Ajker Patrika

কালকিনিতে বাবা-ছেলেসহ ৩ হত্যা: অভিযোগ চেয়ারম্যান সুমনের বিরুদ্ধে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৪১
ইউপি সদস্য আক্তারের পরিবারের চলছে শোকের মাতম। ছবি: আজকের পত্রিকা
ইউপি সদস্য আক্তারের পরিবারের চলছে শোকের মাতম। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদারীপুরের কালকিনিতে বাবা-ছেলেসহ তিনজন হত্যার ঘটনায় উপজেলার বাঁশগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন ও তাঁর ভাই মশিউর রহমান রাজন ব্যাপারী জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে ওই এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে।

পুলিশ, স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের ভয়ে আক্তার শিকদার ও তাঁর পরিবারসহ শিকদার বংশের অনেক পরিবার বাসা ভাড়া করে অন্যত্র থাকেন। কেউ বাড়িতে এলে চেয়ারম্যানের লোকজনের ভয়ে আবার পালিয়ে যেতে হতো। গত বৃহস্পতিবার রাতে আক্তার শিকদার, তাঁর চাচা আলা বক্স শিকদার, মোশারফ শিকদার, হেলাল শিকদার, আবুল কালাম শিকদার, দুলাল শিকদার, মামুন শিকদার, আকবর শিকদার, আজাহার ঘরামী, ইসমাইল শিকদার, আজহার হাওলাদারসহ প্রায় ১৫টি ঘরে আগুন, ভাঙচুরসহ ঘরের সব মালামাল লুট করে নিয়ে যান চেয়ারম্যান সুমনের লোকজন।

এ খবর পেয়ে শুক্রবার মেম্বার আক্তার শিকদার তাঁর ছেলে মারুফ শিকদারের বাড়িতে আসেন। এ সংবাদ জানতে পেরে চেয়ারম্যান সুমনের লোকজন শিকদারবাড়িতে হামলা চালায়। পরে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় বাড়ি থেকে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করেন আক্তার শিকদার ও তাঁর ছেলে মারুফ শিকদার। তাঁদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সকালে পুলিশ একই ইউনিয়নের খাশেরহাট সেতুর নিচ থেকে হাত-পা কাটা ও মুখ থেঁতলানো আক্তার শিকদার ও তাঁর ছেলে মারুফ শিকদারের লাশ উদ্ধার করে। অন্যদিকে পাশের এলাকা খুনেরচরের সিরাজুল ইসলাম চৌকিদারকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান। এ সময় আহত হন আরও ১০ জন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের পা কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে জানা যায়। তবে তাঁদের নাম জানা যায়নি।

স্থানীয় কোন্দলের জেরে বাঁশগাড়ী ইউপি সদস্য আতাউর রহমান আক্তার শিকদার, তাঁর ছেলে মারুফ শিকদার ও সহযোগী সিরাজুল ইসলাম চৌকিদারকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন। দীর্ঘদিন ধরে বাঁশগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ও মেম্বার আক্তার শিকদারের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে এই তিনজন খুন হন বলে স্থানীয় লোকজন ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের দাবি। গত শুক্রবার ভোরে কালকিনি উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের ভাদুরী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘটনার পর থেকে বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের ভাদুরী ও মধ্যচর এলাকাজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ভয় ও আতঙ্কে এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‍্যাব মোতায়েন আছে।

প্রতিবেশী মোশারফ শিকদার (৬২) চেয়ারম্যান সুমনের ভয়ে নিজ বাড়িতে থাকেন না। কালকিনিতে বাসা ভাড়া করে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে থাকেন। তাঁর বাড়িটিও ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কোনো কথা বললে চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকেও মেরে ফেলবে। আমি তো কোনো কিছুর সঙ্গে জড়িত না। আমার এক ছেলে বিদেশ থাকে, অন্য ছেলে সিলেটে চাকরি করে। তবুও ভয়ে নিজ বাড়িতে থাকতে পারি না। বাসা ভাড়া করে থাকতে হচ্ছে। এই অত্যাচার কবে শেষ হবে আমি জানি না। এই বয়সেও নিজ বাড়িতে থাকতে পারছি না।’

নিহত আক্তারের চাচা আলা বক্স শিকদার বলেন, ‘আমাদের তো সব শেষ হয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের ছেলে ও নাতিকে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে। আমাদের ঘরের সব জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। এখন আর ভয় পাই না। এই চেয়ারম্যান সুমন আমাদের মেরে ফেলবে, ফেলুক। তবু এর বিচার চাই। এই অত্যাচার বন্ধ হোক। এখানকার মানুষ একটু শান্তিতে থাকুক।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রায় ১০ বছর আগে আমার ভাই আবুল বাশারকে ওই চেয়ারম্যান সুমনের লোকজন হত্যা করে লাশ গুম করেছে। ভয়ে কিছু বলতে পারিনি। এ সময় থানায়ও অভিযোগ দেওয়ার সাহস হয়নি। এখন আবার আমার ভাইয়ের ছেলে ও নাতিকে হত্যা করল। এসব ঘটনায় চেয়ারম্যানের বিচার চাই।’

নিহত আক্তার শিকদারের বাবা মতিন শিকদার বলেন, ‘আমাদের বাড়িঘর কয়েক দিন আগে সুমন চেয়ারম্যানের লোকজন পুড়িয়ে দেয়, আর সেই পোড়াবাড়ি ঢাকা থেকে দেখতে আসছিল আক্তার আর আমার নাতি মারুফ। তাদের ওপর হামলা করে নির্মমভাবে হত্যা করেছে সুমন ও তার লোকজন। আমার আর কোনো ছেলেও নাই, নাতিও নাই। আমার পুরো বংশ শেষ করে দিল। আমি এদের বিচার চাই।’

অভিযুক্ত বাঁশগাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমনের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁর ভাই রাজন ব্যাপারীকেও পাওয়া যায়নি। তাঁদের ঘর তালাবন্ধ ছিল। এ সময় তাঁদের দুই চাচি সেফালী বেগম ও আফরোজা বেগম বলেন, ‘চেয়ারম্যান সুমন ও তাঁর ভাই রাজন ঢাকাতেই থাকেন। তাঁর মা অসুস্থ হওয়ায় অনেক দিন ধরে ঢাকায় আছেন। তাহলে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাঁরা কীভাবে জড়িত থাকেন। এগুলো মিথ্যা কথা। তাঁরা কেউ জড়িত না।’

এদিকে খুনের ঘটনার মাঠপর্যায়ের তদন্তে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল মাবুদ। গতকাল শনিবার দুপুরে নিহত তিনজনের বাড়িতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেন।

অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আব্দুল মাবুদ বলেন, ঘটনাটিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এভাবে তিনজনকে মর্মান্তিকভাবে হত্যা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ফলে হেডকোয়ার্টার থেকে বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে বিষয়টি অনুধাবনের জন্য আসা হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে সম্ভাব্য খুঁটিনাটি দেখা হচ্ছে। তবে এখানে চেয়ারম্যান সুমন আর মেম্বার আক্তারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝামেলা ছিল, বিষয়টি এমনই বোঝা যাচ্ছে। তার পরেও তদন্ত করে স্পষ্ট হওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিএসএফের বিরুদ্ধে আখাউড়া সীমান্ত থেকে তরুণকে ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ

আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি’ 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত এলাকা থেকে মুন্না (১৮) নামের এক তরুণকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ধরে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগীর পরিবার।

মুন্না আখাউড়া উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের বাউতলা গ্রামের মো. শাহ আলম মিয়ার ছেলে। পরিবারের দাবি, আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) ভোরের দিকে মুন্নাকে সীমান্ত এলাকা থেকে বিএসএফ ধরে নিয়ে যায়।

আজ বেলা ২টার দিকে বাউতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মুন্নার বাবা মো. শাহ আলম মিয়া রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছেলের ফেরার অপেক্ষা করছেন। এ সময় শাহ আলম মিয়া জানান, মুন্না বেকার। মাঝে মাঝে অটোরিকশা চালালেও তিনি আলাদা ঘরে বসবাস করেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে ছেলেকে ঘরে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে সীমান্ত এলাকার এক ভারতীয় বাসিন্দার মাধ্যমে জানতে পারেন, বিএসএফ তাঁর ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে।

শাহ আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমি আগরতলায় থাকা আমার আত্মীয়দের জানাই। তারা বিএসএফ ক্যাম্পে গিয়ে আমার ছেলেকে দেখতে পেয়েছে বলে জানিয়েছে। বর্তমানে আত্মীয়রা তাকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করছে।’

এ বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) আখাউড়া কোম্পানি সদরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিষয়টি জানার পর তাঁরা বিএসএফ ক্যাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে বিএসএফ কর্তৃপক্ষ বিকেল পর্যন্ত মুন্নাকে আটক করার বিষয়টি স্বীকার করেনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যুবক গুলিবিদ্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পূর্ববিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় সাগর মিয়া নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যায় শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ মো. সাগর মিয়া (৩৫) শহরের ফুলবাড়িয়া এলাকার আবু সাঈদের ছেলে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহীদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষের হামলায় সাগর নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, পূর্ববিরোধের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে এবং কারা এই হামলার পেছনে জড়িত, তা জানতে তদন্ত চলছে।

স্থানীয়রা জানায়, সন্ধ্যার দিকে শহরের মুন্সেফপাড়া এলাকার খ্রিষ্টান মিশন মেমোরিয়াল হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন সাগর। সে সময় মোবাইল ফোনে কারও একজনের সঙ্গে কথা বলছিলেন। এ সময় অজ্ঞাতনামা দুয়েক ব্যক্তি সাগরের ওপর হামলা চালায়। পরে স্থানীয়রা তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় রেফার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বাসের ধাক্কায় লোহার গেট ভেঙে সিকিউরিটি গার্ড নিহত, রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির অভিযোগে ডিপো ইনচার্জ গ্রেপ্তার

শ্যামপুর-কদমতলী (ঢাকা) প্রতিনিধি 
ডিপোর ইনচার্জ ফসিয়ার রহমান। ছবি: সংগৃহীত
ডিপোর ইনচার্জ ফসিয়ার রহমান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর ডেমরা থানাধীন দেইল্লায় বাসের ধাক্কায় লোহার গেট ভেঙে পড়ে এক সিকিউরিটি গার্ড নিহতের ঘটনায় ডিপোর ইনচার্জ ফসিয়ার রহমানকে (৬৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে তাঁকে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হলে বিকেলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গতকাল মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে দেইল্লা এলাকায় অবস্থিত রাজধানী ও অছিম গাড়ির ডিপোতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত সিকিউরিটি গার্ডের ছেলে মো. রাকিব সরদার ডেমরা থানায় দুজনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

গ্রেপ্তার ফসিয়ার রহমান নড়াইল জেলার লোহাগড়া থানার মাকরাইল গ্রামের মৃত মোকাদ্দেস শিকদারের ছেলে। তিনি বর্তমানে ডেমরার বামৈল এলাকায় বসবাস করেন। মামলার অপর আসামি রাজধানী পরিবহনের বাসের হেলপার রানা (৩৮)।

নিহত ইদ্রিস সরদার (৬২) পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার সাকারিকাঠি গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গত ৬–৭ মাস ধরে দেইল্লা সরদার রি-রোলিংয়ের পরিত্যক্ত মিল এলাকায় অবস্থিত রাজধানী ও অছিম গাড়ির ডিপোতে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ডিউটি শেষে তিনি ডিপোতেই রাত যাপন করতেন।

জানা যায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ইদ্রিস সরদার ডিপোর মেইন গেটের পেছনে দাঁড়িয়ে ডিউটি করছিলেন। এ সময় রাজধানী পরিবহনের একটি বাস (রেজি: ঢাকা মেট্রো ব-১১-৯১১২) ব্যাক গিয়ারে ডিপোতে প্রবেশ করানোর সময় লোহার গেটে ধাক্কা দেয়। এতে গেট ভেঙে তাঁর ওপর পড়লে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে আশপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে স্টাফ কোয়ার্টার হলি এইড হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।

নিহত ইদ্রিস সরদারের ছেলে মো. রাকিব সরদার অভিযোগ করেন, বাসের হেলপার রানা বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। এ ছাড়া ডিপোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ফসিয়ার রহমান দীর্ঘদিন ধরে লোহার গেটের প্রয়োজনীয় মেরামত ও ফিটিংস ঠিক না করায় দুর্ঘটনাটি ঘটে। আসামিদ্বয়ের অবহেলার কারণেই তাঁর পিতার মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

এ বিষয়ে ডেমরা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মুরাদ হোসেন (পিপিএম) বলেন, মামলার পরপরই ফসিয়ার রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

মুরাদ হোসেন আরও বলেন, রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির কারণে ফসিয়ার রহমানকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

চাঁদা না পেয়ে ডিশ-ইন্টারনেটের ব্যবসা দখল করতে যুবলীগ নেতাকে খুন—দাবি পরিবারের

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা-বিমানবন্দর (ঢাকা)
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর দক্ষিণখানে চাঁদা না দেওয়ায় যুবলীগের নেতা শাহজাহান ডিলারকে (৪৫) এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। তাঁকে খুন করা হতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা স্ত্রীকে জানিয়েছিলেন তিনি। হুমকি পেয়ে থানায় অভিযোগও দিয়েছিলেন শাহজাহান। নিহত শাহজাহানের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

রাজধানীর দক্ষিণখানের নদ্দাপাড়ার তালতলা মোড়ে গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে যুবলীগ নেতা শাহজাহানকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ঘটনাস্থল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি ও হত্যাকারীদের একটি মাথার ক্যাপ জব্দ করে পুলিশ। শাহজাহান আশকোনা কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি এবং ইন্টারনেট ও ডিশ ব্যবসায়ী ছিলেন।

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর গতকাল মঙ্গলবার মধ্যরাতে নিহত শাহজাহানের স্ত্রী ঝর্ণা আক্তার বাদী হয়ে ডিএমপির দক্ষিণখান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করা হয়েছে।

শাহজাহানের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে তাঁর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল চাঁদাবাজেরা। একপর্যায়ে চাঁদা না পেয়ে তাঁর ডিশ ও ইন্টারনেটের ব্যবসা দখল করতে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এদিকে নিহত শাহজাহানের চাচাতো ভাই সোহেল রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের দুই দিন আগেও শাহজাহান ভাই ভাবিকে বলেছিলেন, আমি হয়তো বেশি দিন থাকব না। তুমি আমার ছেলেমেয়েদের দেখে রেখো।’ তিনি বলেন, ‘শাহজাহান ভাই যুবলীগের বিমানবন্দর থানার সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। ২০২৪ সালের পর থেকে তাঁর কাছ সন্ত্রাসীরা চাঁদা দাবি করে আসছিল। তাঁর কিছু ব্যবসা-বাণিজ্যও তারা দখল করে নিয়েছিল।’

সোহেল জানান, নদ্দাপাড়া এলাকায় শাহজাহানের একটি ফ্ল্যাট কেনা ছিল। রাতে তিনি ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে থাকতেন।

আরেক চাচাতো ভাই নাহিদ পারভেজ আজকের পত্রিকাকে জানান, ৫ আগস্টের পর চাঁদার জন্য একাধিকবার শাহজাহানকে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। পরে তিনি থানায় লিখিত অভিযোগও করেছিলেন। এ ছাড়া বহুবার তৎকালীন ওসিকে জানানো হয়েছিল।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরিফুল ইসলাম।

হত্যাকাণ্ডের কারণ ও কারা হত্যা করেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন। আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালাচ্ছি। গ্রেপ্তারের পর বিস্তারিত বলা যাবে। তদন্তাধীন বিষয়ে কিছু বলতে চাচ্ছি না।’

চাঁদা দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘আমরা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও এমনটা জানিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করে যা বলল ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

দুই মামলা থেকে মির্জা আব্বাস-আমান-গয়েশ্বরসহ ৪৫ জনকে অব্যাহতি

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল, হেলমেট ও ভুয়া নম্বরপ্লেট উদ্ধার

বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব

মেসিকে ১৫ কোটি টাকার ঘড়ি উপহার দিলেন আম্বানি

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত