Ajker Patrika

জেলা প্রশাসনের শোভাযাত্রায় কোটাবিরোধী আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুষ্টিয়া পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুষ্টিয়ায় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাচেষ্টা মামলার এক এজাহারভুক্ত আসামিকে অংশ নিতে দেখা গেছে। আজ সোমবার সকালে কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বর থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বের হওয়া আনন্দ শোভাযাত্রার ব্যানারের সামনের সারিতে ছিলেন তিনি।

ওই ব্যক্তির নাম মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম। তিনি কুষ্টিয়া পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও কুষ্টিয়া বড় বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছিলেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামি হয়ে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন।

এদিকে জেলা প্রশাসনের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে মামলার আসামি ও আওয়ামী লীগ নেতাকে শোভাযাত্রার ব্যানারে দেখতে পেয়ে রাজনৈতিক ও সাধারণ মহলে আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন নেটিজেনরা। তবে এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক কিছু জানেন না জানালেও মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম শোভাযাত্রায় উপস্থিত থাকার বিষয়টি আজকের পত্রিকাকে নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, আজ বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপনে নানা আয়োজন করে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। তারই অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ৮টায় কুষ্টিয়া পৌরসভা চত্বর থেকে একটি আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। মজমপুরগেটসহ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে কুষ্টিয়া কালেক্টরেট চত্বরে বনবীথিতে এসে শোভাযাত্রাটি শেষ হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের আনন্দ শোভাযাত্রার ব্যানার ধরে সামনের সারিতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের সঙ্গে মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেমকেও দেখা যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোকারম হোসেন ৫ আগস্ট কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় তামজিদ হোসেন জনি নামে এক যুবককে হত্যাচেষ্টা মামলার এজাহারভুক্ত ৪২ নম্বর আসামি। ওই মামলার প্রধান আসামি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের সাবেক এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ। মামলায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করা ছাড়াও আরও ৪০ থেকে ৪৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় দায়ের করা ওই মামলার বাদী ভুক্তভোগী বড় ভাই জিলহজ হোসেন।

কুষ্টিয়া পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুষ্টিয়া পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম। ছবি: আজকের পত্রিকা

জানতে চাইলে মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম প্রথমে মামলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আজ সকালে জেলা প্রশাসনের বর্ষবরণের আনন্দ শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলাম। মামলার প্রমাণ রয়েছে জানালে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা আছে জানিয়ে তিনি প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা করতে চান।’

কুষ্টিয়া পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুষ্টিয়া পৌর ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি মোকারম হোসেন মোয়াজ্জেম। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া নাগরিক কমিটির প্রতিনিধি সুলতান মারুফ তালহা বলেন, ‘একজন জুলাই যোদ্ধা হিসেবে আমি বলব, যারাই ফ্যাসিস্টদের সহযোগীদের নিয়ে পথ চলবে, তারাই নিন্দনীয় হবে। সে, আমি হই, ডিসি হন, বিএনপি হোক আর জামায়াত হোক।’

কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমনাটা কেন হলো। ব্যাপারটি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব। কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মিজানুর রহমান বলেন, কোনোভাবেই আমি কিছু জানি না। এখনই ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তৌফিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমি তাকে চিনি না। খেয়ালও করিনি। তিনি মামলার আসামি হলে আমি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হান্নান মাসউদকে ফেসবুকে হুমকি

হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
ফেসবুকে হুমকি দেওয়া পোস্ট। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
ফেসবুকে হুমকি দেওয়া পোস্ট। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে শাপলা কলি প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হান্নান মাসউদকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে ‘রুপক নন্দী’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া এক পোস্টে তাকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ভয়াবহ পরিণতির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

ভাইরাল হওয়া ওই পোস্টে দেখা যায়, রুপক নন্দী সরাসরি হান্নান মাসউদকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, ‘হান্নান, আগুন নিয়ে খেলা করো না। পরে পস্তাতে হবে—বলে দিলাম।” পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হালিম আজাদ (পিচ্চি আজাদ)কে যারা ভালোবাসেন, তারা হান্নান মাসউদকে ছাড় দেবেন না। এমনকি হালিম আজাদকে গ্রেপ্তার করা হলে হান্নান মাসউদকে হাতিয়ায় নিষিদ্ধ করার ঘোষণাও দেওয়া হয়।

এদিকে একই সময়ে আব্দুল হালিম আজাদের ছেলে ইসরাত রায়হান অমি এনসিপির জনৈক কর্মীকে মেসেঞ্জারে চরম উসকানিমূলক বার্তা পাঠান। ওই বার্তায় তিনি লেখেন, আব্দুল হালিম আজাদকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হলে হান্নান মাসউদ ও তানভীরসহ অন্যান্য নেতাদের হাতিয়ার উত্তর অঞ্চলে চলাচল ‘হারাম’ করে দেওয়া হবে। বার্তায় আরও বলা হয়, “ডাইরেক্ট গিলে খেয়ে ফেলবে আমাদের নেতা-কর্মীরা।”

স্থানীয়রা জানান, হাতিয়ার রাজনীতিতে আব্দুল হালিম আজাদ সরকার গঠনে সম্ভাবনাময় একটি দলের পক্ষে সম্প্রতি অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান। এ নিয়ে এনসিপি প্রার্থী হান্নান মাসউদের সমর্থকদের সঙ্গে এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। সম্প্রতি আব্দুল হালিম আজাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার গুঞ্জন শুরু হলে তার অনুসারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং এর দায় হান্নান মাসউদের ওপর চাপিয়ে এ ধরনের হুমকি দিতে শুরু করে।

এই ঘটনায় হাতিয়ার সাধারণ ভোটার ও এনসিপি সমর্থকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভোটার বলেন, নির্বাচনের আগে একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে এভাবে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

এ বিষয়ে আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, “আমি এসব হুমকিতে মোটেও শঙ্কিত নই। জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার গুলির মুখে আমরা ভয় পাইনি, সেখানে এসব সন্ত্রাসীদের তোয়াক্কা করি না। প্রশাসন যদি শুরু থেকেই কঠোর ব্যবস্থা নিত, তাহলে তারা এত বড় সাহস পেত না। আজ হাদি’র মতো জুলাই অভ্যুত্থানের একজন নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। এটা গভীর উদ্বেগের বিষয়।”

এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, এ ঘটনায় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যারা পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করছে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সেতুর দাবি: চাষির ফসলের ন্যায্যমূল্য আটকা ইছামতিতে

দিনাজপুর প্রতিনিধি ও চিরিরবন্দর সংবাদদাতা
২৫০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই ইউনিয়নবাসীর। সম্প্রতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
২৫০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোই ভরসা দুই ইউনিয়নবাসীর। সম্প্রতি দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার সাতনালা ইউনিয়নের তারকশাহার হাট এলাকায় ইছামতী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাব দীর্ঘদিনের। নদী পারাপারে ভরসা ২৫০ ফুট দীর্ঘ একটি বাঁশের সাঁকো। সেতুর অভাবে প্রতিদিনের যাতায়াতের মতো কৃষকের ন্যায্যমূল্যও আটকে আছে ইছামতীর তীরে। অন্যদিকে দীর্ঘ পথ ঘুরতে গিয়ে বেড়ে যাচ্ছে কৃষকের ফসল উৎপাদন খরচ।

জানা গেছে, এই সাঁকো দিয়েই উপজেলার সাতনালা ও আলোকডিহি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধিরা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। তাই তো স্বাধীনতার ৫৫ বছর পেরিয়ে আজও বাঁশের সাঁকোর ভরসায় দুই ইউনিয়নের মানুষ।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সাঁকো ব্যবহার করে এলাকার মানুষ বেকিপুল বাজার, কিষ্টহরি বাজার, চাম্পাতলী বাজার, বিন্যাকুড়ির হাট, তারকশাহার হাট, ইছামতী ডিগ্রি কলেজ, ইছামতী ফাজিল মাদ্রাসা, মডেল স্কুল এবং রানীরবন্দর সুইয়ারী বাজারে যাতায়াত করেন। ব্যাংক লেনদেন, শিক্ষা কার্যক্রম, হাটবাজারে যাওয়াসহ প্রায় সব কাজে নদী পার হতে হয় এই সাঁকো দিয়ে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই জনপদের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। অঞ্চলটি সবজি উৎপাদনের জন্য পরিচিত। তবে যোগাযোগব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে নিতে গিয়ে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। সাঁকোর ওপর দিয়ে ভ্যান বা অন্য কোনো যান চলাচল সম্ভব নয়। ফলে কৃষিপণ্য বহনের জন্য অনেককে চার-পাঁচ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে এবং ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকেরা।

জোত সাতনালা গ্রামের কৃষক হাসান আলী জানান, নদীর ওপারে তাঁর বেশির ভাগ জমি। ধান কেটে সাঁকোর কারণে ভ্যানে করে বাড়ি আনতে পারছেন না। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে দূরের পথ ঘুরে ধান পরিবহন করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা এসে বলেন, ভোট দিলে এখানে সেতু হবে। কত নির্বাচন চলে গেল, কিন্তু আজও সেতু হলো না।’

জানতে চাইলে সাতনালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. এনামুল হক শাহ বলেন, সাঁকোটির দুই পাশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাটবাজার থাকায় প্রতিদিন শত শত মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। তিনি জানান, ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাসুদার রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ইছামতী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নরসুন্দার তীর থেকে ৪ শতাধিক গ্রিল উধাও

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দার সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা গ্রিল খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কিশোরগঞ্জের নরসুন্দার সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা গ্রিল খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের বাউন্ডারিতে থাকা চার শতাধিক রডের গ্রিল উধাও হয়ে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ২০ লক্ষাধিক টাকা। এত গ্রিল উধাও হয়ে যাওয়ার পরও কর্তৃপক্ষকে এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই এমন ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিনে নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের কাচারিবাজার ব্রিজ থেকে বড়বাজার মাছমহল ব্রিজ পর্যন্ত দেখা যায়, নদের দুই পাশের বাউন্ডারির চার শতাধিক গ্রিল উধাও হয়ে গেছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালে উদ্যোগ নেওয়া নরসুন্দা সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১১০ কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভা যৌথভাবে কাজটি করে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। প্রকল্পের টাকা নিয়েও লুটপাটের অভিযোগ ছিল।

অন্যদিকে নরসুন্দা নদের পাড়ের ওয়াকওয়েতে অধিকাংশ সড়কবাতি না থাকায় সন্ধ্যার পর এখানে দেখা যায় ভুতুড়ে অন্ধকার। আলো না থাকার সুযোগে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। মাদকের আখড়া হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে স্থানটি। সন্ধ্যার পর লোকজন ভয়ে এ ওয়াকওয়ে দিয়ে যাতায়াত করেন না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

পৌরবাসী আজিজুল রিয়াদ ও সাকিবসহ কয়েকজন বলেন, ‘কিশোরগঞ্জ পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও পৌর কর্মচারীদের কর্মক্ষেত্রে অবহেলার কারণে সরকারি সম্পদ উধাও হয়ে গেছে।’ তাঁরা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি না থাকায় একটি সিন্ডিকেট নির্ভয়ে এসব চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিশোরগঞ্জ পৌরসভার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর এসব গ্রিল চুরি করে নিয়ে গেছে চোরেরা। পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অবগত করেনি।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার সচিব সৈয়দ শফিকুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। আমি কোনো কিছু জানি না।’

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রকল্পটি এলজিইডি বাস্তবায়ন করেছে। কিন্তু আমাদের বুঝিয়ে দেয়নি। আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে পৌর প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলব।’

কিশোরগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনায়েত কবির বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব ছিল বাস্তবায়ন করে দেওয়ার, আমরা তা করেছি। এই প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব তাদের।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ধানমন্ডির ছায়ানট ভবনে অগ্নিসংযোগ, নিরাপত্তা জোরদার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছায়ানটের ভেতর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
ছায়ানটের ভেতর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজধানীর ধানমন্ডিতে ছায়ানট ভবনের ভেতরে আগুন দেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে রাত ৩টায় কোনো বিক্ষোভকারীর দেখা মেলেনি।

ভবনের সামনে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‍্যাবের সদস্যরা নিরাপত্তা অবস্থান নিয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা গেছে।

ধানমন্ডি মডেল থানার ডিউটি অফিসার মিঠুন সিংহ বলেন, ‘বিক্ষুব্ধ জনতা ধানমন্ডিতে অবস্থিত ছায়ানট ভবন ভাংচুর ও আগুন দিয়েছে। আমরা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে আছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন সেখানে আছেন।’

এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার দীর্ঘ সময় পরও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনি।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করছেন ইনকিলাব মঞ্চের কর্মী ও সমর্থকেরা। এই বিক্ষোভের অংশ হিসেবে এর আগে রাত থেকেই বিক্ষুব্ধরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে তারা রাজধানীর রামপুরা, মিরপুর ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে।

রাত ১২টার দিকে কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে ভাঙচুর ও নথিপত্রে অগ্নিসংযোগও করে তারা। একপর্যায়ে তারা ডেইলি স্টার কার্যালয়ের দিকেও অগ্রসর হয় এবং সেখানেও আগুন ধরিয়ে দেয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডেইলি স্টার কার্যালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে দমকল কর্মীরা। সেখানে দমকল বাহিনীর অন্তত দুটি ইউনিট কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত