দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও প্রতিকার মিলছে না বঞ্চিত ভাতাভোগীদের

মেহেদী হাসান উজ্জ্বল, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২১, ০০: ১৮

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে কয়েকশ অসহায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীর ভাতাভোগীর ভাতা কার্ডের টাকা প্রতারকের মোবাইল অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ভাতার টাকা না পেয়ে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েও প্রতিকার মিলছে না বঞ্চিত ভাতাভোগীদের। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলায় ৫ হাজার ৭৮৪ জন বয়স্ক, ৩ হাজার ৪৩২ জন বিধবা এবং ২ হাজার ৭৯১ জন প্রতিবন্ধী সহ মোট ১২ হাজার ৭ জন ভাতাভোগী রয়েছেন। এসব ভাতাভোগীরা পূর্বে বইয়ের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করলেও ২০২০-২০২১ অর্থ বছর থেকে ব্যক্তিগত নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা প্রদানের কার্যক্রম চালু করে সরকার। ফলে সারা দেশের ন্যায় ফুলবাড়ীতেও ভাতাভোগীরা তাঁদের নিজ নিজ নগদ নম্বর অফিসে জমা দেন। 

নিয়ম মাফিক সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত এসব ভাতাভোগীদের মোবাইল নম্বরে টাকা আসার কথা থাকলেও অনেকের নম্বরে টাকা আসেনি।

স্থানীয় উপজেলা সমাজসেবা অফিসের তথ্যমতে ২২২ জনের এমন সমস্যার কথা বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে এই সংখ্যা অনেক বেশি। চলতি বছরের জুন মাসে ভাতাভোগীদের নগদ নম্বরে বয়স্ক ও বিধবা ভাতা জনপ্রতি ৩ হাজার এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের জনপ্রতি ৪ হাজার ৫০০ টাকা আসে। কিন্তু পৌরশহরের কাঁটাবাড়ি নয়াপাড়া গ্রামের ১৮২ নম্বর বইধারী অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী রাকিব হাসান প্রিন্স, একই এলাকার ৩৬৭ নম্বর বইধারী আব্দুর রাজ্জাক, কৃষ্ণপুর গ্রামের ২২ নম্বর বইধারী বয়স্ক ভাতাভোগী খোতেজা, একই এলাকার ৮০১ নম্বর বহধারী ছাবিয়াল, ১২১ নম্বর বইধারী ওসমান আলীসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার প্রায় কয়েকশ ভাতাভোগী টাকা পাননি। টাকা না পেয়ে একাধিকবার উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ধরনা দিয়েও এ বিষয়ে কোন প্রতিকার মেলেনি তাঁদের। অভিযোগ উঠেছে সমাজসেবা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও উৎকোচ গ্রহণসহ মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার। 

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত ভাতাভোগীর তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া ভাতাভোগীসহ ফুলবাড়ী পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর তনজু আরা, কাউন্সিলর আব্দুস জব্বার মাসুদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর মোবাইল নম্বরের জায়গায় সমাজসেবা অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারী তাঁদের নিজস্ব লোকজনের নম্বর বসিয়ে টাকাগুলো হাতিয়ে নিচ্ছেন। জুন মাসের আগেই বইধারী বঞ্চিত ভাতাভোগীদের সঠিক মোবাইল নম্বরসহ সমাজসেবা অফিসে কয়েক দফায় প্রতিবেদন পাঠানোর পরেও এই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। 

ভাতা ভোগী ফাতেমা, মোজাম্মেল, নছিম, আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেক বঞ্চিতদের অভিযোগ, অফিসের একটি চক্র ভাতাভোগীদের নম্বর পরিবর্তন করে ঢাকায় তালিকা পাঠানোর এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এ দিকে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সমাজসেবা অফিসে একাধিকবার সঠিক নম্বর দিয়েও টাকা না আসায় বেকায়দায় পড়লেও প্রতারক চক্রটি অত্যন্ত সুকৌশলে টাকাগুলো হাতিয়ে নিয়ে নম্বরগুলো বন্ধ করে দেন। পরে ওই নম্বরে কল দিলেও প্রত্যেকটি নম্বর বন্ধ থাকে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। 

বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপজেলায় ১২ হাজার ৭ জন ভাতাভোগীর মধ্যে ২২২ জন ভাতাভোগীর সমস্যা হয়েছিল। ইতিমধ্যে সমস্যা সমাধানের জন্য সেগুলোর কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। ভাতাভোগীর টাকা অন্য নম্বরে চলে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, কারও কারও মোবাইল নম্বর ভুলও হতে পারে। তবে অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক যে সকল ভাতাভোগীর টাকা অন্য নম্বরে গেছে তাঁদের টাকা ফেরত আনার কার্যক্রম চলছে। 

এর সঙ্গে অফিসের কোন চক্র জড়িত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুস্পষ্ট প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

ফুলবাড়ী পৌরসভার মেয়র মাহমুদ আলম লিটন জানান, ভাতা ভোগীরা তাঁদের অনেকেই এ ধরনের সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি তাঁরা এ সংশ্লিষ্ট একটি তালিকা তৈরি করে সেগুলো আবারও পাঠানোর কথা বলেছেন। তবে এখনো কোনো প্রকার সুরাহা করতে পারেননি তাঁরা। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতাভুক্ত বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীসহ সরকারি যে কোন কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত