Ajker Patrika

সীতাকুণ্ড ডিসি পার্কের ফুলমেলা জমজমাট, ২৬ দিনে আয় আড়াই কোটি টাকা

সবুজ শর্মা শাকিল, সীতাকুণ্ড 
Thumbnail image
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের সাগর উপকূলে অবস্থিত ডিসি পার্কে চলছে মাসব্যাপী ফুলমেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের সাগর উপকূলে অবস্থিত ডিসি পার্কে চলছে মাসব্যাপী ফুলমেলা। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এ মেলার যতই সময় গড়াচ্ছে, ততই পার্কে বাড়ছে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়। মেলার আগত দর্শনার্থীর কাছে ২৬ দিনে টিকিট বিক্রি করে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয় হয়েছে বলে জানিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। একই সময়ে ডিসি পার্কের ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছে ৪ লাখ ৯০ হাজার দর্শনার্থী।

ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মানুষের ভিড়ে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানিয়েছেন আগত দর্শনার্থীরা। মেলায় সৌরভ ছড়ানো ফুলের সৌন্দর্য উপভোগে অনলাইনে টিকিটের ব্যবস্থার মাধ্যমে দর্শনার্থীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দাবি জানিয়েছেন পার্কে আগতরা।

আজ বুধবার বিকেলে ডিসি পার্ক ঘুরে দেখা গেছে, পার্কজুড়ে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়। আগত দর্শনার্থীদের এক-তৃতীয়াংশ এসেছে পরিবার-পরিজন নিয়ে ফুলের সৌন্দর্য দেখতে। নানা বর্ণের ফুলের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ ও বিমোহিত হয়েছে তারা। পার্কটির সামনে রয়েছে বিশাল সাগর। সেই সাগরের বাতাসের ঢেউ আছড়ে পড়ছে পার্কে। আর বাতাসে দোল খাচ্ছে রংবেরঙের ফুল। ফুলে ফুলে সাজানো নানা ধরনের শিল্পকর্ম।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাসব্যাপী আয়োজিত ফুল উৎসব ৪ জানুয়ারি শুরু হয়; যা ৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই উৎসবের সময় বাড়ানো হয়েছে। ফুল উৎসব ঘিরে পার্কে তিনটি বিনোদন কেন্দ্রের পাশাপাশি ৪২টি দোকান বসেছে। উৎসবের টিকিটের মূল্য দর্শনার্থীপ্রতি ৫০ টাকা। আজ বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পার্কে ১৫ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম হয়েছে; যা গত মঙ্গলবারের চেয়ে তিন হাজার বেশি।

জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার ও ডিসি পার্ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. আলাউদ্দিন বলেন, আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত দর্শনার্থীদের টিকিট বিক্রি থেকে আয় হয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ফুল উৎসবে বর্ণিল ফুলের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অব্যাহত রেখেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে রয়েছে পিঠা উৎসবও।

পার্ক কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, বুধবার বিকেলে শুরু হওয়া এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, পূর্ব তিমুর, ভুটান, মিয়ানমার, কম্বোডিয়াসহ ১৬টি দেশের শিক্ষার্থীরা। তাঁরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দেশের পোশাকে তুলে ধরছেন তাঁদের দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এ ছাড়া আগামীকাল বৃহস্পতিবার ডিসি পার্কের ফুল উৎসব মাতাতে আসছেন শিরোনামহীন ব্যান্ডের শিল্পীরা। পাশাপাশি আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি ফুল উৎসব ঘিরে এম এ আজিজ স্টেডিয়াম মাতাবেন দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড নগর বাউল, আর্বোভাইরাস, আর্টসেল, শিরোনামহীন, অ্যাভয়েডরাফা, তীরন্দাজ ও কাকতাল ব্যান্ডের শিল্পীরা। ডিসি পার্কে আগত দর্শনার্থীদের ওই অনুষ্ঠানে যেতে হলে ফুল উৎসবের টিকিটের পাশাপাশি টাকা দিয়ে আলাদা টিকিট কিনতে হবে। সামনের সারির টিকিটের দাম ৫০০ টাকা এবং পেছনের সারির ৩০০ টাকা।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের সাগর উপকূলে অবস্থিত ডিসি পার্কে চলছে মাসব্যাপী ফুলমেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের সাগর উপকূলে অবস্থিত ডিসি পার্কে চলছে মাসব্যাপী ফুলমেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ডিসি পার্কের সৌন্দর্য দেখে অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আগত দর্শনার্থী আবুল খায়ের। তিনি জানান, একসময় সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল ১৯৪ একরের এই স্থান। যেখানে সন্ধ্যার আঁধার নামলেই বসত মাদকের আসর। কিন্তু তৎকালীন জেলা প্রশাসকের আন্তরিকতায় তা উদ্ধারের পর গড়ে তোলা হয়েছে ফুলের বাগান। মাসব্যাপী চলা এই মেলায় ১৩৬ প্রজাতির ফুলের সমারোহ ঘটিয়ে যে জীবন্ত ফুলের বাগান দেখে আনন্দের পাশাপাশি অনেকটাই বিস্মিত হয়েছেন তিনি।

অন্যদিকে সপরিবার চট্টগ্রাম নগরী থেকে পার্কে ঘুরতে আসা চাকরিজীবী বিশ্বজিৎ পাল বলেন, বুধবার বিকেলে ফুলমেলা দেখতে তিনি স্ত্রী, সন্তানসহ পার্কে এসেছেন। কিন্তু অতিরিক্ত দর্শনার্থীর চাপ থাকায় মূল ফটক পেরিয়ে ভেতরে ঢুকতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। দর্শনার্থীর অতিরিক্ত ভিড়ের চাপে ফুলের সৌন্দর্য মনমতো উপভোগ করতে পারেননি তাঁরা। অনলাইনে টিকিটের ব্যবস্থার মাধ্যমে দর্শনার্থীর চাপ কিছুটা কমানো গেলে আগতরা সবাই ফুলের সৌন্দর্য ভালোভাবে উপভোগ করতে পারতেন।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের সাগর উপকূলে অবস্থিত ডিসি পার্কে চলছে মাসব্যাপী ফুলমেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সলিমপুর ইউনিয়নের সাগর উপকূলে অবস্থিত ডিসি পার্কে চলছে মাসব্যাপী ফুলমেলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কথা হয় মনীষা ভৌমিক নামের বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, একটা ছবি তোলার জন্য ১০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছিলেন। দর্শনার্থীর এত চাপ যে ভালো করে একটি ছবি তোলা যাচ্ছিল না। পার্কে ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হলে দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ জন্য অনলাইনে অগ্রিম নির্দিষ্টসংখ্যক টিকিটের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি।

ডিসি পার্ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মো. আলাউদ্দিন জানান, ফুলের মেলায় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে তাঁরা বিমোহিত হয়েছেন। মেলা ঘিরে প্রতিদিন বাড়ছে দর্শনার্থীর ভিড়। তাঁরা মেলায় আগত দর্শনার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে টিকিট কাউন্টার বাড়িয়েছেন।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানের দর্শনার্থীর পদভারে মুখর হয়ে উঠেছে ডিসি পার্ক। বন্ধের দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোতেও পার্কে দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড় রয়েছে। এর বাইরেও অনেক দর্শনার্থী কাজের চাপ এবং বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে এখনো ফুল উৎসবে আসতে পারেনি। তাদের কথা বিবেচনা করে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে ফুল উৎসব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত