অথচ মামা ৫০০ টাকা চাইলেন কেন? চালাকু বুঝল, আসল ২০০ টাকার সঙ্গে ৩০০ টাকা সুদও আদায় করে নিয়েছেন ছোটমামা।

চা খাওয়ার জন্য ১০টা টাকা চেয়েছিল অটোচালক। এটিএম বুথের কাছে চাইলেও মেশিন থেকে দু-চার টাকা বেরোলেও হয়তো বেরোতে পারত। ছোটমামার হাত ফসকে একটা কয়েনও বেরোল না। কিছুক্ষণ ঘ্যান ঘ্যান করে চলে গেল অটোচালক।

মামার মুখে বিজয়ীর মুচকি হাসি। মামাকে নিয়ে ঘরে ঢুকল চালাকু। আর ঘরে ঢুকেই রবিনের কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল।  ‘অ্যাঁ... অ্যাঁ... অ্যাঁ...’
হাহাকার করে উঠলেন মা, ‘কী হলো ফুফুমণি!’

রবিন কেবল উচ্চারণ করল, ‘চিপস...’
বাকিটা ছোটমামাই বলে দিলেন, ‘সেই তখন থেকে ও আলুর চিপস খাওয়ার বায়না ধরেছে বুবু। আমি বলেছি, ফুফুর বাড়িতে গিয়ে খাস।’
মা হেসে রবিনকে কোলে তুলে নিলেন। আদর করে মাথায় হাত বোলালেন। তারপর হাঁক দিলেন, ‘চালাকু!’

ছুটে এল চালাকু। মা বললেন, ‘রবিনকে নিয়ে দোকানে যা। ওকে আলুর চিপস কিনে দে!’

বলেই চালাকুর এক হাতে রবিন আরেক হাতে ১০০ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিলেন মা। আড়চোখে দেখেছে চালাকু, ওই নোটের দিকে তাকিয়ে মামার চোখ চকচক করছে।

রাগে গা জ্বলতে লাগল চালাকুর। মনে মনে বলল, আমার নাম চালাকু খান। দ্যাখো না কী করি!
তবে মুখে কিছু বলল না। রবিনকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

একটা দোকানের সামনে এল চালাকু। বলল, ‘আপনার দোকানে আলুর চিপস আছে?’
দোকানদার অবাক হয়ে চালাকুর দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, ‘নেই।’

রবিনকে বলল চালাকু, ‘শুনেছ রবিন? এই দোকানে আলুর চিপস নেই।’

রবিন বলল, ‘তাহলে আরেকটা দোকানে চলো!’
আরেকটা দোকানের সামনে এল চালাকু। জানতে চাইল, ‘আপনার দোকানে আলুর চিপস আছে?’

এই দোকানিও অবাক হয়ে চালাকুর দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। যেন জীবনে কখনো আলুর চিপসের নামই শোনেননি। জবাব দিলেন, ‘নেই।’

‘শুনেছ রবিন! এই দোকানেও চিপস নেই।’
রবিন বলল, ‘তাহলে আরেকটা দোকানে চলো!’

আরও একটা দোকানে গেল চালাকু, ‘আলুর চিপস আছে?’

এই দোকান থেকেও জবাব পেল, ‘নেই।’
এবার রবিনের দিকে তাকিয়ে চালাকু বলল, ‘দেখেছ! আমাদের এখানকার দোকানগুলোয় আলুর চিপস বিক্রি হয় না।’

তারপর মুচকি মুচকি হাসতে লাগল।
আর রবিন? রবিনও মুচকি হেসে বলল, ‘তোমাদের এখানে 
বুঝি কাঁচা সবজির দোকানে আলুর চিপস বিক্রি হয়?’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত