আরিফ আবেদ আদিত্য
লন্ডন থেকে অদূরেই ক্যান্টাবরি শহরে আমার ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। এখানে আসার আগে ক্যান্টাবরি শহরটিকে কেবল চিনতাম চসারের ‘ক্যান্টাবরি টেলস’-এর মাধ্যমে। পরে জেনেছি, পাশ্চাত্য রেনেসাঁর অন্যতম রূপকার নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর (১৫৬৪-১৫৯৩) জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই শহরেই। লন্ডনের অতি কাছে (ট্রেনে ৪৫ মিনিট, বাসে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের পথ) সমুদ্রসৈকত-সমৃদ্ধ কেন্ট কাউন্টির কেন্দ্রস্থল এই ক্যান্টাবরি শহর। বিগত কয়েক শ বছর ধরে লন্ডনের লেখক-সাহিত্যিক-দার্শনিকদের আনাগোনা ছিল এই শহরের আনাচে-কানাচে। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত হওয়ায় চমৎকার আবহাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সমুদ্রসৈকত এর প্রধান আকর্ষণ। কেন্টকে বলা হয় ‘গার্ডেন অব ইংল্যান্ড’। কেন্ট কাউন্টিতে ৫০টির মতো সমুদ্রসৈকত আছে। ক্যান্টাবরির চারপাশ ঘিরে সমুদ্রসৈকত অবস্থিত—যেমন: ফোকস্টোন, ডোভার, ডিল, ব্রডস্টেয়ার, মারগেট, রামসগেট, সেনউইচ, হার্ন বে ইত্যাদি। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার থেকে শুরু করে টি এস ইলিয়ট এখানকার সমুদ্রসৈকতে অবকাশ যাপনে আসতেন। ইংরেজি সাহিত্যের অনেক চরিত্র এখানকার শহরে বেড়ে উঠেছে। ভিক্টোরীয় যুগে অন্যতম লেখক চার্লস ডিকেন্সের (১৮১২-১৮৭০) অনেক চরিত্র ও ঘটনাবলির ছায়া এসব স্থানে পাওয়া যায়।
আমার ডর্মেটরির কাছাকাছি ক্যান্টাবরির বিখ্যাত নদী গ্রেট স্ট বয়ে গেছে। এই নদীর পাড়ে বসেই ইংরেজ কবি থমাস হার্ডি (১৮৪০-১৯২৮) প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনীর বিয়োগব্যথায় লিখেছিলেন: ‘Overlooking the River Stour’ (১৯১৬)। শহরের ভেতর দিয়েই এই নদী প্রবাহিত হয়েছে; যদিও কালের বিবর্তনে শহরের অভ্যন্তরের নদীর অংশ সরু খালের আকার নিয়েছে, তথাপি জলের প্রবহমানতা বিদ্যমান আছে। এই শহরে আগত ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ এখানকার ‘পান্টিং’—লগি দিয়ে নৌকা চালিয়ে পর্যটকদের এই শহর দেখানো; অনেকটা ভেনিসের নৌবিহারের মতো।
একদিন সকালে গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে হাঁটতে বেরোলাম। তখন হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার ওপর তামার অক্ষরে খোদাই করে লেখা ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’। পাশে সাইনবোর্ডে ছোট্ট পরিচয় লেখা ‘ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ’। আকস্মিক কিছু আবিষ্কারের মতো হঠাৎ এই ফলকচিহ্ন দেখে আমার যারপরনাই অবাক হওয়ার পালা। কারণ, পরে এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ আমাকে হাঁটতে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডের প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসের পথে।
ক্যান্টাবরি শহরের গল্প বা ইতিহাস লিখে আসলে শেষ হওয়ার নয়। এর পরতে পরতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইংল্যান্ড নামক রাষ্ট্রের গড়ে ওঠার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। তিনটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, যা ‘বিগ থ্রি’ নামে পরিচিত এই শহরে অবস্থিত--ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল (মাদার চার্চ অব ইংল্যান্ড), সেন্ট অগাস্টিন এবে (অ্যাংলো-সাক্সনদের সময়ের কবরস্থান) ও সেন্ট মার্টিন চার্চ (ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীনতম চার্চ)। গ্রেট ব্রিটেনে খ্রিষ্টধর্মের প্রচার শুরু হয় এই শহর থেকে। রোমান মিশনারিরা ২৭০-২৮০ সালে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে গ্রেট স্ট নদীর পাশে এই ক্যান্টাবরি শহরের পত্তন করে। রোমানরা ইংল্যান্ডে নিজেদের শাসন কায়েম করে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের দিকে। ভারতীয় উপমহাদেশকে ইংল্যান্ড প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছিল, অথচ এই ইংল্যান্ডও একসময় রোমানদের কলোনি ছিল। রোমানরা চলে যাওয়ার পর অ্যাংলো-সাক্সনদের হাত ধরে আজকের ইংল্যান্ড গড়ে ওঠে।
যাই হোক, গল্পে ফেরা যাক। প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর জীবিতকালে অন্তিম ইচ্ছা থাকে তাদের ধর্মীয় পবিত্র স্থান বা তীর্থসমূহ পরিদর্শনের। মধ্য ও প্রাক-আধুনিক যুগে ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে নান-পাদরি-যাজক ও খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীদের গন্তব্যের অন্যতম শেষ পথ ছিল রোম! কারণ, ভ্যাটিকান রোম ছিল খ্রিষ্টানদের মূল উপাসনালয় এবং প্রধান ধর্মগুরু পোপের আবাসস্থল। এখান থেকেই খ্রিষ্টধর্মের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হতো। এ ছাড়া যিশুর জন্মভূমি জেরুজালেম ছিল তাদের পরিভ্রমণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ইউরোপে খ্রিষ্টানদের ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই ভাগে বিভাজনের আগ পর্যন্ত ইউরোপে এই ধারা অব্যাহত ছিল। তারা পরিভ্রমণের সময় যাত্রাপথের বিবরণ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং যাত্রাপথ নির্দেশ লিখে রাখত। পাশাপাশি মানচিত্র আকারে এঁকে রাখত পরবর্তী তীর্থভ্রমণকারীদের জন্য। তাঁদের এই লিখিত ভৌগোলিক বিবরণ ও অঙ্কিত মানচিত্রই আধুনিক ‘কার্টোগ্রাফি’ বা মানচিত্রবিদ্যার প্রাথমিক মৌল নিদর্শন। ব্রিটিশ লাইব্রেরি ও চার্চে অনেক প্রাচীন মানচিত্র আজও রক্ষিত আছে, যা প্রায় নির্ভুল ছিল। ইউরোপের ‘একলেসিয়েস্টিক্যাল ইতিহাস’ তাই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার এবং চার্চ বা গির্জার ক্রমবিকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
প্রাক-আধুনিক যুগ পর্যন্ত ইউরোপ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে যেখানেই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার লাভ হয়েছিল, সেই সব জায়গা থেকে তীর্থযাত্রীদের চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল রোম। এ জন্য মধ্যযুগে একটা কথা খুব প্রচলন ছিল, ‘সকল পথের গন্তব্য হলো রোম’। অর্থাৎ, ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বের সব পথের মিলনস্থল হলো রোম। এখনো ক্যাথলিক অংশ রোমে (ভ্যাটিকান সিটি) যাওয়াকে জীবনের পরম আরাধ্য মনে করে। যদিও প্রোটেস্ট্যান্ট অনুসারীরা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ পরিদর্শনে আগ্রহী। ইংরেজি সাহিত্যের জনক জিওফ্রে চসারের (১৩৪০-১৪০০) বিখ্যাত ‘দ্য ক্যান্টাবরি টেলস’ (১৩৯২) গ্রন্থে পরিভ্রাজকদের ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ দর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রারত মানুষের গল্পই বলা হয়েছে। যাই হোক, একটা সময় রোমের প্রভাব ছিল অপরিমেয়। রোমের প্রভাব ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে পরে আর তেমন থাকেনি। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট বৃহৎ দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। রোমের পোপের সঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। রাজা নির্বাচন ও রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে ধর্মগুরুদের হস্তক্ষেপ এর অন্যতম কারণ ছিল। অবশেষে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি (১৪৯১-১৫৪৭) রোমের পোপের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে ইংল্যান্ডে অ্যাংলিকান চার্চ বা চার্চ অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মের সংস্কারপন্থী অংশের (প্রোটেস্ট্যান্ট) ধর্মচর্চার পথ মসৃণ হয়। ক্রিস্টোফার মার্লোর ‘ম্যাসাকার অব প্যারিস’ (১৫৯৩) নাটকে ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই অনুসারীদের নির্মম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা আছে।
পোপের কাছ থেকে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেন। এত দিন পোপ ছিল একমাত্র ‘ডিভাইন রাইট’প্রাপ্ত। রাজা অষ্টম হেনরি নিজেকে একই সঙ্গে চার্চ ও রাষ্ট্রের প্রধান ‘ডিভাইন রাইট’ প্রাপ্ত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা ছিল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে যুগান্তকারী। কারণ, হাজার বছর ধরে চলা পাপাসি বা পোপ বা ধর্মগুরুদের একচ্ছত্র ক্ষমতা এতে খর্ব হয়। রাজা অষ্টম হেনরি ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠা করেন নতুন চার্চ—প্রধান ধর্মগুরুর নামকরণ হয় ‘আর্চবিশপ’। ইংল্যান্ডের ইতিহাস বদলে দেওয়া মাদার অব অল অ্যাংলিকান চার্চের অবস্থান ক্যান্টাবরি শহরে, যা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ নামে পরিচিত। মজার বিষয় হলো, রাজা অষ্টম হেনরির এ ঘটনার সূত্রপাত তাঁর বিয়ের বৈধতা নিয়ে। তার যুগান্তরকারী সিদ্ধান্তে রাতারাতি ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা হাজার হাজার ক্যাথলিক চার্চ বন্ধ হয়ে যায়। পরে এর প্রভাব (ধর্মীয় সংস্কার) ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। প্রোটেস্টান্টদের পালে হাওয়া লাগে।
রাজা অষ্টম হেনরির সমসাময়িক কালেই (তাঁর জন্মের কিছু আগে ও পরে) খ্রিষ্টধর্মের কিছু মৌল ধারণা নিয়ে ধর্মীয় তাত্ত্বিকদের মধ্যে দার্শনিক আলাপ ও চর্চা শুরু হয়। ষোড়শ শতকে জার্মান অধিবাসী থিওলজিস্ট মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬), সুইস থিওলজিয়ান হলড্রিক জিংলি (১৪৮৪-১৫৩১), জন ক্যালভিন (১৫০৯-১৫৬৪) প্রমুখ রোমান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত দেন; যা পরে প্রোটেস্টান্ট ধারার জন্ম দেয়।
ডাচ ক্যাথলিক থিওলজিস্ট ও দার্শনিক ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস (১৪৬৬-১৫৩৬) ও মার্টিন লুথার ছিলেন বন্ধু। তাঁরা ওল্ড টেস্টামেন্টের কিছু বিষয় নিয়ে গভীর ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা করতেন। কিন্তু একসময় তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। মার্টিন লুথারের ধর্মীয় সংস্কারের চিন্তাধারাই পরে ‘প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন’ নামে পরিচিত হয়। অন্যদিকে ইরাসমাস ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় ক্রিস্টিয়ান ধর্মের অনেক বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে রিফর্মেশন-কাউন্টার দিতে চেষ্টা করেন। তিনি ক্যাথলিক ধারা বজায় রাখতে আমৃত্যু ব্যাপৃত ছিলেন। রেনেসাঁর সূচনাপর্বে তাঁর অন্যতম অবদান ছিল মানুষের ‘ফ্রিডম অব উইল’ বা ইচ্ছার স্বাধীনতার কথা বলা। এই সময়ে আরেকজন চিন্তাবিদ-দার্শনিক ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন; তিনি হলেন থমাস মোর (১৪৭৪-১৫৩৫)। ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র ও পলিটিক্যাল সিস্টেমের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তিনি রচনা করেছিলেন যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ইউটোপিয়া’ (১৫১৬)। উল্লিখিত এঁরা সবাই ছিলেন ইংল্যান্ডের রেনেসাঁর প্রথম দিকের ব্যক্তিত্ব। মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্কের ভেতর দিয়েই মানবিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার উন্মেষের সূচনা হয়, যা মূলত রেনেসাঁর বীজমন্ত্র। পরে অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক এই অভিযাত্রায় শামিল হন। সময়ের পরিক্রমায় এর মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড প্রবেশ করে প্রাক-আধুনিক যুগে, সেখান থেকে আধুনিক যুগে।
এবার বিষয়বস্তুতে ফিরে আস যাক। কথা হচ্ছিল ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ নির্মাণের ইতিহাস বিষয়ে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইংল্যান্ডের ক্যান্টাবরি শহর গড়ে ওঠে মূলত রোমানদের হাত ধরে। এখানে রোমান মিশনারিরা প্রতিষ্ঠা করে ইংল্যান্ডের তথা ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীন চার্চ ‘সেন্ট মার্টিন চার্চ’ (৫৯৭ সালের পূর্বে)। ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপের নামকরণ করা হয় ক্যান্টাবরিতে অবস্থিত চার্চের এই ‘সেন্ট মার্টিনের’ নামে। তারা এখানে বেনেডিকটাইন মোনাস্ট্রি স্থাপন করেছিল, যা ৫৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৫৩৮ সাল (রিফর্মেশনকাল) পর্যন্ত ক্রিয়াশীল ছিল। এ ছাড়া তারা ক্যান্টাবরি শহরকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ২৭০-২৯০ সময়কালে ‘সিটি ওয়াল’ নির্মাণ করেছিল, যা এখনো বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে। ষষ্ঠ শতকে রোমানরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে কেন্টের আশপাশের শহর-বন্দরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ছিল মূলত নৌপথে—স্ট নদীর পথ ধরে। তখনকার রোমান শাসকেরা যোগাযোগের জন্য একটি সড়কপথেরও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
এ জন্য তারা গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে লন্ডনের সঙ্গে ক্যান্টাবরি শহরের সড়কপথে যোগাযোগের জন্য চুন-সুরকি দিয়ে রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট নির্মাণ করে। আধুনিক যুগের বিশাল রাজপথের সঙ্গে এটিকে তুলনা করলে ভুল হবে। এই রাজপথ দিয়ে মূলত দুটি গরুর গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলার মতো প্রশস্ত। প্রায় ২ হাজার বছরের পুরোনো সেই রাজপথ এখনো টিকে আছে, যদিও বর্তমানে এটি পিচঢালাই করে ঢেকে রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ডে এর আগে কোনো রাজপথের ধারণাই ছিল না। মজার তথ্য হলো, এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ বা রাজপথের একদিকের অভিমুখ যেমন ছিল লন্ডনের দিকে, অপরটি ছিল পরিভ্রাজক-তীর্থযাত্রীদের শেষ গন্তব্য পথ রোমের দিকে।
প্রাচীন এই পথের একদিকে এগোলে রোম, অপরদিকে হাঁটলে লন্ডন—বিস্ময়কর এক অনুভূতি জাগ্রত হয়। মনে হচ্ছিল, হাজার বছরের পুরোনো সেই মহাসড়কে দাঁড়িয়ে মুহূর্তে ইতিহাসের অলিগলিতে হারিয়ে যেতে বসেছি।
(চলবে)
আরও পড়ুন:
লন্ডন থেকে অদূরেই ক্যান্টাবরি শহরে আমার ইউনিভার্সিটি অবস্থিত। এখানে আসার আগে ক্যান্টাবরি শহরটিকে কেবল চিনতাম চসারের ‘ক্যান্টাবরি টেলস’-এর মাধ্যমে। পরে জেনেছি, পাশ্চাত্য রেনেসাঁর অন্যতম রূপকার নাট্যকার ক্রিস্টোফার মার্লোর (১৫৬৪-১৫৯৩) জন্ম ও বেড়ে ওঠা এই শহরেই। লন্ডনের অতি কাছে (ট্রেনে ৪৫ মিনিট, বাসে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের পথ) সমুদ্রসৈকত-সমৃদ্ধ কেন্ট কাউন্টির কেন্দ্রস্থল এই ক্যান্টাবরি শহর। বিগত কয়েক শ বছর ধরে লন্ডনের লেখক-সাহিত্যিক-দার্শনিকদের আনাগোনা ছিল এই শহরের আনাচে-কানাচে। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত হওয়ায় চমৎকার আবহাওয়া, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সমুদ্রসৈকত এর প্রধান আকর্ষণ। কেন্টকে বলা হয় ‘গার্ডেন অব ইংল্যান্ড’। কেন্ট কাউন্টিতে ৫০টির মতো সমুদ্রসৈকত আছে। ক্যান্টাবরির চারপাশ ঘিরে সমুদ্রসৈকত অবস্থিত—যেমন: ফোকস্টোন, ডোভার, ডিল, ব্রডস্টেয়ার, মারগেট, রামসগেট, সেনউইচ, হার্ন বে ইত্যাদি। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার থেকে শুরু করে টি এস ইলিয়ট এখানকার সমুদ্রসৈকতে অবকাশ যাপনে আসতেন। ইংরেজি সাহিত্যের অনেক চরিত্র এখানকার শহরে বেড়ে উঠেছে। ভিক্টোরীয় যুগে অন্যতম লেখক চার্লস ডিকেন্সের (১৮১২-১৮৭০) অনেক চরিত্র ও ঘটনাবলির ছায়া এসব স্থানে পাওয়া যায়।
আমার ডর্মেটরির কাছাকাছি ক্যান্টাবরির বিখ্যাত নদী গ্রেট স্ট বয়ে গেছে। এই নদীর পাড়ে বসেই ইংরেজ কবি থমাস হার্ডি (১৮৪০-১৯২৮) প্রিয়তমা জীবনসঙ্গিনীর বিয়োগব্যথায় লিখেছিলেন: ‘Overlooking the River Stour’ (১৯১৬)। শহরের ভেতর দিয়েই এই নদী প্রবাহিত হয়েছে; যদিও কালের বিবর্তনে শহরের অভ্যন্তরের নদীর অংশ সরু খালের আকার নিয়েছে, তথাপি জলের প্রবহমানতা বিদ্যমান আছে। এই শহরে আগত ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণ এখানকার ‘পান্টিং’—লগি দিয়ে নৌকা চালিয়ে পর্যটকদের এই শহর দেখানো; অনেকটা ভেনিসের নৌবিহারের মতো।
একদিন সকালে গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে হাঁটতে বেরোলাম। তখন হঠাৎ চোখে পড়ে রাস্তার ওপর তামার অক্ষরে খোদাই করে লেখা ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’। পাশে সাইনবোর্ডে ছোট্ট পরিচয় লেখা ‘ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ’। আকস্মিক কিছু আবিষ্কারের মতো হঠাৎ এই ফলকচিহ্ন দেখে আমার যারপরনাই অবাক হওয়ার পালা। কারণ, পরে এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ আমাকে হাঁটতে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডের প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাসের পথে।
ক্যান্টাবরি শহরের গল্প বা ইতিহাস লিখে আসলে শেষ হওয়ার নয়। এর পরতে পরতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ইংল্যান্ড নামক রাষ্ট্রের গড়ে ওঠার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা। তিনটি ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, যা ‘বিগ থ্রি’ নামে পরিচিত এই শহরে অবস্থিত--ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল (মাদার চার্চ অব ইংল্যান্ড), সেন্ট অগাস্টিন এবে (অ্যাংলো-সাক্সনদের সময়ের কবরস্থান) ও সেন্ট মার্টিন চার্চ (ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীনতম চার্চ)। গ্রেট ব্রিটেনে খ্রিষ্টধর্মের প্রচার শুরু হয় এই শহর থেকে। রোমান মিশনারিরা ২৭০-২৮০ সালে ইংলিশ চ্যানেল পার হয়ে গ্রেট স্ট নদীর পাশে এই ক্যান্টাবরি শহরের পত্তন করে। রোমানরা ইংল্যান্ডে নিজেদের শাসন কায়েম করে খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতকের দিকে। ভারতীয় উপমহাদেশকে ইংল্যান্ড প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছিল, অথচ এই ইংল্যান্ডও একসময় রোমানদের কলোনি ছিল। রোমানরা চলে যাওয়ার পর অ্যাংলো-সাক্সনদের হাত ধরে আজকের ইংল্যান্ড গড়ে ওঠে।
যাই হোক, গল্পে ফেরা যাক। প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর জীবিতকালে অন্তিম ইচ্ছা থাকে তাদের ধর্মীয় পবিত্র স্থান বা তীর্থসমূহ পরিদর্শনের। মধ্য ও প্রাক-আধুনিক যুগে ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে নান-পাদরি-যাজক ও খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীদের গন্তব্যের অন্যতম শেষ পথ ছিল রোম! কারণ, ভ্যাটিকান রোম ছিল খ্রিষ্টানদের মূল উপাসনালয় এবং প্রধান ধর্মগুরু পোপের আবাসস্থল। এখান থেকেই খ্রিষ্টধর্মের যাবতীয় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হতো। এ ছাড়া যিশুর জন্মভূমি জেরুজালেম ছিল তাদের পরিভ্রমণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। ইউরোপে খ্রিষ্টানদের ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই ভাগে বিভাজনের আগ পর্যন্ত ইউরোপে এই ধারা অব্যাহত ছিল। তারা পরিভ্রমণের সময় যাত্রাপথের বিবরণ, ভৌগোলিক অবস্থান এবং যাত্রাপথ নির্দেশ লিখে রাখত। পাশাপাশি মানচিত্র আকারে এঁকে রাখত পরবর্তী তীর্থভ্রমণকারীদের জন্য। তাঁদের এই লিখিত ভৌগোলিক বিবরণ ও অঙ্কিত মানচিত্রই আধুনিক ‘কার্টোগ্রাফি’ বা মানচিত্রবিদ্যার প্রাথমিক মৌল নিদর্শন। ব্রিটিশ লাইব্রেরি ও চার্চে অনেক প্রাচীন মানচিত্র আজও রক্ষিত আছে, যা প্রায় নির্ভুল ছিল। ইউরোপের ‘একলেসিয়েস্টিক্যাল ইতিহাস’ তাই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার এবং চার্চ বা গির্জার ক্রমবিকাশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
প্রাক-আধুনিক যুগ পর্যন্ত ইউরোপ ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে যেখানেই খ্রিষ্টধর্মের বিস্তার লাভ হয়েছিল, সেই সব জায়গা থেকে তীর্থযাত্রীদের চূড়ান্ত গন্তব্য ছিল রোম। এ জন্য মধ্যযুগে একটা কথা খুব প্রচলন ছিল, ‘সকল পথের গন্তব্য হলো রোম’। অর্থাৎ, ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বের সব পথের মিলনস্থল হলো রোম। এখনো ক্যাথলিক অংশ রোমে (ভ্যাটিকান সিটি) যাওয়াকে জীবনের পরম আরাধ্য মনে করে। যদিও প্রোটেস্ট্যান্ট অনুসারীরা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ পরিদর্শনে আগ্রহী। ইংরেজি সাহিত্যের জনক জিওফ্রে চসারের (১৩৪০-১৪০০) বিখ্যাত ‘দ্য ক্যান্টাবরি টেলস’ (১৩৯২) গ্রন্থে পরিভ্রাজকদের ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ দর্শনের উদ্দেশ্যে যাত্রারত মানুষের গল্পই বলা হয়েছে। যাই হোক, একটা সময় রোমের প্রভাব ছিল অপরিমেয়। রোমের প্রভাব ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে পরে আর তেমন থাকেনি। ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট বৃহৎ দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে যায়। রোমের পোপের সঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। রাজা নির্বাচন ও রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে ধর্মগুরুদের হস্তক্ষেপ এর অন্যতম কারণ ছিল। অবশেষে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি (১৪৯১-১৫৪৭) রোমের পোপের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করে ইংল্যান্ডে অ্যাংলিকান চার্চ বা চার্চ অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে খ্রিষ্টধর্মের সংস্কারপন্থী অংশের (প্রোটেস্ট্যান্ট) ধর্মচর্চার পথ মসৃণ হয়। ক্রিস্টোফার মার্লোর ‘ম্যাসাকার অব প্যারিস’ (১৫৯৩) নাটকে ক্যাথলিক-প্রোটেস্ট্যান্ট দুই অনুসারীদের নির্মম রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা আছে।
পোপের কাছ থেকে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি ক্ষমতা নিজের হাতে নিয়ে নেন। এত দিন পোপ ছিল একমাত্র ‘ডিভাইন রাইট’প্রাপ্ত। রাজা অষ্টম হেনরি নিজেকে একই সঙ্গে চার্চ ও রাষ্ট্রের প্রধান ‘ডিভাইন রাইট’ প্রাপ্ত বলে ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা ছিল ইংল্যান্ডের ইতিহাসে যুগান্তকারী। কারণ, হাজার বছর ধরে চলা পাপাসি বা পোপ বা ধর্মগুরুদের একচ্ছত্র ক্ষমতা এতে খর্ব হয়। রাজা অষ্টম হেনরি ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠা করেন নতুন চার্চ—প্রধান ধর্মগুরুর নামকরণ হয় ‘আর্চবিশপ’। ইংল্যান্ডের ইতিহাস বদলে দেওয়া মাদার অব অল অ্যাংলিকান চার্চের অবস্থান ক্যান্টাবরি শহরে, যা ‘ক্যান্টাবরি ক্যাথেড্রাল’ নামে পরিচিত। মজার বিষয় হলো, রাজা অষ্টম হেনরির এ ঘটনার সূত্রপাত তাঁর বিয়ের বৈধতা নিয়ে। তার যুগান্তরকারী সিদ্ধান্তে রাতারাতি ইংল্যান্ডে গড়ে ওঠা হাজার হাজার ক্যাথলিক চার্চ বন্ধ হয়ে যায়। পরে এর প্রভাব (ধর্মীয় সংস্কার) ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। প্রোটেস্টান্টদের পালে হাওয়া লাগে।
রাজা অষ্টম হেনরির সমসাময়িক কালেই (তাঁর জন্মের কিছু আগে ও পরে) খ্রিষ্টধর্মের কিছু মৌল ধারণা নিয়ে ধর্মীয় তাত্ত্বিকদের মধ্যে দার্শনিক আলাপ ও চর্চা শুরু হয়। ষোড়শ শতকে জার্মান অধিবাসী থিওলজিস্ট মার্টিন লুথার (১৪৮৩-১৫৪৬), সুইস থিওলজিয়ান হলড্রিক জিংলি (১৪৮৪-১৫৩১), জন ক্যালভিন (১৫০৯-১৫৬৪) প্রমুখ রোমান ক্যাথলিক চার্চের ধর্মীয় কিছু বিষয়ে ভিন্নমত দেন; যা পরে প্রোটেস্টান্ট ধারার জন্ম দেয়।
ডাচ ক্যাথলিক থিওলজিস্ট ও দার্শনিক ডেসিডেরিয়াস ইরাসমাস (১৪৬৬-১৫৩৬) ও মার্টিন লুথার ছিলেন বন্ধু। তাঁরা ওল্ড টেস্টামেন্টের কিছু বিষয় নিয়ে গভীর ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা করতেন। কিন্তু একসময় তাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়। মার্টিন লুথারের ধর্মীয় সংস্কারের চিন্তাধারাই পরে ‘প্রোটেস্ট্যান্ট রিফর্মেশন’ নামে পরিচিত হয়। অন্যদিকে ইরাসমাস ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষায় ক্রিস্টিয়ান ধর্মের অনেক বিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে রিফর্মেশন-কাউন্টার দিতে চেষ্টা করেন। তিনি ক্যাথলিক ধারা বজায় রাখতে আমৃত্যু ব্যাপৃত ছিলেন। রেনেসাঁর সূচনাপর্বে তাঁর অন্যতম অবদান ছিল মানুষের ‘ফ্রিডম অব উইল’ বা ইচ্ছার স্বাধীনতার কথা বলা। এই সময়ে আরেকজন চিন্তাবিদ-দার্শনিক ইংল্যান্ডের সমাজ-সংস্কৃতি পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন; তিনি হলেন থমাস মোর (১৪৭৪-১৫৩৫)। ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র ও পলিটিক্যাল সিস্টেমের পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষায় তিনি রচনা করেছিলেন যুগান্তকারী গ্রন্থ ‘ইউটোপিয়া’ (১৫১৬)। উল্লিখিত এঁরা সবাই ছিলেন ইংল্যান্ডের রেনেসাঁর প্রথম দিকের ব্যক্তিত্ব। মধ্যযুগে ইউরোপে ধর্মতাত্ত্বিক বিতর্কের ভেতর দিয়েই মানবিক মূল্যবোধ ও মানবিকতার উন্মেষের সূচনা হয়, যা মূলত রেনেসাঁর বীজমন্ত্র। পরে অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক-দার্শনিক এই অভিযাত্রায় শামিল হন। সময়ের পরিক্রমায় এর মধ্য দিয়ে ইংল্যান্ড প্রবেশ করে প্রাক-আধুনিক যুগে, সেখান থেকে আধুনিক যুগে।
এবার বিষয়বস্তুতে ফিরে আস যাক। কথা হচ্ছিল ইংল্যান্ডের প্রথম রাজপথ নির্মাণের ইতিহাস বিষয়ে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইংল্যান্ডের ক্যান্টাবরি শহর গড়ে ওঠে মূলত রোমানদের হাত ধরে। এখানে রোমান মিশনারিরা প্রতিষ্ঠা করে ইংল্যান্ডের তথা ইংলিশ ভাষাভাষীদের প্রাচীন চার্চ ‘সেন্ট মার্টিন চার্চ’ (৫৯৭ সালের পূর্বে)। ধারণা করা যায়, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপের নামকরণ করা হয় ক্যান্টাবরিতে অবস্থিত চার্চের এই ‘সেন্ট মার্টিনের’ নামে। তারা এখানে বেনেডিকটাইন মোনাস্ট্রি স্থাপন করেছিল, যা ৫৯৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর ১৫৩৮ সাল (রিফর্মেশনকাল) পর্যন্ত ক্রিয়াশীল ছিল। এ ছাড়া তারা ক্যান্টাবরি শহরকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য ২৭০-২৯০ সময়কালে ‘সিটি ওয়াল’ নির্মাণ করেছিল, যা এখনো বহাল তবিয়তে দাঁড়িয়ে আছে। ষষ্ঠ শতকে রোমানরা বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে কেন্টের আশপাশের শহর-বন্দরের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ছিল মূলত নৌপথে—স্ট নদীর পথ ধরে। তখনকার রোমান শাসকেরা যোগাযোগের জন্য একটি সড়কপথেরও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
এ জন্য তারা গ্রেট স্ট নদীর তীর ধরে লন্ডনের সঙ্গে ক্যান্টাবরি শহরের সড়কপথে যোগাযোগের জন্য চুন-সুরকি দিয়ে রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট নির্মাণ করে। আধুনিক যুগের বিশাল রাজপথের সঙ্গে এটিকে তুলনা করলে ভুল হবে। এই রাজপথ দিয়ে মূলত দুটি গরুর গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলার মতো প্রশস্ত। প্রায় ২ হাজার বছরের পুরোনো সেই রাজপথ এখনো টিকে আছে, যদিও বর্তমানে এটি পিচঢালাই করে ঢেকে রাখা হয়েছে। ইংল্যান্ডে এর আগে কোনো রাজপথের ধারণাই ছিল না। মজার তথ্য হলো, এই ‘রোমান ওয়াটলিং স্ট্রিট’ বা রাজপথের একদিকের অভিমুখ যেমন ছিল লন্ডনের দিকে, অপরটি ছিল পরিভ্রাজক-তীর্থযাত্রীদের শেষ গন্তব্য পথ রোমের দিকে।
প্রাচীন এই পথের একদিকে এগোলে রোম, অপরদিকে হাঁটলে লন্ডন—বিস্ময়কর এক অনুভূতি জাগ্রত হয়। মনে হচ্ছিল, হাজার বছরের পুরোনো সেই মহাসড়কে দাঁড়িয়ে মুহূর্তে ইতিহাসের অলিগলিতে হারিয়ে যেতে বসেছি।
(চলবে)
আরও পড়ুন:
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
২ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে