যে কারণে সাহিত্যে নোবেল পেলেন ফরাসি আনি এরনো

নওশাদ জামিল
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ২১: ৪৬
Thumbnail image

এবার নোবেল সাহিত্য পুরস্কার নিয়ে ছিল বিস্তর জল্পনা-কল্পনা। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল ৫টায় সুইডেনের স্টকহোমে এক সংবাদ সম্মেলনে পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা করে সুইডিশ অ্যাকাডেমি। এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন ফরাসি ভাষার কথাসাহিত্যিক আনি এরনো। এবারের আলোচনায় একদম সামনের দিকে ছিল তাঁর নাম। ফলে কেউ কেউ বিস্মিত হলেও অনেক সাহিত্যবোদ্ধা অবাক হননি। সারা বিশ্বে পরিচিত অনেক লেখককে নিয়ে জল্পনা থাকলেও সুইডিশ একাডেমি ‘যোগ্য’ ব্যক্তিত্বকে পুরস্কার দিয়েছেন বলে জানান তাঁরা।

এ বছর ১২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জঘন্য হামলার শিকার হন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক সালমান রুশদি। তার পর থেকেই উচ্চারিত হচ্ছিল তাঁর নাম। রুশদি ছাড়াও আলোচনায় ছিলেন আরও কয়েকজন খ্যাতিমান কবি ও কথাসাহিত্যিক। সব কল্পনা-জল্পনা পেরিয়ে সবাইকে ছাপিয়ে পুরস্কার পেলেন ফরাসি ভাষার কথাসাহিত্যিক আনি এরনো।

বিরাশি বছরের আনি এরনো পাঁচ দশক ধরে লেখালেখি করেন। মূলত কথাসাহিত্য লেখেন। তাঁর লেখা মূলত আত্মজীবনীমূলক। বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর উপন্যাসকে নিজের জীবন থেকে ঘনিষ্ঠভাবে অনুপ্রাণিত বলেছেন। নিজের জীবন ও অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি সাহসের সঙ্গে তুলে ধরেছেন যাপিত জীবনের দ্বন্দ্বমুখর জীবন-কথা। তাঁর ভাষায়—লেখালেখি একটি রাজনৈতিক কাজ, যা সামাজিক বৈষম্যের প্রতি আমাদের চোখ খুলে দেয়। এ জন্য তিনি ‘ছুরি’ হিসেবে নিজের ভাষা ব্যবহার করেন, যা তাঁর কল্পনার আবরণ ছিঁড়ে ফেলতে সাহায্য করে। তুলে ধরে অনুভূতির তীব্রতম প্রকাশ। সুইডিশ অ্যাকাডেমির সদস্যরা তাঁর লেখায় ‘সাহসিকতা ও তীক্ষ্ণ স্নায়বিক ধারা’ বিবেচনায় এনে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করেন। সুইডিশ অ্যাকাডেমি আরও বলেছে, ‘আনি এরনো ব্যক্তিগত স্মৃতির শিকড়, বিচ্ছিন্নতা এবং সম্মিলিত সংযম উন্মোচন করেছেন।’

ভারতের বিখ্যাত ফরাসি ভাষাবিদ, সাহিত্যিক, তাত্ত্বিক অধ্যাপক চিন্ময় গুহ আজ সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকা বলেন, ‘এবার যোগ্য ব্যক্তিকেই দেওয়া হলো নোবেল সাহিত্য পুরস্কার। আনি এরনো অনুভূতিশীলতাকে এক নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছেন, যা কবিতা ও সংগীতের কাছাকাছি।’

আনি এরনোর একাধিক উপন্যাস মূল ফরাসি ভাষায় পড়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে চিন্ময় গুহ আরও বলেন, ‘এরনো ব্যক্তিক বা মানুষের কোনো ঘটনাকে আত্মকৃত করে নিয়ে তাঁর রচনাকে প্রায় স্নায়বিক আত্মজীবনীতে পরিণত করেন। তাঁর বিখ্যাত বই “এ গার্লস স্টোরি” যেন একটি মেয়ের আত্মকথা। যেখানে সাহসিকতার সঙ্গে তিনি তুলে ধরেছেন জীবনের দ্বন্দ্বমুখর আখ্যান।’

আনি এরনোর কিছু বইএবার আনি এরনো ছাড়াও ফরাসি ভাষার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ লেখক ছিলেন নোবেল পুরস্কারের দাবিদার। সবার আগে উচ্চারিত হচ্ছিল ফরাসি কথাসাহিত্যিক মিশেল উয়েলবেকের নাম। উয়েলবেক উপন্যাস, কবিতা ও প্রবন্ধ লেখেন। সাহিত্যর নানা শাখায় কাজ করছেন। ফ্রান্স ছাড়াও ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যাপক খ্যাতি ও পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘হোয়াটএভার’ প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ সালে। একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের মাঝামাঝি তাঁকে বহির্বিশ্বে ফরাসি সাহিত্যের প্রধান বাহক বলা হয়। ফরাসি কথাসাহিত্যিক পিয়ের মিশঁও এবারের আলোচনায় এগিয়ে ছিলেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘স্মল লাইভস’-কে ফরাসি সাহিত্যের মাস্টারপিস গণ্য করা হয়। ‘স্মল লাইভস’ ও ‘দি অরিজিন অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ উপন্যাসের জন্য তিনি একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। ইউরোপের প্রায় সব ভাষায় অনূদিত হয়েছে তাঁর লেখা। এ ছাড়াও ফরাসি লেখকদের মধ্যে আলোচনায় ছিলেন পাত্রিক দ্যভিল, পাসকাল ব্র্যুকনার, জ্যঁ এশনোজ। তাঁদের বাদ দিয়ে আনি এরনো নির্বাচিত করায় কেউ কেউ অবাক হতে পারেন। 

আনি এরনোর জন্ম ১৯৪০ সালের ১ সেপ্টম্বর, ফ্রান্সের নর্মান্ডিতে এক শ্রমজীবী পরিবারে। ফ্রান্সের বোর্দো বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য নিয়ে পাঠগ্রহণের পর তিনি সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন। পেশা হিসেবে বেছে নেন শিক্ষকতা। ১৯৭৪ সালে প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘ক্লিনড আউট’। নব্বইয়ের একদম শুরুতে বইটি ইংরেজিতে অনূদিত হলে ইউরোপ-আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে তাঁর সুনাম। এ ছাড়াও তাঁর রয়েছে একাধিক বিখ্যাত উপন্যাস। ১৯৯২ সালে ইংরেজি অনুবাদে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘আ ম্যানস প্যালেস’ শিরোনামের উপন্যাস। এটিও বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পায়। ফরাসি ভাষায় ঐতিহ্যগতভাবেই উপন্যাসের সমৃদ্ধ ধারা রয়েছে। আনি এরনো ওই ধারাকে শুধু সমৃদ্ধই করেননি, পাশাপাশি যোগ করেছেন নতুনতর মাত্রা ও বিন্যাস।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অ্যান্ডার্স ওলসন বলেন, ‘আনি আরনোর লেখা আপসহীন, সৎ ও সাহসী। একই সঙ্গে সরল ও তীক্ষ্ণ ভাষায় তিনি তুলে ধরেন মানুষের মানবিক ও স্নায়বিক অনুভূতি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত