আজমেরী সুলতানা
পয়লা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি উৎসবের নাম, যাতে বাঙালি ঐতিহ্যের নতুন ধারা যোগ করেছে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বৃহৎ আকারে সূচনা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার। শৈল্পিক এই শোভাযাত্রার আয়োজন প্রতিবছরই ভিন্ন কোনো বার্তা নিয়ে আসে। ১৪৩০ বঙ্গাব্দের প্রতিপাদ্য ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’।
শুরুতে শুধু মঙ্গলকামনা এই শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য ছিল না। এর ইতিহাস সম্পর্কে কমবেশি প্রায় আমাদের সবারই জানা। এই শৈল্পিক শোভাযাত্রা এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অংশ ছিল, তখন নাম দেওয়া হয়েছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। কালক্রমে এই শোভাযাত্রা রূপ নিয়েছে বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক হিসেবে একই সঙ্গে নাম হয়েছে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। শুরুটা যেহেতু অশুভ শক্তির বিনাশকে কেন্দ্র করে হয়েছিল, তাই এটি পরবর্তী সময়ে মঙ্গলের জন্য শোভাযাত্রা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পয়লা বৈশাখকে ঘিরে মঙ্গল শোভাযাত্রা হলেও প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে এর প্রধান শোভাযাত্রা বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্ণাঢ্যভাবে সাজানো হয় এই শোভাযাত্রা।
বাঘ ও প্যাঁচার আদলে তৈরি হয় মুখোশ, যাতে শিল্পীরা রংতুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন এ দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। রিকশাচিত্র, নকশিকাঁথা মোটিফ, আলপনা, গ্রাম বাংলার আবহমান ঐতিহ্য বহনকারী চিহ্নের পাশাপাশি বর্তমানের সমসাময়িক মোটিফও থাকে এসব মুখোশের সজ্জায়। তবে এবারে মুখোশে জলরঙে গ্রামের আবহমান বাংলার প্রাকৃতিক চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে, যা এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে এবারের মাস্কের আয়োজনে। আরও একধরনের মুখোশ তৈরি করা হয়, যা মাটি দিয়ে বানানো হয়ে থাকে। বাঘ ও প্যাঁচার মুখোশের তুলনায় আকারে বড় এসব মুখোশে রাজা-রানির মুখাবয়ব তৈরি করা হয়। প্রথম দিকে রাজা-রানির সম্পূর্ণ অবয়ব তৈরি করা হলেও পরে বহন করার সুবিধার্থে তা মুখোশের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই মুখোশগুলোর মাধ্যমে সাধারণত বাঙালির ইতিহাস, দেশীয় ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়, যেগুলোর আগমন ঘটেছে গ্রামবাংলার প্রচলিত বিভিন্ন পুরাকথা থেকে।
শোভাযাত্রার আয়োজনের বিশাল এক অংশজুড়ে রয়েছে সরাচিত্র ও জলরঙের শিল্পকর্ম। সরাচিত্র শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ব্যবহৃত বললে ভুল হবে। পূর্বে গাজীর সরা ও মহররমের সরা, লক্ষ্মীসরার অনুকরণে মুসলমানদের সংস্করণরূপে তৈরি হতো। এভাবে প্রাচীন সরাচিত্র ধর্মের সীমানা অতিক্রম করে ধর্মনিরপেক্ষ শিল্প হয়ে উঠেছিল, যা এককভাবেই মঙ্গল শোভাযাত্রার বার্তা বহন করছে। শোভাযাত্রার সরাচিত্রে শিল্পীর নিজস্ব অভিব্যক্তি, আধুনিক, সমসাময়িক বিষয়বস্তু, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, আলপনা ও রিকশাচিত্রের প্রতিরূপ লক্ষণীয়।
শোভাযাত্রার সবচেয়ে আকর্ষণীয় শিল্পকর্মের বিভাগ হলো কাঠামো। এবার সাতটিরও বেশি কাঠামো থাকছে শোভাযাত্রায়। তার মধ্যে রয়েছে ময়ূর, নীলগাই, ভেড়া, বাঘ, হাতি, ঘোড়া ও টেপাপুতুল (মা ও শিশু)। বাঁশ, কাগজ দিয়ে তৈরি এসব কাঠামোগুলো বাংলার লোকজ সংস্কৃতির ধারক, শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্যের সঙ্গে মিল রেখে রঙিন করে তোলা হয় এগুলোকে। টেপাপুতুল বাঙালির অন্যতম প্রাচীন ঘরোয়া শিল্পকর্ম। মূলত মায়েরা তাদের সন্তানদের খেলার জন্য মাটি টিপে টেপাপুতুল তৈরি করত। এবারে সেই মা ও শিশুর মাঝের আত্মার সম্পর্ক এবং পুতুল তৈরির উদ্দেশ্যই তুলে ধরা হয়েছে টেপাপুতুল (মা ও শিশু) কাঠামোটিতে।
শুধু শোভাযাত্রারই শোভা বাড়ানো হয় না, এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচীর ও স্কুলঘরকেও নতুন সাজে সাজানো হয় প্রতিবছর। এগুলোতেও বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী মোটিফ ব্যবহার করা হয়।
বর্তমান সমাজকে, বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উদ্ভাস ঘটাতে, নতুন বছরে নতুন উদ্যমে, পয়লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। সব রকম বিভেদ ভুলে, অসাম্প্রদায়িক এই চেতনা সবার মাঝে প্রাণের সঞ্চার ঘটাবে এবং নতুন স্পৃহা নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি আশা করি।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী
পয়লা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি উৎসবের নাম, যাতে বাঙালি ঐতিহ্যের নতুন ধারা যোগ করেছে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বৃহৎ আকারে সূচনা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রার। শৈল্পিক এই শোভাযাত্রার আয়োজন প্রতিবছরই ভিন্ন কোনো বার্তা নিয়ে আসে। ১৪৩০ বঙ্গাব্দের প্রতিপাদ্য ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’।
শুরুতে শুধু মঙ্গলকামনা এই শোভাযাত্রার উদ্দেশ্য ছিল না। এর ইতিহাস সম্পর্কে কমবেশি প্রায় আমাদের সবারই জানা। এই শৈল্পিক শোভাযাত্রা এরশাদবিরোধী আন্দোলনের অংশ ছিল, তখন নাম দেওয়া হয়েছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। কালক্রমে এই শোভাযাত্রা রূপ নিয়েছে বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক হিসেবে একই সঙ্গে নাম হয়েছে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। শুরুটা যেহেতু অশুভ শক্তির বিনাশকে কেন্দ্র করে হয়েছিল, তাই এটি পরবর্তী সময়ে মঙ্গলের জন্য শোভাযাত্রা হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে পয়লা বৈশাখকে ঘিরে মঙ্গল শোভাযাত্রা হলেও প্রতিবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে এর প্রধান শোভাযাত্রা বের হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আয়োজনে এবং বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে বর্ণাঢ্যভাবে সাজানো হয় এই শোভাযাত্রা।
বাঘ ও প্যাঁচার আদলে তৈরি হয় মুখোশ, যাতে শিল্পীরা রংতুলির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন এ দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। রিকশাচিত্র, নকশিকাঁথা মোটিফ, আলপনা, গ্রাম বাংলার আবহমান ঐতিহ্য বহনকারী চিহ্নের পাশাপাশি বর্তমানের সমসাময়িক মোটিফও থাকে এসব মুখোশের সজ্জায়। তবে এবারে মুখোশে জলরঙে গ্রামের আবহমান বাংলার প্রাকৃতিক চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে, যা এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে এবারের মাস্কের আয়োজনে। আরও একধরনের মুখোশ তৈরি করা হয়, যা মাটি দিয়ে বানানো হয়ে থাকে। বাঘ ও প্যাঁচার মুখোশের তুলনায় আকারে বড় এসব মুখোশে রাজা-রানির মুখাবয়ব তৈরি করা হয়। প্রথম দিকে রাজা-রানির সম্পূর্ণ অবয়ব তৈরি করা হলেও পরে বহন করার সুবিধার্থে তা মুখোশের আকৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। এই মুখোশগুলোর মাধ্যমে সাধারণত বাঙালির ইতিহাস, দেশীয় ঐতিহ্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়, যেগুলোর আগমন ঘটেছে গ্রামবাংলার প্রচলিত বিভিন্ন পুরাকথা থেকে।
শোভাযাত্রার আয়োজনের বিশাল এক অংশজুড়ে রয়েছে সরাচিত্র ও জলরঙের শিল্পকর্ম। সরাচিত্র শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ব্যবহৃত বললে ভুল হবে। পূর্বে গাজীর সরা ও মহররমের সরা, লক্ষ্মীসরার অনুকরণে মুসলমানদের সংস্করণরূপে তৈরি হতো। এভাবে প্রাচীন সরাচিত্র ধর্মের সীমানা অতিক্রম করে ধর্মনিরপেক্ষ শিল্প হয়ে উঠেছিল, যা এককভাবেই মঙ্গল শোভাযাত্রার বার্তা বহন করছে। শোভাযাত্রার সরাচিত্রে শিল্পীর নিজস্ব অভিব্যক্তি, আধুনিক, সমসাময়িক বিষয়বস্তু, গ্রামবাংলার ঐতিহ্য, আলপনা ও রিকশাচিত্রের প্রতিরূপ লক্ষণীয়।
শোভাযাত্রার সবচেয়ে আকর্ষণীয় শিল্পকর্মের বিভাগ হলো কাঠামো। এবার সাতটিরও বেশি কাঠামো থাকছে শোভাযাত্রায়। তার মধ্যে রয়েছে ময়ূর, নীলগাই, ভেড়া, বাঘ, হাতি, ঘোড়া ও টেপাপুতুল (মা ও শিশু)। বাঁশ, কাগজ দিয়ে তৈরি এসব কাঠামোগুলো বাংলার লোকজ সংস্কৃতির ধারক, শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্যের সঙ্গে মিল রেখে রঙিন করে তোলা হয় এগুলোকে। টেপাপুতুল বাঙালির অন্যতম প্রাচীন ঘরোয়া শিল্পকর্ম। মূলত মায়েরা তাদের সন্তানদের খেলার জন্য মাটি টিপে টেপাপুতুল তৈরি করত। এবারে সেই মা ও শিশুর মাঝের আত্মার সম্পর্ক এবং পুতুল তৈরির উদ্দেশ্যই তুলে ধরা হয়েছে টেপাপুতুল (মা ও শিশু) কাঠামোটিতে।
শুধু শোভাযাত্রারই শোভা বাড়ানো হয় না, এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচীর ও স্কুলঘরকেও নতুন সাজে সাজানো হয় প্রতিবছর। এগুলোতেও বাংলার শিল্প-সংস্কৃতির বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী মোটিফ ব্যবহার করা হয়।
বর্তমান সমাজকে, বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক চেতনার উদ্ভাস ঘটাতে, নতুন বছরে নতুন উদ্যমে, পয়লা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। সব রকম বিভেদ ভুলে, অসাম্প্রদায়িক এই চেতনা সবার মাঝে প্রাণের সঞ্চার ঘটাবে এবং নতুন স্পৃহা নিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আমি আশা করি।
লেখক: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
২ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে