Ajker Patrika

১০০ থেকে ৫০০ তুলে দেওয়া হয় ২০ টাকা

  • মসজিদের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের বিরুদ্ধে।
  • প্রতি মাসে টাকা ওঠে ১০ থেকে ১৫ হাজার।
সুব্রত কুমার, কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ)
আপডেট : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৪: ৫৬
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে একটি মসজিদের নামে তোলা টাকার সিংহভাগই ছয়নয় করার অভিযোগ উঠেছে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের বিরুদ্ধে। আগে মসজিদটিতে দলিলপ্রতি মাত্র ২০ টাকা দেওয়া হলেও বর্তমানে তা-ও দেওয়া হয় না। আর এসব বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন মসজিদের সাধারণ সম্পাদক দীন ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কোটচাঁদপুর উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসে সপ্তাহে দুই দিন (বুধ ও বৃহস্পতিবার) জমি রেজিস্ট্রি হয়। এই দিনগুলোতে দলিলপ্রতি কোটচাঁদপুর উপজেলা জামে মসজিদের নাম করে তোলা হয় ১০০ থেকে ৫০০ টাকা। তবে মসজিদে দেওয়া হতো মাত্র ২০ টাকা করে। আর বাকি টাকা ছয়নয় করার অভিযোগ রয়েছে সাবরেজিস্ট্রি অফিসের বিরুদ্ধে। ওই টাকা তোলেন অফিসের নকলনবিশ মিলন হোসেন। এদিকে বর্তমানে কোনো টাকাই মসজিদে দেওয়া হয় না বলে জানিয়েছেন মসজিদের ইমাম হাফেজ ইব্রাহিম খলিল।

উপজেলার বড় বামনদহ গ্রামের বাসিন্দা মারুফ হোসেন। জমি রেজিস্ট্রি করায় তাঁকে দিতে হয়েছে ১০০ টাকা। তিনি বলেন, ‘আমি একটা জমি রেজিস্ট্রি করতে গিয়েছিলাম। রেজিস্ট্রি শেষ হওয়ার পর সর্বশেষ দরজার পাশে টেবিলে থাকা মানুষটা আঙুলের টিপ নিলেন দলিলে। এরপর বললেন, ১০০ টাকা দেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কিসের টাকা। তিনি বললেন মসজিদের জন্য। সে সময় আমি কোনো কথা না ভেবেই টাকাটা দিয়ে দিলাম। এখন দেখছি, ওই টাকা নিয়েও তাঁরা নয়ছয় করেন।’

জানতে চাইলে উপজেলা জামে মসজিদের সাবেক মুয়াজ্জিন হাফেজ খায়রুল বাশার বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে রাজসাক্ষী। যে সময় মসজিদের দায়িত্বে ছিলাম, সে সময় বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন ইউএনও স্যারকে জানিয়েছিলাম। এরপর তিনি ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কিন্তু কয়েক দিন পর আবারও যাচ্ছেতাই হয়ে যায়।’

খায়রুল বাশার বলেন, তাঁরা মসজিদের জন্য শুধু ১০০ টাকা নয়, ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। যার কাছ থেকে যেমন পারেন। সেখান থেকে দলিলপ্রতি মসজিদে দেন মাত্র ২০ টাকা।

এভাবে প্রতি মাসে মসজিদের জন্য ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা তোলা হলেও দেওয়া হয় মাত্র ২ থেকে ৩ হাজার টাকা।

মসজিদের বর্তমান ইমাম হাফেজ ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘আমি মসজিদে আসার পর দলিলপ্রতি ২০ টাকা দিতাম। তবে কয়েক মাস যাবৎ কোনো টাকাই দেই না। তবে জানতে পেরেছি, মসজিদের নাম করে সর্বনিম্ন ১০০ টাকা করে তোলা হয়। এ ছাড়া বেশি টাকাও তোলা হয়।’

তবে অভিযোগ মানতে নারাজ উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহকারী আব্দুল মালেক। তিনি বলেন, ‘১০০ টাকা করে নেওয়া হয় সত্য, তবে বেশির ভাগ টাকাই

দেওয়া হয় মসজিদে। আর ২০ টাকা মিলন হোসেনকে দেওয়া হয় টাকা তোলার জন্য।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক ও মৎস্য কর্মকর্তা দীন ইসলাম বলেন, ‘মসজিদে একটা পরিমাণ টাকা সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে দেওয়া হয়। তবে পরিমাণটা কত, সেটা আমার জানা নাই। আর এটা তো বেশ আগে থেকে তাঁরা মসজিদে দিয়ে থাকেন।’ তবে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন।

উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার তামিম আহম্মেদ চৌধুরী আজকের পত্রিকা’কে বলেন, ‘গেল ৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে মসজিদ বাবদ পূর্বে যে টাকা সংগ্রহ করা হতো, তা বন্ধ করতে আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম। যা এখনো বলবৎ রয়েছে। ফলে এক মাসের অধিক সময় মসজিদেও কোনো দান করা হয়নি। মসজিদের দান সংগ্রহের বিষয়টি আমি এই অফিসে যোগদানের আগে থেকে হয়ে আসছে। এই দান সংগ্রহ ও ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। পুরো বিষয়টি অফিসের সহকারী দেখভাল করেন। কোনো বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হলে আমাকে জানাবেন। আমি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত