ইমদাদুল হক মিলন
হুমায়ূন আহমেদ তখন শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট। হলের দক্ষিণ পাশে লাল রঙের একটা বিল্ডিংয়ের দোতলায় থাকেন। বাড়ির অদূরে একটা পুকুর আছে। সেই পুকুরে নাকি প্রতিবছরই কেউ না কেউ ডুবে মরে। হুমায়ূন ভাইয়ের সেই ফ্ল্যাটে প্রায়ই আমরা আড্ডা দিতে যেতাম। সালেহ চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ূন ভাইয়ের দুয়েকজন পুরোনো বন্ধু আর আমি।
একবার জন্মদিনের আগের সন্ধ্যায় তাঁর ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছি। তিনি ফুঁক ফুঁক করে সিগারেট টানছেন আর চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। আমাদের হাতেও চায়ের কাপ, সিগারেট। পরদিন তাঁর জন্মদিন, এসব নিয়ে কথাবার্তা চলছে। আমি বললাম, ‘হুমায়ূন ভাই, কাল আপনার জন্য কী গিফট আনব?’ হুমায়ূন ভাই একবার আমার দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানতে লাগলেন। কথা বললেন না। ওদিকে নির্মলদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে উৎফুল্ল গলায় বললেন, ‘বাহ, তোমাদের সম্পর্কটা তো দারুণ। হুমায়ূনের জন্মদিনে কী গিফট দেবে, সেটা তাঁর কাছেই জানতে চাইছ?’ নির্মলদার কথা শেষ হওয়ার পর হুমায়ূন ভাই আমার দিকে তাকালেন। নির্বিকার গলায় বললেন, ‘গিফটটা ক্যাশ হলে ভালো হয়।’ সবাই হো হো করে হাসতে লাগলেন।
আরেকবার হুমায়ূন ভাইয়ের জন্মদিনে বড় আয়োজন করেছেন প্রকাশকেরা। অন্য কারও কারও কথার পর হুমায়ূন ভাইয়ের কথা বলার পালা। তিনি মঞ্চ আলো করে বসেছিলেন। ডায়াসে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। তাঁর বক্তৃতা মানে রসে টইটম্বুর। শ্রোতারা হাসতে হাসতে খুন হয়। সেদিন হুমায়ূন ভাই শুরুই করলেন জন্মদিনের ফুল নিয়ে। জন্মদিনে কী রকম ফুল আসে বাড়িতে বা বাইরে কোনো অনুষ্ঠান হলে সেই অনুষ্ঠানে পাওয়া ফুল বাড়িতে নিয়ে গেলে ফুলের তোড়াগুলো নাকি তাঁর মা আয়েশা ফয়েজ গুনে গুনে দেখেন। কোন বছর ফুল বেশি হলো, কোন বছর একটু কম। গতবারের জন্মদিনে ফুলের তোড়া ইত্যাদি গুনে তিনি নাকি খুব হতাশ। হুমায়ূন ভাইকে ডেকে বললেন, ‘এই কী রে হুমায়ূন, এবার ফুল এত কম কেন? তোর জনপ্রিয়তা কি কমে গেছে নাকি?’
এই ঠাট্টার ওস্তাদ মানুষটি তখনো তেমন জনপ্রিয় হননি। মাত্র পিএইচডি করে দেশে ফিরেছেন। হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। প্রায়ই দুজন নানা রকম গুরুগম্ভীর আলোচনা সভায় যান। সাহিত্যের উচ্চমার্গীয় সেমিনারে যান। এ রকম এক সেমিনার হচ্ছে ঢাকা ইউনিভার্সিটির কাছাকাছি কোনো অডিটরিয়ামে। ইংরেজি সাহিত্যের কঠিনতম বিষয় ইত্যাদি নিয়ে বক্তৃতা করবেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর খান সারওয়ার মুরশিদ। হুমায়ুন আজাদ হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে গেছেন। প্রিয় পাঠক, এই ঘটনা হুমায়ূন আহমেদের মুখে শোনা। হুমায়ূন ভাই নিজে হাসতেন কম, অন্যকে হাসানোর ওস্তাদ ছিলেন। আড্ডা জমিয়ে রাখতেন এমন এমন সব মজার ঘটনা ঘটিয়ে বা বলে, যাঁরা তাঁর আড্ডায় দুয়েকবার গেছেন, তাঁদের নিশ্চয় সেই অভিজ্ঞতা আছে। যে তিনজনের কথা আজ লিখছি, তাঁরা তিনজনই প্রয়াত। প্রয়াতদের নিয়ে লেখার একটা সুবিধা আছে, অনেক কিছু বানানো যায়। আমি একটি শব্দও বানাচ্ছি না। হুমায়ূন ভাই যেভাবে বলেছিলেন, ঠিক সেভাবেই বলছি। খান সারওয়ার মুরশিদ স্যার প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, অসামান্য মেধাবী শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সর্বস্তরের মান্যজন। যথাসময়ে তিনি বক্তৃতা করতে উঠলেন। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে হুমায়ুন আজাদ পাশাপাশি বসে বক্তৃতা শুনছেন। দীর্ঘক্ষণের বক্তৃতা। স্যারের বক্তৃতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হুমায়ুন আজাদ গেলেন ওয়াশরুমে, হুমায়ূন আহমেদ বসে রইলেন। স্যার স্টেজ থেকে নামার পর অনেকেই গিয়ে স্যারের বক্তৃতার প্রশংসা করছেন। হুমায়ূন আহমেদও গেলেন। স্যারকে বললেন, ‘স্যার, আপনার চিবিয়ে চিবিয়ে বলা ইংরেজি আমার খুবই ভালো লেগেছে।’ স্যার হতভম্ব। বলে কী এই ছেলে! তিনি তখনো ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদকে চেনেন না। কিছু একটা বলতে যাবেন তার আগেই হুমায়ুন আজাদ ছুটে এলেন। ঘটনা তিনি কিছুই জানেন না। স্যারের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। ‘স্যার, এ আমাদের হুমায়ূন আহমেদ।’ স্যার নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন, ‘ও আচ্ছা। আমি আপনার “নন্দিত নরকে” বইটা পড়েছি। খুবই ভালো লেখা। আপনার চেহারা চেনা ছিল না। আজ চিনলাম। আচ্ছা হুমায়ূন, আপনি যে বললেন আমার চিবিয়ে চিবিয়ে বলা ইংরেজি আপনার ভালো লেগেছে, এর মধ্যকার শ্লেষটুকু আমি বুঝতে পেরেছি। যা হোক, আমি বক্তৃতায় যা বলেছি, তার দু-চারটা বাক্য আপনি একটু না চিবিয়ে বলুন তো!’ হুমায়ুন আজাদ ঘটনার কিছুই জানেন না। তিনি একবার স্যারের মুখের দিকে তাকাচ্ছেন, আরেকবার হুমায়ূন আহমেদের দিকে। এই ঘটনা আড্ডায় বসে বলতে বলতে হেসেছিলেন হুমায়ূন ভাই। সিগারেটে টান দিয়ে বলেছিলেন, ঠাট্টা করতে গিয়ে ওই একবারই ভালো রকম ফাঁপরে পড়েছিলাম আমি। হুমায়ূন ভাইয়ের জন্মদিনে এই সব ঘটনা মনে পড়ে।
হুমায়ূন আহমেদ তখন শহীদুল্লাহ হলের প্রভোস্ট। হলের দক্ষিণ পাশে লাল রঙের একটা বিল্ডিংয়ের দোতলায় থাকেন। বাড়ির অদূরে একটা পুকুর আছে। সেই পুকুরে নাকি প্রতিবছরই কেউ না কেউ ডুবে মরে। হুমায়ূন ভাইয়ের সেই ফ্ল্যাটে প্রায়ই আমরা আড্ডা দিতে যেতাম। সালেহ চৌধুরী, নির্মলেন্দু গুণ, হুমায়ুন আজাদ, হুমায়ূন ভাইয়ের দুয়েকজন পুরোনো বন্ধু আর আমি।
একবার জন্মদিনের আগের সন্ধ্যায় তাঁর ওই ফ্ল্যাটে গিয়েছি। তিনি ফুঁক ফুঁক করে সিগারেট টানছেন আর চায়ে চুমুক দিচ্ছেন। আমাদের হাতেও চায়ের কাপ, সিগারেট। পরদিন তাঁর জন্মদিন, এসব নিয়ে কথাবার্তা চলছে। আমি বললাম, ‘হুমায়ূন ভাই, কাল আপনার জন্য কী গিফট আনব?’ হুমায়ূন ভাই একবার আমার দিকে তাকিয়ে সিগারেট টানতে লাগলেন। কথা বললেন না। ওদিকে নির্মলদা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে উৎফুল্ল গলায় বললেন, ‘বাহ, তোমাদের সম্পর্কটা তো দারুণ। হুমায়ূনের জন্মদিনে কী গিফট দেবে, সেটা তাঁর কাছেই জানতে চাইছ?’ নির্মলদার কথা শেষ হওয়ার পর হুমায়ূন ভাই আমার দিকে তাকালেন। নির্বিকার গলায় বললেন, ‘গিফটটা ক্যাশ হলে ভালো হয়।’ সবাই হো হো করে হাসতে লাগলেন।
আরেকবার হুমায়ূন ভাইয়ের জন্মদিনে বড় আয়োজন করেছেন প্রকাশকেরা। অন্য কারও কারও কথার পর হুমায়ূন ভাইয়ের কথা বলার পালা। তিনি মঞ্চ আলো করে বসেছিলেন। ডায়াসে দাঁড়িয়ে কথা বলতে শুরু করলেন। তাঁর বক্তৃতা মানে রসে টইটম্বুর। শ্রোতারা হাসতে হাসতে খুন হয়। সেদিন হুমায়ূন ভাই শুরুই করলেন জন্মদিনের ফুল নিয়ে। জন্মদিনে কী রকম ফুল আসে বাড়িতে বা বাইরে কোনো অনুষ্ঠান হলে সেই অনুষ্ঠানে পাওয়া ফুল বাড়িতে নিয়ে গেলে ফুলের তোড়াগুলো নাকি তাঁর মা আয়েশা ফয়েজ গুনে গুনে দেখেন। কোন বছর ফুল বেশি হলো, কোন বছর একটু কম। গতবারের জন্মদিনে ফুলের তোড়া ইত্যাদি গুনে তিনি নাকি খুব হতাশ। হুমায়ূন ভাইকে ডেকে বললেন, ‘এই কী রে হুমায়ূন, এবার ফুল এত কম কেন? তোর জনপ্রিয়তা কি কমে গেছে নাকি?’
এই ঠাট্টার ওস্তাদ মানুষটি তখনো তেমন জনপ্রিয় হননি। মাত্র পিএইচডি করে দেশে ফিরেছেন। হুমায়ুন আজাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। প্রায়ই দুজন নানা রকম গুরুগম্ভীর আলোচনা সভায় যান। সাহিত্যের উচ্চমার্গীয় সেমিনারে যান। এ রকম এক সেমিনার হচ্ছে ঢাকা ইউনিভার্সিটির কাছাকাছি কোনো অডিটরিয়ামে। ইংরেজি সাহিত্যের কঠিনতম বিষয় ইত্যাদি নিয়ে বক্তৃতা করবেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় শিক্ষক প্রফেসর খান সারওয়ার মুরশিদ। হুমায়ুন আজাদ হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে গেছেন। প্রিয় পাঠক, এই ঘটনা হুমায়ূন আহমেদের মুখে শোনা। হুমায়ূন ভাই নিজে হাসতেন কম, অন্যকে হাসানোর ওস্তাদ ছিলেন। আড্ডা জমিয়ে রাখতেন এমন এমন সব মজার ঘটনা ঘটিয়ে বা বলে, যাঁরা তাঁর আড্ডায় দুয়েকবার গেছেন, তাঁদের নিশ্চয় সেই অভিজ্ঞতা আছে। যে তিনজনের কথা আজ লিখছি, তাঁরা তিনজনই প্রয়াত। প্রয়াতদের নিয়ে লেখার একটা সুবিধা আছে, অনেক কিছু বানানো যায়। আমি একটি শব্দও বানাচ্ছি না। হুমায়ূন ভাই যেভাবে বলেছিলেন, ঠিক সেভাবেই বলছি। খান সারওয়ার মুরশিদ স্যার প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, অসামান্য মেধাবী শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সর্বস্তরের মান্যজন। যথাসময়ে তিনি বক্তৃতা করতে উঠলেন। হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে হুমায়ুন আজাদ পাশাপাশি বসে বক্তৃতা শুনছেন। দীর্ঘক্ষণের বক্তৃতা। স্যারের বক্তৃতা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হুমায়ুন আজাদ গেলেন ওয়াশরুমে, হুমায়ূন আহমেদ বসে রইলেন। স্যার স্টেজ থেকে নামার পর অনেকেই গিয়ে স্যারের বক্তৃতার প্রশংসা করছেন। হুমায়ূন আহমেদও গেলেন। স্যারকে বললেন, ‘স্যার, আপনার চিবিয়ে চিবিয়ে বলা ইংরেজি আমার খুবই ভালো লেগেছে।’ স্যার হতভম্ব। বলে কী এই ছেলে! তিনি তখনো ব্যক্তি হুমায়ূন আহমেদকে চেনেন না। কিছু একটা বলতে যাবেন তার আগেই হুমায়ুন আজাদ ছুটে এলেন। ঘটনা তিনি কিছুই জানেন না। স্যারের সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। ‘স্যার, এ আমাদের হুমায়ূন আহমেদ।’ স্যার নির্বিকার ভঙ্গিতে বললেন, ‘ও আচ্ছা। আমি আপনার “নন্দিত নরকে” বইটা পড়েছি। খুবই ভালো লেখা। আপনার চেহারা চেনা ছিল না। আজ চিনলাম। আচ্ছা হুমায়ূন, আপনি যে বললেন আমার চিবিয়ে চিবিয়ে বলা ইংরেজি আপনার ভালো লেগেছে, এর মধ্যকার শ্লেষটুকু আমি বুঝতে পেরেছি। যা হোক, আমি বক্তৃতায় যা বলেছি, তার দু-চারটা বাক্য আপনি একটু না চিবিয়ে বলুন তো!’ হুমায়ুন আজাদ ঘটনার কিছুই জানেন না। তিনি একবার স্যারের মুখের দিকে তাকাচ্ছেন, আরেকবার হুমায়ূন আহমেদের দিকে। এই ঘটনা আড্ডায় বসে বলতে বলতে হেসেছিলেন হুমায়ূন ভাই। সিগারেটে টান দিয়ে বলেছিলেন, ঠাট্টা করতে গিয়ে ওই একবারই ভালো রকম ফাঁপরে পড়েছিলাম আমি। হুমায়ূন ভাইয়ের জন্মদিনে এই সব ঘটনা মনে পড়ে।
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
২ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে